post

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও গাজা নিয়ে সমঝোতা

১২ জানুয়ারি ২০১৩

মীযানুল করীম

এবার ফিলিস্তিন ইস্যুতে দু’টি বড় ঘটনা ঘটেছে। উভয়ের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে বলে আশা করা যায়। একটি হলোÑ গাজায় ইসরাইলের সর্বশেষ হামলার পর হামাসের সাথে সমঝোতা চুক্তি। অপরটিÑ জাতিসঙ্ঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি। ২৯ নভেম্বর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রের সমর্থনে জাতিসঙ্ঘ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এ যাবৎ এই সঙ্কটাকীর্ণ আরব অঞ্চল নিছক পর্যবেক্ষক ‘ভূখণ্ড’ হিসেবে গণ্য হতো। ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তিসংগ্রামে বিরাট সাফল্য বিশ্বসংস্থার এই সমর্থন। সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবের পক্ষে ১৩৮ ভোট আর বিপক্ষে মাত্র ৯টি ভোট পড়ে। এদের মধ্যে অনিবার্যভাবেই ছিল ইসরাইল ও তার অভিভাবক যুক্তরাষ্ট্র। পাঁচটি দেশ সাধারণ পরিষদের সেই অধিবেশনে হাজির ছিল না। ৪১টি দেশের প্রতিনিধিরা ভোটে অংশ নেননি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ফ্রান্সসহ কয়েকটি ইউরোপীয় রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল। ব্রিটেন ও জার্মানি বিরত ছিল ভোটাভুটি থেকে। ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘জাতিসঙ্ঘের এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্মসনদও একটি বিরাট অর্জন।’ এ দিকে আনন্দবন্যা বয়ে যায় পশ্চিম তীর ও গাজায়। গত বছরই ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসঙ্ঘে সদস্যপদের জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছিলেন। সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে তিনি এ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তবে তখন তার আবেদনে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো কর্ণপাত করেনি। ইসরাইল হুমকি দিয়ে আসছিল, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রস্বীকৃতি ও সদস্যপদের দাবি নিয়ে জাতিসঙ্ঘে গেলে পরিণতি খারাপ হবে; কিন্তু এবার বিশ্বসংস্থায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) আগের চেয়ে অনেক বেশি অনুকূল সাড়া পেয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ফিলিস্তিন জাতিসঙ্ঘের দৃষ্টিতে এখন আর কেবল ‘ভূখণ্ড’ নয়, পুরোদস্তুর ‘রাষ্ট্র’। ফিলিস্তিনি জনগণসহ শান্তিকামী মানুষের অভিমত, সাধারণ পরিষদের এই অনুমোদনের ফলে ফিলিস্তিনিরা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জনের লক্ষ্যে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, ‘ফিলিস্তিন’ নামে তো কোনো নতুন সদস্য জাতিসঙ্ঘে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাহলে এত খুশি হওয়ার কী আছে? হ্যাঁ, ফিলিস্তিন ‘অসদস্য রাষ্ট্র’ এখনো। তাদের জাতিসঙ্ঘে যে মর্যাদা দেয়া হলো এবার, তা প্রতীকধর্মী। তবে ‘মধ্যপ্রাচ্য এমন একটি স্থান, যেখানে প্রতীকী তাৎপর্যও একটা বড় বিষয়।’ ফিলিস্তিন এখন জাতিসঙ্ঘের বিতর্কে অংশ নিতে পারবে। হতাশাবাদীরা বলবেন, বাস্তবে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি বদলাবে না। সেখানকার আরব জনগণের আর্থিক-সামাজিক সঙ্কট অব্যাহত থাকবে। বরং ইসরাইল ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপে ফিলিস্তিন প্রশাসনের সমস্যা এবং জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেবে।’ এর জবাবে ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ইসরাইল এখন চুপ মেরে বসে না থেকে প্রতিহিংসায় মেতে ওঠা স্বাভাবিক। তবে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের পরিচয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। তা হলো, এত দিন সংশ্লিষ্ট ইস্যুটিকে ইসরাইল ও ‘ফিলিস্তিনি’দের বিরোধ বলে আনুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে। অর্থাৎ দেখানো হয় যে, এটা দুই রাষ্ট্রশক্তি নয়, একটি জাতিরাষ্ট্র বনাম একটি জনগোষ্ঠীর সঙ্ঘাত। এর মাধ্যমে ৬৫ বছর ধরে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনি নিপীড়িত জনগণের রাজনৈতিক অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়েছে। এখন জাতিসঙ্ঘে পিএ’র মর্যাদায় উন্নীত হওয়ায় বিশ্বের কূটনীতি ও মিডিয়ার অঙ্গনে ফিলিস্তিন ইস্যু ইসরাইল ও ‘ফিলিস্তিন’-এর বিরোধ বলে অভিহিত হওয়াই যুক্তিযুক্ত ও প্রত্যাশিত। ফিলিস্তিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলোÑ ভূমধ্যসাগর-তীরবর্তী গাজা ভূখণ্ড। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমতীর থেকে ইসরাইল দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চল ইসলামপন্থী হামাসের নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে ইসরাইলের অর্ধযুগব্যাপী চরম অবরোধে গাজার ১৫ লাখ অধিবাসী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইসরাইল ২০০৮ সালে একবার সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। তার হত্যাযজ্ঞে শিশু-নারীসহ বহু লোক প্রাণ হারায়। তবুও হামাস মাথা নত করেনি। এবার ইসরাইল পুনরায় গাজায় আগ্রাসী আক্রমণ চালিয়ে হত্যালীলা ও ধ্বংসতাণ্ডবে মেতে ওঠে। হামাস গড়ে তোলে বীরোচিত প্রতিরোধ। এক সপ্তাহের মাথায় ২১ নভেম্বর যুদ্ধবিরতির সাথে সমঝোতা চুক্তি হলো দুই পক্ষের। এর প্রধান উদ্যোক্তা মিসরীয় প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি। এ ক্ষেত্রে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দৌড়ঝাঁপ দিলেও শান্তিপ্রয়াস ও হামলা বন্ধের কৃতিত্ব মূলত মুরসি পেলেন। হামাস ও ইসরাইলের মাঝে যে চুক্তি হয়েছে, এতে ছয়টি শর্ত। এর মধ্যে চারটি ইসরাইলের এবং বাকি দু’টি হামাসের পালনীয়। সে মোতাবেক, ইসরাইল (ক) নৌ, স্থল কিংবা আকাশপথে গাজায় কোনো আগ্রাসন চালাবে না। (খ) গুলিবর্ষণ করবে না সীমান্তে। (গ) ফিলিস্তিনি নেতাদেরকে টার্গেট করবে না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের। (ঘ) যুদ্ধবিরতি সূচনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব ক্রসিং বা গাজা থেকে বাইরে যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত করে দেবে। অন্য দিকে, হামাস বা ফিলিস্তিনিরা (ক) ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট নিক্ষেপ করবে না। (খ) সীমান্তে হামলা করবে না ইসরাইলের কোনো নাগরিকের ওপর। অবশ্য এই সমঝোতার এক দিন না যেতেই ইহুদি সৈন্যরা সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের একজনকে হত্যা এবং কয়েকজনকে আহত করেছে। তবুও ইসরাইলের হাস্যকর ঘোষণা, এ ঘটনায় সমঝোতা চুক্তি লঙ্ঘিত হয়নি। এবার হামাসের সামরিক শাখার প্রধান আহমদ জাবারিকে বিনা উসকানিতে ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। এর জের ধরেই হামাসের সাথে ইসরাইল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। অথচ জাবারি শান্তিপ্রয়াসী ছিলেন বলে খোদ ইসরাইলের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। হামাস এবারের আগ্রাসী হামলারও জবাব দিয়েছে যথাসাধ্য। তাদের সাহস ও অনমনীয়তার পরিচয় দিয়েছে আবার। এখন অনেকেই স্বীকার করছেন, মাহমুদ আব্বাসদের ফাতাহসহ পিএলও যেখানে তেমন কিছুই অর্জন করতে পারেনি সংলাপে, সে ক্ষেত্রে হামাস সশস্ত্র পন্থায় যে সাফল্য পেয়েছে, তা কম নয়। হামাসকে কাবু করা সম্ভব নয় টের পেয়েই ইসরাইল সমঝোতায় বাধ্য হলো। একজন মাত্র সৈন্য, গিলাদ শালিতের মুক্তির বিনিময়ে হামাস নিজের বহু যোদ্ধার মুক্তি আদায় করেছে। গাজার একটি এলাকা থেকে বসতি অপসারণে ইসরাইলকে করেছে বাধ্য। পিএলও নয়, হামাস ইসরাইলের মূল শত্রু। হামাস যুক্তরাষ্ট্রের ও তার দোসরদের চক্ষুশূল। গাজা সঙ্কটে হামাসের ইমেজ উন্নত হচ্ছে দেখে ‘ভারসাম্য’ আনতে মার্কিনিরা আব্বাসদের মর্যাদা বাড়াতে চেয়েছে বলে ভাষ্যকারেরা মনে করেন। তাদের ধারণা, সে জন্যই ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘে স্বীকৃতি লাভের পরিবেশ যাতে এবার সৃষ্টি হয়, তা চেয়েছে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য। ইসরাইল এখন ক্রোধে উন্মত্ত। ফিলিস্তিন মাত্র ‘রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে জাতিসঙ্ঘে; এখনো সদস্যই হতে পারেনিÑ এতেই ইসরাইলের যে জঘন্য প্রতিক্রিয়া, ফিলিস্তিন বিশ্বসংস্থায় পূর্ণাঙ্গ সদস্য হলে না জানি, সে কত ভয়াবহ আচরণ করবে। জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ভোটাভুটির পরদিনই ইসরাইল ঘোষণা দিয়েছে, পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ইহুদিদের আরো তিন হাজার বাড়ি তৈরি করা হবে। এই সিদ্ধান্ত এতই অপ্রত্যাশিত ও স্পর্ধামূলক যে, তার মুরব্বি যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ না করে পারেনি। মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষপর্যায়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলা হয়, বসতি সম্প্রসারণের এই উদ্যোগ শান্তিপ্রক্রিয়াকে বিঘিœত করবে। তবে বিশ্বে নিন্দার ঢেউ উঠলে কী হবে, যুক্তরাষ্ট্রের মদদেই ইহুদি রাষ্ট্রশক্তি এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ‘কারো চাপে পিছিয়ে যাবো না’ বলে জানিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। তদুপরি, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রাপ্য কর ও শুল্কের অর্থ নিয়মমাফিক শোধ না করে আটকে দেয়ার ঔদ্ধত্যও দেখাচ্ছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য হতে হবে, যত শিগগির সম্ভব জাতিসঙ্ঘের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ পাওয়া। তাহলে ইসরাইলের কূটনৈতিক পরাজয় পূর্ণ হবে। তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনি জনগণের অবস্থান ও দাবিদাওয়া কার্যকরভাবে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা যাবে। এর আগে নিজেদের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আল ফাতাহ বনাম হামাস বিরোধ ফিলিস্তিনিদের মুক্তিসংগ্রামকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমতীর আর হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা শুধু ভৌগোলিকভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়, এটা দুই সংগঠনের রাজনৈতিক ও মানসিক বিচ্ছিন্নতারও প্রতীক হয়ে আছে। ইসরাইল ও আমেরিকা ফিলিস্তিনিদের ঐক্য চাইবে না। তাদের উদ্দেশ্য, হামাসকে কোণঠাসা করে ফাতাহকে ব্যবহার করা।’ তাই মার্কিন প্রশাসনসহ পাশ্চাত্যের মতিগতি সম্পর্কে সতর্ক থেকে তাদের অপপ্রভাব মোকাবেলার সাহস ও দৃঢ়তা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের থাকা চাই। পশ্চিমতীর ও গাজা মিলেই ফিলিস্তিন প্রশাসনের এলাকা পূর্ণাঙ্গ হবে। তেমনি ফাতাহ ও হামাসের সম্মিলনেই ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব সম্পূর্ণ হতে পারে। ফাতাহর কূটনীতি আর হামাসের রণনীতি, দুটোই ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিপরীতে অপরিহার্য। এই দু’টির সমন্বয় ও সুপ্রয়োগ ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যে পৌঁছতে বিরাট সহায়ক হবে। সজাগ থাকতে হবে, মাহমুদ আব্বাসদের সংলাপ যেন আপস এবং ইসমাঈল হানিয়াদের সংগ্রাম যাতে হঠকারিতায় পরিণত না হয়। সর্বশেষ খবর, হামাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত খালিদ মিশাল ৪৫ বছরের নির্বাসিত জীবনশেষে জন্মভূমি ফিলিস্তিনে ফিরেছেন। কাতার থেকে রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশের সময় হামাস নেতারা তাকে স্বাগত জানান। তিনি স্বদেশের মাটিতে শহীদ হওয়ার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন। কৈশোরে তিনি পরিবারের সাথে প্রথমে কুয়েত চলে গিয়েছিলেন। তার উপস্থিতি হামাসের প্রতিরোধ সংগ্রামে আরো প্রেরণা জোগাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৮ ডিসেম্বর হামাসের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিনি গাজায় এলেন। উরি আভনারি একটি পরিচিত নাম। ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরাইলের এই শান্তিবাদী কলামিস্টের সাহসী লেখা বরাবরই মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিবাদের আগ্রাসী স্বরূপ উন্মোচন করেছে। ফিলিস্তিনি জনগণের মানবাধিকারের সপক্ষে তার লেখনী সততা, নিরপেক্ষতা ও দায়িত্ববোধের দৃষ্টান্ত। আভনারি ইহুদি সৈনিক হিসেবে ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের প্রতিষ্ঠালগ্নে আরবদের বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তবে অচিরেই তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব রাষ্ট্রের সপক্ষে প্রচার করাকে অনেকটা জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন এবং লেখার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে জনমত গঠনে অবতীর্ণ হন। তিনি ইসরাইলি পার্লামেন্ট ‘নেসেট’-এর নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। এখন ‘গুশ শালোম’ শান্তিবাদী সংগঠনের মাধ্যমে তার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। কাউন্টার পাঞ্চের বই ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ অহঃর-ঝবসরঃরংস-এর তিনি অন্যতম লেখক। এবার ফিলিস্তিন জাতিসঙ্ঘের কাছ থেকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে আভনারির এই লেখা : দিনটি আনন্দের। এই আনন্দ ফিলিস্তিনি জনগণের। যারা ইসরাইল ও আরব জগতের মাঝে শান্তির আশা করেন, তাদের সবার এই আনন্দ। আর কিঞ্চিৎ হলেও এই আনন্দ ব্যক্তিগতভাবে আমারও। বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসঙ্ঘ। এর সাধারণ পরিষদ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দিয়েছে, যদিও তা সীমিতভাবে। ৬৫ বছর আগে একই দিনে এই জাতিসঙ্ঘ ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন ভাগ করে ইহুদিদের একটি এবং মুসলমানদের একটি রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে প্রস্তাব নিয়েছিল। সেই প্রস্তাবটিই দীর্ঘ দিন পর এবার আবার নিশ্চিত করা হলো। আশা করি, আমার ব্যক্তিগত আনন্দ উদযাপনের কয়েকটি মুহূর্তের কথা বললে পাঠক তাতে কিছু মনে করবেন না। ১৯৪৮ সালে জাতিসঙ্ঘের প্রথম প্রস্তাবটির পর যুদ্ধ হয়েছিল। তখন এই উপসংহারে পৌঁছি যে, ফিলিস্তিনি নামে একটি জাতি আছে এবং নতুন রাষ্ট্র ইসরাইলের পাশেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা শান্তির পূর্বশর্ত। একজন সাধারণ সৈন্য হিসেবে ফিলিস্তিনের আরব অধিবাসীদের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। দেখেছি, কিভাবে আরবদের বহু শহর ও গ্রাম ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল আর হয়ে পড়েছিল বিরান। জীবনে প্রথমবারের মতো মিসরীয় সৈন্য দেখার বহু আগেই ফিলিস্তিনের জনগণকে দেখেছি। তারা যুদ্ধ শুরু করেছিল তাদের জন্মভূমির জন্য। যুদ্ধের আগে আশা করেছিলাম, দেশের ঐক্য বজায় রাখা যাবে। উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই এই ঐক্য ছিল প্রিয়। তবে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করলাম, বাস্তবে সে স্বপ্ন চিরতরে নস্যাৎ হয়ে গেছে। ১৯৪৯ সালের শুরুর দিকে ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’-এর উদ্যোগ নিতে চেষ্টা করেছিলাম। তখনো আমার গায়ে সামরিক উর্দি। এই প্রয়াসে হাইফায় দু’জন তরুণ আরবের সাথে দেখা করি। এদের একজন মুসলিম, অন্য জন দ্রুজ শেখ। তাদের দু’জনই আমার আগেই ইসরাইলি পার্লামেন্ট ‘নেসেট’-এর সদস্য হয়েছেন। তখন মনে হয়েছিল, আমার মিশনটি একটা অসম্ভব কাজ। ফিলিস্তিন মুছে গিয়েছিল ম্যাপ থেকে। দেশটির ৭৮ শতাংশই হয়ে গেল ‘ইসরাইল’। বাকিটা জর্ডান আর মিসরের মাঝে ভাগ হয়ে যায়। ফিলিস্তিনি জাতির অস্তিত্ব পর্যন্ত ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে অস্বীকার করেছিল। প্রকৃতপক্ষে এই অস্বীকৃতি হয়ে গিয়েছিল তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ। বহু দিন পরে (সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী) গোল্ডা মেয়ার এই আলোচিত ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ’ বলতে কোনো কিছু নেই।’ এ দিকে সম্মানিত কিছু লোক যারা নিজেদের জ্ঞান ও যোগ্যতার বিষয়ে অতিরিক্ত ধারণা পোষণ করতেন, তারা বই লিখে ‘প্রমাণ’ করতে থাকেন, ‘ফিলিস্তিনি আরবেরা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার ভান করছে। ওরা মাত্র কিছু দিন আগে ফিলিস্তিনে এসেছে।’ আর ইসরাইলি নেতারা নিশ্চিত হলেন যে, ফিলিস্তিন সঙ্কটের ল্যাঠা চিরদিনের জন্যই চুকে গেছে। ১৯৪৯ সালে সারা দুনিয়ায় মাত্র এক শ’ মানুষও ছিলেন না, যারা মনে করতেন দুই রাষ্ট্র গঠন করে ফিলিস্তিন ইস্যু সুরাহা করা যায়। একটি দেশও সমাধানের এই পন্থা সমর্থন করেনি। আরব দেশগুলো বিশ্বাস করত, ইসরাইল তো মুছেই যাবে। এ দিকে ব্রিটেন সমর্থন দিলো তার ‘খদ্দের রাষ্ট্র’ জর্ডানের হাশেমি রাজবংশকে। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ‘পাহলোয়ান’ ছিল এই অঞ্চলে। স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থন দিলো ইসরাইলকে। আমাকে একাকী সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়েছে। সংবাদ সাময়িকীর সম্পাদক হিসেবে একটানা ৪০টি বছর প্রায় প্রতি সপ্তাহেই দুই রাষ্ট্র তত্ত্ব তুলে ধরেছি। নেসেটে নির্বাচিত হয়ে সেখানেও এই ভূমিকা রেখেছি। ১৯৬৮ সালে গেলাম ওয়াশিংটন। উদ্দেশ্য, আমার সে আইডিয়ার প্রচার। আমাকে ভদ্রভাবে স্বাগত জানান সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্তারা। তাদের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জোসেফ সিস্কো, হোয়াইট হাউজের হ্যারল্ড সন্ডার্স, জাতিসঙ্ঘে মার্কিন মিশনের চার্লস ইয়োস্ট। নেতৃস্থানীয় সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানরাও আমাকে বিনম্রভাবে গ্রহণ করেন। একই আচরণ পাই আলোচিত ‘২৪২ নম্বর প্রস্তাবের পিতা’, ব্রিটেনের লর্ড ক্যারাডনের কাছ থেকে। তাদের সবার অভিন্ন জবাব : ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমি দুই রাষ্ট্র সমাধান ফর্মুলার পক্ষে একটি বই লিখি। এর প্রতিক্রিয়ায় ’৭০ সালে বৈরুতভিত্তিক পিএলও আমাকে আক্রমণ করল একটি বইর মাধ্যমে। এর নাম, ‘উরি আভনারি ও নব্য ইহুদিবাদ।’ আর আজ বিশ্বে এই মর্মে ঐকমত্য কায়েম হয়েছে যে, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ব্যতীত এই সঙ্কটের সমাধানের প্রশ্নই ওঠে না।’ অতএব, এখন কেন আনন্দ করব না? তবে ঠিক এখন কেন তা হবে? কেন এটা আগে ঘটেনি কিংবা এতে আরো দেরি হয়নি? এর কারণ, পিলার অব ক্লাউড (মেঘের স্তম্ভ) অপারেশন। এটা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, এহুদ বারাক ও আভিগদর লিবারম্যানের ঐতিহাসিক উপহার। বাইবেলে স্যামসন নামক বীরের উল্লেখ আছে। তিনি খালি হাতেই একটা সিংহকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছিলেন। আবার যখন সেখানে ফিরে এলেন, দেখলেনÑ একঝাঁক মৌমাছি সিংহটির মৃতদেহকে আশ্রয় করে মৌচাক বানিয়েছে, যেখানে সঞ্চয় করেছে মধু। এই অবস্থায় স্যামসন একটি ধাঁধার জবাব চাইলেন ফিলিস্তিনের বনি ইসরাইলের শত্রুদের কাছে। তা হলো, ‘কোন শক্তিশালীর দেহ থেকে মিষ্টতা পাওয়া যায়?’ এখন এটা হিব্রু ভাষার একটি প্রবচন। ভালো কথা, গাজার বিরুদ্ধে ‘শক্তিশালী’ ইসরাইলের সামরিক অভিযান থেকে আসলেই এখন সুমিষ্ট রস বেরিয়ে আসছে। এটা একটা নিয়মকে আবার নিশ্চিতভাবে তুলে ধরছে। তা হচ্ছে, ‘যখন আপনি কোনো যুদ্ধ বা বিপ্লব শুরু করেন, এর কী ফল দাঁড়াবে, তা জানেন না।’ সে অভিযানের একটি ফল হলো, হামাসের মর্যাদা ও জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়েছে। অন্য দিকে মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) আরো তলিয়ে গেল। এই পরিণতি সম্ভবত পাশ্চাত্যের সহ্য হয়নি। ‘মধ্যপন্থী’দের পরাজয় এবং ইসলামি ‘চরমপন্থী’দের বিজয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং গোটা পশ্চিমা শিবিরের জন্য ছিল বিপর্যয়। তাই আব্বাসকে বিরাট অর্জনতুল্য কিছু দেয়া জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। সৌভাগ্যক্রমে ‘রাষ্ট্র’ হিসেবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেয়ার প্রক্রিয়া আগে থেকেই চলছিল জাতিসঙ্ঘে (যদিও বিশ্বসংস্থার পূর্ণ সদস্যরূপে নয়)। মাহমুদ আব্বাস হতাশা নিয়ে এই প্রয়াস চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ তা বিজয়ের আলো হয়ে দেখা দিলো। হামাস আর ফাতাহর মাঝে যে প্রতিযোগিতা, তাকে দেখা হয় ফিলিস্তিন ইস্যুর জন্য একটি দুর্যোগ হিসেবে। তবে এই বিষয়টিকে অন্যভাবেও দেখা যেতে পারে। চলুন, আমাদের নিজেদের ইতিহাসের দিকে ফিরে যাই। ৩০ ও ৪০-এর দশকে আমাদের ‘মুক্তি সংগ্রাম’ (এভাবেই আমরা সে আন্দোলনকে উল্লেখ করেছিলাম) দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। তাদের পরস্পরের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ বাড়ছিল দিন দিন। এক পক্ষে ছিল ‘অফিসিয়াল’ নেতৃত্ব। এর প্রধান ছিলেন ডেভিড বেনগুরিওন। তাদের ‘জুয়িশ এজেন্সি’ ব্রিটিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছিল। এর সামরিক শাখার নাম হাগানাহ। আধাসরকারি এই বিরাট বাহিনীকে ব্রিটিশরা মোটামুটি সহ্য করত। (ইহুদিদের মধ্যে) অন্য পক্ষে ছিল ইরগুন বা জাতীয় সামরিক সংগঠন। এটা জাতীয়তাবাদী ‘সংশোধনপন্থী’দের দলের সামরিক শাখা। দলটির নেতা ভøাদিমির জাবোতিনস্কি। ইরগুন হাগানার চেয়ে অনেক বেশি র‌্যাডিকেল ছিল। ইরগুন ভেঙে আরো র‌্যাডিকেল সংগঠন জন্ম নেয়, ব্রিটিশরা যার নাম দিয়েছিল ‘স্টার্ন গ্যাং’। কারণ এর নেতৃত্বে ছিলেন আভ্রাহাম স্টার্ন। এসব সংগঠনের মধ্যে শত্রুতা ছিল তীব্র। এক সময়ে হাগানাহর সদস্যরা ইরগুন যোদ্ধাদের অপহরণ করে ধরিয়ে দিত ব্রিটিশ পুলিশের কাছে। আর পুলিশ ওদের নির্যাতন করে আফ্রিকার শিবিরগুলোতে পাঠিয়ে দিত। এদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী ভ্রাতৃঘাতী লড়াই এড়ানো গেছে কেবল এই কারণে যে, ইরগুন নেতা মেনাচেম বেগিন প্রতিশোধমূলক সব ধরনের কাজ নিষিদ্ধ করেছিলেন। এর বিপরীতে, স্টার্ন দলের লোকজন হাগানাহকে সোজাসুজি বলে দিয়েছিল, ‘আমাদের সদস্যদের ওপর কেউ হামলা করতে চাইলে তাকে গুলি করবো।’ এই দুই পক্ষকে একই দেহের দুই বাহু হিসেবে দেখা যায়। ইরগুন ও স্টার্ন-এর ‘সন্ত্রাসবাদ’ ইহুদিবাদী নেতাদের কূটনীতির পরিপূরক হয়েছিল। কূটনীতিকেরা যোদ্ধাদের অর্জনকে কাজে লাগিয়েছিলেন। ‘সন্ত্রাসবাদী’দের জনপ্রিয়তা বাড়তে দেখে ব্রিটিশরা বেন-গুরিওনকে ছাড় দিয়েছিল। আমার এক বন্ধু ইরগুনকে বলত, ‘ইহুদি সংগঠনের মধ্যে গুলি করার সংগঠন।’ এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে, এখন ফিলিস্তিনি শিবিরে একই অবস্থা। বছরের পর বছর ইসরাইল সরকার মাহমুদ আব্বাসকে হুমকি দিয়েছে, ‘জাতিসঙ্ঘে যাওয়ার সাহস দেখালে তোমাদের পরিণতি খারাপ হবে।’ অর্থাৎ, তখন ইসরাইল নিদেনপক্ষে যা করবে, তা হলোÑ অসলো চুক্তি বাতিল এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে ধ্বংস করে দেবে। (ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) লিবারম্যান বললেন, ফিলিস্তিনিদের জাতিসঙ্ঘে যাওয়ার প্রয়াস ‘কূটনৈতিক সন্ত্রাসবাদ’। আর এখন? কিছুই না। একটা শব্দও হয়নি। টোকা পর্যন্ত দিলো না। এমনকি নেতানিয়াহু বুঝতে পারছেন, গাজায় অপারেশন পিলার অব ক্লাউড এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে, আব্বাসের প্রতি বিশ্বের সমর্থন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এখন কী করা যায়? এমন ভান করুন যে, গোটা ব্যাপারটা একটা তামাশা। কে পরোয়া করে? এসব জাতিসঙ্ঘ-টাতিসঙ্ঘ আবার কী? এগুলো দিয়ে কী হবে?’ নেতানিয়াহু আরেকটা বিষয় নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তায়। ঘটনাটা এই সপ্তাহে ঘটেছে। তা হলো, লিকুদ পার্টির প্রাথমিক নির্বাচনে সব ‘মধ্যপন্থী’কে অপমানজনকভাবে লাথি মেরে ফেলে দেয়া হয়েছে। উদার, গণতন্ত্রীদের কাউকে এর থেকে বাদ দেয়া হয়নি। আগামী পার্লামেন্টে লিকুদ ও বেইতেনু দলের মিলিত গ্রুপটি পুরোপুরি গঠিত হবে চরমপন্থীদের দ্বারা। এদের মধ্যে আছে আস্ত ফ্যাসিবাদীরা। এরা সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীনতা ধ্বংস করতে চায়। তারা চায় পশ্চিমতীরকে ঘন ইহুদিবসতি দিয়ে ভরিয়ে দিতে। সম্ভাব্য সব উপায়ে শান্তি নস্যাৎ এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে প্রতিরোধ করতে চায় তারা। আসন্ন নির্বাচনে নেতানিয়াহুর জয় নিশ্চিত। তা হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন। তবে তিনি এতটা চালাক যে, নিজে এখন কোন অবস্থানে, তা বুঝতে পারছেন না। তিনি চরমপন্থীদের হাতে জিম্মি। শান্তির প্রয়াসী হলে পার্লামেন্টে তার লোকেরাই ছুড়ে ফেলবে তাকে। তখন যেকোনো সময় লিবারম্যান বা আরো মন্দ কেউ তাকে সরিয়ে দেবে। প্রথম নজরে মনে হতে পারে, কিছুই বদলায়নি। তবে এটা নেহাত প্রথম দৃষ্টি। যা ঘটেছে, তা হলোÑ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভিত্তিটা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। এটাই এবার বিশ্বসম্প্রদায়ের লক্ষ্য ছিল। এখন আলোচনার টেবিলের জন্য ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ই ফিলিস্তিন ইস্যু সুরাহার একমাত্র পথ। এক রাষ্ট্রের ফর্মুলা হয়তো এক সময়ে জীবিত ছিল। এখন তা অতীতের ডোডো পাখির মতো মৃত। অবশ্যই বর্তমান বাস্তবতা হলোÑ বর্ণবাদী এক রাষ্ট্র। যদি কার্যত পরিবর্তন না আসে, তা হলে এই বর্ণবাদ আরো গভীর ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। প্রায় প্রত্যেক দিন খবর আসে, এই রাষ্ট্রটি আরো জেঁকে বসছে। এই তো এবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ইসরাইলে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা বাস থাকবে। অবশ্য ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের সহাবস্থানের ওপর ভিত্তি করে শান্তির অনুসন্ধান প্রয়াসে বিরাট অগ্রগতি হয়েছে। এখন ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ঐক্য প্রতিষ্ঠার পালা সম্পন্ন হওয়া উচিত। এর পরপরই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রকৃত প্রতিষ্ঠায় মার্কিন সমর্থন আসা দরকার। ‘শক্তিশালীকে অবশ্যই মিষ্টতা উপহার দিতে হবে।’ লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির