post

২০১২

২০১৩ জাতীয় বাজেট শিক্ষাখাতে ছাত্রশিবিরের কিছু প্রস্তাবনা

১৩ জুন ২০১২
বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের এদেশ পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ? বাংলাদেশের মত একটি জনভারাক্রান্ত দেশের জন্য তার মানব সম্পদই প্রধান অবলম্বন হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে। উপযুক্ত শিক্ষার বিস্তার ও প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা আমাদের মানব সম্পদকে  প্রকৃত সম্পদে রূপান্তরিত করতে পারি। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে জাতীয় উন্নয়নের উপযোগী করতে এবং দেশের জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ বিশেষ করে এর উপযুক্ত খাতের জন্য ব্যবহার এমনভাবে করতে হবে যাতে দেশের জন্য একটি উপযুক্ত, ‘লাগসই’ এবং ‘টেকসই’ অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়। এর এজন্য দরকার দেশের শিক্ষাখাতের জন্য সুপরিকল্পিত এবং যথাযথ বাজেট বরাদ্দ এবং তার জন্য সুস্পষ্ট বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা। বিশ্বের নানা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাম্প্রতিক ইতিহাস বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি উপযুক্ত পরিকল্পনা ও শিক্ষানীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মত বহু পশ্চাদপদ দেশ মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের অর্থনীতিতে সফলতার বিস্ময় হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া. মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, তাইওয়ান এর প্রকৃষ্ট উদাহারণ। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত ২০১৫ সালের মধ্যে- ‘সকলের জন্য শিক্ষা’ এই নীতিতে অনুস্বাক্ষরকারী একটি দেশ। অন্যদিকে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকালীন সময়ের পূর্বে একটি মধ্যম আয়সম্পন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি হওয়ার বিরাট চ্যালেঞ্জ এদেশের সম্মুখে। এ সমস্ত সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা ও সাফল্য অর্জনের জন্যে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। বিগত বাজেটগুলোতে এ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। ঐসব দেশগুলোতে জিডিপির শতাংশ হারে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল মালেয়েশিয়ায় ৮%, মালদ্বীপে ৭.৫% ভারতে ৪%, নেপালে ৩.৮% সেখানে বাংলাদেশে বরাদ্দ মাত্র ৩%। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা পূর্বক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আসছে শিক্ষা খাতে ৬% বরাদ্দ করা সহ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোবিবেচনার জোর দাবি জানাচ্ছে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা: দুর্নীতিমুক্ত ও নৈতিকভাবে সুদৃঢ় একটি আগামী প্রজন্ম  তৈরির স্বপ্নকে সামনে রেখে দেশে বসবাসরত সকল জাতিসত্তাগুলোর স্বীয় ধর্মের মৌলিক আদর্শের আলোকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে এ খাতে কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি। অথচ জাতির নৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার শক্তিশালী ভিত্তি হচ্ছে এ খাত। এ বছর বাজেটে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ও বরাদ্দ দাবি করছি। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডাইরেক্টরেট) স্কুল স্থাপন, পাঠ্যক্রম, বেতন ও শিক্ষক সম্পর্কে একটা মান তৈরি করবে। প্রাথমিক শিক্ষা আগামী অর্থবছরের মধ্যেই ৫-১০ বছর বয়সী সকল শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনার কার্যকর ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্গম অঞ্চলে স্কুলের অপ্রতুলতা দূর করতে হবে। দেশের গ্রামাঞ্চলে দ্রুত প্রারম্ভিক শিক্ষা, দুস্থ ও বয়স্কদের মধ্যে শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে মক্তব ও টোল ভিত্তিক হারানো অথচ কার্যকর প্রারম্ভিক শিক্ষাকে জাগিয়ে তুলতে বাজেট বরাদ্দ থাকা চাই। পথ শিশুদের জন্যে ভ্রাম্যমাণ স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং পাহাড়ি শিশুদের জন্যে তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় স্কুল চালু করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষকদের মান উন্নয়েনের জন্য প্রতিমাসে অন্তত একটি করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে মেধাবীদের আকৃষ্ট করার জন্যে আকর্ষণীয় বেতনকাঠামো তৈরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে  অপ্রতুল উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। এবং ‘খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা’ কর্মসূচি পুনরায় চালু করতে হবে। দেশের প্রায় দুই লক্ষ মসজিদের ছয় লক্ষ ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম ও স্থাপনা কর্মীদেরকে কাজে লাগিয়ে দেশের সার্বিক প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ‘মসজিদভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প’ নামে একটি সুপরিকল্পিত বুনিয়াদি শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য দেশের অর্থনীতিতে উপযুক্ত ‘থোক বরাদ্দ’ থাকা প্রয়োজন। মসজিদভিত্তিক লাইব্রেরি, চিকিৎসাকেন্দ্র এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও সবুজায়ন ক্লাবের জন্য বাজেট থাকা দরকার। যেসব স্থানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় রয়েছে সেসব স্থানের উপর্যুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, ব্যবস্থাপনা কমিটি, শিক্ষা উপকরণ ও বস্তুগত সুবিধা বাড়ানোর জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা দরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা: মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে মেধা বিকাশে সহযোগিতা করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর জন্য অবৈতনিক শিক্ষা চালু করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে (স্কুল ও মাদরাসা) কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায় সহ-শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত নেই এমন প্রতিষ্ঠানের ফলাফল তুলনামূলক অনেক ভাল। তাই সহ-শিক্ষার বিকল্প হিসেবে সকল স্তরে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করতে হবে। এই স্তরের সব শ্রেণীতে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী খোলার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে আর্থিক অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। মাদরাসা শিক্ষা: মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রযুক্তিগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার অনুরূপ ইবতেদায়ী শিক্ষাকে সমান গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। মাদরাসাগুলোতে গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত এবং নিশ্চিত করতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। মাদরাসা থেকে আগত ছাত্ররা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে অবদান রাখছে। উন্নত জাতি গঠনে তারা সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিকের পরিচয় দিচ্ছে। তারা যেন জাতি গঠনে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য বিশববিদ্যালয় কর্তৃক আরোপিত সকল বাধা দূর করতে হবে। ইংরেজি, বাংলা ও গণিতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে। মাদ্রাসার শিক্ষকদের উপরোক্ত বিষয়সমূহে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। মাদরাসাগুলোর পৃথক একটি এফিলিয়েটেড ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বরাদ্দ ও বাজেট থাকতে হবে। উপযুক্ত সকল মাদরাসায় সম্মান ও মাস্টার্স খোলার অনুমতি ও প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুমোদন দিতে হবে। কওমী শিক্ষা: কওমী মাদরাসা বোর্ড ‘বেফাক’ এর সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। কওমী মাদরাসা থেকে আগত ছাত্রদেরকে দেশ গঠনে অবদান রাখার সুযোগ করে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা: কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সকলের জন্য কারিগরি শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে তাদের শিক্ষা অবৈতনিক করতে হবে। দেশের প্রায় অর্ধকোটি মৎস্যজীবী মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য জেলে পরিবারসমূহের তরুণ সদস্যদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খাঁচায় মৎস্য চাষ, পুকুর, ডোবা, জলাভূমিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে অল্প মূলধনে মৎস্যচাষ পদ্ধতি প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থার বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকা চাই। দেশের প্রায় তিন কোটি যুবক এখন বেকার। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দেশে ধান ও গম চাষের পাশাপাশি ব্যাপকভিত্তিক ফলমূল, শাকসব্জি চাষ, হাঁস-মুরাগ-পাখি পালন, মৌমাছি চাষ এবং গবাদিপশু পালনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ চাই। ২০১৩ সালের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে সরকারের যে ওয়াদা ছিল তা বাস্তবায়নে গত অর্থবছরের বাজেটে সরকারি উদ্যোগ ছিল অপর্যাপ্ত। তাই এ বাজেটে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপারে সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা: বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজড করতে হবে। সাম্প্রতিক আবিষ্কার ও গবেষণামূলক তথ্য এবং উপকরণের জোগান নিশ্চিত করতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। গতানুগতিক বিষয়ের পরিবর্তে আধুনিক-সমসাময়িক বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের হাত থেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রক্ষার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। মেধা পাচার রোধে দেশে উন্নত সুযোগ-সুবিধায় কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে। দেশে বিশ্বমানের গবেষণা নিশ্চিত করতে সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ বিভাগীয় পর্যায়ে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। এছাড়া বৃহত্তর জেলাগুলোতে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে। প্রচলিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি ও আবাসিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগদানের জন্য ইউজিসি-এর অধীনে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য পৃথক একাডেমী স্থাপন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজগুলোতে পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ও শাটল ট্রেনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। এ বাজেটেই প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ৪টি করে এবং সরকারি কলেজে ২টি করে বাস দিতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক আনুকূল্য বাদ দিতে হবে। শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনার জন্যে ভরহধহপরধষ রহপবহঃরাব দেয়া উচিত । শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুবিথা প্রদান। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: বুয়েটসহ অন্যান্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে জাতীয় উন্নয়নে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন আবিষ্কারের জন্য শিক্ষার্থী বা আবিষ্কারককে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত করতে হবে। তার জন্য যৌক্তিক মূল্যের আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক আনুকূল্য বাদ দিতে হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞান: দেশে মানসম্মত চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিত করতে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তাতে শিক্ষা ব্যয় কমাতে হবে। চিকিৎসা শিক্ষায় সামগ্রিক মানোন্নয়নে শিক্ষার্থীদের আবাসন, পরিবহন ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। চিকিৎসা শিক্ষায় গরিব ও দুস্থ পরিবারের সন্তানদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক আসন সংরক্ষণ করতে হবে। তাদেরকে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয়ার জন্য পৃথক বরাদ্দ দিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিশ্চিত করার কার্যকরী ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জমি বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা রেখে বাজেটে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে রিসোর্স পার্সন আছে সেখানে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অবকাঠামোগত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গরিব, মেধাবী ও নারী শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ করে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে কমপক্ষে ১০% টিউশন ফি ভর্তুকি দিতে হবে। সামগ্রিক শিক্ষার উন্নয়নে কিছু প্রস্তাবনা: থানা পর্যায়ে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ইংরেজি এবং গণিত ক্লাব গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নারী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সকলের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং এর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প মূল্যে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বাজেটেই এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উচ্চতর গবেষণার ক্ষেত্রে সামগ্রিক সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে দেশে বসেই এমফিল, পিএইচডি করতে আগ্রহী হয় সেজন্য এ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের ব্যয় কমাতে হবে। এমফিল এ ৫০০০ ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ১০০০০ টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষার সকল স্তরে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং যথাযথভাবে সে শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কোচিং ও টিউশনির আগ্রাসন থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে এবং শিক্ষকদের বিরত রাখতে সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে। শিক্ষা উপকরণের মূল্য কমিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য সকল প্রকার শিক্ষা সামগ্রী সহজলভ্য করতে হবে। সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নানাবিধ ফি যেমন বিভাগ উন্নয়ন ফি, ছাত্র কল্যাণ ফি, ক্রীড়া ফি, কমনরুম ফি, পাঠ্যক্রম ফি ও ছাত্র-সংসদ ফি ইত্যাদি সম্পূর্ণ উঠিয়ে দিতে হবে। ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের বাজেটে সংখ্যালঘুদের শিক্ষা বা তাদের এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সরকারি কোনো ঘোষণা ছিল না। তাই আগামী বাজেটে অমুসলিম বা সংখ্যালঘু শ্রেণীর সামগ্রিক শিক্ষার উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ ও ঘোষণা দিতে হবে। একটি জাতিকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যায় সেদেশের দক্ষ জনশক্তি। উন্নত নৈতিক শিক্ষা ও যুগোপযোগী আধুনিক শিক্ষার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সে ধরনের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব। আর এ জন্য প্রয়োজন জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অন্যান্য সকল খাতের তুলনায় বহুগুণ বরাদ্দ দেয়া। উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে আমাদের দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড় করাতে হলে শিক্ষাখাতকে সকল কিছুর ওপরে গুরুত্ব দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাই ২০১১-২০১২ বাজেটে উপরোক্ত সুপারিশসমূহের প্রতিফলন ঘটলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আশা করি সরকার আগামী বাজেটে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির