post

মহররম : বিস্মৃত যেই ইতিহাস জাফর আহমাদ

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

মহররম যুগ যুগান্তরের অনেকগুলো ঘটনার ভার বহন করে কালচক্রের পাখায় চরে বারবার আমাদের সামনে আসে। আরবি বর্ষ-পরিক্রমার এটি প্রথম মাস। এটি ‘আশহারুল হুরুম’ হারামকৃত মাস চারটির একটি। মহররম মানে সম্মানিত। নামের মাধ্যমেই সম্মানিত ও মর্যাদা পরিস্ফুট হয়েছে। ইসলামী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল আলোচিত ঘটনাসমূহ এ মাসেই সংঘটিত হয়েছে। এ মাসেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো ১০ মহররম, যা আশুরা নামে অধিক পরিচিত। ইতিহাসের নানা ঘটনায় ভরপুর এ দিনটি। এদিন আল্লাহ তায়ালা মুসা আ. ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছেন এবং ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম সা. মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। নবীজি সা. বললেন, এটি কী? তারা বললো, এটি একটি ভালো দিন। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা আ. রোজা পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি রোজা রেখেছেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি-১৮৬৫) ইমাম আহমাদ (রহ) বর্ণনা করেছেন, “এটি সেই দিন যাতে নুহ আ.-এর কিশতি জুদি পাহাড়ে স্থির হয়েছিল, তাই নুহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়স্বরূপ রোজা রেখেছিলেন।” এই মাসে বা আশুরার দিনে কী হয়েছে বা কী হবে তা বর্ণনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এ মাসে এ দিনে প্রেরণার একটি বাতিঘর রয়েছে, যেটিকে পাশ্চাত্য ও দেশীয় ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী ভেঙে তথায় একটি রঙিন বাতিঘর স্থাপন করেছে। যাতে মুসলমানগণ কোন দিন সে প্রেরণায় উজ্জীবিত হতে না পারে। মুসলমান ষড়যন্ত্রমূলক রঙিন সেই বাতিঘরের ধাঁয় ধাঁয় পড়ে ইমামের প্রতি সস্তা ভালোবাসা প্রকাশে মাতম করে করে শুধু বুকই ফাটিয়েছে। কিন্তু সঠিক প্রেরণার ইতিহাস তারা জানতে পারেনি এবং নিজেদেরকে উজ্জীবিত করতে পারেনি। মহররমের মূল চেতনার সেই ইতিহাসের পাতা থেকে বিশ্বমুসলিমকে ছিটকে ফেলে দেয়া বা বিস্মৃত করার পাশ্চাত্য টার্র্গেট সফল হয়েছে। এই সফলতার কারণেই এ দিনের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে একটিমাত্র চেতনা যা মুসলমানদের জানা ও উপলব্ধি করা একান্তই প্রয়োজন ছিল সেটিকে বাদ দিয়ে আমাদের সম্মানিত ইমাম সাহেবগণ হয় তা চেপে যান। তারা সঠিক চেতনার ইতিহাসটি বলার সাহস করেন না বা কালের বিস্মৃত ইতিহাসের কবলে তারাও নিমজ্জিত। ফলে শুধুমাত্র মুখরোচক ও উত্তেজিত ঘটনাগুলো বর্ণনা করে একান্তই কিসসা-কাহিনীর মতো সাময়িকভাবে মজাদান করা হয়। তাদের নিমিত্তে অনুরোধ মহররমের বিস্মৃত স্মৃতিকে মন্থন করুন। ইমামের প্রতি সুবিচার করুন। তিনি কী জন্য, কী কারণে ও কী উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তৎকালীন বাতিল ও জালিমশাহির মোকাবেলা করে গোটা পরিবারসহ শাহাদত বরণ করেছিলেন। আশুরায় দিনে সংঘটিত অসংখ্য ঘটনাবলির মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো কারবালার মরুপ্রান্তরে ইয়াজিদ কর্তৃক ইমাম হোসাইন রা. ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ড। পৃথিবী তার বিশাল বুকে যতগুলো দুঃখ আর বেদনাকে ধারণ করে এখনো টিকে আছে এবং যতগুলো মর্মান্তিক ঘটনা বা দুর্ঘটনা ইতিহাসকে বারবার কাঁদায়, তন্মোধ্য শাহাদতে কারবালা সর্বোচ্চ আসনকে সিক্ত করেছে। প্রতিটি মুসলমান পুরুষ ও নারী হযরত ইমাম হোসাইনের রা. শাহাদতের ঘটনায় আন্তরিক দুঃখ ও বেদনা প্রকাশ করে থাকে। নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. প্রতি ঈমানের স্বাভাবিক প্রতিফলন এবং মানবতার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এটি নিছক একটি হত্যাকাণ্ডই ছিল না, বরং এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাস তার সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্য দিকে মোড় নিয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ড যতটুকু বেদনাদায়ক তার চেয়েও বেদনাদায়ক হলো ইসলাম ও ইসলামী জীবনব্যবস্থা রাসূল সা. কর্তৃক প্রদর্শিত যেই রাস্তা বেয়ে পথ চলছিল, সেটি ইমামের হত্যার মাধ্যমে বাঁকা পথে মোড় নেয়। ইমাম পূর্ব থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাঁকা পথে আরোহণকারী ইসলাম নামক ট্রেনটির ড্রাইভার ট্রেনটিকে বাঁকা পথে নিয়ে যাচ্ছে। খুব সহসাই এর যাত্রীদের গোমরাহিতে নিমজ্জিত করবে। তাই তিনি পথভ্রষ্ট ড্রাইভারটিকে নামিয়ে ট্রেনটিকে সঠিক পথে তথা রাসূল সা. প্রদর্শিত পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাতিল রাষ্ট্রদণ্ডের ক্ষমতাবলে তাঁকে এগুতে দেয়া হয়নি। বরং রাস্তার এ বিশাল বাধাটিকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য তাঁকে সপরিবারে শহীদ করে দেয়া হয়। ইমামের হত্যার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রকে অন্ধকার পথে নিয়ে যাওয়ার আর কোন বাধা-বিপত্তি রইল না। হৃদয় আরো দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে যখন এমনটি হতে দেখা যায় যে, বিশ্ব মুসলিম ইমাম হোসাইন রা.-এর শাহাদতের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে ভুলে গিয়ে বেহুদা সব কাজে লিপ্ত হয়। মনে রাখতে হবে যে, আমরা যদি ইমাম হোসাইন রা.-এর মূল চেতনাকে উপলব্ধি না করি, তবে ভালোবাসার পরিবর্তে তাঁর প্রতি সুস্পষ্ট জুলুম করা হবে। কিয়ামতের দিন ইমাম যদি তাঁর রক্তমাখা জামা আর ছোট্ট শিশু বাচ্চাদের নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হন এবং আমাদের কাছে প্রশ্ন করে বসেন যে, আমি কি আমার ব্যক্তিগত কোন উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য শহীদ হয়েছিলাম? তখন আমাদের কি কোন জবাব থাকবে? সুতরাং আমাদেরকে সর্বপ্রথম সঠিক ইতিহাস এবং মহররমের সঠিক শিক্ষা জানতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী আমাদের কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে এবং মানুষের সামনে শাহাদতে কারবালার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। ইমাম যেই চেতনার কারণে তৎকালীন স্বৈরশাসক ও জালিমশাহির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই চেতনা মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তোলার বাধ্যতামূলক দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদেরকে ইতিহাসের নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানতে হবে- প্রথমত: উপলব্ধি করতে হবে যে, রাসূল সা. তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে ইসলামের যে গাছটি পরিপূর্ণ মহীরূপে রেখে গেছেন তার প্রথম থেকে শেষ অবধি চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়ভাজন হযরত হোসাইন রা.। সেই আদর্শিক গাছটির ডাল-পালা ইতোমধ্যে কেটে দেয়া হলো। কিন্তু যখন তার মূল কর্তন ও নতুন একটি বিষবৃক্ষ রোপণ করতে এগোয়, তখন তিনি এর গতি প্রতিরোধে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। আর এ জন্যই ইতিহাসের এ মর্মান্তিক অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত: জানতে হবে যে, ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল কথা হলো, সমাজ ও রাষ্ট্রের কোন পর্যায়ে পদ দাবি করার বা চেয়ে নেয়া যাবে না, আবার দায়িত্ব এলে তা শরয়ী ওজর ব্যতীত অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরাহ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা. আমাকে বলেছেন: “তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নিবে না। কেননা তুমি যদি চেয়ে নেতৃত্ব লাভ কর তাহলে তোমাকে উক্ত পদের হাওয়ালা হবে। (সে অবস্থায় তুমি আল্লাহর কোন সাহায্য পাবে না।) আর যদি কোন রকম প্রার্থনা করা ব্যতীত তুমি নেতৃত্ব লাভ করো, তাহলে আল্লাহর তরফ হতে তোমাকে দায়িত্ব পালনে সাহায্য করা হবে।” (বুখারী-মুসলিম) দ্বিতীয়ত: এটি কেবলমাত্র পুরুষানুক্রমিক বা বংশ পরস্পরায় গদিনশিন হওয়া বা মনোনীত করারও কোন বিষয় নয়। রাসূল সা. বলেছেন: “মুসলিম জনগণের সাথে পরামর্শ না করে কেউ কাউকে নেতা হিসেবে বাইয়াত করলে, সে বাইয়াত গ্রহণযোগ্য হবে না।” (মুসনাদে আহমাদ) ইসলাম নেতৃত্ব পরিবর্তন বা নেতৃত্ব বাছাই করার যে নিয়ম বা পন্থা বলে দিয়েছে, এটিই অত্যন্ত সুষম পন্থা, এর মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র সকল প্রকার বিকৃতি থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু এ পন্থা বাদ দিলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি ও স্বেচ্ছাচারিতা বাসা বাঁধে। ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল স্তরে অশান্তি আর অস্থিরতা প্রবল আকার ধারণ করে। বিদ্বেষ, পেশিশক্তি, সঙ্কীর্ণ গোত্র বা বংশমর্যাদা এবং কুৎসিত ঘরোয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘর্ষ দানা বেঁধে ওঠে। নেতৃত্বের পালাবদলের যে নিয়ম ইসলাম অনুমোদন দেয়নি, তৎকালীন নেতৃত্ব সেই নিয়মের দিকে অগ্রসরমান দেখে হযরত হোসাইন রা. শঙ্কিত হয়ে পড়েন। যেহেতু ইমাম ছিলেন একজন বিচক্ষণ, শরিয়তের অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি। হযরত রাসূলে আকরাম সা., হযরত আলী রা. ও হযরত ফাতিমা রা. যাকে কোলে-পিঠে করে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। যার শৈশব থেকে বার্ধক্য দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে সাহাবায়ে কেরামের উন্নত পরিবেশে। যিনি রাসূল সা. ও আমিরুল মুমিনিন হযরত আবু বকর থেকে হযরত আলী রা. পর্যন্ত রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক বিশেষত্ব নিজ চক্ষে অবলোকন করেছেন। যিনি ভালো করে জেনেছেন এবং দেখেছেন ইসলামী রাষ্ট্রের নেতৃত্বের পালাবদলের নিয়মতান্ত্রিক রূপরেখা। তিনি তৎকালীন শাসকবর্গের ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক দিক পরিবর্তনের ব্যাপারটি সহসাই বুঝতে পারেন এবং নিজের প্রজ্ঞা দিয়ে এর করুণ পরিণতির চিন্তা করেন। তাই তিনি দ্রুতগতিসম্পন্ন দিকবিভ্রান্ত গাড়িটি থামিয়ে তার সঠিক লাইনে পরিচালিত করার জন্য নিজের জান কোরবান করে দেন। তৃতীয়ত: অবৈধভাবে নেতৃত্বের পালাবদলের কারণে তৎকালীন নেতৃত্ব জুলুমতন্ত্র কায়েম করে। ইসলামী রাষ্ট্রের সকল স্তরে বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অশান্তি আর অস্থিরতা প্রবল আকার ধারণ করে। বিদ্বেষ, পেশিশক্তি, সঙ্ককীর্ণ গোত্র বা বংশমর্যাদা এবং কুৎসিত ঘরোয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘর্ষ দানা বেঁধে ওঠে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ চরমভাবে অসহায়, মানবিক অধিকার বঞ্চিত দাসানুদাসে পরিণত হতে থাকে। রাজতান্ত্রিক শাসনের ফলে জনগণের ওপর মর্মস্পর্শী স্বৈরাচারী শাসন পরিচালনা হতে থাকে এবং আল্লাহর বিধি-বিধান বিভিন্নভাবে অবহেলিত হতে থাকে। রাষ্ট্রের সহায়তায় মদ ও বারের আসন জমজমাট হতে থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠানে আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, সেগুলো গুরুত্বহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়। ইয়াজিদ একটি স্বৈরশাসকে পরিণত হয়ে চরম অহঙ্কারী ও সীমালঙ্ঘনকারীতে নিমজ্জিত হয়। সে যা চিন্তা করে, তার যৌক্তিকতা সকলকেই মেনে নিতে থাকে। তার কথাই হবে আইন, জনগণ তা অকুণ্ঠিত মনে ও নির্বাকচিত্তে মেনে নিতে হবে। কেউ তার স্বাধীন বিমুক্ত চিন্তা-বিবেচনা শক্তিও প্রয়োগ করতে পারছে না। ফলে হযরত হোসাইন রা. শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে স্বৈরশাসকের গতিরোধ করতে গিয়ে শহীদ হন। চতুর্থত: ইমাম হোসাইন রা.-এর শাহাদত আমাদের জন্য প্রেরণার বাতিঘর। আমাদেরকে ইমামের শাহাদতের মূল উদ্দেশ্য ভালো করে উপলব্ধি করতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্রের বুনিয়াদি নীতি সংরক্ষণের জন্য ইমামের শাহাদত ছিল এক ঐতিহাসিক নজরানা। আমাদেরকে প্রথমত: ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের পথে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই ইমামের প্রতি ভালোবাসার যথার্থতা প্রকাশ পাবে। মনে রাখতে হবে এ পথে বাদ সাধবে পৃথিবীর তাবৎ তাগুতি শক্তি ও কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। ইমাম হোসাইন রা.-এর মতো দৃঢ় ঈমান নিয়ে আমাদেরকে এ সকল শক্তির মোকাবেলায় এগিয়ে যেতে হবে। লেখক : প্রাবন্ধিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির