post

২৮ অক্টোবর ২০০৬ আওয়ামী লীগের পৈশাচিকতা ও উগ্র রাজনীতির জ্বলন্ত প্রমাণ

০৮ অক্টোবর ২০১৪

 মো: আতিকুর রহমান

Chhatrasangbad১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের জাগরণ ঠেকানোর জন্য যে পৈশাচিক, অমানবিক ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছিল, তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তৎকালীন সামরিক জান্তার জন্য কলঙ্ক বয়ে এনেছে। ঐতিহাসিকগণ ২৫ মার্চ রাতকে ‘কলঙ্কিত এক রাত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জনগণ কখনও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মতো জঘন্য ও হিং¯্র কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি আশা করেনি। যার ফলে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা কলঙ্কিত হবে। আর কলঙ্কের দাগ দেশটিকে বয়ে বেড়াতে হবে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে তেমনি একটি কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূত্রপাত করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। যাতে রক্তাক্ত হয়েছে পল্টন, কলুষিত হয়েছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, বিপন্ন হয়েছে মানবতা, কলঙ্কিত হয়েছে দেশ, ধ্বংস হয়েছে মনুষ্যত্ববোধ আর বিকশিত হয়েছে প্রতিহিংসা, নির্মমতা, নৃশংসতা, বর্বরতা আর উগ্ররাজনীতি। যে নির্মমতা আর পৈশাচিকতা হয়তবা হার মানিয়েছে আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও। ক্ষুণœ হয়েছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ বা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানুষের মর্যাদা। যে আচরণ পশুর সাথে পশুও করে না, শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিরোধের কারণে সে অমানবিক, হিং¯্র ও পৈশাচিক আচরণ করেছে মানুষের সাথে মানুষ। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সে লোমহর্ষক, বর্বর ও নৃশংসতার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়েছে গোটা দেশ, থমকে দাঁড়িয়েছিল কোটি কোটি মানুষ, হতভম্ব বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশের আপামর জনতা। মানুষ যেন তার চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না সে কি স্বপ্নের মধ্যে আছে না বাস্তবে তা দেখছে। এটা কি মানুষের কাজ না মানুষরূপী কোনো অমানুষ দৈত্য-দানবের কাজ। এ ঘটনা শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছে। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। অবাক হয়েছে বিশ্ববিবেক। ঘৃণা ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অসংখ্য দেশ। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের মানুষরূপী আওয়ামী হায়েনাদের আচরণ দেখে নুতন করে বাংলাদেশকে চেনার সুযোগ পেল গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদার জায়গাটিকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অবশ্য ক্ষমতাই যাদের মূল নেশা তাদের কাছে তো মর্যাদা আর মনুষ্যত্ববোধ মূল্যহীন। সেদিনের সে ঘটনায় শুধু দেশ হিসেবে আমরা কলঙ্কিত হইনি ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে সে কালিমায় সম্পৃক্ত হয়েছে গোটা মুসলিম উম্মাহ। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ৩৫ বছর পর দেশ পেল ‘কলঙ্কিত এক দিন’। যে কলঙ্কের তিলক মুছতে অপেক্ষা করতে হবে আমাদের বহুদিন। দেখতে দেখতে সে লোমহর্ষক ঘটনার ৮ বছর অতিক্রান্ত হতে চলছে। সময়ের গতিধারায় তা হয়তবা চলে যাবে ইতিহাসের আরো অনেক দূরে। কারণ বাংলাদেশ এমন একটি বিচিত্র দেশ যেখানে প্রতিনিয়ত বহু ইতিহাসের জন্ম হয়। ছোট দেশ হলেও ভালো-মন্দ মিলে আমাদের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। তবে ইতিহাসের প্রয়োজনেই কিছু ইতিহাসকে সর্বদায় চলমান রাখা জরুরি। যাতে জাতির ভবিষ্যতের কর্ণধাররা বা আগামী প্রজন্ম সে ইতিহাসকে বিশ্লেষণ করে তাদের জীবন ও দেশ পরিচালনার করণীয় নির্ধারণে মৌলিক ভূমিকা পালন করতে পারেন। উদ্যোগ নিতে পারেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের। কারণ কিছু ইতিহাসের কারণে জাতি হয় নন্দিত আবার কিছু ইতিহাস জাতিকে করে নিন্দিত। উভয় প্রকার ইতিহাসের সঠিক মূল্যায়নই পারে একটি জাতির আগামীর পথচলাকে সুন্দর, শাণিত ও গতিশীল করতে। ইতিহাসের সে ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রেক্ষিতে ইসলামী ছাত্রশিবির ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালের সে নৃশংস ও পৈশাচিক ঘটনাকে জনগণের কাছে জাগিয়ে রাখতে চায়। কেননা সময়ের পালাবদলে এ নৃশংস ও বর্বর কর্মকাণ্ডের ইতিহাসও বিকৃত হয়ে যেতে পারে। আওয়ামী ক্যাডারদের লগি-বৈঠার তাণ্ডব হয়তবা সময়ের গতিধারায় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব বলেও ইতিহাস রচনা হতে পারে। কারণ যারা সদা সর্বদায় মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত, ইতিহাস বিকৃত করাই যাদের মূল চরিত্র তাদের ব্যাপারে এ ধারণা করাটা মোটেই অমূলক নয়। ক্ষমতার স্বার্থে যারা দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীনতার ইতিহাসকে একপেশে করে রচনা করতে পারে তাদের জন্য এ জাতীয় ছোট ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দেয়াটা মোটেও কঠিন কাজ হবে না। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ছিল তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন। এর আগের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রেডিও-টিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের নিমিত্তে জোটভুক্ত সকল দল আলাদা আলাদা সমাবেশের আয়োজন করেছিল। বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের অফিসের সামনে আর জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকারমের উত্তর গেটের সামনে সমাবেশের আয়োজন করেছিল। এদিকে চারদলীয় জোটের ক্ষমতা হস্তান্তরকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে তখন টানটান উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। ক্ষমতালিপ্সু শেখ হাসিনা ৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে ক্ষমতার নেশায় উন্মাদের মতো আচরণ করা শুরু করেছিল। চারদলীয় জোট যখন সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন তার দলের নেতাকর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ মানার জন্য আওয়ামী লীগ সারাদেশ থেকে ভাড়া করে অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের আগেই ঢাকায় এনে জমা করেছিল। যাদেরকে জনগণ ২৮ অক্টোবরের দিন অস্ত্রহাতে রাজপথে দেখেছিল, ইতঃপূর্বে তাদেরকে আর কখনো রাজপথে দেখা যায়নি। মূলত সেদিন ঢাকার রাজপথে একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরির জন্য আওয়ামী লীগ পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি এত নির্মম, পৈশাচিক, নৃশংস, জঘন্য, অমানবিক, বর্বর ও মনুষ্যত্বহীন হবে এটা দেশর জনগণ মোটেও ভাবতে পারেনি। ঈদ-পরবর্তী ঢাকা তখন ছিল প্রায় জনশূন্য। রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়া তখনও সাধারণ মানুষ খুব বেশি শহরমুখী হয়নি। অন্য দিকে আগে থেকেই সাধারণ জনগণ বুঝতে পেরেছিল ঈদ-পরবর্তী দেশের রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হবে। যেহেতু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ঈদের আগেই তার দলের নেতা-কর্মীদেরকে লগি-বৈঠা প্রস্তুত করা এবং তা নিয়ে দলে দলে ঢাকায় আসার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আওয়ামী রাজনীতি যে কত জঘন্য ও উগ্র তা ক্ষমতার বাইরে থাকলে জনগণ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারে। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ জাতির কাছে ওয়াদা করেছিল তারা বিরোধী দলে গেলেও আর হরতাল করবে না। সে আওয়ামী লীগ ২০০১-২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে ১৭৬ দিন হরতাল দিয়েছিল। তা ছাড়া আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল ও ঝাড়– মিছিল হয়েছিল আওয়ামী নেতা- নেত্রীদের নেতৃত্বে। এক সময়তো সর্বোচ্চ আদালত শেখ হাসিনাকে ‘রং হেডেড’ বলে মন্তব্য করেছিল। সময়ের পরিবর্তনে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ তার খোলস পরিবর্তন করে সাধু সাজার চেষ্টা করলেও জনগণ ঠিকই তা মনে রেখে চলছে। এ জন্য তারা এখন ডিজিটাল কায়দায় জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। যাহোক পূর্বনিধারিত কর্মসূচি হিসেবে ২৮ অক্টোবর বিকেল ৩টায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াত সমাবেশের আয়াজন করেছিল। একই দিনে পল্টন ময়দানসহ বঙ্গবন্ধু এভিনিউকেন্দ্রিক আওয়ামী লীগ সমাবেশের আয়োজন করে। যা অনেকটা গায়ে পড়েই সংঘাত বাধানোর জন্যই করা হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ঈদের আগেই সমাবেশ বাস্তবায়নের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছিল। কারণ ঈদের ১ দিন পরেই সমাবেশ। ঢাকার জনশক্তিদের ঈদের পরদিনই ঢাকায় চলে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সে হিসেবে ঈদের পরদিনই আমাদের ঢাকায় চলে আসতে হয়েছে। পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী সমাবেশের দিন সকাল ৯টার পূর্বেই শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার জন্য বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে গিয়ে হাজির হলাম। আমাদের প্রতি পূর্ব থেকেই নির্দেশনা ছিল সংঘর্ষ পরিহার করার জন্য সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিতে। শত উসকানির মধ্যেও যেকোনো মূল্যে আমাদের সমাবেশ সফল করতে হবে। যেখানে আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। সকাল ৯ টা থেকে আমরা যার যার অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করলাম। আমরা প্রথমত, পল্টন মোড় ঘেঁষে শৃঙ্খলা বিভাগের জনশক্তিদের সাজাতে লাগলাম। সকাল ১০টা থেকে আওয়ামী-যুবলীগের মিছিল আসা শুরু হলো। মিছিলকারী সকলের হাতে ছিল লগি-বৈঠা, লাঠি, হকিস্টিকসহ নানা আগ্নেয়াস্ত্র। মিছিলগুলো আমাদের পাশ দিয়ে পল্টন মোড় ক্রস করে মুক্তাঙ্গন হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দিকে যাচ্ছিল আবার কোনো কোনো মিছিল বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট দিয়ে পল্টন ময়দানের দিকে প্রবেশ করছিল। ধীরে ধীরে পল্টন এলাকা এবং তার আশপাশের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। আওয়ামী-যুবলীগের মিছিল থেকে উসকানিমূলক স্লোগান দেয়া হচ্ছিল। সংঘর্ষ পরিহারের স্বার্থে দায়িত্বশীলদের পরামর্শে আমরা শৃঙ্খলা বিভাগের জনশক্তিদের পল্টন মোড় থেকে সরিয়ে বায়তুল মোকাররম সংলগ্ন আজাদ প্রোডাক্টসের কাছাকাছি নিয়ে এলাম। রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে সকলকে দাঁড় করিয়ে আমরা বললাম মিছিলগুলোর গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য। যে হারে আওয়ামী লীগ সারাদেশ থেকে গুণ্ডা ও সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে এনেছিল সে তুলনায় তখন পর্যন্ত আমাদের উপস্থিতি পর্যাপ্ত ছিল না। কেবল মাত্র শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্বশীল ও জনশক্তিরা সেখানে অবস্থান করেছিলেন। যেহেতু বিকেল ৩টায় সমাবেশ সে কারণে জোহরের পর থেকে সাধারণ জনশক্তিকে আসার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। আওয়ামী যুবলীগের হাজার হাজার লোকের মিছিল একের পর এক পল্টন মোড় দিয়ে যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে খবর আসল আওয়ামী লীগ জুয়েলারি গলি (বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের গলি) দিয়ে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নুরুল ইসলাম বুলবুল ভাই ও জাহিদুর রহমান ভাইয়ের পরামর্শে আমাদের একটি গ্রুপকে পাঠানো হলো জুয়েলারি গলির মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করার জন্য। দ্রুততার সাথে শৃঙ্খলা বিভাগের জনশক্তিকে সাজিয়ে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছিল। সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশে আগত জনশক্তিদের লগি- বৈঠা বাহিনী দ্বারা আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে আমরা সাধারণ জনশক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব সমাবেশের দিকে আসার জন্য তাগাদা দিতে থাকলাম। বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে দু’টি মিছিল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ধর ধর বলে এক যোগে জামায়াতের সমাবেশকে ভণ্ডুল করার জন্য মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের দিকে ঢুকে পড়ে। সেখানে শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্ব পালনরত জামায়াত-শিবিরের জনশক্তিদের ওপর লগি-বৈঠা দিয়ে বর্বর হামলা চালায়। পাশাপাশি বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান করা নিরীহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর একযোগে হামলা করে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা জামায়াত শিবিরের জনশক্তিদের লক্ষ্য করে অনবরত গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল। এ হামলায় পিস্তলসহ বিভিন্ন ধারনের আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ডা: এইচ বি এম ইকবালও তার বাহিনী নিয়ে যোগ দেয়। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিল ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড। পল্টন এলাকার অসংখ্য বাণিজ্যিক ভবন, বিপণিবিতানসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালতে তারা আগুন লাগিয়ে দিল। রাস্তার পাশে বসে ব্যবসা করা ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ীদের সকল দোকানপাট জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দিল। তারা যখন মঞ্চ গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিল, সে সময় জামায়াত-শিবিরের জনশক্তিরা সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করে সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে তাদের আক্রমণ প্রতিহত করে যাচ্ছিল। পুরো পল্টন এবং এর আশপাশ এলাকাজুড়ে চলছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা লগি-বৈঠা বাহিনীর তাণ্ডব। লগি-বৈঠা আর অস্ত্রধারীদের হাতে একের পর এক আহত হতে থাকে অসহায় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম তখন পল্টন মোড়ের কাছে অবস্থান করছিলেন। তাকে দেখে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর। আওয়ামী হায়েনাদের লগি-বৈঠার উপর্যুপরি আঘাতে আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মুজাহিদ। তার পর নরপিশাচরা লগি- বৈঠা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে নির্মমভাবে শহীদ করে। জামায়াত কর্মী জসীমকে প্রীতম হোটেলের সামনে একাকী পেয়ে লগি-বৈঠা দিয়ে বেধড়ক মারধর করা শুরু করে। তিনি বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও প্রতিবারই তাকে আঘাত করতে করতে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়েছিল। এলোপাতাড়ি আঘাতের পর আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা তার লাশের ওপর ওঠে নৃত্য উল্লাস করতে থাকে। এই দৃশ্যই টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখা যায়। সেদিন আওয়ামী হায়েনারা জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমানকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, লাশটি টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল গুম করার জন্য। কিন্তু পুলিশের সহায়তায় যখন লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলো সেখানেও চলতে থাকে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম বাহিনীর লাশ দখলের খেলা। তারা নকল বাবা মা সাজিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল লাশটি। পরবর্তীতে এ কারসাজি ধরা পড়ায় নকল বাবা মা সটকে পড়ে। এখানেই শেষ নয়, আওয়ামী লীগ হাবিবুর রহমানকে নিজেদের কর্মী দাবি করে তার লাশের ছবি ব্যবহার করে পোস্টারও ছেপেছিল। লাশ নিয়ে রাজনীতির এর চেয়ে জঘন্য নমুনা আর কী হতে পারে? লগি-বৈঠা বাহিনীর হাত থেকে সমাবেশের মঞ্চ ও নেতৃবৃন্দকে রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন ছাত্রশিবিরের সাথী হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন। শিপনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য নরপিশাচরা তার হাত ধরে যখন পাল্স দেখছিল তখন তার মুখ নড়ে ওঠায় বাঁশের মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এ হাফেজে কুরআনের দাঁতগুলোকে তারা ফেলে দিয়েছিল। মানুষ নামের জীবের পক্ষে এটা কিভাবে সম্ভব? এরা কি মানব না দানব! হায়রে মানবতা! হায়রে মনুষ্যত্ববোধ। ধিক আওয়ামী লীগ ধিক! শিবিরের সাথী সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুমের মাথায় ইট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করায় তার মাথায় মগজগুলো এবড়ো থেবড়ো হয়ে গিয়েছিল। তিনদিন অজ্ঞান থাকার পর তিনিও শাহাদতের অমিয় সুধা পান করেন। এত কিছুর পরও বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা অবধি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা ঈমানের বলে বলীয়ান আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দেয়াল তৈরি করে রেখেছিল। সেদিন আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা বাহিনী শুধু জামায়াতের সভা পণ্ড করার জন্যই পৈশাচিক হামলা চালায়নি, তারা জামায়াতকেই নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল জামায়াতের সভামঞ্চে আগুন ধরিয়ে দিতে। তাইতো তারা আশপাশ ভবনের ছাদে উঠে বোমা ও বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অবস্থান নেয়। এত কিছুর পরও যখন জামায়াতের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হচ্ছিল, সভার শেষ দিকে আমীরে জামায়াতের বক্তব্য শুরু হলে তারা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পুনরায় হামলা চালায়। একদিকে ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা বর্ষণ করতে থাকে অপর দিকে পল্টন মোড় থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে লগি-বৈঠাধারীরা সমাবেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের জীবনবাজি রেখে ভূমিকার কারণে তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সেদিনের পল্টনের পৈশাচিকতায় শহীদ হন ৬ জামায়াত-শিবির কর্মী। আহত হন সহ¯্রাধিক আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদ। সেদিনের ঘটনায় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আহত হয়েছেন তৎকালীন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল ইসলাম বুলবুল ও মজিবুর রহমান মঞ্জু। পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন তৎকালীন শিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক রেজাউল করিম। এ ছাড়াও মহানগরী পর্যায়ের অনেক দায়িত্বশীল মারাত্মক আহত হয়েছিলেন। তাদেরকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে মাসের পর মাস। ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের শিবির নেতা আমান প্রায় দুই সপ্তাহ অজ্ঞান থাকার পর আল্লাহর অশেষ কৃপায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগের সেদিনের পৈশাচিকতা হালাকু খান, সীমার ও চেঙ্গিসখানের পৈশাচিকতাকেও অনেকাংশে হার মানিয়েছিল। একটি দলে কেউ কেউ হিং¯্র হতেই পারে কিন্তু অন্যরা তাদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে, নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে কিন্তু সেদিন সবাই যেন হিংস্র হয়ে গিয়েছে। প্রতিযোগিতামূলকভাবে মানুষ হত্যায় যখন কিছু লোক নেমে পড়ছিল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবলীলায় এ অমানবিক কাজটি প্রত্যক্ষ করেছিল, বাকি সবাই মিলে যেন কারোই কিছু করার নেই। প্রকাশ্য গুলিতে অনেকের শরীর ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়েছে, লগি-বৈঠা দিয়ে অসংখ্য জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর হাত পায়ের হাড় ভেঙে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। কারও কারও মাথা ফেটে মগজ পর্যন্ত বেরিয়ে গেছে। নির্মম আঘাতে অনেকের চেহারাও বিকৃত হয়ে গেছে। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারে আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে গেলেও হায়েনাদের হৃদয় একটুও গলেনি। বরং জননেত্রী! কর্মসূচি সফল করায় নেতাকর্মীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হায়রে মানবতা! হায়রে আমাদের মানসিকতা! হায়রে মানুষের জন্য রাজনীতি। এ অমানবিক ও পৈশাচিকতা দেখে আঁতকে উঠেছে বিশ্ববিবেক। বিশ্ববাসী দেখলো কিভাবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে ক্ষমতার লোভে একটি দল আরেক দলের কর্মীদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে। সে ঘটনা আজো স্মৃতিতে এলে অবাক হয়ে যাই, কী করে সেদিন হাজার হাজার লোকের আক্রমণ শত শত জামায়াত-শিবির কর্মী প্রতিহত করেছিল। কিভাবে দীর্ঘসময় মানবঢাল রচনা করে আওয়ামী হায়েনাদের আক্রমণ থেকে নেতৃবৃন্দ ও সমাবেশের জন্য তৈরি মঞ্চ রক্ষা করেছিল। একদিকে চলছে প্রতিরোধ, অন্যদিকে আসছে একের পর এক শাহাদতের সংবাদ। এ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র। মনে হচ্ছিল এ যেন আর এক কারবালা! যে আওয়ামী লীগ আজকে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে প্রহসন চালাচ্ছে, ২৮ অক্টোবর সেই আওয়ামী লীগই বড় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। সেদিন প্রকাশ্যে দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে তরতাজা তরুণদের নৃশংসভাবে হত্যা করে নারকীয় উল্লাস চালিয়েছিল তারা। লগি, বৈঠা, লাঠি, পিস্তল ও বোমা হামলা চালিয়ে যেভাবে সেদিন আওয়ামী ক্যাডাররা মানুষ খুন করেছে তা মনে হলে আজও শিউরে ওঠে সভ্য সমাজের মানুষ। সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ মেরে লাশের ওপর নৃত্য করে উল্লাস করার মতো ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। ২৮ অক্টোবরের সে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের দিনা শুরু থেকেই পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। যে পুলিশের পক্ষ থেকে ২৮ অক্টোবরের আগ থেকেই বারবার ঘোষণা করা হচ্ছিল লগি-বৈঠা, কাস্তে বা অন্য কোন অস্ত্রশস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ও বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে পুলিশের উপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের আগ্নেয়াস্ত্র ও লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা জামায়তের সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। অসহায় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের শত অনুরোধেও পুলিশ কোনো ভূমিকা রাখেনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লৎফুজ্জামান বাবরের ভূমিকাও ছিল রহস্যজনক। ঘটনার পরদিন জামায়াতে ইসলামীর পল্টন থানার তৎকালীন আমীর এ টি এম সিরাজুল হক বাদি হয়ে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের ৪০ জন নেতার নামসহ সহ¯্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পলাতক আসামি হিসেবে উল্লেখ করে ৪৬ জন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিট দাখিলের পর ২২ এপ্রিল ২০০৭ সালে মামলায় চার্জশিটটি গ্রহণ করে আদালত পলাতক আসামি শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরদিন ২৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার নাটকীয় আবেদনের প্রেক্ষিতে পরোয়ানা স্থগিত করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আদালত নির্দেশ দেন। অবশেষে ২০০৯ সালের ১৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে আদালত মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। আইন অনুযায়ী কোন হত্যা মামলা বাদির সম্মতি ছাড়া প্রত্যাহারের সুযোগ না থাকলেও মহাজোট সরকার তাই করেছে। এটি হলো আওয়ামী আইনের শাসনের জীবন্ত নজির!! ২৮ অক্টোবর সে ভয়াল দিনের কথা মনে পড়লেও আজও নিজের অজান্তেই আঁতকে উঠি। সেদিন কি নারকীয় ও পৈশাচিক কাণ্ডই না আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছিল। ২৮ অক্টোবরের মিশন ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নতুনভাবে জামায়াত-শিবিরকে মোকাবেলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ফখরুদ্দীন ও মইনউদ্দিন দুই বছর কেয়ারটেকার সরকারের নামে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে পাশের দেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশে একটি মীমাংসিত ইস্যুকে সামনে জাগিয়ে জামায়ত নেতাদের বিচারের জন্য জনমত গঠন করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে তা নিয়ে আসে যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে তারা নতুনভাবে প্রহসনের ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে তারা হত্যা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগের জামায়াত-শিবির নির্মূলের অভিযান ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর ধারাবাহিকতা মাত্র। তারা এখন আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এবং তাদের দলীয় লোকদের বিচারের আসনে বসিয়ে প্রহসনের বিচার বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলাীর নেতৃবৃন্দকে রাজনীতির ময়দান থেকে সরিয়ে দিতে চায়। ইতোমধ্যেই তারা মিরপুরের কসাই কাদেরের জঘন্য কাজের দায়ভার আমাদের প্রিয়নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে বিচারের নামে নাটক মঞ্চায়ন করে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মধ্য দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করেছে। পিরোজপুরের দেলু শিকদারের অপকর্মের দায়ভার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে আমৃত্যু কারাগারে থাকার ব্যাপারে আদালত রায় দিয়েছে। বাকি নেতৃবৃন্দের ব্যাপারে তাদের নাটক মঞ্চায়নও চূড়ান্ত পরিণতির দিকে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দলের কাছে আজকে বিচার বিভাগ অনেকাংশে জিম্মি। ন্যায়বিচারের বাণী আজ নীরবে নিভৃতে কাঁদে। তবে ইতিহাসের গতিধারা কখনও একই রকম থাকে না। সময়ের ¯্রােতের সাথে ইতিহাসের গতিধারাও পরিবর্তনশীল। আজকে ক্ষমতার জোরে আওয়ামী লীগ যে অপকর্ম করে যাচ্ছে সময়ের ব্যবধানে সে অপকর্মের দায়ভারও আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। ২৮ অক্টোবরের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য হুকুমের আসামি হিসেবে একসময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিচার হওয়াটাও অবাস্তব মনে হবে না। ইতিহাসের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। আওয়ামী লীগকে একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সকল অপকর্মের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতে হবে। তবে আশার দিক হলো যে, ২৮ অক্টোবর যেভাবে আন্দোলনের কর্মীরা জীবন বাজি রেখে আন্দোলন ও নেতাদেরকে রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে সে আন্দোলনের কর্মীরা এখনও সে আন্দোলন ও নেতৃবৃন্দকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ কোরবানির নজরানা পেশ করে যাচ্ছে। অকাতরে সহ্য করছে পাহাড়সম জুলুম নির্যাতন। গত ৫ বছরে সরকারের মদদপুষ্ট বাহিনী ও তাদের দলীয় ক্যাডারদের হাতে জামায়াত-শিবিরের দুই শতাধিকের ওপর নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ৩০০ শতাধিক আন্দোলনের মুজাহিদ। চোখ হারিয়ে চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছেন অসংখ্য ছাত্র-যুবক। চিরুনি অভিযান, স্টিং অপারেশন, যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে প্রায় অর্ধ লক্ষ জামায়ত-শিবির নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস কারান্তরীণ করে রেখেছে। সারাদেশে ৫ লক্ষাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় আসামি বানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে ৩ শতাধিক নেতাকর্মী। জুুলুম-নিপীড়ন এখনো অব্যাহত আছে। এত কিছুর পরও সরকার এ কাফেলার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারেনি। সকল বাধা প্রতিবন্ধকাতে হাসিমুখে বরণ করে এগিয়ে চলছে আল্লাহর দ্বীনের ঝাণ্ডাবহনকারী আদর্শের সৈনিকেরা। তারা এগিয়ে চলছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করে একটি সুন্দর সোনালি স্বপ্নিল বাংলাদেশ রূপান্তরিত করবে। সেই সোনালি স্বপ্নিল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ২৮ অক্টোবরের ত্যাগ- কোরবানি হোক আমাদের চলার পথের পাথেয়। লেখক : সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির