post

সমাজকল্যাণে রাসূল সা. কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচি

মু. রাজিফুল হাসান বাপ্পী

১৮ অক্টোবর ২০২২

মুহাম্মদ সা. পৃথিবীবাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন সমগ্র মানবজাতির মুক্তির দূত হিসেবে। মানুষের জীবনের সকল জাগতিক সমস্যার সমাধান করে আত্মিক প্রশান্তি অর্জনের শিক্ষক ছিলেন তিনি। আল্লাহর পক্ষ থেকে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে তার ওপর নাজিলকৃত আল কুরআনের প্রতিটি শিক্ষা বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন সদা তৎপর। কুরআনিক আদর্শের আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে পৃথিবীবাসীর নিকট উপস্থাপন করেছেন নিজেকে। যার স্বীকৃতি দিতে গিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।”১ মানুষের জীবনের সকল দিক সামঞ্জস্য করে এক কল্যাণকর সমাজব্যবস্থার রূপরেখা এঁকেছিলেন তিনি এবং করে গিয়েছেন বাস্তবায়নও। আর এই বৃহৎ কাজটি সম্পাদন করতে গিয়ে গ্রহণ করেছিলেন বহুবিধ কর্মসূচি। আর এসকল কর্মসূচির মাঝে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম অন্যতম। সমাজকল্যাণ তথা মানুষের কল্যাণের মাধ্যমে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজকে ত্বরান্বিত করেছিলেন মুহাম্মদ সা.। কারণ মানুষের মন জয় করার অন্যতম মাধ্যম হলো তার কল্যাণ সাধন। আর রাসূলুল্লাহ সা. এই কাজটি করেছেন খুবই সুচারুভাবে। আল্লাহর রাসূল সা.-এর সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচিগুলোকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১. বৃহৎ পরিসরে কল্যাণ সাধন।

২. ব্যক্তিগত পর্যায়ে কল্যাণ সাধন।

৩. নসিহার মাধ্যমে সমাজকল্যাণে উদ্বুদ্ধকরণ।


১. বৃহৎ পরিসরে কল্যাণ সাধন

আল্লাহর রাসূল সা.-এর সামগ্রিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অসংখ্য সমাজকল্যাণমূলক কাজের মাঝে কিছু কিছু ছিল অনেক বড়ো পদক্ষেপ। যে সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে অসংখ্য মানুষ এবং এর কল্যাণের ধারা প্রবাহিত হয়েছে লম্বা সময় জুড়ে। এসকল পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ-

হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠিত : হিলফুল ফুজুল তথা শান্তিসংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তৎকালীন মক্কার সমাজ হতে জুলুম-নিপীড়ন আর শোষণ-বঞ্চনা দূরীভূত করা হয়েছিল। সেই হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠায় রাসূল সা. সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিলেন। রাসূলুল্লাহর সা. বয়স যখন ১৫ বছর। জাজিরাতুল আরব সমাজে তখন গর্ব-অহঙ্কার আর দাম্ভিকতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা চলছে। পেশিশক্তির জোরে অহঙ্কারবশত দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একই চিত্র ছিল মক্কার নেতৃস্থানীয় কুরাইশ বংশের গোত্রসমূহের মাঝেও। অন্যায়ভাবে সংঘটিত হওয়া কোনো জুলুম নিপীড়ন প্রতিরোধের জন্য ছিল না কোনো সুশাসনের ব্যবস্থা। এমনি এক প্রেক্ষাপটে কুরাইশ বংশের অন্তর্ভুক্ত গোত্রসমূহের সমন্বয়ে গঠিত হয় হিলফুল ফুজুল বা শান্তিসংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল মক্কায় সংঘটিত যে কোনো অন্যায় অত্যাচার আর জুলুমের প্রতিরোধ করে মজলুমের প্রাপ্ত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন কিশোর মুহাম্মদ। হিলফুল ফুজুলের অন্তর্ভুক্ত গোত্রসমূহের নেতারা এই মর্মে শপথ নিয়েছিলেন যে, ‘মক্কা সংঘটিত যে কোন প্রকার জুলুম অত্যাচার প্রতিরোধ করবেন, সে অত্যাচারিত (ব্যক্তি) হোক মক্কার অধিবাসী অথবা বাইরের কেউ, সবাই তার সাহায্যার্থে দাঁড়াবেন এবং তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’২

এই অঙ্গীকারের মাধ্যমে মক্কায় অনেকাংশেই অত্যাচার জুলুম নিপীড়ন কমে আসছিল। নবুয়তের এক সময় হিলফুল ফুজুলের কথা বলতে গিয়ে রাসূলে আকরাম সা. বলেন, ‘আমি আবদুল্লাহ ইবনে জুদআনের ঘরে এমন এক চুক্তিতে শরিক ছিলাম, যার বিনিময় লাল উটও আমার পছন্দ নয়। ইসলামী যুগে সে চুক্তির জন্য যদি আমাকে ডাকা হতো, তবে অবশ্যই আমি সে ডাকে সাড়া দিতাম।’৩ উল্লেখ্য হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠার বৈঠকটি আব্দুল্লাহ ইবনে জুদআনের ঘরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা : নবুয়তের ৫ বছর পূর্বের ঘটনা। রাসূল সা.-এর বয়স তখন ৩৫ বছর। নতুন করে কাবাঘর সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে কুরাইশরা। তবে এবারের সংস্থাটি একটু ভিন্ন রকম। কাবার দেয়ালে ফাটল ধরেছে। তাছাড়া সে বছরই প্লাবন হওয়ায় যে কোন সময় ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কাবাঘর। তাই এবার পুরো ঘরটিকে ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় কুরাইশরা। কাবাঘর নির্মাণের কাজটি ছিল কুরাইশদের নিকট অনেক সম্মানের। তাই সকল গোত্রগুলোই এ কাজে অধিক ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। সম্মানিত এ কাজ নিয়ে নিজেদের মাঝে যেন কোনো রকম সমস্যার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য নির্মাণকাজে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা অংশ নির্ধারণ করা হয়। সে আলোকেই এগিয়ে চলেছে কাবাঘর নির্মাণের কাজ। তবে কাবার ইমারত যখন হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত উঠলো তখনই বাঁধলো বিপত্তি। আর এই বিপদ বিষয় হলো, হাজরে আসওয়াদ নামক পবিত্র পাথর খানা যথাস্থানে স্থাপনের মর্যাদা কে লাভ করবে? এ বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রত্যেকেই চাই এই মর্যাদা লাভ করতে। এ নিয়ে নিজেদের মাঝে শুরু হয় ঝগড়া বিবাদ। আর তা চললো চার-পাঁচ দিন পর্যন্ত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে উপনীত হলো যে, হেরেম প্রাঙ্গণই যেন হয়ে উঠবে হত্যাযজ্ঞের কেন্দ্রস্থল। এ অবস্থায় আবু উমাইয়া মাখযুমী একটি প্রস্তাব রাখলেন, আর তা হল: ‘আগামীকাল প্রত্যুষে মসজিদে হারামের দরজা দিয়ে যে ব্যক্তি প্রথম প্রবেশ করবেন, তার ফয়সালা সবাই মেনে নেবে।’৪ আবু উমাইয়ার প্রস্তাব কুরাইশদের সকল গোত্র সাদরে গ্রহণ করে নেয়। পরদিন প্রত্যুষে দেখা গেল মুহাম্মদ সা. সর্বপ্রথম মসজিদে হারামে প্রবেশ করেন। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত লোকজন সমস্বরে বলে উঠল: ‘এই যে আল-আমিন। আমরা তার সিদ্ধান্তকে মেনে নেব। ইনি মুহাম্মদ।’৫

অতঃপর লোকজন সমবেত হয়ে রাসূল সা.কে সমস্যার বিষয়ে অবহিত করেন। এবার রাসূলের সা. সেই ফয়সালা দেওয়ার পালা, যে ফয়সালার মাধ্যমে বন্ধ হবে ঝগরা-বিবাদ। আর সুসম্পন্ন হবে হাজরে আসওয়াদের স্থাপনের কাজটিও। রাসূল সা. উপস্থিত লোকদের একটি চাদর নিয়ে আসতে বলেন। চাদর নিয়ে আসা হলে তিনি তা মাটিতে বিছান এবং নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদকে চাদরের মাঝখানে রাখেন। অতঃপর বিবদমান গোত্রসমূহের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন তারা যেন সেই চাদরের কিনারায় ধরে পাথরটি যথাস্থানে নিয়ে যান। রাসূলের সা. কথা মতো গোত্রপতিরা তাই করলেন। অতঃপর রাসূল সা. নিজ হাতে পাথরটি নিলেন এবং যথাস্থানে স্থাপন করেন। 

রাসূলের সা. এই ফয়সালা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হলো এবং প্রত্যেকে হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের মর্যাদার অংশীদার হলো। রাসূলের সা. এই বুদ্ধিদীপ্ত প্রজ্ঞাময় সুরাহার মাধ্যমে গোত্রসমূহের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা হয় আর সন্তুষ্টচিত্তে পবিত্র পাথর স্থাপনের মর্যাদা উপভোগ করল সকলে মিলে। এভাবেই রাসূল সা. সমাজ হতে ঝগড়া-বিবাদ দূরীভূত করে কল্যাণ বয়ে আনতেন।

মদিনা সনদ : নবুয়তের ১৪তম বছর জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন আল্লাহ রাসূল সা.। যেখানে গিয়ে তিনি সর্বপ্রথম যে বৃহত্তম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা হলো- মদিনা সনদ। মুহাজির, আনসার ও ইহুদিসহ মদিনার সকল জনগণ অন্তর্ভুক্ত ছিল এই সনদে। যে সনদের মাধ্যমে মদিনায় একটি সর্বজনীন শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আল্লাহর রাসূল সা.। এই সনদের ৪৭টি ধারার মাঝে অনেকগুলো ধারা ছিল সমাজকল্যাণের অন্তর্ভুক্ত। 

প্রথমত : এই সনদের ধারা-২ এ বলা হয়েছে: “সমগ্র মানবজাতির মধ্যে তারা একটি স্বতস্ত্র উম্মাহ।” এই ধারার অনেকগুলো কল্যাণকর দিকের মাঝে একটি হলো মদিনার আনসারদের মধ্যকার আউস ও খাজরায গোত্রের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত : এই সনদের ধারায় ১২(ক)-এ বলা হয়েছে: “মুমিনগণ তাদের মধ্যকার ঋণগ্রস্ত ও অধিক সন্তানধারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ ও মুক্তিপণদানে সঙ্গতভাবে আর্থিক সাহায্য করবে।” 

এ ধারায় দেখা যায় ঋণগ্রস্ত ও অধিক সন্তানের কারণে আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিকে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ দুর্বল মোমিনকে আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজকল্যাণের দিকটি ফুটে উঠেছে। 

তৃতীয়ত : এই সনদের ধারা-১৩ এ বলা হয়েছে: “খোদাভীরু মুমিনগণ তাদের মধ্যকার বিদ্রোহী ঘোরতর নির্যাতক, অপরাধী, মুসলিম সমাজের স্বার্থের ক্ষতিকারক ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারকের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। মুমিনরা অপরাধীর বিরুদ্ধে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেবে, এমনকি সে তাদের কারো সন্তান হলেও।” এ ধারাটি মূলত সমাজ হতে অপরাধ নির্মূলের একটি কর্মসূচি, যার মাধ্যমে বিপর্যয়কারীদের শাস্তি কার্যকর এবং অপরাধ দমন নিশ্চিত হয়েছিল।

চতুর্থত : এই সনদের ধারা-২১(খ) এ বলা হয়েছে: “কেউ যদি কোনো মুমিনকে হত্যা করে এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে এর পরিবর্তে তার কাছ থেকে কেসাস আদায় করা হবে। অর্থাৎ হত্যার অপরাধে অপরাধী হওয়ায় তাকেও হত্যা করা হবে। তবে হত্যাকারী যদি নিহত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে কেসাস লওয়া হবে না। তবে সর্বাবস্থায় মুমিনরা সকলে ওই মুসলিম হত্যার বিরুদ্ধে থাকবে এবং তার (হত্যাকারীর) পক্ষপাতিত্ব করা কোনো মুমিনের জন্য হালাল হবে না।” এখানে কেসাসের নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মূলত সমাজে অন্যায়ভাবে সংঘটিত সকল হত্যাযজ্ঞ বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা কল্যাণকর শান্তিপূর্ণ সমাজগঠনের একটি বড়ো কার্যকর পদক্ষেপ।

পঞ্চমত : এই সনদের ধারা-২৩ এ বলা হয়েছে: “আর তোমাদের (মুমিনদের) মধ্যে যেকোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসূল সা.-এর নির্দেশ অনুযায়ী মীমাংসা করবে।”

এ ধারায় জাজিরাতুল আরবের বিভিন্ন বংশ গোত্র ও জাতির মানুষ যারা কালেমার স্বীকৃতির মাধ্যমে মুসলিম হিসেবে পরিচয় ধারণ করেছিল, তাদেরকে এক আদর্শের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ করা হয়েছিল। যারা সকল কিছুর মীমাংসাকারী হিসেবে আল্লাহ-রাসূলকে মেনে নিবে। আর আল্লাহর রাসূলের সা. সমাধানের মাঝেই ছিল মানুষের জীবনের প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।

ষষ্ঠত : এই সনদের ধারা- ৪০(ক), ৪০(খ) ও ৪১ এ যথাক্রমে বলা হয়েছে: “এই চুক্তির অন্তর্ভুক্তদের জন্য ইয়াসরিবের (মদিনার) অভ্যন্তর ভাগ সম্পূর্ণ নিরাপদ।” “প্রতিবেশী যদি অপরাধী না হয় এবং ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত না থেকে থাকে তা হলে তার জান, মাল ও ইজ্জত নিজের জান, মাল ও ইজ্জতের মতই পূর্ণ নিরাপত্তার অধিকারী।” “কারো বাড়ির ভেতরে বাড়ির মালিকের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না।”

উপরোক্ত ৩টি ধারার মাধ্যমে মদিনার মানুষদের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি নিশ্চিত করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটি নিরাপদ সমাজ। 

সপ্তমত : এই সনদের ধারা-৪৪ এ বলা হয়েছে: “কোনো ব্যক্তি তার মিত্রের কারণে অপরাধী বিবেচিত হবে না। আর অত্যাচারিতই হবে সাহায্য পাওয়ার অধিকারী।” এই ধারাটির মাধ্যমে একজনের অপরাধের জন্য অন্যজনকে শাস্তি ভোগ করা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল এবং মজলুম ব্যক্তির সাহায্য পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

অষ্টমত : এই সনদের ধারা-৪৪ এ বলা হয়েছে: “আর এই চুক্তি কোনো অত্যাচারী বা অপরাধীর জন্য রক্ষকবচ নয়।” এই ধারাটি ছিল সকল অত্যাচারী ও অপরাধীদের জন্য একটি হুমকিস্বরূপ। এর মাধ্যমে এটি বোঝানো হয়েছিল অত্যাচারী ও অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। যার মাধ্যমে অত্যাচার ও অন্যায় বন্ধের ব্যবস্থা করেছিলেন মুহাম্মদ সা.। সামগ্রিকভাবে দেখা যায় মদিনা সনদের উপরোক্ত ধারাসমূহের মাঝে মদিনার সমাজ হতে সকল প্রকার অনৈক্য, অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুম দূরীভূত করে একটি ঐক্যবদ্ধ নিরাপদ সমাজব্যবস্থা কায়েমের উদ্যোগ ফুটে উঠেছে। এভাবেই মদিনা সনদটি সমাজকল্যাণের একটি কষ্টিপাথরের ন্যায় ভূমিকা রেখেছিল।৬

নিঃস্ব অভাবী ও মিসকিনদের ভরণপোষণ এবং আবাসনের ব্যবস্থা : রাসূল সা. নিঃস্ব ও অভাবী মানুষের ভরণপোষণ ও আবাসনের ব্যাপারে ছিলেন সদাতৎপর। মক্কা থেকে মুহাজিরগণ যখন হিজরত করে মদিনায় চলে আসেন। তখন তাদের অনেকেরই দুবেলা খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা ছিল না। থাকার জন্য ছিল না কোনো ঘর। এ অবস্থায় রাসূল সা.-এর নির্দেশে আনসারগণ মুহাজিরদের ভরণপোষণ ও আবাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন। আবার পরিবার-পরিজনহীন অক্ষম মুসলিম সাহাবিদের থাকার জন্য মসজিদে নববীর পাশে একটি ছাউনি নির্মাণ করেন আল্লাহ রাসূল সা.। এ ছাউনির নাম ছিল সুফফা। যেখানে বিভিন্ন সময় আশ্রয়হীন লোকজন আশ্রয় নিত, মুসাফিররা নিত বিশ্রাম। মাঝে মাঝে সুফফায় আশ্রয়গ্রহণকারীদের সংখ্যা চার শতাধিক হয়ে যেত। আর এসকল লোকদের অন্নবস্ত্রের বন্দোবস্ততে সরাসরি তত্ত্বাবধান করতেন আল্লাহ রাসূল সা.। কখনো রাসূলের সা. নিকট আসা সাহায্য হতে আবার কখনো বায়তুলমাল হতে তাদের প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করতেন তিনি।৭ 

এতিম, বিধবা ও অক্ষমদের প্রতিপালন : রাসূল সা.-এর সমাজকল্যাণের আরো একটি দিক ছিল এতিম, বিধবা ও অক্ষমদের প্রতিপালন। বাইতুলমালের অর্থ দিয়ে এই তিন শ্রেণীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন তিনি। এ বিষয়ে রাসূল সা. বলেন, “যদি কেউ সম্পত্তি রেখে মারা যায় তা তার উত্তরাধিকারদের। আর যদি কেউ সম্পদহীন এতিম ও বিধবা রেখে মারা যায় তার ব্যবস্থাকারী আমি।”৮

রাসূল সা. ব্যক্তিগতভাবে নিজ পরিবারেও এতিমের লালন-পালনে করেন। শুধু তাই নয় এতিমের সম্পদ রক্ষায় তিনি ছিলেন কঠোর অবস্থানে।

দারিদ্র্য বিমোচন : দরিদ্রতা একটি অভিশাপ। রাসূল সা. এই দরিদ্রতার কুফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, “দারিদ্র্য মানুষকে কুফরির কাছাকাছি নিয়ে যায়।”৯ দরিদ্রতার কবল হতে মানুষকে বাঁচাতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন মুহাম্মদ সা.-

প্রথমত : ধনীদের কাছ থেকে যাকাতের অর্থ সংগ্রহ করে গরিবদের মাঝে বণ্টনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন তিনি। 

দ্বিতীয়ত : সুদি কারবার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছিলেন আর চালু করেছিলেন কর্জে হাসানা। কর্জে হাসানার অর্থ জোগান দিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেন তিনি।

তৃতীয়ত : অসহায়, দরিদ্র ও মুসাফিরদের জন্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন আল্লাহ রাসূল সা.।

চতুর্থত : এমন একটি অর্থব্যবস্থা প্রণয়ন করেন যেখানে মানুষের প্রয়োজন পূরণে সুষম বণ্টন সাধিত হয়। 

এই ব্যবস্থাপনায় ৬টি উৎস হতে রাষ্ট্রীয়ভাবে আয় করে তা অসহায় দরিদ্রদের মাঝে বণ্টনের ব্যবস্থা করেন আল্লাহ রাসূল সা.। এসব উৎসগুলো হলো: ১. গনিমাহ বা যুদ্ধলব্ধ সম্পত্তি ২. জাকাত ৩. খারাজ বা অমুসলিম কৃষকদের ভূমি কর ৪. জিজিয়া বা অমুসলিমদের নিরাপত্তা কর ৫. আল-ফাই বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ৬. সাদাকা বা স্বেচ্ছাধীন দান।

আর এসকল উদ্যোগের মাধ্যমেই দারিদ্র্য বিমোচন করতে সক্ষম হয়েছিলেন আল্লাহ রাসূল সা.। অব্যাহতভাবে এ ধারা চলমান রাখার ফলে এমন একটি কল্যাণকর সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যখন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা. খিলাফতের দায়িত্বে তখন জাকাত নেওয়ার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।১০

কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা : সমাজকল্যাণে রাসূল সা.-এর আরও একটি পদক্ষেপ ছিল বেকার ও কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। মানুষকে কাজ করে উপার্জনের বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, “নিজের হাতে কাজ করে খাওয়ার চেয়ে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ (আ) নিজ হাতে কাজ করে খেতেন।”১১ রাসূল সা. নিজেও ব্যবসা করতেন এবং ভিক্ষাবৃত্তি তিনি কখনোই পছন্দ করেন না। একবার এক সাহাবি রাসূল সা.-এর নিকট এসে সাহায্য চাইলে তিনি তাকে বলেন, সে যেন কুড়াল দিয়ে বন থেকে কাঠ কাটে এবং সেই কাঠ বাজারে বিক্রয় করে উপার্জনের চেষ্টা করে। রাসূল সা. আরো বলেন, “তুমি ভিক্ষা করে বেড়াও আর কিয়ামতের দিন অপমানিত হও তার চেয়ে এটা (কর্ম করে খাওয়া) উত্তম।১২

মানুষের জীবনমান উন্নয়ন : রাসূল সা.-এর সমাজকল্যাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল মানুষের জীবনমান উন্নত করা। মুসলমানদের বিভিন্ন যুদ্ধে যে গনিমত অর্জন করত তার একটি অংশ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য রেখে অবশিষ্ট অংশ সময়ক্ষেপণ না করে সকল সাহাবিদের মাঝে বণ্টন করে দিতেন আল্লাহ রাসূল সা.। এছাড়াও যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে অর্থকরী অর্জনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সাহাবিদের। যুদ্ধে অর্জিত সকল সম্পদ রাষ্ট্রের জন্য বরাদ্দ না রেখে এর বেশির ভাগ অংশই যুদ্ধাদের মাঝে বণ্টনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল তাদেরকে জিহাদের কাজে উদ্বুদ্ধকরণ পাশাপাশি তাদের জীবন মান উন্নতকরণ। খাইবার যুদ্ধে মুসলমানরা এত পরিমাণ গনিমত অর্জন করেছিল যার ফলে দীর্ঘদিন মদিনার আনসারদের আশ্রয়ে থাকা মুহাজিরদের আর তাদের সহযোগিতা নেওয়ার প্রয়োজন হতো না।১৩ তাছাড়াও গণমানুষের জীবনমান উন্নতকরণে যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা; খাবার পানির ব্যবস্থায় কূপ খনন; সহজে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাট সংস্কার এবং সকল নাগরিক যেন নিজ নিজ ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন মুহাম্মদ সা.।

ঋণ পরিশোধে সহায়তা : রাসূলের সা. সমাজকল্যাণে আরো একটি দিক ছিল মানুষকে ঋণমুক্ত করা। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি রাসূলের সা. নিকট এসেছেন আর তিনি তাকে সাহায্য করেননি এমনটি কখনো হয়নি। বরং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে তিনি শুধু সাহায্য করেননি বরং তিনি এর দায়িত্বও নিতেন। এ বিষয়ে রাসূল সা. বলেন, “যে ব্যক্তি মাল রেখে গেল, তা তার ওয়ারিশদের। আর যে দায়-দায়িত্বের বোঝা রেখে গেল, তা আমার জিম্মায়।”১৪ অর্থাৎ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে ঋণ মুক্ত করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার দায়িত্ব নিতেন আল্লাহ রাসূল সা.। কেউ রাসূলের সা. নিকট কিছু পেলে তিনি এর চেয়ে অধিক পরিমাণে তা পরিশোধ করতেন। এ বিষয়ে সাহাবি রা. বলেন, “তিনি (রাসূল) আমার ঋণ আদায় করলেন এবং পাওনার চেয়ে বেশি দিলেন।”১৫ 

বন্দিমুক্তি ও গোলাম আজাদ করা : বন্দিমুক্তি ও গোলাম আজাদ করা ছিল রাসূল সা.-এর সমাজকল্যাণের একটি বড়ো দিক। তিনি এ কাজ ব্যক্তিগতভাবে করেছেন এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও উদ্যোগ নিয়েছেন। বন্দিমুক্তির বিষয়ে রাসূল সা. বলেন, “ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও অসুস্থকে দেখতে যাও আর বন্দী মুক্তি করো।”১৬ আবার মুসলমানদের হাতে বন্দী হওয়া ব্যক্তিদের সাথে আল্লাহ রাসূলের সা. আচরণ ছিল অত্যন্ত কোমল এবং তাদের মুক্তির বিষয়ে তিনি সব সময় সহজ করতেন। গোলাম আজাদ করা ছিল আল্লাহর রাসূলের সা. আন্দোলনের বড়ো একটি কর্মসূচি। মালিকদের হাতে নির্যাতিত নিপীড়িত অসংখ্য গোলাম আজাদের বিষয়ে উদ্যোগে নিয়েছিলেন তিনি। কখনো ব্যক্তিগতভাবে কখনো সাহাবিদের সহযোগিতার মাধ্যমে আবার কখনো রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ প্রদানের মাধ্যমে গোলাম মুক্তি করেন আল্লাহ রাসূল সা.। সাহাবি হযরত সালমান ফারসি আল রুমি রা.সহ অসংখ্য গোলামের মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। গোলাম মুক্তির বিষয়ে রাসূল সা. বলেন, “কেউ কোনো মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করলে আল্লাহ্ সেই ক্রীতদাসের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার এক একটি অঙ্গ (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্ত করবেন।”১৭ সাঈদ ইবনু মারজানা রা. বলেন, এ হাদিসটি আমি আলী ইবনু হুসাইনের খিদমতে পেশ করলাম। তখন ‘আলী ইবনু হুসাইন রা. তাঁর এক ক্রীতদাসের কাছে উঠে গেলেন যার বিনিময়ে ‘আবদুল্লাহ ইবনু জাফর রা. তাকে দশ হাজার দিরহাম কিংবা এক হাজার দিনার দিতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন। 

রোগীর সেবা ও চিকিৎসা : রোগীর সেবা ও চিকিৎসা করা একটি বড়ো সমাজকল্যাণমূলক কাজ। এর কাজের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে রাসূল সা. বলেন, একজন মুমিনের ওপর অপর মুমিনের ছয়টি অধিকারের একটি হল, যখন কোন মুমিন রোগাক্রান্ত হয় তখন তার সেবা-শুশ্রƒষা করা।১৮ আল্লাহর রাসূল নিজ হাতে রোগীর সেবা করতেন এবং রোগীর প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে দিতেন। রোগীর চিকিৎসার বিষয়েও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন আল্লাহর রাসূল সা.। যখনই কোনো রোগাক্রান্ত মানুষ তার নিকট এসে হাজির হতেন তখন তিনি তাদের চিকিৎসা দিতেন। এ বিষয়ে সাহাবি আবু সাঈদ রা. বর্ণনা করেন: “এক ব্যক্তি নবী সা.-এর নিকট এসে বলল: আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নবী সা. বললেন: তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে তিনি বললেন, তাকে মধু পান করাও। অতঃপর তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেন তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি এসে বলল, আমি অনুরূপই করেছি। তখন নবী সা. বললেন, আল্লাহ্ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে। তাকে মধু পান করাও। অতঃপর সে তাকে পান করাল। এবার সে রোগমুক্ত হল।”১৯ এছাড়াও অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতেন আল্লাহ রাসূল সা.। এ বিষয়ে সাহাবি আনাস রা. বর্ণনা করেন, “কতক লোক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের আশ্রয় দিন এবং আমাদের খাদ্য দিন। অতঃপর যখন তারা সুস্থ হলো, তখন তারা বলল, মদিনার বায়ু ও আবহাওয়া অনুকূল নয়। তখন তিনি তাদেরকে তাঁর কতগুলো উট নিয়ে ‘হারবা’ নামক জায়গায় থাকতে দিলেন। এরপর তিনি বললেন, তোমারা এগুলোর দুধ পান কর।”২০

বৃক্ষনিধন রোধ ও বৃক্ষরোপণ : বৃক্ষরোপণ একটি বৃহৎ কল্যাণকর কাজ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এর কোনো বিকল্প নেই। পতিত জমি ও রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলের খেদমত করা যায়। রাসূল সা. এ কাজে ছিলেন অগ্রগামী। তিনি বৃক্ষনিধন রোধে এবং বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করতেন সব সময়। খাইবার যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা ইহুদিদের খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য উদ্যত হলো। এসময় রাসূল সা. এ কাজে বাধা দেন এবং তাকে গাছ কাটা থেকে নিবৃত্ত করেন। আবার দেখা যায় হযরত সালমান ফারসি আর রুমিকে রা. মুক্তির জন্য তার মালিকের পক্ষ হতে এতে ৫০০টি গাছ রোপণের শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তখন আল্লাহর রাসূল সা. এ কাজে সালমানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।২১ এছাড়াও বৃক্ষরোপণের গুরুত্বের কথা বলতে কি আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, “তুমি যদি জানো আগামীকাল কিয়ামত হবে তারপরও (আজ) একটি বৃক্ষ রোপণ কর।” 

মদ, জুয়া ও কুসংস্কারের মূলোচ্ছেদ : রাসূলের সা. সমাজকল্যাণ কার্যক্রমের একটি বড়ো দিক ছিল সমাজ হতে মদ জুয়া নিষিদ্ধ ও কুসংস্কার দূরীভূত করা। রাসূল সা. যে সমাজে ছিলেন সেখানে ছিল দাস-দাসীর প্রথা, জীবন্ত নারীদের পুঁতে ফেলা, নারীদের একই সময় বহু স্বামী গ্রহণ, পুরুষদের সংখ্যাতীত স্ত্রী গ্রহণ, যৌতুক প্রথা প্রবৃত্তি কুসংস্কারে পরিপূর্ণ। আর মদপান ও জুয়া খেলা ছিল তাদের নিত্যদিনের বিষয়। মদপান ও জুয়া বন্ধে তিনি ক্রমান্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর উপকারিতা মানুষকে বুঝিয়ে চেষ্টা করেন সেখান থেকে তাদের ফিরানোর। আর কুসংস্কার নির্মূলে রাসূল সা. নিজের ক্রীতদাস যায়েদ বিন হারেসাকে পুত্রের মর্যাদায় ভূষিত করেন। বিদায় হজের ভাষণে দাস-দাসী প্রথার চিরতরে নির্মূলের ঘোষণা দেন। নারী ও পুরুষের মাঝে সম্মানজনক বিবাহের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে নির্মূল করেছিলেন অনৈতিক বিবাহের নিয়মসমূহ। আর নারীদের স্ত্রী, মা ও মেয়ের সীমাহীন মর্যাদা দিয়ে টেনে তুলেছিলেন অত্যাচারীর কবর থেকে। নারীর মর্যাদার কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ রাসূল সা. বলেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।” তাছাড়া আরো ঘোষণা দেন, সন্তানের নিকট মায়ের মর্যাদা পিতার চাইতে তিনগুণ বেশি। এভাবেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ হতে সকল অন্ধকার দূর করে কল্যাণময় তাওহিদের আলো জ¦ালিয়েছিলেন মুহাম্মদ সা.।২২


২. ব্যক্তিগত পর্যায়ে কল্যাণ সাধন 

রাসূল সা. ব্যক্তিগতভাবে অনেক সমাজকল্যাণমূলক কাজ করতেন। এসকল কাজের অনেকগুলোই তার নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এ কাজগুলো ব্যক্তিবিশেষের মাঝে করা হলেও এর প্রভাব ছিল অনেক বেশি। কারণ যিনি একবার উপকৃত হয়েছেন তা স্মরণ রাখতেন সারা জীবন। রাসূলের সা. ব্যক্তিগত পর্যায়ে করা সমাজকল্যাণমূলক কাজগুলো নিম্নরূপ-

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া : রাসূল সা. অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন। সেক্ষেত্রে তিনি ধনী-গরিব, মুসলিম-অমুসলিমের পার্থক্য করতেন না। একবার মদিনার এক ইহুদি ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে যান আল্লাহর রাসূল সা.।২৩ রোগী দেখার বিষয়ে আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, “ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থকে দেখতে যাও এবং বন্দীকে মুক্ত করো।”

দান-খয়রাত : দান-খয়রাত করা ছিল রাসূলের সা. সামাজিক কার্যক্রমের অন্যতম একটি অংশ। তার নিকট কেউ কোন কিছু চাইলে তিনি তাকে কখনো খালি হাতে ফেরত দিতেন না। একবার এমন হল যে, রাসূলের সা. নিকট এক ব্যক্তি এসে পরনের জন্য একটি বস্ত্র চাইল। তখন রাসূল সা. তার পরনের একমাত্র জামাটি খুলে দিয়ে দেন। ফলে তার পরনের জন্য অবশিষ্ট আর কোনো জামা রইল না। দানের বিষয়ে বলতে কি আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, “দানকারীর হাত গ্রহীতার হাতের চেয়ে উত্তম।”২৪

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো : রাসূল সা. সবসময় মানুষের কল্যাণের বিষয়টি খেয়াল রাখতেন। তিনি যখন রাস্তা দিয়ে চলতেন তখন কোন কষ্টদায়ক বস্তু সামনে পড়লে তা সরিয়ে দিতেন, যেন কেউ এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত অথবা কষ্ট না পায়। রাসূলের সা. চলার পথে এক বুড়ি নিয়মিতই কাঁটা দিয়ে রাখত আর আল্লাহ রাসূল সা. প্রতিদিনই সেই কাঁটা সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতেন। 

বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো : রাসূলের সা. সমাজকল্যাণের বড়ো একটি দিক ছিল মানুষের বিপদ-আপদে পাশে থাকা। কখনো আর্থিক সহযোগিতা, কখনো শারীরিক পরিশ্রম আবার কখনো মানসিক সান্ত¡না প্রদানের মাধ্যমে মানুষের বিপদ দূর করার চেষ্টা করেছেন আল্লাহ রাসূল সা.। মানুষের বিপদাপদ দূর করার বিষয়ে রাসূল সা. বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার বিপদ সমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য হতে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন।”২৫

প্রতিবেশীর সাথে ভালো আচরণ : প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা তার বিপদাপদ ও দুঃখ-সুখে অংশীদার হওয়া একটি কল্যাণকর সমাজের সাধারণ চিত্র। রাসূল সা. সব সময় এ কাজটি করার চেষ্টা করতেন। রাসূলের সা. প্রতিবেশী তার চাচা আবু লাহাবের স্ত্রী নিয়মিতভাবে রাসূলের সা. দরজায় ময়লা-আবর্জনা রেখে দিত। এসকল বিষয় নিয়ে আল্লাহ রাসূল সা. কখনো তাদের সাথে বিবাদে জড়াননি। প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়ার বিষয়ে রাসূল সা. বলেন, “আল্লাহর কসম সে ঈমানদার হবে না, আল্লাহর কসম সে ঈমানদার হবে না, আল্লাহর কসম সে ঈমানদার হবে না। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে সে? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।”২৬ অপর এক হাদিসে রাসূল সা. বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।”২৭ প্রতিবেশীর হক আদায় ও সুসম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে বিষয়ে রাসূল সা. বলেন, “তোমরা যখন তরকারি রান্না করবে, তাতে পানি বেশি করে দিবে এবং তা প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করবে।”২৮ 

জানাজায় অংশগ্রহণ : কেউ মারা গেলে রাসূল সা. তার জানাজায় অংশগ্রহণের চেষ্টা করতেন এবং তার পরিবারে গিয়ে সান্ত¡না দিতেন। মৃত ব্যক্তির জানাজায় অথবা তার পরিবারে রাসূল সা.-এর উপস্থিতি মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের জন্য সান্ত¡নার কারণ হতো। এক মুসলিমের প্রতি অন্য মুসলিমের হকের কথা বলতে গিয়ে রাসূল বলেন, “এক মুমিনের প্রতি অন্য মমিনের ছয়টি হকের মাঝে অন্যতম একটি হলো- কেউ মারা গেলে তার জানাজা ও দাফন কাফনের অংশগ্রহণ করা।”২৯


৩. নসিহার মাধ্যমে সমাজকল্যাণে উদ্বুদ্ধকরণ

সমাজকল্যাণ একটি বৃহৎ পরিসরের কাজ। একটি কল্যাণকর সমাজ গঠন করা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। সেজন্য প্রয়োজন সকলের অথবা অন্তত সমাজের বেশি সংখ্যক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আর তাই আল্লাহর রাসূল সা. সমাজকল্যাণে ব্যক্তিগতভাবে অনেক উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সমাজের সাধারণ মানুষদের এ কাজে উদ্বুদ্ধ করতেন। রাসূলের সা. অসংখ্য কথনের মাঝে এর প্রমাণ মিলে। সমাজের চলার পথে মানুষের অনেক বিপদ আপদে আসে। এসময় প্রয়োজন হয় অন্যের সাহায্যের। আর পরোপকারের এই কাজটি করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, “আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে।”৩০ আবার মানুষের দুঃখ-কষ্ট যেন একে অপরের পাশে দাঁড়াই সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে আল্লাহ রাসূল সা. বলেন, “যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন।”৩১ মানুষ যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয় সে লক্ষ্যে রাসূল সা. বলেন, “ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।”৩২ আবার প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে আল্লাহ রাসূল সা. বলেন, “ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে ব্যক্তি তৃপ্তি সহকারে পেটপুরে খায়, অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।”৩৩ 

বৃক্ষরোপণের ফজিলত বলতে গিয়ে আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, “যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা শস্য জন্মায় অতঃপর তা থেকে কোনো মানুষ, পাখি বা পশু (ফল-ফসল) ভক্ষু করে তাহলে সেটি তার জন্য সদকাস্বরূপ গণ্য হবে।”৩৪ রোগী দেখতে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহ রাসূল সা. বলেন, “এমন কোন মুসলমান নেই যে সকাল বেলা কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, অথচ তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া না করে। আর সন্ধ্যা বেলা কোনো রোগী দেখতে যায়, সকাল পর্যন্ত তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া না করে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান সুনির্ধারিত করে দেওয়া হয়।”৩৫ আর রোগীর সেবার সফলতা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল সা. বলেন, “কোনো ব্যক্তি যখন রোগীকে সেবা করে বা দেখতে যায়, তখন সে জান্নাতের উদ্যানে ফল আহরণ করতে থাকে। বলা হলো, হে রাসূল সা.! ‘খুরফা’ কি? তিনি বললেন, জান্নাতের ফল।”৩৬ বিধবা ও মিসকিনদের সহযোগিতার ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ রাসূল সা. বলেন, “যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকিনের সমস্যা সমাধানের জন্য ছুটোছুটি করে সে যেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে লিপ্ত। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় রাসূলুল্লাহ সা. এ কথাও বলেছেন, সে যেন ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে সারা রাত সালাত আদায় করে এবং সারা বছরই সিয়াম পালন করে।”৩৭ ইয়াতিমের লালন পালনে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে আল্লাহ রাসূল সা. বলেন, “আমি ও ইয়াতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। এ বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দিয়ে ইশারা করলেন এবং এ দুটির মাঝে কিছুটা ফাঁকা করলেন।”৩৮ অনাহারী মানুষকে খাবার দিতে উদ্বুদ্ধ করার হাদিস এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, “আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা. হতে বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহকে সা. জিজ্ঞেস করল, ‘ইসলামের কোন কাজটি উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘তুমি (অভাবীকে) খাদ্য খাওয়াবে।”৩৯

যথাসময়ে এবং যথাযথভাবে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে আল্লাহ রাসূল সা. বলেন, “মানুষের মধ্যে সেই উত্তম, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।”৪০ আবার ঋণগ্রস্ত অক্ষম ব্যক্তির প্রতি পাওনাদারকে দয়াপরবশ হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ রাসূল সা. বলেন, “আর যে ব্যক্তি কোনো ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি সহজ করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতি সহজ করবেন।”৪১ মানুষের প্রতি দয়া পরশ হওয়ার কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ রাসূল সা. বলেন “তোমরা পৃথিবীবাসীদের প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”৪২

সর্বোপরি তিনি বলেন, “(অন্যের) কল্যাণকামিতাই দ্বীন, (অন্যের) কল্যাণকামিতাই দ্বীন, (অন্যের) কল্যাণকামিতাই দ্বীন।”৪৩ এমনিভাবে মানুষের জীবন চলার পথে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কখনো ব্যক্তিগত উদ্যোগে আবার কখনো সামষ্টিক উদ্যোগে কখনোবা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাকে কাজে লাগিয়ে আবার কখনো নসিহার মাধ্যমে একটি সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম ভূমিকা রাখতেন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সা.। আর তার এই প্রচেষ্টার ফলেই জাজিরাতুল আরবের সকল জুলুম-নির্যাতন, অন্যায় অপকর্ম আর অন্ধকার নির্বাপিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটি আদর্শ কল্যাণকর সমাজ তথা দারুস সালাম। হ


তথ্যসূত্র-

১. (সূরা আহযাব : ২১)

২. (আর রাহিকুল মাখতুম ৯৬ পৃষ্ঠা; ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৩৪-১৪০)

৩. (ইবনে হিশাম, প্রথম খণ্ড, ১৩৩-১৩৫ পৃষ্ঠা; আর রাহিকুল মাখতুম ৯৪ পৃষ্ঠা)

৪. (আর রাহিকুল মাখতুম ৯৬ পৃষ্ঠা)

৫. (আর রাহিকুল মাখতুম ৯৬ পৃষ্ঠা)

৬. (মদিনা সনদের ধারাসমূহ সিরাতে ইবনে হিশাম, আর রাহিকুল মাখতুম, ফুরুগে আবাদিয়্যাত গ্রন্থের সঙ্কলন এবং আল মুজতামাউল মাদানী পৃষ্ঠা ১০৭ তাকে ১৩৬ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।) (উৎসসমূহে বর্ণিত ধারাসমূহকে সমন্বয় করা হয়েছে। বিশ্লেষণের সুবিধার্থে ধারাগুলোকে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে পুনরায় সাজানো হয়েছে। লেখক)

৭. (সিরাত বিশ্বকোষ, পঞ্চম খণ্ড ৪৮ পৃষ্ঠা)

৮. (তিরমিজি, দ্বিতীয় খণ্ড ২৯ পৃষ্ঠা) 

৯. (বায়হাকী, তাবারানী)

১০. (সিরাত বিশ্বকোষ, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ২৬)

১১. (বুখারি-২০৭২)

১২. (মিশকাত-১৬৩)

১৩. (যাদুল মাআদ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২৮; মুসলিম, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৬)

১৪. (বুখারি-২৩৯৮)

১৫. (বুখারি-২২৯৪)

১৬. (বুখারি-৫৩৭৩, ৫৬৪৯; আবু দাউদ-৩১০৫) 

১৭. (বুখারি-২৫১৭)

১৮. (তিরমিজি-২৭৩৭)

১৯. (মুসলিম-৩৯/৩১, ২২৬৭; বুখারি-৫৬৮৪ আধুনিক প্র-৫২৭৩, ই ফা-৫১৬৯) 

২০. (বুখারি-৫৬৮৫; আধুনিক প্র-৫২৭৪, ই ফা-৫১৭০)

২১. (সিরাতে ইবনে হিশাম)

২২. (সিরাতে ইবনে হিশাম, আর রাহিকুল মাখতুম) 

২৩. (রিয়াদুস সালেহিন-৯০৪)

২৪. (বুখারি-১৪২৯)

২৫. (বুখারি-২৪৪২, মুসলিম-২৫৮০)

২৬. (বুখারি-৬০১৬, মুসলিম-৪৬)

২৭. (মুসলিম-২৬২৫)

২৮. (বুখারি-৫৬৭২) 

২৯. (তিরমিজি-২৭৩৭)

৩০. (মুসলিম-২৬৯৯; তিরমিজি-২৯৪৫) 

৩১. (মুসলিম-২৬৯৯; তিরমিজি-২৯৩০) 

৩২. (মুসলিম-৪৬)) 

৩৩. (মিশকাত-৪৯৯১)

৩৪. (প্রাগুক্ত)

৩৫. (তিরমিজি-৯৬৯; আবু দাউদ-৩০৯৮)

৩৬. (মুসলিম-২৫৬৮; তিরমিজি-৯৬৮)

৩৭. (বুখারি-৫৩৫৩)

৩৮. (বুখারি-৫৩০৪)

৩৯. (বুখারি-১২, ২৮; মুসলিম-৪২)

৪০. (বুখারি-২৩৯২)

৪১. (মুসলিম-২৬৯৯; তিরমিজি-১৪২৫)

৪২. (তিরমিজি-১৯২৪; আবু দাউদ-৪৯৪১)

৪৩. (আবু দাউদ-৪৯৪৪; নাসাঈ-৪২১০)

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির