post

পানি । উম্মে নাজিয়া

০৩ ডিসেম্বর ২০১৮

“পানিই জীবন পানিই মরণ” চিরসত্য একটি কথা, সবখানেই পানি আছে, কিন্তু বিশুদ্ধ এক ফোঁটা খাবার পানি দুর্লভ। দিন দিন পরিবেশ দূষণের ফলে নদ-নদী, খাল-বিল জীবাণুযুক্ত হয়ে পড়েছে, যার ফলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পানির সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ যেখানে সমুদ্রবেষ্টিত, ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানি নেই, তারা জানে পানি কতটা মূল্যবান।“পানিই জীবন পানিই মরণ” চিরসত্য একটি কথা, সবখানেই পানি আছে, কিন্তু বিশুদ্ধ এক ফোঁটা খাবার পানি দুর্লভ। দিন দিন পরিবেশ দূষণের ফলে নদ-নদী, খাল-বিল জীবাণুযুক্ত হয়ে পড়েছে, যার ফলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পানির সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ যেখানে সমুদ্রবেষ্টিত, ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানি নেই, তারা জানে পানি কতটা মূল্যবান। পৃথিবীর অদ্বিতীয় পানি জমজমের পানি পেয়েছিলেন একজন নারী যিনি নবী ইসমাইল (আ)-এর মা। মুসা (আ)-এর একটি ঘটনা কোরআনে বর্ণনা হয়েছে এবং যখন মুসা (আ) তার লোকদের জন্য পানির জন্য প্রার্থনা করলেন, তখন আমরা বললাম, তোমার লাঠি দিয়ে পাথর ছুড়ে দাও এবং যেখানে বারোটি পানির ধারা প্রবাহিত হবে (সূরা বাকারাহ : ২৬০)। পৃথিবীর সব প্রাণী আল্লাহ পাক পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা : ৫৪)। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বেই পানি ছিল (১১:৭)। পানি আল্লাহ পাকের কাছ থেকে একটি উপহার, এটি তিনটি জিনিসের মধ্যে একটি যা প্রতিটি মানুষের জন্য অধিকার, ঘাস (গবাদি পশুর জন্য চারণভূমি) পানি। হাদিসে এসেছে নবীজি (সা) বলেছেন, তোমার কাছে যদি একট প্রবাহিত নদীও থাকে তবুও পানি অপচয় করো না। অথচ আমরা প্রতিদিন দৈনন্দিন কাজে কত পানি অপচয় করি। একজন মানুষের প্রায় প্রতিদিন ৫৫ লিটার পানির প্রয়োজন হয় তার সকল ব্যবহারের জন্য কিন্তু সে তার চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি অপচয় করে থাকে। পানি এখন বিশ্বব্যাপী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার ১/৫ পানির অভাব এলাকায় বাস করে। ইসলাম পানির গুরুত্ব সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন এবং আপনি যে পানি পান করেন তা কি আপনি দেখেছেন? এটি কি এমনিতেই মেঘ থেকে নেমে এসেছে না আমি এটি দিয়েছি, যদি আমি ইচ্ছে করতাম তবে আমরা তা তিক্ত করে তুলতাম, সুতরাং কেন কৃতজ্ঞ হও না। (সূরা, ৫৬, ৫৮-৭০) পবিত্র কোরআনে সমুদ্র, নদী, বৃষ্টি, ঝরনার পানি কথাগুলো আল্লাহ পাক বর্ণনা করেছেন। বর্তমান সময়ে বৈষয়িক জলবায়ু পরিবর্তন একটি ভয়াবহ সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তন মানুষকে ক্ষতির মধ্যে ফেলছে। ইসলাম ধর্ম এমন একটি ধর্ম যেখানে ইকো ধর্মতত্ত্বের ধারণা দিয়েছে। পবিত্র কোরআন মাজিদে পানি সম্পর্কে ফার্স্ট ধারণা দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ৬৩ বার পানির কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে। প্রত্যেক নবী পানি পান করার একটি ঘনিষ্ঠ বর্ণনা দিয়েছেন। পৃথিবীতে পানির মধ্যে সবচেয়ে ভালো পানি জমজমের পানি। নবী (সা) বলেছেন, জমজমের পানি এক প্রকার খাদ্য এবং এর মধ্যে অসুস্থতা থেকে রোগ মুক্তির শেফা রয়েছে। নবী (সা) খাবারের আধ ঘণ্টা পূর্বে এবং আধ ঘণ্টা পর পানি পান করতেন। খাবারের মধ্যে কখনও পানি পান করতেন না।

সকালে খালি পেটে পানি পান করার উপকার

এ অভ্যাসটি নিয়মিত করতে পারলে অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। রাতে ঘুমানোর ফলে হজম প্রক্রিয়ার তেমন কোন কাজ থাকে না। তাই সকালে ঘুম থেকে ওঠে হজম প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য এক গ্লাস পানি পান করা জরুরি। পানি: নবী (সা) বলেছেন, জ্বর হলো জাহান্নামের উত্তাপ, পানি দিয়ে একে ঠাণ্ডা কর (বোখারি শরিফ) (ভলিউম-৭. বই ৭১, ৬২১).

ভালো হজমের জন্য

* খাবারের মধ্যে এবং শেষে পানি পান করা যাবে না * ফল খাবার পর পানি পান করা যাবে না * গোসল করার পর পানি পান করা যাবে না। এতে ঠাণ্ডা রোগ বৃদ্ধি পাবে। বেশি ঠাণ্ডা পানি পান করা ভালো নয় এতে দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গলায় ইনফেকশন হবে। ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে পানি পান করা উচিত নয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। কুয়ার পানি এবং নদীর পানি মিশিয়ে পান করা উচিত নয়। গরম পানির সঙ্গে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। নবী (সা) তোমাদের পাকস্থলীর ১/৩, এক-তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা পূর্ণ কর, ১/৩ বাতাস দিয়ে পূর্ণ কর, প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলে শরীরের মধ্যকার ইলেকট্রিক্যাল এবং কেমিক্যাল কার্যাবলি সঠিকভাবে হতে পারে। ইমাম জাফর বলেছেন, পানি খাবার হজম করে এবং তাপ শোষণ করে। মৃদু গরম পানি সকল প্রকার ব্যথা এবং কফ সারায়। নবী (সা) পানিতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। বিজ্ঞান বলে ফুঁ দিলে পানিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশে বিষাক্ত হয়ে পড়ে। ভালো হজমের জন্য খাবার মধ্যে এবং খাবার শেষে পানি পান করা যাবে না। ফল খেয়ে পানি না খাওয়া। গোসলের পর পানি না পান করা এতে ঠাণ্ডা লাগবে। বেশি ঠাণ্ডা এবং বেশি গরম পানি না খাওয়া এতে দাঁত নষ্ট হয়ে যায় ঘুম থেকে উঠে একদম খালি পেটে পানি পান করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। কূপের পানি নদীর পানি মিশিয়ে খাওয়া ঠিক না তেমনি ঠাণ্ডা পানি এবং গরম পানি মিশিয়ে খাওয়া ঠিক না। প্রতিদিন সকালে অন্তত ২৪ আউন্স হালকা গরম পানি পান করলে মেটাবলিজম ১৬% বেড়ে যায় এবং শরীরের ওজন কমে। প্রতিদিন সকালে পানি পান করলে রক্তের দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায় ত্বক সুন্দর উজ্জ্বল আর পরিষ্কার হয়, নতুন মাংসপেশি ও কোষ গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, বমি ভাব, ডায়রিয়া, গলার সমস্যা, কিডনি সমস্যা, আর্থ্রাইটিস এবং মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পায়খানা পরিষ্কার হয় এবং শরীর নতুন খাবার থেকে পুষ্টি সহজে নিতে পারে। সকালে পানি না খেয়ে জুস বা অন্য পানীয় খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়।

পানিসুন্নাত অনুযায়ী পানি পান করা

নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, যে কোন পাত্র থেকে সরাসরি পানি পান করো না। অর্থাৎ বেশি পানি থেকে অন্য একটি পাত্রে ঢেলে নিয়ে পানি পান করতে হবে। (বোখারি শরিফ) পানি পান করা ভালো কিন্তু একসঙ্গে খুব বেশি নয়। বিজ্ঞানের তথ্যানুযায়ী এক সঙ্গে বেশি পানি পান করলে কিডনি দ্রুত কাজ করতে পারে না তখন রক্ত পানি নিয়ে নেয়, যা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিসমিল্লাহ বলে পানি পান করতে হবে ডান হাত দিয়ে পান করা, নবীজি (সা) বলেছেন বাম হাত দিয়ে খাওয়া এবং পানি পান করো না, কারণ শয়তান বাম হাতে খায়। (মুসলিম ২) তিনি আরো বলেছেন, বস এবং পান কর তোমাদের কেউ দাঁড়িয়ে পানি পান করবে না, কেউ ভুলে গেলে তার বমি করা উচিত। (মুসলিম শরিফ) বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে বা হাঁটার সময় পানি পান করলে গ্যাস্ট্রোইনটেনস্টেইনাল ট্যাক্ট (জিআইটি) ক্ষতি, বাতের, স্নায়ুবিক চাপ এবং অন্যান্য রোগ হতে পারে। ‘নবী (সা) বলেছেন, এক শ্বাসে পানি পান করো না, দুই বা তিন শ্বাসে পান কর।’ বিজ্ঞান প্রমাণ করছে এক নিঃশ্বাসে পানি পান করলে এটি অক্সক্যাগ্স বা বিষন্নতার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে পেশি এবং স্নায়ু দুর্বল করে এটি যকৃৎ এবং পেশির জন্য ক্ষতিকর। নবীজি আরো বলেছেন, পানি পান করার সময় পানির মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলা যাবে না। বিজ্ঞান দেখায় এক গ্লাস পানি নিঃশ্বাসের CO2 সঙ্গে মিশে এর pH পরিবর্তন হতে পারে যার ফলে রক্তের পিএইচ পরিবর্তিত হতে পারে। নবী (সা) বলেছেন, “খাবার আগে বিসমিল্লাহ এবং খাবার পর আলহামদুলিল্লাহ বলুন।” সুন্নত অনুযায়ী দুই বা ততোধিক ব্যক্তি এক গ্লাস থেকে পানি পান করতে পারে। পৃথিবীর ধনী দেশসহ আমাদের দেশের অনেক সচ্ছল পরিবার পানির পরিবর্তে যে কোন পানীয় খেতে পছন্দ করে, হোটেল, রেস্তোরাঁতে খেতে বসলেই পানির সঙ্গে সোডা, জুস, এনার্জি, ড্রিংক, চা, কফির অর্ডার দিয়ে থাকেন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই সকল পানীয়তে অতিরিক্ত চিনি, বিভিন্ন দ্রব্যাদি এবং ক্যালরি যোগ করা থাকে ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তা সুস্বাস্থ্যের পরিপন্থী। Journal of Human Nutrition and Diebetic health- জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিষয়টি বিস্তারিত লেখা হয়েছে। গবেষকরা ২০০৫-২০১২ সালে গবেষণাটি করেছেন সেখানে ১৮,৩১১ জন পূর্ণবয়স্ক লোকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শরীরের ওজন যারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, মেদ, ভুঁড়ি বা ওজন বৃদ্ধি জনিত স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে চান, তাদের জন্য বিশুদ্ধ এক গ্লাস সাধারণ পানিই সবচেয়ে ভালো। অনেক মানুষ সাধারণ টিউবয়েলের পানি খেতে চায় না, এ অভ্যাসটি বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, পানি খাচ্ছে না কিন্তু মিষ্টি কোন পানীয় দিলে কথাই নেই, বোতলের পর বোতল খেয়ে ফেলছে। তারা বেশি এনার্জি সম্পন্ন, কম পুষ্টিকর খাবার যেমন- কুকিজ, আইসক্রিম, চিপস এবং পেস্টি এবং বার্গার খেতেও খুব পছন্দ করে। মানুষের শরীরে ৫৫-৭৮% পানি থাকে। এটি নির্ভর করে তার শরীরের ওজনের ওপর, নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের জন্য অতি উপকারী, পানিতে ইলেকট্রোলাইট থাকে কিন্তু কোন ক্যালরি, কার্বহাইড্রেট কিংবা চিনি থাকে না। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। তবে তা সব ক্ষেত্রে নয়। পানি শরীরে পানি যোগ করে। কারণ শরীরের প্রতিটি কোষের (cell) সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য পানি খুবই জরুরি। প্রতিনিয়ত ত্বক (skin), শ্বাসপ্রশ্বাস, প্রস্রাব, পায়খানা, হাঁচি কাশির সঙ্গে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। তাই সেগুলি পূরণ করা প্রয়োজন। গরম আবহাওয়া, ব্যায়াম, ভারী পরিশ্রমের কাজ করলে পানির চাহিদা বেশি হয়ে থাকে। তখন সেটা ৮-১০ গ্লাস বেশি হবে। পানির উপকারিতা অনেক। যেমন- ১. বিষণ্নতা দূর করে : মাঝে মাঝে যখন কেউ হয়রান হয়ে পড়ে কিংবা বিষণ্নতা বোধ করে, তখন বুঝতে হবে তার অপর্যাপ্ত পানি পান করার কারণে শরীরের কোষগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না, বিষণ্নতার তার শরীর পানি শূন্য হয়ে পড়ার একটি কারণ। যখন পানি কম পান করা হয় তখন যদি এক ফোঁটা রক্তের আয়তনও কমে যায় তখনও হার্টের রক্ত সঞ্চালনে অসুবিধা হয়, সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ করতে অসুবিধে হয়, সুতরাং পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে এবং বিষণ্নতা দূর হবে। ২. মনকে সতেজ রাখে: গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ১-২% ডিহাইড্রেশন হলেও মনের ওপর প্রভাব পড়ে, চিন্তা এবং কাজ করার ক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়ে, মানুষের প্রস্রাবের রঙ খুব হালকা হলে বুঝতে হবে ডি-হাইড্রেশন নেই, গাঢ় রঙ ডি-হাইড্রেশন নির্দেশ করে। ৩. মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেন: মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেনের ব্যথা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অনেক সময় ডি-হাইড্রেশন থেকেও মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেনের সমস্যা বেশি হতে পারে। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ফিজিওলজির এক গবেষণা রিপোর্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করে প্রচণ্ড মাথা ব্যথার সময়কাল কমে যায়। ৪. হজমে সহায়তা করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে: পানি পাকস্থলীসহ খাদ্যনালীর বিভিন্ন অংশেও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। পানি কম খেলে হজমে গোলমাল হয়, কোলনে পানি কম হলে যেটি বর্জ্য বের করে দিতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি মেটাবলিজমে সহায়তা করে, খাদ্যবস্তুকে নরম করে এবং সহজে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। পানি পরিপাক যন্ত্রকে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং bowel movement ভালোভাবে হতে সাহায্য করে। মৃদু গরম পানি পান করা হজমের জন্য ভালো। খাবার খাওয়ার ১ ঘণ্টা পর বেশি করে পানি পান কতে হবে, খাবারের পর পর নয়। ৫. পানি ওজন কমাতে সাহায্য করে : পানি ওজন কমাতে সাহায্য করে। পানি মেটাবলিজমের মাত্রা বৃদ্ধি করে ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৭ আউন্স পানি ২৪-৩০% মেটাবলিজমের মাত্রা বৃদ্ধি করে ১.৫ ঘণ্টায়। দৈনিক ২ লিটার পানি পান করলে ৯৬ ক্যালরি খরচ হয় প্রতিদিন। খাবার পূর্বে কিছুটা পানি পান করা উচিত, এতে পেট ভরা থাকবে এবং খাদ্য গ্রহণের মাত্রা কম হবে। খাবার ১ ঘণ্টা পূর্বে ১ লিটার পানি পান করলে ৪৪% ওজন হ্রাস পায় ১২ সপ্তাহে। ওজন কমানোর জন্য ঠাণ্ডা পানি পান করা উচিত, এতে পানি গরম করার জন্যও শরীরের ক্যালরি খরচ হবে।“পানিই জীবন পানিই মরণ” চিরসত্য একটি কথা, সবখানেই পানি আছে, কিন্তু বিশুদ্ধ এক ফোঁটা খাবার পানি দুর্লভ। দিন দিন পরিবেশ দূষণের ফলে নদ-নদী, খাল-বিল জীবাণুযুক্ত হয়ে পড়েছে, যার ফলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পানির সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ যেখানে সমুদ্রবেষ্টিত, ভূ-গর্ভস্থ সুপেয় পানি নেই, তারা জানে পানি কতটা মূল্যবান। ৬. পানি শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য দূর করে: পানি শরীরের রক্তের তরলতা বৃদ্ধি করে, রক্তের মধ্যে জমে থাকা বিষাক্ত দ্রব্য দ্রবীভূত করে এবং প্রস্রাব, ঘামের সাহায্যে বের করে দিতে সাহায্য করে। ইউরোপীয় দেশের লোকজন গরম পানির তাপ শরীরে নেয় তাদের শরীরের বিষাক্ত দ্রব্য দূর করা এবং চামড়াকে টাইট করার কাজে। ৭. কিডনি ভালো রাখে : কিডনি পাথর অত্যন্ত কষ্টদায়ক যা কিনা ক্রিস্টাল আকারে জমা থাকে। যারা নিয়মিত এবং বেশি পরিমাণে পানি পান করে তাদের কিডনি জমে থাকা ক্ষুদ্র আকারের ক্রিস্টাল প্রস্রাবের বেগের সঙ্গে বের হয়ে যায়। পানি কিডনির ক্রিস্টালকে দ্রবীভূত করে এবং পাথর গঠনে বাধা দেয়। আমাদের দেশে অনেক মানুষ পানি খেতে চায় না। তারা এক গ্লাস পানিতে হাত পরিষ্কার করে এবং ঐ পানি দিয়েই খাওয়া শেষ করে। শুধু পানি কম খাওয়ার জন্য এরা নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বাচ্চারা সাধারণত পানি খেতে চায় না, লেবু পানি সঙ্গে চিনি মিশিয়ে শরবত করে। কিংবা মৌসুমি ফলের রসের হালকা জুস করে তাদের বেশি করে খেতে দিতে হবে। ৮. ত্বক ও চুল ভালো রাখে : অনেক মহিলা ত্বক ভাল রাখার জন্য অনেক দামি দামি দ্রব্য ব্যবহার করে থাকেন, অথচ গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করলেই কোন ক্রিম ছাড়াই উল্লেখিত উপকার পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত পানি খেলে ত্বক উজ্জ্বল এবং লাবণ্যময় হয়ে থাকে। চুলের জন্য ঠাণ্ডা পানি উপকারী। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুলে চুল শক্ত এবং উজ্জ্বল হয়। ৯. ক্যালরির সমতা রক্ষা করে এবং বিষণ্নতা দূর করে: জৈন এবং বৌদ্ধরা তাদের ধ্যান করার সময় বেশি পান করত এতে তাদের ধ্যান মনোযোগ বৃদ্ধি পেত বলে জানা যায়। শরীরে প্রবাহিত তরল এবং তরঙ্গ বিষণ্নতা দূর করে। পানিতে কোন ক্যালরি থাকে না ফলে পানি সমৃদ্ধ ফল এবং সবজি, সহজে পেট ভরে কিন্তু বেশি ক্যালরি যোগ করে না। ১০. ঘুম ভালো হয়: ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি পান করা ভালো এতে শরীরে প্রশান্তি আসে এবং ঘুম ভালো হয়। ১১. মাংসপেশিকে সচল রাখে: পানি বেশি পান করলে মাংসপেশি সচল থাকে। ব্যায়াম করার সময় হাত-পা সংকোচন প্রসারণে সহায়তা করে। পানি কম খেলে ব্যায়াম করার সময় মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণে সমস্যা হতে পারে। ১২. শরীরের তরল পদার্থের সমতা রক্ষা করে: আমরা জানি মানুষের শরীরে ৬০% পানি দিয়ে গঠিত এবং শরীরে তরল, হজম, শোষণ, পরিবহন করে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের বিভিন্ন গ্ল্যান্ড, ব্রেনের সঙ্গে যোগাযোগ সকল কিছুই তরল পদার্থ করে থাকে। যখন মানুষ পিপাসার্ত থাকে তখন ব্রেনসহ অন্যান্য অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

হালকা গরম পানি পান করা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এতে খাবার দ্রুত ভেঙ্গে যায় এবং হজম দ্রুত হয়। তৈলাক্ত খাবার সহজে ভেঙে যায়। প্রস্রাব পরিষ্কার হয়, যা দেহ থেকে বিষাক্ত দ্রব্য বের করে দেয়। রক্ত প্রবাহকে শুদ্ধ করতে সাহায্য করে। গরম পানি স্নায়ুতন্ত্র থেকে বিষাক্ত দ্রব্য দূর করতে সাহায্য করে। মাথা ব্যথা কমে যায়। কুসুম গরম পানি মনকে ভাল রাখে। হালকা গরম পানি পান করা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী এতে খাবার দ্রুত ভেঙে যায় এবং হজম দ্রুত হয়। তৈলাক্ত খাবার সহজে ভেঙে যায়। প্রসাব পরিষ্কার হয়, যা দেহ থেকে বিষাক্ত দ্রব্য বের করে দেয়। রক্ত প্রবাহকে শুদ্ধ করতে সাহায্য করে। গরম পানি স্নায়ুতন্ত্র থেকে বিষাক্ত দ্রব্য দূর করতে সাহায্য করে। মাথা ব্যথা কমে যায়। কুসুম গরম পানি মনকে ভাল রাখে। গরম পানি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্যাঙ্কট্রের সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের শর্করার পরিমাণ কার্যকরভাবে শোষকতা কমে যায়। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে যা শরীরকে সংক্রমিত করে। গরম পানি ক্যালরি পুড়তে সাহায্য করে। ক্যাফিন, চিনি ছাড়া বিশুদ্ধ পানি সর্বোত্তম পানীয়, সামান্য লালনসহ গরম পানি খেলে গলার সমস্যা দূর হয়। লেবু দিয়ে কুসুম গরম পানি পান করা কিডনির জন্য উপকারী এটি মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করতে সহায়তা করে। গরম পানি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্যাঙ্কট্রের সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের শর্করার পরিমাণ কার্যকরভাবে শোষকতা কমে যায়। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করে যা শরীরকে সংক্রমিত করে। গরম পানি ক্যালরি পুড়তে সাহায্য করে। ক্যাফিন, চিনি ছাড়া বিশুদ্ধ পানি সর্বোত্তম পানীয়, সামান্য লালনসহ গরম পানি খেলে পরিছন্নভাবে বৃষ্টির পানি খুবই উপকারী। হযরত আলী (রা) বলেছেন, বৃষ্টির পানি পান করা ভালো, বৃষ্টির পানি শরীরকে বিশুদ্ধ করে সকল ব্যথা এবং রোগ সারায়। সব সময় কিছু খাওয়ার পর পানি পান করা উচিত। যদি কেউ সাদা পানি খেতে পছন্দ না করে তখন সে তার সঙ্গে হালকা কোন জুস খেতে পারেন। প্রচুর পানি সমৃদ্ধ ফল এবং সবজি খাওয়া উচিত। যেমন: শসা, বাঙ্গি, তরমুজ, ডাব, আখের রস, লেবু পানি, কমলা, লাউ, কুমড়া, পালংশাক ইত্যাদি। যেকোন স্থানে ভ্রমণের সময় সব সময় এক লিটার পানি সঙ্গে রাখুন। যারা ওজন কমাতে চায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে চায় তাদের উচিত প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করা। পানি আল্লাহর অশেষ নেয়ামত। পানি পান করেই আমরা অনেক জটিল রোগ যেমন- হাম, পেটের গোলযোগ এবং কিডনি রোগ থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির