post

সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বাংলাদেশের হোমিও চিকিৎসায় ও শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান

১২ নভেম্বর ২০১১
চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিপোক্র্যাটিস মানবদেহে চিকিৎসার জন্য দু’টি পদ্ধতির কথা বলেছেন, যার একটি বিসদৃশ (Dissimilar) তথা অ্যালোপ্যাথি আর অপরটি হলো সদৃশ (Similar) তথা হোমিওপ্যাথি। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা: ক্রিশ্চিয়ান স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ১৭৯০ সালে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করলেন যে, সদৃশ চিকিৎসাপদ্ধতিই হতে পারে আরোগ্যের একমাত্র নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। তিনি এর নাম দিলেন ‘হোমিওপ্যাথি’। তৎকালীন সময়ের একজন খ্যাতিমান MD ডিগ্রিধারী অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক হ্যানিম্যান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ামুক্ত এ চিকিৎসাপদ্ধতির আবিষ্কারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বে এক নতুন যুগের সূচনা করলেন। পরবর্তীকালে খ্যাতিমান অসংখ্য বিজ্ঞানীর অংশগ্রহণ এবং গবেষণার মাধ্যমে এ পদ্ধতি আরো সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। যারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে ‘হোমিওপ্যাথি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাপদ্ধতি’ আবিষ্কারের জন্য সুইডিশ পার্লামেন্ট গ্রিসের বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ডা: জর্জ ভিথোলকাসকে বিকল্প নোবেল পুরস্কার প্রদান করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) হোমিওপ্যাথিকে বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বর্তমান বিশ্বে হোমিওপ্যাথি একটি আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। তাই বাংলাদেশ সরকার হোমিওপ্যাথির উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকার মিরপুর-১৪ এ প্রায় ৭ একর জমির ওপর ১৯৮৪ সালে সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৯ সালের ৩ মার্চ কার্যক্রম শুরু হয়। এ কলেজটি দেশের একমাত্র সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ এবং এটি হোমিওপ্যাথিতে দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি ‘ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি’ বিএইচএমএস (BHMS) ডিগ্রি প্রদান করে, যার মান এমবিবিএস (MBBS) ডিগ্রির সমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ BHMS কোর্সটি পরিচালনা করে। প্রতি ব্যাচে ৫০ জন করে বর্তমানে ১৭-২২তম ব্যাচ পর্যন্ত মোট ৩০০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছেন। ১৬তম ব্যাচ ইন্টার্নিরত। ১৯৮৯-৯০ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম ব্যাচের যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ২৩তম ব্যাচের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রক্রিয়াধীন। একটি অ্যাকাডেমিক ভবন, কয়েক লক্ষ বইসমৃদ্ধ একটি আধুনিক লাইব্রেরি, দু’টি আবাসিক হল (একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী হল), একটি মসজিদ, একটি জাদুঘর ও একটি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে, ইন্ডোর  গেমসের আর বার্ষিক শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা রয়েছে। মোট ১৪টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। বিভাগগুলো হলো : Anatomy, Physiology, Pharmacy, Community Medicine Department Forensic, Pathology, Gynecology, Practice of Medicine, Surgery, Medicine, Oregano of Medicine, Chronic disease, case taking & Repertory, Homeopathic Psychology, Homeopathic Philosophy Department. কোর্স ও কারিকুলাম সম্পর্কিত তথ্য কোর্সের নাম  : BHMS (Bachelor of Homeopathic Medicine of Surgery) কোর্সের মেয়াদ : ৫ বছর ইন্টারনিশিপ : ১ বছর আসনসংখ্যা : ৫০টি (৪৮টি সাধারণ, ১টি উপজাতি ও ১টি বিদেশী) ভর্তির শর্ত ও যোগ্যতা : এমবিবিএস অনুরূপ অর্থাৎ নিয়মিত SSC & HSC Pass (বিজ্ঞান বিভাগ ও জীববিজ্ঞান আবশ্যক) SSC & HSC Pass  : মোট এচঅ-৬.৫ (পরিবর্তনশীল) ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। SSC & HSC/Alim এর ফলাফলের জন্য ১০০ নম্বর, SSC/Dakhil  এ প্রাপ্ত GPA এর ৮ গুণ (8×5)= ৪০ এবং HSC/Alim এ প্রাপ্ত GPA এর ১২ গুণ (12×5) = ৬০. লিখিত পরীক্ষা (MCQ) = ১০০ নম্বর (পদার্থ-২০, রসায়ন-৩০, জীব-৩০, ইংরেজি-১০, সাধারণ জ্ঞান-১০) এমবিবিএস কোর্সের সকল বিষয় এই কোর্সে (BHMS) পড়ানো হয়। এ বছর ফরম বিতরণ শুরু ও জমা ২৩ অক্টোবর থেকে ১৫ ডিসেম্বর এবং ভর্তি পরীক্ষা ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০ ঘটিকায়। BHMS কোর্সের অ্যাকাডেমিক ৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪১৫০ নম্বরের ৪টি Professional (পেশাগত) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। সাফল্যের সাথে পড়াশোনা শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনের মাধ্যমে সার্টিফিকেটর (BHMS) ডিগ্রি প্রদান করে। সুবিধাসমূহ ও চাকরির ক্ষেত্র বর্তমানে ১৫টি সদর হাসপাতালে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত BHMS ডিগ্রিধারী প্রথম শ্রেণীর চিকিৎসকরা সেবা প্রদান করছেন এবং ৫১ জনের নিয়োগপ্রক্রিয়া শিগগিরই সম্পন্ন হবে। দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে BHMS চিকিৎসক নিয়োগের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মেডিক্যাল সেন্টারে BHMS চিকিৎসকগণ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সেবা প্রদান করছেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনে BHMS চিকিৎসকগণ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সেবা প্রদান করেছেন। BCS (সাধারণ) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান- বেসিক হোমিওপ্যাথিক ক্লিনিক (প্রা:) লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক হোমিওপ্যাথিক ক্লিনিক, আহসানিয়া মিশন, ইবনে সিনা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে BHMS চিকিৎসকগণ চাকরিরত আছেন। আরো রয়েছে প্র্যাকটিস করে মানবসেবা এবং অর্থ উপার্জনের বিশাল সুযোগ। ইন্টার্নি চলাকালীন সময়ে মাসিক ১০,৫০০/-টাকা করে ভাতা প্রদান করা হয়। BHMS পাস করার পর দেশে-বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা যায়। বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথির অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে ১৮০০ শতকের প্রথম দিকে। বিশেষ করে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের উল্লেখযোগ্য তেমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং শিশুরোগের চিকিৎসায় এ পদ্ধতি খুবই নিরাপদ। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ সালে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড গঠনের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক শিক্ষাব্যবস্থাকে একটি কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯৮০ এর দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাঁচ বছর মেয়াদি গ্র্যাজুয়েশন (সম্মান) কোর্স প্রবর্তন করা হয়। ১৯৮৩ সালে হোমিওপ্যাথিক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড গঠন করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো সুগঠিত করা হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সার্ভিসের মহাপরিচালকের অধিদফতরে একটি হোমিওপ্যাথিক দেশজ চিকিৎসার পরিচালকের দফতর সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে দেশে একটি সরকারিসহ মোট তিনটি গ্র্যাজুয়েশন (সম্মান) হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও ৩৮টি ডিপ্লোমা হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত আছে। দেশে প্রায় এক হাজার ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী (BHMS) এবং বহু সহস্র ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী ডাক্তার চিকিৎসাসেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। দেশের মোট জনসমষ্টির একটি বিরাট অংশ (৪০%) হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। আর অন্যান্য চিকিৎসায় বিফল হয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা কম নয়। মু. কবীর হোসাইন সরকার

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির