আবদুল কাদের মোল্লা
আমরা দু’বার স্বাধীনতা লাভ করার পরও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয়ে কোনো পরিবর্তন হয়নি, তার মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা অন্যতম। জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টির ব্যাপারে রাষ্ট্রযন্ত্র যারা পরিচালনা করেন, যারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার কলকাঠি নাড়েন, তাদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। অথচ কে না জানে যে, মানুষ গড়ার হাতিয়ার হলো শিক্ষাব্যবস্থা। অতি পুরাতন একটি বাক্য আমাদের মহারথীরা প্রায়ই বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সত্যিকারার্থে শিক্ষা শুধু মানুষ গড়ার হাতিয়ার নয়, জাতি গঠন বা নির্মাণের অপরিহার্য হাতিয়ারও বটে। একটি উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া একটি জাতি নির্মাণ কখনও সম্ভব নয়। শিক্ষাসঙ্কট দূর করার উদ্দেশ্যে শিক্ষাব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানোর জন্য দুয়েকবার চেষ্টা যে হয়নি তা নয়। তবে কখনও আন্তরিকতার অভাবে কোথাও সরকারের অসহযোগিতা, কোথাও ষড়যন্ত্রের কারণে, কোথাও বা গোলামি যুগের মানসিকতার কারণে সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। শুধু যে সফল হয়নি, তাই নয় বরং অবস্থা পূর্বের চাইতে আরও জটিল এবং বিপজ্জনক করা হয়েছে। শিক্ষা কী? শিক্ষার সংজ্ঞা এক কথায় দেয়া কঠিন। মহাকবি আল্লামা ইকবালের মতে মানুষের খুদি বা রুহকে উন্নত করার প্রচেষ্টার নামই শিক্ষা। কারণ ভেতরের মানুষটি যদি উন্নত হয় সংস্কৃতিবান হয়, তাহলে এই ধরনের লোক মিলেই একটি উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম। কবি রবীন্দ্রনাথের মতে মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলির উন্নতি ও বিকাশ সাধনই শিক্ষা। কবির সবচাইতে সার্থক উপন্যাস ‘শেষের কবিতায়’ মাসীমার মুখ দিয়ে শিক্ষা সম্পর্কিত যে উক্তিটি উচ্চারিত হয়েছে তা হলো পরশ পাথর, আর তার থেকে ছিটকে পড়া আলোটাই হলো কালচার। জন ডিইউর মতে, সময়ের প্রয়োজনের সাথে খাপ খাওয়ানোর যোগ্যতা অর্জনের নামই শিক্ষা। তবে খাপ খাওয়ানো যোগ্যতা অর্জনের জন্য কোনোক্রমেই জাতীয় পরিচয় বা Identity পরিত্যাগ করা চলবে না। মহাকবি মিলটনের সংজ্ঞাটি শিক্ষার ব্যাপারে ব্যাপক অর্থবোধক। তার মতে Education is the harmonious development of body, mind and soul.. ‘দেহ, মন ও আত্মার সমন্বিত উন্নতির নামই শিক্ষা।’ মানব সভ্যতার সবচাইতে সার্থক শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন নবী-রাসূলগণ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ নবীদের কাজ বা শিক্ষা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘তারা আল্লাহর কালাম পড়ে (মানবজাতিকে) শুনান, জীবনযাপনের কৌশল শিক্ষা দেন আর আত্মাকে পবিত্র করেন। এখানে আল্লাহর কালাম অর্থ হক-বাতিল বা সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের জ্ঞান এবং তার সৃষ্টির নিদর্শন ও কৌশল, হিকমত অর্থে জীবনযাপনের জন্য ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি পরিচালনার উদ্দেশ্যে যাবতীয় জ্ঞান, আর আত্মাকে পবিত্র করার জন্য যাবতীয় নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে বোঝানো হয়েছে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে শিক্ষার তাত্ত্বিক অংশকে আর দীর্ঘ না করে সিদ্ধান্ত টানা যায় যে, আল কুরআনে শিক্ষার সে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাই সর্বোত্তম এবং ব্যাপক অর্থবোধক। শিক্ষা ও আদর্শ আদর্শবিহীন শিক্ষা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বস্তুবাদী দর্শনের পুঁজিবাদী শিক্ষা চরিত্রহীন এবং লক্ষ্যহীন যেসব নাগরিক তৈরি করেছে ভয়াবহ রূপ দেখে পাশ্চাত্যের শিক্ষাবিদ ও সমাজবিদগণ অস্থির হয়ে পড়েছেন। অধ্যাপক ব্রেব্যাচা, অধ্যাপক তিতাশ ই এস সোনার্স, স্ট্যানলি হলসহ সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, নৈতিকতা ও ধর্মবিবর্জিত শিক্ষা আদর্শ নাগরিক তৈরি করতে পারে না। যা তৈরি করেছে তার পরিণাম এতই জঘন্য এবং ভয়াবহ যে, তা ভাষায় প্রকাশ করতেও লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। তবুও দুয়েকটি উদাহরণ না দিয়ে পারছি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের আইন উপদেষ্টার ছেলে তার মাকে ধর্ষণ করেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের লজ্জাজনক কীর্তিকলাপ দীর্ঘদিন সারা সংবাদমাধ্যমকে মাতিয়ে রাখলো। লজ্জা-শরম বিন্দুমাত্র থাকলেও ভদ্রলোক অবশ্যই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতেন। ব্রিটিশ মন্ত্রীসহ বহু গণমাধ্যম নাগরিককে এই একই অপরাধে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে হয়েছে। নাস্তিক্যবাদী ব্যর্থ সমাজতন্ত্র নিজেই আত্মহত্যা করেছে বলে তা আলোচনা নি®প্রয়োজন। আমাদের উপমহাদেশে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের ওপরের শ্রেণীর কুকীর্তি উল্লেখ করতেও বাধে। অর্থনৈতিক দুর্নীতি এমন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে যে, গণমানুষের সম্পদ নিয়ে রীতিমত দানবীয় লুটপাট চলেছে। পত্রপত্রিকা খুললে খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডই চোখে পড়ে সবচাইতে বেশি। এক সপ্তাহের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সংবাদ শিরোনাম একত্রিত করলে যে কোনো বিবেকবান মানুষের গা শিউরে উঠবে। ওপরে শিক্ষার যেসব সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করেছি তাতে ঐসব মনীষীর করো মতে, আদর্শ নৈতিক মূল্যবোধ ও ধর্ম ছাড়া কোনো শিক্ষাই হতে পারে না। Stanly Hull তো খুলোখুলি বলেছেন, If you teach your children the theree Rs, (Reading, Writing, Arithmetic) and leave the fourth R (Religion) you will get a fifth R (Rasclality) খোলাখুলি অর্থাৎ তোমরা যদি তোমাদের সন্তাদের পড়ালেখা এবং মাত্র হিসাব-নিকাশ শিক্ষা দাও। কিন্তু ধর্মকে বাদ দাও, তাহলে তাদের কাছ থেকে বর্বরতাই পাবে। নৈতিক অধঃপতনের কারণে অর্থনীতি, সমাজ, পরিবার, দাম্পত্য জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন অর্থাৎ সামগ্রিক জীবনে চূড়ান্ত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমাদের একশ্রেণীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শিক্ষাবিদ কী করে ধর্মহীন তথা সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার জন্য আবদার করেন তা ভাবতে অবাক লাগে। আমরা মনে করি এখনও যতটুকু মানবতা ও কল্যাণধর্মী চিন্তা এবং কর্মকাণ্ড আছে তা সমূলে ধ্বংস করে দিয়ে যারা মানবসমাজকে একেবারে পশুত্বের স্তরে নামিয়ে ফেলতে চায়, একমাত্র তারাই সেক্যুলার এডুকেশনের প্রস্তাব করতে পারে। এদের ব্যক্তিগত চরিত্রের খোঁজখবর নিলে উপরোক্ত মন্তব্যটি দিবালোকের মত সত্য প্রমাণিত হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিচালক, বিবেকবান মানুষের ধ্বংসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আমরা জাতিকে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। কুশিক্ষার চাইতে অশিক্ষা কম খারাপ পাঁচ শ’ বা হাজার বছর আগে আমাদের এতো নগর-বন্দর ছিল না, ছিল না পাকা রাস্তাঘাট, ইলেকট্রিক বাতির আলোর ঝলকানি। জাঁকজমক আর ঠাকঠমক হয়তো ছিল না, কিন্তু তখন আমরা মানুষ ছিলাম। এখন আকার আকৃতি, পোশাক আর প্রসাধনীতে আধুনিক হয়েছি বটে কিন্তু আমরা মানুষ নই। তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় আমাদের সুখ-শান্তি নয় বরং দুঃখই বেড়েছে। বর্তমানকালের অন্যতম সেরা কবি আল মাহমুদ তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ডাকাতদের গ্রাম হিসেবে তার এক কবিতায় উল্লেখ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। পাশ্চাত্যের আধা নাস্তিক বার্ট্রান্ড রাসেল সত্যিই বলেছেন, ‘তথ্য ও তত্ত্বভিত্তিক (information knowledge) যদি বৃদ্ধি পায় কিন্তু নৈতিক মানভিত্তিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা (wisdom) যদি সেই অনুপাতে বৃদ্ধি না পায় তাহলে সেই জ্ঞান শুধু দুঃখই বাড়িয়ে দেয়। বর্তমান দুনিয়ার ভয়াবহ রূপ দেখে প্রফেসর ব্রেবেচার তাঁর (Modem philosophy Education) সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তাই বিজ্ঞান শিক্ষাকেও ধর্মের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাস শিক্ষার ইতিহাস আর মানবসভ্যতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই শিক্ষার ইতিহাস ততটাই পুরাতন, যতটা মানব সভ্যতার ইতিহাস পুরাতন। কারণ মানব সভ্যতার শুরু অজ্ঞতার মাধ্যমে শুরু হয়নি। বরং জ্ঞানের উজ্জ্বলতার মাধ্যমেই তার শুরু। হজরত আদমকে (আ) খলিফা বা আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দিলেন এবং বিশ্বজাহানের সমস্ত জিনিসের নাম শেখালেন। কোন জিনিসকে চেনা জানার পরই তা ব্যবহার কৌশল হিকমত মানুষ আয়ত্ত করতে পারে। মানবসভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু ছেদ পড়লেও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন বা জীবনব্যবস্থার ভিত্তিতে শিক্ষা শুরু করেছিলেন, কিছু বিকৃতিসহ ব্রিটিশের অধীনে হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমাদের দেশে সেই আদর্শের ভিত্তিতেই একটি সমন্বিত শিক্ষা চালু ছিল। সেখান থেকে কুরআন হাদিসের দক্ষ আলেম যেমন বের হতেন, তেমনি স্থাপত্য, শিল্প, চিকিৎসাবিজ্ঞান, রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন একদল অনুগত ভৃত্য তৈরি করার উপযোগী করার উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছে। ভারতবর্ষেও তারা তার ব্যতিক্রম করেনি। লর্ড ম্যাকলের দ্বারা তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করে, তার ভূমিকায় লর্ড ম্যাকলে যে কথাগুলো বলেছিলেন তা নুরুল্লাহ এবং নায়েকের বইতে হুবহু উল্লেখ করা হয়েছে। তার বাংলা অর্থ মোটামুটি দাঁড়ায়, ‘একটি শিক্ষার মাধ্যমে আমরা এরূপ একদল লোক সৃষ্টি করতে চাই যারা রক্তে মাংসে এবং বর্ণে ভারতীয় হলেও চিন্তা চেতনা, অভিরুচি ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হবে ব্রিটিশ সভ্যতার অনুসারী।’ অর্থাৎ দৈহিকভাবে এদেশের মানুষ তারা হলেও আসল মানুষটি ব্রিটিশ সভ্যতার প্রসার ঘটাবে এবং ব্রিটিশ জাতির সাথে এ দেশের মানুষের সেতুবন্ধ রচনার কাজ করবে। যাতে মুক্তিপাগল ভারতে মানুষ বিশেষ করে মুসলিমদের পক্ষ থেকে যে প্রতিরোধ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হয়েছিল তা ক্রমে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্রিটিশরা এ উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গেলেও তাদের প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার ফল যে কতটা সুদূরপ্রসারী হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। আমাদেরকে এতটা হীনম্মন্য করে দেয়া হয়েছে যে পশ্চিমা সভ্যতার ধারক এবং বাহকরা যদি গ্রীষ্মকালে ভরা দুপুরকে শীতকাল বলে অভিহিত করতে চায়, তাহলে এ দেশীয় ভক্তরা তাদেরও আগে আগে তাই বলে চিৎকার করতে থাকবে। তারা যদি কোনো ভ্রষ্টা মহিলাকে দুনিয়ার সতী নারী বা রানী বলে সম্মান দেখাতে চায়, তাহলে এদেশীয় ভক্তরা মানস সন্তানের অনেকগুণ বাড়িয়ে তার প্রশংসা করবে। পরাধীন একটা শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা কিছু জোড়াতালি দিয়ে কেন এবং কী উদ্দ্যেশ্যে প্রায় অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে বলছি? এ প্রশ্ন আজ উত্থাপন করার সময় এসেছে। কেননা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সভ্যতা, জীবনবোধ, জীবনযাপন তথা মূল জাতিসত্তার পরিচিতির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন যদি না করি তাহলে কপালে দুর্ভোগ বাড়বেই। সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সত্যিকারার্থেই ব্যর্থ। উদ্দেশ্যহীন এই শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো ছাত্র-অভিভাবক বা শিক্ষককে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ছেলে পড়াশোনা করে কী করবে? প্রায় সকলেই বলবেন আগে পাসটা করুক তো, তারপর দেখা যাবে। রসায়নশাস্ত্র বা পদার্থবিদ্যায় পাস করে চাকরি করে ব্যাংকে বা কোনো ব্যবসায়িক ফার্মে। অঙ্কশাস্ত্রে মাস্টার্স করে চাকরি করে ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে। এমন আজব কাণ্ড পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে আছে বলে আমার জানা নেই। ক. আদর্শিক ব্যর্থতা আদর্শ নাগরিক অর্থাৎ দেশপ্রেমিক ও চরিত্রবান নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রে দারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে আমাদের জাতির কোন পরিচয় নেই। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার শ্লোগান তুলে দেখা গেল ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা মেনে নিলে আমাদের জাতির একটি অংশ দিল্লির পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। আমাদের সংবিধান ঘোষণা অনুযায়ী সব বাঙালিকে স্বাধীন করার জন্য দিল্লির বিরুদ্ধে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে জয়ী হওয়ার পর এক জাতির একদেশ অর্থাৎ পূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু এ সাহস, যোগ্যতা বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, আইন কানুনের কোনটা সমর্থনই আমাদের পক্ষে নয়। এক ভাষায় কথা বললে পার্থক্যগত কারণে শতকরা পঁচাশি ভাগ মুসলিম এবং বাকি অমুসলিম বিশেষ করে উপজাতিদের সমস্যা বাধে। তা ছাড়া একমাত্র ভাষা বাঙালি জাতীয়তার আর কোনো ভিত্তি নেই। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর বাঙালি জাতীয়তার পরিবর্তে এলো বাংলাদেশী জাতীয়তা। যার ভৌগোলিক পরিচয় ছাড়া আর কোনো পরিচয় নেই। এর প্রবক্তারা মুসলিম জাতিসত্তার চিন্তা মনে মনে রাখলেও প্রকাশ্যে বলার সাহস রাখেন না। ফলে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশী জাতীয়তারও সত্যিকার অর্থে কোনো আদর্শিক ভিত্তি দাঁড় করানো গেল না। তাহলে সেক্যুলার বাংলাদেশী জাতীয়তা আর বাঙালি জাতীয়তার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রইল কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে শুরু করে যত নব্য শিক্ষিত লোকের কাছে জিজ্ঞাসা করবেন আমাদের জাতীয়তার ভিত্তি কী? কোনো সুস্পষ্ট বা একরকম জবাব পাওয়ার উপায় নেই। সর্বোচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত লোকেরা জাতীয়তার পরিচয়ের আদর্শিক ভিত্তি সম্বন্ধে এক রকম কথা বলতে অক্ষম এমন অদ্ভুত ব্যাপার কিভাবে মেনে নেয়া যায়? খ. জনশক্তির হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বিভিন্ন সংস্থার জরিপ মতে প্রায় তিন কোটি under employed-এর সংখ্যা হিসাব করলে অবস্থা আরো বেগতিক। বর্তমান দুনিয়ার প্রযুক্তি আয়ত্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তেমন সুযোগই নেই। শুধু তাত্ত্বিক আর পুরনো বস্তাপচা মতবাদের খণ্ড জ্ঞান নিয়ে একটি জাতি তার অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে না। একেতো আদর্শিক দৈন্যতা, তার ওপর পেটের ভাত জোগাড় করার কোনো ব্যবস্থা নেই। আদর্শহীন, কর্মহীন জীবনের একটি জাতির যুবসমাজ হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, তাহলে জাতির পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে আমরা তার বাস্তব প্রমাণ। গ. বিভিন্নমুখী শিক্ষার জন্য ব্যবস্থা সমন্বিত একটি শিক্ষাব্যবস্থাই একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি তৈরি করতে সক্ষম। তথাকথিত আধুনিক শিক্ষা তাও আবার নানা ধারায় বিভিক্ত, মাদরাসা শিক্ষা যা দুই ধারায় বিভক্ত এমনি ধরনের নানামুখী প্রবণতার শিক্ষিত লোকেরা নানা চিন্তা, নানা ধারায় বিভক্তি এমনি যে দেশের শতকরা পঁচাশি ভাগেরও বেশি লোক মুসলমান তাদের মধ্যে অনেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে সংকোচবোধ করে। মাদরাসা শিক্ষিত লোকেরা তথাকথিত আধুনিক শিক্ষিতদের প্রতি একটি মারাত্মক ধরনের বিরূপ ধারণা নিয়ে আছে। আবার স্কুল-কলেজের শিক্ষিতরা মাদরাসা শিক্ষিত লোকদেরকে এক ধরনের অনুৎপাদনশীল এবং পেছনে পড়া জনশক্তি বা সমাজের জন্য বোঝা মনে করে। তথাকথিত আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে যারা ইংরেজি মাধ্যমে বা বিদেশে পড়াশোনা করে একটু ঠোঁট বাঁকা করে বিদেশী ভাষা বলতে পারে, তারা বুনিয়াদি শ্রেণী বলে নিজেদেরকে ধরে নিয়েছে। এদেশের কিছুই তাদের ভালো লাগে না। ঘ. দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থতা দেশে সন্ত্রাস, শিক্ষার নি¤œমান, খারাপ পরিবেশ ইত্যাদি অজুহাতে লক্ষ লক্ষ ছাত্র ভারতসহ বিদেশে লেখাপড়া করে। এতে দেশের অর্থ যেমন বিদেশে যাচ্ছে তেমনি একটু মেধাবী ধরনের যারা তারা আর দেশে ফিরছে না। যারা দেশে পড়াশোনায় একটু ভালো তারাও বিদেশে কোনো সুযোগ পেলে বিদেশ পাড়ি জমাতে মোটেই দ্বিধা করে না। সবচাইতে মারাত্মক হলো দেশের প্রতি উন্মাসিকতা নিয়ে বিদেশে যাদের মগজ ধোলাই হচ্ছে তাদের হাতে এই দেশের দায়-দায়িত্ব আসলে তার কতটুকু আন্তরিকতা নিয়ে কতটুকু দেশপ্রেম নিয়ে দেশকে গড়ার চেষ্টা করবে, দেশের জনমানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে তাদের কতটুকু সম্পর্ক থাকবে এ প্রশ্ন স্বাভাবিক। আর এই প্রশ্নের উত্তর যদি না বোধক হয় তাহলে জাতির জন্য কী ভয়াবহ পরিণাম অপেক্ষা করছে তা আল্লাহই জানেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতার বিস্তারিত বিবরণ দিতে গেলে তার জন্য একটি বড় ধরনেরই বই লিখতে হবে। বড় ধরনের ব্যর্থতা তুলে ধরেই এ ব্যাপারে আলোচনার সমাপ্তি টানতে চাই। তবে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন যে অপরিহার্য শুধু অপরিহার্য নয়, বরং আমাদের অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে এ ব্যাপারে আর সন্দেহের অবকাশ নেই। বাংলাদেশর শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে ধর্মের ভূমিকা আমাদেরকে আজ স্বীকার করতেই হবে যে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়াই নৈতিক পুনর্জাগরণে একটি ধারা শুরু হয়েছে। মানুষ বর্তমানের পূতিগন্ধময় বিকৃত পরিবেশ থেকে মুক্তি চায়। এমনকি যারা এই পূতিগন্ধময় পরিবেশের স্রষ্টা তাদের বিবেক মাঝে মাঝে নাড়া দিচ্ছে বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনের জন্য। এ প্রসঙ্গে ব্রিটেনের হবু রাজা যিনি Oxford Center of Islamic Studies a patron হিসেবে ১৯৯৩ সালে যে বক্তৃতাটি দিয়েছিলেন তা উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না। তিনি বলেছেন, More than this, Islam an teach today a way of understanding and living in the world which Christianity itself is the poorer for having lost. At the heart of Islam is its preservation of an integral view of the Universe, Islam like Buddism and Hindusim refuses to separate man and nature, religion and science. mind and matter and has preserved a mataphysical and unified view of our selves and the world around us. At the core of Christianity there still liesan integral view of the sanctity of the world and clear sense of the trusteeship and responsibility given to us for our nature surrounding. But the west gradually, lost this integrated vision of the world with Copernicus and Descartes and the Descartes and comming of the scientific reolution.A comprehensive phlosophy of nature is on longer part of our every day beliefs. I cannot help feeling that if we could now only redoscover that earlier, all embracing approach to the world around us to see and understand its deper meaning, we could begin to get away from the increasing tendency in the west to live on the surface of our sorroundings. Where we study our world in order to manipulate and dominate it. Turning harmony and beauty into desquilibrium and chaos. একজন ইংরেজ রাজকুমার যখন বিবেকের তাড়নায় উক্ত কথাগুলো বলতে বাধ্য হয়েছেন, তখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের মূল জাতিসত্তার আদর্শিক ভিত্তি ইসলমাকে গ্রহণ করতে এতটা অনীহা কেন? বিকল্প কোনো উপায় ও অনীহা প্রদর্শনকারীরা বলতে পারেন না। তাহলে কি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যহীন অবস্থায় আমরা এভাবেই বলতে থাকবো? এ প্রশ্নের জবাব দেশের পরিচালক, সমাজবিদ ও শিক্ষাবিদদেরকে স্পষ্ট করে দিতেই হবে। পাশ কাটিয়ে যাওয়া চলবে না কোনো মতেই। বাংলাদেশে প্রধানত মুসলিম এবং হিন্দু জাতির লোকেরাই বাস করে। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রুপ এবং উপজাতীয় লোকজনদের থেকে ধর্মান্তরকরণের মাধ্যমে বর্তমানে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ খ্রিস্টানও আছে। খুব কমসংখ্যক লোক আছে যাদের কোনো ধর্মীয় পরিচিতি নেই অথবা এ সম্পর্কে তাদের কোনো চেতনা নেই। এই শতাংশের হিসেবেও পড়ে না। বাকি প্রায় সকলে ধর্মীয় অনুশাসন পালন না করলেও ধর্মীয় মানসিকতার দিক থেকে খুব আন্তরিক। অর্থাৎ সকলেই ধর্মপ্রাণ। বাংলাদেশের সকল ধর্মের লোকই বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ আছেন এবং তিনি এক ও একক। মানুষের ইহলৌকিক জীবনটাই একমাত্র জীবন নয়। মৃত্যুর পরও একটা জীবন আছে এবং সেখানে মানুষের ইহজগতের সমস্ত কর্মকাণ্ডের হিসাব দিতে হবে। হিসাব দানে যারা সফল হবে, তাদের জন্য রয়েছে বেহেশত বা অফুরন্ত সুখ ও শান্তি। আর যারা ব্যর্থ হবে তাদের স্থান হবে দোজখে যা হবে চিরন্তন শাস্তি ও অপমানের জায়গা। সকল ধর্মের মানুষই বিশ্বাস করে, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ প্রদত্ত আইন কানুনের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করার মাধ্যমেই সত্যিকারের সফলতা। এটাকে জনগণের সাধারণ বিশ্বাস এবং মূল্যবোধ হিসেবে ধরে নিলে প্রত্যেক জাতি তার নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানার অধিকার একটি মৌলিক মানবীয় অধিকার। এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার করো নেই। আমাদের সংবিধানেও এই অধিকার সংরক্ষিত। তাই শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত যার যার ধর্মের মৌলিক নীতিমালা আনুষ্ঠানিক ইবাদত বা ধর্মকর্ম এবং তার দার্র্শনিক ভিত্তি শিক্ষার অধিকার রয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় এ সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে। এরপর যে কথাটি বলতে চাই, তা হলো ধর্মপ্রাণ এবং ধর্মপালনকারী লোকজনদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা নেই। ধর্মের পরিচয় দানকারী অথচ ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ এবং ধর্মীয় আচার-আচরণ বা আমল আখলাকে অভ্যস্ত নয় এরাই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক। আর এরাই সুযোগ বুঝে ধর্মকে বিভিন্ন স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহার করে। এ অপকর্মটি সেক্যুলারপন্থী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোই করে থাকে। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম সামাজিক বিধিবিধান, আইন-আদালত তথা বিচারপদ্ধতি, পারস্পরিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার, রাজনীতি, তথা জীবনের অনেক অধ্যায় সম্পর্কে নীরব। এসব ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। সুতরাং ইসলামী রাজনীতির রূপরেখা অর্থনৈতিক কাঠামো সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণসহ অন্যান্য বিষয় পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করলে অমুসলিমদের কোনো আপত্তি থাকার কারণ নেই। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি পড়াশোনা করলে একজন হিন্দু ছাত্রের হিন্দুত্বের যদি কোনো ক্ষতি না হয়, পুঁজিবাদী তথা পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করলে যদি কোনো বৌদ্ধ ছাত্রের ধর্মে কোনো আঘাত না লাগে, মানবসৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কে বস্তুবাদী এবং ডারউইনের মতবাদ পড়াশোনা করলে যদি কোনো খ্রিস্টানের ধর্মানুভূতিতে আঘাত না লাগে, তাহলে ঐ সমস্ত ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পড়াশোনা করলে অন্যান্য ধর্মের লোকদের আপত্তির যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। এতে তাদের ক্ষতির পরিবর্তে লাভই বেশি। জ্ঞানের ভাণ্ডার বৃদ্ধিই হবে। বাংলাদেশে ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী একটি শিক্ষাব্যবস্থা রচিত হওয়া গণতন্ত্রের দাবি। কারণ যে দেশের জনসংখ্যা প্রায় শতকরা ৮৭ ভাগ বা তারও বেশি মুসলিম অর্থাৎ ইসলামে বিশ্বাসী, সেই ধর্মের মূলনীতি ও নৈতিক মূল্যবোধ অনুযায়ী একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা রচিত হবে এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে সহজ সরল চিন্তার পরিবর্তে বিপরীত চিন্তা এবং বক্তব্য জনমতের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং বিদ্রোহের শামিল। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নে এ ধরনের কিছু বিভ্রান্ত লোকের মতামতের কোনো গুরুত্ব থাকতে পারে না। ভূমিকাতেই বলেছি পরিবর্তনের চেষ্টা দুয়েকবার হয়নি তা নয়। সেসব প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছে তাও উল্লেখ করেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যে প্রচেষ্টা নেয়া হয় ড. কুদরত-ই-খুদ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের মাধ্যমে তাও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। তারপর আরো দুয়েকটি কমিশন ও কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাও পূর্ণাঙ্গভাবে আশার মুখ দেখতে পায়নি। তবে সবচাইতে আলোচিত কুদরত-ই-খুদা কমিশন রিপোর্ট সম্পর্কে দুয়েকটি কথা বলতে চাই। কুদরত-ই-খুদা কমিশন রিপোর্ট কুদরত-ই-খুদা কমিশন রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালের মে মাসে। তারপর অনেক পানি গড়িয়েছে। যে সমাজতন্ত্র ও সেক্যুলারিজমের মূলমন্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল সময়ের বিবর্তনে তা পরিবর্তিত হয়ে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর ঈমান সংবিধানে স্থান করে নিয়েছে। দুনিয়ায় এখন আর সেক্যুলার নেই। বসনিয়া-হারজেগোবিনা, কসোভা, কাশ্মির বাবরি মসজিদসহ আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো জাতিসংঘ খ্রিস্টান জগৎ যেভাবে দেখছে তাতে হান্টিংটনের মতো আগামী দিনের সংঘাত হবে সভ্যতা এবং জাতিসত্তার। তা ছাড়া প্রযুক্তিগত দিকেও দুনিয়া যতদূর অগ্রসর হয়েছে এই শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে তার ধারণা নাই বললেই চলে। তারপরও কয়েকটি প্রশ্নের জবাব বর্তমান সরকারকে দিতে হবে। যেহেতু তারা এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছে। তৎকালীন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরও সোয়া দুই বছরের মতো জীবিত ছিলেন। এর মধ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হত্যা করে একদলীয় স্বৈরশাসন বাকশাল কায়েম করেন। কিন্তু কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট তিনি বাস্তবায়ন করে যাননি এবং বাস্তবায়ন করবেন বলে কোনো জনসভা, রেডিও বা টিভি ভাষণে জাতির সামনে ওয়াদাও করেননি। পরবর্তী কোনো সরকারও এটা বাস্তবায়ন করার কোনো উদোগ গ্রহণ করেননি। তাহলে কী আছে এই রিপোর্টে? এই শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করেছে। অনেক প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তির কাছে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট তৈরির আগে প্রশ্নমালা পাঠানো হয়েছিল। শিক্ষানীতি প্রণয়নে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শের জন্য। সেখানে ধর্ম সম্পর্কে ১৭ এবং ১৮ নং প্রশ্নের যে মতামত চাওয়া হয়েছিল তা হুবহু উল্লেখ করছি : ১৭. ধর্মশিক্ষা সম্পর্কে নিচের কোন প্রস্তাবটি আপনার নিকট বেশি গ্রহণযোগ্য? ১. সাধারণ শিক্ষায়তনে শিক্ষার কোনো বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়। ২. সাধারণ শিক্ষায়তনের সকল ধর্ম সমন্বয়ে নীতিমালা শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা উচিত। ৩. ধর্মশিক্ষা সাধারণ শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত। ৪. ভিন্নমত। উপরাক্ত প্রশ্নের উত্তরে ১ নং এর পক্ষে মত দিয়েছে ১৪৭ জন ২ নং এর পক্ষে মত দিয়েছে ৩৯৯ জন, ৩ নং এর পক্ষে মত দিয়েছে ১৯৫১ জন। আর ভিন্নমত দিয়েছে ১১৫ জন। ১৮. শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ধর্মশিক্ষা সম্বন্ধে আপনার মত ১. ধর্মশিক্ষার ব্যবস্থা শুধুমাত্র প্রাথমিক স্তরে থাকবে। ২. ধর্মশিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে থাকবে। ৩. ধর্মশিক্ষার ব্যবস্থা সর্বস্তরে থাকবে। ৪. ধর্মশিক্ষার কোন স্তরেই থাকা উচিত নয়। ৫. ভিন্ন মত। উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে ১ নং এর পক্ষে মত দিয়েছে ২১৩ জন ২ নং এর পক্ষে মত দিয়েছে ১১৫৯ জন, ৩ নং এর পক্ষে মত দিয়েছে ১১২৬ জন। আর ভিন্নমত দিয়েছে ১৯৬ জন। এখানে যারা সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা চেয়েছেন তারা অবশ্যই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ধর্মীয় শিক্ষার পক্ষে। এই দুই মতের পক্ষে মতপ্রকাশকারী লোকের সংখ্যা ৮০% ভাগের ওপর। অথচ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের প্রাথমিক শিক্ষায় ধর্মের কোনো স্থান নেই। আছে ললিতকলার নামে নাচ-গান শিক্ষার বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা। শুধুমাত্র ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে দুয়েকটি পিরিয়ড রেখে আর কোনো শ্রেণীতে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ ক্ষেত্রে কমিশন শুধু জনমতকে উপেক্ষাই করেনি বরং জনগণের সাথে একটি বড় ধরনের প্রতারণা করে তাদের মতামতের বিপরীত একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করেছে। বিভিন্ন টেকনিক্যাল যেমন, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি বিজ্ঞানসহ অন্যান্য পেশার শিক্ষা সম্পর্কে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট পেশার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব এবং বিশেষজ্ঞদের রয়েছে তাতে প্রবল আপত্তি। অন্য দিকে শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে প্রায় চল্লিশ বছরের পুরনো। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় আদর্শের পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশের সংবিধানে এখন রাষ্ট্রধর্মই হচ্ছে ইসলাম। সুতরাং ধর্মীয় আদর্শিক, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, জাতির আশা-আকাক্সক্ষা, বিশ্বব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন অর্থাৎ যে কোনো বিচারে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টটি বাতিলযোগ্য। বাতিল না করে সংস্কার করতে গেলে এর খোল নলচেসহ একটি পরিবর্তন করতে হবে যে রিপোর্টটির অবস্থা হবে কম্বলের সকল লোম বেছে ফেলার পর কম্বলের মতো। সুতরাং এসব পুরনো সময় ও প্রয়োজনের সাথে খাপ খাওয়ানোর অনুপযোগী শিক্ষা কমিশন রিপোর্টটি বাতিল করাই বাঞ্ছনীয়। আমাদের জন্য প্রয়োজন একটি যথাযথ শিক্ষাব্যবস্থা উপরের সব দিকে আলোচনা করলাম তার শেষ কথা হলো আমাদের একটি আধুনিক ও আদর্শ এবং সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা অতীব প্রয়োজন। আমরা এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চাই যে ব্যবস্থার অধীনে শিক্ষা লাভ করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি জাতি গঠনে সক্ষম হবে। সে জাতির যেমন থাকবে আদর্শিক পরিচয়, তেমনি থাকবে যুগের প্রয়োজন মেটানোর জন্য দক্ষতা ও যোগ্যতা। দেশের প্রতিটি মানুষ দেশ গড়ার জন্য একজন আদর্শ কারিগর গড়ে উঠবে। বর্তমান পুরনো পদ্ধতির মধ্যে কিছু জোড়াতালি দিয়ে যেভোবে হাস্যোস্পদ অবস্থায় চলছে, এভাবে চলবে না। ব্যর্থ এই শিক্ষাব্যবস্থার খোল নলচেসহ সবকিছুতেই আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার এবং তার সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি সত্যি আন্তরিক হয় তাহলে আর কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা উচিত। নতুন শিক্ষা কমিশনের যেসব দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা উচিত তা নিয়ে বর্ণনা করছি। এক. শিক্ষার আদর্শিক ভিত্তি আমরা একটি আদর্শিক জাতি। আমাদের দেশের শতকরা পঁচাশি ভাগের অধিক লোক ইসলামের অনুসারী। আমাদের দেশ তার সীমানা, অখণ্ডতা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সামাজিক মূল্যবোধ অর্থাৎ সবকিছুই সেই আদর্শকে ঘিরেই আবর্তিত। বর্তমান বিশ্বের সেক্যুলার বা ধর্মহীন বলে কোনো জাতি নেই। ব্যক্তিগত ভাবে দু’চারজন গণ্ডমূর্খ লোক যাদেরকে প্রাচীন প্রবাদবাক্যে পশুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। এদেরকে বাদ দিলে দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ কোনো না কোন ধর্মের অনুসারী। ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার ভারতীয় কংগ্রেস আজ রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যস্ত। প্রয়াত রাজীব গান্ধী তার নির্বাচনী প্রচারকার্য শুরু করেছিলেন অযোধ্যাতে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে। মার্কিন ডলারের ওপর লেখা থাকে ঈশ্বরের ওপর আস্থা বা বিশ্বাসের কথা। ব্রিটিশরা অলিখিত সংবিধানের অনুসারী বলে তাদের রাজা বা রানীকে বলা হয় Custodian of Faith অবশ্য প্রোটেস্টান খ্রিস্টান ধর্মের ব্যাপারে। আমাদের সংবিধানের অন্যতম ভিত্তি বা মূল আদর্শ হলো সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর ঈমান। বহুকাল আগে প্লেটো বলেছিলেন নাগরিকদের শিক্ষাদান করা উচিত দেশের সংবিধানের আদর্শ অনুযায়ী। তাহলে এ ব্যাপারে আর বিতর্ক চলতে দেয়া কোনোক্রমেই ঠিক হবে না। দুই. প্রতিটি বিষয়কে এবং সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত আমাদের আদর্শিক মূল্যবোধের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, প্রকৌশলবিদ্যা, সাহিত্যসহ সব কিছুতেই ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে সাজাতে হবে। বৈজ্ঞানিক মতবাদের নামে অনেক ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তির মতবাদ যা পাশ্চাত্য পর্যন্ত প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তার জন্য শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোনো অর্থ নেই। কিন্তু আমাদের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের অবশ্য ঐসব ভূতের আছর এখনো ছুটেনি। প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকার প্রমথ চৌধুরী বড় আফসোস করে বলেছেন যে, তিনি হিন্দু ধর্মের অনেক আজগুবি কথাই যেমন মানুষ মৃত্যুর পর ভূত হয়ে ফিরে আসে, বিশ্বাস করেন না। কিন্তু মতবাদের ক্ষেত্র থেকে বিশ্বাস করেন। কেননা পাশ্চাত্যে যে মতবাদটি প্রত্যাহার হয় বা মরে যায় এ মতবাদগুলো আমাদের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের ঘাড়ে ভূত হয়ে নতুন করে চেপে বসে। নতুন কিছু করতে হলে যারা ভূতের দ্বারা প্রভাবিত তাদের চিৎকার অগ্রাহ্য করেই করতে হবে। তিন. অমুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাদের ধর্মবিশ্বাস তা অন্যদের কাছে যতই অযৌক্তিক মনে হোক না কেন শিক্ষার পূর্ণ সুযোগ দিতে হবে। এটা তাদের মৌলিক মানবীয় অধিকার। এ অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার অধিকার করো নেই। চার. বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তিগত উন্নতির দিকে খেয়াল রেখে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। কারণ বেকার তৈরির কারখানা আর চলতে দেয়া যায় না। অর্বাচীনের মতো শুধু তাত্ত্বিক শিক্ষা আর কোনো বাস্তব প্রয়োগ নেই। এমন তত্ত্ব বা শিক্ষা দিয়ে জাতির শিক্ষিত শ্রেণীকে কর্মহীন বোঝায় পরিণত করা হবে আত্মঘাতী। এখন থেকে সাহসকিতার সাথেই বের হওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। পাঁচ. শিক্ষাব্যবস্থা হবে সমন্বিত একটিই। যেখানে থেকে ধর্র্মতত্ত্ববিদ, প্রখ্যাত তাফসিরকার, ফিকহবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, সমাজবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অর্থাৎ সকল ধরনের গুণীজনই যেন তৈরি হয়ে বের হয়। অবশ্য এ ব্যাপারে একটি সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। তা না হলে ভুল বোঝাবুঝির কারণে হিতে বিপরীত হওয়ার অবকাশ আছে। ছয়. প্রশাসনিক স্তরগত বাধ্যতামূলক শিক্ষাসহ সব ব্যাপারেই নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বর্তমান বিশ্বের জ্ঞানের পরিধি যতটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে কতদূর পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে তা ঐ কমিশনই নির্ধারণ করবে। আমেরিকার জে এফ ব্যানারও The Process of Education বইয়ে structure of knowledge অধ্যায়ে শিক্ষার্থীকে এতদূর পর্যন্ত শিক্ষিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে যাতে তার জ্ঞানের মৌলিক কাঠামো করতে পারে। সেই মৌলিক কাঠামোর জ্ঞানকে পুঁজি করে যেকোনো জ্ঞান অর্জন তার জন্য সহজ হয়। শিক্ষার বিভিন্ন স্তর এবং কোন স্তর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্ররা তাদের পছন্দমতো বিভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে তাও ঐ কমিশনই ঠিক করবে। সাত. আমাদের জাতীয় আদর্শ এবং সামাজিক মূল্যবোধ কোনোটাই সহশিক্ষা বা পুরুষ-মহিলার অবাধ মেলামেশা অনুমোদন করে না। পশ্চিমা দেশগুলো এবং তার সভ্যতাও সংস্কৃতির ভালো দিকগুলো ধ্বংস হতে চলেছে যেসব কারণে তার মধ্যে অবাধ যৌন মিলন অন্যতম। তারা এ থেকে বাঁচার জন্য চিৎকার শুরু করেছে। আমাদের ধ্বংসের প্রান্তসীমার পৌঁছার আগেই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত এবং সহশিক্ষা কোনোক্রমেই প্রাথমিক পর্যায়ের পর আর অনুমোদন করা চলে না। মহিলারা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক। তারা জনগণের অর্ধেক। তাদেরকে অশিক্ষিত বা অন্ধকারে রেখে সমাজ এগোতে পারে না। কিন্তু তাদের শারীরিক ও মানসিক গঠন কাজের ক্ষেত্রের ধরন এসব বিবেচনা করে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু আলাদা হওয়াই যথেষ্ট নয়, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতেও কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। কমিশনকে এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে হবে। আট. শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা। কারণ সৃষ্টিধর্মী জ্ঞান এবং চিন্তা মানুষ মাতৃভাষায় অর্জন করতে পারে। কিন্তু আমাদের আদর্শিক ও বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তিগত প্রয়োজন বাস্তব কারণেই ইংরেজি ভাষার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। উপসংহার : সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান, শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনা করে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বেতনভাতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি যাবতীয় ব্যাপারে নতুন কমিশনকে অবশ্যই একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এমন চিন্তার কারণে আমরা এগোতে পারিনি। যদি এমন ধ্যান ধারণার পরিবর্তন না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতেও এগোতে পারবো না। আমাদের অবশ্য জাতির জন্য প্রয়োজনীয় একটি শিক্ষাব্যবস্থা পেতে হবে। দ্বিধা-সংকোচ ও দীর্ঘসূত্রতা আমাদেরকে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। আর ক্ষতি স্বীকার নয়, সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ চাই। শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের কলাম থেকে সঙ্কলিত
আপনার মন্তব্য লিখুন