post

সমাজ বিনির্মাণে যুবদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম

০৩ জুন ২০২০

৬ষ্ঠ কিস্তি

আল্লাহ তায়ালা কুরআনের আরো যে কয়জন যুবক নবীর কথা বলেছেন তাদের মধ্যে একজন হযরত ইউনুস (আ)। আল্লাহ বলেন, স্মরণ করো যখন সে রাগান্বিত হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তাকে পাকড়াও করবো না শেষে সে অন্ধকারের মধ্য থেকে ডেকে উঠলো। “তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, পবিত্র তোমার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি। তখন আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং দুঃখ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।” (সূরা আম্বিয়া : ৮৪-৮৫) হযরত ইউনুস (আ) কোথাও সরাসরি তাঁর নাম নেয়া হয়েছে আবার কোথাও ‘যুন্নুন’ ও ‘সাহেবুল হুত’ বা মাছওয়ালা উপাধির মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন, “শেষ পর্যন্ত মাছ তাকে গিলে ফেললা এবং সে ছিল ধিকৃত। (সূরা সফফাত : ৭৯) এক. হযরত ইউনুস যে নৌকায় আরোহণ করেছিলেন তা তার ধারণা ক্ষমতার চাইতে বেশি বোঝাই (Overloaded) ছিল। দুই. নৌকায় লটারি অনুষ্ঠিত হয় এবং সম্ভবত এমন সময় হয় যখন সামুদ্রিক সফরে মাঝখানে মনে করা হয় যে, নৌকা তার ধারণক্ষমতার বেশি বোঝা বহন করার কারণে সকল যাত্রীর জীবন বিপদের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। কাজেই লটারিতে যার নাম উঠবে তাকেই পানিতে নিক্ষেপ করা হবে, এ উদ্দেশ্যে লটারি করা হয়। তিন. লটারিতে হযরত ইউনুসের নামই ওঠে। তাঁকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয় এবং একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলে। চার. হযরত ইউনুসের এ পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তিনি নিজে প্রভুর (অর্থাৎ মহান আল্লাহ) অনুমতি ছাড়াই তাঁর কর্মস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ‘আবাক’ শব্দটি এ অর্থই প্রকাশ করছে, ওপরের টীকায় এ ব্যাখ্যাই করা হয়েছে। ‘মুলিম’ শব্দটিও একথাই বলছে- মুলিম এমন অপরপাধীকে বলা হয় যে নিজের অপরাধের কারণে নিজেই নিন্দিত হবার হকদার হয়ে গেছে, তাকে নিন্দা করা হোক বা না হোক। কুরআনে বলা হয়েছে, “আর অবশ্যই ইউনুস রাসূলদের একজন ছিল।” (সূরা সফফাত : ১৩৯) এছাড়া হযরত দাউদ (আ) যখন জালিম শাসক জালুতকে হত্যা করেন, তখন তিনিও তরুণই ছিলেন।

যুদ্ধের ময়দানে তরুণদের ঐতিহাসিক ভূমিকা

যুদ্ধের ময়দানে তো তরুণদের ভূমিকা অনস্বীকার্যই। বদরের যুদ্ধে হযরত ‘মুআয ও মুআওয়িয’ নামক দু’জন তরুণ সাহাবীই ইসলামের ঘোর দুশমন আবু জাহিলকে হত্যা করেছিলেন। খায়বার বিজয়ী বীর সেনানী শেরে খোদা হযরত আলী রা. যিনি কামুস দুর্গের লৌহকপাট উপড়িয়ে ফেলে এক হাতে নিয়ে এটাকে যুদ্ধের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেন, তখন তিনিও ছিলেন তারুণ্যদীপ্ত যুবক। মুতার যুদ্ধে সেনাপতি ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ তিনিও ছিলেন তরুণ। স্পেন বিজয়ী সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ তিনিও ছিলেন তরুণ। এ ছাড়া অন্যান্য যুদ্ধের সেনাপতি হযরত আবু বকর রা., আলী রা., হযরত উমর রা., হযরত উসমান রা., হযরত জাফর রা., হযরত যায়েদ ইবনে হারিসা রা., হযরত তাইয়ার রা., হযরত যুবায়ের রা., হযরত তালহা রা., হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা., হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.সহ প্রায় সাহাবায়ে কেরামই ছিলেন তরুণ ও যুবক। বিজয়ের সেনানায়ক তরুণ সেনাপতি খালিদই মুসলিম জাহানের বিজয় পতাকা রোম-পারস্য পর্যন্ত ছুঁয়ে দিয়েছে। জিব্রাল্টার পাড়ি দিয়ে তরুণ সেনানায়ক তারেক স্পেনের বুকে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। ১৭ বছরের তরুণ মুহাম্মদ বিন কাসেম সিন্ধু পাড়ি দিয়ে ভারতবর্ষে ইসলামের বিজয়মশাল জ্বালিয়েছেন। তারুণ্যের চেতনায় উজ্জীবিত সতেরো সাওয়ারি নিয়ে লক্ষ্মণ সেনের বাংলায় মজলুম মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি। যুবক বাবর পেরেছিল বিশাল ভারতবর্ষে নতুন ইতিহাস রচনা করতে মাত্র সতেরো বছর বয়সে, সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহ.) তাঁর লেখনী, চিন্তা আর আন্দোলন সংগঠন গড়ে তুলে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেন। সাইয়েদ কুতুব, হাসান আল বান্নার মতো জগৎসেরা ব্যক্তিরা তরুণ-যুবক হিসেবেই তাদের চিন্তা, লেখনী, আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে যুগের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করেছেন অত্যন্ত দৃঢ়তা, বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে। ইসলাম যুবকদের অনেক মর্যাদা দিয়েছে। যৌবনের ইবাদতই আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। কাল কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ার নিচে সৎ চরিত্রশীল যুবকদের জন্যই আসন হবে। সুতরাং আজকের তরুণ-যুবকরা যেভাবে ইসলামকে নিজের জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছে তাতে একথা সত্য আগামীর পৃথিবী হবে ইসলামের পৃথিবী। আজকের পৃথিবীর অবস্থা যেন রাসূল সা.-এর ভবিষ্যদ্বাণীরই প্রতিচ্ছবি।

ইতিহাসের পাতায় তরুণদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ

ভারত বিজয়ী সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসেম যখন ভারতে ইসলাম প্রচার করেন তখন তিনিও ছিলেন তারুণ্যদীপ্ত যুবক। কুতাইবা বিন মুসলিম যিনি এশিয়ার মধ্যে ইসলামের বিস্তার ঘটান, তখন তিনিও ছিলেন স্বল্প বয়সী। ১৯২৯ সালে যখন ভারতের কুখ্যাত শাসক ‘রাজপাল’ ‘রঙ্গিলা রাসুল’ নামে একটি বই প্রকাশ করে এবং এ বইতে মহানবী সা.-এর চরিত্র হনন এবং রাসূল সা. সম্পর্কে কটূক্তি করে, তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আলিমউদ্দিন নামে এক ভাই শহিদ হন, তিনিও ছিলেন তরুণ। আমাদের বাংলার ইতিহাসে যে ক’টি সংগ্রাম হয়েছে, ১৯৫২ সালের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৮২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ১৯৯২-এর বাবরি মসজিদ রক্ষার আন্দোলন, ১৯৯৪-এর নাস্তিক-মুরতাদ বিরোধী আন্দোলন, ২০০১-এর ফাতওয়াবিরোধী আন্দোলন, ২০১১-এর কুরআনবিরোধী রায় বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন, সবিশেষ ২০১৩ নব্য নাস্তিক মুরতাদবিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে-ই তরুণরাই বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছেন। বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম নয়। অনুমান করা যায় একবিংশ শতাব্দীতে যুবক-তরুণদের স্রােত আরো বেড়ে যাবে; কিন্তু পাশ্চাত্য আজ তাদের সকল শক্তি নিয়োগ করেছে ইসলামের বিরুদ্ধে। তবুও হাসান আল বান্না, সাইয়্যেদ কুতুব কর্তৃক মিসরীয় মুসলিম ব্রাদারহুডের সংগঠন গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে নাড়া দিয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নকে সবাই মিলে স্বৈরাচারী, নির্লজ্জ এবং অগণতান্ত্রিক কায়দায় উৎখাত করতেও দ্বিধা করেনি। প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সর্বোচ্চ শক্তির প্রয়োগ মুসলিম তরুণীরা যেভাবে মোকাবেলা করছে তাতে মনে হয়, লাল রক্তের সিঁড়ি আবার বিজয় আনতে বেশি সময় নেবে না। সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদীর জামায়াতে ইসলামী নাড়া দিয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশসহ প্রাচ্য-পাশ্চাত্য এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনকে। ফলে দিশেহারা ভারতসহ পশ্চিমারা। ভারত ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে সেই নির্লজ্জ, জঘন্য, অবৈধ ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত মহড়া এখন প্রকাশ্য। এখানেও ইসলামপ্রিয় তরুণ-যুবকরা হাজী তিতুমীর ও বেরলভীর চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জীবন দিয়ে সেই ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়িয়েছে। ভারতের ভেতরে বিশ কোটি আর এখানের ১৫ কোটিকে হিসাবে নিয়েই এগোতে হবে। পশ্চিমা সূত্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমেরিকা এবং জার্মানিতে এখন সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বসবাস। ব্রিটেন, ফ্রান্সেও মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে, তবু এ সংখ্যাই অনেক বড় এবং দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। ঈড়ৎফড়নধ-এর অদ্ভুত সুন্দর সেই পুরনো মসজিদের কাছেই, আবার মুয়াজ্জিনের আজান শোনা যাচ্ছে। স্পেনের মাটি থেকে শেষ মুসলিমটিকে বিতাড়িত করার পাঁচ শ’ বছর পর এই ঘটনা বড়ই আশার আলো ছড়াচ্ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে যে ইসলামই একমাত্র বিস্তার লাভকারী ধর্ম। মসজিদগুলোতে আধুনিক শিক্ষিত যুবক-তরুণদের সংখ্যাই বেশি। যাদের সামনে ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ব্যাখ্যা, অবৈজ্ঞানিক আর অযৌক্তিক কোনোটাই যেন দাঁড় করানো কঠিন। নাস্তিকতা নয় আল কুরআনের বৈজ্ঞানিক আলোয় তরুণ প্রজন্মকে ইসলামমুখী করছে সবচেয়ে বেশি। যারা সত্যকে জানার জন্যই প্রচেষ্টারত, অন্য কোনো উদ্দেশ্য নয়।

এমনটি বলেছেন ড. আহমদ দিদাত, জন এল এসপোসিতো, ড. তারিক রমাদান, ইয়াহিয়া এমেরিক, মুরাদ হফম্যানের মতো পণ্ডিতগণ। কারণ বর্তমান পৃথিবীতে ১৫০ কোটি মানুষ দ্বিধাহীনচিত্তে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে আল্লাহর বাণীরূপে গ্রহণ করেছে। তা হচ্ছে- অ সরৎধপষব ড়ভ ঢ়ঁৎরঃু ড়ভ ংঃুষব, ড়ভ রিংফড়স ধহফ ড়ভ ঃৎঁঃয. আজ যারা পৃথিবীকে বদলাতে চান তারা কি নিজেকে বদলাতে পেরেছেন? অথচ আজকের বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে মুহাম্মদ সা.-এর জীবনাদর্শ প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে নাড়া দিচ্ছে। আজ পৃথিবী যতই মানবাধিকার, ন্যায়বিচার আর আইনের শাসনের কথা বলুক না কেন, ইসলামের ধারে কাছেও কেউ যেতে পারেনি এবং পারবে না। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যে কোথাও আর মিথ্যা আবরণ দিয়ে তা আড়াল করা যাচ্ছে না। তরুণ বয়সে বালক মুহাম্মদ সা. তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গড়ে তুলেছেন হিলফুল ফুযুল। হজরে আসওয়াদ স্থানান্তরের মাধ্যমে সমাজের বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর কলহের অবসান করেছেন মাত্র কয়েক মিনিটে। মুহাম্মদ সা.-এর ওপর মাত্র ৪০ বছর বয়সে আল্লাহর কালামের উপস্থিতি তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বময়। মাত্র অল্প সময়ের মধ্যে ৫০ লাখ বর্গকিলোমিটার গড়ে তোলেন ইসলামের ছায়াতলে। আজকের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরাও গবেষণা করে ঠিক করতে পারছেন না এটা আসলেই কিভাবে সম্ভব! সম্প্রতি প্যারিস থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ষবহড়াঁবষ ড়নংবৎাধঃরড়হ পত্রিকা মুসলমানদের দ্বীন ও দাওয়াতি কার্যক্রমের সম্পর্কে ফরাসি গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যমে জানা যায়- সংবিধান অনুগত মুসলমানদের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে এমন শিল্পাঞ্চলীয় এলাকার মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। রশিদ নামের এক ফরাসি যুবক জেলখানা থেকে বেরিয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন- আমি নেশায় চরমভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। চাহিদা মেটানোর জন্য চুরি ডাকাতি করতেও আমার কোনো অনুশোচনা হতো না। শেষ পর্যন্ত চুরি করার অভিযোগে আমাকে জেলখানায় যেতে হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যাওয়ার পর একজন ট্যাক্সিচালক আমাকে অত্যন্ত আদর-যত্ন করে মসজিদে নিয়ে যান। সেখানে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করার পর আমার মনোজগতে এক অভাবনীয় বিপ্লব শুরু হয়। এখন আমি শুধু নেশা থেকেই তাওবা করিনি; বরং ইসলাম গ্রহণ করে এবাদত-বন্দেগির মধ্যে মানসিক যে তৃপ্তি পেয়েছি সারা দুনিয়ার নেশা এবং ঐশ্বর্য আমাকে এতো মানসিক তৃপ্তি ও প্রশান্তি দিতে পারবে না; ইসলামিক সেন্টার, জাপান মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন জাপানের তাহজিব তমদ্দুনে, জীবনধারা ও শিক্ষা সংস্কৃতিতে মুসলমানদের মাধ্যমে এক নীরব বিপ্লব সাধিত হতে চলেছে। চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত গাংসু প্রদেশে প্রায় ১৩ শ’ বছর আগে ইসলামের আবির্ভাব হয়; তবে হুই জাতির লোকেরাই অধিক হারে ইসলাম গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি জেন্স-এর ডিফেন্স উইকলিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ইসলাম শুধু গ্রিসের জন্য নয় বরং গোটা ইউরোপের জন্য এক বিরাট আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য বিভাগের প্রধান থমাস ইরভিং পবিত্র কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ করেছেন। বুদ্ধিজীবী এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কয়েক হাজার অমুসলিম আমেরিকান এই কুরআন অনুবাদগ্রন্থ ক্রয় করেন। আমরা যদি বলি সুখবর সুখবর সুখবর তাহলে আপনারা সকলেই ভাববেন কিসে সুখবর? আমাদের দেশ কি বিজয়ী হয়েছে? আমাদেরকে কোন খেলায় বিজয়ী হতে? আমরা অনেক কিছু পেয়েছি। অর্থনৈতিক উন্নতি, শিল্পের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের সে হারে কি আমাদের প্রজন্মের উন্নতি হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের যুবসমাজের চরিত্রের উন্নতি হচ্ছে আসল উন্নতি। আমাদের উন্নতি হচ্ছে আমাদের যুবসমাজের জ্ঞান-গবেষণা চিন্তা, ঐতিহ্যের। মানুষ গড়ার আসল কারিগর আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ। বর্তমানে প্রশিক্ষণরত মহিলাদের ক্রোড়ে লালিত পালিত হয়ে যে ভবিষ্যৎ বংশধর গড়ে উঠবে তাদের মধ্যে এই প্রভাব অবশিষ্ট থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট কম। এই প্রভাব দেখা গেছে সেই সব লোকদের মধ্যে যারা নিজেদের ঘরে আপন মায়েদের নামাজ ও কুরআন পড়তে দেখেছে এবং তাদের থেকে আল্লাহ ও রাসূলের নাম শুনেছে। কিন্তু বর্তমানে যেসব নতুন মা তৈরি হচ্ছে তাদের মুখে ছায়াছবির অভিনেতাদের নাম, নবাগত ছায়াছবির পর্যালোচনা ও খেলাধুলার উল্লেখ শুনতে পাওয়া যায়। তাদের মুখে আল্লাহ ও রাসূলের নাম কদাচিৎই উচ্চারিত হয়। তাদের ক্রোড়ে লালিত পালিত হয়ে ওঠা যুবকের নিকট আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গ করা আশা করা যায় কি? আমাদের যুবকদের শাহাদতের আগ্রহ আদৌ পাওয়া যাবে? যার উপস্থিতির ফলে তারা এ গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগ স্বীকার করতে পেরেছিলেন? বাস্তবিক পক্ষে, আমরা মুসলিম দেশসমূহ ও এর জীবনপদ্ধতির জন্য উৎসর্গীকৃত যুবক তৈরি করতে চাই তাহলে আমাদেরকে সর্বপ্রথম সামরিক প্রশিক্ষণ দানের সাথে সাথে সর্বোৎকৃষ্ট ইসলামী শিক্ষা-প্রশিক্ষণ দানেরও চিন্তা করতে হবে। যার ফলে তাদের মন-মগজে ঈমান দৃঢ়মূল হয়ে বসবে। তাদেরকে এহেন আকিদা, বিশ^াস ও নৈতিকতার প্রশিক্ষণ দিতে হবে যেন তারা ভবিষ্যতে এর চাইতেও অনেক বড় আত্মত্যাগের উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠে। আমাদের তুলনায় অনেক শতগুণ বড় ও শক্তিশালী শত্রুর মোকাবিলায় কেবলমাত্র, এই জিনিসই আমাদেরকে জীবিত রাখতে পারে। বর্তমান সময়ে যুবসমাজের দুরবস্থা ও তাদের নৈতিক পতন এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে চলতে থাকলে, মুসলিম সমাজের অবস্থা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনাতীত। তাই যুবসমাজকে তাদের অপ-মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা এবং নিশ্চিত ধ্বংস থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের যুবক-যুবতীদের তারুণ্যের চেতনায় বিশ্বাসী অগ্রযাত্রায় যদি আমাদের আদর্শের প্রলেপ দিয়ে ভরা না থাকে তাহলে থেকে শুভসংবাদ আর কী হতে পারে? সে আদর্শ যুবক কোন কারখানায় তৈরি হবে? সেই কারখানা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসা থেকে আজকে সেই প্রোডাক্ট পাচ্ছি? না আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জাতিকে কাক্সিক্ষত মানুষ উপহার দিতে পারছে না। ফলে জাতিকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হচ্ছি। আমরা হারিয়ে যাচ্ছি ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। যদি আমাদের প্রজন্মকে একটি আদর্শ চিন্তা-চেতনা বিশ্বাসের আলোকে আমরা যদি তৈরি করতে ব্যর্থ হই, তাহলে বিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তি আর গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে আমাদের তরুণ-তরুণীরা অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। আমরা হয়তো সোনার হরিণ পেলাম, বলে চিৎকার করতে পারি কিন্তু আসল জিনিসের সমাধান আমরা পাবো কি? দেশে নাস্তিক-মুরতাদ আর চেতনার নামধারীদের জয়গান চলতে থাকবে। কিন্তু লালিত স্বপ্ন আদৌ বাস্তবায়ন হবে? আমাদের রাষ্ট্র এবং সমাজের এই চেতনাকে পুনঃস্থাপন করতে চাই সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য নয়। আমরা চাই আমাদের সমাজের নেতারা কেবলমাত্র মানবিক প্রেম ও দায়িত্ববোধ থেকেই এই করুণ সমাজের প্রবীণদের মধ্যেই চেতনা জাগিয়ে তুলে যতটা না ফল ও লক্ষ্য অর্জন করা যাবে তার চেয়ে বেশি ফলাফল অর্জন করা সম্ভব যুবসমাজ যখন এমন একটা চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। সবার আগে চাই ইতিহাসকে সমাজ বদলাতে আগ্রহী যুবসমাজের নৈতিক চরিত্র উন্নয়ন এজন্য সবার আগে প্রয়োজন বোধ বিশ্বাসের জগৎকে পরিশুদ্ধ করা আর দ্বিতীয়টি হলো তথা বস্তুগত দিক সম্পদ অর্জন এবং এর মালিকানা এবং সেইসাথে ভোগ-উপভোগ এর বিষয়টি জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এগুলোর সাথে এসে যায় জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রযুক্তি ব্যবসা বাণিজ্য অর্থনীতি সমানুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় উৎকর্ষ অর্জন করাটা যতটা একটা চ্যালেঞ্জ বটে তা অর্জন ছাড়া মুক্তির কোনো পথ খোলা নেই আমাদের সামনে।

লেখক : সহকারী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির