post

সোজা কথা

০৯ আগস্ট ২০১১
মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও ধর্মের রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা, মর্যাদা ও পদ্ধতি। প্রতিটি সত্তা নিজস্ব দৃষ্টিকোণের আলোকে পরিচালিত হলেই পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির সার্থকতা যথার্থভাবে হয়ত বা উপলব্ধি করত। কিন্তু যত দোষ নন্দ ঘোষ। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে নানাবিদ পরীক্ষার মাঝে অবতীর্ণ করে, খাঁটি বান্দা বাছাই করে পুরস্কৃত করতে চান। সবাই পুরস্কৃত হলে সত্যিকারার্থে পুরস্কারের অন্তর্নিহিত অমিয় সুধা লাভ অসম্ভব তাই ভাল ও মন্দের, হক ও বাতিলের গরমিল চিরন্তন। জানা-অজানার ভেতর রয়েছে বিস্তর ফারাক। আল্লাহতায়ালা তাই মানুষকে বিবেক দিয়ে এ পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে প্রেরণ করেছেন। এ মঞ্চের অলিতে-গলিতে রয়েছে সফলতার সৌধদ্বার। অন্য দিকে রয়েছে অসংখ্য চোরাগলি। মানুষ তার বিবেক দিয়ে প্রকৃত চূড়ান্ত সফলতার জন্য নিরলস কাজ করে। কেউবা সফল হয় আবার কেউ বা বিফল। মানুষের জীবন পরিগ্রহের বিভিন্ন অসমঞ্জস্যতা। আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে খুবই বেমানান। তাই নিত্য ঘটমান কিছু চিত্র উপস্থাপন করার প্রয়াস চালাচ্ছি। যদিও বা তা অনেকের কাছে তিক্ত। রাসূল (সা) বলেছেন, ‘হক কথা বল যদিওবা তিক্ত।’ আমরা মুসলমান বলে নিজেদেরকে দাবি করি। কিন্তু একটু ভেবে দেখেছি কি আমরা নামে মুসলমান না কাজে মুসলমান। মুসলমান অর্থ আত্মসমর্পণকারী। অর্থাৎ সকল মতের ও পথের কুরবানি দিয়ে আল্লাহর পথ অনুসরণ করা। কুরআনে কারীমে আল্লাহতায়ালা বলেন, “তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করো, এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না।” অথচ আমরা সত্যিকারার্থে প্রতিটি মুহূর্তে ইসলামের নির্দেশ অমান্য করছি। যেমন : আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি না, হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই করছি না, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ করছি না। ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবনবিধানের নাম। আমরা নিজেদের জন্য সুবিধাজনক অংশ মানি এবং কষ্টসহিষ্ণু অংশ মানি না। ইসলামকে প্রচলিত ধর্মের মত গ্রহণ করেছি। হিন্দুদের বার মাসে তের পূজা, খ্রিষ্টান-বৌদ্ধরাও বহু খোদায় বিশ্বাসী। অনুষ্ঠানসর্বস্ব তাদের ধর্ম। ইসলাম সে ধরনের কোনো ধর্মের নাম নয়। বরং ইসলাম একটি জীবনব্যবস্থার নাম। এর পরও অজ্ঞতাবশত মুসলমানরা ইসলামকে অনুষ্ঠানসর্বস্ব ধর্ম হিসেবে পালন করছে। দুই ঈদের নামাজ, শুক্রবারের নামাজ, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন ইত্যাদিতেই শুধুমাত্র ইসলমাকে খুঁজে ফিরে। শুক্রবারের নামাজ পড়ে নিজকে মুসলমান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করতে চায়। ঈদের নামাজকে ইবাদতের পরিবর্তে উৎসব হিসেবে গ্রহণ করে তৃপ্তি পায়। অথচ জীবনে প্রতিটি বিভাগে ইসলাম পালনের নির্দেশ রয়েছে। পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, অর্থনৈতিক জীবনসহ জীবনের সকল দিক ও বিভাগের পূর্ণাঙ্গ আদেশ ও নিষেধ ইসলাম শেষ নবী মুহাম্মদ (সা) কর্তৃক কুরআনে করীমের মাধ্যমে বর্ণনা করেছন। কুরআনুল করীমের নির্দেশিত পথ অনুসরণ ও অনুকরণ করতে মুসলমানরা ব্যর্থ হয়েছে। কুরআনকে শুধুমাত্র অধ্যয়নের বই এবং সুন্দর বসনে আবৃত করে আলমিরার ফ্রেমে বন্দী করে রাখা হচ্ছে। কুরআনের গবেষণা করে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য টমাহক বোমাসহ সকল প্রকার মারণাস্ত্র তৈরি করছে। মুসলমানদের একটি অংশ কুরআনকে ঝাড়-ফুঁ ও তাবিজের বস্তুতে পরিণত করেছে। আর একটি অংশ মাজার পূজা ব্যবসায় লিপ্ত। আল্লাহতায়ালার হাক্কানি বান্দাদের নাম করে গড়ে তুলেছে বড় বড় ইমারত। যেখানে নেই কবরের কোনো চিহ্ন। প্রতি বছর পালন করা হয় জৌলসপূর্ণ ওরস মোবারক। তৈরি হচ্ছে সুন্দর সুন্দর মসজিদ কিন্তু নেই মুসল্লি। এসব কিয়ামতের সুস্পষ্ট লক্ষণ। ইসলামকে অত্যন্ত ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয় টিভি-সিনেমা সিরিয়ালে। ভিলেন চরিত্রে অভিনীত ব্যক্তিকে পরানো হয় টুপি, দাড়ি!। উপস্থাপন করা হয় ইসলামী জীবনব্যবস্থার অনুসারীদের ফানডামেন্টালিস্ট ও কনজারবেটিভ হিসেবে। বর-কনের কল্যাণ কামনা করে জারি সারি গাওয়া ছিল আমাদের প্রাচীনতম ঐতিহ্য। কিন্তু বর্তমানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে ছড়িয়ে দেয়া হয় উলঙ্গপনা ও উন্মাদনা, হই হাঙ্গামায় কাতরাতে থাকে অসুস্থ প্রতিবেশী। ঘৃণতম অপসংস্কৃতি! নারীদের জন্য ইসলাম পর্দা ফরজ করেছে। রাস্তায় দেখা যায় মা-খালা-দাদীর মতো বয়োবৃদ্ধরা বোরকা পরে পর্দা করে শালিন পোশাক পরেন কিন্তু তাদের মেয়ে বা নাতনিরা স্বল্প বসনে! প্রায় অর্ধ উলঙ্গ থাকতেই খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। অথচ পর্দা পালন করা ফরজ ছিল যুবতীর জন্য। এ বেপর্দার ভয়াবহ পরিণতি সাময়িকভাবে বোঝানো গেলেও সুদূরপ্রসারী ফল ভয়াবহ। এ ব্যাপারে অভিভাবক সমাজ নির্লিপ্ত। নারীর নিরাপত্তার জন্য পর্দা ঢালস্বরূপ প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে ডিস এন্টিনার সংযোগ একবারে সহজলভ্য। হিন্দু ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্মসহ সকল ধর্মের মতাদর্শ চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস চালাচ্ছে। পর্দাহীনতাসহ সকল কুরুচিপূর্ণ চরিত্রগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপিত হচ্ছে। এবং বাস্তব জীবনে এসব প্রতিফলিত করতে গিয়ে অগণিত অঘটন ঘটছে। অনেক পরিবার মাদকাসক্তি ও অবৈধ যৌনাচার ব্যাধিতে আক্রান্ত। একটি পরিবার নয়, এভাবে পুরো রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যায়। পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার ফাঁকে আদরের সন্তানটি অসৎ সঙ্গে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যায়। ধর্ম শিক্ষা না দেয়ার কারণেই মূলত এই বিপদ। অবশ্য কিছু অভিভাবক মনে করেন ধর্ম এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়। যে যাই বলুক, দিবালোকের মত সত্য যে, ধর্ম ব্যতীত প্রকৃত পক্ষে আলোকিত মানুষ হতে পারে না। ধর্ম মানুষের জন্য আলো। ধর্ম কল্যাণ ও সুন্দরের সোপান। কারে কছে যদি জ্ঞান থাকে সে প্রকৃত সফল ব্যক্তি নয় যদি তার সাথে ধর্ম যোগ না হয়। ধর্মহীন জ্ঞানী জ্ঞানপাপী। সে জ্ঞানের অপব্যহার করে একজন অন্ধ ব্যক্তির ন্যায়। চক্ষুষ্মান ব্যক্তি আলোক মশাল দিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষকে আলো দিয়ে সাহায্য করে, পক্ষান্তরে অন্ধ ব্যক্তি আলোকমশাল দিয়ে যতটুকু মানুষের কল্যাণ করে তার চাইতে ঘর-বাড়িতে আগুন লাগিয়ে ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে অনেক বেশি। যুগের চরম উন্নতির যুগে পারমাণবিক বোমাসহ অনেক মারণাস্ত্র তৈরি হচ্ছে। এই প্রযুক্তিগুলোর অপব্যবহারের ধ্বংস হয়েছে হিরোশিমা নাগাসাকির মত অসংখ্য জনপদ। শক্তি সমৃদ্ধির পাশাপাশি ধর্ম যদি থাকত তাহলে মানবজাতির ধ্বংসে এসবকে ব্যবহার করা হতো না। ধর্মনিরপেক্ষতার নাম করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দোহাই দিয়ে দেশের জনগণকে ধর্মহীন করার হীন চক্রান্ত চলাচ্ছে একটি মহল। অথচ বাংলাদেশের মানুষের মাঝে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে তা পৃথিবীতে বিরল। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের হিন্দুদের নির্যাতনে নিহত হয়েছে লাখো মুসলমান। বাবরী মসজিদের ঘটনা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ধর্মের যৎ সামান্য শিক্ষা দীক্ষা আছে তাও সরকার বাদ দিয়েছে। নিজের কল্যাণ নিজে না বুঝলে কী আর করা। প্রতিবাদকারীদের জঙ্গি আর মৌলবাদী হিসেবে উপস্থাপন করে সত্যিকারার্থে নতুন প্রজন্মকে ধর্মীয় চেতনহীন করা। তাই বলতে হয় সরকারের মাথায় ভূত চড়েছে। অন্যের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করাটই মূল টার্গেট! সরকার নতুনভাবে ভাববে আর ধর্ম পালনে উদ্বুদ্ধ করে জাতিকে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আর এ ক্ষেত্রে ইসলামই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে পারে এটি স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণিত। *** প্রগতির নামে সমাজ প্রতিনিয়ত দুর্গতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’ সরকারিভাবে উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান একটি অপরাধ। দণ্ড ৫০ টাকা। কিন্তু এই এর কোনো কার্যকারিতা। গাড়িতে ড্রাইভার, প্যাসেঞ্জার, স্কুল-কলেজে শিক্ষক- ছাত্র, আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ধূমপান করছে প্রকাশ্যে দিবালোকে। পরিবেশদূষণ এবং অন্যের অসুবিধার কথা কি একবার চিন্তা করেন ধূমপায়ীরা? ছোট শিশুর সামনে বাবা বা পরিবারের সদস্যরা ধূমপান করেন। বাচ্চাদের নার্ভ থাকে দুর্বল, এতে সহজেই তারা আক্রান্ত হয় বিভিন্ন রোগে। সম্পদ আল্লাহতায়ালার এক অপার নেয়ামত। তবে আল্লাহ কাউকে সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন আবার কাউকে না দিয়ে পরীক্ষা করেন। পিতার সম্পত্তির অধিকারী হিসেবে পুত্রের দুই ভাগের এক অংশ পায় মেয়ে। পিতা সম্পত্তির বণ্টন করে না গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাইয়েরা বোনদের সম্পত্তি কুক্ষিগত করতে দেখা যায়, যা চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ। নিজের কুপ্রবৃত্তি বা শখ মেটানোর জন্য লক্ষ কোটি টাকা খরচ করার লোক দেখা যায় অহরহ কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে অসংখ্য বনিআদম খোলা আকাশের নিচের আশ্রয়হীন অবস্থায় বাস করে-এ ব্যাপারে তাদের নেই কোনো চিন্তা। ভাল কাজে সাহায্য চাইলে তাদের অর্থ থাকে না। তাদের জন্য ধিক! দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ এবং অনৈতিকতার চরম দাপট চলছে। ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না। যেখানে ঘুষ সেখানে চাকরি, মেধা অচল! আবার ঘুষ দিলে কাজ হয় না এমনটা অস্বাভাবিক। সরকারি আমলারা কলমের খোঁচায় হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ-কোটি টাকা। দেশ তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। যেমন বিদ্যুৎ খাতে বিভিন্ন কলকারখানায় প্রতি মাসে যা বিল আসে তার অর্ধেকও মিটারে ওঠে না। এতে কর্মকর্তারা পান বহু অঙ্কের মাসোয়ারা। প্রত্যাশার প্রাপ্তি মেলে না। এতে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ মাহরুম হয় প্রায় শতকোটি টাকা। ** বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশ বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। কিছুদিন আগে টিআইবির রিপোর্টে পুলিশের দুর্নীতির সামান্য খতিয়ান জাতির সামনে তুলে ধরলে সরকার ও পুলিশ বাহিনী তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। বাংলাদেশের সাধারণ যে কোনো মানুষকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়- সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ কারা? শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ পুলিশ শব্দটি বলতে ভুল করবে না। ভদ্র ও সৎ মানুষ থানায় গেলে মামলা নেয়া হয় না। প্রদান করতে হয় বড় অঙ্কের হাদিয়া- তোহফা আর আদর-আপ্যায়ন। টাকার জোরে অপরাধীকে বানানো হয় সাধু আর নিরপরাধীকে বানানো হয় জঘন্য মামলার আসামি। বছরের পর বছর কাটতে হয় জেলহাজতে। যেন বিচারের বাণী কাঁদে নিভৃতে। জগৎটা জোর যার মুল্লুক তার। সৎ অফিসাররাও সময়ের ব্যবধানে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন অথবা অসৎপ্রবণতায় জড়িত হয়ে যান। কথায় আছে চোরের মার বড় গলা। থানায় গেলে নীতিবাক্যগুলো শুনা যায়। ইদানীংকালে এসব আচরণ জঘন্যতার চরম শিখরে উপনীত হয়েছে। ইচ্ছামত যে কোনো সাধারণ মানুষকে থানায় অথবা টহল এলাকায় আটকে রাখা হচ্ছে। দাবি অনুযায়ী টাকা দিলে ছেড়ে দেয়া হয়। এ যেন মুক্তিপণ আদায়ের ডিজিটাল নমুনা। ১৫৪ ধারার অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি করার নব-কৌশল। বিভিন্ন মামলা তদন্ত কর্মকর্তাগণ হ্যাঁ-কে না করেন আবার না কে হ্যাঁ করেন। এ কেমন চরম অপমান আর চরম লজ্জাকর ব্যাপার। এ চরম অধঃপতনের কুণ্ডলী হতে পুলিশ বাহিনীকে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে। নচেৎ মানুষের অধিকার চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হবে। মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের বিলুপ্তি ঘটবে। ** কিছু ঘটনায় লক্ষ করা গেছে ভুক্তভোগীরা থানাতে মামলা করতে গেলে কোনোভাবে মামলা নেয়া হয় না উল্টো নিরপরাধ ব্যক্তিদের ঘাড়ে চাপে মামলার পর মামলা। জবাব চাইলে ওপরের নির্দেশ বলে চালিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ কি চিন্তা করে না(?) তারা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের পকেটের টাকায় জীবন নির্বাহ করে! অথচ প্রকৃত অপরাধীদের দাপটে সাধারণ মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তায় দিনপাত করছে নাম না জানা কত মানুষ। স্বাধীনতা-পরবর্তী থেকে লক্ষ্য করা গেছে গণতন্ত্রের আবরণ নিয়ে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় গেলেও সত্যিকারার্থে নিজেদের আখের গোছাতে গিয়ে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে অপব্যহার করছে। রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারণীদের হীন বেড কালচার থেকে ফিরে আসা জরুরি। নচেৎ সরকারের ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে পুলিশ বাহিনীকে অন্যায়ভাবে কাজে লাগাতে ক্ষমতাসীনদল মোটেও ভুল করবে না। এতে দেশের অবস্থা হবে সঙ্কটাপন্ন, যার চূড়ান্ত পরিণতি হবে গৃহযুদ্ধ। সরকার যায় সরকার আসে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বছর থকে এক এক করে অনেকগুলো বছর-যুগ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি আমাদের জীবন যাত্রার মান। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারিনি। আমরা বিশ্ব দরবারে। দরিদ্রতার কশাঘাত আর রাজনৈতিক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় হোঁচট খেয়ে দেশ পঙ্গু প্রায়। নতুন সরকার এসে পূর্ববর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করাই অন্যতম গুরুদায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেন। দেশের কী সমস্যা, জনগণের কী সমস্যা? এসব নিয়ে ভাববার সরকারে ফুরসত কই। সরকারের ব্যর্থতা আর অপকর্মের বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ জানালেই বিপদ। জেল-জুলুম- হুলিয়া অবধারিত। জনগণের বুঝতে ভুল হয় না তারা গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে স্বৈরতন্ত্রের যাঁতাকলে পিষ্টে গুমরে মরছে। প্রতিশোধপরায়ণতা পরিত্যাগ করে পূববর্তী সরকারে ভাল পদক্ষেপগুলো আমলে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক যাত্রা কি কেউ শুরু করবে? একজন প্রধানমন্ত্রী তার শাসনামলে তিনি কি শুধু কোনো দলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন? নিশ্চয়ই দেশের আপামর জনসাধারণের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। আমরা কি এমন প্রধামন্ত্রী পাব যিনি সকলের কথা ভাবেন? তথ্য সন্ত্রাসের কারণে জনগণ সঠিক সংবাদের পরিবর্তে ভুল সংবাদ পেয়ে বিভ্রান্ত হয়। ভাল-মন্দ তফাত করতে ব্যর্থ হয়। জনজীবনে শুরু হয় অশান্তি। সংবাদ মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী। কিন্তু সংবাদকে অপব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার প্রয়াস চালাতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে কিছু মিডিয়া। প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার হিংস্র দাপটে বিশ্বমানবতা ভূলুণ্ঠিত। বিসিসি, সিএনএন, ভুয়া চ্যানেলগুলো বছরের পর বছর মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। জেহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে মুসলমানদের ওপর লেলিয়ে দিচ্ছে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে। নির্বিচারে খতম করে দেয়া হয়েছে ইরাক ও আফগান জনপদকে। ফিলিস্তিনিরা যুগের পর যুগ তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আর্তি যেন রক্তসাগরে পরিণত হয়েছে। লাখো লাখো আবালবৃদ্ধবনিতার জীবনের সমাপ্তি আর কোটি কোটি মানুষের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে অনন্তকাল থেকে। কিন্তু পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ও তার দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো সঠিক তথ্য জানাতে দেয়নি বিশ্ববাসীকে। বর্জুয়াবাদী সংবাদমাধ্যম শান্তিকামী মানবতার জন্য ভয়াবহ অভিশাপ। ** কিছু দিন আগে র‌্যাবের হাতে একটি ডাকাতদল ধরা পড়ার পর স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করে যে, তারা সরকারি আমলাদের বাসায় ডাকাতি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাসাগুলোতে নগদ টাকা পাওয়া যায় এবং ডাকাতির পর আমলারা টাকা চুরি হয়েছে সেটা মিডিয়াতে বলতেও পারে না। আবার মামলাও করে না। কারণ তাদের অবৈধ আয়ের গোমর ফাঁক হয়ে যাবে। যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজের জন্য এক অভিশাপ। যারা যৌতুকের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা নিজেদের বিয়েতে বা সন্তানদের বিয়েতে যখন শ্বশুরালয়ের পক্ষ হতে হাদিয়া তোহফা পাওয়ার জন্য সচেষ্ট হন তখন এ লজ্জা রাখার জায়গা কোথায়। বিয়েতে মেয়ে পক্ষের ওপর মেহমান খাওয়ানোর এক চরম অনিয়ম চালু আছে। অথচ ইসলাম বলেছে ছেলে পক্ষের সাধ্য থাকলে ওলিমা খাওয়াবে। যা রাসূল (সা) এর কোনো কালে ছিল না। আমাদের সমাজব্যবস্থায় শাশুড়ি বউয়ের সম্পর্ক যেন দা-কুমড়া। যে কোনো মা তার মেয়েকে শ্বশুরালয়ে সুখে-শান্তিতে থাকুক এটা কামনা করেন। কিন্তু অন্যের মেয়ে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে ঘরে এলে তার শান্তি কি শাশুড়িরা নিশ্চিত করতে পারেন? মানুষের ওপর মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। সব জায়গায় অবিশ্বাসের ছায়া। (গ্রাম্য প্রবাদ আছে ‘‘ট্যাঁরায় ক্ষেত খায়’’) যাকে যেখানে বিশ্বাস করে কোনো গুরু দায়িত্ব দেয়া হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেন নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। সিনিয়র আর জুনিয়রের ভেতর নেই কোনো শ্রদ্ধাবোধ। পিতার প্রতি নেই পুত্রের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা, পিতার নেই পুত্রের প্রতি কোনো দয়া আর স্নেহ। মা হত্যা করে তার সন্তানকে করছে গুম। পুত্রের হাতে পিতা খুন! এ যেন নব্য সীমার। হরেক রকমের অসঙ্গতি আমাদের ইতিহাস ঐহিত্য আর সামনে এগিয়ে যাওয়াকে কুরে কুরে শেষ করে ফেলছে। সত্যকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করতে না পারা কাপুরুষের কাজ। আমরা সবাই মিলে সত্যকে সুন্দরকে সর্বস্তরে যদি ফুলের ঘ্রাণের মতো ছড়িয়ে দিতে পারি সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী প্রমাণ করতে পারি তাহলেই এই ধরা হবে বসবাসের এক সুশীতল নীড়। এ জন্যই কবি গেয়ে ছিলেন সাহসিকতার জয়গানÑ উহারা প্রচার করুক হিংসা-বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ, আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ। [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির