post

শিক্ষক নিবন্ধন সফলতার জন্য চাই সুন্দর প্রস্তুতি

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শিক্ষক নিবন্ধন সফলতার জন্য চাই সুন্দর প্রস্তুতিশিক্ষকতা একটি মহান পেশা, এ পেশার মাধ্যমে একজন শিক্ষক তার ওপর অর্পিত সামাজিক, মানবিক ও নৈতিক দায়িত্বগুলো অত্যন্ত সুচারুরূপে পালন করতে পারেন। শিক্ষকতা পেশায় যারা ক্যারিয়ার শুরু করতে চান (বিশেষ করে বেসরকারি স্কুল ও কলেজ) তাদের জন্য শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন একটি স্কুলপর্যায়ে অন্যটি কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা দিতে হয়। নতুন পদ্ধতিতে এই সনদ দিয়ে এনটিআরসিএ বরাবর অনলাইনে আবেদন করে মেধাতালিকার ভিত্তিতে যেকোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া যাবে। সামনে আসছে শিক্ষক নিবন্ধন নিয়োগ পরীক্ষা। আপনারা নিশ্চয়ই আবেদনের কাজ সমাপ্ত করে এখন পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের আয়োজনে আছে পরীক্ষাপদ্ধতি ও বিষয়ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা। চলুন আলোচনায় যাওয়া যাক-

পরীক্ষার নিয়ম বা পদ্ধতি: বিগত বছরের মতো এবারও প্রার্থীদের এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার সময় থাকবে ১ ঘণ্টা। বিষয় থাকবে মোট ৪টি। বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান। প্রতিটি বিষয়ে ২৫টি করে মোট ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য শূন্য দশমিক ৫০ নম্বর কাটা হবে। তাই প্রতিটি উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে। এরপর প্রার্থীদের ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। উভয় পরীক্ষার পাস নম্বর ৪০। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবেন, শুধু তারাই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরবর্তী সময়ে এসএমএসের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়া হয়। তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে আপনিও পেতে পারেন শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ।শিক্ষক নিবন্ধন সফলতার জন্য চাই সুন্দর প্রস্তুতি

বিষয়ভিত্তিক আলোচনা

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য: বাংলা ব্যাকরণ অংশের প্রায় প্রতিটি অধ্যায় থেকে এক থেকে দু’টি প্রশ্ন আসে। এসব অধ্যায়ের মধ্যে ভাষারীতি ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহার, বাগধারা ও বাগবিধি, ভুল সংশোধন বা শুদ্ধকরণ, অনুবাদ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, সমাস ও প্রত্যয়, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, বাক্য সংকোচন, লিঙ্গ পরিবর্তন অধ্যায়গুলো ভালোভাবে পড়লে প্রশ্ন কমন পাওয়া যাবে। আর সাহিত্য অংশের জন্য নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের সব লেখক পরিচিতি সম্পর্কে অধ্যয়নের পাশাপাশি অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক সম্পর্কে জানতে হবে। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন ও পিএসসির ক্যাডার, নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করলে পরীক্ষায় কমন পাওয়া যাবে। গণিত: গণিতে ভালো করতে হলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বইগুলো বারবার অনুশীলন করতে হবে। পাটিগণিত থেকে লসাগু, গসাগু, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি, অনুপাত-সমানুপাত এসব অধ্যায় ভালো করে অনুশীলন করলে প্রশ্ন কমন পাওয়া যাবে। আর বীজগণিতের জন্য করতে হবে উৎপাদক, বর্গ ও ঘনসংবলিত সূত্রগুলো ও প্রয়োগ, গসাগু, সূচক, লগারিদম এসব অধ্যায় থেকে প্রতি বছরই প্রশ্ন থাকে। জ্যামিতির জন্য রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্ত অধ্যায়গুলো আয়ত্তে রাখা বিশেষ জরুরি। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোর বিসিএস প্রশ্ন ও শিক্ষক নিবন্ধন প্রশ্নগুলো বারবার অনুশীলন করলেও পরীক্ষায় ভালো করা যাবে। ইংরেজি: ইংরেজি বিষয়ে ভালো করতে হলে গ্রামারের খুঁটিনাটি বেশি করে জানতে হবে। অর্থাৎ গ্রামার অংশকে গুরুত্ব দিয়েই এ অংশে ভালো করা সম্ভব। এই গ্রামার অংশ থেকেই স্কুল ও কলেজ উভয় পর্যায়েই প্রশ্ন আসে। Completing Sentences, Translation from Bengali to English, Change of parts of speech, Right forms of verb, Fill in the blanks with appropriate word, Transformation of sentences, Synonyms and Antonyms, Idioms and Phrases, Article  এই অধ্যায়গুলো মনোযোগসহকারে পড়লে প্রশ্ন কমন পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোর প্রশ্নগুলো বারবার অনুশীলন করে পরীক্ষায় ভালো করা যাবে। সাধারণ জ্ঞান: এ অংশে ভালো করতে হলে প্রয়োজন নিয়মিত পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়া এবং দেশি-বিদেশি সমসাময়িক খবরগুলো নিজের আয়ত্তে রাখা। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পরিবেশ এবং রোগব্যাধি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, জলবায়ু, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, এবং অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত থাকা দরকার। আর আন্তর্জাতিক অংশের জন্য বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা ইত্যাদি বিষয় জেনে রাখা আবশ্যক। সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও মাসিক জ্ঞানপত্র পড়তে পারেন। এ ছাড়া বাজারে প্রচলিত সাধারণ জ্ঞানের যেকোন একটি ভালো গাইড বই (যেমন: ক্যারিয়ার এইড সাধারণ জ্ঞান) পড়লে পরীক্ষায় ভালো করা যাবে।

লিখিত পরীক্ষা: প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ঐচ্ছিক বিষয়ের ওপর ১০০ নম্বরের ৩ ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। লিখিত পরীক্ষার জন্য এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রদত্ত সিলেবাস এনটিআরসিএ-এর ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। পাশাপাশি স্কুল পর্যায়ের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বইগুলো পড়তে হবে এবং কলেজপর্যায়ের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স পর্যায়ের বইগুলো পড়লেই চলবে। এ ছাড়া বিগত বছরের প্রশ্ন থেকেও অনেক কমন পাওয়া যাবে। প্রতিটি প্রশ্নেরই বিকল্প প্রশ্ন থাকবে। তাই যে প্রশ্নটি ভালো পারবেন সেটির উত্তর দিবেন।

মৌখিক পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিবে। ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় সকলেই উত্তীর্ণ হন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট অনার্স বিষয়ের পাশাপাশি মৌলিক বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং সাম্প্রতিক ঘটনাসহ সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। পরিশেষে বলা যায়, মানুষের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি ‘শিক্ষকতা’কেও প্রভাবিত করেছে নানা মাত্রায়। যার অনিবার্যতায় শিক্ষকতা এখন আর নিছক ঐতিহাসিক সেবা নয়, চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ারও বটে। নানা অবক্ষয়ের এদেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে কাণ্ডারির বড় দরকার। একমাত্র আদর্শ দেশপ্রেমিক শিক্ষকরাই পারেন সেই কাণ্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে। - প্রেরণা ডেক্স

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির