post

দ্বীনের কাজে বিনিময় গ্রহণ । মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী । অনুলেখক : ফাহিম ফয়সাল

১২ নভেম্বর ২০১৯

দাওয়াতে ইলাল্লাহর ক্ষেত্রে আম্বিয়া কেরামের বৈশিষ্ট্য ছিল দাওয়াতকে মিশনের জিন্দেগি হিসেবে, জীবন জিন্দেগির প্রধান দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে কোনো বিনিময় না নেয়া। এর আলোকে সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ রহমতুল্লাহ আলাইহি পরিষ্কার বলেছেন, দাওয়াতে দ্বীনের কাজকে পেশা ও শিল্প হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। পেশা ও শিল্প হিসেবে গ্রহণ করলে তার মধ্যে কৃত্রিমতা ঢোকে। দাওয়াত বাহ্যত যতই ফলপ্রসূ হোক Ultimately মানুষের জীবন জিন্দেগির ওপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয় না।

আমাদের দেশে ওয়াজ নসিয়তের ক্ষেত্রে পয়সা নেয়াকে জায়েজ করা হয়েছে। ওলামায়ে মুফাসসিরিন জায়েজ করেছেন। এই ব্যাখ্যা দিয়ে যে, ইসলামী হুকুমত যখন ছিল তখন হুকুমতের পক্ষ থেকে দায়ী বা মুবাল্লেগদের ভাতা দেয়া হতো। সরকারের পক্ষ থেকে তারা মানুষকে দাওয়াত দিতেন। এখন ইসলামী হুকুমত নাই, ওটার ব্যবস্থা নেই। অতএব দ্বীনের দাওয়াত জারি রাখতে হলে এটার অনুমতি না দিয়ে উপায় নেই। এটাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে ওয়াজ মাহফিল পেশা এবং শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। ওয়ায়েজিনরাও অনেকটা শিল্পীর ভূমিকায়। কার সুর কত সুন্দর, কে কোন টানটা ভালো দেয়?... এগুলোও বিচার হয়।

সাইয়েদ কুতুব শহীদের তাফসির এখন তো বাংলাতেও আছে। ‘তোমরা অন্যদের সৎকর্মশীলতার পথ অবলম্বন করতে বলো কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও। অথচ তোমরা কিতাব পাঠ করে থাকো। তোমরা কি জ্ঞান বুদ্ধি একটুও কাজে লাগাও না?’ (সূরা বাকারা: ৪৪) এ আয়াতের তাফসীরে উনি এ বিষয়টা পরিষ্কার করেছেন। যারা দাওয়াতে দ্বীনকে শিল্প ও পেশা হিসেবে গ্রহণ করে তাদের দাওয়াত অগ্রসর হয় কিনা সেটা বলেছেন।

এখানে আর একটা বিষয় আছে। জামায়াতে ইসলামীর কাজ করতে গিয়ে মাওলানা মাওদূদী রহমতুল্লাহ আলাইহি বলেছেন যে, একদল পাগল দরকার। তিনি জামায়াত গঠনের আগে যে আহ্বান রেখেছিলেন তরজামুনুল কুরআনের মধ্যে তার একটা বাক্য এভাবে আসছে, ‘কিছু পাগল দরকার’। দুনিয়ার প্রতিপত্তি, লাভ-ক্ষতির চিন্তা-ভাবনা যাদের নেই এমন একদল মানুষ দরকার। এটা বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, কিছু লোক দরকার যারা নিজের ঘর সংসার ও ব্যবসা বাণিজ্যের চিন্তা করবে না। সংগঠন তাদের দায়িত্ব নেবে।

এর ভিত্তিতে Whole timer system আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে। এই হোল টাইমার কোনো privilege বা বাড়তি সুবিধা নয়। এটা দৃঢ় ত্যাগ। একজন ব্যবসা করে। ব্যবসার মাধ্যমে শুধু দিন এনে দিন খাওয়া নয় বরং সঞ্চয়ের লোভ থাকে। অনেকে চাকরি করে। চাকরি করে নিত্য প্রয়োজনের পর তার একটা ভবিষ্যৎ আশা ভরসা থাকে। কিন্তু ট্রু স্পিরিটে যে হোলটাইমার হয় তার কোনো বোনাস নেই। অন্য কোনো সুবিধা নেই। রীতিমতো এটা একটা বড় রকমের ত্যাগ। এইটা আর ওয়াজের বিনিময়ে পয়সা নেয়া এক জিনিস নয়।

আর ইসলামী আন্দোলনে এটা জারি করা আমার দৃষ্টিতে একটা বড় deviation (বিচ্যুতি)। যারা ওয়াজ করে পয়সা নেয় তারাই শুধু দায়ী নয়, যারা দেয় তারাও দায়ী। ঘুষ খাওয়া যেমন নাজায়েজ, ঘুষ দেয়াও তেমনি নাজায়েজ। অপরাধী দু’জনই। তেমনি দাওয়াতি দ্বীনের কাজকে পেশায় পরিণত করা মৌলিক deviation(বিচ্যুতি)। এদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

(শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর একটি বক্তব্য থেকে সংগৃহীত)

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির