post

আমাদের ব্যবহারিক জীবন

মো: আতিকুর রহমান

০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬
আমরা যা বিশ্বাস করি তার বাস্তব আমল হলো ব্যবহারিক জীবন। ঈমান হলো বিশ্বাস আর ইসলাম হলো বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করা। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বাস্তব জীবন তার ঈমানের ওপর প্রতিফলিত হবে। যাদের কাজ তার ঈমানের বিপরীত সে-ই হলো মুনাফিক। আকিদাগত মুনাফিক ছিল আবদুল্লাহ বিন উবাই। এ ধরনের মুনাফিকের সংখ্যা আমাদের সমাজে বেশি। ব্যবহারিক জীবন সুন্দর করার গুরুত্ব- ১.    দুনিয়ার জীবনে সফলতার জন্য ব্যবহারিক জীবন সুন্দর করা দরকার। ২.    ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে আখেরাতের জীবনে সফলতার জন্য ইসলামের আলোকে ব্যবহারিক জীবন পরিচালনা করা জরুরি। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দাওয়াতের মাধ্যম ২টি। ১. মৌখিক দাওয়াত ২. আমলি দাওয়াত আল্লাহর রাসূল (সা)-এর নবুওয়ত লাভের পর যে লোকগুলোর নিকট তার জীবনের কোনো একটি দিকও গোপন ছিলো না, তারাই সর্বপ্রথম তাঁর নবুওয়তের স্বীকৃতি প্রদান করেন। এর উদাহরণ হলোÑ হযরত খাদিজা (রা), হযরত যায়েদ (রা), হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) এবং হযরত আলী (রা)। সাহাবায়ে কেরামের মুখের কথার চেয়ে তাদের আমল দেখে বেশি লোক ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিল। ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মীকে এমন হতে হবে যাতে তাদের জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। মানুষকে উন্নত চরিত্র শিক্ষা দেয়ার জন্য রাসূল (সা)-এর আগমন ঘটেছিল। বাস্তব জীবনের পরিপূর্ণতা দানের জন্য রাসূল (সা) প্রেরিত হয়েছিলেন। আমাদের ব্যবহারিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক- ১. ব্যক্তিগত দিক ২. পারিবারিক দিক ৩. সামাজিক দিক ৪. কর্মজীবনের দিক ৫. সাংগঠনিক দিক। ব্যক্তিগত দিক- ১.    নিয়তের একনিষ্ঠতা বা খুলুসিয়াত থাকা। এটা বান্দা না বুঝলেও আল্লাহ বুঝেন। ২.    কথা ও কাজে যাতে অন্য মানুষ কষ্ট না পায়। রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার নিকট তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী ও দু’পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের নিরাপত্তা দিতে পারে আমি তার জন্য জান্নাতের জিন্মাদার হবো। ৩.    সহজ-সরল জীবন যাপন ইসলাম কৃপণতাকে সমর্থন করে না আবার অপচয়কেও সমর্থন করে না। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) বলেছেন, দায়িত্বশীলদের জন্য ৪টি গুণ অপরিহার্য- # কোমলতা তবে দুর্বলতা নয় # দৃঢ়তা, তবে কঠোরতা নয় # স্বল্পব্যয়িতা, তবে কৃপণতা নয় # দানশীলতা, তবে অপব্যয় নয় হযরত লোকমান (আ) তার পুত্রকে উপদেশ দিলেন নিজের চাল-চলনে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর। (সূরা লোকমান : ১৯) নিজের চলনে ভারসাম্য আনো এবং নিজের আওয়াজ নিচু কর। এক সাহাবী রাসূল (সা)কে প্রশ্ন করলেন চলন্ত ঝর্ণায় বেশি সময় ধরে অজু করতে পারব কি? রাসূল (সা) বললেন না। ৪.    ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠন করা প্রতিটি কাজের হক ঠিকমত পালন করার নাম হলো ভারসাম্য। ৫.    রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা রাগ মানুষকে সীমালংঘনের দিকে নিয়ে যায়। রাগের মাথার কোনো সিদ্ধান্ত সঠিক হয় না। রাগ প্রয়োজন মতো থাকা দরকার, বেশি হলে বিপদ। উদাহরণ- পানির অপর নাম জীবন, বেশি হলে মরণ। যদি তোমরা শয়তানের পথ থেকে কোনো প্ররোচনা আঁচ করতে পার (সূরা হামিম আস্ সিজদাহ : ৩৬) ৬.    জবান বা বাকশক্তির হেফাজত করা। মানুষের গুনাহ সংঘটিত হয় জবান দ্বারা। (সূরা হুজুরাত : ১২) ৭.    দৃষ্টিশক্তির হিফাজত করা। ঐ সমস্ত জায়গায় দৃষ্টি না দেয়া যেখানে আল্লাহ দৃষ্টি দেয়ার জন্য নিষেধ করেছেন। হে নবী : মুমিন পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে অন্যথায় ঐ ধরনের চোখে আগুনের সীমা ঢেলে দেয়া হবে। (সূরা আন্ নূর : ৩০) ৮.    রিয়া ও অহঙ্কারমুক্ত জীবন আল্লাহ বলেন, গর্ব হলো আমার চাদর। যারা গর্ব করে তারা যেন আমার চাদর নিয়ে টানাহেঁচড়া করে। (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৭) ৯.    কটু কথা ও অশ্লীল কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা। ১০.    মিষ্টভাষী ও কোমল স্বভাবের অধিকারী হওয়া। ১১.    পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও রুচিসম্মত চলা (সূরা মুদ্দাসির) বই পুস্তক, পড়ার টেবিল, শোয়ার খাট, আলনা, কাপড়-চোপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও গোছালো রাখা। ১২.    সবর, তাওয়াক্কুল ও অল্পে তুষ্টি। (সুরা তাকাসুর) উদাহরণ- নৌকা পানির ওপর দিয়ে চলে কিন্তু সেই পানি যদি নৌকার ভেতর ঢুকে তাহলে নৌকা ডুবে যাবে। (ইমাম গাজ্জালী) ১৩.    মন্দের মোকাবেলায় উত্তম নীতি গ্রহণ। (সূরা হামীম-আস সিজদাহ : ৩৪) ১৪.    প্রকাশ্য ও গোপনীয় সকল গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা গোপনে খারাপ ও অশ্লীল বই না পড়া। যারা বড় বড় গুনাহ এবং অকাম্য ও সর্বজননিন্দিত অশ্লীল পাপ থেকে বিরত থাকে-তবে ছোট খাট ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়া ভিন্ন কথা। (সূরা আল নজম : ৩২) ১৫.    শুনা কথা পেছনে না বলা, কোন কথা শুনলে যাচাই-বাছাই করা ১৬.    কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলা আবশ্যক- # কুরআনের কিছু আয়াত অর্থসহ প্রতিদিন মুখস্থ করা। # মেসওয়াক করে নামাজ পড়া, যার দ্বারা ৭০ গুণ সওয়াব বেশি পাওয়া যায়।  খাবার পরে মেসওয়াক, ঘুমানোর আগে মেসওয়াক করা। # প্রথম রাতে আগে ঘুমিয়ে শেষ রাতে তাড়াতাড়ি ওঠার চেষ্টা করা। ডান কাতে শোয়া। # শেষ রাতে নামাজ পড়া। # সকালবেলা কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা। # ফজরের নামাজ অবশ্যই জামাতে পড়তে হবে। এশা ও ফজর নামাজ জামাতে পড়লে সারারাত ইবাদত বন্দেগির সমান সওয়াব পাওয়া যায়। পারিবারিক দিক পিতা-মাতাকে কোনো কষ্ট না দেয়ার ব্যাপারে সদা সজাগ থাকা। # প্রতিদিন ১বার ফোন করে খোঁজ নেয়া। # মায়ের কাছে যাওয়ার সময় জামা-কাপড় নিয়ে যাওয়া। বাবার জন্য টুপি, মায়ের জন্য চাদর কমপক্ষে হলেও। # বাড়িতে গেলে এক সাথে খাওয়া। # মা-বাবাকে সালাম দেয়া। # মায়ের দিকে একবার নেক নজরে তাকালে মকবুল হজের সওয়াব পাওয়া যায়। # বান্দার হকের প্রথম হলো মা-বাবার হক। # পিতা-মাতার আত্মীয় স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করা। # ছোট ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে ইসলামসম্মত আচরণ করা। # বড়রা খারাপ আচরণ করলেও তাদের সাথে বেয়াদবি করা যাবে না। সামাজিক দিক ১.    আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করা। # সুযোগ পেলেই খোঁজ খবর নেয়া। # এর মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া। ২.    অন্য মানুষের কল্যাণ কামনা করা। দ্বীন মানেই হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা। ৩. পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের সম্পর্ক বজায় রাখা কর্মজীবনের দিক # নিজ কর্মজীবনের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। # অধস্তনদের সাথে উত্তম আচরণ করা। # যথাসময়ে কর্মস্থলে যাওয়া। # ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। # নিজেকে দায়ী ইলাল্লার ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করা # সৎপথে উপার্জন করা। সাংগঠনিক দিক # পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া। # পার্থিব সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে স্বার্থহীন থাকা। # জনশক্তিকে তার শিক্ষা বয়স ও মাপকাঠি অনুযায়ী ব্যবহার করা। # সবাইকে একই কাজ না দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দেয়া। # সাংগঠনিক কারোর ওপর ওজর পেশ না করা। # দায়িত্বশীলদেরকে সম্মান দেয়া। # মুহাসাবাহ থাকলে নিয়ম মাফিক করা। # গিবত না করা। # দায়িত্বশীলকে পরামর্শ দেয়া। # সঠিকভাবে আনুগত্য করা। ব্যবহারিক জীবন উন্নত করার উপায় # রাসূল (সা) ও সাহাবীদের ব্যবহারিক জীবনকে সামনে রাখা। # খারাপ ব্যবহারের জবাব উত্তম কথার দ্বারা দিতে হবে। # মানুষের দুঃখ দুর্দশাকে অন্তর দ্বারা বুঝার চেষ্টা করা। # নিজে না করে অপরকে নির্দেশ না দেয়া। # Time Managemen-এ অভ্যস্ত হওয়া। লেখক : বিশিষ্ট কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির