post

ছাত্রলীগের বিষাক্ত ছোবলে দেশ

০৫ ডিসেম্বর ২০১৪

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান #

ChhatraLigঅর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত  সেনগুপ্ত বলেছেন, সিলেটে গিয়ে ছাত্রলীগকে ‘রাবিশ’ বলে আসুন। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গত ২১ নভেম্বর শুক্রবার তিনি এ পরামর্শ দিয়েছেন। গত শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরে চলমান রাজনীতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় সুরঞ্জিত মুহিতকে এ পরামর্শ দিয়ে এসব কথা বলেন। সুরঞ্জিত বলেন, বিগত সময়ে যখন ছাত্রলীগ সিলেট এমসি কলেজ পোড়ানোর ঘটনা ঘটায় তখন শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী দু’জনই গিয়েছিলেন। তখন শিক্ষামন্ত্রী সেখানে গিয়ে কেঁদেছিলেন। আমি এবারও শিক্ষামন্ত্রীকে বলবো, আর কিছু না পারেন একবার সেখানে গিয়ে কাঁদেন। আর অর্থমন্ত্রীকে বলবো, সেখানে গিয়ে ‘রাবিশ’ বলে আসেন। ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন ছাত্রলীগকে রক্ষা করতে হবে। গুটি কয়েক কর্মী ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে মøান করে দিচ্ছে। সময় চলে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগকে আবার নীতি ও আদর্শের পথে নিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কষ্ট করে যা কিছু অর্জন করছেন তা কয়েকজনের কারণে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করে সুরঞ্জিত বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলে আমাদেরকে বিচলিত হতে হয়। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সশস্ত্র সংঘর্ষের সময় সুমন চন্দ্র দাস নামের এক ছাত্র নিহত হয়েছে। দুই পক্ষই গুলি ও ককটেল ব্যবহার করেছে। সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ এ সংঘর্ষ হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও ছবিতে দেখা  গেছে, ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা যখন আক্রমণের প্রস্তুতি ও মহড়া দিচ্ছিল তখন পুলিশ পাশেই দাঁড়িয়েছিল। পুলিশ যথাযথ সক্রিয়তা দেখালে এই ভয়াবহ ঘটনা হয়তো ঘটতে পারতো না। এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে  দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ কতটা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে, এই ঘটনা তার প্রমাণ। অবশ্য একমাত্র প্রমাণ নয়। যেদিন পত্রপত্রিকায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ছাত্র নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেদিনই রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের সিট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এবং অন্তত ৫০ জনের আহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নির্বিচার দখলবাজির খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এই সঙ্গে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ অচল হয়ে পড়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এক খবরে জানা গেছে, ছাত্রলীগের লাগামহীন কাজকর্মে শিক্ষাঙ্গন অস্থির হয়ে উঠছে। এ মুহূর্তে আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য দু’টি প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ডেকে বন্ধ করে রেখেছে ছাত্রলীগ। গত ৩১ আগস্ট ছাত্র সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা আর ভুল করবে না। এই প্রতিজ্ঞা যে কার্যকর হয়নি ঘটনা প্রবাহ তারই সাক্ষ্য বহন করে। বিগত সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ওই সরকারের পাঁচ বছরে ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ছাত্রলীগের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজকর্মে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও একইভাবে ছাত্রলীগের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এমন  কোনো অপকর্ম ও অপরাধ নেই যার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ বা প্রমাণ নেই। খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, ছাত্রী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি-দখলবাজিসহ এমন  কোনো অপকর্ম ও অপরাধ নেই যা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা করেনি বা করছে না। ছাত্রলীগ অনেক আগেই প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনগুলোকে শিক্ষাঙ্গন থেকে বিদায় করে দিয়েছে। প্রতিপক্ষ না থাকায় ছাত্রলীগ আন্তঃকোন্দল ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতে খুব ভালোভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে। এক খবরে দেখা গেছে, গত ছয় বছরে আন্তঃকলহ ও অন্যান্য কারণে ছাত্রলীগের ২৭ জন  নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাঁচ শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের হামলায় সাংবাদিক-পুলিশসহ আহত হয়েছে প্রায় চার হাজার। এই সময় ছাত্রীনির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে পাঁচ শতাধিক। প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভর্তি, নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার, কাজকর্ম কোনো কিছুই ছাত্রলীগের অনুমতি-অনুমোদন ছাড়া করার শক্তি-সামর্থ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নেই। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগ মিলেমিশেই সব কিছু করে বলে অভিযোগ আছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও অফিসে যে সমস্ত কাজকর্ম হয় তার সিংহভাগই নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। ছাত্রলীগ এখন আসলে কতটা ছাত্রসংগঠন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ছাত্রলীগে চেইন অব কমান্ড বলে কিছু নেই, বিভিন্ন ঘটনায় তা প্রমাণিত। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, সরকারের প্রশ্রয়ই ছাত্রলীগকে এতটা বেপরোয়া করে তুলেছে। বহুবার এটা লক্ষ্য করা  গেছে, ছাত্রলীগের ‘অ্যাকশনে’ পুলিশ সহায়তা করে। কখনো কখনো ছাত্রলীগের পক্ষ হয়ে কাজ করেছে। অভ্যন্তরীণ সংঘাত-সংঘর্ষের সময় প্রায়শই পুলিশ নীরবতা অবলম্বন করে। অথচ এই পুলিশই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যখন বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ, মিছিল বা অন্য কোনো কর্মসূচি পালিত হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি ছুড়তে কিংবা গণগ্রেফতার করতে দেখা যায় পুলিশকে। পুলিশে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ হয়েছে বটে, কিন্তু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুলিশ এতটা বিভিন্নতা দেখাবে, তা চিন্তারও বাইরে। এখন এটাই বাস্তব সত্য। ছাত্রলীগকে সামলাতে না পারলে শিক্ষাঙ্গনসহ সমাজ ও দেশের পরিস্থিতি যে ভবিষ্যতে আরও শোচনীয় হয়ে পড়বে, সে বিষয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। যেহেতু সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ রয়েছে, সুতরাং সরকারকেই তার অবস্থান সুনির্দিষ্ট করতে হবে। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রদান বন্ধ এবং আইনকে তার পথে চলতে দিলে ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করা কোনো ব্যাপারই হতে পারে না। সরকারের ভাবমর্যাদা ছাত্রলীগ যতটা ক্ষুণœ করেছে অন্য কোনো সহযোগী সংগঠন তা করতে পারেননি। ’৫২ ভাষা আন্দোলন, ’৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯ গণঅভ্যুত্থানে  গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করা ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কর বিচরণ এখন সর্বত্র। দেশ, শিক্ষাঙ্গন তথা শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজ ছেড়ে তারা এখন মত্ত নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে। নিজ যোগ্যতা, চাটুকারিতা কিংবা টাকার বিনিময়ে একটি পদ হাতিয়ে নিয়েই সোনার ছেলেরা নেমে পড়ছেন ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্য সবকিছুতেই। কোথায় নেই ছাত্রলীগ?  গ্রাম-শহর সবখানেই একই চিত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে উন্নয়ন প্রকল্প এবং উপজেলা পর্যায়ের সব দখল টেন্ডারবাজিই করছেন। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেরাই কখনো মেতে উঠছেন রক্তারক্তি খেলায়। বেপরোয়া ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কররূপ কোনভাবেই ঠেকানোই যাচ্ছে না। যে কোন ঘটনাকেই ছাত্রদল-শিবিরের ষড়যন্ত্র বলেই দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন শীর্ষ দুই নেতাই। বিগত দিনে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের কারণে লাগামহীন, বেপরোয়া, নিয়ন্ত্রণহীনসহ নানা উপাধিতে ভূষিত হয়েছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। নেতাকর্মীদের অনৈতিক এবং নীতিবহির্ভূত কর্মকান্ডের কারণে ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মহাজোট সরকারের সময়ে ছাত্রলীগের কারণে বারবারই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার, মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতারা। সমালোচনার ঝড় ওঠে সর্ব মহলে। এতো কিছুর কোনটিতেই কান দেয়নি সচেতন ছাত্রলীগ! ছাত্রলীগের এই অপকর্মের পাগলা ঘোড়া থেমে নেই এখনও। বরং তা এখন ছুটছে আরও নতুন গতিতে। যখনই কোন ভয়ঙ্কর এবং অনৈতিক ঘটনার জন্ম দেয় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা, তখনই দু’একজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেই দায় এড়িয়ে যায় এর শীর্ষ নেতারা। কিন্তু এর কিছুদিন পরই আবারও সেই দুষ্কৃতকারীরা পুনরায় ভালো পদে আসীন হয়। সকল ক্ষেত্রেই অপকর্মকারীরা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের সমালোচনা করে ইতঃপূর্বে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর অপকর্মের কারণে দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। তারা নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। আর আমাদের ইমেজ সঙ্কটে পড়তে হয়।’ এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনার পর ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ছাত্রলীগের উদ্দেশে বলেছিলেন, ছাত্রলীগ কর্মী ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত, এটি আমাদের সবার মাথা হেট করে দেয়। ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা যে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সেই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের কর্মী ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত, এটি আমাদের সবার মাথা হেঁট করে দেয়।’ ছাত্ররাজনীতি নয়, অপরাজনীতির ফলে এমন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি এখন আর আদর্শের কারণে নয়, ক্ষমতা আর অর্থের কারণে করে বলেই এই অবস্থা। আর একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি আর ছাত্রদের হাতে নেই। তাই তারা শিক্ষা ও ছাত্র-সংশ্লিষ্ট বিষয় বাদ দিয়ে নিজেদের অর্থ বিত্ত গড়তেই বেশি মনোযোগ দেয়। আধিপত্য বিস্তার, পদ-পদবির লড়াইয়ে একই সংগঠনের কর্মীদের রক্ত ঝরাচ্ছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। হাতে হাত রেখে যারা মিছিল করেন, সেই হাতই আবার বন্ধুর প্রাণ সংহার করছেন। না হয় আজীবনের মতো পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নিয়মিত বিরতিতে ঘটছে এ ধরনের অঘটন। প্রায় সব স্থানেই ছাত্রলীগই ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত হয়েছেন একজন। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেয় প্রশাসন। নিহত সুমন চন্দ্র দাস সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র। সে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি অঞ্জন রায়ের সমর্থক। এর আগে ২ নভেম্বর চট্টগ্রামের হালিশহর আবাসিক এলাকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মাহমুদুর রহমান মান্না নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়। ২৯ অক্টোবর মাগুরায় সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ মাঠে প্রতিপক্ষের হামলায় এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ছাত্র সম্মেলন শেষে চট্টগ্রাম ফেরার পথে রাতে চট্টগ্রামমুখী মেইল ট্রেনের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মোস্তাফিজুর রহমান তৌকির নামে এক ছাত্রনেতাকে মেরে আহত করে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করে প্রতিপক্ষের গ্রুপ। এ সময় কিষাণ ও শাহেদ নামে আরও দুই ছাত্রনেতা আহত হন। ১৪ জুলাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদকে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতারা। সিলেটে ছাত্রলীগের গড়ে তোলা টর্চার সেলে নির্যাতনে গত ৪ জুন রাতে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের আবু সিনা ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে কলেজ ছাত্রদলের আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুলকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ মার্চ পরীক্ষার তারিখ পেছানোকে কেন্দ্র করে নিজ দলের কর্মী সায়াদ ইবনে মোমতাজকে রড, লাঠি, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরদিন মারা যায় সায়াদ। ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামালা চালায় ছাত্রলীগ। এতে অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এরপরপরই শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দকে হত্যা করা হয়। ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হল দখলের উদ্দেশে পুলিশের সহায়তায় হামলা করে ছাত্রলীগ। এ দিন শিবির নেতা মামুনকে প্রথমে গলা কেটে, পরে গুলি করে হত্যা করে। ছাত্রলীগের চেয়ে কোন অংশেই কম যাচ্ছে না আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোও। যুবলীগ, শ্রমিকলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রায়ই আধিপত্য বিস্তারসহ টেন্ডারবাজি নিয়ে লিপ্ত হচ্ছে সংঘর্ষে। গত ৫ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার তেতৈইতলা গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সংঘর্ষে মনসুর আলী নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ফলে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রায় ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। নিজ সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও আওয়ামী লীগের অন্য সহযোগী সংগঠনের সাথেও ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। গত বুধবার রাতেই টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে শিক্ষাভবনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। একই দিন রাতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের সিট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের কয়েক গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে আসা দুই ছাত্রীসহ প্রাক্তন তিন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এই সোনার (!) ছেলেরা। বুধবারই দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজে পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংর্ঘষ হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ২৭ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেলকে নিজ ক্যাম্পাসেই ডেকে এনে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ও তার অনুসারীরা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও গুলিবিনিময় হয়। আগের দিনও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ ও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবিনিময় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) ফজলে রাব্বি হলে  নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ হল বন্ধ ঘোষণা করে। একই দিনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে (বিএম) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী আহত হয়। ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়। ২৮ আগস্ট চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মনিরসহ দুই কর্মচারীকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ৩১ আগস্ট ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ছাত্রলীগের সমাবেশের নাম করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তোহিদ আল তুহিনসহ একাধিক নেতাকর্মী ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু তিনি এ সব কাজে ছাত্রলীগকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর রেলস্টেশনে টিকিট কাটাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্টেশনে ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুরের ঘটনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না হলেও এ ঘটনায় উল্টো সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় স্টেশন মাস্টার জাফর আলমসহ এক বুকিং ক্লার্ক এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যকে। হলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মওলানা ভাসানী হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহত হয়। ১৮ আগস্ট আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়। এর মধ্যে তিনজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে ১৬ আগস্ট ছাত্রলীগের দুই সভাপতি পদপ্রার্থীর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। গত ২৫ জুন গাজীপুরের শ্রীপুরে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগের কলেজ শাখা সভাপতি সারোয়ার জাহান সোহেলের হাতের রগ কেটে দেয় প্রতিপক্ষের কর্মীরা। গত ৮ জুন রাতে। কুমিল্লা থেকে চিকিৎসার জন্য আসা এক দম্পতি রাজধানীর মগবাজারের আবাসিক হোটেল গোল্ডেন এন প্যালেসের একটি রুম ভাড়া নেন। ওই রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন তার সহযোগীদের নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দম্পতির রুমে প্রবেশ করে। পরে অস্ত্রের মুখে স্বামীকে বেঁধে রেখে অসুস্থ স্ত্রীকে ধর্ষণ করে সেই ছাত্রলীগ নেতা। এসএসসি ও এইচএসসি পাস না করেও কলেজে অধ্যয়নরত দেখিয়ে ছাত্রলীগের পদ লাভ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে বরিশালে মামলা করেছে বিএম কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী আল ইমরান। ৯ জুন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সবুজ পরীক্ষায় ফেল করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালান তার অনুসারীদের নিয়ে।  ৭ জুন রাতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ৫০ পিস ইয়াবাসহ সাগর (২৫) নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। সাগরকে ছাড়িয়ে নিতে তার সমর্থকরা থানায় হামলার চেষ্টা চালায়। পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ৩০ মে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ছাত্রলীগ নেতারা হলে গিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তরপত্র বিক্রি করে। ৬ এপ্রিল বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজে নতুন কমিটির পদ দখলকে সামনে রেখে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ৭ এপ্রিল ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসে র‌্যাবের নির্যাতন কেন্দ্র আবিষ্কার ও সেখানে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক নেতাসহ ১২ জন আটক, ৮ এপ্রিল বরিশালে পলিটেকনিক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা, ১০ এপ্রিল সিলেটে রাগিব-রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদল নেতাকে কোপানো, ১১ এপ্রিল সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ কর্মী হায়দার আলীকে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। ১৩ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ আলমকে অস্ত্র ঠেকিয়ে টেন্ডার ছিনতাই করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। টেন্ডার, চাঁদাবাজি কিংবা আধিপত্য বিস্তারের মতো নিয়মিত ঘটনা নয়, এক রুমের জুতা অন্য রুমে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই গত ৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২ মার্চ বিকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। ৪ মার্চ রাতে জুতা চুরিকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একই দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে তুচ্ছ  ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের গুলাগুলিতে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন। একই বিশ্ববিদ্যালয় ১ মার্চ খাবারের বিল পরিশোধ করা নিয়ে সংগঠনটির দুই গ্রুপের মধ্যে দিনভর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২৩ ফেব্রুয়ারি খুলনায় সরকারি আযম খান কমার্স কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর একদিন আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকার গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ না দেয়ায় ১৯ এবং ২০ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বদরুননেসা কলেজে ছাত্রলীগের নারী কর্মীদের সঙ্গে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিপক্ষ সংগঠন ছাত্রদলের মারামারি ও চুল টানাটানি হয়। ওই একই দিনে মানিকগঞ্জ ছাত্রলীগের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে কলেজ ছাত্রীকে মারধরে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি ওই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো হলের রুমে বান্ধবীসহ ধরা পড়েন। ২৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগ নেতারা মারধরের শিকার হন মদের বারের কর্মীদের হাতে। শাহবাগের পিকক মদের বারে মদ খেয়ে এবং নিয়ে তার বিল পরিশোধ না করে চলে আসলে বার কর্মীরা ছাত্রলীগের সলিমুল্লাহ হলের ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসানসহ তার অনুসারীদের ব্যাপক মারধর করে। ২২ জানুয়ারি জাবির নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি ও শিক্ষক ড. গোলাম মঈনুদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা-বিষয়ক সম্পাদক মামুন খানকে। ২০ ও ২১ জানুয়ারি ৭ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে বরিশালে ছাত্রলীগের হাতে মার খায় যুবলীগের এক নেতা। ২০ জানুয়ারি বিকালে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এক প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে বিজি প্রেসের স্টেশনারি ভবনে টেন্ডারবাজি করে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। ৪ জানুয়ারি প্রায় অর্ধকোটি টাকার বিনিময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ১১ কর্মকর্তার নিয়োগের কোটা বাগিয়ে নেন। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, যারা এ ধরনের কাজ করে তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়। আর ছাত্রলীগের নামে যারাই যেখানে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত হয় তাদের বিরুদ্ধেই আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এছাড়া ছাত্রলীগের যে পর্যায়ের নেতাই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশকেও আমরা অনুরোধ জানাই। কোন অনুপ্রবেশকারী যেন ছাত্রলীগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারেও সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য এখন এককভাবে ছাত্রলীগের কবজায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ছাত্রসংগঠনটি ছাত্রদলসহ প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত ছাত্রসংগঠনগুলোকে ক্যাম্পাসে কোনো কর্মকান্ডই চালাতে দিচ্ছে না। তাই বলে থেমে নেই সহিংসতা, খুনোখুনি। ছাত্রলীগ এখন নিজেই নিজের প্রতিপক্ষ, চলছে প্রাণসংহারী তান্ডব। সংগঠনটির মাথায় গৌরবময় ইতিহাসের যে মুকুট রয়েছে, তা রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করছে ছাত্রলীগ নিজেই। বেপরোয়া ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। ভিন্নমতের সংগঠনগুলোকে পেশিশক্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাস ছাড়া করা, তুচ্ছ ঘটনায় নিজ সংগঠনের কর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যার মধ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছেও ভীতিকর একটি সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। সর্বশেষ, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সুমন দাস নামের এক ছাত্রলীগের কর্মী। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ইসলামী, বেগম রোকেয়া, জগন্নাথ, পটুয়াখালী ও নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট, হাজী দানেশ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলা কমিটিগুলোয় ৫ শতাধিক অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে ২ শিশুসহ ছাত্রলীগের প্রায় ৩৫ নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থী। সহিংসতার নেপথ্য কারণ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তার, দলীয় কোন্দল নতুবা ভর্তি-বাণিজ্য, খাবার টোকেন বা নারীবিষয়ক এমনকি তুচ্ছাতিতুচ্ছ অনেক বিষয়কে কেন্দ্র করেও। শিক্ষাঙ্গনে এমন ধারাবাহিক হত্যাকান্ডের ঘটনা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষাঙ্গনে পড়তে এসে লাশ হয়ে ফিরে যাওয়া সত্যিই অনেক হৃদয়বিদারক। এসব ঘটনা দমনে ছাত্রসংগঠনগুলোকে আরও কঠোর হতে হবে। কেবল আইনের ওপর ছেড়ে দিলে এর বিস্তার রোধ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন থাকলে ছাত্রসংগঠনগুলো সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভালো কাজ নিয়ে যেত। ফলে আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ নয়, প্রয়োজন হত মেধা ও নেতৃত্বগুণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক আখতার হোসেন খান বলেন, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রহত্যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি খুনের ঘটনাও ঘটছে। এগুলো তাদের দলের হাইকমান্ডকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। যদি বিষয়গুলোর যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তবে এর বিস্তার ঘটতেই থাকবে যা আওয়ামী লীগের জন্য তো নয়ই, দেশের জন্যও সুখকর হবে না। এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক শেখ রাসেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্র থেকে প্রতিটি ঘটনারই ব্যবস্থা নিই। সিলেটের ঘটনায় জড়িত উত্তম দাস দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত। আমরা তার দায়ভার নেবো না। ২০০৯ সাল। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হওয়ার কিছুদিন পর, ৩১ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে রাজীবকে হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ লাভ করে। ২০১০ সাল। ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহসভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বছরের শুরুতেই এমসি কলেজের ছাত্র উদয়েন্দু সিংহ পলাশ, ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্রলীগের কর্মী মোস্তফা কামাল শান্তকে হত্যা করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্মমভাবে খুন হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর। ১১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিউদ্দিন, ২৮ মার্চ হারুন অর রশিদ কায়সার, ১৫ এপ্রিল আসাদুজ্জামান নিহত হন। ১২ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী পলাশকে খুন করা হয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে। ১৬ জুলাই একই কারণে খুন হন ছাত্রলীগের কর্মী সোহেল। ১৫ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতারের টাকা ভাগাভাগীকে কেন্দ্র করে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগের কর্মী নাসিরুল্লাহ নাসিমকে। ২০১১ সাল। ২১ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও পলিটেকনিকে ফাও খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় রাইসুল ইসলাম রাসেল মারা যান। ২০ অক্টোবর চমেকে আবিদুর রহমান নামের এক ছাত্রলীগের কর্মী হত্যার শিকার হন নিজ সংগঠনেরই কর্মীদের হাতে। ২০১২ সাল। ৮ জানুয়ারি জাবির ছাত্রলীগের কর্মী জুবায়ের আহমেদকে রড-হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন একই সংগঠনের প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মীরা। ২১ জানুয়ারি ঈশ্বরদীতে ছাত্রলীগের কর্মী মোস্তফা কামাল ছুরিকাঘাতে খুন হন। একই মাসের ২৫ তারিখ মাগুরায় আল আমীন খুন হন। ১২ মার্চ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ খান সজীব খুন হন।  ১১ এপ্রিল চাঁদপুরে বিল্লাল, ২১ এপ্রিল পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত হন  একজন। সিলেট এমসি কলেজে ১৬ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগের নেতা আব্দুল্লাহ আল হাসান। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রতিপক্ষ গ্রুপ হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় ছাত্রলীগের চিলমারী উপজেলা সাংস্কৃতিক সম্পাদক বাহাদুর রহমানের। পরে তিনি মারা যান। ৯ সেপ্টেম্বর হাবিপ্রবিতে ফাহিম মাহফুজ নামে এক ছাত্রলীগের কর্মী হত্যার শিকার হন। ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচির দিনে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে নতুন ইতিহাসের জন্ম দেয় ছাত্রলীগ। ২০১৩ সাল। ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জের ধরে অপর গ্রুপের হামলায় নিহত হন ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আব্দুল মালেক জনি। ২৫ জুন চট্টগ্রাম রেলের দরপত্র নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির মাঝে পড়ে শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়। এর আগে, ১৯ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় ১০ বছরের শিশু রাব্বি। ১৪ মার্চ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘর্ষের ঘটনায় যশোর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রিপন হোসেন দাদা নিহত হন। ১৩ এপ্রিল রাজধানীর আদাবরে খুন হন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা রুহিজ। ১৫ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলক্রসিং এলাকায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত হন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী আসাদুজ্জামান। পরদিন তিনি মারা যান। ২০১৪ সাল। ১ মার্চ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন ছাত্রলীগের নেতা হেভেন চৌধুরী। ১ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দলের কর্মীদের হামলায় খুন হন ছাত্রলীগের নেতা সায়াদ ইবনে মোমতাজ। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ খুন হন। সর্বশেষ, গত ২১ নভেম্বর শুক্রবার শাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান সুমন দাস। নিজ স্বার্থেই ছাত্রলীগকে রুখতে সরকারের এগিয়ে আসতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না, দেশবাসী সেটাই প্রত্যাশা করে। লেখক : শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির