post

ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুমিল্লা

১২ নভেম্বর ২০১২

শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। জন্মের পর একটি নির্দিষ্ট বছরের গণ্ডি পেরুলেই প্রত্যেক শিশুকে শিক্ষার অধিকার প্রদান করা সমাজের প্রতিটি নাগরিকের একান্ত কর্তব্য। তথাপি যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলাও প্রয়োজন। কেননা, তারাই তো একসময় বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। এ জন্য তাদের উপযোগী করে শিক্ষালয় তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়। এমনই এক মহান দায়িত্ববোধ থেকে প্রতিষ্ঠা লাখ করে ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ১৯৭৯ সালে কতিপয় দেশপ্রেমিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব ইবনে তাইমিয়া ট্রাস্ট গঠন করেন এবং ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৯ সালে প্রাইমারি, ১৯৮৫ সালে হাই স্কুল এবং ১৯৯৬ সালে এটিকে কলেজে রূপান্তর করা হয়। এটি কুমিল্লা শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র টমছম ব্রিজ এলাকায় অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে ১০০ ফুট রাস্তার সাথে প্রায় ২ একর জমির উপর অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ২ লক্ষ বর্গফুটের একটি বহুতল ভবন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইবনে তাইমিয়া কর্তৃপক্ষ এটি নির্মাণ করছেন। এছাড়াও আরও ২টি ৪ তলাবিশিষ্ট, ১টি ৩ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন রয়েছে। বয়েজ এবং গার্লস ২টি আলাদা ক্যাম্পাসে এর পাঠদান কার্যক্রম চলে। সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা, ডিজিটাল শ্রেণীকক্ষ তৈরির মাধ্যমে পাঠদান, বার্ষিক পাঠ-পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সিলেবাস সময়মত ঈড়সঢ়ষবঃব করে ছাত্র-ছাত্রীদের সত্যিকার জ্ঞানী করে তোলা হয়। ক্লাস টেস্ট, সাপ্তাহিক টেস্ট এবং টিউটরিয়াল পরীক্ষা ও সেমিস্টার পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়ন করা হয়। চরিত্র গঠনের লক্ষ্যে আমল আখলাক পরীক্ষা নামে একটি পরীক্ষা হয়। প্রতিটি সেমিস্টার পরীক্ষার পর অভিভাবক সমাবেশ করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এখানে ভালো ফলাফল অর্জনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয় এবং অকৃতকার্য হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপারে অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় যাতে তারা ভালো করতে পারে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৫০০০ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। ফলাফল : ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তিসহ জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি সকল পাবলিক পরীক্ষায় প্রতি বছরই শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়ে আসছে ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ পর্যন্ত ১৬ বার শীর্ষ তালিকায় স্থান লাভ করে এ প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরও জেএসসি-তে ৭ম, এসএসসি-তে ১১তম এবং এইচএসসি-তে ৯ম স্থান লাভ করে। ফলে বর্তমানে ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। একনজরে ইবনে স্কুল অ্যান্ড কলেজের কৃতিত্বসমূহ

ষ    ১৯৯১ সালে বিজ্ঞান মেলায় জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন। ষ    ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম বিভাগে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ। ষ    ১৯৯৮ সালে কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তলিকায় ১৩তম স্থান অর্জন। ষ    ২০০০ সালে কুমিল্লা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১ম ও ২য় স্থান অর্জন। ষ    ২০০১ সালে অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল কুমিল্লা সদরে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ষ    ২০০২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৩য়, ৫ম, ৯ম, ১১তম ও ১৪তম স্থান অর্জন। ষ    ২০০২ সালে অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। ষ    ২০০৫ সালে কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ দশে ৫ম এবং এইচএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ দশে সপ্তম স্থান অর্জন। ষ    ২০০৬ সালে কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ দশে ৫ম স্থান অর্জন। ষ    ২০০৬ সালে ৮ম শ্রেণী বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা অঞ্চলে ১ম স্থান অর্জন। ষ    ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ দশে ৭ম স্থান অর্জন। ষ    ২০০৭ সালে উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রচনা প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে স্কুল পর্যায়ে ১ম স্থান অর্জন। ষ    ২০০৭ সালে ৮ম শ্রেণীতে ৯ জন ট্যালেন্টপুল ও ১৫ জন সাধারণ গ্রেডে মোট ২৪ জন ছাত্র-ছাত্রী বৃত্তি পায়। ষ    ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বিভাগে রচনা প্রতিযোগিতায় ১ম ও ২য় এবং জাতীয় পর্যায়ে ২য় স্থান অর্জন। ষ    ২০০৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় শীর্ষ দশে ৪র্থ স্থান অর্জন। ষ    ২০০৮ সালে ৮ম শ্রেণী বৃত্তি পরীক্ষায় ৩৬ জন এবং ৫ম শ্রেণীতে ৬ জন মোট ৪২ জন বৃত্তি পায়। ষ    ২০০৯সালে এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ৭ম স্থান অর্জন। ষ    ২০০৯ সালে ৮ম শ্রেণী বৃত্তি পরীক্ষায়  ৩৬ জন বৃত্তি লাভ। ষ    ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ১৯তম স্থান অর্জন। ষ    ২০১০ সালে সাঁতার প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে ২য় এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান অর্জন। ষ    ২০১০ সালে জেএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে ৫ম স্থান ও ২৪ জন বৃত্তি পায়। ষ    ২০১১সালে এসএসসি পরীক্ষায় ১৩৩ জন জিপিএ ৫সহ কুমিল্লা বোর্ডে ১৫তম স্থান অর্জন। ষ    ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ৩৮ জন জিপিএ ৫সহ কুমিল্লা বোর্ডে ১৪তম স্থান অর্জন। ষ    ২০১১ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ৩৮ জন জিপিএ ৫সহ কুমিল্লা বোর্ডে ৭ম স্থান ও ২২ জন বৃত্তি পায়। ষ    স্কাউট শিক্ষক আব্দুল মতিন ভূঁইয়া জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ স্কাউট হিসেবে বেশ কয়েকবার নির্বাচিত হন। ষ    ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ১৫৪ জন জিপিএ ৫সহ কুমিল্লা বোর্ডে ১১তম স্থান অর্জন। ষ    ২০১২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ৫২ জন জিপিএ ৫সহ কুমিল্লা বোর্ডে ৯ম স্থান অর্জন। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক জগতেও এ প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে নেই। প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। সামাজিক কার্যক্রমেও বিভিন্ন অবদান আছে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের। যেমন বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, অসুস্থ ছাত্র-ছাত্রী এবং বিভিন্ন গরিব লোকদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ইত্যাদি। অধ্যক্ষের কথা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু লেখা-পড়ার পরিবেশ খুব কম প্রতিষ্ঠানেই আছে। শ্রেণীকক্ষ পর্যাপ্ত আছে কিন্তু উপযুক্ত পাঠদান নেই। ছাত্র-শিক্ষক আছে কিন্তু পরস্পর সু-সম্পর্কের যথেষ্ট অভাব বিদ্যমান। কোথাও কোথাও লেখাপড়া থাকলেও নৈতিকতা উন্নয়নের কোনো ব্যবস্থা নেই। মহান আল্লাহর রহমতে এ সকল ঘাটতি পূরণ করে দেশের যোগ্য, দক্ষ ও সুনাগরিক তৈরির লক্ষ্যে ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের আত্মপ্রকাশ। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক, কর্মচারী, গভর্নিং বডি ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আমরা আমাদের এ লক্ষ্য  বাস্তবায়নে এগিছে চলেছি। দেশবাসীর নিকট দোয়া চাই, সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চাই, সর্বোপরি মহান আল্লাহর রহমত ও নছরত পেয়ে দেশ গড়ার উপযুক্ত ভূমিকা রাখতে চাই। মহান আল্লাহ আমাদের শিক্ষক, গভর্নিং বডি এবং ট্রাস্টের সদস্যদের সকল প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমিন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির