অভিশপ্ত পলাশী ও ভাগ্যাহত নবাব সিরাজউদ্দৌলা
অধ্যাপিকা রহিমা আক্তার
২৪ মে ২০১৬
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী ট্র্যাজেডির বিষক্রিয়ায় বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয়েছিল। পলাশীর প্রান্তর বাঙালির খুনে লালে লাল হয়েছিল ইংরেজ বেনিয়া আর তাদের দেশীয় গোলামদের বিষাক্ত নখরে। হারাতে হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতা। বরণ করে নিতে হয়েছিল পৌনে দু’শ বছরের ইংরেজ গোলামি। সে গোলামি দশা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জাতীয় কবি, ঐতিহ্যের কবি, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি কাজী নজরুল ইসলাম জাতির বিবেককে জাগ্রত করে তুলে স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণে সে দৃশ্যই এঁকেছেন তাঁর কবিতায়।
২০১৬ সাল। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার ২৫৯তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার পাশাপাশি এর অবিসংবাদিত নেতা সিরাজউদ্দৌলাও পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়-পরবর্তী বন্দি অবস্থায় ২ জুলাই, ১৭৫৭ সালে মুর্শিদাবাদের নিমকহারাম দেউড়িতে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হন।
পলাশীর পতনের পথ ধরে একটি স্বাধীন জাতির অস্তিত্ব বিলোপের সে ঐতিহাসিক ঘটনার কারণেই পলাশী শব্দটিই হয়ে দাঁড়িয়েছে এক অভিশপ্ত নাম হিসেবে। পলাশী শব্দটির উৎপত্তি পলাশ নামক একটি গাছের নাম থেকে। সকল গাছই কার্বন-ডাই অক্সাইড ভক্ষণ করে মানুষের জন্য দেয় অক্সিজেন। আর সে কারণে গাছের সাথে মানুষের কোনো শত্রুতা নেই। কিন্তু কোনো একটি গাছের আধিক্য হেতু কোনো স্থানের নাম যখন হয়ে যায় এবং স্থানটি যখন মানুষের জন্য একটি অভিশপ্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয় তখন সেখানকার গাছগুলোও এ অভিশাপের দায়ভাগের সীমানায় বিবেচিত হয়। আলোচ্য পলাশী নামক নামটিতে মীরজাফরসহ ইংরেজদের দেশীয় দোসরদের ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই নেমে আসে ঘোর অমানিশা। হারাতে হয় আমাদের স্বাধীনতা।
যে পলাশ নামক গাছের নাম থেকে পলাশী নামটির উৎপত্তি তারও রয়েছে কলঙ্কিত পরিচয়। পলাশ নামক গাছটিকে ইংরেজিতে বলে ইঁংঃধৎফ ঞবধশ. যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় জারজ সেগুন। সম্ভবত পলাশীর মাঠে নিজদেশ, রাষ্ট্র, স্বাধীনতা সবকিছুর সাথে জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, মীরজাফর প্রমুখের বেইমানির চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের পর থেকেই ইংরেজি অভিধানে শব্দটি এ অর্থ নিয়ে ঢুকেছে যা আজো তার অভিশপ্ত হওয়ার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। অথবা ভিন্নভাবে বলা যায় ইংরেজগণ এখানকার মুসলিম শাসকদের হটিয়ে হিন্দুসমর্থিত বিদেশী বেনিয়াদের শাসনক্ষমতায় বসানোর জন্য এ ধারার গাছ বেষ্টিত একটি স্থান যা যড়যন্ত্রকারীদের জন্য একটি উত্তম স্থান সেটিকেই সেদিন বেছে নিয়ে ছিল।
১৭৩৩ সালে মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণকারী সিরাজউদ্দৌলার প্রকৃত নাম ছিল মীর্যা মুহাম্মদ। পিতা যইনুদ্দিন আহমদ ছিলেন আলীবর্দী খানের অধীনে পাটনার নবাব। ১৭৪৮ সালে আফগান বিদ্রোহীদের হাতে তাঁর পিতার মৃত্যু হলে মাতামহ নবাব আলীবর্দী খানের সাথে পাটনার বিদ্রোহ দমনে অংশ নেন এবং কৃতিত্বের সাথে আফগান বিদ্রোহীদের দমন করেন এবং সিরাজকে পাটনার নবাব নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু বালক বলে সিরাজের প্রতিনিধি হিসেবে রাজা জানকী রাম বিহারের শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। একই বছর আলীবর্দী খান সিরাজকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার ভাবী নবাব হিসেবে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করেন। সিরাজ মাতামহের তত্ত্বাবধানে থেকে তাঁর নবাবী দেখাশোনা করার দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে যোগ্য প্রশাসক হিসেবে গড়ে উঠতে থাকেন।
ইংরেজ এবং হিন্দুদের ষড়যন্ত্রের কুন্ডলী এ সময় থেকেই পাকিয়ে উঠতে শুরু করে। আলীবর্দী খানের জীবদ্দশায়ই ঢাকার খাজনা আদায়কারী রাজবল্লভ এবং তার পুত্র কৃষ্ণবল্লভ ষড়যন্ত্র ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে ওঠে। নবাব আলীবর্দীর তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠার সুযোগে সিরাজ এটি অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে বাংলা প্রদেশ হলো খাজনা আদায়ের জন্য সবচে উর্বর অঞ্চল। মুর্শিদকুলী খানের সময় থেকেই বাংলা থেকে দেড়কোটি টাকার খাজনা মুর্শিদাবাদের নবাব সরকারে জমা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলা থেকে আশানুরূপ খাজনা আদায় না হওয়ায় সিরাজ বিষয়টির খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেন। তিনি এখানকার নবাবের প্রতিনিধি রাজবল্লভের কাছে বিগত কয়েক বছরের খাজনার টাকার হিসাব চাইলে রাজবল্লভ তার হিসাব পেশ না করে কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে রাজস্বের টাকা আত্মসাতের জঘন্য ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। তিনি রাজকোষে আদায়কৃত রাজস্ব ৫৩ লক্ষ টাকাসহ তার ছেলে কৃষ্ণ বল্লভ ও কৃষ্ণ দাসকে কলকাতার ইংরেজ কুঠিতে পাঠিয়ে দিয়ে সিরাজের কাছে সংবাদ পাঠান যে তারা টাকা নিয়ে পালিয়েছে এবং ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ পূর্ব থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের সাথে ইঙ্গ-হিন্দু আঁতাত করে কৃষ্ণবল্লবের মাধ্যমে টাকা পাচার করে এবার সিরাজকে সরাসরি ইংরেজদের বিরুদ্ধে দাঁড় করান। ফলে ইঙ্গ-হিন্দু ষড়যন্ত্রের জট সিরাজের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। এ ঘোর ষড়যন্ত্রের অমানিশা ঘনিয়ে আসার আলামত যখন স্পষ্ট, সে সময় ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল আলীবর্দী খান মৃত্যুবরণ করেন। সিরাজ তখন মনসুরুল মুলক সিরাজউদ্দৌলা শাহ কুলী খান মীর্জা মুহম্মদ হায়বৎ জং বাহাদুর নাম ধারণ করে ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। পূর্ব থেকেই তাঁকে উত্তরাধিকার মনোনয়ন দেয়ায় আলীবর্দী কন্যা এবং ঢাকার নায়েব নাযিমের বিধবা পত্মী ঘসেটি বেগম এবং পুর্ণিয়ার শাসনকর্তা আলীবর্দী খানের দৌহিত্র শওকত জঙ্গ সিরাজের সিংহাসন আরোহণকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে সিরাজ তাদের দমনে উদ্যোগ নেন। মতিঝিল আক্রমণ করে সিরাজ ঘসেটি বেগমকে বন্দি করেন। ইংরেজগণ এ সময় নবাবের বিনা অনুমতিতে কলকাতার দুর্গ সংস্কারে হাত দেয়। কৃষ্ণ বল্লভকে আশ্রয় দান এবং দুর্গ সংস্কারের পদক্ষেপে নবাব ১৭৫৬ সালের জুন মাসে ইংরেজদের কাশিমবাজার কুঠি অধিকার করেন। ইংরেজগণ মুচলেকায় স্বাক্ষর করে দুর্গপ্রাচীর ভেঙে ফেলতে দেশীয় লোকদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করতে ও বিনা শুল্কে বাণিজ্য করে রাজকোষের যে ক্ষতি করেছে তা পুষিয়ে দিতে আহবান জানালে ইংরেজগণ তা পালনে অস্বীকৃতি জানায়। মুচলেকার শর্তপালন অস্বীকার করায় সিরাজ ১৭৫৬ সালের ২০ জুন স্বসৈন্যে কলকাতা আক্রমণ করেন। তিনি ইংরেজদের পরাজিত করে এ শহরের নামকরণ করেন আলীনগর। এরপর সিরাজ তাঁর খালাতো ভাই পুর্ণিয়ার শাসক শওকত জঙ্গের বিদ্রোহ দমন করতে যাত্রা করেন। ১৭৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর নবাবগঞ্জের নিকট মনিহারীর যুদ্ধে শওকত জঙ্গ পরাজিত ও নিহত হলে সিরাজ পুর্ণিয়া জয় করেন। ইংরেজ কোম্পানি মাদ্রাজ থেকে ক্লাইভের অধীনে একদল সৈন্য ও ওয়াটসনের অধীনে এক নৌবহর কলকাতা পুনরুদ্ধারের জন্য পাঠায়। ১৭৫৭ এর ২ জানুয়ারি ক্লাইভ বিনাযুদ্ধে কলকাতা অধিকার করলে সিরাজ ক্লাইভের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। ১৭৫৭-র ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতা শহরতলি পৌঁছে আমীর চাঁদের আমবাগানে সিরাজ শিবির স্থাপন করেন। ১৭৫৭-এর ৪ ফেব্রুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ক্লাইভ সিরাজের শিবির আক্রমণ করে। উভয়পক্ষে যুদ্ধ চলার পর ইংরেজগণ সিরাজের সাথে এক সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ হয়। ইতিহাসে এটি আলীনগরের সন্ধি নামে খ্যাত। সন্ধির শর্তে ইংরেজরা পূর্ব যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, বঙ্গদেশে বিনা শুল্কে বাণিজ্য এবং দুর্গ নির্মাণের অধিকার লাভ করে।
এদিকে উমিচাঁদ, জগৎ শেঠ, মানিক চাঁদ, এয়ার লতিফ, মীর জাফর, রাজবল্লভ ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়ে নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ক্লাইভ দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের আশকারা পেয়ে আলীনগরের সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে সিরাজউদ্দৌলাকে যুদ্ধে প্ররোচিত করে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশী নামক স্থানে নবাবের সঙ্গে ক্লাইভের যুদ্ধ হয়। মীর জাফর, রায়দুর্লভ রাম যুদ্ধে তাদের সৈন্য বাহিনীকে পূর্ব ষড়যন্ত্রের শর্তে যুদ্ধ করতে না দিয়ে পরাজয় ডেকে আনে। মীর মদন এবং মোহন লালের বাহিনী যুদ্ধ করেও সুবিধা করতে না পেরে যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাণ দেন মীর মদন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা বিহারের সৈন্যদের সাথে সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে যুদ্ধস্থল ত্যাগ করে যাবার সময় মীর জাফরের লোকদের হাতে বন্দি হয়ে মুর্শিদাবাদে নীত হন। মীর জাফর ও ক্লাইভের গোপন ইঙ্গিতে মীর জাফর পুত্র মীরনের নির্দেশে বন্দি নবাবকে মুর্শিদাবাদের নিমকহারাম দেউড়ির জাফরগঞ্জ প্রাসাদে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্রে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে যে ইংরেজ দুঃশাসন শুরু হয়, তার জের টানতে হয় গোটা ভারতবর্ষকে দুইশত বছর। এখনও ইংরেজ বেনিয়াদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির লালনে তাদের ঔরসরা এদেশে সোচ্চার, আবার তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্টাইলে এনজিওর ছদ্মাবরণে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এখনো আমাদের সমাজে কিছু পরগাছা সংস্কৃতির অনুসারী নিজের পিতাকে ড্যাড, বাপি, মাকে মম, মাম্মি, চাচাকে আংকেল ইত্যাদি ডেকে নিজেদের জাতে উঠানোর কোশেশ করে থাকে। এটি পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষীদের মধ্যে জাতে ওঠার সোপান হলেও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মানুষের কাছে কখনোই ঐতিহ্য নয় বরং প্রক্ষিপ্ত। আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শুধুই দেশের রাজধানী নয়, গোটা পৃথিবীর প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলাভাষার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ক্ষেত্রে ঢাকা বাংলা ভাষারও রাজধানী। তাই এটি আমাদের মনে রাখতে হবে এবং এখানকার হাজার বছরের উন্নত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন করতে হবে। যে যে ক্ষেত্রে পরাধীন মনোবৃত্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এগুলো ঝেঁটিয়ে বিদায় করে একটি স্বাধীন দেশের সৎ মনোবৃত্তি নিয়ে আমাদের ভাষার বিকাশ ও লালনে এবং এর শব্দভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধকরণে আমরা অবশ্যই নতুন শব্দ সৃষ্টি করবো, গ্রহণ করবো, তবে পৌনে দু ’শ বছরের ইংরেজ গোলামির চিহ্ন বহনকারী ভাষা ও সংস্কৃতি কখনোই আমাদের অনুসরণীয় সংস্কৃতি হতে পারে না। আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নানাদিকে হুমকির সম্মুখীন। উপরন্তু বেনিয়া সংস্কৃতি এবং হিন্দি কালচার আমাদের এ স্বাধীন চিত্তবৃত্তিকে অনেকটা গ্রাস করতে উদ্যত। আমাদের জাতিকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করার প্রয়াস না নিয়ে কেবলই অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা সেই ব্রিটিশ-বেনিয়াদের শেখানো ‘ডিভাইড অ্যান্ড রোল’ পলিসিরই দাসানুদাস অনুসরণ। এটি একটি শক্তিশালী জাতিগঠনের প্রধান অন্তরায় এবং আমাদের যারা প্রকৃত শত্রু আজ তারা আমাদেরকে এদিকটায় অনুগত করার ক্রমাগত তালিম দিয়ে যাচ্ছে আর অনুর্বর মস্তিষ্ক তা লুফে নিয়ে গোটা জাতিকে এক অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের প্রকৃত গার্জিয়ান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে ঐক্যের বন্ধনে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে যেভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন সে যাত্রাপথ বহু চড়াই উতরাই অতিক্রম করে পুনরায় অনৈক্যের অন্ধকার গলিতে পা বাড়িয়েছে। অনৈক্যের এ কালো নেকাব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের স্বাতন্ত্র্যকে অবশ্যই রক্ষা করে চলতে হবে। একটি ঐতিহ্যের সিঁড়ি বেয়ে ষড়যন্ত্রের উন্মোচন ঘটিয়ে হাজারো সিরাজের প্রতিরোধের মুখে হটিয়ে দিতে হবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের এবং রক্ষা করতে হবে বাংলাদেশের নাম, বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এবং বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে প্রত্যেকটি বাঙালিকে। বাঙালি আজ বিশ্বজয়ের নেশায় ব্যাকুল। তার এ আকুতিকে দেখতে হবে শ্রদ্ধার সাথে। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব-শত্রুতা কারো সাথেই নয়’ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির এ মৌলিক দিককে উচ্চকিত করে অভ্যন্তরীণ অনৈক্য যেমন দূর করা সম্ভব ঠিক তেমনি বিশ্বসভায় ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে বাঙালি একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে আবির্ভূত হবে এই হোক আমাদের আজকের অঙ্গীকার।
লেখক : প্রাবন্ধিক-গবেষক
আপনার মন্তব্য লিখুন