post

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার অর্থনীতি কি আর ঘুরে দাঁড়াবে?

মো: কামরুজ্জামান বাবলু

১৬ জানুয়ারি ২০১৬
শেষ পর্যন্ত কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমেরিকা-রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় আপাতত একটু শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। তবে বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ ও বহিরাগত আক্রমণে জর্জরিত সিরিয়ার অর্থনীতিতে যে ধস নেমেছে তা কাটতে কতটা সময় লাগবে? এ জন্য করণীয়ই বা কী? এই মুহূর্তে দেশটির জন্য সবচেয়ে দরকারি অর্থ সহায়তার শর্তে পশ্চিমারা হয়তো দেশটির শাসনব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। এমনও হতে পারে সিরিয়ার শাসনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতেও সক্ষম হবে বিশ্বমোড়ল আমেরিকা ও এর পশ্চিমা মিত্র এবং নতুন করে মোড়লের ভূমিকায় আসীন হওয়া এককালের প্রতাপশালী পরাশক্তি রাশিয়া। তবে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশটির অর্থনীতির মেরুদন্ড যেভাবে ভেঙে পড়েছে সেই মেরুদন্ড সোজা করে দেশটির পক্ষে কি আর কখনো ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে? এই মুহূর্তে পশ্চিমা দাতারা সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সামরিক কূটকৌশলের দিকে মনোযোগ না দিয়ে যে বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন তা হলো দেশটিতে মানবিক সহায়তা প্রদান। অর্থাৎ মানবিক দৃষ্টির মাধ্যমে দেশটিতে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে চায় পশ্চিমারা। যুদ্ধের কবলে গৃহহারা দেশটির লাখ লাখ উদ্বাস্তু ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা ছাড়া তাদের সামনে আপাতত আর কোন পথ খোলা নেই বলেই মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা। সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন বাশার আল আসাদের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া পাঁচ বছর আগের আন্দোলন একপর্যায়ে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়। আমেরিকা ও তাদের আরব মিত্রদের পক্ষ থেকে দেশটিতে শান্তি স্থাপনের নানা কৌশলের কথা বলা হলেও কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছিল না। একদিকে বাশার আল আসাদের অনমনীয় অবস্থান, অপরদিকে বিদ্রোহীদের হার না মানা মরণপণ লড়াই ক্রমশই দীর্ঘস্থায়ী রূপ লাভ করছিল। তবে, দেশটিতে রাশিয়ার আকস্মিক সামরিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি যেন সহসাই পাল্টে যায়। বাশার আল আসাদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে চালানো সামরিক হামলার পটভূমিতে আসাদের একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যেন নতুন জীবন লাভ করে। কি বিদ্রোহী, কি আরব-পশ্চিমা মিত্র সবাই স্বেচ্ছায় হোক বা দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় থাকুক না কেন আসাদের একনায়ক শাসনকে সাময়িকভাবে হলেও মেনে নিতে বাধ্য হলো রাশিয়ার আকস্মিক অবস্থানে। তবে এটা রাশিয়ার আমেরিকাবিরোধী অবস্থান নাকি দুই পরাশক্তির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিচালিত নাটক তা হয়তো পরিষ্কার হবে আরো কিছুদিন অতিবাহিত হলে। এখন দেশটির পরিস্থিতি যা দাঁড়ালো তা হলোÑ হয় এমন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করতে হবে যেখানে বাশার আল আসাদকে বৈধতা দিয়ে তার শাসনের পুনরাবৃত্তি করতে হবে, অথবা আবারো রক্তারক্তি, খুনখারাবি, ধ্বংসযজ্ঞ ও দেশকে জনশূন্যতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবে এরই মধ্যে ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অনেক আরব রাষ্ট্রের নেতারা আকার ইঙ্গিতে বেশ ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিলেন যে আসাদ সরকার এবং তার রাশিয়া ও ইরানি মিত্রদের সাথে তারা আর লড়াই করতে মোটেই আগ্রহী নন। যদিও পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের মতে, সিরিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক শরণার্থীসঙ্কট ও ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের মূলে রয়েছে আসাদের শাসন। তবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আপাতত আসাদের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোই হচ্ছে এই মুহূর্তের সর্বোত্তম সমাধান। কারণ আসাদের পক্ষে শক্ত অবস্থানে থাকা রাশিয়া ও ইরানকে থোড়াই কেয়ার করার অবস্থানে এখন আর আমেরিকা বা তার পশ্চিমা মিত্ররা নেই। সিরিয়া সঙ্কট মোকাবেলায় সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের সামনে এখন যে একমাত্র রাস্তাটি খোলা আছে তা হলো অর্থনৈতিক পথে কিছু করা। আর এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় অর্থনৈতিক সহযোগিতার যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কুয়েত এবং আরবভুক্ত অপরাপর দাতা দেশগুলোও তাদের নিজস্ব ফান্ডকে এই খাতে ব্যবহার করতে পারে। আর এর মধ্য দিয়ে সিরিয়া সংঘাতের ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলা করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সিরিয়া সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই শরণার্থীতে পরিণত হওয়া প্রায় ৪৮ লাখ মানুষ এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরে সরকার ও বিদ্রোহী উভয়-নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাতে আরও যে এক কোটিরও বেশি মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাদের সহযোগিতায় এই অর্থের ব্যবহার খুবই জরুরি। এ ছাড়া বাশার আল আসাদের বাবা হাফেজের শাসনামল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সিরিয়ার সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এই অঞ্চলের প্রায় সব দাতার কাছ থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শর্তে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি নিয়েছিল, যার খুব সামান্যই বাস্তবায়িত হয়েছে। ওইসব প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দাতাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে দেশটির জন্য এটাই হতে পারে একটা বড় সুযোগ। অর্থাৎ সরল ভাষায় বলতে গেলে, সিরিয়ার জন্য এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক যে অবস্থানটি রয়েছে তা হলো দেশটির পুনর্গঠনের পথে দরকারি অর্থের বড় বোঝাটিই অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার একটি সুযোগ রয়েছে। তবে, দীর্ঘ মেয়াদে পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত দেশটির নিজস্ব অর্থনৈতিক অবস্থান দুর্বলই থেকে যাবে। আর চলমান দ্বন্দ্বের একটি কার্যকর ও শক্ত রাজনৈতিক সমাধান বা সমঝোতা অর্জন করতে যে অর্থনৈতিক সহায়তা লাগবে তা দেশটিকে পশ্চিমাদের কাছ থেকেই আদায় করে নিতে হবে। এ ছাড়া দেশটির শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য বিবদমান পক্ষগুলো যে দাবি জানিয়ে আসছে তা পূরণের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টিতে পশ্চিমাদের জন্য অর্থনৈতিক অস্ত্রটিই এখন সবচেয়ে কার্যকর বলেই মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। কারণ সামরিক আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছরের রক্তারক্তিতে এখন স্পষ্টতই দৃশ্যমান যে একটি কার্যকর ও প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠনে সিরিয়ায় সবচেয়ে বেশি দরকার অর্থসহায়তা। তবে মানবিক বিপর্যয়ের কারণে বিপর্যস্ত সিরিয়াবাসীর মধ্যে কতজন সত্যিকারার্থে দাতাদের দেয়া অর্থ সাহায্য পাবেন, তা যথাযথভাবে তদারকি করাও একটি কঠিন কাজ। উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়া মানুষগুলো এবং দেশের ভেতরে গৃহহারা লাখ লাখ মানুষকে তার বসতভিটায় ফিরিয়ে এনে আগের স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন যতটা সহজ মুখে বলা তার থেকে বহুগুণে কঠিন এর বাস্তবায়ন। ছয় বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে সিরিয়ার এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে, দেশটিতে প্রায় ২ কোটি ৮ লাখ মানুষ বসবাস করতেন। অর্ধযুগ পেরিয়ে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্বাভাবিক রেকর্ড পর্যালোচনায় বলা যায় এই সংখ্যা এতদিনে আড়াই কোটির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো- বর্তমান সিরিয়ার জনসংখ্যা দেড় কোটি থেকে ১ এক কোটি ৬০ লাখের কাছাকাছি। অর্থাৎ বিগত ছয় বছরে দেশটির স্বাভাবিক জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অধঃগতি শুধু এখানেই হয়নি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অর্থব্যবস্থার প্রতিটি স্তরেই নেমে এসেছে বিপর্যয়। সিরিয়ার প্রভাবশালী ও গ্রহণযোগ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ  (Syrian Center for Policy Research)Õ’ -এর এক জরিপে দেখা গেছে ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সিরিয়ার ‘গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট- জিডিপি  (gross domestic product) ৬৩ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। একই সময়ের মধ্য ডলারের বিপরীতে সিরিয়ার স্থানীয় মুদ্রার মান প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ও বিবাদ শুরু হওয়ার আগে জাতীয় বাজেট প্রণয়নে ডলারের যে মান ছিল তা বর্তমানে প্রায় ৫ গুণ বেড়ে গেছে। অর্থাৎ স্থানীয় মুদ্রার চাহিদা ও উপযোগিতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এমনকি ২০১০ সালের তুলনায় দেশটির ভোক্তা মূল্য সূচক(consumer price index) বেড়েছে প্রায় ৪৫০ শতাংশ। দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট থেকে কমে বর্তমানে মাত্র ২ হাজার মেগাওয়াটেরও নিচে নেমে এসেছে। সিরিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী (deputy prime minister)আবদাল্লাহ আল দারদারি  (Abdallah al-Dardari) যিনি বর্তমানে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে জাতিসংঘ অর্থ সংস্থার(UN economic agency) প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন, তিনি এক জরিপে বলেন, সিরিয়ার জিডিপি (অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ২০১০ সালে যে পর্যায়ে ছিল সেই অবস্থায় ফিরে যেতে হলে অন্তত ১৮০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা) লাগবে। উল্লেখ্য ২০১০ সালে দেশটির জিডিপির পরিমাণ ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে, জাতিসংঘ ও আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের আওতাভুক্ত দাতাদের পাশাপাশি সিরিয়ায় অর্থ জোগানদাতাদের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে ইরান ও রাশিয়ার নাম। এ ছাড়া দেশটির প্রাইভেট সেক্টরও দেশটিতে বিনিয়োগ ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সব হিসাব নিকাশ এলোমেলো হয়ে যায়। ইরান দেশটিতে তেল ও অন্যান্য জিনিসপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে সবসময়ই অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ছাড়া সামরিক ক্ষেত্রে ইরান তার বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (Islamic Revolutionary Guards Corps troops) সদস্যদের দিয়ে সিরিয়াকে সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি লেবানন, ইরাক ও আফগানিস্তান সীমান্ত পথে সশস্ত্র শিয়া মিলিশিয়াদের(Shia militias)মাধ্যমে ইরান সিরিয়ায় তার প্রভাব ধরে রাখতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, রাশিয়ার বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। রাশিয়ার সহায়তা কেবলই সামরিক। আর তার সাথে রাশিয়ার নিজস্ব প্রভাববলয় সৃষ্টি থেকে শুরু করে অনেক জটিল আন্তর্জাতিক ও ভূ-রাজনৈতিক লাভ-লসের বিষয় জড়িত। আর সে কারণেই এই মুহূর্তে সিরিয়ার আসাদ সরকারের সবচেয়ে আপনজন বলে যাকে মনে হয় সেই রাশিয়ার কাছে অর্থসহায়তা চেয়ে বাশার আল আসাদকে রিক্ত হস্তে প্রমাদ গুনতে হয়েছে। এ দিকে দেশটির প্রাইভেট সেক্টর বেশ বেকায়দার মধ্যে পড়ে গেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির শহর অঞ্চলের পুনর্গঠনের সুযোগ তাদের দেয়া হয়েছে প্রাইভেট সেক্টরকে। আর এর মধ্য দিয়ে লাভ করার একটু বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে সিরিয়ার প্রাইভেট সেক্টরের জন্য যেটাকে পুস্তকের ভাষায় বলা হয় যুদ্ধ অর্থনীতি  (war economy)। কিন্তু ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না দেশটির প্রাইভেট উদ্যোক্তারা। দেশটির ১৪টি প্রাইভেট ব্যাংকের গচ্ছিত অর্থের মান এরই মধ্যে ৩ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। বিগত ২০১৫ সালের ব্যালান্স শিট (balance sheets)  পর্যালোচনা করে এই হিসাব বের করা হয়েছে। বর্তমানে দেশটির প্রাইভেট ব্যাংকের মোট মূলধন দাঁড়িয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা, যা ২০১০ সালে ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। যাই হোক হিসাব নিকাশের ভারে আর ন্যুব্জ না হয়ে সোজাসাপ্টাভাবে যা বলা যায়- সিরিয়াকে বুঝতে হবে কে তার প্রকৃত বন্ধু আর কে শত্রু। দুই পরাশক্তি আমেরিকা বা রাশিয়া যা করেছে তা তাদের স্বার্থ ও অবস্থান ধরে রাখতেই করেছে। যে কোন মূল্যে পৃথিবী থেকে মুসলমানদের সংখ্যা হ্রাস পাক এটা যেমন আমেরিকা চায়, তেমনি রাশিয়া ও ইসরাইলসহ ইহুদি-খ্রিষ্টান চক্র চায়। আর সে কারণেই আবেগী মুসলমানদের দিয়ে আইএস (ইসলামিক স্টেট) জন্ম দিয়েছে আমেরিকা, তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে আমেরিকা এবং মুসলিম বিশ্বের বিপক্ষে তাদেরকেই আবার দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। স্বার্থ হাসিলের পর এখন আইএসের বিরুদ্ধে জঙ্গি তকমা লাগিয়ে আইএস দমনের নামে মুসলমানদের রক্ত ঝরাচ্ছে আমেরিকা, রাশিয়া ও ইসরাইলসহ মুসলিমবিরোধী জোট। আর আঞ্চলিক স্বার্থ বা অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকে থাকতে এসব ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে লড়াই করে চলছে ইরান, সৌদি আরব ও তুরস্কসহ মুসলিম বিশ্বের ত্রাণকর্তারা। এখনই সময় মুসলিম বিশ্বকে ঘুম থেকে জাগার। আর বেশি ঘুমালে সেই ঘুম থেকে শেষ পর্যন্ত আর জেগে উঠারই সুযোগ নাও পাওয়া যেতে পারে এবং যারা জেগে আছেন তাদেরও চিরনিদ্রায় বিলীন করে দেয়া হতে পারে অচিরেই। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির