post

ইসলামী দল নিষিদ্ধ করতেই জঙ্গি তত্ত্বের উদ্ভাবন

২৫ মে ২০১৩
ইসলামী দল নিষিদ্ধ করতেই জঙ্গি তত্ত্বের উদ্ভাবন এস এম আখতারুজ্জামান সুমন সংবিধান যে কোন দেশ পরিচালনার একটি গুর”ত্বপূর্ণ মাধ্যম। আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনা, রাষ্ট্রের মৌলিকনীতি এবং মানুষের মেীলিক অধিকারসহ সকল বিষয়ই সংবিধান নির্ভর। রাজনীতি মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম যা সংবিধান অধিকার দিয়েছে। এই অধিকার বলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের যে কোনো আদর্শের রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। এ অধিকারে  হস্তক্ষেপ করা কারোর জন্য বৈধ নয়। কিন্তু সংবিধানের ৩৮ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত শর্ত অনুযায়ীÑ সংবিধানের এই শর্তের বাইরে কোনো রাজনীতি করা কোনো ব্যক্তির জন্য বৈধ নয়। ৩৮ নং অনুচ্ছেদ ঃ জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধÑ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি Ñ (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।” অত্র ধারা অনুযায়ী আমরা বলতে চাই, যে সংগঠনের কার্যক্রমের মধ্যে জনস্বার্থ নেই, যার মধ্যে নৈতিকতা নেই, যে সংগঠন মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না, যে সংগঠন মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে পারে না, যারা নিজেদের মধ্যেই রক্তের হোলিখেলায় মেতে থাকে তাদের এমন কোনো সংগঠন করার কোনো সাংবিধানিক অধিকার নেই। আজ আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদি মিলিয়ে দেখি তাহলে দেখা যাবে অধিকাংশ দল এমন সব কাজের সাথে জড়িত। তারা হত্যা, সন্ত্রাস, জনস্বার্থহীন ও অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত যা অত্র অনুচ্ছেদের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যহীন। অবশ্য এর পাশাপাশি কিছু সংগঠন আছে যাদের মধ্যে এমন সব অপরাধ খুঁজে পাওয়া যাবে না। যে সংগঠনের মধ্যে জনস্বার্থ ও নৈতিকতা বিদ্যমান, যারা দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে তারা আদর্শের কারণে আজ প্রতিহিংসার পাত্রে পরিণত হচ্ছে। আজ যদি সংবিধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সঠিকভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করেন তাহলে আজ সঠিক রাজনীতির কথা হয়তোবা তারা বলবেন। তাই প্রতিটি বিবেকবান মানুষের উচিত সঠিক রাজনীতিকে সাড়া দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধন করা। এক্ষণে সংবিধানের শর্তগুলি উল্লেখ করা প্রয়োজন যা একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার শর্ত বলে বিবেচিত। একটি সংঘ বা সমিতি গঠন করার শর্ত ৩টি। যথাÑ ১. জনশৃঙ্খলার স্বার্থে ২. নৈতিকতার স্বার্থে ৩. আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ প্রথম শর্ত : জনশৃঙ্খলার স্বার্থে জনশৃঙ্খলার স্বার্থে বলতে সংবিধানের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ে বর্ণিত সকল প্রকার মেীলিক অধিকার সংরক্ষণ ও নিশ্চিত করণ বোঝায়। যেখানে সকল পর্যায়ের মানুষ যে কোনো আদর্শের সংগঠন কায়েম করতে পারবে এবং সবাই একযোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাবে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সকল রাজনৈতিক দল এক টেবিলে একই মঞ্চে বসে দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সকল মানুষকে আইনের দৃষ্টিতে সমান রেখে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনৈতিক কাঠামো ও বিচার বিভাগীয় কাঠামো পরিচালনা করবে। দেশ গঠনের জন্য সরকার বিরোধী দলগুলেকে অবশ্যই সরকারের কাজের সমালোচনা করার সুযোগ দিতে হবে, কারণ সরকারের সকল ভুল-ভ্রান্তি বিরোধী দলগুলো সমালোচনা করে সরকারকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে।  কিন্তু আজ দেখা যায় যখন যে আদর্শের সংগঠন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় তখন তারা অন্য আদর্শের সংগঠনের উপর চরম নির্যাতন শুরু করে। এটা কখনো সংবিধানের ভাষ্য নয়। যদি কোনো সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে অথবা অন্য কোনো সংগঠনের কর্মীদের উপর আঘাত করে, পিটিয়ে, গুলি করে, জবাই করে হত্যা করে, যদি দুর্নীতি করে দেশের সম্পদকে নিজের সম্পদে পরিণত করে, কারো সম্পদ জোরপূর্বক ভোগ-দখল করে, নারীদের ইজ্জত হরণ করে, যদি কোনো সংগঠন লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে হত্যা করে, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি করে তাহলে এমন সব রাজনীতিই কিন্তু সংবিধানের পরিপন্থী। যা সংগঠন কায়েম করার প্রথম শর্ত ‘জনশৃঙ্খলার স্বার্থে’ সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত করে। দ্বিতীয় শর্ত : নৈতিকতার স্বার্থে এটাও সংগঠন কায়েম করার আরো একটি গুর”ত্বপূর্ণ শর্ত। প্রতিটি সংগঠন কায়েম করা উচিত এমন সব মৌলিক নীতির ভিত্তিতে যেখানে প্রতিটি মানুষ নৈতিকতার কথা শিখবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে আজ আমাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা মদ, জুয়া, গাজা আর নারী নিয়ে অবৈধ কাজে লিপ্ত। আমরা যদি আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে অধিকাংশ সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরকে খুঁজে পাওয়া যাবে তারা নৈতিকতার ধ্বংসের চরম পর্যায়ে উপনীত। আজ ইভটিজিং তৈরি হয়েছে, ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হতে গেলে বা হোস্টেলে থাকতে হলে অনেক ছাত্রীকে হতে হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও নেতা-কর্মীদের ভোগের পাত্রী, তাদেরকে হতে হয়েছে পতিতা, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমেরিকায় সরকারি সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মাতাল অবস্থায় নারী কেলেঙ্কারী করে এলো অথচ তার এ অনৈতিকতার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার লক্ষিত হলো না, এখন পত্রিকা খুললেই ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের তরুণ-যুবক সদস্যদের দ্বারা ইয়াবা, মদ, গাজা, ফেন্সিডিলের ছড়াছড়ির খবর দেখা যায়, আমাদের সমাজের এই সমস্ত তরুণ-যুবকদের দ্বারা এই মাদকাসক্ত ব্যবসা বন্ধের কোনো পদক্ষেপ সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখা যায় না। নারী ধর্ষণ আর ইভটিজিংয়ের আইনটা খুব কড়া হলেও এর প্রকৃত কোনো বাস্তবায়ন নেয়। আমাদের দেশের সরকার প্রকাশ্যে ধূমপানকারীর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রেখে আইন পাস করলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। অথচ এই সব নৈতিকতাবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার একমাত্র উপায় রাজনৈতিক দল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ রাজনৈতিক নেতানেত্রীর মধ্যেই এই ধরনের দুর্বলতাই বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীর ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যই তরুণ-যুবক সমাজের মধ্যে এমন নৈতিকতাবিরোধী অস্ত্র তুলে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। এসব কিছুই নৈতিকতার অবক্ষয়। নৈতিকতার অবক্ষয়ের আরো একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সকল ব্যক্তিই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং সকলেই ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ না দিলেই নয়। তা হলো, যখন শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে তখন কিছু শিক্ষক ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ ভর্তি বাণিজ্যের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এমন সব কার্যক্রমই নৈতিকতার স্বার্থের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আর এ সকল কিছুই রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় সংঘঠিত হচ্ছে। আজ যদি আমরা বিভিন্ন দলের জনশক্তি বৃদ্ধির কৌশল বা কার্যক্রম বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাব তারা জনশক্তি বৃদ্ধির জন্য ছাত্রদের হাতে বই-খাতা আর কলমের পরিবর্তে তুলে দিচ্ছে সিগারেট, মদ, গাজা আর ফেন্সিডিলের মত নেশার দ্রব্য। যার কারণে তারা হচ্ছে সমাজের নিকৃষ্ট মানুষ, যার প্রভাবে তারা আজ রাস্তায়, স্কুল, কলেজ-ক্যাম্পাসে ইভটিজিং আর নারী ধর্ষণের মত জঘন্যতম অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এমন সব প্রতিটি কাজ যদি পর্যালোচনা করা হয় তাহলে অবশ্যই আমরা বলতে পারি তাদের রাজনীতি করা সেই মহান সংবিধানের ৩৮ নং অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাদের রাজনীতি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। অবশ্য এত সব হতাশার মধ্যেও কিছু রাজনৈতিক সংগঠন আছে যারা এমন সব অনৈতিক কাজের সাথে বিন্দু পরিমাণ জড়িত নয় বরং তাদের সকল জনশক্তি এসব অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার জন্য অন্যদেরকেও আহ্বান করে। তৃতীয় শর্ত ঃ আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ যদি প্রশ্ন করা হয় যে, কারো কাছে যদি কোনো অবৈধ অস্ত্র থাকে তাহলে সে অপরাধী কি না? অবশ্যই সবাই বলবে সে অপরাধী। যদি প্রশ্ন করেন একটি সংগঠনের মিছিল বা সমাবেশে আরেকটি দলের হামলা বেআইনি কি না? অবশ্যই সবাই বলবে এটা বেআইনি। যদি প্রশ্ন করেন একটি দলের মিছিল হতে সাধারণ জনগণের উপর হামলা করা হয় বা দেশের সম্পদের উপর হামলা করা হয় তাহলে এটা কি বেআইনি? অবশ্যই সবাই বলবে এটা বেআইনি। যদি হত্যার ব্যাপারে প্রশ্ন করেন তাহলে একই জবাব পাওয়া যাবে। এসব কিছুই যদি বেআইনি হয়ে থাকে তাহলে বলুন এমন কাজের সাথে যে সব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত তারা কি সংবিধানের ৩৮ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংগঠন করার জন্য বৈধ? সকল বিবেকবান মানুষই একবাক্যে এ জবাব দিবেন, অবশ্যই না। বাংলাদেশ পরিচালনার মৌলিক হাতিয়ার হচ্ছে সংবিধান। আর অবশ্যই সংবিধান সকলের কাছেই শ্রদ্ধার সম্পদ। তাই আমাদেরকে বৈধ রাজনীতি করতে হলে অবশ্যই সংবিধানের ৩৮ নং অনুচ্ছেদ পুরোপুরি মানতে হবে। তাই প্রতিটি বিবেকবান মানুষের উচিত সঠিক রাজনীতিকে সাড়া দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণসাধন করা। জঙ্গি নামের অপব্যাখ্যা : ইসলামী দল ধ্বংসের পরিকল্পনা জঙ্গি শব্দটি এখন পৃথিবীর মানুষের নিকট একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে সাধারণ জনগণের মধ্যে এটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বুঝে হোক আর না বুঝে হোক জঙ্গি শব্দটি শুনে আমরা ভয় পাই। আধুনিক বিশ্বে যারা ইসলামবিরোধী এবং নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী তারা মুসলমানদেরকে বিশেষ করে ইসলামিক দল এবং ইসলামী নীতির দ্বারা পরিচালিত দেশগুলোকে ধ্বংস করে নিজেদের রাজত্ব কায়েম করার জন্যেই মূলত এই জঙ্গি শব্দটি আবিষ্কার করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে জাতিসংঘ তৈরি হয়েছিল সে জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা সেটি আজ বিশ্বের শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশ আমেরিকার হাতে জিম্মি। সেই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন হতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটি দেশের দায়িত্বশীলগণ এই জঙ্গি নির্মূলের দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। কিন্তু এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী শব্দ জঙ্গি এর কোনো সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। আজ আমেরিকা তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং দেশ দখলের প্রতিযোগিতায় জিততে চায় শুধুমাত্র এই জঙ্গি শব্দটি ব্যবহার করে। আজ তারা কিছু অস্তিত্বহীন মানুষদেরকে বড় পাঞ্জাবী, টুপি আর এক হাতে তসবী এবং অন্য হাতে পবিত্র কুরআন শরীফ দিয়ে ধর্মীয় বড় নেতা তৈরি করে এবং তাদেরকে দিয়ে একটি ইসলামী সংগঠনের নাম দিয়ে সংগঠন কায়েম করে তাদেরকে দিয়ে বোমাবাজী করাচ্ছে। এর ফলে তারা প্রমাণ করছে ইসলাম হচ্ছে জঙ্গি আদর্শ আর ইসলামী দলগুলো হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন। যার কারণে আজ প্রশাসন দ্বারা পবিত্র কুরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য জব্দ করে জঙ্গি বই হিসেবে খেতাব প্রদান করছে। আর এই জঙ্গি শব্দটি ব্যবহার করে আমেরিকা অধ্যুশিত দেশগুলো দখল করে নিজেদের মনমত সরকার প্রতিষ্ঠা করছে। আজ আমেরিকা তাদের ন্যাটো বাহিনীর মাধ্যমে ঘুমন্ত মুসলিম জাতির উপর আক্রমণ চালিয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ নারী-পুরুষদেরকে হত্যা করছে সেখানে কোনো জঙ্গি হচ্ছে না। ইসরাইল আজ ফিলিস্তিনিদের উপর যুগ যুগ ধরে যে নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে সেখানে জঙ্গির কোনো কথা হচ্ছে না। জাতিসংঘ তখন নীরব ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যেখানে মুসলিম বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, কুরআনের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার জন্য গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছে ঠিক তখনই আধুনিক বিশ্ব তাদেরকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। আজকে যারা মানবতার বিরুদ্ধে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক ইত্যাদি ব্যবহার করছে তারাই আবার গণতন্ত্রের ধারক (মানষকন্যা!) হচ্ছে। অপরদিকে যারা মানবজাতির উপকার করার চেষ্টা করছে, যারা সারাজীবন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অভিযান চালিয়েও একটি ছুরি পর্যন্ত খুঁজে বের করা যায় না তাদেরকে আজ ইসলামী আদর্শ পালন করার জন্য জঙ্গি বলে আখ্যা দেয়া হচ্ছে। অথচ ইসলামই এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সূরা ফোরকানের ৬৮ নম্বর আয়াতে বলছেন, “যারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদকে ডাকে না, আল্লাহর হারাম করা কোনো প্রাণকে অকারণে ধ্বংস করে না, না ব্যভিচারে লিপ্ত হয়Ñ এই কাজ যারা করে তারা নিজেদের গোনাহের প্রতিফল পাবে।” পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেÑ “আর যারা বিনা কারণে (শরীয়ত ব্যতিরেকে) একজন মানুষ হত্যা করলো সে যেনো পৃথিবীর সকল মানুষকে হত্যা করলো এবং যে একজন মানুষকে বাঁচার সুযোগ দিল সে যেনো পৃথিবীর সকল মানুষকে বাঁচার সুযোগ দিল।” উপরের আলোচনা হতে জঙ্গি সম্পর্কে একথা স্পষ্ট যে, যারা মানবতার বিরুদ্ধে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক ইত্যাদি ব্যবহার করে চুরি, ডাকাতি, হত্যা, সন্ত্রাস, রাহাজানি, ছিনতাই, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদকদ্রব্য সেবনসহ দেশীয় আইনের বিপরীত যত অপরাধ আছে কম-বেশি তার সাথে জড়িত থাকার নামই জঙ্গি। কিন্তু বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে আজ তার ঠিক বিপরীতটাই ঘটছে। জঙ্গির কোনো সংজ্ঞা প্রদান না করে মুসলিম দলগুলো ধ্বংস করার জন্যই এই জঙ্গি শব্দটি ব্যবহার করছে। আমাদের বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৮(গ) অনুচ্ছেদে জঙ্গি শব্দটি উল্লেখ করলেও তার কোনো সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। আজ বাংলাদেশও আমেরিকা-ভারতের সাথে তাল মিলিয়ে ইসলামী দল নিষিদ্ধ তথা নির্মূল করার জন্যই এই জঙ্গি শব্দটি ব্যবহার করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির