post

ঘরে ঘরে হতে হবে পাঠাগার হাতে হাতে পৌঁছে দিতে হবে বই

সালাহউদ্দিন আইউবী

০২ এপ্রিল ২০১৮
মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ এবং অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে জ্ঞানের দিক থেকে। যে জ্ঞানের সূচনা হয়ে থাকে পড়ার মাধ্যমে। যে কারণে পৃথিবীতে আগত যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলের জীবনগঠনের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রথম বাণী ছিল ‘পড়’। পৃথিবীর যেসব মহামানব আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের কর্মের শুরু সেই পড়া থেকেই। অসভ্য, বর্বর জাতিগুলোর সভ্যতার দিশা দেয়া হয়েছে যুগে যুগে পড়ার নতুন নতুন কৌশলের মাধ্যমে। পড়া মানুষকে এক উচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করে। পরিবার সমাজ রাষ্ট্র সবখানে পড়ুয়া শ্রেণীর কদর সম্পূর্ণই আলাদা। দিকভ্রান্ত জাতির পথের দিশা হয়ে বারবার সুন্দর সমাধান দিয়েছে পড়–য়া জাতি। বই পড়তে পারাটা একটা ম্যাজিকের মতো। হাজার বছরের সমস্ত মানুষের কথা ইচ্ছে করলেই জানা যাচ্ছে। ইচ্ছে হলেই বেড়ানো যাচ্ছে মিসর, বেবিলন মেসোপটেমিয়া, ভারতবর্ষের সেই প্রাচীন সভ্যতায়। পড়ার অভ্যাস করতে পারাটা একটা বিশাল সৌভাগ্যের ব্যাপার। তারা খুবই দুর্ভাগা যাদের পড়তে শেখার সুযোগ হয়নি। তাদের চেয়েও দুর্ভাগ্য তাদের যারা পড়তে শিখেও পড়ল না। মানুষ সাধারণত খুব নিকট অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পারে না। জৈবিক ধারণাতেই তাদের জীবন চালিত। অতীত বলতে তাদের থাকে কিছু স্বার্থগত স্মৃতি আর ভবিষ্যৎ বলতে কিছু সঞ্চয় পরিকল্পনা। খাওয়া খাদ্য বাসস্থানের স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প কিছু ইতর শ্রেণীর প্রাণীর থাকে। জ্ঞানের শুরু থেকে মানুষ খুঁজে গেছে মানুষের সাথে পশুর পার্থক্যটা আসলে কত দূর? সেই পার্থক্যের সত্যিকারের উপলব্ধির জন্য আল্লাহর বাণী পাঠালেন পড়ো তোমার প্রভুর নামে। জানিয়ে দিলেন মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। তাই সক্রেটিস বলেছিলেন তুমি নিজেকে জানো। বই মানুষের চিন্তার খোরাক। বই পড়ে মানুষ চিন্তার জগতে বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারে। বই না পড়ে যে মানুষ নিগূঢ়তম চিন্তার জগতে ঢুকতে পারে না, তা নয়। কিন্তু ওটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যথোপযুক্ত লোক খুঁজে নিয়ে তার সাথে দীর্ঘ আলাপ চালানো হতে পারে এক ধরনের চিন্তার খোরাক। বই হচ্ছে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে সহজতম পদ্ধতি হাজার বছরের মানুষের চিন্তার ইতিহাসকে সংযুক্ত করার। হয়ত ভবিষ্যতে এর চেয়ে সহজ কোনো উপায় বের হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব সুন্দর করে বলেছেন, মহাসমুদ্রের শত বছরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরবতা শব্দের সহিত এই লাইব্রেরির তুলনা হইত। এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবতার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে। ইহারা সহসা যদি বিদ্রোহী হইয়া ওঠে, নিস্তব্ধতা ভাঙিয়া ফেলে, অক্ষরের বেড়া দগ্ধ করিয়া একেবারে বাহির হইয়া আসে! হিমালয় মাথার ওপরের কঠিন বরফের মধ্যে যেমন কত বন্যা বাঁধ আছে, তেমনি এই লাইব্রেরির মধ্যে মানবহৃদয়ের বন্যাকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে! জীবন বদলে দিতে পারেন আপনি যদি প্রতিদিন ৩০-৬০ মিনিট স্টাডি করেন তবে প্রতি সপ্তাহে আপনার একটি বই সম্পন্ন হয়। প্রতি সপ্তাহে একটি বই সম্পন্ন হলে প্রতি বছর সম্পন্ন হয় ৫০টি বই। আর আপনি যদি সিলেকটিভ ফিল্ডে ৫০টি বই সম্পন্ন করেন তবে প্র্যাকটিকেল ফিল্ডে একটি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জিত হয়। কারণ মেজর ইউনিভার্সিটিতে একটি পিএইচডি প্রোগ্রামে সিলেবাসে ৪০ থেকে ৫০টি বই পড়ানো হয়ে থাকে। যদি এভাবে বছরে ৫০টি বই স্টাডি ধারা অব্যাহত রাখেন তবে পরবর্তী ১০ বছরে আপনার পঠিত বইয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০০তে। যেখানে বিশ্বের মানুষ গড়ে মাত্র একটি বইয়ের কম স্টাডি করেন সেখানে সিলেকটিভ ফিল্ডে আপনি যদি ৫০০ বই স্টাডি করেন তবে আপনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের কতটা উচ্চমার্গে উত্তীর্ণ হবেন, ভাবতে পারেন? সত্যি বলতে আপনি যদি প্রতিদিন ভোর বেলায় ৩০-৬০ মিনিট স্টাডি করার অভ্যাস করতে পারেন তবে এটি আগামী দশ বছরের মধ্যে আপনাকে আপনার ফিল্ডের smart reader, most knowledgeable, most expert, highest paid successful person এ উন্নীত করবে আপনি পৃথিবীর এমন কোন successful person পাবেন না যারা daily study habit এর মাধ্যমে নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনেননি। আমার পরিচিত বইপড়–য়া একজন ব্যক্তিত্ব হলেন অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলের নির্বাচিত সাবেক ভিপি, একসময়ের রাজপথ কাঁপানো তুখোড় ছাত্রনেতা। যিনি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই সরকারি অর্থায়নে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানাবিধ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তাকে আমি তার ব্যক্তিজীবনের অবিস্মরণীয় এই যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম- তিনি শুধু বলেছিলেন ‘আমি কখনো দিনের বেলা ঘুমাই না। সবাই যখন ঘুমাতো আমি তখন পড়ালেখা করতাম। ফজরের নামাজের পর সবসময় কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পড়ালেখার অভ্যাস আমার ছিল ; এখনো যেটা আমি অব্যাহত রেখেছি।’ ব্যবহারিক টিপস ১.আপনার study field সিলেক্ট করুন ও সিলেবাস তৈরি করুন। ২.টিভি, রেডিও, সোশ্যাল মিডিয়া ও সকল প্রকার ইলেকট্রিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার একটি নিয়মতান্ত্রিকতার আওতায় নিয়ে আসুন এবং সময় অপচয় রোধ করুন। ৩.দিনের সকল কাজের লিস্ট করুন এবং সময় ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী শিডিউল তৈরি করুন। ৪.প্রতিদিন ফজরের আগে ঘুম থেকে জাগুন। ৫.পড়ালেখার মাধ্যমে দ্বীনের কাজ শুরু করুন এবং আপনার মনে ইনভেস্ট করুন। আগামীকাল থেকে তো অনেক কিছুই শুরু করলাম, এবার না হয় আজ থেকে শুরু করি, কেমন? বই পড়ার কৌশল সবার পড়ার ধরন এক রকম নয়। একেকজনের পড়ার ধরন একেক রকম। অভিজ্ঞতার আলোকে শেয়ার করছি : নতুন কোনো বই পেলেই বই ও লেখকের নাম এবং কতটা ভালো করে দেখি। লেখক পরিচিতি থাকলে একনজর দেখা উচিত। অনেক সময় মূল মলাট উল্টালেই লেখকের কথা চোখে পড়ে । এটা অবশ্যই পড়তে হবে। তাতে বইয়ের মূল বক্তব্যটা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। এরপর পড়া শুরু হয় সূচিপত্র থেকেই। অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোন অধ্যায় পেলে সেখানেই কৌতূহলী মন নিয়ে আগে ঢু মারি। তা না হলে সকল অধ্যায় সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে প্রথম অধ্যায় থেকেই করতে থাকি। হাতের কাছে লাল কালির কলম থাকতেই হবে। লাল কালির কলম ছাড়া মার্কিং করা কঠিন। সচরাচর লাল, নীল এবং সবুজ তিনটি কলম এবং অনেক ক্ষেত্রে text liner অথবা marker pen ব্যবহার করা যায়। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলোতে বা কোন বিখ্যাত ব্যক্তি বা মনীষীর উক্তি পেলে লাল কালি দিয়ে underline বা text liner দিয়ে mark করে রাখি। তবে অপেক্ষা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলিতে সবুজ, কখনো নীল কালি ব্যবহার করি; যাতে বিষয়ের ভিন্নতা সহজেই চোখে পড়ে। এতে করে পরবর্তীতে এই বিষয়টা খুঁজে বের করতে অনেক সহজ হয়। কোন নতুন বই ও লেখকের নাম উল্লেখ থাকলে লাল কালি দিয়ে গোল চিহ্ন দিই। ইংরেজি বা অন্যান্য বিদেশি কোনো শব্দ পেলে গোল চিহ্ন দিয়ে ডিকশনারি থেকে অর্থ বের করে পাশের ফাঁকা জায়গায় অ্যারো চিহ্ন দিয়ে রাখি। নতুন কোন পারিভাষিক শব্দ তার এ টু জেড অভিধান ঘেঁটে বের করার চেষ্টা করি বা পড়ে ফেলি (ব্যস্ততা না থাকলে)! গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর পাশে তারকা চিহ্ন ব্যবহার করি। খুব বেশি হলে তিন তারকা অপেক্ষাকৃত কম হলে দু’টি বা তার চেয়েও কম হলে একটি তারকা চিহ্ন ব্যবহার করি। মজার হাসির কোন প্রসঙ্গ পেলে হাসির emoji আটকানোর চেষ্টা করি অথবা হা-হা-হা লিখে রাখি। বিস্ময়কর অবাস্তব ঘটনা বা প্রসঙ্গ এলে!!! দিই। ভালোলাগা লাইনটুকু তৎক্ষণাৎ আত্মস্থ করার চেষ্টা করি। কোন বিষয়ে লেখকের মতের সাথে অমিল হলে পরে নিজস্ব মতামত লিখে রাখি কালো কালিতে। অত্যধিক ভালো লাগলে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাসূচক কথাবার্তাও লেখার চেষ্টা করি। আর একটি কথা বই পড়া যখন শুরু করি তখন পৃষ্ঠার উপরে নিজের স্বাক্ষর বানানসহ বাংলা ইংরেজি ও হিজরি তারিখ- সন - বারের নাম এবং সময় লিখে রাখি। সম্পূর্ণ বই তাড়াহুড়ো করে শেষ করার জন্য কখনোই খুব বেশি তাড়া অনুভব করি না বলেই স্বাভাবিক গতিতে ধীর-স্থিরভাবে তা পড়ার চেষ্টা করি। তবে কখনো কখনো বই সাইজে ছোট এবং অত্যধিক ভালোলাগার হলে এক বৈঠকে শেষ হয়ে যায়। বই পড়ার সময় আরেকটি কাজ খুবই জরুরি তাহলো নোট রাখা। অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি হাতের কাছে রাখার নোটবুকে তৎক্ষণাৎ টুকে রাখা পৃষ্ঠা নম্বরসহ। বইয়ের রিভিউ লেখা বা অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে নোটবুকে চোখ বুলালেই যথেষ্ট। যদিও এটা আমার সবসময় করা হয়ে ওঠে না। তবে চেষ্টা করছি নিয়মিত করার। বই পড়া শেষ হলে শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর দিন-তারিখ সময়ের উল্লেখপূর্বক নিজস্ব মতামত সংক্ষেপে লিখে ফেলি। আর একটা কথা, সচরাচর ধার করে বই পড়ি না । বই ধার করা ও ধার দেয়া যদিও পছন্দের কাজ। আমার সংগ্রহে বেশকিছু গ্রন্থের পিডিএফ ফাইল রয়েছে। ল্যাপটপ বা মোবাইলের মাধ্যমে মাঝে – মধ্যে তা থেকে পছন্দসই বই পড়ে থাকি । তবে সত্য বলতে- হার্ডকপি পড়ার মজাই অন্যরকম। নতুন বা পুরাতন বইয়ের গন্ধে অন্যরকম এক আকর্ষণ বোধ করি যা আমার কাছে খুবই ভালো লাগার। তবে কখনও দীর্ঘ সময় বা স্বল্প সময়ে সফরে থাকলে সেখানে হার্ডকপি বহন করা সম্ভব না হলে pdf file থাকলেও পড়ার ক্ষুধা মেটানো যায়! সময়টাও বেশ সুন্দর কাটে। সে হিসাবে পছন্দের কয়েকটি বইয়ের পিডিএফ ফাইল সব সময় মোবাইলে রাখি। টুকটাক পড়িও! সর্বোপরি, বন্ধুদের আড্ডায় বা কারো সাথে গল্পের সময় বইয়ের অনুরূপ প্রসঙ্গ এলে পরে ওইসব বইয়ের শিক্ষণীয় বিষয় বা লব্ধ জ্ঞান তাদের সাথে নিজের মতো করে শেয়ার করি এবং তাদের কেউ বইটি পড়তে উৎসাহিত করি। ‘বাঙালির বই পড়ার আগ্রহ প্রবল কিন্তু বই কেনার বেলায় এসে অবলা।’- সৈয়দ মুজতবা আলী। কিন্তু বর্তমানে, আমাদের বই কেনার বেলায় যেমন অবহেলা! facebook আসার পরে অনেক ক্ষেত্রে facebook আসক্তির কারণে বই পড়ার বেলায়ও তেমনি অবহেলা। আসুন! নিজে বই পড়ি, সুন্দর জীবন গড়ি এবং অন্যদেরকেও বই পড়ায় উৎসাহিত করি। শিশুদেরকেও বই পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত গবেষণায় দেখা গেছে যেসব বাচ্চাকে ছোটবেলায় বই পড়ে শুনানো হয় তারা তাদের counterpart বা অন্য বাচ্চারা যাদেরকে বই পড়ে শুনানো হয় না, তাদের চেয়ে ভালো পাঠক হয়। কারণ ছোটবেলা থেকে তারা বই পড়ার সাথে পরিচিত হয়। যাদের বাসায় ছোটখাটো লাইব্রেরি থাকে তাদেরও ভালো পাঠক হিসেবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেবল বই পড়া যথেষ্ট নয়, কিশোরদেরকে বইয়ের আলোচনায় যুক্ত করতে হবে। সে একটা বই পড়ে কি বুঝতে পারল, কি নতুন তথ্য শিখলো, কোন জিনিসটার সাথে সে একমত, কোন জিনিসটার সাথে একমত নয় তাদেরকে এই ধরনের প্রশ্ন করতে হবে। অবশ্যই প্রথম দিনেই কোন শিশু এই পদ্ধতিতে অসাধারণ কিছু করে ফেলতে হয়ত পারবে না, কিন্তু ২-১ বছরের মধ্যেই তারা ভালো পাঠক হয়ে উঠবে, চিন্তা করতে শিখবে। নিজের মতো করে অ্যানালাইসিস করবে। বেশিরভাগ সময়েই আমরা বাচ্চাদেরকে এই প্রশ্নগুলি করি না। আমরা নিজেরাও এই পদ্ধতির সাথে পরিচিত নই। কিন্তু একবার এই পদ্ধতির সাথে পরিচিত হলে এটা কি সূর্যের ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য অনেক ফলপ্রসূ কিছু হবে। শিশু-কিশোরদেরকে যাচ্ছেতাই শিখতে দেয়া যাবে না। তাদেরকে বুঝাতে হবে যে কেবল বইটি পড়লেই কোনো জিনিস সত্য হয়ে যায় না। যেকোনো বিষয়কে যুক্তি বুদ্ধি এবং জ্ঞান দিয়ে যাচাই বাছাই করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। যেকোনো দাবিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভালো reference লাগে এটাও তাদেরকে ছোটবেলা থেকে শেখানো উচিত। সূত্র মতে, যেসব শিশু-কিশোর কোন কিছু শেখার পরে অন্যদের সাথে শেয়ার করছে, তার বন্ধুদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, যে কোন জিনিসের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছে তারা অনেক ভালো শিখছে, তাদের analytical skill বাড়ছে। যারা আলোচনা করে শিখছে, অন্যের মত এবং চিন্তার সাথে পরিচিত হচ্ছে, কয়েক বছরের ব্যবধানে যারা কেবল নিজে নিজে পড়ছে তাদের তুলনায় অনেক গভীর জ্ঞান নিয়ে বেড়ে উঠছে। শিশু-কিশোররা বই পড়ার পরে তাদেরকে এই বইয়ের ওপর নিজের ভাষায় একটা summary লিখতে বলা যেতে পারে, ৫ মিনিট এই বইয়ের ওপর কথা বলতে দেয়া যেতে পারে। এটাও তাদের বুঝ শক্তিকে আরও শাণিত করবে। তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে তাদের নিজের মতকে ডিফেন্ড করার কৌশল শেখাতে হবে। এই জিনিসগুলো রাতে খাবার টেবিলে গল্প বা আড্ডার সময় করা যেতে পারে। কোন একটা ছুটির দিনে পরিবারের সবাই নিজের পছন্দমত বই পড়বেন এবং পারস্পরিক knowledge sharing session করবে এরকম কিছু একটা করা যেতে পারে। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, তাদেরকে ধীরে ধীরে জ্ঞানমূলক বই এবং নিজের লেভেলের চেয়েও কিছুটা কঠিন বইয়ের দিকে নিয়ে যেতে হবে। অবশ্যই শুরু হতে হবে আনন্দের কিছু দিয়ে, সহজ কিছু দিয়ে। তাদেরকে feedback দিতে হবে। কি ভালো করেছি কি আরো ভালো করা যেত এ বিষয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে। তাদেরকে একটা কাজ আরও সুন্দর করে করার, শেখার সুযোগ দিতে হবে। এই বিশ্বাস তৈরি করতে হবে যে- হ্যাঁ তুমি চেষ্টা করছো এবং উন্নতি লাভ করছো। ভালো কিছু করা যে সহজ না এবং উন্নতি একটা নিয়মিত পদ্ধতি- এ বিষয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। সবশেষে তাদের সাথে অন্তরঙ্গতার কোনো বিকল্প নেই। আপনি কয়েকটা মজার বই দিয়ে তাদের সাথে আপনার সম্পর্কের সূচনা করতে পারেন। এই বই হয়তো তার জীবন বদলে দেবে একজন কিশোর হয়ে উঠবে আগামীর ভালো পাঠক, লেখক কিংবা অ্যানালিস্ট। লেখালেখির পূর্বশর্ত গভীর অধ্যয়ন পড়ার মাধ্যমে পুঞ্জীভূত জ্ঞানের সমষ্টি একসময় লেখনীশক্তি দিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলাও প্রথমে মানুষকে পড়তে বলেছেন এর পরেই কলমের ব্যবহার করতে বলেছেন অর্থাৎ লেখার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। শুধুমাত্র পড়ার জন্য পড়ার চেয়ে অনেক উত্তম হলো লেখার জন্য পড়া। লিখতে না পারলেও অন্তত কোন একটা বিষয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা থাকা এবং সে বিষয়ে নলেজ শেয়ার করা এবং সম্ভব হলে অবশ্যই লেখা উচিত। আর লেখালেখি করতে হলে গল্পের বইয়ের পাশাপাশি জ্ঞানমূলক বই পড়া খুবই দরকার। ধরুন আপনি হুমায়ূন আহমেদের বই পড়তে ভালোবাসেন। বিনোদনের জন্যই উনার বই খুবই সুপাঠ্য কিন্তু গেম তৈরিতে অংশগ্রহণের জন্য খুব বেশি উপযোগী নয়। পশ্চিমা সভ্যতার উন্নতির পেছনে একটা বড় নিয়ামক হলো গেম তৈরি। তারা প্রতিদিন নতুন নতুন ধারণা তৈরি করছে। এটা তখনই সম্ভব যখন আপনি জ্ঞানমূলক বই পড়বেন। পৃথিবীর সেরা গ্রন্থ দিয়ে পাঠাভ্যাসের উন্মোচন হোক যুগে যুগে বিশ্ব ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে কিছু গ্রন্থ। আর যারা পাল্টাতে চেয়েছে তারাও সবার আগে চেষ্টা করেছে সেই গ্রন্থগুলোর আদি-অন্ত পড়ে ফেলার। মোঙ্গলরা আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে আক্রমণ চালিয়ে বাগদাদের কয়েক লক্ষ লোককে হত্যা করেছিল। পুরো বাগদাদকে শ্মশান বানিয়ে দিয়েছিল। তারা মুসলিম উম্মাহ সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা করেছিল তা হলো তারা কয়েক লক্ষ বই সংবলিত ‘দারুল হিকমাহ’ নামের বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিটা ধ্বংস করেছিল। মানবসভ্যতা মহামূল্যবান বইগুলো এক এক করে ফোরাত নদীতে ফেলে দিয়েছিল। ফুরাতের স্রোত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বইয়ের স্তূপের কারণে! দীর্ঘদিন ফুরাতের সেই পানি বাগদাদ বাঁশি ব্যবহার করতে পারেন কারণ, তা ঐসব বইয়ের কালি আর মন্ডতে বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল! মঙ্গলবার সেই কয়েক লক্ষ বই এ জন্যই ধ্বংস করেছিল যে, তারা শুনেছিল, তখনকার দিনের দুই বিশ্ব পরাশক্তি, superpower, রোমান ও পারস্য সভ্যতার ধ্বংস করতে পেরেছিল যে যাযাবর, পশ্চাৎপদ, বর্বর আরবরা, তাদের মূল শক্তি নিহিত ছিল এই বইয়ের মধ্যেই। এই কারণেই তাদের সমস্ত রাগ ছিল বইয়ের ওপরে! বস্তুত তাদের বিশ্বাস আর ধারণা অমূলক ছিল না। মুসলমানরা একটামাত্র বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপদটা সাধন করতে পেরেছিল। সেই বই তথা আরবি ভাষায় সেই কিতাবটা হলো ‘আল কুরআন’। মহাবিশ্ব al-quran! এটা এমন একটা বই যে, এর মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ সংশয় নেই, থাকার উপায় নেই। এই একটিমাত্র বই বর্বর অশিক্ষিত ও পশ্চাৎপদ আরব জাতিকে মহা ক্ষমতাধর করে তুলেছিল। এতটা ক্ষমতাধর যে, তারা ছয় হাজার বছরের ঐশ্বর্য ও শক্তিসমৃদ্ধ পারস্য সাম্রাজ্যকে, সাড়ে চার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী মহাশক্তিধর রোমান সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে তাদের ওপরে নিজেদের কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সঙ্গত কারণেই মোঙ্গল তাতাররা ভীত ছিল তাদের ক্ষমতা, নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে, তাই তারা মুসলিম সাম্রাজ্য ধ্বংস করার পাশাপাশি তাদের সমাজ থেকে সব বই ধ্বংস করেছিল। ইতিহাস কিন্তু সেই মুঘল সেই বর্বর তাতারদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছে। বাগদাদ আক্রমণ ও সেখানে তাদের দ্বারা পরিচালিত পৈশাচিক ধ্বংসযজ্ঞের মাত্র ৪০ বছরের মধ্যেই তাতাররা, মোগলরা নিজেদের অজান্তেই ইসলামের কাছে তথা বিস্ময়কর গ্রন্থ, আল কুরআনের কাছে নিজেদের সমর্পণ করে দেয়। মোগলরা, তাতাররা মুসলমান হয়ে যায়! এর কারণটা কী ছিল? একমাত্র দৃশ্যমান কারণ এটা ছিল যে, তারা প্রায় ১১ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা ও তাদের সমাজ তাদের সমস্ত বইপত্র ধ্বংস করার পরেই যে গুটিকতক মুসলমানকে বাঁচিয়ে রেখেছিল, তার বেশিরভাগই তাদের হাতে বন্দিনী নারী ও মুসলিম নারী। এই নারীদের প্রায় সবাই ছিলেন শিক্ষিতা। তারা প্রত্যেকেই নিজের মন-মগজে শত শত বই এবং মহা বিস্ময়কর গ্রন্থ আল কুরআনের শিক্ষাকে ধারণ করে রেখেছিলেন। তাতাররা বই ধ্বংস করেছিল বাগদাদের ১১ লক্ষ বই পাঠককে হত্যা করেছিল বটে কিন্তু তারপরেও যে একটি বই পাঠক পাঠিকা কি নিজেদের বিকৃত লালসা মেটানোর জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিল, সেই মাত্র গুটিকতক বই পাঠিকার হাতে মাত্র চল্লিশ বছরের মধ্যে তারা নিজেদের লালিত ঐতিহ্য সাম্রাজ্য সভ্যতাকে বিসর্জন দেয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুসলমান হয়ে যায়! কি অসাধারণ ক্ষমতা সেই বইয়ের! ভাবতে গেলেও বিস্ময়ে বিমূঢ় হতে হয়। আজ মুসলমান তরুণ যুবকদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে কম। কুরআন তেলাওয়াত এর কিছুটা অভ্যাস থাকলেও যথাযথভাবেই মহাগ্রন্থ অধ্যয়নের কোন ইচ্ছাই আজ যুবসমাজের নেই। কী লজ্জা! কী নির্মম পরিণতি! নিদারুণ মানসিক বিকৃতি!! মুসলমান যুবক তরুণদের শোচনীয় মানসিক বিপর্যয় নিয়ে ভাবতে গেলে ক্রোধে-আক্রোশে, অনুতাপে আর অনুশোচনায় চেতনা বিবশ হয়ে আসে যেন, চোখ ফেটে অশ্রু বেরিয়ে আসে, চোখ ভিজে যায়! নিজেদের বিপর্যয় অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে, করাতে হলে সকল কিছুর আগে আশ্রয় নিতে হবে সেই বইয়ের কাছে, ডুবতে হবে বইয়ের সাগরে, এর পাতায় পাতায়, বিচরণ করে বেড়াতে হবে, নিজেদের সজ্জিত করতে হবে নতুন করে। তাই আমার প্রতিদিনের সকালটা শুরু হোক পৃথিবীর সেরা গ্রন্থ আল কুরআন অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে। প্রিয় বন্ধুরা যুগে যুগে জ্ঞানচর্চাকারীরাই মসনদে সমাসীন ছিলেন। আজ মুসলমানরা বসনিয়া থেকে আরাকান পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে নির্যাতিত, অত্যাচারিত, ক্ষমতাচ্যুত, বিচ্যুত। কিন্তু এই মুসলমানরাই এক সময় ছিল পৃথিবীর সেরা জাতি। সোনালি সেই ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল জ্ঞান চর্চার মাধ্যমেই। মুসলমানদের ঘরে ঘরে ছিল বই পড়ার অভ্যাস। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি উদ্যোক্তা ও পরিচালক ছিল মুসলমানরা। বাগদাদের দারুল হিকমা পরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঠাগারটি ছিল গ্রানাডায়। গ্রানাডার এই লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ। ঐ একই সময়ে ইউরোপ জুড়ে সবচেয়ে বড় যে পাঠাগারগুলো ছিল তা ছিল মূলত খ্রিস্টান পাদ্রীদের মঠে বা গির্জায়। আর ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের মতে, পুরো ইউরোপব্যাপী কোন গির্জা বা মঠে চার শতের বেশি বই ছিল না। (সূত্র : History of the reign of Ferdinand and Isabella the Catholic. William H prescott, 1837, pp.188) সে সময় মুসলিম জনমানসই এমন ছিল যে, ছেলে-বুড়ো নারী-পুরুষ কিংবা ধনী-গরিব সবাই বই-পাগল ছিলেন। প্রতিটি বাড়িতে ছিল গ্রন্থাগার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক লাইব্রেরি। কে কার চেয়ে বেশি বই জোগাড় করতে পারে, তা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলত সমাজবাসীর মধ্যে। একে অপরকে উপহার হিসেবে তারা বই দেয়া নেয়া করতেন। কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলেও উপহার হিসেবে বই নিয়ে যেতেন। ইতিহাসে দেখা যায় স্বয়ং খলিফা দ্বিতীয় আল-হাকাম উপহার হিসেবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন বই। তার নিজের যে ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল সেখানে বইয়ের সংখ্যা ছিল ষাট হাজার। আর পশ্চিমা ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের গবেষণায় এটা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, ১০ শতাব্দীতে ইউরোপের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি অবস্থান ও বইয়ের বাজার বসতো মুসলিম আন্দালুস তথা স্পেনে। সেই সমাজে কেবল পুরুষদের বেলাতেই যে এরকম মনোজাগতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ঘটে ছিল তাই নয়, নারীদের বেলাতেও এরকম একইভাবে উত্তরণ ঘটেছিল। তার প্রমাণ আমরা পাই খলিফা দ্বিতীয় আল-হাকামের আমলে এ ঘটনায়। রাজ পরিবারের এক যুবকের বিয়ে দেয়ার জন্য খলিফা উপযুক্ত পাত্রী খুঁজছিলেন। তিনি নিজে অত্যন্ত বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী, তেমনি তিনি রাজ পরিবারের জন্য সেরকমই একটি পাত্রী খুঁজছিলেন। তাই খলিফা এক বিস্ময়কর ঘোষণা জারি করলেন পাত্রীর খোঁজ চেয়ে। তিনি ঘোষণা করলেন; গ্রানাডা শহরে যে বাড়িতে বিবাহযোগ্য এমন পাত্রী রয়েছে, যে পাত্রী একদিকে পুরো আল কুরআন মুখস্থ করেছে অর্থাৎ কুরআনে হাফেজ এবং এর পাশাপাশি ইসলামের যে কোন একটি হাদিসশাস্ত্র যার মোটামুটি জানা আছে সেরকম পাত্রীর অভিভাবকরা যেন তাদের বাড়ির বারান্দা বা বেলকুনির বাইরে রাতের বেলায় প্রজ্জ্বোল্যমান বাতি টাঙিয়ে রাখেন। কেবল খলিফাকেই নয়, পৌর গ্রানাডাবাসীকে অবাক করে দিয়ে সে রাতে শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়ির বেলকুনিতেই প্রজ্জ্বোল্যমান বাতি টাঙানো হয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কেমন যুবতী মেয়ের উপস্থিতি ছিল, যে মেয়েটি একাধারে কুরআনে হাফেজ আবার অন্যদিকে হাদিস শাস্ত্রেও তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ নিয়ে যারা ভাবেন, মুসলমান হিসেবে মুসলিম বিশ্ব নিয়ে যারা ভাবেন, মুসলিমদের একটি স্থায়ী ও অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য যারা নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন। হতাশাগ্রস্ত মুসলিম যুবসমাজের আগামীর আলোর দিশারি হিসেবে যারা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও অপসংস্কৃতির মূলোৎপাটনের স্বপ্নধারা বিভোর। বিপ্লব বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক সোনালি সমাজের কারিগর হিসেবে যাদের গড়ে তোলা হচ্ছে, সেই মানুষগুলোকে স্বপ্ন দেখতে হবে এক নতুন বিপ্লবী জ্ঞানচর্চাময় সমাজের। ঘরে ঘরে গড়ে তুলতে হবে পাঠাগার, হাতে হাতে পৌঁছে দিতে হবে বই, নিজে অধ্যয়ন করে জানিয়ে দিতে হবে, আবার সেই সোনালি সমাজ আমরা গড়ব এই বই হাতে নিয়ে- পৃথিবীকে আলোকিত করব ইনশাআল্লাহ। লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক প্রেরণা

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির