post

নির্বাচন সামনে রেখে আসছে জনতুষ্টির বাজেট

১৫ জুন ২০১৩
[caption id="attachment_1671" align="alignleft" width="300"] বর্তমান মেয়াদে এই সরকারের আগামী ২০১৩-১৪
অর্থবছরের বাজেটই শেষ বাজেট। আগামী অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো মাসেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তাই জনতুষ্টির জন্য যা যা করার দরকার তার সবগুলোই করার চেষ্টা করবে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত ও বিভিন্ন করপোরেশনে কর্মরত চাকুরেদের বেতন বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে[/caption]

সরকারি চাকুরেদের জন্য মহার্ঘ্য ভাতার ঘোষণা আসছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ সম্পর্কে একটি ঘোষণা থাকতে পারে। একই সাথে বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি স্থায়ী জাতীয় পে-কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতিও থাকবে। মহার্ঘ্য ভাতার পরিমাণ হতে পারে ১০ থেকে ২০ শতাংশ। মূলত আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিপুল সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘তুষ্টি’র জন্য এই ধরনের একটি ঘোষণা দেয়ার কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দেয়ার কথা ঘোষণা করে। এটি ২০০৮ সালের জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মহার্ঘ্য ভাতার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি পে-কমিশন গঠনের কথাও ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে সাবেক সচিব মীর মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে গঠন করা হয় ‘৭ম পে-কমিশন’। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পে-কমিশন গঠন করা হলেও কমিশনের রিপোর্ট ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়।  পরে পে-কমিশনের মূল রিপোর্ট সংশোধন করে তা অনুমোদন করা হয় ২০০৯ সালে। একই বছর থেকে তা বাস্তবায়নও করা হয়। প্রায় চার বছরের মাথায় আবারো সরকার নতুন পে-কমিশন গঠনের কথা বিবেচনা করছে। বর্তমান মেয়াদে এই সরকারের আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটই শেষ বাজেট। আগামী অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো মাসেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তাই জনতুষ্টির জন্য যা যা করার দরকার তার সবগুলোই করার চেষ্টা করবে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত ও বিভিন্ন করপোরেশনে কর্মরত চাকুরেদের বেতন বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এই বেতন বৃদ্ধির প্রথম ভিত্তি হিসেবে মহার্ঘ্য ভাতা দেয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। একই সাথে গঠন করা হবে একটি পে-কমিশনও। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল  একটি স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের। অর্থমন্ত্রী গত বাজেট বক্তৃতায় স্থায়ী পে-কমিশনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এখন মেয়াদের শেষ বাজেটে এই কমিশন গঠনের কথা বলা হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, মহার্ঘ্য ভাতা দেয়ার বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে প্রায় ১৩ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য মহার্ঘ্য ভাতা দেয়া হলে কত টাকার প্রয়োজন হতে পারে তার হিসাব চাওয়া হয়েছে। এর আগে ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দেয়া হয়েছিল। আমরা এই অঙ্কটি মাথায় রেখেই টাকার অঙ্ক নির্ণয়ের চেষ্টা করছি। যদি বাজেটে মহার্ঘ্য ভাতা দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়, তবে কবে নাগাদ তা বাস্তবায়ন হতে পারেÑ এ প্রশ্ন করা হলে সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে সরকারের হাতে দুটো বিকল্প থাকতে পারে। এক. আগামী জুলাই থেকে বাস্তবায়ন। দুই. ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বাস্তবায়ন। সূত্র জানায় সাধারণত পে-কমিশন গঠনের কথা ঘোষণা করা হলে সেই মাস থেকে মহার্ঘ্য ভাতা দেয়া হয়। কিন্তু সরকার আসলে কী করবে তা এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট হয়নি। তবে বাজেটে সরকারি চাকুরেদের বেতন সম্পর্কে যে একটি ঘোষণা থাকবে তা অনেকটা নিশ্চিত। সরকারের নতুন পে-কমিশন গঠনের বিষয়ে অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে ভোট পাবার জন্য সরকার পে-কমিশন গঠন করতেই পারে। তবে এতে মূল্যস্ফীতি যে বেড়ে যাবে তা নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে তাও দেখার বিষয় রয়েছে। কারণ নতুন বেতনকাঠামো বাস্তবায়ন করতে হলে কম করে হলেও ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন পড়বে। এই টাকা কোত্থেকে সংগ্রহ করা হবে তা ভেবে দেখা দরকার। প্রসঙ্গত, বিদ্যমান সপ্তম পে-কমিশন সরকারি চাকুরেদের স্তরভেদে ৫৬ থেকে ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ২০টি গ্রেডে সর্Ÿোচ্চ বেতন নির্র্ধারণ করা হয় ৪০ হাজার টাকা সর্বনিম্নœ বেতন ধরা হয় ৪ হাজার ১০০ টাকা। এর আগে এই বেতন ছিল যথাক্রমে ২৩ হাজার ও দুই হাজার ৪০০ টাকা। সপ্তম বেতন কমিশন অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রেডে বেতন রয়েছে, ৪০ হাজার টাকা, ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা, ২৯ হাজার টাকা, ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ২২ হাজার ২৫০ টাকা, ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, ১৫ হাজার টাকা, ১২ হাজার টাকা, ১১ হাজার টাকা, ৮ হাজার টাকা, ৬ হাজার ৪০০ টাকা, ৫ হাজার ৯০০ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৫ হাজার ২০০ টাকা, ৪ হাজার ৯০০ টাকা, ৪ হাজার ৭০০ টাকা, ৪ হাজার ৫০০ টাকা, ৪ হাজার ৪০০ টাকা, ৪ হাজার ২৫০ টাকা ও ৪ হাজার ১০০ টাকা। সপ্তম পে-কমিশন বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হয়েছিল ছয় হাজার ২২২ কোটি টাকা। এর আগে দেশে যে ছয়টি পে-কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তা গঠন করা হয় যথাক্রমেÑ ১৯৭২, ১৯৭৭, ১৯৮৫, ১৯৯১, ১৯৯৭ ও ২০০৫ সালে। Ñ নয়া দিগন্তের সৌজন্যে

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির