post

সম্পাদকীয়

২৮ অক্টোবর ২০১৫

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাঁর আরশের ছায়ায় সাত শ্রেণির মানুষকে আশ্রয় দেবেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণিটি হলো সেই সব যুবক-যুবতি; যারা তাদের প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে যুবক বয়সে মানুষের ইন্দ্রিয় সতেজ, সজাগ ও সবল থাকে। এ সময় মানুষ সৃষ্টির মূল প্রেরণা অনুভব করে। সৃষ্টির সব ক্ষেত্রে নতুন নতুন সৃষ্টির ভেতর দিয়ে জীবনকে সুন্দর করে তোলার সময় এটি। যুবকদের উদ্দেশে প্রিয়নবী (সা.)-এর বাণী হলো- ‘একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন সেইসব তরুণ-তরুণীর ওপর যারা যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে।’ সাধারণত এই বয়সে অধিকাংশ নারী-পুরুষই দুনিয়াকে উপভোগ ও চাকচিক্যময় জীবন-যাপন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। পরকালের কথা তারা বেমালুম ভুলে যায়। শয়তান তাদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় যে, আল্লাহর বিধান যৌবনে পালনের জন্য নয়; এটি বৃদ্ধাবস্থায় পালন করতে হয়। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আমাদের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। বরং মূল্যবান এ সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে নিশ্চিত করতে হবে জান্নাতের পথ।

পৃথিবী এখন অশান্তির দাবানলে পুড়ছে। একদিকে মহামারী করোনার তাণ্ডব অন্যদিকে স্বৈরাচার শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও নির্যাতন। এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। বাংলাদেশের মতো হতদরিদ্র দেশ নিয়ে রাজনীতিবিদ ও সরকারি আমলারা যতই উন্নয়নের সবক পাঠ করে শুনাক না কেন, দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কী যে কঠিন দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে তা কোভিড-১৯ পরিস্থিতির এই মহাদুর্যোগের মুহূর্তে সহজেই অনুমেয়। স্বৈরাচার শাসকগোষ্ঠী কিছু দালাল ও বিশ্বাসঘাতক আমলাদের মাধ্যমে যুগে যুগে জাতির ঘাড়ে সওয়ার হয় এবং ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আমবাগানে এরকম স্বদেশীয় বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্তে বিদেশী বেনিয়াদের হাতে বাংলার স্বাধীনতাসূর্য অস্তমিত হয়েছিল। বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের প্রতি হিংসা ও স্বার্থান্ধের মোহে হিন্দু বিশ্বাসঘাতক জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, মানিকচাঁদ, রাজভল্লভ, নন্দনকুমার, কৃষ্ণভল্লভ, রাম নারায়ণ, সেতাব রায়রা দেশের স্বাধীনতাকে ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়েছিল। সেই সময় বাংলার প্রধান সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা জাতিকে করেছে কলঙ্কিত। বাঙালিরা মীরজাফরকে কোনদিন ক্ষমা করবে না। ক্ষমা করবে না তার দোসরদেরও; যারা একই পথে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশের প্রতি মানুষের নানা ধরনের অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য পৃথিবীজুড়ে ঘনিয়ে আসছে সঙ্কট। মানুষের যান্ত্রিক ব্যবহারের উপযুক্ত নিয়মনীতির গুরুত্ব না থাকার কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বিচার বিবেচনার তোয়াক্কা না করে লোকজন দূষিত করছে জীবনের অপরিহার্য উপাদান পানি ও বাতাস। জীবনের এই উপাদানগুলো নিয়ে পরিবেশবিদরা এখন উদ্বিগ্ন। মনুষ্যসৃষ্ট চারপাশের বিষাক্ত পরিমণ্ডল নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঠেলে দিচ্ছে মারাত্মক বিষক্রিয়ায়। এর ফলে প্রকৃতি বিভিন্নভাবে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক আমফান ঘূর্ণিঝড় ও অনিয়ন্ত্রিত করোনা মহামারী যার জ্বলন্ত প্রমাণ। আবার বিশুদ্ধ বাতাস যখন আমাদের বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান বিশ্বে তখন সমান তালে বায়ুদূষণ চলছে। জ্বালানি তেল, কয়লা, কুয়াশা পুড়ে তৈরি হচ্ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও রাসায়নিক ধোঁয়া যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। যে কারণে মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে; সজাগ করতে হবে সবাইকে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির