মহাগ্রন্থ আল কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার কারণে পৃথিবীতে এ ভাষা বিকৃত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অবিশ^াসীদের অবিশ^াস করার মত অনেক কিছু থাকলেও মহান আল্লাহকে বিশ^াস করার জন্য এমন অসংখ্য জীবন্ত প্রমাণ রয়েছে, যার দ্বারা নিশ্চিত হওয়া যায় মহান আল্লাহ আছেন। সে ধরনের প্রমাণপঞ্জির একটি হলো ভাষা। ভাষা সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের পার্থক্য। অবশ্যই তাঁর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবানদের জন্য। আল-কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করার অনেক যুক্তি রয়েছে। যেহেতু আল কুরআন আরবিভাষী মানুষের কাছে অবতীর্ণ হয়েছে, সে জন্য তা আরবিতে নাজিল হয়েছে। অন্যথায় যাদের জন্য এ কিতাব তারা এ কিতাব থেকে সত্য নির্দেশনা গ্রহণের পরিবর্তে বেশি বিতর্কে লিপ্ত হতো। আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন- وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَّقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آيَاتُهُ ۖ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ ۗ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاءٌ ۖ وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى ۚ أُولَٰئِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ- আমি যদি একে আজমী কুরআন বানিয়ে পাঠাতাম তাহলে এসব লোক বলতো, এর আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়নি কেন? কি আশ্চর্য কথা, আজমী বাণীর শ্রোতা আরবি ভাষাভাষী। এদের বলো, এ কুরআন মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রোগ মুক্তি বটে। কিন্তু যারা ঈমান আনে না এটা তাদের জন্য পর্দা ও চোখের আবরণ। তাদের অবস্থা হচ্ছে এমন যেন দূর থেকে তাদেরকে ডাকা হচ্ছে। মহান আল্লাহ আরবি ভাষায় আল-কুরআন কেন অবতীর্ণ করেছেন তার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই প্রদান করেছেন। তিনি বলেন- أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ আমরা উহা নাজিল করেছি আরবি ভাষায় কুরআনরূপে, যাতে তোমরা বুঝতে পার’ তিনি আরো বলেন- وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا এইভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কা ও তার চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামত দিবস সম্পর্কে।
১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস হয়ে ওঠার গল্প জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস বা ওয়ার্ল্ড অ্যারাবিক ল্যাংগুয়েজ ডে। এ দিনটি নির্ধারিত হওয়া খুব সহজ ছিল না। দিনটি নির্ধারিত হতে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। যেমন- - ১৯৪৫ খ্রি. ২৪ অক্টোবর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় সানফ্রানসিসকো শহরে জাতিসংঘের জন্ম হয়। - সর্বপ্রথম সৌদি আরব ও মরক্কো সরকার আরবি ভাষাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা এবং অন্যান্য ভাষার মতো এ ভাষায় সার্বিক কাজ সম্পাদন করার আহবান জানায়। - ১৯৫৪ সালে ৪ঠা ডিসেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ তাদের নবম অধিবেশনে ৮৭৮ নম্বর প্রস্তাবে জাতিসংঘের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আরবি ভাষায় লিখিত অনুবাদ প্রকাশের বৈধতা প্রদান করে। তবে বছরে চার হাজার পৃষ্ঠা অনুবাদের একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সাথে সাথে এ শর্ত জুড়ে দেয়া হয় যে, অনুবাদের ব্যয়কৃত অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশকে বহন করতে হবে এবং নথি ও কাগজপত্র আরব এলাকার রাজনৈতিক ও আইন বিষয়ক হতে হবে। - ১৯৬০ খ্রি. জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ‘ইউনেসকো’ আরব দেশগুলোতে আরবি ভাষায় সভা সেমিনার ও জাতীয় সম্মেলন পরিচালনা এবং তাদের নিজস্ব নথিপত্র ও প্রচারপত্র আরবিতে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। - ১৯৬৬ খ্রি. সাধারণ সভাগুলোতে ভিন্ন ভাষা থেকে আরবি ভাষায় এবং আরবি ভাষা থেকে ভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদের সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়। - ১৯৬৮ খ্রি. অনুবাদের সাথে সাথে আরবি ভাষাকে ইউনেস্কোর সাধারণ সভা ও কর্মপরিষদের কার্যকরী ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এই ধারাবাহিকতার সাথে সাথে আরব বিশ্বের কূটনৈতিক চাপ ও চেষ্টা অব্যাহত থাকে। এতে সৌদি আরব ও মরক্কো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। - ১৯৭৩ খ্রি., শেষ পর্যন্ত তারা আরবি ভাষাকে জাতিসংঘের সাধারণ সভার মৌখিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করাতে সমর্থ হয়। - পরবর্তীতে আরব লিগ তাদের ৬০তম অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরবিকে জাতিসংঘসহ তার অন্যান্য সংস্থাগুলোর দাফতরিক ভাষা করতে হবে। - ১৯৭৩ খ্রি., অবশেষে জাতিসংঘের ২৮তম অধিবেশনে ৩১৯০ নম্বর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আরবি ভাষাকে জাতিসংঘ ও তার সংশ্লিষ্ট সংস্থার দাফতরিক ভাষার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তখন থেকে জাতি সংঘের দাফতরিক ভাষা ছয়টি যথা: আরবি, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ ও স্প্যানিস। - ২০১০ খ্রি. জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩১৯০ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দিবসকে বিশ^ আরবি ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ ভাষায় যারা কথা বলেন তাদের সংখ্যা অনেক। যত দেশের মানুষ কথা বলে সেটাও কম নয়। পৃথিবীর মানুষেরা যত ভাষায় কথা বলে আরবি তার মাঝে চতুর্থ। অর্থাৎ ১২৮ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ চীনা ভাষায়, ৪৩ কোটি ৭০ লক্ষ স্প্যানিস ভাষায়, ৩৭ কোটি ২০ লক্ষ ইংরেজি ভাষায়, ২৯ কোটি ৫০ লক্ষ আরবি ভাষায় এবং ২৭ কোটি ৫০ লক্ষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। লোক সংখ্যার পাশাপাশি ২৮টি দেশের সরকারি ভাষা আরবি। যে সকল রাষ্ট্রের ভাষা আরবি সেগুলো হচ্ছে- আলজেরিয়া, বাহরাইন, কোমোরোস, চাদ, সাইপ্রাস (সংখ্যালঘু), জিবুতি, মিসর, ইরিত্রিয়া, ইরাক, ইসরাইল (হিবরুর পাশাপাশি) জর্দান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালি, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজার, ওমান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, সেনেগাল, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পশ্চিম সাহারা এবং ইয়েমেন। এসব আরবিভাষী দেশ ছাড়াও তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ ভাষার ব্যাপক ব্যবহার ও প্রচলন লক্ষ করা যায়। বিশ্বের ৪২২ মিলিয়ন আরব জনগোষ্ঠী এবং দেড় শ’ কোটিরও বেশি মুসলিম তাদের দৈনন্দিন কর্মজীবনে এবং ধর্মীয় আচরণে এ ভাষা ব্যবহার করে থাকেন।
আরবি ভাষার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এ ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও ধর্মীয় প্রয়োজনে এ ভাষা রপ্ত করতে হয়। বিশেষ করে আর্থিক প্রয়োজন পূরণে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে আরবি ভাষা চর্চা কতটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে তার কিছু দিক ও বিভাগ উল্লেখ করা হলো- ক. রেমিট্যান্স অর্জনে : বাংলাদেশ সৌদি আরবসহ কুয়েত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও ইরাক থেকে প্রচুর রেমিট্যান্স অর্জন করে। তবে পঁচিশ লক্ষাধিক মানুষ যা উপার্জন করে তা খুবই স্বল্প। কারণ বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক ভালো আরবি জানে না। সে জন্য তাদের নিম্ন শ্রেণির চাকরি করতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যদি আলাদা করে এ জনবলকে আরবি ভাষায় দক্ষ করে পাঠানো যায়, তাহলে এ আয় জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাবে। এর বাস্তব দৃষ্টান্ত হচ্ছে ভারত। তারা বিশেষ করে আরব বিশে^ জনশক্তি প্রেরণের আগে তাদেরকে আরবিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। সে জন্য আরব বিশে^র বড় বড় কোম্পানিতে শীর্ষ পদগুলোতে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় ও লক্ষণীয়। খ. ব্যবসায়িক সফলতার জন্যে : সুদূর অতীত কাল থেকে আরব বিশে^র সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে ব্যবসায়িক যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। সে জন্য খুব অচেনা অজানা স্থানের ভাষা আরবি। বর্তমান বিশে^র অন্যতম প্রধান দুটি খনিজসম্পদ স্বর্ণ এবং তেল এ দুটি খনিজসম্পদের বড় মজুদ রয়েছে আরবি ভাষাভাষী দেশে। সে জন্য যারা এসব খনিজপদার্থ নিয়ে গবেষণা ও ব্যবসা করতে আগ্রহী তাদেরও আরবি শিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। গ. অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা অর্জনে : পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ^বিদ্যালয় এবং আরব বিশে^র সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত বিশ^বিদ্যালয় হচ্ছে ‘আল কারওয়াইন বিশ^বিদ্যালয়। ৮৫৯ খ্রি. মরক্কোতে ফাতিমা আল-ফিহরি নামে এক সম্ভ্রান্ত মহিলা এটা প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামী বিশে^র দ্বিতীয় প্রাচীনতম ‘আল-আজহার বিশ^বিদ্যালয়’ ৯৭০ খ্রি. প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এছাড়া বাগদাদের ‘আন-নিজামিয়া বিশ^বিদ্যালয়’ ১৬০৫ খ্রি. প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এসব বিশ^বিদ্যালয়ের ভাষা আরবি। সুতরাং ঐতিহ্য ও সভ্যতার লালনভূমিতে বিচরণের জন্য আরবি জানা অত্যাবশ্যক। বর্তমান সময়ে দক্ষ অ্যাকাডেমিক ব্যক্তিত্ব তৈরির জন্য মিসরের আল আজহার ও সৌদি আরবের ‘কিং সউদ বিশ^বিদ্যালয়, মদিনা ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কিং আবদুল আজিজ বিশ^বিদ্যালয়, জামিআতুল মালিক ফয়সাল, উম্মুল কুরা বিশ^বিদ্যালয় এবং মেয়েদের জন্য জামিয়া নুরা-তে অনেক ছেলে মেয়ে ভর্তি হচ্ছে। তারা সকলেই আরবি ভাষায় দক্ষ হয়েই এ পর্যায়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। সুতরাং খুব ভিশনারি ও উন্নত ক্যারিয়ার গঠনের জন্য আরবি ভাষা শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। ঘ. কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করণের লক্ষ্যে : এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কারণ আরবি না জানলে পৃথিবীর প্রায় ত্রিশটি রাষ্ট্রের সাথে আমাদের যোগাযোগ কমে যায়। অন্য ভাষার মাধ্যমে কাজ সমাধান করা যায়, কিন্তু ভালোবাসা ও মনের ভাব বিনিময় করা যায় না। গভীর আন্তরিকতা গড়ে ওঠে না। এটার গুরুত্ব অনুধাবন করেই কিছুদিন পূর্বে ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আরবি ট্রেনিং প্রদান করেছে। কারণ এ ভাষা শিক্ষা ছাড়া পৃথিবীর মানুষের কাছে নিজেদের অবস্থান জানানো যায় না। সে জন্য খুব উচ্চাভিলাষী ও চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ারের জন্য আরবি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। ঙ. গণমাধ্যম কর্মী গঠনে : পৃথিবী এখন তথ্য-প্রযুক্তি ও মিডিয়ানির্ভর হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত করবে না। এখন পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ সেই করতে পারে, যার হাতে মিডিয়া বা গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সুতরাং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক লেভেলে খুব প্রেসটিজিয়াস ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিত্ব গঠনে মিডিয়া অ্যারাবিক শিক্ষা করে পৃথিবীব্যাপী নিজেকে এবং নিজের দেশকে শক্তিশালী ভাবে উপস্থাপন করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন এসব স্থানে আরবিতে দক্ষ করে মানবসম্পদ সরবরাহ করার বিশাল সুযোগ রয়েছে।
ধর্মীয় প্রয়োজনে আরবি ভাষা শিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দ্বীনি প্রয়োজনে কেন আরবি ভাষা শিখতে হবে সে ব্যাপারে অনেক আলোচনা রয়েছে। এখানে খুব সংক্ষেপে আরবি ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হলো: - আরবি ভাষা না জানলে দ্বীনের পরিপূর্ণ বিবরণ জানা সম্ভব নয়। এ জন্য মহান আল্লাহ আল কুরআনকে আরবি ভাষায় নাজিল করেছেন। তিান বলেন: بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُّبِينٍ পরিষ্কার আরবি ভাষায় (সূরা শুআরা : ১৯৫) তিনি আরো বলেন: إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ আমি একে আরবি ভাষায় কুরআন বানিয়ে নাজিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পারো। (্সূরা ইউসুফ : ২) - আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আরবি ভাষাকে শিক্ষার জানার এবং ভালোবাসার কয়েকটি কারণ বর্ণিত হয়েছে। যেমন- وعن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "أحبوا العرب لثلاث: لأني عربي، والقرءان عربي، وكلام أهل الجنة عربي". رواه الطبراني আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবী করিম সা. বলেছেন, তোমরা তিন কারণে আরবিকে ভালোবাস, কেননা আমি আরবি ভাষাভাষী, কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ এবং জান্নাতিদের ভাষা হবে আরবি।
- আরবি ভাষাকে কুরআন ও হাদিস বোঝার মূল চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করা হয় আরবি শিক্ষার ব্যাপারে উমার ফারুক রা. বলেন- تعلَّموا العربيةَ؛ فإنها من دينِكم، وتعلَّموا الفرائضَ؛ فإنها من دينكم তোমরা আরবি শিক্ষা কর, কেননা তা দ্বীনে অংশ; তোমরা ফারাইদ শিক্ষা কর, কেননা তা দ্বীনের অংশ। দ্বিতীয় খলিফা সাইয়্যেদুনা ‘উমার ফারুক রা. আরো বলেন- عليكم بالتفقه في الدين، والتفقه في العربية وحسن العربية. সাইয়্যেদুনা ‘উমার ফারুক রা. বলেন: তোমাদের উচিত দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করা, আরবিতে পা-িত্য অর্জন করা এবং আরবিতে ভালো হওয়া । তিনি আবু মুসা আল আল আশ‘আরী রা. কে লিখেছিলেন- تفقهوا في السنة، وتفقهوا في العربية، وأعربوا القرآن، فإنه عربي. সুন্নার জ্ঞানার্জন করো এবং আরবির দক্ষতা অর্জন করো। আল কুরআন প্রসার করো কেননা তা আরবি। - নবী করিম সা.-এর সর্বশেষ বাণী হলো- عَنْ مَالِكٍ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন: আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বিষয় রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ সে দুটো আঁকড়ে থাকবে, তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব (আল-কুরআন) ও তাঁর নবীর সুন্নাত। সুতরাং সঠিক পথে থাকার জন্যে এবং আল কুরআন ও আল হাদিস মানতে হবে। আর তা বুঝতে হলে অবশ্যই আরবি ভাষা জানতে হবে। কেউ বলতে পারেন অন্য ভাষা জানার মাধ্যমেও এগুলো জানা যায়; সে ক্ষেত্রে বলা যায়, কোন ভার্সন করে পড়া, জানা আর আসল সোর্স থেকে জানা-বোঝা নিশ্চয় এক কথা নয়। - ৮ম শতাব্দীর বিখ্যাত প-িত শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) (১২৬৩-১৩২৮ খ্রি.) আরবি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বলেন- نفس اللغة العربية من الدين ومعرفتها فرض واجب ‘আরবি ভাষা স্বয়ং দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত এবং তা জানা অত্যাবশ্যক দায়িত্ব।
আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস মুসলিম উম্মাহ তথা মানবতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ এ ভাষার চর্চা, উদযাপন ও আয়োজন কোন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আল কুরআনের দিকে ধাবমান করতে পারে। আবার এ ভাষার দক্ষতা অর্জনের ওপর নির্ভর করে আল-কুরআন ও আল হাদিসের গভীর জ্ঞানার্জনের সঠিক ধারণা। অতএব আরবি ভাষা পঠন পাঠন যেমন জাগতিক জীবনের জন্য প্রয়োজন তেমনি আখিরাতের জন্যও। এ জন্য আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবসকে সামনে রেখে আরবি ভাষা এবং আল কুরআনের ভাষা শেখার দৃঢ় সঙ্কল্প গ্রহণ করে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। সেই সাথে একজন মুসলিম হিসেবে আল-কুরআনের পরিপূর্ণ নির্দেশনা বুঝা, মেনে চলা এবং সমাজে তা বাস্তবায়নের জন্য আরবি ভাষার জ্ঞান অর্জন করা একান্ত কর্তব্য। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মন্তব্য লিখুন