post

যুদ্ধাপরাধ নয় কুরআনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়াই আল্লামা সাঈদীর অপরাধ

২৭ অক্টোবর ২০১৪

মাসুদ সাঈদী

দ্বিতীয় পর্ব saydiবাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং আল্লামা সাঈদী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যখন স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়, তখন আল্লামা সাঈদী যশোরের নিউমার্কেট এলাকার ‘এ’ ব্লকে সপরিবারে বসবাস করতেন। যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি যে বাসায় বসবাস করতেন তার আশপাশে পাক সেনাদের বোমা এসে পড়তে থাকায় তিনি সপরিবারে বাঘারপাড়া নামক এলাকায় চলে যান। বাঘারপাড়া ও মহিরন এলাকা মিলে আল্লামা সাঈদী সেখানে প্রায় চার মাস সপরিবারে অবস্থান করেন। এরপর যুদ্ধের ভয়াবহতা কিছুটা কমে এলে আল্লামা সাঈদী যশোর থেকে পিরোজপুরের নিজ গ্রাম সাঈদখালীতে জুলাই ’৭১ সালের মাঝামাঝি ফিরে যান। স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে তাঁর সামান্যতম ভূমিকাও ছিল না। যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের পক্ষে যেসব দল গঠিত হয়েছিল, যেমন রাজাকার, আল বদর, আল শামস, মুজাহিদ বাহিনী, শান্তি কমিটি এসবের কোনো কিছুতেই তিনি জড়িত ছিলেন না। পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধাগণও এসবের সাক্ষী। স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষ তথা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তিনি সর্বপ্রথম নিজ এলাকা পিরোজপুর থেকেই পবিত্র কুরআনের তাফসির মাহফিল শুরু করেন। এরপর ক্রমশ বাংলাদেশের প্রত্যেক থানা ও জেলায় মাহফিল করেন। পরবর্তীতে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কুরআন তাফসির মাহফিল করতে থাকেন। তাঁর মাহফিলে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান, প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, মন্ত্রী, এমপি, দেশের প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি, সেনাবাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধান, আইনজীবী, সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাগণ যোগ দিয়ে কুরআনের তাফসির শুনতেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এর মাত্র দু’মাস পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি আল্লামা সাঈদী তাঁর নিজের জেলা পিরোজপুর শহরে সিরাত মাহফিলে ওয়াজ করেন। এরপর থেকে সমগ্র দেশব্যাপী একটির পর একটি মাহফিলে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হতে থাকেন। এ দেশের মানুষের মুখে মুখে শ্রদ্ধাজড়িত কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে একটি নাম, ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।’ বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা বা উল্লেখযোগ্য থানা নেই যেখানে তিনি তাফসির মাহফিল করেননি, তাঁর প্রায় প্রত্যেকটি মাহফিলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ মঞ্চে আসন গ্রহণ করেছেন, বহু সংখ্যক মাহফিলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকগণও বক্তব্য রেখেছেন। বিদেশের স্কলারগণ মাহফিলে এসে বক্তব্য রেখেছেন, এমনকি পবিত্র কাবা শরিফের সম্মানিত ইমাম চট্টগ্রামে তাঁর তাফসির মাহফিলে দুইবার তাশরিফ এনেছেন। ১৯৭৯ সালে নারায়ণগঞ্জ চিলড্রেন পার্কে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী তাফসির মাহফিলের উদ্বোধনী দিবসে স্বাধীনতার মহান ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আল্লামা সাঈদী সাহেবের পাশে বসে ঘণ্টাকাল তাঁর তাফসির শুনেছেন, নারায়ণগঞ্জবাসী আজও তার সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল এবং সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ ছিলেন আল্লামা সাঈদী সাহেবের অন্তরঙ্গ বন্ধু, তারা একে অপরের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত ইসলামের দুশমন ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো দীর্ঘ ১৫ বছরের মধ্যে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেনি। তিনি যখনই জাতিকে কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানালেন এবং নিজে ময়দানে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন, তখন থেকেই ইসলামের শত্রুরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললো, তিনি নাকি স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন। অথচ তাঁর নিজ এলাকার সকল ধর্মের সাধারণ মানুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি রাজাকার, আল বদর, আল শামস ছিলেন না এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তিনি সামান্যতম ভূমিকাও পালন করেননি। আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার : মুক্তিযোদ্ধাদের মন্তব্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যখনই রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা শুরু করলেন, তখনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলো তিনি নাকি স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। অথচ তাঁর নিজ এলাকার সকল ধর্মের সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি রাজাকার, আল বদর, আল-শাসসের সদস্য ছিলেন না। মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) জিয়াউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আল বদর, আল শাম্স, শান্তি কমিটির সদস্য বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এসবের তালিকায় কোথাও তার নাম নেই।’ মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম তালুকদার বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত যুদ্ধাপরাধ তত্ত্ব-উপাত্ত ও সাক্ষী সবই মিথ্যার ওপরে প্রতিষ্ঠিত। কারণ আমরা নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পিরোজপুরে হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি ও পিরোজপুরকে শত্রুমুক্ত করি। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ভূমিকা থাকলে তা আমাদের আগে বা আমাদের চেয়ে বেশি অন্য কারো জানার কথা নয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে।’ পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, যুদ্ধকালীন কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী নুরুজ্জামান বাবুল বলেন, ‘৭১ সালে আমি সুন্দরবনে মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করেছি। আমরাই পিরোজপুর শত্রুমুক্ত করেছি। ’৭১ সালে পাড়েরহাট-জিয়ানগরের সব রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীদের ধরে নিয়ে সুন্দরবনে হত্যা করা হয়েছে। আল্লামা সাঈদী যদি রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে তার জীবিত থাকার কথা নয়।’ যুদ্ধকালীন ইয়ং অফিসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এমডি লিয়াকত আলী শেখ বাদশাহ বলেন, আল্লামা সাঈদী রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এসবের তালিকাতেও তার নাম নেই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আল্লামা সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকাণ্ড করেছেন বলে আমি শুনিনি, দেখিওনি।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান বাহাদুর বলেন, ‘আল্লামা সাঈদীর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বাম ঘরানার নেতারা এবং পিরোজপুরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে নাটক প্রচার করেছে তা গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে। সাঈদীর বিরুদ্ধে করা যুদ্ধাপরাধ মামলা সাজানো এবং ষড়যন্ত্রমূলক তা জনগণের সামনে দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’ এভাবে মুক্তিযুদ্ধে পিরোজপুর জেলার সাবেক কমান্ডার গৌতম রায় চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধে পিরোজপুর জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মুনান, পিরোজপুর পৌরসভার কমিশনার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বাতেন, মুক্তিযুদ্ধে পাড়েরহাটের ক্যাম্প কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: খসরুল আলম, নাজিরপুরের যুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধকালীন ইয়ং কমান্ডার খন্দকার রেজাউল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ: সালাম তালুকদারসহ পিরোজপুরের স্বনামধন্য প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আল্লামা সাঈদীর সামান্যতমও বিতর্কিত ভূমিকা ছিলো না। (তথ্যসূত্র : যুদ্ধাপরাধ নয় জনপ্রিয়তাই আল্লামা সাঈদীর অপরাধ। লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকাররম হোসেন কবির, মুক্তিযোদ্ধা নং ম ১৬৩৯) পার্লামেন্টে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ ও চ্যালেঞ্জ ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আমার আব্বা আল্লামা সাঈদীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের কেউই কোনো ধরনের অভিযোগ উত্থাপন ওঠেনি। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৯ সালে যখন আল্লামা সাঈদীকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মনোনীত করার সংবাদ জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত হয়, মূলত তখন থেকেই একটি মহল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে যে, তিনি স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ছিলেন। পরপর দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রচার করা হচ্ছে যে, তিনি যুদ্ধাপরাধীও ছিলেন। এসব কিছুই যে তাঁর বিরুদ্ধে ইসলাম ও মুসলিম চেতনাবিরোধী শক্তির নীলনকশা অনুযায়ী ঘটছে এ বিষয়টি সচেতন জনগোষ্ঠীর নিকট দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। আল্লামা সাঈদী ১৯৯৭ সালের ২৪ জুন পার্লামেন্টে বাজেট বক্তৃতার এক পর্যায়ে ড. কুদরতে খুদা প্রণীত ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার তথ্যভিত্তিক পর্যালোচনা করছিলেন, তখন পার্লামেন্টের স্পিকার ছিলেন হুমায়ুন রশীদ চোধুরী। সেদিন পার্লামেন্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় সকল সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আল্লামা সাঈদীর বক্তৃতা চলাকালীন সময়ে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে একজন আওয়ামী সংসদ সদস্য বলে উঠে ‘রাজাকার’। সাথে সাথে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আমাকে রাজাকার বলা হয়েছে। বাংলাদেশের এমন কোনো বাবার সন্তান নেই যে, আমাকে রাজাকার বলতে পারে। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী ছিলাম না। আমি রাজাকার নই, আমাকে রাজাকার বলে যদি তা কেউ প্রমাণ করতে না পারে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমি দশ কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের করবো। যারা ভারতীয় রাজাকার তারাই আমাকে রাজাকার বলতে পারে।’ (তথ্য সূত্র : বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিতর্ক পুস্তকের ১৫০-১৫৫ পৃষ্ঠা) রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার আল্লামা সাঈদী এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, যে মানুষটি সারাটি জীবন সমগ্র পৃথিবীব্যাপী কুরআনের তাফসির পেশ করেছেন, নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সকল মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, সততা, স্বচ্ছতা, ন্যায়পরায়ণতা, উন্নত নৈতিক গুণাবলি ও সাদাসিধে জীবন-যাপনের জন্য দেশবাসী যাঁকে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করে সেই আল্লামা সাঈদীকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে তাঁর বিশ্ব্যাপী জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে যুদ্ধাপরাধের কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করে বিচার বিভাগের ইতিহাসে কালিমা লেপন করে একজন নিরপরাধ মানুষকে ক্ষমতার জোরে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে সরকার। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, যখন থেকেই অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, শোষণ, হত্যা-ধর্ষণ, বোমাবাজি-সন্ত্রাস, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, সাম্প্রদায়িকা তথা সকল প্রকার অনিয়নের বিরুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রেখে সমগ্র পৃথিবীতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে ইনসাফের বাণী উচ্চকিত করেছেন, তখনই তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। যারা তাঁকে কাছে থেকে দেখেছেন তারা এটাকে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম মিথ্যাচার হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। ‘যদি কেউ একজন মানুষকে হত্যা করে সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করলো, যদি কেউ একজন মানুষের জীবন বাঁচায় সে যেনো সমগ্র মানবজাতিকেই বাঁচিয়ে দিল’ পবিত্র কুরআনের এ মহান বাণী যে মানুষটি বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে প্রচার করে আসছেন এবং এ আদর্শে মানবজাতিকে দীক্ষিত করার লক্ষ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ক্লান্তিহীনভাবে ছুটে বেড়িয়েছেন, সেই মানুষটির বিরুদ্ধে ’৭১ সালে মানুষ হত্যা করার মতো জঘন্য অপরাধের অভিযোগ এনে তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে। মূলত এ সরকার আল্লামা সাঈদীকে তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে মনে করছে এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে তাঁকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার : কেন হঠাৎ এ আয়োজন ? বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এর আগেও দু’বার ক্ষমতায় এসেছিল। প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৭২ সালে আর দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে। এ দু’ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তারা কখনো আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো অভিযোগ তোলেনি। এমনকি তখন তারা আল্লামা সাঈদীর দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এমন একজন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে তার জন্মের পর থেকে অর্থাৎ ১৯৪০ সাল থেকে ২০১০ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো থানায় মামলা তো দূরের কথা সামান্য একটি জিডি পর্যন্ত হয়নি। তাহলে ৪০ বছর পরে কেন হঠাৎ সরকার আল্লামা সাঈদীর মতো ব্যক্তির ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে তাঁকে সাজানো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে! ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ গঁংষরস সরহড়ৎরঃু অভভধরৎং, মার্চ ২০১১ সংখ্যার একটি আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয় যে, ‘বাংলাদেশ জনসংখ্যায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্ম ইসলাম সেখানে দিনে দিনে মাইনরিটি হয়ে যাচ্ছে। যেখানে পাশ্চাত্যে মুসলিম মাইনরিটি হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের মৌলিক ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে সেখানে বাংলাদেশে মুসলিমদের এ মৌলিক অধিকারটি ক্রমবর্ধমানভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে। বাংলদেশকে সেক্যুলার রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সে দেশের সরকার অব্যাহত চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সমাজ ও রাজনীতিক অঙ্গন থেকে ইসলামী প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে এবং সেকুলারিজম বাস্তবায়নের জন্য কিছু সমন্বিত পলিসি গ্রহণ করছে। মুসলিমদের মৌলিক ধর্মীয় স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা ছাড়াও কিছু আক্রমণাত্মক ও সহিংস নীতি গ্রহণ করেছে, যেগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে গণতান্ত্রিক মূলনীতি, আইনের শাসন, আন্দোলনের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক বহুত্ববাদের বিরোধী।’ ‘এর পাশাপাশি সরকার ইসলাম ও ইসলামের প্রতীকগুলোকে তাদের জন্য রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখছে। সমাজ ও রাজনীতি থেকে ইসলামী প্রভাব কমানোর প্রক্রিয়া হিসেবে ইসলামী ব্যক্তিদের চরিত্র হনন ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য তাদের ওপর মানহানিকর অভিযোগ আনা হচ্ছে। আল্লামা সাঈদীকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তকরণ এই প্রক্রিয়ারই একটি অংশ।’ এ বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নজিরবিহীন জনপ্রিয়তাকে সরকার তার রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। তাই সরকার ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছে। আন্তর্জাতিক সাময়িকী ঐড়ষরফধু ওহঃবৎহধঃরড়হধষ এ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয় যে, ‘এ যাবৎ সরকারের আচরণ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটাই মনে করছে যে, এ বিচার হচ্ছে চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দমন করার জন্য। যদি এ বহু বিতর্কিত বিচারটি ন্যায়সঙ্গতভাবে করা না হয় তাহলে বাংলাদেশ আরেকটি অন্ধকার অধ্যায়ের সম্মুখীন হবে যা গৃহযুদ্ধে রূপ নিতে পারে।’ এ ছাড়াও ২০১১ সালে মানবাধিকার রিপোর্ট : বাংলাদেশ (টঝ স্টেট ডিপার্টমেন্ট)-এ উল্লেখ করা হয় যে, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দেশব্যাপী সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, হত্যা, গুম, ধর্ষণ, সহিংসতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতন ইত্যাদি নিত্য নৈমিত্যিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩ : অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক দল ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩’ যে একটি মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার তা তারা তাদের বক্তব্য/বিবৃতি দিয়ে বারবার জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং এ অ্যাক্ট যে শুধুমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতকে দমন করার জন্যই করা হয়েছে তাও পরিষ্কার করে বারবার বলা হয়েছে। একই সাথে ১৯৭৩ সালের যে অ্যাক্টের অধীনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে সে সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও বারবার আপত্তি জানানো হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ দেখতে চায়। আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংগঠনটি এ সংক্রান্ত বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আইনটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে। অ্যামনেস্টির এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের দায়ে যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই বিরোধী দলের নেতা। এতে মনে হচ্ছে, ট্রাইব্যুনাল শুধু বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহভাজনদেরই বিচার করছে। (সূত্র : আমার দেশ, ১২.৭.২০১১) হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে বিদ্যমান আইনে যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে না। আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংগঠনটি মনে করে নিরপেক্ষ বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন এবং বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী ১৯৭৩ সালের এ আইনটিকে সংশোধন করতে হবে। ব্রাড এডামস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য ৭টি সুপারিশ পেশ করে বলেছেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বরাবর মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে। (সূত্র : আমার দেশ, ২০.৫.২০১১) বাংলাদেশ সফর করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র‌্যাপ বলেছেন, ১৯৭৩ সালের আইন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে মার্কিন সহায়তা পেতে হলে বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে হবে। (সূত্র : প্রথম আলো, ১৭.৯.২০১১) আন্তর্জাতিক আইনজীবী এবং যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, ১৯৭৩ সালের আইনে ন্যায়বিচার সম্ভব নয়। যে আইনে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইন ও মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং এটি একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। (সূত্র : আমার দেশ, ৮.৫.২০১১) ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডার বিচারপতি টি এইচ খান বলেছেন, যেভাবেই হোক সাজা দেবো, এ উদ্দেশ্যেই যুদ্ধাপরাধ বিচারের আয়োজন চলছে। (সূত্র : যুগান্তর, ২১.৬.২০১২) যুদ্ধাপরাধের বিচার বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালে! ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানি) নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে গঠিত তথাকথিত গণ-আদালতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকেই বর্তমানের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঘাদনি নেতা শাহরিয়ার কবীর সম্পাদিত ‘একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ শিরোনামে লেখা বইয়ের ১০৩ ও ১০৪ পৃষ্ঠায় গণ-আদালতের বিচারের জন্য গঠিত ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের’ সদস্যদের নাম রয়েছে। গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সমন্বয়কারী ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ, সেক্রেটারিয়েট সদস্য হিসেবে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো: খলিলুর রহমানের (এম. কে রহমান) নাম রয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক আইন, নীতিমালা ও বিধান অনুযায়ী কোন বিচারের সাথে আগেই যাদের কোনো দূরতম সম্পর্ক থাকে তারা কোনদিন সেই একই বিচারের ক্ষেত্রে বিচারক হতে পারে না। অভিযোগকারী কখনও বিচারকের আসনে বসতে পারে না। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কথিত বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সাথে নিয়মিত রুদ্ধদ্বার বৈঠক করতেন সরকার দলীয় মন্ত্রীসহ দলের কয়েকজন নেতা (সূত্র : নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপ সংলাপ)। এর মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এ ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল। সুতরাং এ বিচার কখনও ন্যায়বিচার হতে পারে না। (চলবে) লেখক : আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে এবং চেয়ারম্যান, জিয়ানগর উপজেলা পরিষদ, পিরোজপুর

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির