post

অপরের ধর্মকে অবজ্ঞা করা কখনো বাকস্বাধীনতা নয়

১৪ নভেম্বর ২০১২
জালাল উদ্দিন ওমর

মার্কিন নাগরিক নাকুলা বাসিলে কর্তৃক ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে নির্মিত চলচ্ছিত্রের কারণে মুসলিম বিশ্বে এখন চলছে ক্ষোভ আর প্রতিবাদের ঝড়। ‘ইননোসেন্স অব মুসলিমস’ নামক এই চলচ্ছিত্রে নাকুলা বাসিলে অত্যন্ত কৌশলে মানবতার মুক্তিদূত, সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা)কে অপমানিত করেছেন। এই চলচ্ছিত্রকার সিনেমার মাধ্যমে কৌশলে ইসলামের প্রবক্তা এবং মুসলিম জাতির নবীকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। যার ফলে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা আজ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। মুসলমানদের এই প্রতিবাদের ঢেউয়ে পুরো বিশ্বই আজ প্রকম্পিত। দেড় শ’ কোটি মুসলমানের হৃদয় আজ ক্ষতবিক্ষত। প্রিয় নবীকে অপমানের ঘটনায় তাদের হৃদয়ে চলছে রক্তক্ষরণ। একজন মুসলিম হিসেবে আমার প্রিয় নবীকে অপমানের ঘটনায় আমি আজ অত্যন্ত ব্যথিত এবং মর্মাহত। আমি নিজেও এই প্রতিবাদী মিছিলের একজন অংশগ্রহণকারী। সুতরাং আমি এই ধরনের অন্যায়, বর্বরতা, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে এর জন্য দায়ী এবং এর সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, পৃথিবীর পরাশক্তি এবং সভ্যতা ও মানবাধিকারের প্রবক্তা বলে দাবিদার যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাবিশ্ব নাকুলা বাসিলের এই অপকর্মকে বাকস্বাধীনতা হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এই অপকর্মের পক্ষে সাফাই গাইছে। একইভাবে তারা বাকস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের ধুয়া তুলে এই চলচ্ছিত্র বন্ধ করেনি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি। কিন্তু পশ্চিমাদের জানা উচিত, অপরের ধর্ম, ধর্মবিশ্বাস এবং ধর্মের প্রবক্তা এবং এর সম্মানিত ব্যক্তিদের অপমান ও অবজ্ঞা করাটা কখনো বাকস্বাধীনতা হতে পারে না। আর এটা কখনো মত প্রকাশের স্বাধীনতাও হতে পারে না। বরং এটা হচ্ছে চরম অন্যায়, অভদ্রতা এবং অসভ্যতা। আর এ ধরনের গর্হিত কাজ কখনো সুফল বয়ে আনে না। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় সাত শ’ কোটি মানুষের বাস। এর প্রায় ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষই কোন না কোন ধর্মের অনুসারী। অর্থাৎ প্রায় সব মানুষই ধর্মে বিশ্বাসী। হয়ত কারো মাঝে ধর্মের প্রভাব কম আর কারো মাঝে ধর্মের প্রভাব বেশি। কিন্তু এক কথায় তারা ধর্মে বিশ্বাসী। আর এই ধারাবাহিকতাই আদিকাল থেকে চলে আসছে, বর্তমানেও চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। এই ধর্মই নিয়ন্ত্রণ করছে মানুষের সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং জীবনধারা। এই ধর্মই গঠন করেছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং দেশ। আসলে একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছুই ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেউ যদি না মানে সেটা হচ্ছে ধর্ম থেকে বিচ্যুতি। তাই একজন ব্যক্তি সেকুলার হলেও তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ধর্মীয় রীতিতেই সম্পন্ন হয়। সমাজের যা কিছু সত্য, সুন্দর এবং মহৎ, তার সবকিছুই ধর্ম হতে উৎপন্ন। আর ভিন্ন ধর্মের রীতিনীতি ভিন্ন হলেও সবাই বিশ্বাস করে এই সৃষ্টিজগতের একজন স্রষ্টা আছেন। তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকারী, লালনকারী এবং পালনকারী। সবাই আবার এ কথাও বিশ্বাস করে যে মৃত্যুর পর সবাই তার কৃতকর্মের জন্য স্রষ্টার কাছে বিচারের মুখোমুখি হবে এবং কৃতকর্মের ফলাফলের ওপর কেউ চির সুখের জান্নাত আবার কেউ চির দুঃখের জাহান্নামে স্থান লাভ করবে। প্রত্যেক ধর্মেরই একজন প্রধান ব্যক্তি রয়েছেন যারা এই ধর্মকে ধারণ করেছেন, অনুসরণ করেছেন এবং প্রচার করেছেন। এই সব ব্যক্তি নিজ নিজ ধর্মের অনুসারীদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত এবং পবিত্র। তাই এই সব ব্যক্তির অপমান তাদের অনুসারীদের কেউই সহ্য করতে পারে না। হযরত ঈসা (আ) যেমন খ্রিষ্টানদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত, গৌতম বুদ্ধ যেমন বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত, কৃষ্ণ যেমন হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত, ঠিক তেমনি হযরত মুহাম্মদ (সা)ও মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত। আর হযরত ঈসা (আ)-এর অপমান যেমন কোন খ্রিষ্টান সহ্য করতে পারে না, গৌতম বুদ্ধের অপমান যেমন কোন বৌদ্ধ সহ্য করতে পারে না, কৃষ্ণের অপমান যেমন কোন হিন্দু সহ্য করতে পারে না, ঠিক তেমনি হযরত মুহাম্মদ (সা) এর অপমানও কোন মুসলমান সহ্য করতে পারে না। সুতরাং প্রত্যেক মানুষের উচিত তার নিজ ধর্ম এবং নিজ ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করার পাশাপাশি অপরের ধর্ম এবং অপরের ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তিদেরও সম্মান করা। আর সম্মান না করলেও কখনোই এবং কিছুতেই অসম্মান করা যাবে না। কারণ এতে সমাজের শান্তি, সম্প্রীতি এবং ভালোবাসা নষ্ট হয়। সৃষ্টি হয় অশান্তি, অরাজকতা এবং হিংস্রতা ও বর্বরতা। যার আগুনে পুড়ে সর্বনাশ হয় সমাজ, ধ্বংস হয় সভ্যতা। সুতরাং এই ধ্রুব সত্যটুকু জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই অনুসরণ করা উচিত এবং করতে হবে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দেড়শত কোটি মুসলমানের বাস। সুতরাং ইসলাম এবং মুসলমানরা বিশ্বশক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি এবং তারা বর্তমান বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ কিছু ব্যক্তি মুসলমানদের বিশ্বাস, রীতিনীতি এবং এর প্রধান ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সা) কে অবজ্ঞা এবং হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আজ মাঠে নেমেছে। নাকুলা বাসিলে কর্তৃক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)কে অপমান করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ইননোসেন্স অব মুসলিমস’ তার একটি উদাহরণ। এদিকে এ চলচ্চিত্র ইন্টারনেটে প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে মুসলিম বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মুসলমানেরা দেশে দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা এই চলচ্চিত্র বন্ধ ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে নাকুলা বাসিলে এবং তার চলচ্চিত্রের সমর্থনে কথা বলেন। একই সাথে মার্কিন কর্মকর্তারা নাকুলা বাসিলের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করার এবং ঐ চলচ্চিত্রটি বন্ধ না করার কথা ঘোষণা করেন। ফলে মুসলিম দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি অমুসলিম দেশসমূহেও মুসলমানরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। কোন কোন দেশে উত্তেজিত মুসলমানরা মার্কিন দূতাবাসে হামলা করে। এমনই ঘটনায় লিবিয়ার বেনগাজিতে ক্ষুব্ধ জনতার হামলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিহত হন। এদিকে হযরত মুহাম্মদ (সা)কে অবমাননা করার ঘটনা কেবল সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এর কয়েকদিন পরপরই ফ্রান্সের একটি ম্যাগাজিন হযরত মুহাম্মদ (সা)কে ব্যঙ্গ করে কার্টুন প্রকাশ করেছে। আর আজ থেকে দুই যুগ আগে একইভাবে হযরত মুহাম্মদ (সা)কে অবমাননা করে সালমান রুশদী লিখেছিল স্যাটানিক ভার্সেস নামক উপন্যাস। তখনো পশ্চিমাবিশ্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে সালমান রুশদীর পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং বইটির পক্ষে কথা বলেছিল। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ সরকার সালমান রুশদীকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেছিল। সুতরাং মনে হচ্ছে মুসলমানদেরকে আঘাত করার জন্য এবং হযরত মুহাম্মদ (সা)কে অবজ্ঞা করার জন্য এটা হচ্ছে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যা ধারাবাহিকভাবেই ঘটে চলেছে। আর এটাই যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু যেসব ব্যক্তি আজ ইসলাম এবং নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)কে হেয়প্রতিপন্ন করছে আর যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের যারা আজ ইসলাম এবং তার নবীকে অপমান করাটাকে বাকস্বাধীনতা বলে সমর্থন করছে, তাদের জানা উচিত এই বাকস্বাধীনতা তাদের কারো জন্য কোন ধরনের কল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং এটা কেবল তাদের জন্য ক্ষতিই নিয়ে আসবে। আর হযরত মুহাম্মদ (সা)কে কটাক্ষ করার কারণে তার মান সম্মান যেমন কমবে না ঠিক তেমনি ইসলামকে কটাক্ষ করায় ইসলামেরও কোন ক্ষতি হবে না। কারণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) হচ্ছেন স্বমহিমায় উদ্ভাসিত একজন ব্যক্তি যার খ্যাতি, সুনাম এবং প্রভাব শত শত বছর ধরে পৃথিবীকে যেমন আলোড়িত, আলোচিত এবং প্রভাবিত করছে, ঠিক তেমনি কেয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা অধ্যাপক এবং বুদ্ধিজীবী মাইকেল এইচ হার্ট বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করে পৃথিবীর শুরু থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ একশত জন মানুষ নিয়ে লিখেছেন আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘দি হানড্রেড’ নামক বই, যেখানে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা) কে এক নম্বর পজিশনে স্থান দিয়েছেন। অথচ মাইকেল এইচ হার্ট একজন খ্রিষ্টান। আর অপরকে অসম্মান করে নিজেকে কখনো যেমন সম্মানিত করা যায় না, ঠিক তেমনি অপরকে ছোট করে নিজেকে কখনো বড় করা যায় না। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের মনে রাখা উচিত ইসলাম হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীবনদর্শন এবং একমাত্র সত্য ধর্ম। এটা তার আপন মহিমায় মহিমান্বিত। সুতরাং ইসলামকে অবমাননা করলে ইসলামের কোন ক্ষতি হয় না। অপর দিকে ইসলাম এবং মহানবীকে (সা) কটাক্ষ করে পশ্চিমা বিশ্বের এই সব ব্যক্তি মুসলমানদের নয় বরং নিজেদের পতনকে ত্বরান্বিত করছে। সারা বিশ্ব জুড়ে মুসলমানদের আজ যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ তা কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাবিশ্বকে প্রত্যাখ্যানের বহিঃপ্রকাশ। তার মানে মুসলমানেরা আর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব মানছে না। এ অবস্থায় পৃথিবীর ৫৭টি মুসলিম দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু আপনা আপনিই তার নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অনুসারী যদি না থাকে তাহলে সেতো আর নেতা হিসেবে টিকে থাকবে না। বর্তমান বিশ্বরাজনীতির গতিধারা সেদিকেই প্রভাবিত হচ্ছে। সুতরাং ইসলাম এবং মহানবীকে (সা) হেয়প্রতিপন্ন করার ঘটনা পশ্চিমাদের জন্য বুমেরাং হবে। আর অমুসলিমরা মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম এবং নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)কে অপমান এবং অবজ্ঞা করলেও মুসলমানরা কখনো অন্য ধর্ম এবং তাদের প্রধান ব্যক্তিদেরকে কটাক্ষ করবে না। কারণ আল্লাহ মুসলমানদেরকে ইসলামকে অনুসরণ এবং মহানবীকে (সা) সম্মান করার পাশাপাশি অমুসলিমদের ধর্ম এবং তাদের দেবতা এমনকি সম্মানিত ব্যক্তিদেরকেও সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘‘আল্লাহকে ছেড়ে তারা যাকে ডাকে, তাদেরকে তোমরা গালি দিও না, কেননা তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে।” (সূরা আনয়াম, আয়াত-১০৮) সুতরাং অমুসলিমরা, তাদের ধর্ম, তাদের দেবতা এবং তাদের ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তি সবই মুসলমানদের কাছে নিরাপদ। আজ পর্যন্ত কোন মুসলমান অন্য ধর্মকে এবং ধর্মের প্রধান ব্যক্তিদেরকে অবমাননা করেছে তার একটি প্রমাণও পাওয়া যাবে না। আর কোনো ক্ষেত্রে যদি মুসলমানেরা প্রতিবাদী হয়ে সহিংস আচরণ করে থাকে সেটা হচ্ছে ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ ইসলাম এবং মহানবীকে (সা) অপমানিত করার প্রতিক্রিয়ায় মুসলমানরা প্রতিবাদী হয়ে এসব করেছে। আর এটা ইতিহাসের প্রমাণিত সত্য। এদিকে ইসলাম এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)কে অবমাননার কারণে মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও তাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং কখনো সহিংস হওয়া যাবে না। মুসলমানদেরকে হতে হবে ধৈর্যশীল, সহনশীল এবং ক্ষমাশীল। আবেগের বশবর্তী হয়ে কখনো ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। আমরা এর জন্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করব কিন্তু কখনো আইনকে নিজের হাতে তুলে নেবো না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু মুসলিম এ সময় অধৈর্য হয়ে পড়ে এবং প্রতিবাদী হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। লিবিয়ার বেনগাজি শহরে ১১ সেপ্টেম্বর বিক্ষুব্ধ জনতা কর্তৃক মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যা এবং ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় বৌদ্ধমন্দিরে হামলা এর উদাহরণ। ইন্টারনেটে নাকুলা বাসিলে কর্তৃক মহানবীকে (সা) হেয়প্রতিপন্ন করে নির্মিত সিনেমা প্রচারের পর ক্ষুব্ধ জনতা বেনগাজিতে মার্কিন দূতাবাসে হামলা করে। আর উত্তম কুমার বড়–য়া নামে একজন বৌদ্ধ কর্তৃক কুরআনকে অবমাননার ছবি ফেসবুকে প্রচারিত হবার পর ক্ষুব্ধ জনতা রামুতে বৌদ্ধপল্লী এবং মন্দিরে হামলা করে। মনে রাখতে হবে ইসলাম কখনো জ্বালাও পোড়াও সমর্থন করে না। এখানে একটি কথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ্য, আর সেটা হচ্ছে লিবিয়ার বেনগাজি আর বাংলাদেশের রামু এবং পটিয়াতে যেটা ঘটেছে সেখানে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে কিছু মুসলমানকে ব্যবহার করে পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে। কারণ মুসলমানদের পাশে অন্য ধর্মের লোকেরা সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও শত শত বছর ধরে শান্তিতে বসবাস করেছে। মিয়ানমারে শত শত মুসলমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করলেও এদেশের মুসলমানরা কখনো বৌদ্ধদেরকে নির্যাতন করেনি। ফিলিস্তিন, বসনিয়া, কাশ্মীর এবং মিন্দানাওসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অমুসলিম কর্তৃক বছরের পর বছর ধরে মুসলমানরা নির্যাতিত হলেও, মুসলমানরা কখনো এর প্রতিশোধ হিসাবে অমুসলিমদের ওপর নির্যাতন করেনি। শুধু তাই নয়, নাকুলা বাসিলে কর্তৃক মহানবীকে (সা) কটাক্ষ করে সিনেমা নির্মাণ সত্ত্বেও বিশ্বের কোন মুসলিম প্রধান দেশে গির্জায় হামলা হয়নি। একইভাবে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানদের ওপর হামলাও হয়নি। সুতরাং রামু এবং পটিয়ায় বৌদ্ধমন্দির এবং বৌদ্ধপল্লীতে হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দরকার। একই সাথে সেই উত্তম বড়–য়ার গ্রেফতার এবং জবানবন্দী প্রয়োজন। তার কম্পিউটার থেকে ধর্মকে অবমাননার আরো অনেক ছবি উদ্ধার হয়েছে। সুতরাং কী কারণে সে এসব কাজ করেছে এবং কারো দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে সে এই কাজে নেমেছে কিনা সেটাও খুঁজে বের করা দরকার। মুসলমানরা কখনো মন্দের প্রতিবাদ মন্দ দিয়ে দেয় না। ভাল কাজ দিয়েই মন্দ কাজের প্রতিবাদ করতে হয়। আর ইসলাম আমাদেরকে সেটাই শিক্ষা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘‘মন্দের মোকাবেলা কর যা উত্তম তা দ্বারা।” (সূরা মুমিনুন, আয়াত-৯৬) সুতরাং যে কোন মূল্যে আমাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে এভাবে ধর্ম এবং ধর্মের সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে অবমাননা করে একটি গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাচ্ছে। এ অবস্থায় মুসলমানদেরকে কৌশলী হতে হবে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা যাবে না। আর ইসলাম কখনো সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না এবং তা সমর্থনও করে না। ইসলামের বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচারে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না। বরং এতে ইসলাম আরো বিকশিত এবং গতিশীল হবে, যার ফলে ধ্বংস হবে পশ্চিমা সাম্রাজ্য। এটা দিবালোকের মতই সত্য এবং অনিবার্য। আর সীমালঙ্ঘন কখনো সুফল বয়ে আনে না।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির