post

বালাকোট দিবস

১৯ এপ্রিল ২০১৫

Balakot৬ মে ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস। ১৮৩০ সালের এই দিনে বালাকোটের ময়দানে এক অসম যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন শাহ সৈয়দ আহমদ  বেরুলভি (রহ.) ও তাঁর সহযোদ্ধারা। ভারতীয় উপমহাদেশে তৎকালীন মুসলমানদের প্রাণ পুরুষ ছিলেন শাহ সৈয়দ আহমদ  বেরুলভি (রহ.)। আজও তিনি অত্যন্ত সম্মানের পাত্র হয়ে আছেন।  বালাকোটের শহীদদের প্রেরণায় ভারতে মুসলমানগণ আজাদী আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথক আবাসভূমি লাভে উজ্জীবিত হয়েছিলেন। সারা উপমহাদেশ থেকে উৎসাহী যুবক ও ইসলামী চিন্তাবিদদের নিয়ে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করেন। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী মুজাহিদগণ ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রসিদ্ধ নগরী  পেশোয়ার দখল করে শাহ সৈয়দ আহমদ বেরুলভি (র.)  সেখানেই প্রধান কর্মকেন্দ্র স্থাপন করেন।    সৈয়দ আহমদ  বেরুলভির বাহিনীর সাথে কয়েকটি যুদ্ধে শিখ ও ব্রিটিশ বাহিনী পরাজিত হয়। সারা ভারতের মুসলমানদের নিকট শাহ সৈয়দ আহমদ  বেরুলভি (র.) অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। সম্মুখ সমরে মুজাহিদ বাহিনীর সাথে টিকে উঠা সম্ভব নয় এ ভেবে বৃটিশ ও শিখ নরপতিগণ কূটকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করলো। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ইবনে কাসিমের সফল সিন্ধু অভিযানের মধ্য দিয়ে ভারত উপমহাদেশে মুসলমানগণের আনুষ্ঠানিক আগমন ঘটে। মুহাম্মদ বিন কাসিমের আগমনের পূর্বে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে পারস্য ও মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান, খোরাসান, তাজাকিস্তানসহ আফগানিস্তানে মুসলিম অধিকার বিস্তৃত হয়ে তৌহিদী ঝাণ্ডা চীনের প্রাচীরের দিকে ধাবিত হয়। ইসলামের দাওয়াতী অভিযান এই উপমহাদেশের দ্বারপ্রান্তে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের পর আফগান শাসক সুলতান মাহমুদ বারংবার ভারত আক্রমণ করে উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করেন। সুলতান মাহমুদের পর মুহাম্মদ ঘোরী দিলীতে মুসলিম স¤্রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করে ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল মুসলিম শাসনাধীনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। যা হোক মুহাম্মদ বিন কাসিম থেকে নবাব সিরাজদ্দৌলা পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বছর মুসলমানগণ এই উপমহাদেশে শাসন কার্য চালিয়েছেন। পরবর্তীতে মুসলিম শাসক ও সমরবিদগণ নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে বিলাসিতা, ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এ সুযোগে ইউরোপের উদীয়মান শক্তি ইংরেজ ও ফরাসীগণ ভারতে তাদের স¤্রাজ্যবিস্তারের প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করে। উপমহাদেশের বিচ্ছিন্ন মুসলিম শক্তি এই বিদেশি বেনিয়াদের মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হবার পরিবর্তে এক মুসলমান অন্য মুসলমান ভাইয়ের ক্ষমতা খর্ব করার লক্ষ্যে বিদেশিদের সাহায্য কামনা করতে থাকে। ভারতের অমুসলিম বিশেষ করে রাজপুত, মারাঠা ও শিখগণ এদেশ থেকে মুসলমানদের বিতাড়ণের  মোক্ষম সুযোগ বুঝে ইউরোপীয় শক্তিকে সর্বাত্মক সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করে। ১৭৫৭ সালে ইংরেজগণ বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে শঠতার মাধ্যমে পরাজিত করে বাংলাসহ ধীরে ধীরে গোটা উপমহাদেশ তারা পদানত করে। শাহ সৈয়দ আহমদ বেরুলভির (র.) জ্বালাময়ী বক্তৃতায় মুসলমানদের মনে স্বাধীনতার আকাঙ্খা জাগ্রত হতে থাকে। তার সংগ্রামী প্রচারণার কঠিন কষাঘাতে মুসলিম জাতি অলসতার শয্যা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়াতে থাকে। প্রচার ও সাংগঠনিক কাজের সুবিধার্থে শাহ সৈয়দ (র.) গোটা ভারতকে চারটি ভাগে বিভক্ত করে পৃথক পৃথক দায়িত্বশীল নিয়োগ করেন। শাহ সৈয়দ  বেরুলভি (র.) জিহাদ আন্দোলনের প্রস্তুতিপর্বে বহু সংখ্যক শিষ্যসহ মক্কায় হজ্ব ও ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে গমন করেন। ঐ সময় আরব উপদ্বীপে মুহম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব নজদীর নেতৃত্বে শিরক ও বিদআত বিরোধী এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সারা উপমহাদেশ থেকে উৎসাহী যুবক ও ইসলামী চিন্তাবিদদের নিয়ে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করেন। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী মুজাহিদগণ ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রসিদ্ধ নগরী পেশোয়ার দখল করে শাহ সৈয়দ আহমদ বেরুলভি (র.) সেখানেই প্রধান কর্মকেন্দ্র স্থাপন করেন। সৈয়দ আহমদের বাহিনীর সাথে কয়েকটি যুদ্ধে শিখ ও ব্রিটিশ বাহিনী পরাজিত হয়। সারা ভারতের মুসলমানদের নিকট শাহ সৈয়দ আহমদ বেরুলভি (র.) অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। সম্মুখ সমরে মুজাহিদ বাহিনীর সাথে টিকে উঠা সম্ভব নয় এ ভেবে ব্রিটিশ ও শিখ নরপতিগণ কূটকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করলো। মুসলমান সমাজে বিশ্বাসঘাতক তথা মোনাফেকদের অভাব কোন কালেই ছিল না। সীমান্তের প্রধান জমিদার ও গোত্রপতিগণকে ইংরেজ ও শিখ শাসকেরা বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখিয়ে বশীভূত করে ফেললো।  মোনাফেক প্রধান সর্দারগণ মুজাহিদদের যাবতীয় তথ্যাদি ইংরেজ ও শিখদের নিকট গোপনে সরবরাহ করতে লাগলো এবং সুসংগঠিত মুজাহিদ বাহিনীর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ভাঙন সৃষ্টি করতে লাগলো। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শাহ সৈয়দ আহমদ (র.) ও মাওলানা শাহ ইসমাঈল এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পেশোয়ার থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের কর্মকেন্দ্র স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। এ সংবাদও মুনাফেক সর্দাররা দুশমনদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। মোক্ষম সুযোগ বুঝে শিখ সেনাপতি শেরসিংহ তার বিশাল বাহিনী নিয়ে মুজাহিদদের মূল ঘাঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন শাহ সৈয়দ আহমদ বেরুলভি (র.) ও শাহ মাওলানা ইসমাঈল (র.)কে বালাকোটে আক্রমণ করে বসে। শহীদি মৃত্যু প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ মুজাহিদদ্বয় আলাহর দ্বীনের স্বার্থে অতুলনীয় বীরদর্পে লড়াই করে শাহাদাতের অম্লান গৌরব অর্জন করেন। ১৮৩০ সালের ৬ মে বালাকোটের এই অসম সমরে শাহ সৈয়দ আহমদ বেরুলভি (র.) তার সহযোদ্ধাসহ যেভাবে অতুলনীয় বীরত্বের স্বাক্ষর রেখে আলাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন তাতে মুতা, ইয়ামামা ও কারবালার শহীদদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। ঐ দিন তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও তাদেরই প্রেরণায় ভারতে মুসলমানগণ আজাদী আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথক আবাসভূমি লাভে উজ্জীবিত হয়েছিলেন। - ছাত্র সংবাদ ডেস্ক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির