post

আমি আমার নিরপরাধ আব্বার নিঃশর্ত মুক্তি চাই

১৮ নভেম্বর ২০১২

রাফীক বিন সাঈদী

[caption id="attachment_1449" align="alignleft" width="214"] রাফীক বিন সাঈদী[/caption]

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মিডিয়াব্যক্তিত্ব মাওলানা রাফীক বিন সাঈদী বলেছেন, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আমিও চাই। যুদ্ধাপরাধের বিচার সর্বাগ্রে চাই। কিন্তু যেভাবে সম্পূর্ণ নিরীহ নিরাপরাধ আলেমে দীনকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আমার পিতাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে তা কোনো সচেতন বিবেকমান মানুষের কাম্য হতে পারে না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে এসে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং আত্মদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি নিউ ইয়র্কে একটি সিরাত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন এখন সময় প্রতিনিধি তন্ময় মাহমুদ। রাফীক বিন সাঈদীর সাক্ষাৎকারটি হুবহু এখানে প্রকাশ করা হল : প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী ও সরকারের অভিযোগ থেকে দেখা যাচ্ছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সবচেয়ে বড় যুদ্ধাপরাধীÑ ছেলে হিসেবে আপনার মতামত কী? উত্তর : আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীই শ্রেষ্ঠ যুদ্ধাপরাধী, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমার আব্বার সামান্যতম ভূমিকাও ছিল না। তখন তিনি কোন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীতো দূরের কথা সমর্থকও ছিলেন না। পিরোজপুরে অনেক মুক্তিযোদ্ধাই বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামই শুনি নাই।’ যে মানুষটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত নিজ এলাকাতেও ছিলেন না। নেতা কর্মী হওয়া তো দূরের কথা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মীও ছিলেন না। সেই মানুষটি কী করে যুদ্ধাপরাধী হতে পারেন? এটা আমারও প্রশ্ন। প্রশ্ন : সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে তো অসংখ্য অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এর সবই কি মিথ্যা বানোয়াট? উত্তর : অবশ্যই সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার আব্বার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের যে মামলার পাহাড় রচনা করা হয়েছে এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বৈব মিথ্যা। আমাদের আইনজীবীরা অত্যন্ত বলিষ্ঠতার সাথে বলেছেন সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে এগুলো শতাব্দীর শ্রেষ্টতম মিথ্যাচার। আপনারা জানেন যে স্বাধীনতা যুদ্ধের চল্লিশ বছর পার হয়ে গেল এর ভেতরে ৮০-এর দশকে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কেউ এই অভিযোগ তুলেনি এবং সারা বাংলাদেশে আমার আব্বার বিরুদ্ধে একটা জিডি পর্যন্ত করেনি। বরং স্বাধীনতার পরে পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকায় তিনি তাফসির মাহফিল করেছেন, ঈদ ও জুমার নামাজে ইমামতি করেছেন। এছাড়া পিরোজপুর থেকে দুইবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। যেখানে দ্বিতীয়বার তিনি ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। প্লেস অব অকারেন্স হিসেবে যে পাড়েরহাটের কথা বলা হচ্ছে সে কেন্দ্রে আব্বা সর্বাধিক ভোটে জয়ী হয়েছেন। যদি তিনি স্বাধীনতাবিরোধী হতেন তাহলে কি এ অভিযোগগুলো আগে উঠত না? স্বাধীনতার এত বছর পর এই অভিযোগগুলো এখন নিয়ে আসা হচ্ছে কেন? প্রশ্ন : তাহলে অভিযোগগুলো কেন তোলা হচ্ছে, আপনার মতামত কী? উত্তর : যারা এ কাজটি করছে তারা আসলে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের উদ্দেশ্যে করছে না। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের উদ্দেশ্যে যদি হতো তাহলে তারা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীর বিচার করত। আমরা বুঝতে পারছি যারা তাদের রাজনৈতিক বিরোধী তাদেরকে যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিশেষ করে আমার আব্বার কথা বলব- স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে এসব কথা বলা হলো না, বলা হলো কখন- যখন তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করলেন। ট্রাইব্যুনাল আমার আব্বার বিরুদ্ধে বিশটি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। কিন্তু প্রসিকিউশন একটি অভিযোগও আজ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেননি। আসলে তারা মহামান্য আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন : এই অপপ্রচারের কারণ আপনি কী মনে করেন? উত্তর : আসলে এই অপপ্রচারের কারণ জনপ্রিয়তা। আমার আব্বা যে কুরআনের তাফসির করেন তাতে মানুষ উদ্বুদ্ধ হন। বিশেষ করে যুবসমাজ ইসলামের দিকে ধাবিত হয়। ইসলামবিরোধী মতবাদের অসারতা বুঝতে পেরে মানুষ ইসলামের দিকে অগ্রসর হয়। অমুসলিমরা তাদের পূর্বপুরুষের ধর্ম ছেড়ে ইসলামে দীক্ষিত হয়। মোট কথা ইসলামের প্রবক্তা হিসেবে আমার আব্বার যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এটাই হলো তাকে যুদ্ধাপরাধী বলার প্রধান কারণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যারা মামলা করেছে, যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে, যারা পরিচালনা করছে এবং যারা ইন্ধন জোগাচ্ছে তারা খুব ভালোভাবেই জানেন যে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মহান মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না। তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যই এ মামলা করা হয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পিরোজপুরের অবদান অনস্বীকার্য। আমার আব্বা যদি স্বাধীনতাবিরোধী হতেন তাহলে ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধারা নিজ খরচে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়ে আসতেন, তাদেরকে ডাকা লাগত না। কিন্তু বিশ্ববাসী কী দেখতে পাচ্ছেন? ট্রাইব্যুনালে ৬৪ জন সাক্ষীর নাম দেয়া হয়েছে এর মধ্যে তারা এক বছরে বিশ জনকে হাজির করতে পেরেছে। আর এরা হলো- চোর, লুটেরা, প্রতারক, যৌতুক মামলার আসামি, স্ত্রী নির্যাতনকারী ও বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা কোন মুক্তিযোদ্ধা নয়। সমাজের এ জাতীয় নিকৃষ্ট মানুষকে তারা টাকা পয়সার বিনিময়ে, মামলার হুমকি ধামকি দিয়ে জোর করে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে এসে তাদেরকে দিয়ে আব্বার বিরুদ্ধে মিথ্যা জবানবন্দী দিতে বাধ্য করেছে। মজার বিষয় হচ্ছেÑ আমাদের বিজ্ঞ আইনজীবীরা যখন এসব তথাকথিত সাক্ষীদের জেরা করা শুরু করেছেন তখন তারা উল্টা পাল্টা জবাব দেয়া শুরু করে। যারা বলেছিল আমরা মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে জেরা করায় তারা সদুত্তর দিতে অপারগ হয়ে করজোরে বলেছে ‘স্যার আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি নাই। সাক্ষী দিতে আসার আগে স্থানীয় এমপি আমাদেরকে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন।’ এ ধরনের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে এসে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং আত্মদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। প্রশ্ন : ৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনকে হাজির করা হয়েছে। বাকিরা কবে আসবে বা তাদের কী অবস্থা? উত্তর : যখন আদালতে বাকি সাক্ষীদের হাজির করতে বলা হলো তারা কালক্ষেপণ করতে লাগল। তারা বলল বাকিদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তারা জীবিত না মৃত তাও বলতে পারছি না। অনেকে পলাতক অবস্থায় আছে এবং বাদি পক্ষদের হুমকি দিচ্ছে টাকা পয়সার প্রলোভন দিচ্ছে যার কারণে তাদেরকে আনা যাচ্ছে না। তা ছাড়া এদের মধ্যে অনেকে অসুস্থ তাদেরকে ব্যয়সাপেক্ষে নিয়ে আসা যাচ্ছে না। তারা আদালতকে বলছে তাদের উপস্থিত না করে তাদের জবানবন্দী গ্রহণ করুন। সাক্ষীরা যে জবানবন্দী দিয়েছে তার কোন প্রমাণ নেই, তাতে সাক্ষীর কোনো স্বাক্ষরও নেই। তাহলে এখানে বোঝা যাচ্ছে এটা তদন্ত টিমের বানানো সাক্ষ্য। এর পর অপরাধ আইনের ১৯(২) ধারা মোতাবেক ট্রাইব্যুনাল ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলেন। মাননীয় বিচারপতিদের অর্ডার নিয়ে আমি কোন কমেন্ট করব না। তবে এটা বলব ১৯ (২) ধারার আইনটি আমার আব্বার ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। আমার কথা হচ্ছে সাক্ষীদের নিয়ে আসা ব্যয়বহুল, সাক্ষীরা কি আমেরিকাতে আছে না অন্য কোন দেশে আছে, না কি মঙ্গলগ্রহে? যেখানে সরকার বলছে এ বিচারের জন্য সরকার যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত টাকা-পয়সা থেকে শুরু করে যে কোন ক্ষেত্রে। তারা বলছে সাক্ষীরা বাদীপক্ষকে ভয় পাচ্ছে। যেখানে আসামিপক্ষ সাক্ষীদেরকে ভয় পাওয়ার কথা। এখানে স্পষ্ট হয় যে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সাক্ষীদের হাজির করছে না। প্রশ্ন : সাক্ষীদের যে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ে আসছে না- এর স্বপক্ষে আপনার যুক্তি কী? উত্তর : সাক্ষীদের উপস্থিতির বিষয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সরেজমিন তদন্ত করে তারা অধিকাংশ সাক্ষীর সাথে কথা বলেছে। সাক্ষীরা বলেছেন আমরা হারিয়েও যাইনি পলায়নও করিনি। সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজি হইনি বলেই আমাদেরকে পলাতক বলা হয়েছে। ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে বাংলাদেশের কয়েকজন অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। তাদের মধ্যে শাহরিয়ার কবীর, ড. জাফর ইকবাল, জুয়েল আইচ, সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া উদ্দীন, শার্ষিনা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. শরাফত আলী অন্যতম। এদেরকেও আদালতে পলাতক তালিকায় দেখানো হয়েছে। শাহরিয়ার কবীর সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তার এক সাক্ষাৎকার প্রদানকালে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনি যুদ্ধাপরাধের বিচারে এত সোচ্চার অথচ আপনি কেন সাক্ষী দিতে যাচ্ছেন না? তিনি জবাবে বলেছেন, ‘জবানবন্দীতে যা লেখা হয়েছে তা আমার নিজস্ব বক্তব্য নয়। আমি সাঈদীর মামলার কোনো সাক্ষীও নই।’ শাহরিয়ারের মত একজন লোকের নামে যদি মিথ্যা জবানবন্দী লেখা হয়ে থাকে তাহলে সাধারণ সাক্ষীদের ক্ষেত্রে কতটা মিথ্যাচার করা হয়েছে তা সহজে অনুমেয়। এই বিষয়টির দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে আমার আব্বা কোন স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না। বরং রাজনৈতিক কারণে তাকে যুদ্ধাপরাধী বানানো হয়েছে। আমার দাবি তাড়াহুড়ো না করে সাক্ষীদের যেকোনোভাবে আদালতে হাজির করা হোক এবং তাদেরকে স্বেচ্ছায় জবানবন্দী প্রদানের সুযোগ দেয়া হোক। প্রশ্ন : আপনার আব্বার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে তার কী পরিণতি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? উত্তর : যেটা মনে হয় তারা কুরআনের খাদেম ইসলামের অকুতোভয় বীর সেনানির বজ্রকণ্ঠকে চিরতরে স্তব্ধ করার মানসে একটার পর একটা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কিন্তু আমার দৃঢ়বিশ্বাস সারা দুনিয়ার মানুষ আমার আব্বার জন্য যেভাবে শিশু, কিশোর, নারী, পুরুষ দলমত নির্বিশেষে দোয়া করছেন তাতে মহান আল্লাহ এই কুরআনের খাদেমকে আবার কুরআনের ময়দানে ফিরিয়ে দেবেন। সব মিথ্যা বানের পানির মতো ভেসে যাবে এবং সত্য প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাআল্লাহ। প্রশ্ন : আপনার আব্বার রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত প্রভাবের কারণেই কি মুক্তিযোদ্ধারা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ভয় পাচ্ছে? উত্তর : দীর্ঘ ২ বছর ধরে কারাগারের চার দেয়ালে বন্দী একজন মানুষ কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রভাবিত করতে পারে! তিনি দুইবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কখনও কারো দ্বারা প্রভাবিত বা ভয়ে ভীত হতে পারেন না। আসলে মুক্তিযোদ্ধারা সত্যের অপলাপ করতে রাজি হচ্ছেন না। ইতঃপূর্বে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শামসুল আলম তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুজ্জামান বাবরসহ পিরোজপুরের ৫২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর অমার আব্বাকে নির্দোষ দাবি করে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। পিরোজপুরের বর্তমান এমপি জনসভায়, টকশোতে, সংসদে আব্বার বিরুদ্ধে কথা বললেও ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে বিচারপতিদের সম্মুখে তিনি বলেছেন ‘সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কথা লোকমুখে শুনেছি, আমি তার যুদ্ধবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড নিজ চোখে দেখিনি।’ পিরোজপুরের আপামর গণমানুষ আল্লামা সাঈদীর মুক্তি চায়। আপনারা নিশ্চয়ই টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন পিরোজপুরে আমার দাদীর জানাজায় কী পরিমাণ মানুষের ঢল নেমেছিল। আমার আব্বা যদি যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে আমার দাদীর জানাজায় এত বিপুল মানুষের সমাগম হতো না। লোকেরা বলেছেন এর আগে এত বড় জানাজা দেখিনি। তা ছাড়া আমি গত পহেলা এপ্রিল পিরোজপুরে আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনে যেটি পিরোজপুরের দ্বিতীয় বৃহত্তম ময়দান সেখানে একটি সিরাত মাহফিল করেছিলাম যেখানে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নেমেছিল। অনেক মুক্তিযোদ্ধাও সেই মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখান থেকে গণমানুষ আল্লামা সাঈদীর মুক্তির দাবিতে গগনবিদারি শ্লোগান দিয়েছিল। এখনও অনেকে তার মুক্তির জন্য রোজা রাখছেন। হিন্দুরা পর্যন্ত তার মুক্তির জন্য তাদের মন্দিরে পাঁঠা বলি দিয়েছেন। প্রশ্ন : জেলের ভেতরে আপনার আব্বার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা কী রকম? উত্তর : আব্বার বয়স এখন ৭২ বছর। তিনি ৩৭ বছরের ডায়াবেটিক রোগী। তিনি হৃদরোগ, আর্থারাইটিসসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত। এত কিছুর পরও তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে দেখিনি। একজন বিপদগ্রস্ত মুমিন মুসলমানের যে গুণাবলি থাকার কথা কুরআন-হাদিসে জেনেছি তার সকল গুণাবলি তার মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। তিনি বিন্দুমাত্র হতাশ নন। তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে আল্লাহ তাকে সকল মিথ্যাচার থেকে মুক্তিদান করবেন। তিনি বলেন, ‘শাহাদতের মৃত্যু আমার সারা জীবনের কামনা এবং প্রতিটি মুনাজাতে আমি বলে আসছি হত্যা, লুণ্ঠন এসব মিথ্যা অপবাদ নিয়ে আমি মরতে চাই না।’ তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করেন সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আল্লাহতা’য়ালা তাকে কুরআনের ময়দানে ফিরিয়ে দেবেন। প্রশ্ন : শোনা যায় আপনার আব্বার নাম দেলোয়ার শিকদার ছিল, কয়েক বছর আগে তিনি দেলাওয়ার হোসাইন নাম ধারণ করেছেন তা সঠিক কি না? উত্তর : তার বিরুদ্ধে মামলা সাজাতে তাদের তেমন কোনো কষ্ট করতে হয়নি। তারা যে কাজটি করেছে, পিরোজপুরে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা যত ঘৃণ্য অপরাধ করেছে তারা সেটির বিবরণ লিখেছে এবং সেখানে সুকৌশলে আমার আব্বার নামটি বসিয়ে দিয়েছে। তারা যে ক’টি সাক্ষী নিয়ে এসেছে সবাই তাকে দেলোয়ার শিকদার হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং তাদের দিয়ে বলানো হয়েছে ‘তিনি ছিলেন যুদ্ধের সময় দেলোয়ার শিকদার। যে ছিল এক মূর্তিমান আতঙ্ক। স্বাধীনতা যুদ্ধের ২০ বছর পর তিনি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নামে আবির্ভূত হন।’ আমার দাদী এ সংবাদ শোনার পর সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আমার ছেলের নাম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, জন্মের পর থেকে এই নাম রাখা হয়েছে। তার কোনো উপনাম নেই বা ছিল না।’ যে দেলোয়ার শিকদারের নাম তারা বলছে অনেক সাক্ষী এ কথা বলেছে যে দেলোয়ার শিকদার নামে একজন কুখ্যাত রাজাকার ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে তাকে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেন। এমনকি এই মামলার তদন্তকর্মকর্তা আদালতে প্রমাণসহকারে উল্লেখ করেছেন যে, দেলোয়ার শিকদার এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দু’জন ভিন্ন মানুষ। তিনি স্বাধীনতার ২০ বছর পর নয়, জন্মের পর থেকেই দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নামে পরিচিত। তার নাম কখনও দেলোয়ার শিকদার ছিল না। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আমার আব্বার ১৯৫৭ সালের শিক্ষাগত সনদপত্র দাখিল করেছেন। সেখানে সুস্পষ্টভাবে আব্বার নাম দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং তার পিতার নাম মাওলানা ইউসুফ সাঈদী উল্লেখ করা আছে। সুতরাং এ কথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, আমার আব্বাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত মানবতাবিরোধী কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। আমি আমার নিরপরাধ আব্বার নিঃশর্ত মুক্তি চাই এবং সকলের কাছে আমার আব্বার জন্য দোয়া কামনা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির