post

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাওয়াতি কাজ । শাহ মু. মাহফুজুল হক

২৭ মে ২০১৯

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাওয়াতি কাজ । শাহ মু. মাহফুজুল হকদাওয়াত ইসলামের একটি অন্যতম পরিভাষা। পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির শুরু থেকে দাওয়াতের এই কাজ শুরু হয়েছে, বর্তমানে চলছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত চলবে ইনশাআল্লাহ।

দাওয়াত কী? দাওয়াত আরবি শব্দ, দাওয়াত অর্থ ডাকা, আহ্বান করা, আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণ জানানো। ইংরেজিতে বলা হয় To call, to preach, to invite. যে কোন বিষয়ে ডাকা বা আহ্বান করাকে দেয়াকে দাওয়াত বলে।

দাওয়াতে দ্বীন? আল্লাহর দ্বীনের আহ্বান হচ্ছে দাওয়াতে দ্বীন। ইহকালীন শান্তি, পরকালীন মুক্তি তথা ইসলামী জীবনবিধানের পথে আহবান করাকে দাওয়াতে দ্বীন বা দাওয়াতে ইলাল্লাহ বলে।

দাওয়াতের মূল বিষয় আল্লাহর একত্ববাদ মেনে নেয়ার আহবান তথা ঈমানের দাওয়াত।

যারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করে কিংবা জন্মসূত্রে যারা মুসলমান তাদের নিকট আমাদের দাওয়াত হলো জীবন থেকে সকল প্রকার মুনাফেকি এবং কর্মীয় বৈসাদৃশ্য পরিহার করে খাঁটি মুসলমান হ্ওয়ার দাওয়াত বা আহ্বান। আর মানবজাতির উত্থান-পতন, উন্নতি-অবনতি যেহেতু অনেকাংশেই নির্ভর করে নেতৃত্বের ওপর তাই সকলের নিকট আমাদের আহ্বান হলো সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে সকল প্রকার খোদাদ্রোহী, ফাসেকি, অসৎ, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বের আমূল পরিবর্তন করে খোদাভীরু, সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। (ইকামতে দ্বীন)

দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব দাওয়াতি কাজ করা আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরজ। দাওয়াতি কাজের নির্দেশ ও নির্দেশনা দিয়ে সূরা নহলের ১২৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন- “তোমরা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকো কৌশল সহকারে ও উত্তম নসিহতের মাধ্যমে এবং বিতর্ক করো উত্তম পন্থায়।”

দাওয়াতের কাজ হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ এ ব্যাপারে হামিম আস-সাজদার ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “ওই ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে এবং ঘোষণা করে আমি একজন মুসলমান।”

দাওয়াতি কাজ রেসালাতের কাজ তথা নবীওয়ালা কাজ যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলগণ এই কাজ করেছেন। শেষ নবীর উম্মত হিসেবে আমরা এই দায়িত্ব পেয়েছি।

দাওয়াতি কাজ আত্মগঠনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সূরা সফের ২-৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন কথা বল না যা তোমরা কর না। আর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ হলো তোমরা এমনসব কথা বল যা নিজেরা (আমল) কর না।” অতএব একজন দায়ী যখন দাওয়াতি কাজ করে তখন তার মধ্যে এই অনুভূতি তৈরি হয় যে আমি মানুষকে যা বলছি তা আমি নিজে করি কিনা। এইভাবে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে একজন দায়ী নিজেকে তৈরি করার সুযোগ পায়।

সহজে জান্নাত লাভের উপায় দাওয়াতি কাজ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি লাভজনক কাজ। আমার আপনার দাওয়াতে যেসকল পথ হারা মানুষ হেদায়াতের পথ পাবে তারা সারা জীবন যত কাজ করবে তার একটা অংশ সাদকায়ে জারিয়া হিসবে আমার আপনার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। এমনকি একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর যখন নেক আমল করার অন্য সকল পথ বন্ধ হয়ে যায় তখনও এই আমলটি চলতে থাকবে।

পরকালীন মুক্তি আল্লাহ বলেছেন জাহান্নামের আগুন থেকে তোমরা নিজেরা বাঁচ এবং তোমাদের আহালদেরকে বাঁচাও। এখানে আহাল বলতে আমাদের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব, ক্লাস মেট, রুমমেট ও খেলার সাথী ইত্যাদিকে বুঝায়। তাই এই সকল পর্যায়ের মানুষের মাঝে দাওয়াতি কাজ না করে বা তাদেরকে জাহান্নামের পথ থেকে বাঁচানোর জন্য আন্তরিকভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা প্রচেষ্টা না চালিয়ে শুধু ব্যক্তিগতভাবে ভালো কাজ করলে কোন মানুষের পক্ষে জান্নাতে যাওয়া কঠিন হবে। কারণ এই মানুষগুলো হাশরের ময়দানে আল্লাহর আদালতে আপনার আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিবে। তাই পরকালে এই অভিযোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের উচিত বেশি বেশি দাওয়াতি কাজ করা।

জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর প্রথম কাজ হচ্ছে দাওয়াত ইলাল্লাহ শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী তার ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন বইতে ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহর যে পাঁচটি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে প্রথম ও প্রধান স্তর হিসেবে দাওয়াত ইলাল্লাহকেই রেখেছেন। তাই যে বা যারাই আল্লাহর রাস্তাই জিহাদকারীর মর্যাদা অর্জন করতে ব্রত হবে সে বা তাদেরকে সর্বপ্রথম দাওয়াতি কাজকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত জিহাদের এই স্তর বা ধাপগুলো ভালভাবে না বুঝার কারণে আমাদের দেশসহ বর্তমান বিশ্বে কিছু গোমরাহ মানুষ পশ্চিমাদের ক্রীড়নক হিসাবে জিহাদের নামে উগ্রবাদ তথা মানুষ হত্যাকে বেছে নিয়েছে যা কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। তাদের কারণে ইসলামের সবচেয়ে বেশি বদনাম ও ক্ষতি হচ্ছে।

আল্লাহর প্রতিনিধির মর্যাদা রক্ষা করা মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছন তার খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে। আর এই খলিফা বা প্রতিনিধর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য আমাদের প্রয়োজন মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করা। খলিফার দায়িত্ব পালন করলে মানুষ হয় আশরাফুল, দায়িত্ব পালন না করলে আসফালা সাফেলিন।

দোয়া কবুলের জন্য সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নির্দেশ দেয়া আবশ্যক “হযরত হোযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, অবশ্যই তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে, মন্দ ও পাপ কাজ হতে নিষেধ করবে এবং কল্যাণকর কাজ করতে উৎসাহিত করবে। অন্যথায় সামগ্রিক আজাব দ্বারা আল্লাহ তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন। অথবা তোমাদের মধ্যকার সবচেযে নিকৃষ্ট পাপী লোকদেরকে তোমাদের শাসক বানিয়ে দেবেন। অতঃপর তোমাদের নেককার লোকেরা (তা থেকে বাঁচার জন্য) দোয়া করতে থাকবে। কিন্তু তাদের দোয়া কবুল করা হবে না।” (মুসনাদে আহমাদ, ৫ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯০, নং ২৩৭০১)

ইসলামবিরোধীদের মোকাবেলায় দ্বীনকে বিজয়ের জন্য দাওয়াতি কার্যক্রম বৃদ্ধি করা আবশ্যক বর্তমান সময়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নাস্তিক মুর্তাদ ও ইহুদি খ্রিষ্টানসহ সমস্ত ইসলামবিরোধী শক্তি জ্ঞান বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ইসলামবিরোধী যে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার করছে তা মোকাবেলা করে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অত্যন্ত সুচিন্তিত, সময়োপযোগী ও ব্যাপকভিত্তিক দাওয়াতি কাজ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

দায়ী ইলাল্লাহ/দায়ীর গুণাবলি ◊ আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী ◊ উন্নত আমল ◊ সাহসিকতা ◊ ধৈর্যশীল-নুহ আ: যখন দাওয়াত নিয়ে তার কওমের নিকট যেত তখন তারা তাকে শারীরিকভাবে প্রহার করে অজ্ঞান করে ফেলতো কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে এলে তিনি যখন উঠে দাঁড়াত তখন তারা অবার পাথর মেরে মেরে ও তাকে অজ্ঞান করে ফেলতো। এভাবে একে একে সাড়ে নয়শত বছর তিনি দাওয়াতি কাজ করেছিলেন। এই সুদীর্ঘ সময়ে তার দাওয়তে মাত্র ৪০ জন মতান্তরে ৮০ জন লোক ঈমান এনেছিল ◊ ক্ষমাশীল-তায়েফে আল্লাহ রাসূল (সা) ◊ কথা ও কাজে মিল থাকা ◊ অভিজ্ঞ ডাক্তারের ভূমিকা পালন করা ◊ নিঃস্বার্থভাবে দাওয়াতি কাজ করা ◊ দায়ী ইলাল্লাহর মর্যাদা ও জিম্মাদারির অনুভূতি থাকা ◊ লেগে থাকার মানসিকতা ◊ সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ◊ প্রজ্ঞার অধিকারী হওয়া ◊ সকল প্রকার মানবিক দুর্বলতা থেকে বিরত থাকা ◊ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া। (অর্থ হে নবী তোমার খোদার কিতাব হইতে যাহা কিছু তোমার প্রতি ওহি হিসেবে নাজিল করা হয়েছে তাহা শূনাইয়া দাও। (সূরা কাহাফ-২৭) ◊ যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকা ◊ বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাওয়াতি কাজের কৌশল/পন্থা:।

উন্নত আমল/বাস্তব সাক্ষ্য যে আদর্শের প্রতি আমরা মানুষকে আহ্বান করছি নিজেদের জীবনে তার বাস্তব অনুসরণের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ অনেক বেশি কার্যকর হয়। রাসূলের নিকট অহি আসার পর বিভিন্ন শ্রেণী ও বয়সের মধ্যে যারা প্রথম ইসলাম কবুল করেছিলেন তারা সবাই আল্লাহর রাসূলের চরিত্র তথা আমল দেখেই ইসলাম কবুল করেছিলেন। বিশেষ করে আরবের ধনাঢ্য ব্যক্তি তোফায়েল আদ দাউসি রাসূল সা:-এর নামাজে একনিষ্ঠতা দেখেই ইসলাম কবুল করেছিলেন।

ব্যক্তিগত টার্গেটে দাওয়াতি কাজ পরিবেশের কথা বলে আমরা অনেকে দাওয়াতি কাজ করি না। অথচ ব্যক্তিগত সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা যদি দাওয়াতি কাজ করি তাহলে আমাদের কোন সমস্যা হয় না। বরং ব্যক্তিগত দাওয়াতি কাজ অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়। হজরত আবু বকর রা: এর জীবনীতে আমরা দেখতে পাই তিনি তার ব্যক্তিগত টার্গেটে দাওয়াতি কাজ করে হযরত উসমান রা:, যুবাইর রা:, আব্দুর রহমান রাধ, সা’দ রা:ও তালহা রা: সহ অসংখ্য লোক ইসলাম কবুল করেন। মাওলানা আব্দুল খালেক সাহেবের দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় অধ্যাপক গোলাম আযমের মতো লোক ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করেন যার মাধ্যমে হাজার শুধু নয় বরং লক্ষ লক্ষ লোক সঠিক পথের দিশা পেয়েছে এবং পাচ্ছে।

গ্রুপ দাওয়াতি কাজ ব্যক্তিগত টার্গেটে দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি গ্রুপ দাওয়াতি কাজ দাওয়াতের অন্যতম একটি মাধ্যম। এর মদিনায় হিজরতের পূর্বে ইসলাম প্রচারের জন্য রাসূল সা: মদিনাতে মুসআব ইবনে উমাইর রা:-এর নেতৃত্বে একটি দাওয়াতি গ্রুপ প্রেরণ করেন। একদিন মুসআব রা. যখন তার দাওয়াতি গ্রুপ নিয়ে বনু আব্দুল আশহাল গোত্রের নিকট দাওযাত দিচ্ছিলেন এই সংবাদ শুনে মদিনার অন্যতম প্রভাবশালী আওস গোত্রের বিখ্যাত দুই সর্দার উসাইদ ইবনে হুদাইর ও সা’দ ইবনে মুয়ায বর্শা হাতে সমাবেশস্থলে এসে মুসআব রা: ও তার সাথীদেরকে হুমকি দিয়ে বলল যদি বাঁচতে চাও তবে তোমরা এখনই এই জনপদ ছেড়ে চলে যাও। কিন্তু আল্লাহর রাসূলের প্রিয় সাহাবী উসাইদ ইবনে হুদাইরদের এই ধরনের জীবন নাশের হুমকি ও রক্তচক্ষুকে ভয় না করে দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করলেন হে আউস গোত্রের নেতা! আপনি আমাদের এই সভায় একটু বসুন এবং আমরা যা বলছি তা একটু শুনুন। তারপর আপনি যদি মনে করেন আমরা যা বলছি তা যৌক্তিক তাহলে তা আপনিও গ্রহণ করুন। আর আপনার নিকট যদি মনে হয় তা সঠিক নয় তাহলে আমরা অবশ্যই এখান থেকে চলে যাবো আর কখনই আসব না। উসাইদ মুসআব রা. এরই প্রস্তাবে রাজি হয়ে বর্শাটি মাটিতে রেখে সমাবেশস্থলে বসে পড়ল। মুসআব রা. অত্যন্ত চমৎকারভাবে কুরআনের আয়াত ও রাসূলের শেখানো পদ্ধতিতে ইসলামের মর্মবাণী উপস্থাপন করতে লাগলেন। মুসআব রা. এর আলোচনায় মুগদ্ধ হয়ে একপর্যায়ে আউস গোত্রের সর্দার উসাইদ ইবনে হুদাইরও সাদ ইবনে মুয়াজ ইসলাম কবুল করল, আর তাদের দেখে আউস গোত্রের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকেই ইসলাম কবুল করল। আর এরপর থেকে মুসআব রা. গুদাইস ইবনে হুদাইর ওসাদ ইবনে মুয়াজসহ অন্যদেরকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন গোত্রের নিকট গিয়ে গিয়ে ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে মদিনাকে রাসূল সা. এর হিজরত ও নেতৃত্বদানের উপযোগী করে তৈরি করেন। উক্ত ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের উচিত সকল ভয় ভীতিকে উপেক্ষা করে যেখানে সংগঠন নেই সেখানে সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং সোমবার দাওয়াতি বার ও বিভিন্ন দাওয়াতি অভিযান (বিশেষ করে ১৬ই জুলাই ’১৮ থেকে শুরু হতে যাওয়া দাওয়াতি পক্ষ) উপলক্ষে দাওয়াতি গ্রুপ প্রেরণ করা। পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে দাওয়াতি গ্রুপে সদস্য সংখ্যা কম বেশি হতে পারে (কমপক্ষে ২/৩ জন)। তবে প্রত্যেক গ্রুপে একজন ভালো দায়ী থাকতে হবে।

জ্ঞান/যোগ্যতা (আদর্শিক, অ্যাকাডেমিক, প্রযুক্তি, সমসাময়িক বিশ্ব) জ্ঞান বা যোগ্যতা দাওয়াতি কাজে কত বড় মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে তা বর্তমান সময়ের বিশিষ্ট দায়ী ডাক্তার জাকির নায়েক, ড. ইয়াসির আল কাদেরী, ড. নোমান আলী খান, ড. তারেক রমাদান ও ড. ইউসুফ আল কারদাভি প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ এর বাস্তব উদাহরণ। আমাদের সংগঠনেও আমরা দেখি ইসলামী আন্দোলনের যে কর্মী বা দায়িত্বশীলের অ্যাকাডেমিক ফলাফল ও অন্যান্য যোগ্যতা যতবেশি তিনি তত ভালো দাওয়াতি কাজ করতে পারেন। কারণ সাধারণ ছাত্ররা সাধারণতই যোগ্য ও দক্ষদেরকে অনুসরণ করতে চায়।

আম দাওয়াত সময় সুযোগ অনুযায়ী ভালো বক্তাদেরকে দিয়ে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল, ওয়াজ মাহফিল, সিরাত সম্মেলন ও সিরাত মাহফিল আয়োজন করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নিকট ইসলামের সঠিক মেসেজ পৌঁছানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো দরকার। এর পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের শিক্ষক ছাত্রসহ শহর এলাকার শিক্ষিত মানুষের মাঝে দাওয়াত পৌঁছানোর লক্ষ্যে ইসলামের বিভিন্ন দিক যেমন তাওহিদ, আখেরাত, ইসলামী অর্থনীতি, সাংস্কৃতি, শিক্ষাব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর ভালোমানের দেশী-বিদেশী বক্তাদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভা, প্রশ্নোত্তরের আসর, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা সময়ের অপরিহার্য দাবিতে পরিণত হয়েছে।

লেখালেখি-সাহিত্য রচনা ইসলামের বিভিন্ন বিষয়, আন্দোলন-সংগঠনের বিভিন দিক ও বিভাগ, সমসাময়িক বিষয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ লেখা, পত্রপত্রিকায় কলাম লেখা, সাহিত্য রচনা দাওয়াতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যুগে যুগে ইমাম বুখারী, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম ইবনে তায়মিয়া, সাইয়্যদে বদিউজ্জমান নূরসী, সাইয়্যেদ অবুল আলা মওদূদী, সাইয়্যেদ কুতুব, আব্দুল করিম যায়দান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছেন এবং করছেন তা বর্ণনাতীত। তাই একজন দায়ী হিসেবে আমাদেরও উচিত লেখালেখি করা।

দাওয়াতি উপকরণ বিতরণ মুখে অনেক বেশি কথা বলার চেয়ে ছোট একটি দাওয়াতি উপকরণ অনেক সময় অনেক বেশি ফলদায়ক হয়। আমাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, দাওয়াতি বই, স্টিকার, কার্ড, বিশিষ্ট আলোচকদের আলোচনা ও ইসলামী গানের সিডি, ভিসিডি, মেমোরি কার্ড এবং ইউটিউব লিংক ব্যাপকভাবে বিতরণের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজকে প্রাণবন্ত ও ফলপ্রসূ করা যায়।

উপহার প্রদান সংবর্ধনা, ঈদ, বিবাহসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও দিবস উপলক্ষে সৌজন্য বা উপহার প্রদান দাওয়াতি কাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে উপহার হিসাবে অর্থসহ কোরআন, কোরআনের তাফসির, সিরাতগ্রন্থ ও আকর্ষণীয় ইসলামী সাহিত্য প্রদান করা অনেক বেশি কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী ফল নিয়ে আসে।

ছাত্রকল্যাণ ও সমাজকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে আমাদের দেশে সর্বাধিক প্রচলিত একটি প্রবাদ হচ্ছে দুর্দিন তথা বিপদের বন্ধু হচ্ছে আসল বন্ধু। তাই সাধারণ মানুষ বিশেষ করে ছাত্রদের বিপদাপদে আমরা যদি তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি, তাদের সুখে দুঃখের অংশীদার হতে পারি তাহলেই তারা আমাদেরকে তাদের কল্যাণকামী বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে। তা ছাড়া হাদিসে রাসূল সা. বলেছেন, সেবার বিনিময়ে আসে নেতৃত্ব। তাই আমাদের উচিত ছাত্রকল্যাণ ও সমাজ কল্যাণমূলক কাজকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া। আন্দোলনের কর্মী মানে সমাজকর্মী এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নের জন্য এখন থেকেই অভ্যস্ত হয়ে তৈরি হওয়া।

সাইড অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ বর্তমান সময়ে দাওয়াতি কাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো পার্শ্বসংগঠনের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ করা। যেখানে সরাসরি; দাওয়াতি কাজ করা কঠিন সেখানে দাওয়াতি সংগঠন, শিশুকল্যাণ, বিতর্ক, মানবাধিকার, ক্যারিয়ার ক্লাব, ক্রীড়া প্রভৃতি সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে খুব সহজেই দাওয়াতি কাজ করা যেতে পারে।

স্বতন্ত্র দাওয়াতি প্রতিষ্ঠান/প্লাটফর্ম তৈরি বর্তমান যুগ হচ্ছে Skill ও Specialization এর যুগ। সুতরাং দাওয়াতি কাজেও অনেক বেশি Skill ও Specialization আবশ্যক। বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দায়ী ও তাদের দাওয়াতি প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন আহমদ দিদাতের Islamic Propagation Center International (IPCI), ওস্তাদ নোমান আলী খানের Bayyinah Inistitute, ড. ইয়াসির আল কাদেরীর AL Maghrib inistitute, আবু আমিনা বেলাল ফিলিপসের Islamic Online University (IOU), ডা. জাকির নায়েকের Islamic Researc Center (IRC) সেই ধরনের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারছে বলে তারা বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা লাভ করছে। বাংলাদেশ দাওয়াহ সার্কেলও একসময় এই ধরনের একটি স্বতন্ত্র দাওয়াতি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট নয় বরং আমাদের কিছু ভাইকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই ধরনের দায়ী হওয়ার ও অনেকগুলো আন্তর্জাতিক মানের স্বতন্ত্র দাওয়াতি প্রতিষ্ঠান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

স্যোশাল মিডিয়ার ব্যবহার ◊ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে-(Facebook, Twitter,Youtube, Blog etc.) ◊ কোরআন-হাদিস পোস্ট ও শেয়ার করা। ◊ মনীষীদের উক্তি, গুরুত্বপুর্ণ ঘটনা পোস্ট ও শেয়ার করা। ◊ পত্র-পত্রিকা, ব্লগে লেখালেখি করা এবং তা শেয়ার করা। ◊ দাওয়াতি চিঠি, মেইল, এসএমএস, কার্ড, স্টিকার পাঠানো। ◊ সাংস্কৃতিক বিভাগের সিডি, ভিসিডি, ডকুমেন্টারি উপহার দেয়া। ◊ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পেজ, গ্রুপ, ওয়েবসাইট, ভিডিওর লিঙ্ক পাঠানো।

দাওয়াতের পদ্ধতি ◊ টার্গেট নির্ধারণ ◊ সম্পর্ক তৈরি। ◊ সুন্দর সম্বোধন। ◊ নিজে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার মূর্তপ্রতীক হওয়া। ◊ এক সাথে খাওয়া, একসাথে ঘুরা ◊ তার বাসায় যাওয়া, নিজের বাসায় নিয়ে আসা ◊ সুখে দুঃখের অংশীদার হওয়া। ◊ ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা না করে সৎগুণাবলি বিকাশে সহায়তা করা ◊ সৌজন্য বা উপহার প্রদান করা ◊ মনমগজে প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে ভুল ধারণা দূরীকরণে অভিজ্ঞ ডাক্তারের ভূমিকা পালন অর্থাৎ সমস্যা নির্ণয় করে তা দূরীকরণে উপযুক্ত পন্থা গ্রহণ করা ◊ হিকমত ও কৌশল অবলম্বন। ◊ দাওয়াতি কাজের সূচনায় আখেরাতের বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দেয়া। ◊ দাওয়াত গ্রহণে বিলম্ব দেখে ধৈর্যহারা না হয়ে যাওয়া, লেগে থাকা ◊ টার্গেটকৃত ব্যক্তির নাম ধরে গভীর রাতে আল্লাহর নিকট দোয়া করা।

পরিশেষে বলতে চাই দাওয়াতি কাজকে আমাদের জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র কোন নির্দিষ্ট বার, সময় বা এলাকাকে দাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট না করে দাওয়াতি কাজ করতে হবে সকলের নিকট, সবখানে ও সর্বাবস্থায়। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সবচেয়ে উপকৃত হওয়ার জায়গা হচ্ছে দাওয়াতি কাজ। কারণ আমরা যে ইবাদত বন্দেগি করি তা দিয়ে জান্নাতে যাওয়া খুব কঠিন হবে। দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে আমরা একজন লোককেও আমরা ইসলামী আন্দোলনে নিয়ে আসতে পারি তাহলে ঐ ব্যক্তি সারা জীবন যত ইবাদত-বন্দেগি করবে তার একটা অংশ আমার আপনার আমল নামায় লেখা হবে। তা ছাড়া এই আন্দোলনে এসে কউেই বসে থাকে না। বরং সে আরও অনেককে নিয়ে আসে। ফলে আমার আপনার আমলনামা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। আর এই ধারা যদি কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকে তাহলে আমরা আপনারা এই পৃথিবীতে না থাকলেও আমাদের আমলনামা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধ হতে থাকবে। তাই আমাদের উচিত সকল পরিস্থিতিতে বেশি বেশি দাওয়াতি কাজ করা।

লেখক: বিশিষ্ট কলামিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী

আপনার মন্তব্য লিখুন

Abdul Alim

- 10 months ago

মাশাআল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির