post

আমার ছেলে ছিলো খুবই ভদ্র এবং নম্র

শামছুন্নাহার রুবি

০৯ অক্টোবর ২০২২

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক এক দিন। প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে তরতাজা তরুণদের পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে নারকীয় উল্লাসের রাজনীতি শুরু করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সেদিন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের উপর লগি-বৈঠা, লাঠি, পিস্তল ও বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে যে পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ মেরে লাশের উপর নৃত্য-উল্লাস করার মতো ঘটনায় আজও শিউরে ওঠে সভ্য সমাজের মানুষ। এ ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। কিন্তু ১৬ বছর পরেও ২৮ অক্টোবরের পৈশাচিকতার বিচার হওয়া তো দূরের কথা, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলাই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। দেশের বিশিষ্টজনেরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ২৮ অক্টোবরের পৈশাচিকতার সাথে জড়িতদের বিচার অবশ্যই হওয়া উচিত। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে না। চারদলীয় জোট সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ছিল। সকাল থেকেই সভার মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। হঠাৎ করেই বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা ও অস্ত্রধারীরা জামায়াতের সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। তাদের পৈশাচিক হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয় জামায়াত ও শিবিরের অসংখ্য নেতা-কর্মী। সেদিনের আওয়ামী হামলায় শহীদ হওয়া সদা হাস্যোজ্জ্বল সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুম ২ ভাই ৩ বোনের মধ্যে ছিল তৃতীয়। তার পিতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। মাতা শামছুন্নাহার রুবি। ভয়াল আটাশের সকালে শহীদ মাসুম এবং শহীদ শিপন একসাথে বাসা থেকে বের হয়ে সরাসরি চলে আসে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে। বৃষ্টির মতো ইট আর বোমার মুখে সবার সামনে ছিলেন সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুম। অসীম সাহসিকতা আর ঈমানী দৃঢ়তায় অটল থাকেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই একের পর এক ইট এসে পড়তে থাকে তার উপর। বড়ো একটি ইট এসে পড়ে তার মাথায়। সাথে সাথে সংজ্ঞা হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। মারাত্মকভাবে আহত হওয়া মাসুমকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু না, তিনি আর ফিরে আসলেন না। ৫ দিন পর ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর ভোর ৪টায় মহান আল্লাহর শাশ্বত আহ্বানে সাড়া দিয়ে শাহাদাতবরণ করেন শহীদ সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ মাসুম। সম্প্রতি শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা ছাত্রসংবাদ পাঠকদের জন্য এই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন- 

ছাত্রসংবাদ : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ- কেমন আছেন?

শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা : ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ- আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।


ছাত্রসংবাদ : প্রিয় সন্তানের শাহাদাতের প্রায় ১৬ বছর অতিবাহিত হলো। সেদিনের ঘটনাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা : আমার প্রিয় মাসুম আল্লাহর জমিনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করবে এ জন্যই তো আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম। সেই দোয়া আল্লাহ কবুল করছেন। ৪র্থ-৫ম ক্লাসে পড়ার সময় থেকেই সে ইসলামের পথে যোগ দিয়েছে তারপর সে ইন্টার পাস করে অনার্স ১ম বর্ষে পড়ছিল। এই পর্যন্ত সে আল্লাহর পথেই ছিল। এবং সে সিরিয়াসভাবেই এবং নিয়মিতই কাজ করতো। সমস্ত সাধনাই ছিলো ইসলামী আন্দোলনে সময় দেওয়ার। পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট টাইম দিতো। কৌশলে এলাকার মানুষকে কিভাবে কুরআনের রাস্তায় আনবে। সেভাবে সে খেলাধুলায় মানুষের বাচ্চাদের অনুপ্রাণিত করতো। এলাকার কিছু ছেলে ফজরের নামাজ পড়তো না। তাদেরকে নামাজে আনার চেষ্টা চালায় সে, ওদের মধ্যে কয়েকজন কর্মীও হয়েছিল। নামাজ যেন মিস না দেয় সেজন্য ভোরবেলা উঠে তাদেরকে ডেকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়ে এক-দেড় ঘণ্টা খেলতো। এই খেলার ছলে ছেলেদেরকে আল্লাহর পথে এনেছিলো। এভাবে ছাত্রজীবন চলছিল। এভাবেই তো ডাক আসলো সেদিন পল্টনে ভলান্টিয়ার হিসাবে। তখন সে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চলে গেল, নাস্তাও ঠিকমতো খায়নি। 


ছাত্রসংবাদ : জনসভায় যাওয়ার জন্য সেদিন আপনার সন্তানের প্রস্তুতি কেমন ছিল?

শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা : মাসুম ছিল ওয়ার্ড সেক্রেটারি, বায়তুলমাল ছিল শিপন। শিপনকে নিজে গিয়ে ডেকে ঘর থেকে বের করে এনে আমাদের বাসায় আসছিল। আমার মনে আছে ২টা ডিম সিদ্ধ করে দিছিলাম। মাসুম একটা ডিম খেয়ে আরেকটা শিপনকে দিল। ডিম খেয়েই বেরিয়ে গেল দুইজনেই। এইযে বের হয়ে গেল, সবাইকে ডেকে ডেকে নিয়ে গেল। সকাল থেকে তার খাওয়ার কোনো টেনশন ছিলো না। সংগঠনের নেতাদের কথা শুনে সে একটুও বিলম্ব করে নাই। ওজু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। এইযে গেলো সেই পল্টনে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে। সেদিন সেখানেই তো জোহরের আগেই ও অজ্ঞান হয়ে গেল। আমি সবসময় দোয়া করেছি- আল্লাহ যেন আমার সন্তানদের যে কাজের জন্য পাঠাইছেন এই কাজটাই তারা করে। আমার মেইন টার্গেট ছিলো ধর্মীয় কাজ করবে, দ্বীনের কাজ করবে, ভালো মানুষ হয়ে আল্লাহর দ্বীনের কথা বলবে। মোটকথা সন্তানদের দ্বীনের পথে চালানোই আমার টার্গেট ছিল। সে নাকি সবুজবাগ থানার মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছে। প্রথম সারিতে স্লোগান দিয়ে দিয়ে সে নাকি যাচ্ছিল। এই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েই সে পল্টনে গিয়েছিল। বিশেষ করে যারা কুরআন সহ্য করতে পারে না একটা বদর যুদ্ধের মতো অবস্থা হয়ে গেছে। সেসময় সে পালিয়ে আসেনি, মরণকে ভয় করেনি। জীবনের চেয়েও সংগঠনকে বড়ো করে দেখেছে। ইসলামকে বড়ো মনে করেছে। সে কারণে আমাদের কথা ভুলে গিয়েছিল। শুধু আল্লাহর জন্যই সে তার জীবন দিলো। আল্লাহু আকবার বলতে বলতে তার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। আলহামদুলিল্লাহ আমি মনে করি আল্লাহপাক ওকে কবুল করেছেন। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। ওইযে বললাম একটু আগে সে সকাল বেলায় চলে গেছে। ফোনে ফোনে কল দিচ্ছে, জায়গায় জায়গায় খবর নিচ্ছে। কিছু জায়গায় সে ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে ছেলেদেরকে বাপ-মার কাছে বলে বের করে আনার জন্য। খুবই পেরেশানিতে ছিলো সেদিন। ঘুম থেকে উঠেই সে পেরেশানিতে, পল্টনে যাওয়ার পেরেশান। বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে সারাক্ষণ পেরেশানিতেই ছিল, নাস্তাটাও ঠিকমতো করেনি। খালি পেটে একটা মানুষ কতক্ষণ থাকে। পরে আর কিছুই মুখে দেয় নাই। ওভাবেই চলে গেছিল। প্রস্তুতির সময় বললাম ওজু করে এসো। ওজু করে ঘর থেকে বের হলো। কোথাও গেলে সে ওজু করে আতর মেখে বের হতো। খুব চটপটে ছিল এবং স্মার্টভাবে চলতো সে। 


ছাত্রসংবাদ : শাহাদাতের সংবাদ কিভাবে জানতে পেরেছিলেন?

শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা : সকাল থেকেই আমার মনটা খুব খারাপ যাচ্ছিল। কেমন জানি পেরেশানি লাগছিল। আবার স্কুল খুলবে ২ দিন পরেই। আমি আবার স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সবকিছু গুছিয়ে রাখছিলাম। ও চলে গেছে এরকম ঘটনা হয়েছে আমিতো জানতাম না। মুগদা মহিলা মাদ্রাসার খালাম্মা আমাকে খুব ভালোবাসেন। উনি শিবিরের সদস্যদের বাসায় নিয়ে খাওয়াতেন। যারা ইঞ্জুর (আহত) হতেন তাদের হাসপাতালে টাকা পয়সা দিতেন। সেই খালাম্মা আমাকে ফোন দিলো তোমার ছেলে কোথায়, আমি বললাম চলে গেছে পল্টনে। অনেকে ওখানে হতাহত হয়ে গেছে। তখন জানতে পারলাম আমার মাসুম আহত। ফার্স্ট ওই আলেয়া খালাম্মা থেকে শুনলাম। তারপর আমাকে ফোন দিল তখনকার সভাপতি সাইফুল্লাহ না শিবলী যেন আমাকে ফোন দিল। তারা দায়িত্বশীল ছিল, এ অবস্থায় খালাম্মা আপনি কি আসতে পারবেন? পরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম। যাওয়ার পথেই এই রাস্তায় ফ্লাইওভারের নিচেই আবার সন্ত্রাসীরা খুব হইচই করে মিছিল করে আসছিল আমার গাড়িটা ফিরিয়ে দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিল। ওইদিন আর যেতে পারি নাই। পরে শুনলাম ওকে ইবনে সিনায় নিয়ে গেছে। দুই বার করে ওর সিটি স্ক্যান করা হইছে ওখানে আইসিউতে আছে। পরদিন গিয়ে দেখলাম আমার ছেলেটাকে। মাথার ব্রেন ভেঙে গেছে, ওই অবস্থায় দেখলাম। 


ছাত্রসংবাদ : এতদিনেও বিচার হয়নি, মামলাও বাতিল করে দিয়েছে- খুনিদের বিচার হবে মনে করেন কি?

শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা : খুনিদের বিচার হবে কিভাবে? এই সরকার যতদিন পর্যন্ত থাকবে এই বিচার তো হবেই না। বরং আরও দেখা যাচ্ছে যে আমাদের আগে ভয় ভয়ে চলতে হচ্ছে, এখন যদিও কিছুটা স্বাভাবিক। আমার চাকরিটা আর করতে পারি নাই। ওখানে আমাকে বলছে যে পুলিশ আমাকে অ্যারেস্ট করবে। পরে চেয়ারম্যান স্যার বলছে ম্যাডাম আপনি তাইলে বাসায় ছুটি কাটান। চলে আসলাম ৩ বছর ঘরে বসে রইলাম। স্কুলে আর যেতে পারলাম না। এভাবে আমার স্কুলে যাওয়া হলো না। চাকরি শেষ। 


ছাত্রসংবাদ : মাসুম ভাইয়ের কোন স্মৃতি বেশি মনে পড়ে?

শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা : আমার ছেলে তো খুবই ভদ্র এবং ন¤্র ছিলো। ওর স্মৃতি এটাই মনে পড়ে, মানুষের ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে দ্বীনি শিক্ষার সে ট্রাই করত। মাঝে মাঝে ওর বাড়িতে ফিরতে দেরি হলে আমি মাসুমের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম যে, এখনো আসছে না কেন। পরে শুনতাম, সে ওমুক ছেলেকে পড়াচ্ছে, তমুক ছেলেকে পড়াচ্ছে। বিনামূল্যে টাকা ছাড়াই পড়াচ্ছে। পাশের বাসায় আমাদের দুই নাতি ছিল, তাদেরকে টাকা ছাড়াই পড়াত সে। তার ইচ্ছে ছিল এভাবে পড়ালে কাজ করানো যাবে তাদেরকে। ওদের সাথে সম্পর্ক ভালো হবে। তার নতুন নতুন বইপত্র যা আমি কিনে দিতাম সেই বইগুলো ওদেরকে দিয়ে দিত। যে ছাত্রগুলো গরিব ছিলো সেই ছাত্রদের দিয়ে দিত। আরেকটা মাদ্রাসা ছিল ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করানোর জন্য একটা ছেলেকে নিয়ে যায়। ছেলেটার মা আমাকে বলছিল খালাম্মা আপনার ছেলেটাকে একটু বলেন না আমার ছেলেটাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিতে। আমার ছেলেটার গায়ে সবচেয়ে সুন্দর একটা পাঞ্জাবি ছিল ওটা ওই ছেলেটাকে দিয়ে দিছে। প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা-পয়সা জোগাড় করে সেই ছেলেটাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করায় দিলো- এই জিনিসগুলো আমি দেখতাম। সংগঠনের জন্য বাড়িতে কিছু ফলগাছ ছিল- জাম, আম, বরই গাছ ছিল। সেখান থেকে ফলগুলো পেড়ে পাড়ায় যে ছেলেগুলো ছিল যাদেরকে সে ভালোবাসতো তাদেরকে নিয়ে খাওয়া দাওয়া করাতো। দোকান থেকে খাবার কিনে তাদেরকে খাওয়াতো। শহীদ হবার পরে ওর এক দাদী বলতেছে খালাম্মা আপনার ছেলে আমার ছেলেকে অনেক আদর করে খাওয়াইছে। ওই বাচ্চাগুলো এখনো তাকে মনে করে। এতো ভালো মানুষ অনায়াসেই মানুষের সাথে মিশতে পারতো। 


ছাত্রসংবাদ : মাসুম ভাইয়ের কোন গুণটি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য অনুসরণীয় মনে করেন?

শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা : সে খুব মিশুক ছিলো। মানুষের প্রতি তার খুব দরদ ছিলো। মানুষের বিপদে সে এগিয়ে যেতো। মানুষকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে সে হাসপাতালে চলে যেতো মানুষের সেবা করার জন্য। তারাই এ ঘটনা বর্ণনা করেছে। নয়ন নামে একটা ছেলের বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে আমার ছেলে সারারাত ওখানেই কাটিয়ে দিয়েছিল। এভাবে সে মানুষকে বিভিন্ন সহযোগিতা করতো। তার এই একটা বড়ো গুণ ছিল। আবার সে কখনো বলতে চাইতো না যে, কোথায় সে কি করে আসছে। মানুষ বলাবলি করার পর তখন জানতে পারতাম। খুব চাপা স্বভাবের ছিল বলে ভালো কাজ করে সে কখনো বলতো না। যেমন পাঠকদের পড়ানো, তাদেরকে আদর করা, একসাথে খাওয়া-দাওয়া করানো, তাদের টার্গেট করে একসাথে করে এনে খাওয়া-দাওয়া করা, এই কাজগুলো নিয়মিতই করতো। খেলার মাঠে ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে ছেলেদের সময় দিত, তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতো। তারপর তাদের অনেককেই এই পথে আনতে পেরেছে সে। 


ছাত্রসংবাদ : ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য শহীদের গর্বিত পিতা/মাতা হিসেবে আপনার উপদেশ কী?

শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা : ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য আমার মন্তব্য হচ্ছে, আমাদের কাজ তো আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করা। এই দুনিয়াতে আল্লাহ পাক আমাদেরকে পাঠিয়েছেন আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আমরা আল্লাহ পাকের খলিফা এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে। আমরা আল্লাহর প্রতিনিধি, আমরা না চাইলেও আমাদের প্রতিনিধি হিসাবে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। যখন আমাদের ভেতরে এই ভয়টা থাকবে তখনই আমরা আমাদের দায়িত্ব বুঝতে পারব। তখন আমাদের কী করা উচিত এই হিসাবটুকু মেলালেই পথ চলা আমাদের জন্য সহজ হবে। যদি আমার ভেতরে দায়িত্ববোধটা না জন্মায়, তাহলে আমার দ্বারা কোনো কাজই হবে না। এক নাম্বার দায়িত্ব হলো আমাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করা ফরজ এবং এই কাজের জন্য দুনিয়াতে আমরা এসেছি খাওয়া-দাওয়া লেখাপড়া যাই করি না কেন। সুতরাং পড়াশোনা এমনভাবে কর যেন পড়াশোনা করে ভালো একটা পজিশনে যেতে পার। আর তোমরা আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াতে আপার লেভেলে যেন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে পার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও। 


ছাত্রসংবাদ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। মহান আল্লাহ আপনার সন্তানকে জান্নাতের সুউচ্চ আসনে চিরস্থায়ী মেহমান করুন।

শহীদ মাসুম ভাইয়ের মা : তোমাদের জন্য দোয়া ও শুভকামনা। দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী প্রতিটি মুসলমানকে আল্লাহ জান্নাতের সুশীতল নিয়ামতে ধন্য করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির