পৃথিবীর ৮০ কোটি মানুষ বর্তমানে যে জীবনাদর্শ পালন করেন তার নাম ইসলাম। ইসলাম স্রেফ ধর্ম নয় বরং ইসলাম সর্বজনীন শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর জীবনাদর্শই এই জীবনবিধানের পরিপূর্ণ রূপ বা দর্শন। ইসলামের মৌলিক বিষয় হলো তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত। তাকওয়া এবং তামান্না হলো এর বুনিয়াদ। এই দর্শনের বিশ্বাসীরা মুমিন ও মুত্তাকি আর এর বিপরীত চিন্তা চেতনা ও কর্মের ভিত্তিতে নিরূপণ করা যায় কাফের ও মুনাফিক। এই ক্ষেত্রে বলা যায় যে, ইসলামকে যারা অনুসরণ করে তারা হকপন্থী আর যারা তা অনুসরণ করে না তারা বাতিলপন্থী। এক্ষেত্রে হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব একটি চলমান প্রক্রিয়া। হকের তাঁবেদারিতে জান্নাত মেলে আর তাগুতের তাঁবেদারিতে মিলে জাহান্নাম। সুতরাং মুসলমানদের জিন্দেগিই বন্দেগির জন্য নির্ধারিত। আর বন্দেগি বলতে ইসলাম যা বুঝায় তাহলো কুরআন সুন্নাহর পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করে তা পরিপূর্ণ ভাবেই অনুশীলন করা। সারা বিশ্বে এই তাকওয়া ও তামান্নার মৌলিক শিক্ষাকে কেন্দ্র করেই প্রতি জুমায় খুতবা হয় ঈদের জামায়াতে খুতবা হয়। বিশ্ব ইজতেমায় খুতবা হয়, খুতবা হয় হজ মওসুমে। এসব স্থানে কি খুতবা হয়? কেনই বা এসব খুতবার প্রভাব পড়ে না? এর কারণ জানা দরকার। এসব স্থানে মুসলিম জাতি হাজার বছরের তাহজিব তমদ্দুনিক কৃষ্টি সভ্যতার অনুপম নিদর্শন দৃষ্টি নন্দিত উৎসব বটে। এসব স্থানে বিশ্বের তামাম মুসলিম তথা ধনী-গরিব, রাজা, বাদশা, শাসক-শোষক, সাদা, কালো, লম্বা, বেঁটে, নর-নারী উপস্থিত হয়ে খুতবা শ্রবণ করেন এবং খুতবার পর কিংবা আগে একই স্থানে একই জামায়াতে সালাত আদায় করে থাকেন। এতে করে বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব সহমর্মিতা সুখ দুঃখের ভাগীদার হওয়ার কথা, বিবেক বোধ ঈমানিয়াত ইনসানিয়ত বিকশিত হওয়ার কথা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি ও সফলতা অর্জনের কথা। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এসব কি বাস্তবায়ন হচ্ছে, না খালি আনুষ্ঠানিক সর্বস্ব ধর্ম পালন হচ্ছে? এ আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম একটি কবিতা লিখে মুসলিম জাতির চেতনা জাগিয়েছেন, তা হলো- যতদিন না খোদার ধরায় কায়েম হবে তারই দ্বীন- কিসের আবার ঈদের খুশি এই অনুষ্ঠান অর্থহীন। এই কবিতায় কবি মুসলিম জাতিকে বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতার ইসলামকে যথার্থ মূল্যায়ন করা যায় না। তিনি আরও বুঝাতে চেয়েছেন যে, এ ধরনের আনুষ্ঠানিক ইবাদত আমরা যতই করি না কেন এর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর জমিনে তার পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করাই সব ইবাদতের মর্যাদাপূর্ণ বড় ইবাদত। ইসলামী আন্দোলন তথা বিশ্বব্যাপী ইসলামী হুকুমত বা চির কল্যাণকর ও শান্তির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হবে ততোদিন পর্যন্ত ঈদের খুশি অর্থহীন থেকে যাবে। মুসলিম দর্শনে ও হাদীস বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, মুসলমানদের জুমাবার হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন এর পর বছরে দুটি ঈদ ঈদুল-ফিতর ও ঈদুল-আজহা। আর তার চেয়ে বড় ঈদ উৎসব হলো হজ যা খানায়ে কাবায় অনুষ্ঠিত হয়। আপনারা লক্ষ্য করবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে কয়েক যুগ আগের লেখা বার চান্দের খুতবার বই থেকে দায়সারা গোছের খুতবা আরবিতে পাঠ করা হয়। দুটি পর্বের খুতবার যুগ যুগ ধরে এসব খুতবা পঠিত হয়ে আসছে। যিনি বা যারা খুতবা পাঠ করেন তাদের শতকরা ৯৮ ভাগ খতিব জানেন না যে তিনি কী খুতবা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আরবি ভাষা উচ্চারণের সাথে সাথে অর্থ বুঝে ফেলেন এমন খতিবের সংখ্যা হাজারে ২.১ জন মাত্র। যে জন্য জুমার খুতবার পূর্বে তারা জাতীয় ভাষার ১৫-২০ মিনিট আলোচনা করে থাকেন। ফলে যা দাঁড়ালো তা হলো জুমার খুতবা ঈদের খুতবা তিন স্তরে পাঠের নিয়ম শুরু হয়েছে। এটি শরিয়তের দৃষ্টিতে প্রশ্নবোধক। এসব বিষয় নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ গবেষণা করা আজ খুবই জরুরি। আরবিতেই খুতবা দিতে হবে অন্য কোন ভাষায় খুতবা দেওয়া নাজায়েজ বলে হাজার বছর যাবৎ মুসলিম জাতিকে অজ্ঞতাবশত অথবা সুকৌশলে দাবিয়ে রাখা হয়েছে। আরবিতে ভাষা জ্ঞান না থাকায় অধিকাংশ মুসল্লি প্রদত্ত খুতবা থেকে জীবন গঠন, সমাজ গঠন, রাষ্ট্র গঠন, সর্বোপরি চরিত্রগঠন, দায়িত্ববোধ, মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে পারেন না। ফলে গতানুগতিক আনুষ্ঠানিক কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সময় ও সুযোগ অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। জুমার সালাতের পূর্বে ও ঈদের সালাতের পরে যে খুতবা বা বক্তব্য দেওয়া হয় তা কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক আরবি ও স্থানীয় ভাষায় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে মুসল্লিদের বুঝাবার, জানাবার এবং হৃদয়ঙ্গম করার মতো উপযোগী খুতবা পাঠ করা বা আলোচনা করা শুধু বৈধই নয় বরং অতীব জরুরি ও সাফল্যজনক। পবিত্র কুরআনের ভাষা মতে জানা যায়, যখন জুমার সালাত শেষ হবে তোমরা ছড়িয়ে পড়ো সে খুতবা বাস্তবায়নে যাতে করে ইসলামী খিলাফত দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ বিশে^র কোথায় কী হচ্ছে? মুসলমানদের সামগ্রিক অবস্থা কী? কী তাদের ফরিয়াদ? চারিদিকে কেন এত অশান্তি? কেন মানবতা আজ বিপর্যস্ত? মানবাধিকার কেন এত লুণ্ঠিত? নিত্যদিন হৃদয় বিদারক লোম হর্ষক অনাকাঙ্ক্ষিত অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটছে? পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক আজব গজব কেন এত বৃদ্ধি পাচ্ছে? কেন মুসলমানরা শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়া সত্ত্বেও এত নির্যাতিত হচ্ছে? এ নিয়ে মসজিদের মিম্বরে, ঈদের মাঠে, রাজকীয় আসরে তেমন কোন আলোচনা মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রতিবাদ কিংবা করণীয় বিষয়ক জরুরি আলোচনা হচ্ছে না। এসব বিষয়গুলো আর কতকাল উপেক্ষিত থেকে যাবে? মা-শাআল্লাহ ইদানীং কিছু কিছু ইমামের জুমার ও ঈদের খুতবা শুনবার মতো। তাঁদের আলোচনায় আমাদের সমাজব্যবস্থার পারিপার্শ্বিক ভুল-ত্রুটি ও আশা-নিরাশার দিকগুলো জানবার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে হয়। মূলত সকল ধরনের খুতবার মৌলিক বিষয়বস্তু একই প্রকৃতির যেমন- তৌহিদ, রিসালাত ও আখিরাত কেন্দ্রিক। তিনটি মৌলিক বিষয়কে পরিষ্কার করে বুঝাতে সমগ্র কুরআন ও সিয়া সাত্তাহর হাদিস গ্রন্থের অংশ থেকে বেছে নিয়ে খুতবা পাঠ করা হয়। কিন্তু অধিকাংশ মুসল্লির আরবি ভাষায় জ্ঞান না থাকায় শ্রোতারা দুর্ভাগাই রয়ে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে। যেহেতু মানবজীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধানমূলক সভ্যতার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপত্র হলো খুতবা, শান্তিসহ মানসিক প্রশান্তির জন্যই খুতবা, সেই প্রশান্তির বাণী আর বর্ণনা যদি আমরা না বুঝি তাহলে খুতবার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে এটিই স্বাভাবিক। ধরুন চিকিৎসক আপনার রোগ নির্ণয় করে লক্ষণানুসারে ব্যবস্থাপত্র দিলেন সে ব্যবস্থাপত্রের নির্দেশনাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয় করে যথাসময়ে সঠিক পরিমাণে ওষুধ সেবনের কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। সে ব্যবস্থাপত্র যদি আপনি পড়তে বা বুঝতে না পারেন তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এ জন্য আপনাকে প্রথমে ব্যবস্থাপত্র বুঝতে হবে। আর যদি না বুঝেন তাহলে যিনি বুঝেন তার শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলেই হয়ত রোগারোগ্য সম্ভব। আজ আমাদের অবস্থাটা এমনই হয়েছে এবং হচ্ছে। জুমার খুতবা ঈদের খুতবা মুসলিম জাতির দেহ মন আত্মার উন্নতি সাধনের জন্য ব্যবস্থাপত্রের ন্যায়। একজন মুসলামানের চরিত্র আচার আচরণ নৈতিকতাসহ তার দায়িত্ব ও কর্তব্য কি সব বিষয়ে আলোচিত হয় খুতবায়, যেহেতু খুতবার সিলেবাস হলো কুরআন ও হাদীস। অর্থাৎ বিশ^ব্যাপী সার্বজনীন শাশ্বত পাঠ্যক্রম। প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতার নিরিখে এই নীতি ও বিধানগুলো জানবার, বুঝবার, হৃদয়ঙ্গম করবার অধিকার মুসল্লিদের আছে। কিন্তু এক শ্রেণির অসচেতন আলেমের কারণে বা অজ্ঞতাকে লুকিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে কোন ব্যক্তির লেখা ১২ চান্দের খুতবা পঠিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। যারা খুতবার বই লিখেছেন তারা কি ঐ বইয়ের কোথাও লিখেছে যে এটি যুগ যুগ ধরে, মাসের পর মাস বছরের পর বছর পাঠযোগ্য বলে বিবেচিত হবে? কুরআন পড়ুন, হাদীস পড়ুন ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জন করুন দেখবেন আপনার চিন্তা চেতনায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসে যাবে। তবে তাগুদের তাঁবেদারির চিন্তা চেতনা আর নিজেকে নিরাপদ সুরক্ষিত রাখবার জন্য যারা ইসলামের নামে ধর্মপালন করেন তারা আর যাই হোক ধর্ম আংশিক পালনকারী হতে পারেন, আর আংশিক ধর্ম পালনকারীরাদের প্রকৃত মুমিন মুত্তাকি দাবি করা শোভা পায় না। মনে রাখবেন তাগুদের তাঁবেদারি মূলত শয়তানের তাঁবেদারি, আর শয়তানের তাঁবেদারির শেষ পরিণতি হলো আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও নির্ঘাত জাহান্নাম। এটিও মনে রাখবেন দুনিয়ার জীবনটা নশ্বর বা ক্ষণস্থায়ী বটে যা তুচ্ছ বা মাছির পাখার সমান মূল্যবান, কিন্তু এ ক্ষণস্থায়ী জীবনটা সচেতন অবস্থায় তাকওয়া অবলম্বন করে পরিচালনা করতে পারলে চিরস্থায়ী বা শাশ্বত অনন্ত জীবনের জন্য জান্নাতের অধিকারী হওয়া সম্ভব। এতে বুঝা যায় যে, পরকালের ঠিকানা আবিষ্কার করার জন্য একমাত্র উপযুক্ত কেন্দ্রস্থল দুনিয়াই। এক্ষেত্রে দুনিয়ার এ পরীক্ষাগারের গুরুত্বও কম নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, যে মানুষ স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়ালেখা করে ৪ ধাপে ৪৪ ঘণ্টার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে পরীক্ষার হলে মাত্র ৪৪ ঘণ্টা অবস্থানজনিত কারণে আজীবন সুখের ঠিকানা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। এই স্বল্প সময়ের বিনিময়ে ৭০-৮০ বছরের জীবন স্বাচ্ছন্দ্য ও দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়। তেমনি দুনিয়া নামক পরীক্ষাগারের সময়কে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারলে আখিরাতের অনন্ত জীবনে সুখ ও শান্তি আবিষ্কার করা যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা জিন ও মানব জাতিকে একমাত্র তার ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। দুনিয়া সৃষ্টির পর থেকেই এ বিধান চলমান এবং কিয়ামাত পর্যন্ত এ নির্দেশনা চালু থাকবে। এই ইসলামকে জানা বুঝা এবং সে মোতাবেক অনুশীলন করার জন্য হাতে কলমে শেখাবার জন্য যুগ যুগান্তরে মহান আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী ও রাসূল দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেছেন। তাঁদেরকে দান করেছেন ওহির বাণী বা আসমানি কিতাব। এই কিতাব সমূহের মৌলিক শিক্ষাই হলো ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির উপায় সমূহ। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা) এর উপর সুদীর্ঘ ২৩ বছর যে ঐশীবাণী জিবরাইল (আ) এর মাধ্যমে নাযিল করেন তারই নাম মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। কুরআন আরবি ভাষায় পবিত্র মক্কা ও মদিনায় নাযিলকৃত পবিত্র গ্রন্থ। শুধু কুরআন নয় তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিলসহ ইতঃপূর্বেকার সকল গ্রন্থের নাযিলের উদ্দেশ্য হলো মানুষ তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ে আদেশ নিষেধ মানবে এবং বিনিময়ে লাভ করবে চিরস্থায়ী শান্তি আর আরাম আয়েশের পবিত্র স্থান জান্নাত। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে “তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান রেখে জীবন যাপন করবে।” (সূরা আলে-ইমরান : ১১০) মুমিনতো মূলত তারাই যারা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আদেশ নিষেধ যাই আসুক না কেন, তাদের অন্তর আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন না। তারা আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্তের স্বার্থে নির্দ্বিধায় ঐকমত্য পোষণ করাকেই অমূল্য নিয়ামত মনে করেন। “যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো জীবনাদর্শ মেনে চলবে, এটা তার পক্ষ থেকে আল্লাহর নিকট গৃহীত হবে না কখনো। তাছাড়া সে তো পরকালে মহা ক্ষতিগ্রস্তদের অসংখ্য কাফির-মুশরিকদের দলভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান : ৮৬) “সমগ্র মানবজাতিকে সুসংবাদ প্রদান ও সতর্ক করার জন্যে আমি তোমাদের সবার প্রতি সেই মহান আল্লাহর রাসূল (সা), প্রেরণ করেছি। যিনি মহাবিশ্ব ও এই পৃথিবীর কর্তৃত্বের মালিক।” (সূরা আল আরাফ : ১৫৮) “এই কিতাব মানবজাতির জন্যে (সঠিক পথের) সুস্পষ্ট বিবৃতি আর বিবেকবানদের জন্যে উপদেশ।” (সূরা আলে ইমরান : ১৩৮) “আমার নিকট এই কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে যে তোমাদেরকে এবং ঐ সমস্ত মানবমণ্ডলীকে সতর্ক করার জন্যে যাদের কাছে তা পৌঁছবে।” (সূরা আল আনআম : ১৯) “তোমরা আল্লাহর কিতাবের কোন কোন অংশের উপর ঈমান আনবে আর কোন কোন অংশকে অস্বীকার করবে এ ধরনের অধিকার তোমাদের নেই। তোমাদের যেসব মানুষ এমনটি করবে তাদের অনিবার্য বিপজ্জনক পরিণতি দাঁড়াবে। তারা এ পৃথিবীতে অপমানিত লাঞ্ছিত হবে, আর কিয়ামত দিবসে নিক্ষিপ্ত হবে কঠোর আযাবে। তোমরা যা করছো আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে বেখবর নন।” (সূরা বাকারা : ৮৫) এ ব্যাপারে আল-কুরআন বলেই দিয়েছে যে, “আপনি কি সে লোকের দিকে লক্ষ্য করেননি যে তার ইচ্ছা প্রবৃত্তিকে নিজের উপাস্য সাব্যস্ত করেছে? তবুও কি আপনি তার হিদায়াতের জিম্মাদার হবেন?” (সূরা ফুরকান : ৪৩) অর্থাৎ মনগড়া বা মানবরচিত কোনো রীতিনীতি, মতামত কর্ম কৌশল, কর্মসূচি, কর্মনীতি মেনে চলার কোন প্রকার অধিকার মুসলমানদের একেবারেই নেই। পৃথিবী যার হুকুমে চলবে তার এই চূড়ান্ত নীতিই হলো ইসলামের নীতি। যারা এর বিপরীত নীতি অনুসরণ করবে আল-কুরআনের ভাষায় তারা কাফির মতান্তরে মুশরিক। উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্টতই বুঝা যায়, ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে জানার ও মানার চেষ্টা করতে হবে। আংশিকভাবে মানার কোনো সুযোগ একেবারেই নেই। উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে সহজেই অনুমেয় যে, বিশ্ব সার্বভৌমত্বের অধিকারী, আইনপ্রণেতা, শাসনকর্তা, অধিপতি এবং সর্বময় ক্ষমতার একমাত্র মালিক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। আর কুরআন শুধু মুসলমানদের নয় বরং জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সমগ্র মানুষের সামগ্রিক জীবন যাপন পদ্ধতি হিসেবে সার্বজনীনভাবে নাযিল করা হয়েছে। যাতে মানবজাতি ব্যর্থতার পরিবর্তে সফলকাম হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা আনুগত্য, রাসুলের আনুগত্য আর ইসলামী আন্দোলনে শরিক নেতাদের আনুগত্যের কথা সুস্পষ্টভাবে আল-কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রকার আনুগত্য ছাড়া প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় না। এ ধরনের আনুগত্য সোজা কাজ নয়, যদি উপযুক্ত পরিবেশ, অনুকূল পরিবেশ না থাকে। ইসলাম পরিপূর্ণভাবে যে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত নেই এই ধরনের রাষ্ট্রে ইসলাম মেনে চলা দুরূহ ব্যাপার। যারা মানতে চেষ্টা করবে তাদের সাথে তাগুদের সংঘাত অনিবার্য। এ ধরনের প্রতিকূল পরিবেশে সংঘবদ্ধভাবে কৌশল অবলম্বন করে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া মুসলমানরা হয়ত আনুষ্ঠানিক ইবাদত করতে পারবে কিন্তু প্রকৃত মুমিন মুত্তাকি হতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে ইসলামের আলোকে উত্তম চরিত্রের অস্ত্র দিয়ে, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ধৈর্য আর অর্জিত প্রশিক্ষণ রপ্ত করা ছাড়া মুক্তির কোন পথ আছে বলে আমার জানা নেই। তবে আধুনিক বিশ্বে গণরায় প্রদানের মাধ্যমেও ইসলামকে বিজয়ী করার সুযোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে ইসলাম একটি পরীক্ষিত সত্য দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা যা বিশ্বকে ৫-৯ শ’ বছর করে শাসন করেছে। যে শাসনামল ছিল সুখ শান্তি আর নিরাপত্তা ও মানবাধিকার এবং মানবতার অনুপম দৃষ্টান্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে শয়তানের চক্রান্ত ইহুদি শাসকদের কূটকৌশলে এক শ্রেণীর আলেম ওলামা সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনদের অহমিকা আমিত্ব ও লোভ-হিংসা অহংকারে ফেরকাবাজ, ফতোয়াজ এবং মত পার্থক্যজনিত কারণে আজ বিশ্বের একটি রাষ্ট্রেও পূর্ণাঙ্গ ইসলাম মেনে চলার সুযোগ নেই। হযরত আলী (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন- অদূর ভবিষ্যতে মানুষের এক যুগ আসবে যখন নাম ব্যতিরেকে ইসলামের আর কিছু থাকবে না, আর অক্ষর ব্যতীত কুরআনের ও কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। তাদের (মুসলমানদের) সামাজিক সমূহ জাঁকজমকপূর্ণ হবে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে হিদায়াতশূন্য হবে। তাদের আলেমগণ হবে আকাশের নিচে সবচেয়ে খারাপ আর তাদের তরফ হতেই দ্বীন (ইসলাম জীবন ব্যবস্থা) সংক্রান্ত ফিতনা (অসঙ্গতি) প্রকাশ পাবে, অতঃপর সেই ফিতনা (অপসংস্কৃতি) তাদের দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে। (বায়হাকি, শোয়াবুল ঈমান) সম্প্রতি এমন একটি দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে বগুড়া জেলার শেরপুর কামিল মাদরাসায়। স্থানীয় ইমাম মুয়াজ্জিম সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এই বার্ষিক ইসলামী জালসায়। একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে রাত সাড়ে ৮টার সময় উক্ত জলসায় মঞ্চের সামনে খরের উপর বসে ওয়াজ শুনছিলাম। ব্যানার ও পোস্টারে হ্যান্ডবিলে ছাপানো দ্বিতীয় বক্তা হযরত মাওলানা মো: কেরামত আলী নিযামীর বক্তব্য শুরু হলো তিনি হামদ নাত পাঠ শেষে যুগোপযোগী মূল্যবান ওয়াজ শুরু করলেন, তিনি বললেন- আজ আমার বক্তব্যের মূল বিষয় হলো জুমার সানি খুতবার তাৎপর্য। তিনি যখন কুরআন-হাদীসের আলোকে তার বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন সভার সভাপতি প্রধান অতিথি বিশেষ ও বরেণ্য অতিথি, তিনজন সহসভাপতিসহ আমন্ত্রিত অতিথি যাদের নাম ব্যানার পোস্টার এবং লিফলেটে উল্লেখ করা হয়েছিল তারা কেউই মঞ্চে হাজির ছিলেন না। আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ একযোগে কেন উপস্থিত ছিলেন না তা জানা যায়নি। বিশাল প্যান্ডেলের নিচে খড়ের গাদায় বসে শ্রোতারা মনোমুগ্ধভাবে বক্তার ওয়াজ শুনছিলেন। জলসা জমজমাট। তিনি তাগুদের তাঁবেদারি পরিহার করে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা) এর তাঁবেদারির গুরুত্ব বুঝাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় একটি রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিবাদের কারণে অনাকাক্সিক্ষতভাবে বিদায় নিতে হয়। হঠাৎ এ সময় বেশ কিছু মানুষ স্লোগানসহ প্রধান বক্তাকে মঞ্চে নিয়ে এসে দ্বিতীয় বক্তার ওয়াজ বন্ধ করে প্রধান বক্তাকে বক্তব্য দেবার ব্যবস্থা নিলেন। এতে উপস্থিত শ্রোতারা ক্ষোভে প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে পড়ে এবং অন্তত আরো ১৫-২০ মিনিট সময় বাড়ানোর দাবি জানান। কিন্তু তাকে আর সময় দেয়া হলো না। সে কারণে তার বক্তব্যের মূল বিষয় সানি খুতবার গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচিত হলো না। অথচ ঐ বক্তার বরাদ্দের আরো ৩০ মিনিট বাকি ছিল। দ্বিতীয় বক্তা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনেই মনের মধ্যে ক্ষোভ নিয়ে ভদ্রতার সাথে প্রাইভেট কারে চড়ে বিদায় নিলেন। এ ঘটনা শুধু শেরপুরে নয় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় ইসলামী জলসায় এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার অবতারণা হচ্ছে। সরকার হকপন্থী বক্তাদের তালিকা তৈরি করে তাদের ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য প্রদানে প্রশাসনিকভাবে অলিখিতভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অনেকে ইতোমধ্যে অনেক বক্তাই জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন। সর্বোপরি গত ৩ এপ্রিল ২০১৯ থেকে এই ধরনের বক্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে নিয়োজিত করা হয়েছে এবং বক্তাদের আয়ের উপর কর আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটি উদ্বেগজনক এবং ইসলামকে প্রতিহত করার আলামত। কথা হচ্ছে কেন ঐ বক্তাকে তার মূল বক্তব্য দেয়া হলো না। কারণ একটাই তিনি তার বক্তব্যে আলেম ওলামা খতিব ও ইমামদের বর্তমান অবস্থা ও তাদের আচরণ নিয়ে কথা বলছিলেন। এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সচেতন নাগরিক তথা মুসলমানদের বিবরণী ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে সব ফরজের বড় ফরজ হিসাবে ইসলামী হুকুমাত কায়েমের গুরুত্ব বুঝাচ্ছিলেন। তিনি বলেন- মনে রাখবেন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি চলমান সময়ে মুসলমানদের প্রতি কুরআনের নির্দেশনা, মহানবী (সা) জীবন চরিত্র সাহাবীদের জীবনচরণ এবং হক্কুল্লাহ ও হক্কুলইবাদ ইত্যাদি বিষয় উপেক্ষা করে জন্মসূত্রে মুসলমান থাকা যায় কিন্তু ইমানদার মুত্তাকি মুমিন হওয়া যায় না। মনে রাখবেন মসজিদ আল্লাহর ঘর এখানে সালাত আদায়, ইসলামী তাহজিব তমদ্দুনীয় কর্মকাণ্ড ছাড়া আর কিছু করা যায় না। এখানে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় যে সিলেবাস পাঠ করা হয় সে বিধানগুলো মসজিদের বাইরে এসে ব্যক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুশীলন করতে হয়। মসজিদের ভিতরে নয়। প্রকৃত কথা এই যে, এসব খুতবার মৌল দর্শন ও শিক্ষা যদি মুসলমানরা বুঝার মতো সুযোগ পেত তাহলে গোটা দুনিয়ার দৃশ্যপট পাল্টে যেত। খুব সুকৌশলে ইহুদি নাসারা ও এক শ্রেণীর গোঁড়া আলেম সমাজের নির্বুদ্ধিতার আর মৌল জ্ঞান না থাকার কারণে আজ মুসলমানদের এ অধঃপতন হয়েছে। খুতবার মৌলিক শিক্ষা থেকে মুসলমানরা যে পরিমাণ ফায়দা হাসিল করার কথা ছিল তা আজ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পবিত্র কুরআন সুন্নাহর মতো মহামূল্যবান নিয়ামত মওজুদ থাকা সত্ত্বেও আমরা কিঞ্চিৎ উপকার পেলেও অধিকাংশ নিয়ামত থেকে বঞ্চিতই রয়ে যাচ্ছি। যে কারণে আজ মুসলমানরা দুর্ভাগা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাগুতের নিকট পরাস্ত হয়ে পড়ায় সোনালি যুগের ইতিহাস আজ ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। এর মূল কারণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, দূরদর্শিতার অভাব, সুদূরপ্রসারী চিন্তা চেতনা আর মতানৈক্য। আমরা কেন ভুলে যাই যে, পবিত্র কুরআনের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জ্বলন্ত উদাহরণ হলো রাসূল (সা) সিরাত বা জীবনাদর্শ। তার জীবনের মিশনই ছিল কুরআনের আইন বাস্তবায়ন করে বিশ্ব সার্বভৌমত্বকে এক ইলাহর সার্বভৌমত্ব, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আর এ জন্য মুহাম্মাদ (সা) অর্থ সম্পদ প্রাচুর্য ও ভোগ বিলাসের সকল প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে একটি মহা কষ্টের সংগ্রামে ব্রত হয়েছিলেন। বিনিময়ে ঝরাতে হয়েছে বহু রক্ত বহু প্রাণ। তাহলে সেই ইসলাম পালনকারী হিসেবে আপনি মুমিন মুত্তাকির দাবিদার হয়ে কি করে ইসলামের প্রতিকূল পরিবেশে অবস্থান করা সত্ত্বেও এত আরাম আয়েশে নিরাপদে দিনাতিপাত করেন? এ আরাম তো পাবেন সেই দিন যেদিন ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠিত হবে। মনে রাখবেন তাওহিদ তাগুতের কবর রচনা করে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। মিথ্যাকে করে দূরীভূত, সত্যকে করে প্রতিষ্ঠিত। এ মহান মিশনই ইসলামী মিশন। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, “তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি তাঁর রাসূল (সা)কে প্রেরণ করেছেন, হেদায়াত সহকারে ও দ্বীনে হক সহকারে যাতে করে তিনি এই দ্বীনে হককে অন্য সকল মতবাদের উপরে বিজয়ী করতে পারেন এতে করে মুশরিকরা যতই অপছন্দ করুক না কেন? (সূরা সফ : ৯) “তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে, যিনি মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে নিজে সৎকাজ করে এবং বলে আমি মুসলমান।” (সূরা হামীম সিজদাহ : ৩৩) ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলো দাওয়াত বা আহ্বান, দ্বিতীয়ত সংগঠন, তৃতীয়ত প্রশিক্ষণ, চতুর্থত জিহাদ বা আন্দোলন, পঞ্চমত- সশস্ত্র সংগ্রাম, সপ্তম বিজয়, অষ্টম জান্নাত বা আল্লাহর দিদার লাভ, নবম জাহান্নাম বা চিরশাস্তির জায়গা। আজকাল সমাজে এক শ্রেণির মুসলমান আছেন যারা সমাজে সুন্দর পোশাক পরে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে গিয়ে জামায়াতে পড়ে থাকেন, দৈনিক কুরআন পাঠ করেন, মাসে বা বছরে কুরআনও খতম দেন, তাসবিহ জপেন, দামি কার্পেটের উপর নিজের দামি জায়নামাজ বিছিয়ে সপ্তাহে জুমাবার মসজিদে নিয়ে সালাত আদায় করেন, রমজান এলে তারাবি পড়েন, শবেবরাত শবে কদর এলে রাত্রি যাপন করেন, আর দুই ঈদের মাঠে প্রথম কাতারে ইমামের পিছনে জায়নামাজ বিছিয়ে নিজেদের সম্মান বজায় রাখেন। অপরদিকে ইসলামী সংগঠন, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী রাজনীতি একেবারেই অপছন্দ করেন তাই নয় নিজেদের ক্ষমতা, অর্থ-বুদ্ধি দিয়ে এগুলো প্রতিহত করেন আর মনে করেন আমি তো প্রকৃতই ধর্মভীরু মুসলমান। আর এক শ্রেণীর মুসলমান রয়েছেন, যারা সালাত, সাওম, হজ পালন করেন এবং যাকাত দেন। দানশীল পরোপকারীর দৃশ্য দেখলে মনে হয় এরা পাক্কা মুসলমান। এরা আনুষ্ঠানিক লৌকিকতার ইবাদতে যথেষ্ট তাঁবেদারি। অথচ এরাই মানবরচিত মতবাদের ধারক এবং বাহক। রাসূলের জামানায় এমন দৈত নীতি অনুসরণকারীরা মুনাফিক মিথ্যাবাদী কাফির বলে বহুবার বহু জায়গায় নানা ভঙ্গিতে তাদের হেয় প্রতিপন্ন করে শেষ পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে। অথচ এই শ্রেণীর মুসলমানরা হয়ত জানে না যে, মুসলমানদের রয়েছে এক সোনালি অধ্যায় শান্তির যুগ যা ৫-৯ শ’ বছর চলমান ছিল। অথচ কালের বিবর্তনে সেই মুসলিম জাতি আজ নানামত নানা মতানৈক্যের কারণে দলে দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব সংঘাতে বিপর্যয়ে জড়িয়ে পড়েছে, এবং দুর্ভাগা জাতি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। তারা আজ একত্ববাদের তাওহিদী চেতনা পরিহার করে নিজেদের নিরাপদে রেখে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবরচিত মতবাদ ঢুকিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনছে। জীবন যাপনে নানা অসঙ্গতি আর দুর্যোগ দুর্ভোগে সরাসরি কুরআন সুন্নাহর শরণাপন্ন না হয়ে মানবরচিত আধুনিক মতবাদের দ্বারস্থ হয়ে পড়েছে, যে কারণে মুসলিম সালতানাতের বিপর্যয়ের পথ খোলাসা হয়ে পড়েছে। আজ এই শ্রেণির মুসলমানরা নিজেদের মুসলমান দাবি করলেও প্রকৃত তৌহিদী চেতনার জীবন যাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই শ্রেণির মুসলমানরা এটি অনুভব করে না যে, মানবজীবনকে তার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে তৌহিদী চেতনাই একমাত্র পথ ও পাথেয়। আর এর বিপরীত তাগুত বা অপশক্তি বা বাতিল শক্তির মতবাদ ও তাদের তাঁবেদারি করা ইসলাম খুব কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু তাই নয় নিজেদের পরিবার, ধন সম্পদের গুরুত্বের চেয়ে ইসলামী আন্দোলনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তাগুতের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নানাভাবে পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং দুনিয়ার জীবনে যত নেক আমল আছে সবচেয়ে দামি ও সেরা নেক আমল হিসেবে ইসলামী আন্দোলনকে নির্ধারিত ও নির্বাচিত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ইসলামী আন্দোলন ও সংগ্রাম করে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবার সৌভাগ্য অর্জনকারী।
লেখক : প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী
আপনার মন্তব্য লিখুন