post

রংধনু খাবার

উম্মে নাজিয়া

০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬
কেন খাবার খাই? সহজ উত্তর বেঁচে থাকার জন্য, ক্ষুধা নিবারণের জন্য, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ইত্যাদি ইত্যাদি। খাবার খাওয়া হয় ব্যক্তির সামর্থ্য খাবারের প্রাপ্যতা, স্বাদ এবং নিজস্ব খাবার পছন্দের কথা চিন্তা করে। আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন রঙের সুষম খাবার মানুষের জীবনের সুস্থতার জন্য অপরিহাযর্, তাইতো আল্লাহপাকের সৃষ্টিতে আমরা সুস্পষ্টভাবেই তা দেখতে পাই। সুষম রঙিন খাবার মানুষের সুস্থতা এবং মানসিক বিকাশের জন্য খুবই উপকারী। রঙ তৈরি করে ফাইটোক্যামিক্যালস এগুলি প্রাকৃতিকভাবে জন্মে, যাতে রয়েছে প্রচুর অনুপুষ্টি। সকল ফলেই রয়েছে ভিটামিন, মিনারেলস এবং আঁশ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, ক্ষতিকর ফ্রি ব্যাড়িক্যালের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। প্রতিদিন শুধুমাত্র একটি রঙের খাবার খাওয়া উচিত নয়। এমনটি করলে দেহে ভিটামিন এবং খনিজপদার্থের অভাব থেকে যায়। রংধনু খাবার নিয়মিত খেলে স্বাভাবিকভাবে শরীরের অতিরিক্ত মেদ দূর করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। প্রত্যেক রঙ্গের একটি নিজস্ব ভাষা আছে; যা মানুষের দেহ এবং মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণার ফলাফল থেকে বিষয়গুলো জানা গেছে। রংধনু রঙের প্রথম রং হচ্ছে বেগুনি- বেগুনি রং আকর্ষণীয় আভিজাত্যের প্রতীক। নম্র প্রকৃতির শিল্পীমনা মানুষের আকৃষ্ট করে। বেগুনি রঙে রয়েছে গ্রন্থোসারা নিন যা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং রক্ত নালীর নমনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করে। এন্থোসারানিন পানিতে দ্রবণীয় একটি রক্তাক্ত পদার্থ যা চোখের বক্ত পরিবহন বাড়ায়, নার্ভাস সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। বেগুনি আঙ্গুর, জাম, ডুমুর বেগুনি বেগুনে এন্থোসায়ানিন রয়েছে। নীল : নীল রং শান্তির প্রতীক। মনকে প্রশান্তি দেয় ঘুমানোর জন্য সহায়ক, মনকে নিয়ন্ত্রণ করে, উচ্চরক্তচাপ কমায়। কথায় বলে বেদনার রঙ নীল। নীল রঙের খাবার শরীরের ব্যথা বেদনা কমিয়ে থাকে এমনকি আথ্ররাইটিসের ব্যথাও জাম, নীল বাঁধাকপিতে এন্থোসায়ানিন আছে। আসমানি : আসমানি একটি শক্তিশালী রঙ যা মনের গভীরে প্রভাব ফেলে। কল্পনা এবং অনুমান শক্তিকে বৃদ্ধি করে, যারা এই রং পছন্দ করে তারা খুব অনুভূতিশীল হয়। নীল, বেগুনি, আসমানি সব রঙেই এন্থোসায়ানিন রক্তাক্ত ধারণ করে থাকে। সবুজ : হচ্ছে ঐক্য এবং সমবেদনার রঙ। তাই রঙ প্রশান্তি আনে এবং সাম্যতা বিধান করে। যারা সবুজ রঙ পছন্দ করে তারা সহজেই সবাইকে আপন করে। শান্তপূর্ণ জীবন পছন্দ করে, মনকে শান্ত করে, ওজন কমায়। চাপের মধ্যে থাকলে সবুজ রঙের খাবার বেশি খেতে হবে। সবুজ খাবারে রয়েছে সবুজ রঞ্জক পদার্থ যা ফ্লোরোফিলএরলু টেইন ফাটোক্যামিক্যালস পাওয়া যায়। এগুলি এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ইনফ্লেমেটরি গুণসম্পন্ন। লুটেইন চোখের সার্বিক সুরক্ষা যেমন- চোখের মাংসপেশিকে সতেজ রাখে, রেটিনা শক্তিশালী করে এ ছাড়া দাঁত এবং হাড়ের সুরক্ষা প্রদান করে। সবুজ চা, বাঁধাকপি, লেটুস, খোসাসহ শসা, ব্রকবলি, সবুজ আপেল, শিম, কাঁচামরিচ, পালং শাক, সবুজ পুঁইশাক, কাঁচা পেঁপে কাঁচাকলা ইত্যাদিতে প্রচুর লুটেইন আছে। হলুদ এবং কমলা : কমলা আনন্দ আর সুখের রঙ। বিষণœতা রোধ করে মনের উদ্দীপনা বাড়ায়। কমলা যারা পছন্দ করে তারা আত্মনির্ভরশীল হিসেবে সমাজে পরিচিত, একা পথ চলতে সক্ষম এবং ধৈর্যশীল, মানসিক ভাবে অস্থির প্রকৃতির লোকদের এই খাবার খাওয়া উচিত। হলুদ কমলার কাছাকাছি আরেকটি রঙ। বলা হয় মানসিক বুদ্ধির রঙ। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে এই রঙের খাবার খাওয়া উচিত। কাজের ক্ষেত্রে নতুন উদ্যম এবং উদ্দীপনা বাড়াতে চাইলে এই রঙের খাবার বেশি খেতে হবে। হলুদ আর কমলা ফলমূল সবজিতে রয়েছে বিটা ক্রিপটোজ্যন্থমিন, বিটা-ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন হলুদ কমলা ফলমূল, সবজির ক্যারোটিনয়েডস শরীরে পরিবর্তিত হয়ে ভিটামিন অ তৈরি করে। যা দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখে, রেটিনাকে শক্তিশালী করে চোখের প্রেসার ঠিক রাখে বরং চিনতে সাহায্য করে, শরীরের চামড়া ভালো রাখে এবং হাড়কে মজবুত করে। মিষ্টি কুমড়া, পাকা পেঁপে, পাকা আম, গাজর, কুসুম ফুল, কাঁচা ভুট্টা, লাল পাকা আঙ্গুর, কমলা লেবু, মাল্টাতে প্রচুর উক্ত উপাদান গুলো রয়েছে। লাল : লাল উৎসাহ উদ্দীপনার রং। কর্মোদ্যোগ এবং পরিবর্তনের প্রতীক। কোন বিপ্লবী কাজে উদ্দীপনা বাড়াতে লাল রঙের ব্যবহার দেখা যায়। ক্লাসে লাল রঙ ছাত্রদের উদ্দীপনা বাড়ায় ক্যারোটিনয়েডস ফ্যামিলি থেকে লাল রঙের রঞ্জক পাওয়া যায়। এতে রয়েছে লাইকোপেন রঞ্জক পদার্থ যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, হার্টকে সুস্থ রাখে। শরীর থেকে বর্জ্য বের করে দেয় এবং কোলেস্টেরল জমতে বাধা প্রদান করে। টমেটোতে রয়েছে প্রচুর লাইকোপেন, কাঁচা টমেটোর চেয়ে রান্নাকরা টমেটোতে ভিটামিনের প্রাপ্যতা বেশি থাকে। টমেটো প্রধান খাবারের সঙ্গে ভিটামিন-সি এবং ফলিয়েট যোগ করলে সেটি ফ্লেভানয়েওএ পরিণত হয় যা শরীরে কোনো ক্ষত সারাতে সাহায্য করে অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ ক্ষত সারিয়ে তোলে, যা ক্যান্সারকে প্রতিহত করে। লাল আপেল, লাল মরিচ, লাল পেঁয়াজ, লাল বাঁধাকপি, লাল পেয়ারা তরমুজ, অতি সস্তা লালশাক, লাল মিষ্টি আলু, প্রভৃতি খাবারে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিয়েডস। উপরের সব রং মিলে তৈরি হয় সাদা রং যা আমরা সব সময় দেখতে পাই। রংধনু তো আলেয়ার মত হঠাৎ কখনও দেখা যায়, দেখা যায় না, সাদা রংও অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সাদা শান্তির আর শুভ্রতার প্রতীক। ভদ্রতার প্রতীক, মনের প্রশান্তির আনে, সৌন্দর্য রক্ষায় বিশেষ কার্যকরী পারিবারিক এবং মানসিক প্রশান্তি আনে। সাদা রং একাধিক রঞ্জক বহন করে থাকে। এতে রয়েছে এন্থোসায়ানিন, এন্টি-ইনফ্লামেটরি, এন্টি এলাজেনিক এবং ক্যান্সার প্রতিরোধী ক্ষমতা। রসুন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপরোক্ত গুণগুলি রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, হার্ট সুস্থ রাখা, সর্দি কাশি নিরাময়, ঠান্ডা জ্বর, অভ্যস্তরীণ ক্ষত সারাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কিন্তু রসুন যখন অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে রান্না করা হয় তখন এর এই গুণাবলি নষ্ট হয়ে যায় আমরা এত রসুন খাওয়ার পরও কিন্তু উপকার কমই পাচ্ছি, মাটির পাত্রে রসুন রান্না করে খেলে এর সমস্ত গুণাগুণ অক্ষুণœ থাকবে। রসুন, পেঁয়াজ, মাশরুম, ফুলকপি, সাদা মূলা সাদা বেগুন, সাদা মরিচ, মেলারি সাদা রঙের খাবার।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির