post

কারাস্মৃতির অন্তরালে

২৫ মার্চ ২০১২
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম.. (পূর্ব প্রকাশিতের পর) আজকের আধুনিক জাহিলিয়াতের যুগে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীর মানবসভ্যতা যখন হিংস্র সিংহের ন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত, তখন একদল শক্তি সামর্থ্যসম্পন্ন যুবক কিসের কারণে এই সবকিছু থেকে মুক্ত? আজ এই কাফেলার নৈতিকতা পদভারে সমাজের প্রতিটি রন্ধ্র মুখরিত। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবখানে সবার পাশে পরিচিত রাহবার ছাত্রশিবির। কারাগারও সেখান থেকে আজ মুক্ত নয়। শিবির আজ জাতির পাঞ্জেরী। মজলুম আর অসহায় মানুষের পাশে এক পরম বন্ধু। শিবির ছাত্রদের হাতে অস্ত্রের পরিবর্তে তুলে দিচ্ছে কলম। সিগারেট, মদ, ফেনসিডিল আর মারণব্যাধি ড্রাগের পরিবর্তে মুখে তুলে দিচ্ছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বাণী। ছাত্রশিবির আজ এই দেশ এবং জাতির আশাআকাক্সক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের একমাত্র গ্যারান্টি। কারাগারে, রিমান্ডে অনেকেই আমাদের প্রতি যত বজ্রকঠোর ছিলো, তার মাঝে ইসলামী আন্দোলনের ভাইদের চারিত্রিক মাধুর্যে আকৃষ্ট হয়ে ভালোবাসার লোকও আজ কম নয়। এটাই আন্দোলনের সাথে থাকার নেয়ামত। এ নেয়ামত পৃথিবীর কোনো সম্পদ দিয়ে ক্রয় করা যায় না। এ নেয়ামতের কৃতিত্ব আমার প্রিয় কাফেলা আজীবনের গর্বিত ঠিকানা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের। আল্লাহ তুমি এ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত আমাদেরকে দিয়েছো, সে জন্য সিজদাবনত চিত্তে তোমার শুকরিয়া আদায় করে কি শেষ করা য়ায়? যারা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে এ কাফেলায় শামিল করেছেন তাদের জন্য হৃদয়ের সকল আবেশ মিলিয়ে দোয়া করতে ইচ্ছে করে। আজ আমাদের মত যুবকরা যদি এই আন্দোলনের সন্ধান না পেতো তাহলে হয়তো আমাদের পরিচয় অন্যভাবে লেখা হতে পারতো। হয়তো আমাদের কারাগারে প্রবেশ হতো সমাজের আরো অন্য অনেক দাগী আসামির মতো। হয়তো অনেক জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তাম আমিও। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের এই নেয়ামত-ই কেবল আমাদেরকে এই সব থেকে হেফাজত করেছে। আমাদের আনন্দ আজ এখানেইÑ অন্য অনেক অপরাধ আমাদের থাকলেও কারাগারে প্রবেশের একমাত্র কারণ আল্লাহর ওপর ঈমান আনা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। ইসলামী আন্দোলনের এই পথই আমাদেরকে নামাজী বানিয়েছে, আল্লাহর পথে চলতে শিখিয়েছে, হালাল-হারাম কল্যাণ অ-কল্যাণের পথ বুঝিয়েছে, ভালো ছাত্র, পিতা-মাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান আর সমাজের সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হওয়ার চেতনা জুগিয়েছে। কিন্তু ছোটবেলায় কুরআন-হাদিস পড়ে এ আন্দোলনে শামিল হওয়ার সুযোগ আমার হয়নি, কারণ আমি যখন ছাত্রশিবিরের সমর্থক হই তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। স্বাভাবিকভাবেই খুব বেশি কিছু বুঝতাম না। এজন্য আমি পড়ালেখা করে ছাত্রশিবিরে না এলেও, এ কাফেলার ভাইদের চারিত্রিক মাধুর্য দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। শিবিরের ভাইদের আচার-ব্যাবহার, পরীক্ষার রেজাল্ট আমাকে খুব উদ্বুদ্ধ করেছে। আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি তখন প্রোগ্রামে আমার বড়ভাই আমাকে নিয়ে যেতেন। অনেক ভাইয়ের খুব আকর্ষণীয় বক্তৃতা আমার বেশ ভালো লাগতো। বিশেষ করে যারা বক্তব্যে কুরআনের আয়াত বলতেন সেটি আমাকে খুব আকৃষ্ট করতো। আবার পরিচিতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যখন জানতাম এ ভাইয়েরা অনেকে মাদ্রাসায় পড়েননি কিন্তু ছাত্রশিবির করে এভাবে কুরআন-হাদিসের জ্ঞান লাভ করেছেন- তখন আরো বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়তাম, তাহলে শিবির করেই এটা সম্ভব। তখন আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকেও এভাবে বক্তৃতা দিতে হবে। এখন বুঝি জ্ঞানের প্রভাব মানুষকে কিভাবে আকৃষ্ট করে। একদিন আমাদের কর্মী শিক্ষাবৈঠকে এক ভাই খুব ভালো আলোচনা রাখলেন। বসে বসে সব নোট করলাম। প্রোগ্রাম শেষে ওই ভাইকে বললাম, ভালো বক্তা হওয়ার উপায় কী? তিনি আমাকে বললেন, সব সময় বলতে থাকা। আমার আগ্রহ দেখে বললেন, আপনাদের বাড়িতে সুপারিগাছের বাগান আছে না? আমি বললাম, আছে। তাহলে ঐ বাগানে ঢুকে সকল সুপারিগাছকে শ্রোতা মনে করে জোরে জোরে বক্তৃতা করবেন। এভাবে ভালো বক্তা হতে পারবেন। সেদিন কথাগুলো খুব  কৌতূহলের সাথে শুনেই গেলাম। আমার এখনো মনে আছে ওই ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েরি নিয়ে সুপারি বাগানে দাঁড়িয়ে, প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা বলে অনেক দিন বক্তব্য দিয়েছি। মানুষ পড়ে শেখে যা তার থেকে দেখে অনুকরণ করে শেখে অনেক বেশি। এজন্য আল্লাহ কুরআন পাঠিয়েছেন বটে, আনুকরণীয় আদর্শ বানিয়ে দিলেন রাসূলের (সা) জীবনকে। যাক, কারাগারে আমাকে পেয়ে যেন এক দিকে আনন্দ অন্যদিকে বেদনার ছাপ সবার মধ্যে। এটা কেবল এ আন্দোলনেই শুধু সম্ভব। আমাদের প্রতিপক্ষরা আমাদেরকে মোকাবেলার জন্য কত না আয়োজন করে থাকে, কত না কঠোরতা কিন্তু সীসাঢালা প্রাচীরের মতো যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক তা কি ছেদ করা সম্ভব? আজকের বিজ্ঞান বলছে বোমা মেরে সব বিচ্ছেদ করা যায় কিন্তু সীসাঢালা প্রাচীরকে টলানো যায় না। এই আন্দোলনের জন্য এমন এক অপরিহার্য হৃদয়গ্রাহী ভ্রাতৃত্বের বর্ণনা মেলে প্রখ্যাত লেখক জনাব খুররম মুরাদের “ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক” বইতে। তিনি লিখেছেনÑ ‘আল্লাহতায়ালা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ককে বিবৃত করার জন্যে আল কুরআনে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত অথচ মনোজ্ঞ বর্ণনাভঙ্গি ব্যবহার করেছেন- “মু’মিনরো তো পরস্পরের ভাই।” (সূরা হুজরাত : ১০) এটি তিনটি শব্দ বিশিষ্ট একটি ছোট্ট বাক্যাংশ মাত্র। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি তার আদর্শিক মর্যাদা এবং ইসলামী আন্দোলনরে জন্যে তার গুরুত্ব ও গভীরতা প্রকাশ করার নিমিত্তে এ বাক্যাংশটুকু যথেষ্ট। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী আন্দোলনে লোকদের সম্পর্ক হচ্ছে একটি আদর্শিক সম্পর্ক। এমনি সম্পর্ককেই বলা হয় উখুয়্যাত বা ভ্রাতৃত্ব। বস্তুত একটি আদর্শিক সম্পর্কের ভেতের ওপর ইসলাম যে স্থিতিশীলতা, প্রশস্ততা ও আবেগের সঞ্চার করে তার প্রতিধ্বনি করার জন্যে ভ্রাতৃত্বের (উখুয়্যাত) চেয়ে উত্তম শব্দ আর কী হতে পারে? যারা সব রং বর্জন করে শুধু আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হয়, তামাম আনুগত্য পরিহার করে কেবল আল্লাহর আনুগত্য কবুল করে, সমস্ত বাতিল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু সত্যের সাথে যুক্ত হয় এবং আল্লাহরই জন্য একনষ্ঠি ও একমুখী হয়, তারাও যদি পরস্পরে সম্পৃক্ত ও সংশ্লিষ্ট না হয় এবং প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন না করে তবে আর কে করবে? উদ্দেশ্যের একমুখিতার চাইতে আর কি বড় শক্তি রয়েছে যা মানুষকে মানুষরে সাথে যুক্ত করতে পারে? এ একমুখিতার এবং সত্য পথের প্রতিটি মঞ্জিলই এ সম্পর্ককে এক জীবন্ত সত্যে পরিবর্তিত করতে থাকে। যে ব্যক্তি সত্যের খাতিরে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়, সে স্বভাবতই এ পথের প্রতিটি পথিকের ভালোবাসা, সহানুভূতি, সান্ত্বনা ও পোষকতার মুখাপেক্ষী এবং প্রয়োজনশীল হয়ে থাকে। সুতরাং এ পথে এসে এ নেয়ামতটুকুও যদি সে লাভ না করে তো বড় অভাবকে আর কিছুতেই পূর্ণ করা সম্ভব নয়। একটি সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী জামায়াত ছাড়া কোনো বিপ্লবই সংঘটিত হতে পারে না। আর সংহত ও শক্তিশালী জামায়াত ঠিক তখনই জন্ম লাভ করে যখন তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিগণ পরস্পরে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। এই উদ্দেশ্যে যে, এমনি সংঘবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত, যাতে স্বভাবতই এক সীসার প্রাচীরে' পরিণত হবে তার ভেতরে কোনো বিভেদ বা অনৈক্য পথ খুঁজে পাবে না। বস্তুত এমনি সুসংহত প্রচেষ্টাই সাফল্যের নিশ্চয়তা দিতে পারে। আল্লাহতায়ালা সূরায়ে আলে ইমরানে একটি নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালকদের এমন সম্পর্ক গড়ে তোলারই নির্দেশ দিয়েছেনেÑ “হে ঈমানদারগণ! ধৈর্যধারণ কর এবং মুকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পারো।” (আলে ইমরান : ২০০) এখানে দুই ভাই যেমন পরস্পরের জন্য নিজেদের সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয়, পরস্পর পরস্পরের শুভাকাক্সক্ষী হয়, সাহায্য ও সহযোগিতায় নিয়োজিত থাকে এবং একে অপরের সহায়ক ও পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়; যেভাবে এক তীব্র প্রেমের আবেগে ও প্রাণ-চেতনার সঞ্চার করে, সত্য পথের পথিকদের (যারা দ্বীন ইসলামের খাতিরে নিজেদের গোটা জীবনকে নিয়োজিত করে দেয়) মধ্যে ঠিক তেমনি সম্পর্কই গড়ে ওঠে। মোটকথা ইসলামী বিপ্লবের প্রতি যে যতোটা গভীরভাবে অনুরক্ত হবে, আপন সাথী ভাইয়ের সঙ্গে ততোটা গভীর সম্পর্কই সে গড়ে তুলবে। তেমনি এ উদ্দশ্যেটা যার কাছে যতোটা প্রিয় হবে, তার কাছে এ সম্পর্কও ততোটা প্রিয় হবে। ভ্রাতৃত্বের এ সম্পর্কের জন্যইে নবী করিম (সা) (আল্লাহর জন্য ভালোবাসা)-এর মত পবিত্র, ব্যাপক ও মনোরম পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। ‘ভালোবাসা’ নিজেই এক বিরাট চিত্তাকর্ষক ও শ্রুতিমধুর পরিভাষা। তাই নবী করিম (সা) বলেছেন, ‘‘তোমরা ততোক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হবে না, যতোক্ষণ না পরস্পরকে ভালোবাসবে।” (মুসলিম : আবু হুরায়রা) আর যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা নিম্নিরূপ সংবাদ দিয়েছেন তাদের জন্য তো কতোই মর্যাদার ব্যাপার হবে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের এই পারস্পরিক প্রেম-ভালোবাসা তথা প্রীতির সম্পর্ককেই আল্লাহতায়ালা তাঁর শ্রেষ্ঠতম নেয়ামতের মধ্যে গণ্য করেছেন। আর যে ইসলামী জামায়াত এই অমূল্য সম্পদ লাভ করবে তার প্রতি বর্ষিত হবে তার বিশেষ করুণা-আশীর্বাদ। কেননা এ সম্পর্কই হচ্ছে ইসলামী জামায়াতের প্রাণবন্তু এবং তার সজীবতার লক্ষণ। এ সম্পর্ক তার লোকদের জন্য এমন এক পরিবেশ রচনা করে যাতে তারা একে অপরের পৃষ্ঠপোষক হয়ে সত্য পথের মঞ্জলি নির্ধারণ করতে থাকে পরস্পর পরস্পরকে পুণ্যের পথে চালিত করার জন্য হামেশা সচেষ্ট থাকে। প্রথম যুগের ইসলামী জামায়াতকে আল্লাহতায়ালা পারস্পরিক ঐক্য, ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের যে বিরাট সম্পদ দান করেছিলেন, সূরা আলে ইমরানে তার উল্লেখ করে তাকে তাঁর বিশেষ নিয়ামত বলে অভিহিত করা হয়ছেÑ “আর আল্লাহর সে নিয়ামতকে স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর দুশমন ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়কে জুড়ে দিলেন আর তোমরা তাঁর মেহেরবানির ফলে ভাই ভাই হয়ে গেলে।”  (আল ইমরান : ১০৩) আজকের পৃথিবী কি এমন সম্পর্ক কল্পনা করতে পারে? কিন্তু আজকের বিপর্যস্ত আধুনিক জাহিলিয়াতের মাঝেও শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরাই সকল জুলুম-নির্যাতনের মাঝেও সেই মধুর সম্পর্ক আর জান্নাতি পরিবেশের ছবি অঙ্কন করতে পারে। ২৬ সেলের ১৭ নম্বর কক্ষে আমার কারা সংসার জীবন পুরোদমে শুরু। প্রথম রাতে পাশের রুমের ভাইদের আন্তরিত সহযোগিতা আর প্রহরী বিডিআরের বিচারাধীন ভাই ভালোবাসায় আমাকে মুগ্ধ করেছেন। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম যাদের সাথে কোনো দিন পরিচয় নেই, তারা আমার জন্য এতো সহযোগিতা করছেন! মনে পড়ে যায় বিখ্যাত সেই গানের কলিÑ “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...” যেমন সেলে থাকার প্রথম রাতে আমি চিন্তা করছিলাম রাতে তো ঘুমাতে পারবো না। কারণ আদালত থেকে এক শার্ট এক কাপড়ে আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসন যথারীতি আমাকে কম্বল, থালা-বাটি এই সব দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করল। উল্লেখ্য, সেই কম্বল এতই নোংরা যে, খালি শরীর এগুলোতে লাগলে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। কারণ জেলখানার বয়স যত কম্বলের বয়স তার থেকে কম নয়। প্রচণ্ড গরম। পাখাটি অতি ধীরগতিতে ঘুরছে। বাথরুমের ট্যাপের পানি দিয়েই এখানে সব কাজ সারতে হয়। টয়লেট, খাওয়াÑ সবই এক জায়গায়। তার ওপর পানির ট্যাপটি নষ্ট। গরম না হয় সহ্য করলাম, কিন্তু স্যাঁতসেতে ওই খালি কম্বলের ওপর ঘুমাবো কিভাবে! ভাবতে ভাবতে পাশের রুমের হাফিজ আহমদ, হারুন ভাই এসে তাদের সাবান, বেডশিট, গ্লাস ইত্যাদি সব দিয়ে আমার একাকী সংসারকে সমৃদ্ধ করলেন। কী আশ্চর্য! যা একটু কল্পনা করি মাবুদ সবই সাথে সাথে পূরণ করে দিচ্ছেন। পাশের রুমের আহমদ ভাই একটি কুরআন শরীফ (অর্থসহ) এনে দিলেন পড়ার জন্য। আশরাফ আলী থানভীর লেখা কয়েকটি বইও আমার জন্য নিয়ে এলেন। শরীর দুর্বল, ঘুমাতে পারিনি প্রায় ৩৪ ঘণ্টার ওপরে। তাই এই সময় একপ্রকার নির্জীব হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতে যথারীতি আল্লাহর দরবারে ধরনা দিয়ে নামাজ আদায় করে আবার ঘুমালাম। সকালে উঠে সবার সাথে আলাপ-পরিচয়ের পালা। তার মধ্যে পাশেই থাকেন যুবলীগের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির নেতা আলমগীর ভাই। আমার সাথে পরিচয় হওয়ার পরই একটি Dictionary এনে আমাকে দিলেন। বললেন, ‘রেজাউল ভাই, এটা আপনাদের নেতা মিজান ভাইয়ের। তিনি এখানেই ছিলেন। যাওয়ার সময় আমাকে দিয়ে গেছেন পড়ার জন্য।’ আমি অবশ্য মনে মনে একটি Dictionary প্রয়োজন fill করছিলাম। আল্লাহপাক তাও পূরণ করে দিলেন।    (চলবে) লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সহকারী সম্পাদক সাপ্তাহিক সোনার বাংলা [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির