post

শহীদ মুহাম্মদ শাহজাহান

৩০ জুন ২০১২
দিনটা ছিল ১৯৯৬ সালের ২৯ জুলাই মোতাবেক ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার। একটি পবিত্র দিন। সীতাকুণ্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মুহাম্মদ শাহজাহানকে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে খুন করে চিহ্নিত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। মীরসরাই থানার হাইতকান্দি গ্রামের হানিফ সওদাগরের ২ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে মুহাম্মদ শাহজাহান ছিলেন সবার বড়। পিতা-মাতা ভাইবোনদের স্বপ্ন নির্মিয়মান সৌধ সীতাকুণ্ড ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগের সেরা ছাত্র শাহজাহান আর বিকশিত হতে পারেননি। রোনাজারিতে পাগলপ্রায় হয়ে যান শহীদের আম্মা। আব্বা হয়ে যান শোকে পাথর। হানিফ সওদাগরের চোখে চোখ রেখে কোনো মন্তব্য করা যায় না। সন্তান হারিয়ে তাঁর দু’টি চোখ আজ নিষ্পলক, বোবা চাহনিতে পূর্ণ। ইসলামী আন্দোলনের প্রহরায় অতন্দ্র অনঢ়। ২২ জুলাই সন্ত্রাসীরা পরীক্ষার হলে সুবিধাজনক মনে করে শিবিরকর্মীদের ৪টি সীট দখল করে নেয়। বৈধ সীটের অধিকারীরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে পরীক্ষা চলাকালে হলে আহত হন ৪ জন শিবিরকর্মী। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত পুলিশ সাহস করেনি সরকারি দলের মাস্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। পরীক্ষা শেষে শিবির নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে ঘটনার মীমাংসা হয়। ২৪ জুলাই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ মীমাংসিত ঘটনাকে পুনরায় চাঙ্গা করে কলেজ ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালায়। এতে আহত হন শিবিরের ৪ জন কর্মী। কিন্তু সন্ত্রাসীরা এখানেই থেমে থাকেনি। কিছু সময়ের মধ্যে তারা শিবির অয়োজিত রবিউল আউয়ালের স্বাগত মিছিলেও গুলি বর্ষণ করে। খুনের পিপাসা মিটাতে ব্যর্থ হয়ে খুনী চক্র বেলা সাড়ে ৩টার সময় সীতাকুণ্ড আলীয়া মাদরাসায়ও উপর্যুপরি গুলি বর্ষণ করে। পুলিশ এ সময় আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ছিল। সাধারণ ছাত্র-জনতার প্রতিরোধে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী নামার বাজার সেনপাড়ায়। এ হামলায় গুলিবিদ্ধ হন শিবিরকর্মী হারুনুর রশীদ যিনি এখন তার পঙ্গু বাম হাতটি নিয়ে বিচারের প্রতীক্ষা দিন গুনছেন। ২৫ জুলাই সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতে কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়ে আহত করে হেলাল উদ্দিনসহ আল্লাহপ্রেমিক ৩ বান্দাকে। শিবির নেতৃবৃন্দ ঘটনা জানিয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করলে কোনো এক অশুভ ইশারায় পুলিশ উল্টো হানা দেয় সীতাকুণ্ড আলীয়া মাদরাসায়। ছাত্রলীগের সহায়তায় শিবিরকর্মীসহ ১৫ জন সাধারণ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশি ষড়যন্ত্রমূলক অস্ত্র মামলা জড়িয়ে দেয়া হয়। একই দিন প্রশাসন ও কথিত সর্বদলীয় নেতারা বৈঠক করে। সীতাকুণ্ডে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে না বলে সিদ্ধান্ত হয় সেখানে। এতে সন্ত্রাসীরা খুনের নেশায় দ্বিগুণ উৎসাহে মেতে ওঠে। ২৯ জুলাই বেলা সাড়ে ৪টায় শিবিরের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ও রাসূলের (সা) সৈনিক মুহাম্মদ শাহজাহান তাঁর বন্ধু নূর হোসেনসহ কলেজ সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে রিকশায় চড়ে তাদের বাসায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা রেলগেট হতে দু’জনকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। কলেজ মাঠে পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে ইট, রড, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে প্রিয় ভাই শাহজাহান ও নূর হোসেনের সমস্ত শরীর থেঁতলে দেয়। মারাত্মক আহত শাহজাহান পানি চাইলে খুনী দুলাল তাঁর মুখে প্রস্রাব করে। উপস্থিত নিরস্ত্র জনতা প্রতিবাদের সাহস পায়নি। দীর্ঘ দেড়ঘণ্টা যাবত এভাবে রক্তক্ষয়ের ঘটনা ঘটছে থাকে। পুলিশকে খবর দিলেও পুলিশ যথাসময়ে আসেনি। অথচ থানা হতে ঘটনাস্থলের দূরত্ব ছিল মাত্র আধা কিলোমিটার। সন্ত্রাসীরা মৃত প্রায় শাহজাহান ও নূর হোসেনকে টেনে হিঁছড়ে তাদের বাসার দোতলায় রেখে উল্লাস করতে থাকে। প্রিয় ভাই সত্যের সেনানী মুহাম্মদ শাহজাহান সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। ঘটনা জানাজানি হলে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সীতাকুণ্ড সদর ছিল বিক্ষোভ-প্রতিবাদের নগরী। ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম লালদিঘীতে জানাযা ও পরে শহীদের প্রিয় ক্যাম্পাস সীতাকুণ্ড কলেজ মাঠে জানাযা হয়ে শহীদের নিজগ্রামে তাঁকে দাফন করা হয়। শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া : “নিয়মিত ক্লাস করতো, শিক্ষকদের সম্মান করতো। তার মৃত্যুতে এই কলেজ একজন সম্ভবনাময় ছাত্রকে হারাল।” বাবার প্রতিক্রিয়া : গ্রাম্য সহজ সরল পিতা হানিফ সওদাগর বলেন, “একবুক আশা ছিল ছেলে বড় হবে, পরিবারের অভাব পূরণ করবে। কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের জন্য জীবন দেয়ায় আমি খুবই খুশি।” তিনি খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বর্তমান শিবিরকর্মীদেরকে আরো দ্রুততার সাথে কাজ করে শহীদের রেখে যাওয়া কাজকে সমাপ্ত করার অনুরোধ করেন। ছাত্র সংবাদ ডেস্ক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির