post

ইসলামী আন্দোলন মৌলিক ধারণা, সঠিক কর্মপন্থা ও ভ্রান্তির অপনোদন

মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন

০১ মে ২০২০

ইসলামী আন্দোলনের মৌলিক ধারণা ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে পরিপূর্ণ বুঝ ও ধারণা না থাকার কারণে আস্থা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে সঠিক পন্থায় এ আন্দোলন করা এবং এই পথে টিকে থাকা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই কাজের প্রতি প্রেরণা ও একাগ্রতা পেতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের সঠিক ধারণা, কর্মপন্থা ও সফলতার প্রশ্নে ভুল বোঝাবুঝি দূর হওয়া দরকার। এ লেখায় কুরআন হাদিসের আলোকে সে চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের উচিত বেশি বেশি কুরআন হাদিস অধ্যয়নের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের পথে এগিয়ে যাওয়া।

আল্লাহর মনোনীত একমাত্র সত্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম ‘আল্লাহর কাছে ইসলামই একমাত্র দ্বীন। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তারা ঐ দ্বীনকে বাদ দিয়ে যেসব পথ বের করেছে তার কারণ এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, তাদের কাছে ইলম আসার পরও একে অপরের সাথে বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যেই এরূপ করেছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ ও হেদায়াত মেনে চলতে অস্বীকার করে তার কাছ থেকে হিসাব নিতে আল্লাহর মোটেই দেরি লাগে না।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯) ‘এখন কি এরা আল্লাহর আনুগত্যের পথ (আল্লাহর দ্বীন) ত্যাগ করে অন্য কোনো পথের সন্ধান করছে? অথচ আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহর হুকুমের অনুগত (মুসলিম) এবং তাঁরই দিকে সবাইকে ফিরে যেতে হবে। হে নবী! বলো, আমরা আল্লাহকে মানি, আমাদের ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকে মানি, ইবরাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব ও ইয়াকুবের সন্তানদের ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকেও মানি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে যে হিদায়াত দান করা হয় তার ওপরও ঈমান রাখি। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আল্লাহর হুকুমের প্রতি আত্মসমর্পণকারী।’ সূরা আলে ইমরান : ৮৩-৮৪) ‘এ আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় তার সে পদ্ধতি কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত।’ (সূরা বাকারা : ৮৫) ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না, কেননা সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সূরা বাকারা : ২০৮) ‘তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে ও জাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন।’ (সূরা বাইয়্যেনাহ : ৫)

ইসলাম কায়েম ও বিজয়ী হওয়ার জন্য এসেছে ‘তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহিম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মুশরিকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন।’ (সূরা শুরা : ১৩) ‘তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত এবং ‘দ্বীনে হক’ দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দ্বীনকে অন্য সকল দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন।’ (সূরা সফ : ৯) ‘আল্লাহই তো সে মহান সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন তাকে সমস্ত দ্বীনের ওপর বিজয়ী করে দেন। আর এ বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।’ (সূরা ফাতহ : ২৮) ‘আল্লাহই তার রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন।’ (সূরা তাওবা : ৩৩)

দ্বীন কায়েমের জন্য সংগ্রাম করতে হয় ‘তোমাদের কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের কোন বন্ধু, অভিভাবক ও সাহায্যকারী তৈরি করে দাও। যারা ঈমানের পথ অবলম্বন করেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কুফরির পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। কাজেই শয়তানের সহযোগীদের সাথে লড়ো এবং নিশ্চিত জেনে রাখো, শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্তই দুর্বল।’ (সূরা নিসা : ৭৫-৭৬) ‘হে ঈমান আনয়নকারীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দেবো যা তোমাদেরকে কঠিন আজাব থেকে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনো এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো এটাই তোমাদের জন্য অতীব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জানো।’ (সূরা সফ : ১০-১১)

আল্লাহর পথে লড়তে বাছাই করেছেন আমাদের ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেমন জিহাদ করলে তার হক আদায় হয়। তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সঙ্কীর্ণতা আরোপ করেননি।’ (সূরা হজ : ৭৮)

দ্বীন কায়েমকে অগ্রাধিকার দেয়া ‘হে নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাকো এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ করো- এসব যদি আল্লাহ ও তার রাসূল এবং তার পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশি প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফয়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আল্লাহ ফাসেকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না।’ (সূরা তাওবা : ২৪) ইসলামে দ্বীনদারি ও দুনিয়াবি আলাদা নয়। আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) দেখানো পন্থায় দুনিয়ার কাজ আঞ্জাম দিলে সেটাই দ্বীনদারিতে পরিণত হয়। তাই সকল দুনিয়াবি কাজকে দ্বীন কায়েমের কাজের সাথে সম্পৃক্ত ও সামঞ্জস্য করতে হবে। দুনিয়াবি কাজ যদি দ্বীন কায়েমের কাজের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাহলে সেটা ছেড়ে দেয়ার নামই কোরবানি।

কিছু নেক কাজ জিহাদের সমতুল্য হতে পারে না ‘তোমরা কি হাজীদেরকে পানি পান করানো ও মসজিদে হারামের খিদমত করাকে ঐ লোকের কাজের সমান মনে করে নিয়েছো, যে ঈমান এনেছে আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর এবং যে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে। আল্লাহর কাছে তো এরা দু’জন সমান নয়, আর আল্লাহ জালিম কওমকে হেদায়াত করেন না।’ (সূরা তাওবা : ১৯) ‘তোমাদের মুখ পূর্ব দিকে বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোনো পুণ্য নেই। বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ, কিয়ামতের দিন, ফেরেশতা, আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মানুষ মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে। আর নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দান করবে। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং বিপদে-অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকি।’ (সূরা বাকারা : ১৭৭)

আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদার কাজ ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ ‘আল্লাহর কাছে তো তারাই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, যারা ঈমান এনেছে এবং তার পথে ঘর-বাড়ি ছেড়েছে ও ধন-প্রাণ সমর্পণ করে জিহাদ করেছে। তারাই সফলকাম। তাদের রব তাদেরকে নিজের রহমত, সন্তোষ ও এমন জান্নাতের সুখবর দেন, যেখানে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখের সামগ্রী।’ (সূরা তাওবা : ২০-২১)

জান ও মাল আল্লাহর মর্জি মতো কাজে লাগানো ‘প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইনজিল ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশি ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ (সূরা তাওবা : ১১১)

আল্লাহর পথে লড়াই করার যোগ্যতা ‘আল্লাহর পথে তাদের লড়াই করা উচিত যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিকিয়ে দেয়। তারপর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে লড়বে এবং মারা যাবে অথবা বিজয়ী হবে তাকে নিশ্চয়ই আমি মহাপুরস্কার দান করবো।’ (সূরা নিসা : ৭৪)

দ্বীনের কাজ একা করা যায় না ‘আল্লাহ সেই সব লোকদের ভালোবাসেন যারা তাঁর পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে যেন তারা সীসা গলিয়ে ঢালাই করা এক মজবুত দেয়াল।’ (সূরা সফ : ৪) ‘তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো। তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানিতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো। তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে। আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন। হয়তো এই নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে। তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকি ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে। তোমরা যেন তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৩-১০৫)

জামায়াতবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ হযরত হারিসুল আশয়ারী (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন- ১. জামায়াতবদ্ধ হবে ২. নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে ৩. তার আদেশ মেনে চলবে ৪. আল্লাহর পথে হিজরত করবে ৫. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। আর তোমাদের মধ্য হতে যে সংগঠন হতে বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল, সে তার গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল তবে যদি ফিরে আসে তা ভিন্ন কথা। আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে আহ্বান জানায় সে জাহান্নামি। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে যদি রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এরপরও? রাসূল (সা.) বললেন, যদি রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে এরপরও জাহান্নামি হবে। (মুসনাদে আহমাদ: হাদিসুল হারিসিল আশয়ারী আনিন নাবিয়্যি ১৬৫৪২) আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ) পরিচালিত ইসলামী আন্দোলনের গতিধারা অনুসরণ করেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাফেলার মূল জনশক্তি হলো সদস্যগণ। দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য অর্জনই যাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

বাইয়াত হলো জামায়াতি বন্ধনের সূত্র দ্বীন কায়েমের এই ঐতিহাসিক জিম্মাদারি পালন করতে গিয়ে শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি সত্যপন্থী জামায়াত গঠন করেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাহাবিদেরকে তিনি এমনভাবে তৈরি করেছিলেন যাদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল। সাহাবিরা দ্বীন কায়েমের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নবী (সা.)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। এই বাইয়াতের কথা কুরআন ও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। দ্বীন কায়েমের জামায়াতের অধীনে বাইয়াতই হচ্ছে সহিহ বাইয়াত। ‘হে নবী! যারা তোমার হাতে বাইয়াত করছিল প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিল। তাদের হাতের ওপর ছিল আল্লাহর হাত। যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার অশুভ পরিণাম তার নিজের ওপরেই বর্তাবে। আর যে আল্লাহর সাথে কৃত এ প্রতিশ্রুতি পালন করবে, আল্লাহ অচিরেই তাকে বড় পুরস্কার দান করবেন।’ (সূরা ফাতহ : ১০) ‘আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে তোমরা কাছে বাইয়াত করছিল। তিনি তাদের মনের অবস্থা জানতেন। তাই তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল করেছেন, পুরস্কারস্বরূপ তাদেরকে আশু বিজয় দান করেছেন।’ (সূরা ফাতহ : ১৮) ‘বলো, আমার নামাজ, আমার ইবাদতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য।’ (সূরা আনআম : ১৬২) বাইয়াতের যে অর্থ সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রুকনিয়াত দ্বারা সে অর্থই বোঝায়। অর্থাৎ জেনে বুঝে জান ও মালের কোরবানি। আমির ও রুকনদের মধ্যে বাইয়াতের ব্যাপারে যাতে আনুগত্যের সীমা সামান্যও লঙ্ঘন না হয় সে উদ্দেশ্যে একটি গঠনতন্ত্র দ্বারা গোটা সংগঠন পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। আমিরকে মজলিশে শূরার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। আবার ভিন্নমত ব্যক্ত করা এমনকি বাইয়াত প্রত্যাহারের সুযোগ আছে যদি এর চেয়ে উন্নতমানের দ্বীনি জামায়াতের সন্ধান পাওয়া যায়। ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, সংগঠন, ইকামতে দ্বীন, বাইয়াত এগুলো মূলত একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

দাওয়াত ইলাল্লাহ ও শাহাদাত আলান্নাস মানুষ হবে একমাত্র আল্লাহর দাস। সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীর বুক থেকে অশান্তি, বিপর্যয়, পাপ ও অন্যায়ের মূলোৎপাটন করা দ্বীন ইসলামের মূল লক্ষ্য। এক আল্লাহর গোলামির মধ্যেই রয়েছে মানবসমাজের যাবতীয় সমস্যার সমাধান। আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সময়ে গোটা দেশ ও জাতি ছিল অজ্ঞতা, নৈতিক অধঃপতন, দারিদ্র্য, দীনতা, ব্যভিচার ও পারস্পরিক কলহ-বিবাদে চরমভাবে নিমজ্জিত। অর্থনৈতিক জুলুম ছিল মারাত্মক। রোম ও পারস্যের সা¤্রাজ্যবাদী চরিত্র বিপর্যস্ত করে রেখেছিল আরব বিশ্বকে। এতদ হাজারো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর রাসূল (সা.) শুরুতে অন্য সমস্যার প্রতি মনোনিবেশ না করে শুধু মহান আল্লাহর দাসত্ব মেনে নেয়ার প্রতি আহ্বান করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য সমস্যার সমাধানও আল্লাহর রাসূল (সা.) পর্যায়ক্রমে করেছিলেন। ‘সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান। হে নবী! সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয়। তুমি অসৎ কাজকে সেই নেকি দ্বারা নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভালো। তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গিয়েছে। ধৈর্যশীল ছাড়া এ গুণ আর কারো ভাগ্যে জোটে না এবং অতি ভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা আর কেউ লাভ করতে পারে না।’ (সূরা হামিম আস সাজদা : ৩৩-৩৬) ‘আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রাসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী।’ (সূরা বাকারা : ১৪৩)

নেতা ছিলেন আদর্শের মডেল ‘নিঃসন্দেহে তুমি (মুহাম্মদ সা.) নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন।’ (সূরা কলম : ৪) ‘আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে ছিল একটি উত্তম আদর্শ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিনের আকাক্সক্ষী এবং বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে।’ (সূরা আহযাব : ২১) “হে নবী! লোকদের বলে দাও, ‘যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’ তাদেরকে বলো, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো।’’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১) আল্লাহর রাসূল (সা.) তার নিজের আগমন সম্পর্কে বলেন, ‘আমাকে সচ্চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের নিমিত্তেই প্রেরণ করা হয়েছে।’ (জামেউল আহাদিস-৬৭২৯) আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে উন্নত নৈতিকতার বিকাশ সাহাবাদের জিন্দেগিতে ঘটেছে। যার বর্ণনা খোদ আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন সূরা মুমিনের প্রথম দশ আয়াত এবং সূরা ফুরকানের শেষ রুকুতে। আল্লাহর রাসূলের হাতে গড়া সাহাবিদের ব্যাপারে ইসলামের কট্টর দুশমনদের বক্তব্য ছিল ‘তারা ছিল রাতের দরবেশ আর দিনে অশ্বারোহী বীরযোদ্ধা, কর্মচঞ্চল সৈনিক। তারা কাউকে ধোঁকা দেয় না, তাদেরকেও কেউ ধোঁকা দিতে পারে না।’ ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় নিখাদ প্রমাণিত হওয়া ‘লোকেরা কি মনে করে রেখেছে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ কেবলমাত্র একথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক।’ (সূরা আনকাবুত : ১-৩) ‘আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানি হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোন বিপদ আসে বলে, ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে’ তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও। তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরনের লোকরাই হয় সত্যানুসারী।’ (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৭) ‘অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি যাঁর হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের কর্তৃত্ব। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতা রাখেন। কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।’ (সূরা মূলক : ১-২) ‘আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া কখনো কোনো মুসিবত আসে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করে আল্লাহ তার দিলকে হিদায়াত দান করেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন।’ (সূরা তাগাবুন : ১১) ‘পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের ওপর যেসব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি। এমনটি করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ কাজ।’ (সূরা হাদীদ : ২২) ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যেও নবী ও তার সঙ্গীরা সংগ্রাম করেছেন, ঘাবড়ে যাননি। বরং স্বয়ং নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘কসম সেই সত্তার যার হাতে মুষ্টিবদ্ধ আমার প্রাণ। আমার বড় সাধ আল্লাহর পথে নিহত হই, আবার জীবন লাভ করি। আবার নিহত হই, আবার জীবিত হই। আবার নিহত হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই।’ (বুখারি) জুলুম নির্যাতনকে তোয়াক্কা না করে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর নেতৃত্বে সাহাবিরা মার খেয়ে সংগ্রাম করে গেছেন। জিহাদের ডাক পেলে সাহাবায়ে কেরাম বাসররাতকেও উপেক্ষা করে জিহাদের ময়দানে ছুটেছেন। হযরত হানজালা (রা) ওহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি স্ত্রীর কাছে উপগত হওয়ায় নাপাক ছিলেন। ওই অবস্থাতেই যুদ্ধের ডাক শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের পর ফেরেশতারা তাকে গোসল দেন। হযরত আবদুল্লাহ (রা) ওহুদ যুদ্ধের আগের রাতে স্বপ্নে দেখেছিলেন প্রথম শহীদ হবেন। আল্লাহর ইচ্ছায় তার স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল। তার ছেলে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহকে আল্লাহর রাসূল (সা.) সুসংবাদ দিয়ে জানান, আবদুল্লাহর শাহাদাতে মহান আল্লাহ এতটাই খুশি হয়েছেন যে তার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। আবদুল্লাহর কাছে মহান আল্লাহ জানতে চেয়েছেন, তোমাকে কিভাবে পুরস্কৃত করতে পারি? জবাবে আবদুল্লাহ (রা) বলেছেন, ‘আমার আশা, আর একবার আমি দুনিয়াতে গিয়ে শহীদ হয়ে আসি।’ বীরযোদ্ধা খালিদ বিন ওয়ালিদ কোনো যুদ্ধে পরাজয় বরণ করেননি। শাহাদাত নসিব হয়নি বলে তিনি মৃত্যুর সময় কেঁদেছিলেন। এমনই ছিল সাহাবিদের ত্যাগ-কোরবানি। কিছু ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেন। মুমিন জীবনে পরীক্ষা অতি স্বাভাবিক বিষয়। মুমিনের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পরীক্ষা নেন, মুসিবতে ফেলানোর জন্য নয়।

আদর্শের স্বাভাবিক ও কার্যকর বিপ্লব মদিনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র ছিল সাহাবিদের নিয়ে আল্লাহর রাসূলের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার স্বাভাবিক পরিণতি। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এমনই। হঠাৎ করে আচমকা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না। আল্লাহর রাসূলের ইসলামী বিপ্লবে কেবল রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বরং মানুষের মন মানসিকতা এবং চিন্তাভাবনাও পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। এতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। চিন্তা পদ্ধতি বদলে যায়। জীবন যাপন পদ্ধতির পরিবর্তন হয়ে যায়। নৈতিক চরিত্রের জগতে আসে আমূল পরিবর্তন। স্বভাব ও অভ্যাস বদলে যায়। এ থেকে বোঝা যায় ইসলামী বিপ্লবের ব্যাপকতা অনেক প্রসারিত। তড়িঘড়ি অসম্পূর্ণ অর্জন ইসলামী বিপ্লবের জন্য যথেষ্ট নয়।* (ইসলামী বিপ্লবের পথ)

আল্লাহর রাসূলের ইসলামী বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ইসলামের চরমতম দুশমনরা ইসলামের পতাকাতলে শামিল হয়েছিল। খালিদ বিন ওয়ালিদ, আবু সুফিয়ান, হিন্দার মতো ব্যক্তিরা ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে যান। সামাজিক অনাচারে যারা নেতৃত্ব দিতেন তারা ব্যক্তি ও সমাজের নিরাপত্তা রক্ষাকারী হয়ে যায়। পারস্য সাম্রাজ্যের পতন হলে এর রাজমুকুট যার হস্তগত হয় তিনি অত্যন্ত গোপনে সেনাপতির নিকট জমা দেন যাতে তার আমানতদারির খ্যাতি ছড়িয়ে না পড়ে। ন্যায়পরায়ণতা ও সততার অজস্র দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। সেই সময়ে শাসকদের জীবনাচরণ ও শাসন ছিল ইতিহাসের একমাত্র স্বর্ণযুগ।

জিম্মাদারির অনুভূতি, সার্বক্ষণিক ধ্যান ও পেরেশানি ছিল রাসূলের জীবন ‘হে মুহাম্মাদ! যদি এরা এ শিক্ষার প্রতি ঈমান না আনে, তাহলে দুশ্চিন্তায় তুমি হয়তো এদের পেছনে নিজের প্রাণটি খোয়াবে। আসলে পৃথিবীতে এ যা কিছু সাজ সরঞ্জামই আছে এগুলো দিয়ে আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য বিধান করেছি তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্য থেকে কে ভালো কাজ করে।’ (সূরা কাহফ : ৬-৭)

নিষ্ক্রিয়তার কারণ ইসলামী আন্দোলন থেকে নিষ্ক্রিয়তার কারণ ২টি। দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়া আর পরীক্ষাকে ভয় করা। কখনো যুদ্ধবিগ্রহ থেকে হাত গুটিয়ে রেখে নামাজ কায়েম ও জাকাত আদায় করতে বলা হয়েছে, কখনো আবার যুদ্ধের হুকুম দেয়া হয়েছে। নিষ্ক্রিয়রা আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে সব অবস্থাতেই গড়িমসি করেছে।

‘তোমরা কি তাদেরকেও দেখেছো, যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখো এবং নামাজ কায়েম করো ও জাকাত দাও? এখন তাদেরকে যুদ্ধের হুকুম দেয়ায় তাদের একটি দলের অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা মানুষকে এমন ভয় করেছে যেমন আল্লাহকে ভয় করা উচিত অথবা তার চেয়েও বেশি। তারা বলছে, হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এই যুদ্ধের হুকুমনামা কেনো লিখে দিলে? আমাদের আরো কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন? তাদেরকে বলো, দুনিয়ার জীবন ও সম্পদ অতি সামান্য এবং একজন আল্লাহর ভয়ে ভীত মানুষের জন্য আখেরাতই উত্তম। আর তোমাদের ওপর একচুল পরিমাণও জুলুম করা হবে না।’ (সূরা নিসা : ৭৭) মুমিন হলে আল্লাহকেই ভয় করা উচিত ‘তোমরা কি লড়াই করবে না এমন লোকদের সাথে যারা নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এসেছে এবং যারা রাসূলকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার দুরভিসন্ধি করেছিল আর বাড়াবাড়ি সূচনা তারাই করেছিল? তোমরা কি তাদেরকে ভয় করো? যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো, তাহলে আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন। তাদের সাথে লড়াই করো, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দেবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করবেন, তাদের মোকাবিলায় তোমাদের সাহায্য করবেন এবং অনেক মুমিনের অন্তর শীতল করে দেবেন। আর তাদের অন্তরের জ্বালা জুড়িয়ে দেবেন এবং যাকে ইচ্ছা তওবা করার তাওফিকও দান করবেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং তিনি মহাজ্ঞানী। তোমরা কি এ কথা মনে করে রেখেছো যে তোমাদের এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্য থেকে কারা (তার পথে) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালো এবং আল্লাহ, রাসূল ও মুমিনদের ছাড়া কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করলো না? তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন।’ (সূরা তাওবা : ১৩-১৬) ‘তখন যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করেছিল এবং দুনিয়ার জীবনকে বেশি ভালো মনে করে বেছে নিয়েছিল, জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আর যে ব্যক্তি নিজের রবের সামনে এসে দাঁড়াবার ব্যাপারে ভীত ছিল এবং নফসকে খারাপ কামনা থেকে বিরত রেখেছিল তার ঠিকানা হবে জান্নাত।’ (সূরা নাযিয়াত : ৩৭-৪১)

ইসলামী নেতৃত্বের আদর্শ নেতা মুহাম্মদ (সা.) ‘আমি তোমাদের মধ্যে স্বয়ং তোমাদের থেকেই একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদেরকে আমার আয়াত পড়ে শোনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে সুসজ্জিত করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং এমন সব কথা তোমাদের শেখায়, যা তোমরা জানতে না।’ (সূরা বাকারা : ১৫১) ‘আসলে ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়, তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেয়। অথচ এর আগে এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহিতে লিপ্ত ছিল।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৬৪)

সকল নবীর কাজ ছিল দাওয়াত পৌঁছানো ‘আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও আমি মানুষদেরকেই রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে আমি ওহি পাঠাতাম। তোমরা যদি না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস করো।’ (সূরা আম্বিয়া : ৭) ‘তোমাদের কাছে আমার রবের বাণী পৌঁছে দিচ্ছি। আমি (নূহ) তোমাদের কল্যাণকামী। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি এমন সব কিছু জানি যা তোমার জানো না।’ (সূরা আরাফ : ৬২) ‘সে (হুদ) বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আমি নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত নই। বরং আমি রাব্বুল আলামিনের রাসূল। আমার রবের বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছাই এবং আমি তোমাদের এমন হিতাকাক্সক্ষী যার ওপর ভরসা করা যেতে পারে।’ (সূরা আরাফ : ৬৭-৬৮) ‘আর সালেহ এ কথা বলতে বলতে তাদের জনপদ থেকে বের হয়ে গেলো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার রবের বাণী আমি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি এবং আমি তোমাদের জন্য যথেষ্ট কল্যাণ কামনা করেছি। কিন্তু আমি কী করবো, তোমরা তো নিজেদের হিতাকাক্সক্ষীকে পছন্দই করো না।’ (সূরা আরাফ : ৭৯)

নবীগণ ছিলেন মানবতার মহান বন্ধু ও কল্যাণকামী ‘তাদেরকে আমি ইমাম বানিয়েছি, যারা আমার হুকুমে মানুষকে হেদায়াত করতেন। আর আমি তাদের প্রতি নেক কাজ করা, নামায কায়েম করা ও যাকাত দেয়ার জন্য ওহি পাঠিয়েছি। তারা আমারই ইবাদতকারী ছিল।’ (সূরা আম্বিয়া : ৭৩) ‘হে নবী! আমি আমি তো আপনাকে দুনিয়াবাসীর জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)

সহকর্মীদের সাথে নেতৃত্বের আচরণ চরিত্র ও কর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যোগ্য উত্তরসূরি তৈরি করতে মর্যাদার অনুভূতি সহকারে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন জরুরি। পর্যবেক্ষণ ও ইহতেসাবের মাধ্যমে যোগ্যতার বিকাশ সাধন করতে হবে। যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন এবং পরামর্শভিত্তিক কাজ করতে হবে। কোমলতা, সহজতা, ক্ষমা ও বিনয়ের গুণে গুণান্বিত হতে হবে।

নেতাকর্মীদের মধ্যে যে অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা আবশ্যক কথা ও কাজের মিল থাকা : ‘হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বলো যা নিজেরা করো না? আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো না।’ (সূরা সফ : ২-৩) চরিত্র ও মাধুর্য : খোদার পথে যারা কাজ করে তাদের উদার হৃদয় ও বিপুল হিম্মতের অধিকারী হতে হবে, সৃষ্টির প্রতি সহানুভূতিশীল ও মানবতার দরদি হতে হবে। তাদের হতে হবে ভদ্র ও কোমল স্বভাবসম্পন্ন, আত্মনির্ভরশীল ও কষ্টসহিষ্ণু, মিষ্টভাষী ও সদালাপী। তাদের দ্বারা কোন ক্ষতি হবে এমন কোনো ধারণাও যেন কেউ পোষণ করতে না পারে এবং তাদের নিকট থেকে কল্যাণ ও উপকার সবাই কামনা করবে। তারা নিজেদের প্রাপ্যের চাইতে কর্মের ওপর সন্তুষ্ট থাকবে এবং অন্যকে তার প্রাপ্যের চাইতে বেশি দিতে প্রস্তুত থাকবে। তারা মন্দের জবাব ভালো দিয়ে দেবে অথবা কমপক্ষে মন্দ দিয়ে দেবে না। তারা নিজেদের দোষ-ত্রুটি স্বীকার করবে এবং অন্যের গুণাবলির কদর করবে। তারা অন্যের দুর্বলতার প্রতি নজর না দেবার মতো বিরাট হৃদয়পটের অধিকারী হবে, অন্যের দোষ-ত্রুটি ও বাড়াবাড়ি মাফ করে দেবে এবং নিজের জন্যে কারোর ওপর প্রতিশোধ নেবে না। তারা অন্যের সেবা গ্রহণ করে নয় বরং অন্যকে সেবা করে আনন্দিত হবে। তারা নিজের স্বার্থে নয় বরং অন্যের ভালোর জন্য কাজ করবে। কোনো প্রকার প্রশংসার অপেক্ষা না করে এবং কোনো প্রকার নিন্দাবাদের তোয়াক্কা না করে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাবে। খোদা ছাড়া আর কারো পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি দেবে না। তাদেরকে বল প্রয়োগে দমন করা যাবে না। ধন-সম্পদের বিনিময়ে ক্রয়করা যাবে না কিন্তু সত্য ও ন্যায়ের সামনে তারা নির্দ্বিধায় ঝুঁকে পড়বে। তাদের শত্রুরাও তাদের ওপর এ বিশ্বাস রাখবে যে, কোন অবস্থায় তারা ভদ্রতা ও ন্যায়-নীতি বিরোধী কোনো কাজ করবে না। এ চারত্রিক গুণাবলি মানুষের মন জয় করে নেয়। এগুলো তলোয়ারের চাইতে ধারালো এবং হীরা, মণি-মুক্তার চাইতেও মূল্যবান। যে এহেন চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনকারী সে তার চারপাশের জনবসতির ওপর বিজয় লাভ করে। কোনো দল পূর্ণাঙ্গরূপে এ গুণাবলির অধিকারী হয়ে কোনো মহান উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্যে সুসংবদ্ধ প্রচেষ্টা চালালে দেশের পর দেশ তার করতলগত হতে থাকে এবং দুনিয়ার কোনো শক্তিই তাকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় না। ধৈর্য : -তাড়াহুড়ো না করা, নিজের প্রচেষ্টার ত্বরিত ফল লাভের জন্যে অস্থির না হওয়া এবং বিলম্ব দেখে হিম্মত হারিয়ে না বসা। - তিক্ত স্বভাব, দুর্বল মত ও সঙ্কল্পহীনতার রোগে আক্রান্ত না হওয়া। - বাধা বিপত্তির বিরোচিত মোকাবেলা করা এবং শান্ত চিত্তে লক্ষ্য অর্জনের পথে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট বরদাশত করা। - দুঃখ-বেদনা, ভরাক্রান্ত ও ক্রোধান্বিত না হওয়া এবং সহিষ্ণু হওয়া। - সকল প্রকার ভয়ভীতি ও লোভ-লালসার মোকাবেলায় সঠিক পথে অবিচল থাকা, শয়তানের উৎসাহ প্রদান ও নফসের খায়েশের বিপক্ষে নিজের কর্তব্য সম্পাদন করা। প্রজ্ঞা : - মানবিক মনস্তত্ত্ব অনুধাবন করে সেই অনুযায়ী মানুষের সাথে ব্যবহার করা, এবং মানুষের মনের ওপর নিজের দাওয়াতের প্রভাব বিস্তার করে তাকে লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত করার পদ্ধতি অবগত হওয়া। - নিজের কাজ ও তা সম্পাদন করার পদ্ধতি জানা এবং তার পথে আগত যাবতীয় বাধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা-বিরোধিতার মোকাবেলা করা। - পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখা, সময়-সুযোগ অনুধাবন করা এবং কোন সময়ে কোন ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে, এসব জানাও প্রজ্ঞারই পরিচয়। - দ্বীনের ব্যাপারে সূক্ষ্ম তত্ত্বজ্ঞান ও দুনিয়ার কাজ-কারবারের ক্ষেত্রে তীক্ষè দূরদৃষ্টি রাখা। (ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী)

ভ্রান্তির অপনোদন ইসলামী আন্দোলনের সফলতার ব্যাপারে ভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। সফলতার বিশ্লেষণ এবং আকাক্সক্ষার ক্ষেত্রে আল কুরআনের বক্তব্যের দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। ‘আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমনসব বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নিচে দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে। আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান করবেন। এটাই বড় সফলতা।’ (সূরা সফ : ১২) ‘কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ (সূরা তাওবা : ১১১) ‘আল্লাহর পথে তাদের লড়াই করা উচিত যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিকিয়ে দেয়। তারপর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে লড়বে এবং মারা যাবে অথবা বিজয়ী হবে তাকে নিশ্চয়ই আমি মহাপুরস্কার দান করবো।’ (সূরা নিসা : ৭৪)

আখেরাতের সফলতাই চূড়ান্ত সফলতা দুনিয়ায় সামগ্রিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবজাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য অর্জন করাই আমাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

দুনিয়াবি পরাজয়কে পাত্তা না দেয়া বহু নবী (আ) দ্বীন কায়েম করতে পারেননি। তারা কি ব্যর্থ? যেনতেন বা সাময়িক সাফল্যকে দ্বীনের বিজয় বুঝায় না। এটা একটা আমূল পরিবর্তনকে বুঝায়। দুনিয়াতেও সাফল্যের প্রতিশ্রুতি আল্লাহ দিয়েছেন ‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন। তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন যা আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা শুধু আমার বন্দেগি করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেন শরিক না করে। আর যারা এরপর কুফরি করবে তারাই ফাসেক।’ (সূরা নুর : ৫৫) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, তিনি খেলাফত দিবেন। কিন্তু কখন দিবেন এটা একান্ত তাঁর এখতিয়ার। এমনকি এই এখতিয়ার নবীকেও দেয়া হয়নি। এটা জোর করে আদায় করার বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন। প্রকৃত মুমিন হওয়া এবং সৎকাজ অব্যাহত রাখা আমাদের দায়িত্বের অংশ। ‘মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩৯) প্রকৃতপক্ষে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ আল্লাহ তায়ালার নিজের কাজ। এ কাজে আমরা মহান আল্লাহর সহযোগী মাত্র। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। ঠিক তেমনি, যখন ঈসা ইবনে মারয়াম হাওয়ারিদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর দিকে (আহবান করার ক্ষেত্রে) কে আমার সাহায্যকারী?’ তখন হাওয়ারিরা জবাব দিয়েছিল, ‘আমরা আছি আল্লাহর সাহায্যকারী’। সেই সময় বনি ইসরাইল জাতির একটি দল ঈমান আনয়ন করেছিল এবং আরেকটি দল অস্বীকার করেছিল। অতঃপর আমি ঈমান আনয়নকারীদেরকে তাদের শত্রুদিগের বিরুদ্ধে শক্তি যোগালাম এবং তারাই বিজয়ী হয়ে গেল।” (সূরা সফ : ১৪) ‘বলো, ‘আল্লাহর অনুগত হও এবং রাসূলের হুকুম মেনে চলো। কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে ভালোভাবে জেনে রাখো, রাসূলের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য রাসূল দায়ী এবং তোমাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য তোমরাই দায়ী। তাঁর আনুগত্য করলে তোমরা নিজেরাই সৎ পথ পেয়ে যাবে, অন্যথায় পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন হুকুম শুনিয়ে দেয়া ছাড়া রাসূলের আর কোনো দায়িত্ব নেই।’ (সূরা নূর : ৫৪) ‘তুমি তো তাকেই সতর্ক করতে পারো যে উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে, তাকে মাগফেরাত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদানের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা ইয়াসিন : ১১) ‘রাসূলরা বললো, আমাদের রব জানেন আমাদের অবশ্যই তোমাদের কাছে রাসূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে এবং সুস্পষ্টভাবে পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আমাদের ওপর আর কোনো দায়িত্ব নেই।’ (সূরা ইয়াসিন : ১৬-১৭) ‘কাজেই তুমি উপদেশ দাও, যদি উপদেশ উপকারী হয় যে ভয় করে সে উপদেশ গ্রহণ করে নেবে।’ (সূরা আলা : ৯-১০) মানুষ ছাড়াও অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ তাঁর বিধান কায়েম করেছেন। এমনকি মানুষের দেহের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। কিন্তু মানবসমাজের বিধানের ক্ষেত্রে মানুষকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাহায্যকারীর মর্যাদা দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব চূড়ান্ত চেষ্টা করা। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও সমাজসেবক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির