দারুল ইহ্সান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ভেঙে যাচ্ছে এক মহান দাতার স্বপ্ন
এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান
৩০ আগস্ট ২০১৬
অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ আলী আশরাফ আজ আমাদের মাঝে নেই। ১৯৯৮ সালের ৭ আগস্ট তিনি আমাদের ছেড়ে পরপারের উদ্দেশে আরাধ্যের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। দেখতে দেখেতে কেটে গেল বেশ কয়েকটি বছর। বিশ্বব্যাপী শিক্ষানীতি ধর্মীয়করণ আন্দোলনের পথিকৃৎ ও আদর্শ শিক্ষানীতি প্রণয়নের অনন্য পুরোধা এ অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন খ্যাতিমান কবি, প্রতিভাবান সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিক, উন্নতমানের সাহিত্য সমালোচক, সফল সংগঠক এবং আধ্যাত্মিক জগতের শ্রেষ্ঠ সুফি-সাধক এবং বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রচারক।
বহুমুখী গুণের বিভিন্ন দিকের মধ্যে শিক্ষানীতি ছিল তাঁর জীবনের প্রধান দিক। ছাত্রজীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শিক্ষাকেই তিনি ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বলে শিক্ষার ওপর সঠিক দর্শন তিনি দিয়ে যেতে পেরেছেন। তাঁর শিক্ষাদর্শনের মূলে ছিল-এ সৃষ্টির একজন ¯্রষ্টা আছেন; সৃষ্টির চলার জন্য একটি দিকনির্দেশনা স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত হয়েছে; সে দিকনির্দেশনার একজন বাহক (নবী) তিনিই নির্ধারণ করেছেন এবং সবশেষে সবকিছুর মূলে রয়েছে নৈতিকতা বা মূল্যবোধ। যার ফলে ভাল-মন্দ পার্থক্য করা যায়। এ শিক্ষাদর্শনের আলোকে সার্বজনীন ও যুগোপযোগী শিক্ষানীতি বিশ্বের আর কেউ দিয়ে যেতে পারেনি। এ জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে তাঁর শিক্ষানীতি সমাদৃত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে তার শিক্ষানীতির ওপর। তাঁর এ শিক্ষা প্রণয়নের এবং শিক্ষা সংস্কারের জন্য তিনি আজীবন কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন। এ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ‘ওয়ার্ল্ড সেন্টার ফর ইসলামিক এডুকেশনের’ মাধ্যমে অসংখ্য আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় মনীষীদের সাথে তিনি চিন্তার আদান প্রদান করেছেন। অতঃপর গোটা জীবনের অভিজ্ঞতার নির্যাস ও অর্জিত সবটুকু সম্পদ দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহ্সান প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৮৯ সালে, যার সরকারি অনুমোদন নেন ১৯৯৩ সালে। নিজের স্বপ্নের শিক্ষানীতির বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন সেখানে, যা তিনি জীবিত অবস্থাতেই মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা পাদপীঠে পরিণত হয়েছিল। তিনি একজন বাঙালি ও বাংলাদেশী হয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পাকিস্তানস্থ করাচি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার নিউ ব্রানস্ উইক বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইংরেজি বিভাগের লেকচারার, প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান ইসলামী বুদ্ধিজীবী। তাঁর সাধনা ছিল বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষার ইসলামীকরণ।
দারুল ইহ্সান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কে অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ আলী আশরাফের অভিমত : ‘দারুল ইহ্সান বিশ্ববিদ্যালয় একটি সরকার অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সাভার এলাকার বলিভদ্রে আণবিক গবেষণাগারের বিপরীত দিকে রাস্তার অপর পারে এর অবস্থান। ঊনচল্লিশ বিঘা জমি কিনে এই প্রতিষ্ঠানকে দান করেছি। আমাকে চার একর জমি কিনতে সাহায্য করেছেন এক সউদি বন্ধু শাইখ আদিল বাতারজি। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সতের বছর ধরে শিক্ষার মূলনীতি, শিক্ষাক্রম রচনা, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা এবং শিক্ষাদানপদ্ধতিকে ধর্ম প্রদত্ত মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত করার যে চেষ্টা করে যাচ্ছি তাকে বাস্তবায়িত করা। ১৯৭৭ সালে কিং আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মক্কা শরীফে যে প্রথম বিশ্বমুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের ব্যবস্থা করি এবং তারপর ইসলামাবাদে ‘শিক্ষাক্রম প্রণয়ন’ (১৯৮০), ঢাকায় ‘পাঠ্যপুস্তক রচনা’ (১৯৮১) জাকার্তায় ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণ’ (১৯৮২) এবং কায়রোতে ‘মূল্যায়ন’ (১৯৮৭) সম্পর্কিত যে সমস্ত বিশ্বশিক্ষা সম্মেলনের জন্য সহায়তা করি, সেই সমস্ত সম্মেলনগুলির বাস্তবায়ন কোন মুসলিম দেশেই হয়নি- একমাত্র মালয়েশিয়াতে মিঃ আনোয়ার ইবরাহিম চেষ্টা করেছেন এবং ব্রুনাই-এর শিক্ষামন্ত্রী তার শিক্ষানীতিতে বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই জন্যই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে স্বদেশে এই শিক্ষাপদ্ধতি বাস্তবায়িত করে দেখাতে চাই যে সর্বপ্রকার অত্যাধুনিক জ্ঞান আহরণ এবং দানের কাজ সুষ্ঠুভাবে তখনই সম্ভব যখন এই জ্ঞানসমূহের ভিত্তিমূলে ধর্মপ্রদত্ত মূল্যবোধকে কার্যকরী করা হয়। দারুল ইহ্সান বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উপরোক্ত শিক্ষাদান পদ্ধতি বাস্তবায়িত করা।
আমরা সেই দৃষ্টিকোণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে জাগ্রত রাখতে চাই-যার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারবে মানুষ পরিবর্তনের দাস নয়। সে নিজে পরিবর্তন আনে সুতরাং ভাল-মন্দের মানদন্ড দিয়ে যাচাই করে, সমাজের এবং মানুষের উন্নতি-অবনতির কথা বিবেচনা করে সমাজে যে সমস্ত শক্তি পরিবর্তন আনে সেই সমস্ত শক্তিকে রোধ করবে বা তার গতি পরিবর্তন করবে বা তাদেরকে নতুন পথে পরিচালিত করবে অর্থাৎ প্রতিনিয়ত সে সত্যের জন্য জিহাদ করবে। এজন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন রিসার্চের ব্যবস্থা করেছে এবং নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করবে।
দারুল ইহ্সান বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি শাখাই কাজ করছে-১. দ্বীনিবিজ্ঞান অনুষদ, ২. মানবিক বিজ্ঞান অনুষদ, ও ৩. বিজ্ঞান অনুষদ।
সৈয়দ আলী আশরাফ ইনস্টিটিউট অব হায়ার ইসলামিক লার্নিং ই-হচ্ছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুষদ। এটি ধর্ম বিজ্ঞান বা দ্বীনিবিজ্ঞান অনুষদ। এ থেকেই দারুল ইহসানের সূচনা।
দ্বীনিবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘ইসলামিক স্টাডিজ’ এবং দাওয়া’র কোর্স, সময় এবং থিসিস আমাদের দেশীয় এমএ থেকে অনেক উচ্চমানের। শিক্ষাদানের ভাষা আরবি। ফলে এখানকার ছাত্ররা আরবিতে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তিশালী হয়। এই অনুষদের শিক্ষাক্রম আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই কোন ছাত্র চাইলে এখান থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে আরব দেশে ও আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজে ভর্তি হতে পারে।
মানবিক বিজ্ঞান অনুষদের বি.এড এবং এম. এড ডিগ্রি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এড. এবং এম. এড.-এর সমমানের। কোর্সও প্রায় একই রকম। বিভেদ হচ্ছে- যখন পড়ান হয় তখন সমস্ত থিওরি ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে এবং পরে ইসলামী থিওরির বিশ্লেষণ দেয়া হয়।’ [সৈয়দ আলী আশরাফ স্মারকগ্রন্থ বরেণ্য, পৃ.১৭৮]
সৈয়দ আলী আশরাফ ছিলেন মানবকল্যাণে ও দানশীলতার এক বিরল ব্যক্তিত্ব। নিজে নয় শুধু অন্যকেও দান কার্যে সর্বদা উৎসাহ দিয়েছেন। দানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় ‘হাজী মুহাম্মদ মুহসীন’। তাঁর প্রতিষ্ঠিত আশরাফ চেরিটেবল ট্রাস্ট ও যাকাত ফান্ড মানবসেবা ও দান কাজে এক অনন্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। নিঃসন্তান সৈয়দ আলী আশরাফ মৃত্যুর পূর্বে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি আশরাফ চেরিটেবল ট্রাস্ট ও দারুল ইহসান ট্রাস্টে দান করে গেছেন।
সৈয়দ আলী আশরাফ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের সন্তানের ন্যায় ভালবাসতেন। কারণ তিনিই এর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সাভারস্থ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন স্বীয় সংরক্ষিত কবরে তাঁকে দাফন করা হয়।
সৈয়দ আলী আশরাফের মৃত্যুর পর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল ধরেন তার আপন দুই ভাই জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ও অধ্যাপক সৈয়দ আলী নকী। অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন ভিসি আর অধ্যাপক সৈয়দ আলী নকী ছিলেন প্রোভিসি। অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের মৃত্যুর পর অধ্যাপক সৈয়দ আলী নকী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, ধানমন্ডিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারের সাময়িক অনুমোদন পায় ১৯৯৩ সালে। তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দারুল ইহসান ট্রাস্ট নামের একটি ট্রাস্টি বোর্ড ছিল। ট্রাস্টের সেক্রেটারি ছিলেন সৈয়দ আলী নকী ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন ছয়জন। পরবর্তীতে ট্রাস্টি বোডের্র মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।
মালিকপক্ষ হয় চারটি। চারটি মালিকপক্ষই আলাদা ক্যাম্পাস চালায়। চারটি ক্যাম্পাস থেকেই সনদ দেয়া হয় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়টি আসল আর কোনটি নকল তা জানতে পারে না শিক্ষার্থীরা।
মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট করে কিছু বলে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঠিকানা দেয়া হয়েছে তাতে প্রধান ক্যাম্পাসের ঠিকানা হচ্ছে বাড়ি-২১, সড়ক-৯/এ, ধানমন্ডি।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ জারি করার পর ২০০৬ সালের ২ এপ্রিল সংঘ স্মারক নিবন্ধনের মাধ্যমে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী নকী হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করেন। এর মাধ্যমে তারা ২৯টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা সম্পর্কে স্থগিতাদেশ লাভ করে বিভিন্ন স্থানে ৩৩টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করে। ওই স্থগিতাদেশের সুযোগ গ্রহণ করে অপর ৩টি ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত ৩টি ক্যাম্পাস বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭০টি আউটার ক্যাম্পাস চালানো শুরু করে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকলে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর বিচার বিভাগীয় একটি কমিশন গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জমা দেয়া এই প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধের সুপারিশ করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি অর্থের বিনিময়ে সনদ বিক্রি করছে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করছে। এরপর চারটি মালিকপক্ষই আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দারুল ইহসান পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ সভায় আইন মন্ত্রণালয় মতামত দেয় আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সনদ বাতিল করা যাবে না। গত বছরের ২৬ মে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তথা আচার্যকে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ করে সংসদীয় কমিটি।
সবশেষে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আদালতে চলা মোট ১৩টি রিট মামলা হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এনে শুনানির উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের চূড়ান্ত রায় দেন। এই রায়ের আদেশ সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছলে সে অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা করে।
বন্ধ ঘোষণা করা হলো দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। এতে কারা লাভবান হলো, আর কারা ক্ষতিগ্রস্ত হলো একটু ভেবে দেখা দরকার। একজন দাতা তার জীবনের সকল সম্পদ মুক্তহস্তে দান করে গেলো, আর সেই দানে চারজন মালিকানা দাবি করে সকল সম্পদ গ্রাস করার চেষ্টা করল। সরকার বা দেশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কিছুই করতে পারল না এটা হাস্যকর কথা! মরহুম সৈয়দ আলী আশরাফ সাহেব বাংলাদেশের মাটিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা টিকিয়ে রাখা বা সুন্দরভাবে পরিচালনার দায়িত্ব এদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা দেশের সরকারের। হাইকোর্টের আদেশের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দিয়ে তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে দেশের সচেতন নাগরিকদের ধারণা। সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পারতো উচ্চ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের চিহ্ণিত করে শাস্তির মুখোমুখি করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বাঁচিয়ে রাকতে।
এক দিনের ঘোষণায় যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ হতে পারে, তাহলে সরকার থেকে ভালোভাবে মনিটরিং করলে কেন মালিকানা সঙ্কট, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সনদ বাণিজ্যের সমস্যা দূর হবে না এটা দেশের শিক্ষিত নাগরিকদের প্রশ্ন।
এর আগে ২০০৫ সালে তৎকালীন সরকার ৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছিল। নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে ওইগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে দু’টি চালুর অনুমতি পেয়েছে। দেশবাসী আশা করে যাদের কারণে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হলো তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করবে সরকার এবং খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে। ফলে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে দেশ, জাতি, শিক্ষক ও হাজারো শিক্ষার্থী। পূরণ হবে মরহুম সৈয়দ আলী আশরাফ সাহেবের স্বপ্ন এবং বাস্তবায়িত হবে তাঁর শিক্ষাব্যবস্থা।
আপনার মন্তব্য লিখুন