post

কারাস্মৃতির অন্তরালে

৩১ মার্চ ২০১২
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম (পূর্ব প্রকাশিতের পর) রাজশাহী কারাগারে থাকার সময় আমাদের একটি Dictionary ছিল। আমরা কয়েকজন টাইম ভাগ ভাগ করে পড়াতম। জেলখানায় যদি পরিবেশ পাওয়া যায় তাহলে পড়ালেখার বিরাট সুযোগ পাওয়া যায়। আমার কাছে ঢাকা চট্টগ্রাম আর রাজশাহীর মধ্যে মনে হয় লেখাপড়ার সবচেয়ে ভালো পরিবেশ এবং সুযোগ আছে রাজশাহী কারাগারে। ঐতিহাসিক শিক্ষানগরী হিসেবে এর যে খ্যাতি আছে তার প্রভাব থেকে কারাগারও মুক্ত নয়। কারাগার যদি মানুষকে সংশোধনী করার কাজে লাগানো হতো তাহলে এখানে মানুষের দুঃখ দুর্দশার কারণ না হয়ে ব্যক্তি জীবনের সফলতার মাধ্যমও হতে পারত। কারণ এখানে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক একটি নিয়ম আর সুশৃঙ্খলতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি চলতে বাধ্য বিধায় তার ব্যক্তি সংশোধনের পথটি এখানে প্রশস্ত। কিন্তু প্রত্যেক সরকারই কারাগারকে প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। অথবা অপরাধের শাস্তি ভোগের কারখানা হিসেবেই চিন্তা করা হয়। ফলে এখানে চরিত্র সংশোধনের সুযোগটি থাকার পরও অবহেলা অথবা পরিকল্পনার অভাবে কোনো সরকারই তা সঠিকভাবে গ্রহণ করেনি। ব্রিটিশদের তৈরি করা ঔপনিবেশিক শাসনে কারাগার বিপরীত চিন্তা ও মতাদর্শের ব্যক্তিকে শায়েস্তা করার উত্তম জায়গা হিসেবে এখনো চলে আসছে। এই জন্য আমার দেখা মতে বাংলাদেশের এখনো অনুন্নত, অবহেলিত আর নির্ভেজাল মানবাধিকার লঙ্ঘনের জায়গা, খ্যাতনামা স্থান হচ্ছে কারাগার। ২৪ জুন। সুবেদার সাহেব আমার রুমে এসে বললেন, ‘আপনাকে গেটে যেতে হবে।’ কারণ হিসেবে তিনি কিছুই বললেন না। যথারীতি গেটে গেলাম। গিয়ে দেখি গোয়েন্দা সংস্থার অনেক লোক ঘুর ঘুর করছে। ভাবলাম, ভিআইপি কেউ হয়ত আসছে, এই জন্য এতো গোয়েন্দার লোকজন এখানে। পরে বুঝলাম সেই ভিআইপি আসলে আমি নিজেই। চমৎকার খবর! মামলাবাজ সরকার ইতোমধ্যে আমাকে ঢাকার ২০১০ সালের ২টি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়েছেÑ সেই কাগজপত্র চট্টগ্রাম কারাগারে কিছুক্ষণ আগে এসে পৌঁছেছে। সেই ঘটনা জানানোর জন্যই আমাকে জেলগেটে নিয়ে আসা। আওয়ামী লীগ কত ফ্যাসিস্ট, হামলা আর মামলা দিয়ে কিভাবে দমানো যায় তা এখান থেকে বোঝা যায়। আমার বিরুদ্ধে মাত্র ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে ২টি মামলা জারি করার কারণ আওয়ামী সরকার মহোদেেয়র এই কথা খুব ভালো করেই জানা আছে যে, যে মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা খুবই দুর্বল মামলা। যে কোনো সময় আমি এ মামলায় জামিনে বের হয়ে যেতে পারি। কারণ এ মামলায় অন্য সকল আসামি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ, এ.টি.এম আজহারুল ইসলাম, শফিউল আলম প্রধান, শামীম আল মামুন, জেবেল গণি, মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীÑ সবাই জামিনে আছেন। এই সরকারের নতুন আবিষ্কার এক মামলায় গ্রেফতার করে এরপর অন্য যত মামলা দেয়া যায়। জামায়াতের বর্তমান শীর্ষনেতাদের সবাইকে অন্য মামলায় গ্রেফতার করে এরপর দেয়া হয়েছে তথাকথিত সাজানো যুদ্ধাপরাধের মামলা। গত ১৭ মার্চ ২০১০ মগবাজার আলফালাহ মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা কর্তৃক আয়োজিত সীরাতুন্নবী (সা) মাহফিলে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী আমীরের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রথমে নিউজ করে একটি অনলাইন পত্রিকা। যদিও পত্রিকার রিপোর্টার এই মিথ্যা রিপোর্টের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এর পর শুরু হয় সিন্ডিকেট নিউজ। কথিত ইসলামী তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবের দায়েরকৃত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার একটি মিথ্যা মামলা করা হয়, যা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মজার ব্যাপার হলো ওই আলোচনা সভায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ কেউই উপস্থিত ছিলেন না। অথচ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে রাসূল (সা)-এর সাথে মাওলানা নিজামীর নাম তুলনা করা হলে তিনি টেবিল চাপড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। মিথ্যা কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী? সবই এই রিপোর্টে ধারণ করা হয়েছে। এই মামলাবাজ সরকারের হাজারো মিথ্যা ঘটনা এখন হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। (চলবে) লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সহকারী সম্পাদক সাপ্তাহিক সোনার বাংলা [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির