post

মিসর : গণতন্ত্র থেকে গণহত্যা

২৭ আগস্ট ২০১৩

আলফাজ আনাম

গণতন্ত্র নয়, সামরিক স্বৈরতন্ত্রের গণহত্যার নিষ্ঠুর রূপ এখন দেখছে মিসরের জনগণ। শুধু মিসর নয়, টেলিভিশনের কল্যাণে নির্মমতার লাইভ দৃশ্য বিশ্ববাসীও দেখছে। আরব বসন্ত এখন রক্তিম রূপ নিয়েছে। ইসলামপন্থী নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে সেকুলার রাজনীতিকÑ সেনা আঁতাত মিসরকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে মোবারক জামানায়। মিসর ও মুসলিম ব্রাদারহুডের ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানা বিশ্লেষণ চলছে। রক্তাক্ত এ আন্দোলনের শেষ পরিণতিই কী? বেসামরিক শাসনের মুখোশ পরা অন্তর্বরতী সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, আইনগত প্রক্রিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা হবে। যদিও জন্মের পর থেকে চার দশকের বেশি নিষিদ্ধ ছিল মুসলিম ব্রাদারহুড; কিন্তু অতীত ও বর্তমানের ব্রাদারহুডের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। মাত্র কয়েক দিন আগে দলটি ক্ষমতায় ছিল। পরিহাস হচ্ছে সামরিক অভ্যুত্থানে বেআইনিভাবে ক্ষমতাসীন সরকার এখন বিপুল ভোটে নির্বাচিত রাজনৈতিক দলকে ‘আইনিপ্রক্রিয়ায়’ নিষিদ্ধ করতে চাইছে। যদিও ব্রাদারহুড একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক বাহু হচ্ছে ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি। মিসরের সংবিধান অনুযায়ী ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে ব্রাদারহুড নিষিদ্ধে সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং এ নিষিদ্ধের সুযোগে মোবারক আমলের মতো জরুরি অবস্থা দীর্ঘায়িত হবে। গোয়েন্দা সংস্থা ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে জরুরি অবস্থাকে জায়েজ করা হবে। অতীতে মোবারক এ কৌশল নিয়েছিলেন। সংাবিধান স্থগিত ও নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে আটক করে সেনাপ্রধান জেনারেল আবুল ফাত্তাহ আল সিসি মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি মোবারককে দ্রুত ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এক দিকে মুক্ত মানুষ হিসেবে মোবারক বেরিয়ে আসছেন। অন্য দিকে মিসরের মানুষের মুক্তি ও গণতন্ত্রের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আন্দোলন ও আত্মত্যাগ তবে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলনে এক নজির স্থাপন করেছে মিসরের জনগণ। মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় ৩ জুলাই। এরপর তাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে ৪ জুলাই আন্দোলন শুরু হয়। ১৪ আগস্ট গণহত্যার আগ পর্যন্ত নাসের সিটির রাবা আল উদইয়া মসজিদ ও নাহদা স্কোয়ারে টানা অবস্থান করেন প্রেসিডেন্ট মুরসির সমর্থকেরা। তাহরির স্কোয়ারে ১৭ দিনের টানা আন্দোলনে মোবারকের পতন হয়েছিল। আর মুসলিম ব্রাদারহুড নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ফিরিয়ে আনতে টানা ৪১ দিন রাজপথে অবস্থান করেছে। এরপর মিসরের রাজপথ প্রতিদিন রক্তাক্ত হচ্ছে। সহিংস আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পরও মুসলিম ব্রাদারহুড বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি। বরং এসব বিক্ষোভে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি আরো বাড়ছে। আন্দোলনে শুধু ব্রাদারহুডের সমর্থকেরা নন, অ্যান্টি ক্যু অ্যালায়েন্সে দেশের অপর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি সালাফি গ্রুপগুলোও ব্রাদারহুডের সাথে যোগ দিয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি ও কারফিউ ঘোষণার পরও এ আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ প্রতিফলিত হচ্ছে। ব্রাদারহুডের নেতৃত্ব সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেনাবিরোধী এ আন্দোলনে দলটির কারাবন্দী আধ্যাত্মিক নেতা মোহাম্মদ বদিইর ছেলে আম্মার বদি মারা গেছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে মোহাম্মদ বদিইকে। অপর নেতা মুসলিম ব্রাদারহুডের সেক্রেটারি মুহাম্মদ বেলতাগির ১৭ বছরের মেয়ে আসমা বেলতাগি এবং কারাবন্দী ভাইস প্রেসিডেন্ট খাইরাত আল সাতিরের মেয়ে ও জামাই সেনা অভিযানে নিহত হয়েছেন। সরাসরি রাজপথের আন্দোলনে দলটির মধ্যম সারির আরো অনেক নেতা মারা গেছেন। স্বাভাবিকভাবে দলটির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর এ ধরনের আত্মত্যাগের বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। আন্দোলনকে আরো বেশি নৈতিক শক্তি জোগাচ্ছে। মুরসির পুনর্বহাল আন্দোলন আসলে সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে; কিন্তু এর পরও সেনাবাহিনী পিছু হটবে তারও কোনো সম্ভাবনা নেই; বরং আরো কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে। গৃহযুদ্ধ না ব্যর্থরাষ্ট্র এ ধরনের পরিস্থিতিতে মিসরে সেনাবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেমনটি ১৯৯২ সালে আলজেরিয়ায় শুরু হয়েছিল। ইসলামিক সলভেশন ফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হলেও সেনাবাহিনী ফল মেনে নিতে অস্বীকার করে। এ গৃহযুদ্ধে প্রায় দুই লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটেছিল; কিন্তু আলজেরিয়ার মতো মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সশস্ত্র পথে যাবে এমনটি মনে করেন না অনেক বিশ্লেষক। কারণ মুসলিম ব্রাদারহুড মূলত সামাজিক শক্তি হিসেবে মিসরের জনসমর্থন পেয়েছে। আনোয়ার সাদাত ও মোবারকের দমনাভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে দলটির ক্ষুদ্র একটি অংশ সশস্ত্র লডড়াইয়ে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা শক্তি অর্জন করতে পারেনি। মুসলিম ব্রাদারহুডের মূল নেতৃত্বের সাথে তাদের আর সর্ম্পক ছিল না। বর্তমান পরিস্থিতিতে রক্তস্নাত আন্দোলনের মধ্যেও দলটির নেতারা বারবার বলছেন তারা গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সেনাশাসনের অবসান ঘটাতে চান। যদিও সেনাশাসক ব্রাদারহুডের আন্দোলনকে সন্ত্রাসী আন্দোলন হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সেকুলার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম একই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সশস্ত্র পথে না গিয়ে রক্ত ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে যদি এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারে, তা হলে সেনাবাহিনীর জন্য সঙ্কট বাড়তে থাকবে; কারণ সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তী এই সরকারের কোনো আইনগত বৈধতা নেই। সেকুলার রাজনৈতিক শক্তিগুলো তাদের পাশে দাঁড়াবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। গণহত্যার পর সেকুলারদের জোটে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আল বারাদি অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগের পর দেশ ত্যাগ করেছেন। আমর মুসা, আহমদ শফিকসহ অন্যান্য সেকুলার নেতা মোবারক সরকারের সুবিধাভোগী শ্রেণীর অংশ, সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই; যা বিগত নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। এ অবস্থায় অব্যাহত আন্দোলনে মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে গৃহযুদ্ধ না হলেও সেনাশাসনের কারণে মিসর একটি ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত হবে এবং দায়দায়িত্ব সেনা নেতৃত্বের ওপর বর্তাবে। প্রকৃতপক্ষে মিসরের সেনাবাহিনী এখন জনগণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। জনগণের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনী কখনোই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। বাদশাহ-আমির ও আমেরিকা মুরসি সরকারকে উৎখাতে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশ ছিল। শুরু থেকে মুরসিকে একজন ব্যর্থ শাসক হিসেবে তুলে ধরার নানা কৌশল নেয়া হয়। মুরসির এক বছরের শাসনামলে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি বিশেষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারা। মিসর বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর দেশ। দেশটির বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে পর্যটন। মোবারকবিরোধী আন্দোলনের পর থেকে মিসরে পর্যটন খাতে বিপর্যয় নেমে আসে। এ পরিস্থিতিতে আমরা দেখছি উপসাগরীয় দেশগুলো মুরসি সরকারকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে বারবার অস্বীকার করেছে। এমনকি আইএমএফের ঋণ পেতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। অথচ মুরসিকে অপসারণ করে সেনাশাসকেরা ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই সৌদি আরব, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ১২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। মুরসিকে উৎখাতের সেনা তৎপরতা সম্পর্কে আগ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জানত। মুরসি সরকারের পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী আমর দারাগ নিউ ইয়র্ক টাইমসে এক নিবন্ধে বলছেন, সামরিক বাহিনী যে অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে এ কথা প্রথম জানিয়েছিলেন আমেরিকান একজন কর্মকর্তা। তিনি আরো জানানÑ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতাপ্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ সিসি বাতিল করেছিলেন। (দেখুন যঃঃঢ়://িি.িহুঃরসবং.পড়স/ ২০১৩/০৮/১৬/ড়ঢ়রহরড়হ/বমুঢ়ঃং-নষড়ড়ফ- ধসবৎরপধং-পড়সঢ়ষরপরঃু.যঃসষ?যঢ়)। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে ১ আগস্ট পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির মন্তব্যে। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। মুরসিবিরোধী তাহরির স্কোয়ারের সমাবেশকে তিনি অভ্যুত্থানের প্রতি জনসমর্থন হিসেবে তুলে ধরেন। অথচ মুরসিবিরোধী তামারুদ গ্রুপের নামে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তাতে পুরোমাত্রায় আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত জেনারেল সিসির ক্ষমতা গ্রহণকে ক্যু হিসেবে উল্লেখ করেনি; কারণ এতে মিসরের সেনাবাহিনীকে দেয়া বার্ষিক ১.৩ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয়ার আইনগত বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হবে। জেনারেল সিসি ওয়াশিংটন পোস্টের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেলের সাথে প্রায় প্রতিদিনই তার কথা হয়। তিনি আরো বলেন, মার্কিন স্বার্থ ও মিসরের জনগণের ইচ্ছার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। (দেখুন যঃঃঢ়://িি.িধিংযরহমঃড়হঢ়ড়ংঃ.পড়স/ ড়িৎষফ/সরফফষবথবধংঃ/ধিংযরহমঃড়হ-ঢ়ড়ংঃ-রহঃবৎারবংি-বমুঢ়ঃরধহ-মবহ-ধনফবষ-ভধঃধয-ধষ-মবহ-ংরংংর/২০১৩/০৮/০৩/৬৪০৯ ব০ধ২-ভনপ০-১১ব২-ধ৩৬৯-ফ১৯৫৪ধনপন৭ব৩ থংঃড়ৎু.যঃসষ) সেনাশাসক যখন আন নাহাদা ও রাবা আল উদাইয়া মসজিদে গণহত্যার পর বিশ্বজুড়ে ধিকৃত হচ্ছে, তখন সৌদি আরব প্রকাশ্য সেনাশাসককে সর্মর্থন দেয়। সৌদি বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদি আরবের জনগণ ও সরকার তাদের পাশে আছে। জেনারেল সিসির সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক অনেক পুরনো। তিনি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত সৌদি আরবে মিলিটারি অ্যাটাচে ছিলেন। মুসলিম ব্রাদারহুডের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সৌদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি গোপনে কাজ করতে থাকেন। উপসাগরীয় দেশ বাহরাইন সেনাশাসক ও অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বলে, এর মাধ্যমে মিসরে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। দেখা যাচ্ছে, মুরসি সরকারকে উৎখাতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগসাজশ করেছে। একই সাথে গণহত্যাকে সমর্থন দিয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন দ্বিধাগ্রস্ত তখন সৌদি আরব অব্যাহতভাবে ওয়াশিংটনের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে। আরব শাসকদের ভয় প্রশ্ন হচ্ছে মিসরে ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে কেন বাদশাহ ও আমিররা অবস্থান নিয়েছেন? আর কেনই বা মুরসি সরকারকে উৎখাতে পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়েও অধিক আগ্রহী। কারণটি খুবই স্পষ্ট, একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে ব্রাদারহুডের চ্যালেঞ্জ। উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়া থেকে মরক্কো এবং জর্ডান থেকে কুয়েত পর্যন্ত সব আরব দেশে মুসলিম ব্রাদারহুডের কার্যক্রম রয়েছে। অনেক দেশে ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বাদশাহি শাসনের মধ্যে পার্লামেন্টে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে আরব ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ব্রাদারহুডের রাষ্ট্রপরিচালনার সম্ভাবনা আরব শাসকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ১৯২৮ সালে ব্রাদারহুডের জন্ম ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের বিস্তার ঘটেছে মিসর থেকে। ব্রাদারহুডকে মিসরের ক্ষমতার বাইরে রাখা এখন বাদশাহী শাসকদের একমাত্র লক্ষ্য। এ জন্য এসব শাসক শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইসরাইলের সাথেও একত্রে কাজ করছে এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে। আরব বসন্তের পর মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি জনসমর্থনের দিকটি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিউনিসিয়ায় বেন আলী সরকারের পতনের পর নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক অনুগামী সংগঠন আন নাহদা। মধ্যবামপন্থী রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে আন নাহদা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। যদিও তিউনিসিয়ায় চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাদশাহশাসিত জর্ডানে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক সংগঠন ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্ট বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অ্যাকশন ফ্রন্টের চাপে বাদশাহর বেশ কিছু রাজনৈতিক সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। মরক্কোয়ও জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (পিজেডি) ২০১১ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে। যদিও দেশটিতে পার্লামেন্ট ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে বাদশাহ অনেক বেশি ক্ষমতাবান। কুয়েতে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আরো রাজনৈতিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। দেশটিতে সালাফি ও ব্রাদারহুড সম্মিলিতভাবে সর্বশেষ নির্বাচন বর্জন করেছে। কুয়েতের আমির রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ব্রাদারহুডকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। লিবিয়ায়ও গাদ্দাফির পতনের পর মুসলিম ব্রাদারহুড বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছে। আরব অঞ্চলে ব্রাদারহুডের এই রাজনৈতিক উত্থানকে এখনকার শাসকরা ভীতির চোখে দেখছে। মিসরের ব্রাদারহুডকে ক্ষমতাচ্যুত ও সেনাশাসনকে সমর্থন দেয়া হচ্ছে এ কারণে। আরব জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া মিসরে মুরসি সরকারকে উৎখাতের প্রতিক্রিয়া আরব বিশ্বে সব দেশে কম বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। যেসব দেশে বিক্ষোভ দেখানোর সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশে মুরসির সমর্থনে ও গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। তিউনিসিয়া, মরক্কো, জর্ডান, লেবানন, কুয়েতসহ আরব দেশগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। সৌদি আরবের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতারা দেশটির মিসর নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করছেন; যা অতীতে কখনই লক্ষ করা যায়নি। সৌদি আরবের ৫০ জনের বেশি ধর্মীয় নেতা মুরসিকে অপসারণ জঘন্য পাপাচার হিসেবে উল্লেখ করেন। এই অপসারণ মিসরের জনগণের বিরুদ্ধে একটি উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অন্য দিকে সেনাবাহিনীর সমর্থনে বাদশাহর বিবৃতির সমালোচনা করেছেন হাজার হাজার সৌদি নাগরিক। সৌদি নাগরিকেরা টুইটার বার্তায় ‘বাদশাহর বিবৃতি আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। আমি মিসরের জনগণের সাথে আছি’ এমন অনেক বার্তা দিয়েছেন। (দেখুন গরফফষব ঊধংঃ'ং ংযরভঃরহম ধষরমহসবহঃং যঃঃঢ়://িি.িধষলধুববৎধ.পড়স/রহফবঢ়ঃয/ভবধঃঁৎবং/২০১৩/০৮/২০১৩৮১৮৬৪১৩০৮০৬২৬২.যঃসষ) ব্রাদারহুডের পক্ষে বক্তব্য রাখছেন কিংবা যোগাযোগ আছে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সৌদি প্রিন্স আল ওয়ালেদ বিন তালালের মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল আল রেসালাহ টেলিভিশনের নির্বাহী কুয়েতি ধর্মপ্রচারক তারেক আল সুয়াদিনকে সম্প্রতি টেলিভিশন চ্যানেল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার অনুষ্ঠানে ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন প্রকাশ পাচ্ছে। সুয়াদিন আরব বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিত একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। টুইটারের মাধ্যমে ১৯ লাখ দর্শক যোগাযোগ রক্ষা করে। (দেখুন ঞঠ ঢ়ৎবধপযবৎ ভরৎবফ ভড়ৎ ইৎড়ঃযবৎযড়ড়ফ ষরহশং যঃঃঢ়://িি.িধষলধুববৎধ.পড়স) একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিচার শুরু করেছে। এসব খবর প্রমাণ করে আরব শাসকেরা ব্রাদারহুডকে একনায়কী শাসনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছেন। ব্রাদারহুড কি ভুল করেছে মুরসির নেতৃত্বাধীন ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, রাষ্ট্রপরিচালনায় দলটি ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকার পরিচালনায় সম্পৃক্ত করা হয়নি। প্রশাসন গতিশীল ছিল না এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো সাফল্য তিনি দেখাতে পারছিলেন না; কিন্তু মুরসি ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরের মধ্যে মোবারক সরকারের রেখে যাওয়া প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীতে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি। যখন তিনি পার্লামেন্টের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন, তখন বিচার বিভাগ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। যখন সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে পরিবর্তন আনার জন্য প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিক্রি জারি করেছেন, তখন তাকে মোবারকের মতো তিনি স্বৈরশাসনের পথে যাচ্ছেন বলে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বাধা এসেছে সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ ও রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে। সেকুলার রাজনীতিক হামদিন সাব্বাহিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব করা হলেও তিনি তাতে রাজি হননি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সালাফি আল নূর পার্টিও মুরসির বিরুদ্ধে গিয়ে সেনাবাহিনীর সাথে হাত মিলিয়েছিল। সৌদি ইঙ্গিত ও ব্রাদারহুডের বিকল্প ইসলামপন্থী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তাদের সে পথে নিয়ে গেছে; কিন্তু মুরসিকে উৎখাতের পর সালাফি নেতৃত্ব বুঝতে পারে তারা কী ভুল করেছে। দ্রুতই মুরসিকে পুনর্বহালের আন্দোলনে তারা শরিক হয়েছে। ১৪ আগস্টের সামরিক অভিযানে আন নাহদা স্কোয়ারে যারা মারা গেছেন তাদের বেশির ভাগ সালাফি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী। জেনারেল সিসি ওয়াশিংটন পোস্টের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বর্তমান সঙ্কটের শুরু আসলে মিসর রাষ্ট্রের ধারণা ও মতাদর্শ নিয়ে। এ বিষয় নিয়েই জনগণের সাথে সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসির বিরোধের শুরু। মুরসি ও মুসলিম ব্রাদারহুড মিসরে ইসলামি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। মুরসি আসলে পুরো মিসরের জনগণের প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। তিনি ছিলেন তার অনুসারী ও সমর্থকদের প্রেসিডেন্ট।’ দেখা যাচ্ছে, জেনারেল সিসি শুরু থেকেই মুরসিকে সরানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সেভাবেই যোগসাজশ গড়ে ওঠে। জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত রাজনৈতিক দল কিভাবে রাষ্ট্রপরিচালনা করবে, সে সরকারের রাজনৈতিক কৌশল কী হবে, তা নির্ধারণের দায়িত্ব নিয়েছেন সেনাপ্রধান। জেনারেল সিসির মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে মূল্যায়ন হচ্ছে ‘বিস্তৃত ৬০টির বেশি দেশে সংগঠিত মুসলিম ব্রাদারহুড। জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম বা নির্দিষ্ট দেশের ধারণা থেকে নয়, ব্রাদারহুড সংগঠিত হয়েছে একটি আদর্শের ওপর; যা পুরোপুরি একটি সংগঠনের ধারণা থেকে প্রতিষ্ঠিত’ (ওয়াশিংটন পোস্টের সাথে জেনারেল সিসির সাক্ষাকার) অর্থাৎ মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক আদর্শকে টার্গেট করেছে সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ ও সেকুলার রাজনীতিকেরা। মোবারকের সুবিধাভোগী আমলাতন্ত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করেনি। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। রাষ্ট্রের ভেতরে ক্ষমতাশালী মিলিটারি সিভিল প্রশাসন ও বিচার বিভাগ যখন আগেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকারকে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত করা হবে, তখন সবাইকে সম্পৃক্ত করে রাষ্ট্রপরিচালনার কোনো সুযোগ মুরসির ছিল না। তার পরও তিউনিসিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় সেকুলারদের মধ্য থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে রাষ্ট্রপরিচালনায় সম্পৃক্ত করার বিষয়ে চেষ্টা করা যেত। একইভাবে সালাফিদের রাষ্ট্রপরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত করা যেত। এ কথা বলতেই হবে, ক্ষমতা গ্রহণের পর মুসলিম ব্রাদারহডের বন্ধু বাড়ানোর প্রচেষ্টার যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। একটি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ার নীতি কৌশল ও সেখানে ইসলামের ভূমিকা আরো সুস্পষ্ট করা উচিত ছিল, এর ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিরূপ প্রচারণার বিপরীতে সুস্পষ্ট অবস্থান স্পষ্ট হতো। তবে মুসলিম ব্রাদারহুড যদি বড় কোনো ভুল করে থাকে তাহলো মোবারকের রেখে যাওয়া সেনাতন্ত্রের বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা করা। এই কাঠামো ভাঙতে না পারার কারণে বারবার মুরসির সরকারকে সমঝোতার পথে আসতে হয়েছে। ষড়যন্ত্র দানা বেঁধেছে। শেষ পর্যন্ত সেনা অভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে। সেকুলার রাজনীতির অভিন্ন রূপ মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে জনসমর্থনহীন সেকুলার রাজনীতিকেরা রাষ্ট্রপরিচালনার অংশীদার হতে সব সময় সেনাবাহিনী ও একনায়ক শাসকদের সাথে ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশ করেছে। এ অবস্থা শুধু মিসরে নয়, আমরা যদি আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া বা বাংলাদেশের দিকে দেখি তা হলে একই চিত্র দেখব। যদিও সব দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক রকম নয়। আমরা একটি অভিন্ন দিক লক্ষ করছি, ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করছে মিসরের সেনাবাহিনী, সেকুলার রাজনীতিক এমনকি উপসাগরীয় দেশগুলোর একনায়ক শাসকেরা। এমন একটি দলকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে যে দলটি এখনো বৈধভাবে রাষ্ট্রপরিচালনার অধিকার রাখে। মুসলিম ব্রাদারহুডের শত শত নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে হত্যার পর সেনাবাহিনীর নিয়োগকৃত প্রধানমন্ত্রী হাজেম বেলওয়াবি বলছেন, যারা মানুষ হত্যা করেছে, যাদের হাতে রক্ত; তাদের সাথে কোনো আপস নয়। এ ধরনের বিপরীতমুখী চরিত্র শুধু সেকুলার রাজনীতিকদের মধ্যে দেখা যাবে। মিসরের মতো বাংলাদেশেও ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত একটি অন্তর্বর্তী সরকার এসেছিল সেকুলার রাজনীতিক ও গণমাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করে আরেকটি সেকুলার সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ নিশ্চিত করে বিদায় নিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রোপাগান্ডার ধরন মিসর আর বাংলাদেশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ইসলামপন্থী মাত্রই সন্ত্রাসী হিসেবে হাজির করা এখন তাদের প্রধান কাজ। ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা পর্যন্ত বলছে, মুসলিম ব্রাদারহুডকে প্রোপাগান্ডা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এমন ঘৃণ্য প্রচারণাও চালানো হয়েছে নাহাদা স্কোয়ার ও আল উদাইয়া মসজিদের অবস্থান ধর্মঘটরত মুরসি সমর্থকদের যৌন জিহাদের ডাক দেয়া হয়েছে। সেখানে নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আবার আল ফাতাহ মসজিদে পুলিশের অভিযানের সময় এসব গণমাধ্যম বলছে, মসজিদের ভেতর থেকে গুলি চালানো হয়েছে। বাংলাদেশে আমরা ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানের পর একজন লোকও মারা যায়নি ক্ষমতাসীনদের এমন দাবি শুনেছি। শুধু তা-ই নয়, রাজধানীতে হেফাজতে ইসলাম সন্ত্রাস করেছে এই প্রচারণায় পুরো মাত্রায় ইন্ধন জুগিয়েছে সেকুলার গণমাধ্যম। আল ফাতাহ মসজিদে সেনাশাসনবিরোধীদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনী ও মোবারকপন্থী সন্ত্রাসীদের হামলার দৃশ্যের সাথে হেফাজতের সমাবেশ থেকে ফেরত যাওয়া মানুষের ওপর পথে পথে হামলা ও অপদস্থ করার যথেষ্ট মিল আমরা দেখছি। আল ফাতাহ মসজিদ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ৩৭ জনকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পর সরকারিভাবে প্রচারণা চালানো হয় জেল থেকে স্থানান্তরের সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের হত্যা করা হয়। অথচ নিহতদের প্রত্যেকের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। গণতন্ত্র বাকস্বাধীনতা কিংবা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বর আমরা সেকুলার রাজনীতিকদের মুখে সব সময় শুনে আসছি; কিন্তু এর আড়ালের ক্ষমতা লিপ্সা ও নির্মূলের রাজনীতি তাদের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এরাই অন্যের বাকস্বাধীনতা প্রথমে হরণ করে। গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে। মিসরেও আমরা বাংলাদেশের মতো বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্র বন্ধ করার নজির দেখেছি। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা গ্রেফতার হয়েছে। সেকুলারেরাই সেনাবাহিনীর সাথে আঁতাত করে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাওয়ার চেষ্টা করছে। এরা সব সময় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কিংবা রাজা-বাদশাহদের সমালোচনা করলেও তাদের অনুগ্রহে কিভাবে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাওয়া যায় সে চেষ্টা করে থাকেন; কিন্তু তারা যে চেষ্টা করেন না তা হলো জনগণের আকাক্সক্ষা ও মনের ভাব বোঝা। ফলে শেষ পর্যন্ত জনগণ এদের শুধু প্রত্যাখ্যান নয়, চরম শিক্ষা দেয়। এ জন্য অনেক সময় লাগে। সাধারণ মানুষকে অনেক ত্যাগস্বীকার করতে হয়। রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। কিন্তু জনগণের বিজয় একদিন হয়। লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট [email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির