post

ইতিহাসের সাথে ঐতিহ্যের পথে

২৯ এপ্রিল ২০১৫
history আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ#

(পূর্ব প্রকাশের পর)

ঐতিহ্য : কী, কেন, কিভাবে যাদের ইতিহাস নেই তাদের ঐতিহ্য নেই। যে জাতির ইতিহাস যতো প্রাচীন, সে জাতির ঐতিহ্যও ততো গৌরবের। ইতিহাস ঘটে যাওয়া অতীতের ঘটনাপ্রবাহের সত্য ও গ্রহণযোগ্য বর্ণনা মাত্র। এসব বর্ণনায় ভালো যেমন আছে, মন্দ অংশ থাকাটা অনাকাক্সিক্ষত হলেও অসম্ভব নয়। এ কথা মানতে হবে, কোনো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ তার নিজের জীবনের অন্ধকার কোনো দিক নিয়ে গর্ববোধ করে না। তেমনি কোনো জাতি তাদের ইতিহাসের কোনো কালো অধ্যায়ের দিক স্বীকার করতে চায় না। বরং সম্ভব হলে তারা মুছে দিতে চায় সমস্ত কালিমার চিহ্ন। ইতিহাসের এই কালো অধ্যায়গুলো হচ্ছে- কলঙ্কতিলক। আর ঠিক তার বিপরীতটাই হচ্ছে ঐতিহ্য। আমরা যখন বলি- অমুক একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান, অমুক বংশীয় ঐতিহ্য উল্লেখ করার মতো কিংবা অমুক জাতি বিরাট ধারক-বাহক তখন বোধ করি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সমাজ উদ্বুদ্ধ, উদ্বেলিত ও আহ্লাদিত হয়। এ নিয়ে তারা সত্যি সত্যি গৌরব বোধ করেন। আর এ জন্যই বলা হয়, ‘Traditions are the golden parts of any history.’ অর্থাৎ ইতিহাসের স্বর্ণালি বা গৌরবময় অংশগুলোই ঐতিহ্য। এই আমরা বলি- বাঙালির রয়েছে সংগ্রাম ও আন্দোলনের ঐতিহ্য, তখন আমরা সবাই আনন্দিত হই। আমাদের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণ-আন্দোলন, ’৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধ, ’৯০ দশকের  স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এসবের উল্লেখ এই ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা মীরজাফরের দেশবিরোধী ভূমিকা স্বৈরাচারী শাসক ও তাদের দোসরদের ভূমিকা যা ইতিহাসের অংশ- তাকে কোনো অবস্থায়ই আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায় মনে করি না। ঐতিহ্য মনে করি না। ঐতিহ্য কেন থাকা চাই এই জন্য যে ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের সামনে আলোকিত পথের সন্ধান দেয়। যখনই কোনো জাতীয়, রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক বিপর্যয় বা দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হয় তখন ঐতিহ্য তাদেরকে সচেতন করে। ঐতিহ্যের পথ ধরে তারা আবার লড়াই করতে শিখে। তারা আবার উচ্চারণ করে ‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত’। একইভাবে তারা যুথবদ্ধ হয়ে শোষণ, শাসন, নিপীড়ন, নিবর্তন ও জুলুমের শৃঙ্খল ভাঙতে শপথবদ্ধ হয়। তারা গেয়ে ওঠে সাহস ও হিম্মতের সাথে- ‘এ দেশ খানজাহানের, এ দেশ শাহ মাখদুমের... ।’ ‘এই অলি আল্লাহ্র বাংলাদেশ, এই শহীদ গাজীর বাংলাদেশ, রহম করুন আল্লাহ্, রহম করুন আল্লাহ্।’ এই গানে খানজাহান, বায়েজিদ, শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীরের ইতিহাস স্মরণ করে, তাদের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রত্যয় ঘোষণা করে, আল্লাহ্র রহমত চাওয়া হচ্ছে। এটাই হচ্ছে ঐতিহ্যের প্রয়োজন। ঐতিহ্য-গর্বের, আনন্দের এবং সাহসের উৎস। ঐতিহ্য- আত্মমর্যাদা, জাতীয় গৌরব এবং সম্মানের উৎস। একটি ঐতিহ্যসচেতন পরিবার, জাতি কিংবা সমাজ ক্ষুধায় কাতর হয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করে জীবন দিয়ে লড়াই করতে পারে কিন্তু অসম্মান ও জিল্লতির একটি মুহ‚র্তকেও মেনে নিতে রাজি থাকে না। ব্যষ্টি সমষ্টির অংশ। ব্যক্তি সমাজের একক। ঐতিহ্য ব্যষ্টিক নয়, সামষ্টিক। ব্যক্তির গৌরবগাথা তার ব্যক্তিত্বের অর্জন। আর সমষ্টির গৌরবগাথা তার ঐতিহ্যের অংশ। ঘরের দেয়ালটি যেমন অনেক ইটের তৈরি তেমনি অসংখ্য মহৎ ব্যক্তির তৈরি করা সমাজ। সমাজ ঐ ব্যক্তিদের অস্বীকার করে না। কিন্তু ব্যক্তির চেয়ে সমাজটাই বড় তেমনি সমাজের গড়ে তোলা একটি ঐতিহ্য প্রতিটি ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলে। তার ব্যক্তিত্বে ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়। সমাজ রাষ্ট্র ও সংগঠনের ঐতিহ্যসমূহ গড়ে ওঠে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও বিষয়বস্তু সামনে রেখে। নিচের কথাগুলো লক্ষ্য করি: ১.    একটি পরিবারের সাধারণ ভদ্রতা হচ্ছে- বড় ছোট যাকেই দেখে সবাই সবাইকে সালাম দেয়। তারা কোন হারাম খাদ্য বাড়ির ত্রিসীমানায় ঢুকতে দেয় না। তাদের মেয়েরা কখনো বেপর্দা ঘর থেকে বের হয় না। তাদের মেয়েদের উচ্চকণ্ঠ কেউ কোনদিন শুনে না। কোন ছেলেমেয়ে কমপক্ষে স্নাতক না পড়ে পড়ালেখা শেষ করে না। কিংবা এ বাড়ির সবাই আলেম অথবা শিক্ষক অথবা চাকরিজীবী। এসব হতে পারে তাদের ঐতিহ্য, যদি তা ক্রমাগত কয়েক পুরুষ ধরে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। ২.    একইভাবে একটি সমাজে সবাই নামাজ কায়েম করে। রমজান মাসে সবাই রোজা রাখে। জামায়াতে তারাবিহ আদায় করে। কেউ কোন মিথ্যা কথা বলে না। কারোর হক কেউ নষ্ট করে না। দলাদলি করে না। এই সমাজ থেকে মেহমান খালি মুখে ফিরে যায় না। এই পাড়ার সবাই সবাইকে সম্মান, শ্রদ্ধা কিংবা স্নেহ করে। ৩.    একটি রাষ্ট্রের বিগত ৫০ বছর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজমান। ক্ষমতায় যারাই আসেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েই আসেন। গণতান্ত্রিক রায় মেনে নেন হাসিমুখে। সংবিধান সমুন্নত, বিচার বিভাগ স্বাধীন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত। রাজনীতিবিদ ও আমলারা দুর্নীতিমুক্ত। ৪.    একটি সংগঠনে নেতৃত্ব নিয়ে মারামারি হয় না। কেউ পদের প্রতি লোভী নয়। প্রত্যেকে পরমতসহিষ্ণু। ব্যক্তিগতভাবে সততার প্রতীক। দলীয়ভাবে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মেনে চলে। উপরের বিষয়গুলো ব্যক্তি, সংগঠন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কতিপয় ঐতিহ্যের উদাহরণ। এই রকম ঐতিহ্যের অংশ হতে পারা গৌরবের। এই রকম সংগঠনের সভ্য হতে পারা আনন্দের। এই রকম সমাজের বাসিন্দা হতে পারা নিশ্চয়তা ও নির্ভরতা, এই রকম রাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারা প্রশান্তির। সামাজিক ঐতিহ্য, শিক্ষার ঐতিহ্য, বিনোদনের ঐতিহ্য, পারিবারিক ঐতিহ্য, অর্থনৈতিক ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য- এভাবে নানাভাবে আমরা ঐতিহ্যের বিভাজন করতে পারি। যাদের জীবনের সাথে যত ঐতিহ্যের সংযোগ তারা ততবেশি ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। সম্মান ও মর্যাদা সচেতন লোকেরা ঐতিহ্যপ্রিয় হয়ে থাকেন। অর্থবিত্তে তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখেন। তারা হতদরিদ্র হতে পারেন কিন্তু মননে-চিত্তে বিত্তশালী হয়ে থাকেন। জীবনকে ঋদ্ধ করার জন্য তারা হয়ে থাকেন ঐতিহ্যসন্ধানী, ঐতিহ্য-অনুসারী। একজন আল-আজহারী দ্বীনি শিক্ষার ক্ষেত্রে হাজার বছরের ঐতিহ্যের বাহক, একজন কেম্ব্রিজিয়ান বা অকসন আধুনিক শিক্ষায় শত শত বছরের ঐতিহ্যের অংশ, একজন ব্রিটিশ শত শত বছরের গণতন্ত্রের অনুসারী। ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের সাথে তার সম্পৃক্ততা তাকে ঐতিহ্যময় করে তুলে। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য আমরা যে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী তা হজরত ইবরাহিম (আ), মূসা (আ), নূহ (আ)-এর দাওয়াতের ধারাবাহিকতা, তা হজরত মুহাম্মদ (সা) প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন-সংগ্রাম ও সাধনার উত্তরাধিকার। সুতরাং এই আন্দোলনের ইতিহাস সুদীর্ঘ। দীর্ঘ এই ইতিহাসের রয়েছে অনেক মঞ্জিল। অনেক অভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকার পরও এসব নবী ও রাসূলের আন্দোলনের কিছু ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশেষ করে নবী মুহাম্মদ (সা) এর আন্দোলন ছিল একটি পরিপূর্ণ ও সকল দিক থেকে সফল আন্দোলন। তিনি ও তার অনুসারীগণ ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ আদর্শ হিসেবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করেন। পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখছে কোরাইশ বংশের একজন এতিম সন্তান কী করে একাকী একটি আদর্শ নিয়ে দাঁড়িয়ে এক সংক্ষিপ্ত সময়ের ব্যবধানে জগৎব্যাপী একটি সর্বপ্লাবী বিজয় সূচনা করেন। এই যে আন্দোলনের উদ্দীপনাময় ইতিহাস, এই ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে রয়েছে সমৃদ্ধ সব ঐতিহ্য। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস কেবল যে সুদীর্ঘ তাই-ই নয় বরং এর রয়েছে বহুমাত্রিকতা। দেশে দেশে যেসব ইসলামী আন্দোলন গড়ে উঠেছে যুগে যুগে, সেসব ইতিহাস এক মলাটে নিয়ে আসা হয়নি এবং আনাটা খুব যে সহজসাধ্য তা-ও কিন্তু নয়। বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনেরও বহু যুগ, বহু দশক অতিক্রান্ত হয়েছে। এই নাতিদীর্ঘ সময়কালেও রয়েছে বৈচিত্র্যে ভরা আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস। এ সব বর্ণিল ইতিহাস একত্রিত করলে অনেক ঐতিহ্য আমরা খুঁজে পাবো। আজকে সেই দীর্ঘ তালিকা প্রণয়ন না করে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র-আন্দোলনের গৌরবময় সংগঠন, এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইতিহাস নিয়ে কিছু কথা বলে তার ঐতিহ্যসমূহ তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইতিহাস ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। দেখতে দেখতে আজ শিবিরের বয়স ৩৮ বছর। আটত্রিশ বছর একজন মানুষের ক্ষেত্রে জীবনের এক বিরাট সোনালি অধ্যায়। আর সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির যে ৩৮টি বছর পেছেনে ফেলে রেখে এসেছে তার ইতিহাস যেমন বর্ণাঢ্য তেমনি ঘটনাবহুল। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সেই যে ৬ জন ছাত্র-সংগঠক নিয়ে তার শুভ পথচলা শুরু করলো আজ কিন্তু এই কাফেলায় রয়েছে দেশের লক্ষ্য তাজাপ্রাণ যুবক-কিশোর। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত রয়েছে এই সংগঠনের বিস্তৃত শাখা-প্রশাখা। দেশের শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপীঠে যেমন শিবিরের অবস্থান, তেমনি অবস্থান শহর বন্দর-গ্রামে নাম না জানা অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, পাড়াগাঁয়ে, মাদ্রাসা, মক্তবে। যেখানেই থাকুক না কেন এই সংগঠনের  তৈরি হয়েছে অসংখ্য ঐতিহ্য। ৩৮ বছরের ইতিহাস ঘেঁটে, ইতিহাসের দর্পণে চোখ রেখে কেবলমাত্র ঐতিহ্যসমূহের একটি তালিকা নিচে সাজিয়ে দেয়া হলো। আশা করি এই ঐতিহ্য তরুণ প্রজন্মকে সাহায্য করবে শিবির সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে। মিথ্যার ধ্বজাধারীরা যদিও এমন সোনালি অধ্যায় দেখতে পায় না, কেবলি সুযোগ সন্ধান করতে থাকে শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে তবুও সচেতন ছাত্রসমাজ ও বিদগ্ধ সুধীগণ তাদের বিবেককে কাজে লাগিয়ে ঐতিহ্যসম্ভারে সমৃদ্ধ শিবিরের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হবে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঐতিহ্য ক)    বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচির ঐতিহ্য- ১.    শিবিরের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি’ অর্জন। সকল নবী-রাসূল ও তাদের আন্দোলনের এই একই উদ্দেশ্য ছিল। কুরআন বর্ণিত ইতিহাস সকল নবী-রাসূলের এই উদ্দেশ্য অর্জনের ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। ২.    আর এই উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে আল্লাহ্র জমিনে তার দ্বীনের প্রতিষ্ঠা। দ্বীনপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করাই তাদের কাজ, পার্থিব সাফল্য বা ব্যর্থতা নয়। ৩.    কুরআন বর্ণিত নবীদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনটি স্থায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে ঐতিহ্য অনুসরণ করে। দাওয়াত, সংগঠন ও প্রশিক্ষণ যা দ্বীনের কাজে সর্বকালীন কর্মসূচি- হোক দ্বীন বিজয়ের আগে কিংবা পরে তা এই সংগঠনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। খ)    সাংগঠনিক ঐতিহ্যসমূহ ৪.    শিবির অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের মতো গতানুগতিক নয়। শিবিরের কর্মী হওয়ার জন্য প্রথম ও প্রধান শর্ত ছাত্র হওয়া। কোন অছাত্র ছাত্রশিবিরে থাকতে পারে না। একবার কর্মী হয়ে বসলাম, আর ছাত্রজীবন শেষ করবো না, পদও ছাড়বো না এমন কোনো সুযোগ এখানে নেই। ৫.    ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংগঠনে রয়েছে নেতৃত্ব ও আনুগত্যের চমৎকার ভারসাম্য। এখানে নেতৃবৃন্দ জনশক্তির দায়িত্বশীল হিসেবে সার্বিক তত্ত্বাধানের পাশাপাশি আপন ভাইয়ের মতো যত্ন নিয়ে থাকে। আবার জনশক্তিও দায়িত্বশীলদের পূর্ণ আনুগত্য করে থাকে। অনেক সময় বয়স শিক্ষাগত যোগ্যতায় জুনিয়র কেউ তার চাইতে বড় ও শিক্ষায় সিনিয়র কারো নেতা হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল যেমন শ্রদ্ধা সমীহ বজায় রাখেন কর্মীর প্রতি, কর্মী কিন্তু ঠিকই দায়িত্বশীলের প্রতিটি নির্দেশ বা অনুরোধ যথাযথভাবে পালন করেন। ৬.    ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঐতিহ্য বছরের নির্দিষ্ট সময়ে দায়িত্বের রদবদল। যিনি দায়িত্বে থাকেন তিনি চান কত তাড়াতাড়ি দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাবেন। পদ আঁকড়ে, অফিসঘর দখল করে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার বদ রসম এখানে নেই। গ)    নেতৃত্ব নির্বাচনের ঐতিহ্য ৭.    ইসলামী ছাত্রশিবিরের সকল পর্যায়ের নেতা নির্বাচনে কেউ প্রার্থী থাকেন না। প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশই কারো নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম বাধা। তাকে কোন ধরনের দায়িত্ব প্রদান করা হবে না। এখানে সবাই প্রার্থী, সবাই ভোটার। ভোটার তালিকা দেখে, নেতৃত্বের জন্য সংবিধান বর্ণিত নিয়মের অধীন ভোট প্রদান করতে হয়। নিজের ভোট কেউ নিজেকে দিতে পারবেন না। সর্বোচ্চ ভোট যিনি পাবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। শিবিরের কোনো পর্যায়েই ভোটের জন্য প্রচারণার অনুমোদন নেই কিন্তু সাধারণ নির্বাচনে (উপজেলা, ইউনিয়ন নির্বাচন) সংগঠন যদি কাউকে কোন পর্যায়ে প্রার্থী হতে বলেন তাহলে তাকে তা গ্রহণ করতে হবে। ফলে অভ্যন্তরীণ কোন নির্বাচনে জনশক্তি বিভাজনের প্রশ্নই ওঠে না। কোন দলাদলি হাতাহাতির ইতিহাস শিবিরে নেই। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একমাত্র ছাত্রসংগঠন যেখানে জন্ম থেকে আজ অবধি নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। কোন আদুভাই নেতৃত্ব গড়ে ওঠে না। ঘ)    নির্বাচন-পরবর্তী ৮.    বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কোন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নির্বাচিত বা মনোনীত হলে উল্লাস প্রকাশ করেন না। বরং নির্বাচিত হিসেবে নাম ঘোষণার পর শপথ নিতে ডাকলে দেখা যাবে ইয়াতিমের মতো কান্না করেন তারা। কেঁদে কেঁদে শপথ নেন দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে। অথচ অধিকাংশ সংগঠনে দেখা যায় একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে শ্লোগান মিছিল ধরছে। হাতাহাতি চেয়ার মারামারি করে পেরে না উঠলে গায়ের ঝাল মেটানোর জন্য রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করছে। ছাত্রশিবির এসব থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করে। ঙ)    আর্থিক ক্ষেত্রে ঐতিহ্য ৯.    বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের আয়ের উৎস : কর্মী- শুভাকাক্সক্ষীদের মাসিক এয়ানত এবং প্রকাশনীর মুনাফা। শিবিরের কর্মী হতে হলে নিজের আয় থেকে হোক বা অভিভাবকের দেয়া খরচ নির্বাহের টাকা, হোক নিজের টিউশনি করে উপার্জিত অর্থ কিংবা কোন খরচ বাঁচিয়ে জমানো টাকা- তা থেকে সংগঠনকে নিয়িমিত নির্দিষ্ট হারে মাসিক এয়ানত বা চাঁদা দিতে হয়। এটাই সংগঠন পরিচালনার নিয়মিত আয়। এ ছাড়া শিবিরকে ভালোবাসেন এমন ব্যক্তিগণও নিয়মিত অর্থ দিয়ে থাকেন। শিবিরে কোন অপ্রদর্শিত আয়ের খাত নেই, গোপন অর্থের জোগান নেই। ১০.    বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সকল আয়-ব্যয়ের হিসাব কড়ায় গন্ডায় সংরক্ষণ করা হয়। শিবিরের রসিদ ছাড়া কোনো আয় নেই এবং ভাউচার ছাড়া কোন ব্যয় নেই। আর্থিক আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণে রয়েছে কড়াকড়ি। প্রতিটি আয়-ব্যয়ের বিষয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ঊর্ধ্বতন সংগঠন ও জনশক্তির কাছে জবাবদিহি করতে হয়। ১১.    বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বার্ষিক হিসাব অডিট করা হয়। বাংলাদেশের আর কোন ছাত্রসংগঠনের এরূপ আর্থিক স্বচ্ছতা আছে বলে জানা নেই। দু’টি ঘটনা ১.    বাংলাদেশের একটি নামকরা সরকারি কলেজের ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষকদের সাথে কাজ করছিল শিবিরের ওই কলেজের সভাপতি। অনুষ্ঠান শেষ যখন শিবির সভাপতি তাকে দেয়া সমস্ত টাকার হিসাব (কত টাকা আয় হয়েছে আর কত টাকা ব্যয় হয়েছে এবং উদ্বৃত্ত কত) অধ্যক্ষের সামনে হাজির করলো, অধ্যক্ষ মহোদয় অবাক হলেন। সাধারণত মানুষ উদ্বৃত্ত টাকা ফেরত দেয় না বরং যতই টাকা দেয়া হোক হিসাব শেষে তার কিছু পাওনা থেকে যায়। ২. বাংলাদেশের একজন সাবেক মন্ত্রী নির্বাচনী এলাকায় জোটের অংশ হিসেবে শিবিরকর্মীরাও নির্বাচনের কাজে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচন শেষে শিবিরের দায়িত্বশীল তার কর্মীদের দিয়ে নির্বাচিত এমপির সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। ওই মন্ত্রী খেয়াল করলেন শিবির নেতার সাথে একটি বস্তাভর্তি কাগজ আর কিছু নগদ টাকা। এগুলো কী? জানতে চাইলেন তিনি। শিবির নেতা বললো, বস্তায় এগুলো নির্বাচনী খরচের ভাউচার ও হিসাব এবং টাকাটা উদ্বৃত্ত অর্থ। ওই নেতা বললেন, এর আবার হিসাব কিসের? তিনি শিবির নেতাকর্মীদের আমানতদারিতা ও পেশাদারিত্বে মুগ্ধ হলেন। চ)    নকল পরিহার ও প্রতিরোধের ঐতিহ্য ১২.    এখন তো বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, অন্তত পরীক্ষার ক্ষেত্রে। আগের দিনে নকলের প্রবণতা ছিল প্রবল। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা সকল প্রাতিষ্ঠানিক ও বোর্ড পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপক নকল করতো। মহামারীর মতো এই নকলের হাত থেকে বাঁচা ছিল কঠিন, এমনকি দেখা যেত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ পাহারা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নকলে সাহায্য করতেন, কোথাও কোথাও ভালো রেজাল্টের আশায় নকল করতে বাধ্য করতেন। যেমন ইদানীং বছর ধরে চলছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের লজ্জাজনক কেলেঙ্কারি। বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে নকল রোধের প্রথম সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শিবির। শিবিরের কর্মীদের জন্য নকল করা, নকলে সহায়তা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। নকলের প্রাবল্যের যুগে অনেক শিবির কর্মীকে নকল না করার জন্য শিক্ষক অভিভাবকদের হাতে প্রহৃত হতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও শিবির নকলের সাথে কোনো আপস করেনি। বাংলাদেশের বহু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ সাক্ষী দেবেন শিবিরের কর্মীরা কখনো নকল করেননি এবং করেন না। কর্তৃপক্ষ নকলের অপরাধে পাকড়াও করুক বা না করুক, শিবিরের কোনো শপথের কর্মী নকল করছে তা জানতে পারলে শিবির তাকে অবশ্যই বহিষ্কার করবে। এমন ঘটনা অনেক হয়েছে, শিবির বহিষ্কার করার পর শিক্ষকগণ শিবির দায়িত্বশীলদের জিজ্ঞেস করেছেন, আমরা বহিষ্কার করিনি, তোমরা কেন বহিষ্কার করতে গেলে? অন্য সংগঠনের ক্ষেত্রে উল্টো রেকর্ড রয়েছে যে, নকল করতে না দেয়ায় কোনো কোনো সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করেছে এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছে। শিবির নকল পরিহার করতে যেমন কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে তেমনি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও রেখে আসছে বলিষ্ঠ ভূমিকা। ছ)    নৈতিক ক্ষেত্রে ঐতিহ্য ১৩.    বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির তার কর্মীদের  নৈতিকভাবে সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের  নৈতিকতা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোন রকম অনৈতিক কাজের সাথে কর্মীদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। বরং যদি ইসলামী নৈতিকতা পরিপন্থী কাজে কোন কর্মীকে সম্পৃক্ত পাওয়া যায় সংগঠন তাকে বহিষ্কার করে দেয়। পাশাপাশি তার তওবা করে আত্মশুদ্ধি লাভের কাজেও সাহায্য করে। ১৪.    বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের কঠোরভাবে ইসলামী পর্দার বিধানসমূহ মেনে চলতে হয়। কুরআন বর্ণিত মাহরাম ও গাইরে মাহরাম বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়। বর্তমানে যে অনৈতিকতার সয়লাব চলছে, ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা হচ্ছে, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে চরম পর্দার বিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। তার ফলেই অধিকাংশ সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদেরকে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। পর্দার বিধান লঙ্ঘন হলে তাকে সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। ১৫.    এমনকি ইসলামী ছাত্রশিবির কর্মীদের নিজেদের মধ্যেও অনৈতিক পরিবেশ তৈরি হতে পারে এমন পরিস্থিতি রোধের ব্যবস্থা রাখে। শিবিরের কর্মীদের একই বিছানায় বা একই চাদরের নিচে দু’জন কর্মীকে ঘুমানোর ক্ষেত্রে নিষেধ করে। এটি একটি ইসলামী বিধান যা নৈতিক দুর্ঘটনা রোধে সাহায্য করে। ১৬.    শিবিরের কর্মীরা অহেতুক ক্লাসে বা পাড়ায় মহিলা বা ছাত্রীদের সাথে গায়ে পড়ে মেলামেশা করতে যায় না। ১৭.    শিবিরের কর্মীরা সিনেমা, টিভি কিংবা নাটকে অশ্লীল কোনো অনুষ্ঠান দেখে না। কেবলমাত্র  বৈধ বিষয়গুলোই দেখে থাকে। ১৮.    এটি ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। কোন কিছু বণ্টন করার দায়িত্ব পেলে শিবিরের কর্মীরা সবসময় অন্যজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে একজন শিবির কর্মী আরেকজন অন্য মানুষ বা অন্য সংগঠনের লোক হলে কর্মীর ওপর অপরজনকেই প্রাধান্য দেয় শিবির। দুটো শার্ট, দুটো খাবার বা এ জাতীয় কোন পরিস্থিতিতে শিবির কর্মীরা আগে অন্যজনকে ভালোটি নিতে দেবে তারপর নিজেরটি  নেবে। নিজে খাটে না শুয়ে অন্য ভাইকে শুতে দেবে এবং নিজে মাটিতে ঘুমাবে। নিজে দাঁড়িয়ে যাবে আর পাশের জনকে বসার সুযোগ করে দেবে। এটি শিবিরের ঐতিহ্য। এই বিষয়ে অধিকাংশ মানুষের অভিজ্ঞতা অভিন্ন। এভাবে তালিকা করতে গেলে তা কেবল প্রলম্বিত হবে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইতিহাস যত বড় হচ্ছে তার ঐতিহ্য তালিকা তত দীর্ঘ হচ্ছে এবং হতেই থাকবে ইনশাআল্লাহ। ইতিহাস ঋদ্ধ করি : ঐতিহ্য রক্ষা করি একটি সচেতন সংগঠনের নেতা ও কর্মীদের জন্য তাদের ইতিহাস যেমন গৌরবের, ঐতিহ্য তেমনি সৌরভের। সৌরভের কাছে যেমন পূতিগন্ধময়তা আপনা হতেই পরাজিত হয় তেমনি ঐতিহ্যের কাছে ম্রিয়মাণ হয়ে যায় হৃতগৌরব ও ঐতিহ্যহীন সম্প্রদায়। পৃথিবীতে বহু মানুষ কেবল ইতিহাস শোনে, ইতিহাস পড়ে আর খুব অল্পসংখ্যক মানুষ ইতিহাস গড়ে। সভ্যতার এই চরম উৎকর্ষের যুগে ইতিহাস গড়ার কাজ আরো কঠিন। মুসলিম তরুণ-যুবকদের কাছে সময়ের বড় দাবি হচ্ছেÑ তোমরা উঠে দাঁড়াও, ইতিহাস গড়ার শপথ নাও। দশ বছরের আলী, ১৭ বছরের মুহাম্মদ বিন কাসিমের মত ইতিহাসের বুকে এঁকে দাও তোমার অবিনাশী পদচিহ্ন। কবি মতিউর রহমান মল্লিকের একটি পুরনো গান আজ মনে পড়ছেÑ ‘যা কিছু করতে চাও করতে পারো/ অনুরোধ শুধু এই ঘর ভেঙগো না/এ মন ভাঙতে চাও ভাঙতে পারো/অনুরোধ শুধু এই ঘর ভেঙগো না/ অনেক রক্ত দিয়ে গড়া এই মসজিদ আমাদের প্রিয় ঠিকানা।’ ১৯৭৭ সাল থেকে পলে পলে গড়ে উঠেছে মুক্তিকামী তরুণের সাহসী ঠিকানা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের গৌরবের ইতিহাস। তিলে তিলে গড়ে উঠেছে অনুসরণীয়, অনুকরণীয় দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা। ইতিহাসের রংমঞ্চ থেকে হারিয়ে গেছে ওইসব দেশ, জাতি, সভ্যতা ও স¤প্রদায়, ঠাঁই করে নিয়েছে আঁস্তাকুড় আর ভাগাড়ে, যারা ধরে রাখতে পারেনি শৌর্য-বীর্য-সাহস ও সৌন্দর্যে গড়ে তোলা ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা। তাদেরই সামনে মাটির ধুলোয় মিশে গেছে সম্মানের ঐতিহ্যের শুভ্র মিনার। তাই আসুন বসে বসে পূর্বপুরুষের ইতিহাস ঐতিহ্যের জাবর কাটার সুখ উপভোগ না করে আমরা ত্যাগ ও সাধনার মহিমায় গড়ে তুলি বিনির্মাণের নতুন ইতিহাস, ঐতিহ্যের নতুন সম্ভার। লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির