post

অগণতান্ত্রিক সরকার বিলাসী বাজেট

০৭ জুলাই ২০১৫
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ# গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে অগণতান্ত্রিক সরকার দেশের সর্বকালের বৃহত্তম বিলাসী বাজেট পাস করেছে। বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২,৯৫,১০০ কোটি টাকা আর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ধরা হয়েছে ৭ শতাশ। তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা যোগ করলে এ বাজেটের আকার দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। বাজেটে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, রফতানি খাত, শিক্ষা খাতে কর বৃদ্ধি করে এসব খাতকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, যা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এবারের এ বিশাল বাজেটের আয় হবে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে বাজেট ঘাটতি দাঁড়ায় ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। আর বিদেশী অনুদান হিসাবে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির কারণে দাতারা আসছেন না। সবাই বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বিনিয়োগের ব্যাপারে বাজেটে সুস্পষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। রাজস্ব আয়ের বড় অংশের জোগান আসবে আয়কর, শুল্ক ও মূসক থেকে। এনবিআর আয় করবে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আসবে ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছেরর বাজেটে জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। সরকার ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই, যা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘোষণায় উঠে এসেছে। বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির কোনো বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের পথ সম্প্রসারিত হবে। বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসরত করদাতার জন্য এ কর ধার্য করা হয় ৫ হাজার টাকা। অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ৪ হাজার এবং সিটি করপোরেশন ব্যতীত উপজেলা করদাতার জন্য এ কর নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার টাকা। বাজেট ঘোষণায়, শহর-উপজেলায় সকল করদাতার জন্য একই হারে ৪ হাজার টাকা ন্যূনতম নির্ধারণ করা হয়। গত অর্থবছরে ন্যূনতম কর যথাক্রমে ৩ হাজার টাকা, ৪ হাজার টাকা ও ১ হাজার টাকা। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মের ব্যাংকের জন্য করপোরেট হার ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। বাজেট ঘোষণায় সব ধরনের পণ্যে রফতানির ওপর ১ শতাংশ উৎসে কর কাটার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। অথচ এটা সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ছিল ০.৩০ শতাংশ। এটা চলতি বাজেটে নির্ধারণ করা হয়েছে ০.৬০ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকা রফতানি আয় হলে তার বিনিময়ে ৬০ পয়সা কর দিতে হবে গার্মেন্ট মালিকদের। হঠাৎ করে দ্বিগুণ কর বৃদ্ধি করায় দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরী পোশাক শিল্প ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও ধরনা দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। ba1 বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের জন্য অগ্রাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহের ক্রমবর্ধনশীল চাহিদা বাজেটে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। অন্য দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজে ৭.৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়- মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সীমিত আসনসংখ্যার কারণে বর্তমানে কেবল উচ্চবিত্তের সন্তানরাই নয়, মধ্যবিত্ত সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরাও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করছে। বাজেটে এদের ওপর শতকরা ৭.৫ হারে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত মধ্যবিত্ত-সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েদের এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের পথে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। যা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাসহ অন্যান্য সামাজিক খাতে অধিকতর বিনিয়োগের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কর সংগ্রহ করা যৌক্তিক। আলোচনা প্রাসঙ্গিক যে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর করারোপ করা হলেও তা আদায় করা হবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই। সংসদে প্রতিনিধিত্বের ধরনে বিভিন্ন দল থাকলেও মূলত কার্যকর কোনো বিরোধী দল নেই। সে কারণে প্রস্তাবটির বিরুদ্ধে সংসদে কেউ সোচ্চার হননি। তবে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে পত্রপত্রিকায়। এর সমর্থক কারও মতে, সচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরাই এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ছেন। তাদের আরেকটু বেশি ব্যয় করা অসঙ্গত হবে না। তবে প্রায় বিনামূল্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও প্রকৌশল কলেজের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আসন থাকলে এত অধিক টাকা ব্যয় করে খুব কমসংখ্যক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পথে চলতেন। কেউবা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেশন জট, মন্দ ছাত্ররাজনীতিসহ কোনো কোনো কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন। তাদের সেই যাওয়াও যৌক্তিক। এর জন্য তারা দিচ্ছেন চড়া মাশুল। আবার কর দেবেন কেন এবং কী যুক্তিতে? যতটুকু জানা যায়, এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৩টি, শিক্ষার্থী আছেন সাড়ে চার লাখ। তেমনি ৬৬টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আছেন ২০ হাজার ছাত্রছাত্রী। তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তো ছিল রাষ্ট্রের। তা না করে উল্টো কর বসিয়ে আরও ব্যয়বহুল করে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিক্যাল কলেজে উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পাশাপাশি নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীরও প্রচুর ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। সরকারের কোনো ব্যয় ছাড়াই তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট রয়েছেন। এতেও বাধা। এর নৈতিক দিকটি কোথায় তা বোঝা দুর্বোধ্য। পাশাপাশি এই স্তরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রায় বিনামূল্যে পড়ছেন। তা পড়ুক। সরকারের সামর্থ্য থাকলে সেখানে আরও ব্যয় করা উচিত। সে দাবিও সবাই করেন। তবে যারা সেগুলোতে পড়তে পারেন না বা পড়ছেন না কোনো না কোনো কারণে, তাদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ কেন? চলতি বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। দেশের জনগোষ্ঠীর পঞ্চাশ ভাগ এখনও কৃষিনির্ভর অথচ সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে ভর্তুকি কমছে যার সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ায় খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। তাই বাজেটকে কোনমতেই কৃষিবান্ধব বলা যাবে না। সব বিবেচনায় এ বাজেটকে কথামালার বাজেট ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বাজেট নিয়ে একটি আশঙ্কা। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বার বার দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার কথা বললেও তা জনগণের নাগালের বাইরে। বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বেসামাল। বিশ্ববাজার পরিস্থিতি, বিশেষত খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানি তেলের দাম নিম্নগতি থাকার পরও সরকার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। এমতাবস্থায় বাজেটে ৮৬,৬৫৭ কোটি টাকা পরিমাণের বিরাট ঘাটতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আগুনে পানির পরিবর্তে ঘি-ই ঢেলে দেয়ার মতো অবস্থা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ba2 সরকার বাজেটের বিরাট ঘাটতি দু’ভাবে পূরণ করবে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বন্ড, সেভিংস সার্টিফিকেট ইত্যাদির মাধ্যমে তা সংগ্রহ করা যেতে পারে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার থেকে ‘ক্রাউডেড আউট’ বা বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। ফলে সুদের হার বেড়ে যাবে, বিনিয়োগ হ্রাস পাবে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি হবে। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে, যা টাকা ছাপানোর সমতুল্য, এ ঘাটতির সমাধান করতে পারে। এর ভয়াবহ প্রভাবও দ্রব্যমূল্যে পড়তে বাধ্য। আর মুদ্রাস্ফীতি গরিবদের ওপর এক ধরনের অমানবিক ট্যাক্স। এবার বাজেট বাস্তবায়নের বিষয়ে আসা যাক, যা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। অতীতে কোনোদিন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সরকার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি, তাই ৯৭,০০০ হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলিত এডিপি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক। বিদায়ী বছরের প্রাক্কলিত এডিপি ছিল ৭৫,০০০ কোটি টাকা, যা সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সার্বিকভাবে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে এবং এর বর্তমান ভঙ্গুর অবস্থা সম্পর্কে পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। বাজেট কোনো মতে বাস্তবায়ন হলেও, বাস্তবায়নের গুণগত মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, প্রতি বছর অর্থবছরের শেষ প্রান্তে এসে টাকা খরচের মহোৎসব সৃষ্টি হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৬৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। অথচ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এক মাসেই বাস্তবায়ন দেখাবে প্রায় ১০০ শতাংশ। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, ১১ মাসে এডিপিতে মোট খরচ হয়েছে ৫,১৯,৯৭ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪,২১,৬১ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগের থেকে এডিপি বাস্তবায়ন হার অনেক ভালো অবস্থায় আছে। অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে (জুন-সেপ্টেম্বর) এডিপি বাস্তবায়ন ভালো হয় না। এর প্রধান কারণ প্রথম কোয়ার্টার বর্ষা-বাদল থাকে। এতে করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না। এর পরের দুই কোয়ার্টারে বেশ চাপ পড়ে। সে জন্য শেষ সময়ে অনেক অপচয় হয়। গত অর্থবছরের মতো এবারও করের টাকায় দুর্নীতির দায়শোধ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে সহায়তা দিতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫,০০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ৯০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোকে এভাবে অর্থসহায়তা দিয়ে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদরা। সোনালীর হলমার্ক, জনতার বিসমিল্লাহ আর বেসিক ব্যাংকের আবদুল হাই বাচ্চু এসব অর্থ কেলেঙ্কারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংক থেকে লুট হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর বাড়ছে সরকারি অর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন ঘাটতি। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে বাজেটে। সরকার সমর্থক অর্থনীতিবিদ খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকারের নিজস্ব নিয়োগে নিযুক্ত হন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। তারা ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে যাবে আর জনগণের করের টাকা দিয়ে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করবে সরকার। এমনটা কাম্য নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে জনগণের টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণ করতে হবে কেন। ঋণ আদায় করে বা ব্যাংকের যে তহবিল আছে তা দিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করা হোক। বাজেট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১-১২ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণে রাখা হয় ৩৪১ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেও ওই অর্থবছর ব্যয় হয় ৫৪১ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ৪২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ব্যয় হয় ৫,০০০ কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আবারও ৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও শেষ পর্যন্ত খরচ হয় ৫০৬৮ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরেও মূলধন ঘাটতি পূরণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫,০০০ কোটি টাকা, যা জনগণের করের টাকায় পরিশোধ করা হবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী ১ জুলাই থেকে পে-স্কেল বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু কিভাবে এটি বাস্তবায়ন হবে, তা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। ফলে আশ্বস্ত হতে পারছেন না প্রজাতন্ত্রের প্রায় ১৪ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী। পে-স্কেলের বাস্তবায়ন নিয়ে এখন তাদের দুশ্চিন্তা ভর করেছে। ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঘোষিত বেতনের কত শতাংশ পাবেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে পে-স্কেল বাস্তবায়নের বিষয়টি ভালোভাবে দেখছেন না সরকারি চাকরিজীবীরা। তাদের মতে, পে-স্কেল বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুর দাম বেড়ে যাবে। আর এটি যদি দুই বছরে বাস্তবায়ন হয় তাহলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়বেন তারা। কারণ পাঁচ বছর পর পর পে-স্কেল বাস্তবায়ন হয়। এরই মধ্যে সেই পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এখন এটি বাস্তবায়ন করতে যদি দুই বছর সময় লাগে, তাহলে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তারা আরো জানান, পে-স্কেল বাস্তবায়নের ঘোষণা যখনই দেয়া হোক, বাস্তবায়ন সবসময় ছয় মাস থেকে এক বছর আগে থেকে করা হয়। এতে চাকরিজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন না। কিন্তু এবার অতীতের সব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর পর থেকে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পরিশেষে একটুকু বলে শেষ করতে চাই যে, অগণতান্ত্রিক সরকারের নির্যাতন ও চরম দুঃশাসনের কারণে মানুষ নিষ্পেষিত হয়ে পড়েছে। এ থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। এ জন্য শিগগির নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে মুক্তি পাবে দেশের মানুষ। লেখক : সাংবাদিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির