post

সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে সময়েরই অন্ধকারে

মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত

০৪ এপ্রিল ২০১৭
সময় সম্পর্কে প্রাথমিক কিংবা সার্বজনীন ধারণা হচ্ছে সময় শুধুমাত্র সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, মাস এবং বছরের মাপকাঠির নাম। সময়ের কথা ভাবতে আমরা সকলেই ঘড়ি বা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাই। অথচ এটি সময়ের ব্যাপ্তির একটি রূপ মাত্র। এটি সময় সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অগভীর বা হালকা ধারণা। সময় সম্পর্কে দ্বিতীয় ধারণা হচ্ছে সময় একটি সুযোগের নাম। এই সুযোগ সকল সময়ের জন্য স্থায়ী থাকে না। যখন সময় তার সর্বোচ্চ মানে অবস্থান করে তখনই সে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব বহন করে থাকে। যারা সময়ের এই গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন তারা জীবনের সমস্যাবলিকে অনেকাংশে সহজীকরণ করে নেন, ফলশ্রুতিতে তারা সাফল্যের দেখা পান। সময়কে শুধুমাত্র যদি সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, মাস এবং বছরের ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলি তাহলে এরূপ ধারণা দ্বারা কখনোই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। বরং সময়কে সময়ের ব্যাপ্তি হিসেবে ধারণ করার পাশাপাশি এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পৃথিবীতে সময় এমন একটি বিষয়ের নাম যা সবচেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী, পক্ষান্তরে এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষণস্থায়ীও বটে, কেননা আমাদের জীবনের সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় প্রদত্ত সময় নিতান্তই অল্প। এটি সবচেয়ে বেশি দ্রুতগামী আবার যদিও তা সবচেয়ে বেশি শ্লথ। এটি দ্রুতগামী তাদের কাছে, যারা সুখের সাগরে ভাসছে। আর পক্ষান্তরে মৃত্যুযন্ত্রণা নিয়ে যে সময় গুনছে তার দৃষ্টিতে তো ২/৩ মিনিট সময়ও অবশ্যই শ্লথ-ই হবে। আমরা সকলেই তাকে অবজ্ঞা করি যদিও পরে সকলেই আবার অনুশোচনা করি। সময়কে তো আমরা অবজ্ঞা করিই। তা না হলে জীবন থেকে দু-একটি ঘণ্টা সময়কেও অযথা পার হতে দিতাম না। কিন্তু আবার এই অন্যায় অবহেলাই আমাদেরকে পীড়া দিয়ে থাকে কখনও কখনও। সে কারণেই তো মূল্যবান কোনো পরীক্ষার সময় প্রতিবারই ছাত্র-ছাত্রীরা অনুশোচনা করে থাকে তাদের বিগত দিনের সময় অপচয়ের জন্য। পরে অনুশোচনার কথা ভুলে গিয়ে আবার সেই অপচয়ই করতে থাকে। আমাদের জীবন ক্ষণস্থায়ী। আর এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের নির্দিষ্ট একটা সময় বেঁধে দেয়া আছে। জীবনের বেঁধে দেয়া এ সামান্য সময়টুকুন নানাভাবে কাটিয়ে দেয়া যায়। হাসি, গল্প, আনন্দ, আড্ডা, খেল-তামাশা, আলাপ-আলোচনা করে অফুরন্ত আনন্দ লাভ করা যায়। কিন্তু যিনি ব্যক্তিজীবনকে সার্থক করে তুলতে চান, সাফল্যকে হাতের মুঠোয় নিতে চান। যিনি চান বিজয় ছিনিয়ে আনতে তার পক্ষে সামান্য মনে করে এ সময়টুকু হেলায় কেটে দেয়া মোটেই ঠিক নয়। সাফল্যের পেছনে যারা ছুটে বেড়ান তারা সময়ের মূল্য বুঝে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি সেকেন্ডকে কাজে লাগিয়ে সাফল্য নিজের করে নেন। যারা সময়ের মূল্য বোঝে এর মর্যাদা দিতে জানে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বিজয় তাদের হবেই। সাফল্য অর্জন করতে চাইলে সবার আগে সময়ের মূল্য বুঝতে হবে, এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। ঊনবিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স বলেছিলেন, ‘বড় হতে হলে সর্বপ্রথম সময়ের মূল্য দিতে হবে।’ শেকসপিয়র একটি কথা বলেছিলেন, ‘ও ধিংঃ ঃরসব ধহফ হড়ি ঃরসব ধিংঃবং সব.’ অর্থাৎ আমি সময় নষ্ট করেছি আর সময় এখন আমাকে নষ্ট করছে। সময়ের তুলনায় কর্মের পরিধি খুবই কম। সুতরাং সময় নষ্ট করা মানে জীবনকেই ধ্বংস করা। প্রতিটি সেকেন্ডকে সমান গুরুত্ব দিয়ে যদি কাজের পেছনে লেগে থাকা যায় তাহলে কয়েক মিনিট কিংবা ঘণ্টা শেষে হিসেব কষলে দেখা যাবে একটি বড় ভালো কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সাফল্য প্রতিটি সেকেন্ডের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। সেকেন্ডে সামান্য সময় তাই বলে তাকে অবহেলা করা কিংবা গুরুত্ব কম দেয়ার সুযোগ নেই। কখনো কখনো মাথায় এ ভাবনার উদয় হয় যে, এ কাজটি যদি এখন না করি তাহলে তাতে এমন কি আর আসে যায়? সামনে আরো অনেক সময় আছে। কিন্তু একটি বারের জন্যও এ ধারণা হয় না যে, এখন আর ভবিষ্যতের সময় দু’টি তো এক নয়। দু’টিই তো নিজ নিজ স্থানে অতি মূল্যবান। যে সময়টুকু চলে গেল তা তো কখনো আসবে না। যদি তা বিনষ্ট হয়ে থাকে তবে তা হাতছাড়া হয়ে গেল। শত ক্রন্দনেও এরপর তা আর ফিরে আসবে না। একটি প্রসিদ্ধ ফার্সি উক্তি আছে- ‘যদি একটি মুহূর্ত উদাসীন থাকি, তবে হাজার মাস পেছনে পড়ে যাব।’ এটি একটি বাস্তব সত্য যে, কখনো কখনো মানুষ মুহূর্তের ভুলের কারণে শত বছর পিছিয়ে পড়ে। প্রকৃত বুদ্ধিমান তো সে-ই, যে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে পূর্ণ দৃঢ়তা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ভবিষ্যতের পথে চলে। এক-একটি মুহূর্ত হিসাব করে খরচ করে আর সময়কে অধিক থেকে অধিকতর ফলপ্রসূ করতে সচেষ্ট হয়। পৃথিবীতে এমন কি কোনো কাজ আছে যা করা যায় সময়ের ব্যবহার ছাড়া? একে ছাড়া কিছুই করা যায় না, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সবকিছুকে এটা গ্রাস করে নেয়, অথচ যা কিছু মহৎ এবং বড় তা সে তৈরি করে। সাধারণত কাণ্ডজ্ঞান ও বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিরা জানেন সময় কত বেশি মূল্যবান। একটি প্রবাদ আছে ‘সময় হলো সোনার মতো দামি।’ অনেকেই এ কথা বিশ্বাস করেন। সময়ের ব্যাপারে সচেতন হতে আমাদের মনে করিয়ে দেয়া হয় যে, এই পৃথিবীর জীবন অস্থায়ী ছাড়া কিছু নয়। আমরা জানি না কখন আমাদের সময় শেষ হয়ে মৃত্যুর সময় নির্ধারিত রয়েছে। জীবনের শেষ সময় কখন তা যেহেতু আমরা কেউ জানি না সেহেতু আমাদের অবশ্যই সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সাফল্যের প্রয়োজনেই আমরা কখনো সময়ের অপচয় বা অপব্যবহার করতে পারি না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, মানুষের জন্য দু’টি আশীর্বাদ রয়েছে, যা অনেকেই হারিয়ে ফেলে। এগুলো হলো ভালো কাজের জন্য স্বাস্থ্য ও সময়। (বোখারি) মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কালের কসম, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে, তারা ছাড়া যারা ঈমানদার, সৎকর্মশীল, পরস্পরকে সত্যনিষ্ঠার নির্দেশ প্রদানকারী এবং ধৈর্যধারণকারী ও অবিচল। (সূরা আসর : আয়াত ১-৩) মহান আল্লাহ তায়ালা এ সূরার শুরুতেই সময়ের শপথ নিয়ে বলেছেন, কারা ক্ষতিগ্রস্ত আর কারা নয়। সুতরাং সময়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই যারা কাজ করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে, তারাই সফলকাম হবে। সফল হতে হলে প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন, প্রতিটি সময়কে আমরা যেন প্রজ্ঞার সাথে কাজে লাগাই। একটা দিন মানে ২৪ ঘণ্টা বা ১৪৪০ মিনিট বা ৮৬৪০০ সেকেন্ড। প্রতিদিন এই সময়টুকু আমাদের জন্য নির্দিষ্ট করা। আমরা চাইলেই এর কম বেশি করা সম্ভব নয়। আমি চাইলে সব কিছু কমাতে বা বাড়াতে পারি কিন্তু চাইলেই কি সময়কে কমাতে বা বাড়াতে পারি? কখনোই না। অনেককে পাওয়া যাবে যারা সারাদিনই কাজ করছেন অথচ কাজ শেষ করতে পারছেন না। তারা ভাবেন যদি দিনটির পরিধি ৪৮ ঘণ্টা হতো অথবা ঘণ্টাটা ৬০ মিনিটের স্থলে ১০০ মিনিট করে হতো। প্রকৃতপক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই তারা কাজের চাপে ন্যুব্জ হয়ে পড়েন। সমাজে এমনও কেউ আছেন যারা সময়কে কাজে লাগাতে পারেন না। তারা সময় নষ্ট করে থাকেন বিভিন্ন পদ্ধতিতে। এরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সময় নষ্ট করেন ঘুমিয়ে, আড্ডা দিয়ে আর অবহেলায়। ঘুমের ব্যাপারে বর্তমানে কোথায়ও কোথায়ও একটা নিয়ম প্রচলিত হয়ে পড়েছে প্রায়। তা হলো সকালে ফজরের নামাজের পরে দ্বিতীয় বার ঘুম এবং দুপুরে খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার নাম দিয়ে তৃতীয়বার ঘুম। তাদের অনেকেই ভেবে থাকেন সময়টি তাদের নিজস্ব সম্পদ (ঢ়বৎংড়হধষ ঢ়ৎড়ঢ়বৎঃু)। প্রকৃতপক্ষে সময় আমাদের নিজেদের নয়। সময় সম্পর্কে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কারণ সময়ইতো গিলে খেয়েছে অতীতের কত বিশাল সংখ্যক মানবগোষ্ঠীকে। বিগত হয়েছে তারা সকলে খালি হাতে। ইতিহাস তাদেরকে গ্রহণ করেনি সঙ্গত কারণেই। করেছে মাত্র অল্প কিছু মহামানবকে। ব্যর্থ লোকেরা যা করতে অনিচ্ছুক তা করে সফল লোকেরা তাদের সময়ের সদ্ব্যবহার করে। সফলতার জন্যে প্রয়োজনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষার সাথে খাপ খাইয়ে সময় ব্যয় করার চেয়ে ব্যর্থতার গ্লানির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াকে সাধারণ ব্যক্তিরা সহজতর মনে করে। যারা এরূপ মনে করে তারা সফলতার পরিবর্তে ব্যর্থতার অতল গহ্বরে তলিয়ে যায়। কিছু মানুষ এমন আছেন যাকে আজ একটি কাজ দিলে কাল করব বলে যদি রেখে দেন, আর এই কাজটিই যদি তাকে আগামীকাল দেয়া হয় তবে তা পরবর্তী দিনের জন্যই রেখে দেন। মূলত এভাবেই আমরা সময়ক্ষেপণ করে থাকি, আর সেই সাথে সময় নামক সুযোগকে হাতছাড়া করি। শেষ পর্যন্ত এভাবেই আমরা ভাগ্যের বিড়ম্বনার শিকার হই। অপর দিকে যারা আগামী কালের জন্য বসে থাকেন না কখনও, আজকের দিনটুকুকেও যারা কাজে লাগাতে উদগ্রীব থাকেন, তারাইতো সময়কে কাজে লাগাতে পারেন পরিপূর্ণভাবে। তাইতো জগতে বিস্ময়কর কিছু করার এখতিয়ার শুধুমাত্র তাদেরই। প্রতিদিন সকালে যখন আমরা ঘুম থেকে উঠি তখন আমাদের দিনটির জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ থাকে। যে প্রতিদিনের ২৪টি ঘণ্টা সুচারুরূপে কাজে লাগাতে পারে সেই শেষ হাসি হাসতে পারেন। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত সে-ই সাফল্য অর্জন করেন। কারণ এই সময়তো আর কখনো ফিরে আসবে না। রাসূলে করীম (সা) বলেছেন, দু’জন ফেরেশতার নিম্নরূপ আহবান ব্যতীত একটি প্রভাতও আসে না- “হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন এবং আমি তোমার কাজের সাক্ষী! সুতরাং আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর। শেষ বিচার দিনের আগে আমি আর কখনও ফিরে আসব না।” মানবতার মহান শিক্ষক রাসূল (সা)-এর উপর্যুক্ত বাণীতে একটি উদাত্ত আহ্বান রয়েছে, আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর। আর পাশাপাশি রয়েছে এক ধরনের সতর্কীকরণ। আজকের দিনের ২৪ ঘণ্টার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে শেষ বিচারের দিন। অর্থাৎ শেষ বিচারের দিনে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আগেই সময়ের ব্যবহারের ব্যাপারে সংযত হতে হবে আমাদেরকে- এটা একটা কঠিন সতর্কীকরণই বটে। আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না। যদি আপনি কাজ শুরু করতে বিলম্ব করেন, তবে কাজ স্তূপীকৃত হতে থাকবে। কাল কি হবে তা আপনি জানেন না। গতকালের অসমাপ্ত কোনো কাজ নেই, এমন অবস্থায় যদি আপনি দিন শুরু করতে পারেন, তবে তা হবে এক বড় স্বস্তি। আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখলে আপনি কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে রিস্কে পড়ে যাবেন। আজকের কাজ আজই সম্পন্ন করতে পারলেন না তাহলে আগামীকাল কিভাবে ফেলে রাখা কাজসহ দিনের নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করবেন? সুতরাং আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না। বরং আজকের কাজ শেষ করে আগামী কালের ব্যাপারে চিন্তা করুন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।” (সূরা হাশর-১৮) মহান রাব্বুল আলামিন সময়ের ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের হিসাব নেবেন হাশরের দিন। আর সে দিন মানুষের অবস্থা কেমন হবে সে সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ব্যক্ত হয়েছে, “প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।” (সূরা মুনাফিক ১১) মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে আরো বলেন, “সেখানে তারা আর্তচিৎকার করে বলবে, হে আমাদের রব বের করুন আমাদেরকে। আমরা সৎকাজ করব। পূর্বে যা করতাম তা করব না, তা করব না। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতোটা সময় দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার সে বিষয়ে চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল। অতএব আস্বাদন কর। জালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নাই।” (সূরা ফাতির ৩) সময় সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ কথা আছে যেগুলোর অনেকগুলোর সাথেই আমরা পরিচিত। যেমন- সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়, সময় আর বহমান স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না, সময় নেবেন চিন্তা করতে, এটি সাফল্যের উৎস। সময় নেবেন পড়তে, এটি জ্ঞানের ভিত্তি। সময় নেবেন নামাজ আদায় করতে, এটি দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় শান্তি। সময় নেবেন বন্ধু বনে যেতে, এটি সুখের সোপান। সময় নেবেন হাসতে, এটি সর্বোত্তম লুব্রিক্যান্ট। সময় নেবেন দিতে বা দান করতে, স্বার্থপর হয়ে জীবনটাকে ছোট করার কোনো অর্থ নেই। আপনার সময়ক্ষেপণ করতে পারে এমন চিন্তাশূন্য লোক এড়িয়ে চলবেন। তবে এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন যেন লোকটি আবার আপনার আচরণে কষ্ট না পায়। মনে রাখবেন, সময় নেবেন কাজ করতে কারণ এটি সফলতার মূল্য (ঢ়ৎরপব), কিন্তু সময়ক্ষেপণের জন্য কখনও সময় নেবেন না। সময় সম্পর্কে এ সকল প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ কথা আমাদের জানা থাকলেও আমরা অনেকেই তা থেকে শিক্ষা নিই না। বরং আমাদের প্রতিটা দিনই একই রকম যায়, আসে না কোনো সাফল্য, হয় না কোনো পরিবর্তন। স্মরণ রাখবেন রাসূলে করীম (সা) বলেছেন, “যার দু’টি দিন একই রকম যায় নিঃসন্দেহে সে ক্ষতিগ্রস্ত।” আমাদের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সময়। সময়ের ওপর ভর করেই জীবনের উন্নতি ত্বরান্বিত হয় এবং সময়কে যথাযথ ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে জীবনের অবনতি হয়। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে ঞরসব রং ধষষ ঃযব নবংঃ ড়ভ সড়হবু অর্থাৎ সময়-ই হচ্ছে সব সম্পদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মানবজীবনের সীমাবদ্ধ গণ্ডিকে সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে সময় একমাত্র উপজীব্য। সময় জ্ঞান না থাকলে জীবনে কখনও উন্নতির আশা পূরণ হয় না। পক্ষান্তরে সময়ই মানব জীবনের উন্নতি-অবনতি, সুখ-সমৃদ্ধি ও প্রতিপত্তি অর্জনের শ্রেষ্ঠ উপাদেয়। জীবনের গতি সময়ের গতির মতোই নির্মম। কারণ জীবন বয়স তথা সময়ের ফ্রেমে বাঁধা। তাই জীবনের কোনো মূল্য নেই সময় ছাড়া। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যে সময়টুকু থাকে, তাকে যিনি যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন, প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন, কেবল তার জীবনই মূল্যবান। এবার নিজেরাই একটু ভাবুন কী করছেন। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছেন না তো? সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে সময়েরই অন্ধকারে। সমাধান কী? সমাধান আপনার হাতের কাছেই, সময়ের গুরুত্ব দিন, সময় নামক সুযোগটাকে কাজে লাগান। লেখক : এমফিল গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির