post

উম্মতকে বিভক্ত করা শয়তানের অন্যতম কৌশল

শায়খ ইয়াসির ক্বাদি ॥ অনুবাদ : আলী আহমাদ মাবরুর

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সহিহ মুসলিমের ৬৭৫২ নং হাদিসটি এমন। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বর্ণনা করেছেন, “যারা একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর ইবাদত করে তারা আবারও শয়তানের ইবাদত করবে, সেই আশা শয়তান ছেড়ে দিয়েছে। তবে শয়তান খুবই আশাবাদী যে সে খুবই কার্যকরভাবে উম্মতের মধ্যে বিভক্তি ও বিভাজনের বীজ বুনে দিতে পারবে।” পূর্ববর্তী নবীদের জাতিগুলো নবীদের অনুপস্থিতিতে গোমরাহিতে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তারা নানা রকমের দেব-দেবতা বানিয়ে তার উপাসনা করতে শুরু করেছিল। আল্লাহ নির্দেশিত হারামকে হালাল বানিয়ে ফেলেছিল। আর হালালকে হারামে রূপান্তরিত করেছিল। আখেরি নবীর উম্মত হিসেবে এই উম্মত সার্বিকভাবে আর শয়তানের উপাসনায় ফিরে যায়নি। কিন্তু তারা শয়তানের বিকল্প কৌশলের ফাঁদে বারবার পড়েছে এবং এখনো পড়ে যাচ্ছে। শয়তান পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে শিরক করানোর যে চেষ্টা করেছিল, তা বাদ দিয়ে এখন এই উম্মতের মধ্যে বিভক্তি আর বিভাজনকে সফলভাবে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন ছোটখাটো নানা ইস্যু নিয়ে উম্মতের লোকেরা বাহাস করে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসার ঘটার পর এই বিতর্ক ও বাহাস এখন ঘরে ঘরে প্রবেশ করেছে। এক মুসলিম অপর মুসলিমকে গোমরাহ, পথভ্রষ্ট এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে কাফের বলেও ফতওয়া দিচ্ছে। যারা ময়দানে দ্বীনের দাওয়াতি কাজ করছেন, তারা ইসলামের মৌলিক শিক্ষায় জনগণকে শিক্ষিত করার বদলে বরং একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত রয়েছেন।

ইমাম নববি (রহ) উপরোক্ত মুসলিম শরিফের হাদিসের আলোকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মূলধারার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম আর কখনোই মূর্তিপূজায় ফিরে যাবে না।’ বাস্তবতা তাই বলে, ইসলাম যেভাবে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে এবং যেভাবে স্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মের ক্ষেত্রেই হয়নি। ইসলামের আগমনের পর যেভাবে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এ ধর্মবিশ্বাসকে মেনে নিয়েছে এবং তারপর যেভাবে এর ওপর দৃঢ়তার সাথে অটুট থেকেছেন, মানব ইতিহাসে সে দৃষ্টান্ত বিরল। নিছক ধর্মীয় পরিমণ্ডলেই ইসলামের অবস্থান এখন সীমাবদ্ধ নয়। রাজনীতি, বিজ্ঞান, কূটনীতি, সমাজনীতি, গবেষণাসহ মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামকে নিয়ে কাজ হয়েছে এবং চলমান রয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

কাজাখস্তান থেকে আন্দালুস, ভারতবর্ষ থেকে শুরু করে আফ্রিকা অবধি যেখানেই ইসলাম গিয়েছে, ইসলাম টিকে থেকেছে। রাজনৈতিক কারণে কিছু জায়গা থেকে ইসলামকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু মুসলিমরা আবার আইয়ামে জাহেলিয়াতের মতো পৌত্তলিকতায় ডুবে গিয়েছে- এরকম কোনো নজির আমাদের সামনে নেই। মুসলিমরা জাহেলি নানা চর্চায় ডুবে যাচ্ছে, নানা ধরনের বিজাতীয় সংস্করণ ও উপকরণ তাদের মাঝে প্রবেশ করছে- এটি যেমন একটি বাস্তবতা। আবার অন্যভাবে পুনরায় তাদেরকে হেদায়েতের পথে নিয়ে আসার জন্য বিশ্বজুড়ে নানা মাধ্যমে ও প্লাটফর্মে যে কাজগুলো হচ্ছে, ইসলামকে যত আঙ্গিকে মানুষের সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে, জীবনঘনিষ্ঠ হিসেবে যেভাবে ইসলামকে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে তাও প্রশংসার দাবি রাখে।

এই বাস্তবতায়, শয়তান যেহেতু মূর্তি পূজা বা পৌত্তলিকতায় মুসলিমদেরকে শামিল করতে পারছেই না, তাই সে মুসলিমদেরকে বিভক্ত করতে, তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে ষোল আনা শক্তি বিনিয়োগ করেছে। বিভক্তি-বিভাজন মূলত শয়তানেরই একটি কৌশল। কারণ উম্মাহ যখন বিভক্ত হয়, তখন আমরা সবাই মিলে তার ভোগান্তি সহ্য করি। উম্মাহ যখন বিভাজিত হয়, তখন আমরা সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে যাই।

শয়তান প্রতিনিয়ত তার সেনাপতি, কমান্ডার আর সাধারণ শয়তান সেনাদেরকে নিয়ে বসে, বৈঠক করে এবং উম্মতকে পথভ্রষ্ট করার জন্য একের পর এক কৌশল করে বেড়ায়। রাসূল সা.-এর ওফাতের পরপরই শয়তান মুসলিমদের মধ্যে নানা ইস্যুতে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। সে সময় অনেকে জাকাত দিতে অস্বীকার করে। কেউ কেউ নিজেকে নবী বলেও দাবি করতে শুরু করে। কিন্তু শয়তানের এসব কূটকৌশল সফল হতে পারেনি, কারণ সাহাবিরা শেষ পর্যন্ত একত্রিত থেকে এসব অপকৌশলের বিরুদ্ধে ভূমিকা নিতে পেরেছিলেন।

পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে দেখা গেছে, শয়তান উম্মতের মধ্যে বিভক্তি ছড়ানোর জন্য কয়েকটি কৌশলে অগ্রসর হয়। প্রথমত, সে উম্মতের মধ্যে নানা শ্রেণি, গ্রুপ ও সম্প্রদায় তৈরি করে তাদের মাঝে সংঘাত সৃষ্টি করে দেয়। শয়তান মানুষের ভেতর কল্পিত কিছু ইস্যুর জন্ম দিয়ে তার ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টি করে। কিছু অপ্রয়োজনীয় ইস্যু আমাদের সামনে শয়তান আকর্ষণীয় এবং অতীব জরুরি হিসেবে হাজির করে, আর আমরাও সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই। অথচ, প্রকৃতপক্ষে এ ইস্যুগুলোর তেমন কোনো প্রয়োজনীয়তাই হয়তো নেই। 

বিগত অনেক বছর ধরেই মুসলমানেরা যে সংকটগুলো মোকাবেলা করছে তার মধ্যে অন্যতম সংকট হলো মুসলমানেরা ক্ষুদ্র ও কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে ফেলছে। এই সমস্যাটা জীবনের দু একটা ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করছে এমন নয়। আবার এমনও নয় যে, যারা ইসলামিক কাজে সম্পৃক্ত হয়ে আছে, শুধুমাত্র তারাই এই ভুলগুলো করছে। বরং বাস্তবতা হলো, অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ মুসলমানরাই প্রায়শই এই ধরনের ভুল করে বসছে। মুসলমানরা ছোটখাটো অসংখ্য বিষয় নিয়ে পেরেশান থাকে। আর সেই পেরেশানির কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়াবলিও তাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে।

শয়তান রাষ্ট্র, বর্ণ, গোত্রের ইস্যুকে ব্যবহার করে আমাদেরকে বিভক্ত করে। এসব ব্যবধান বা পার্থক্য আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ বৈচিত্র্যময় করে সব সৃষ্টি করেছেন। অথচ মানুষ এ বৈচিত্র্যের চেতনাকে ধারণ করতে না পেরে উল্টো নিজেদের মাঝে পার্থক্যের দেয়াল গড়ে নিয়েছে। আমরা কে কোথায় জন্মেছি, কোন দেশে বা কোন বংশে তাতে কিই বা আসে যায়? আমাদের বাবা-মা কোথাকার কিংবা কে কোন জাতীয়তার-তাতে আল্লাহর কিছুই আসবে যাবে না। আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন,

“হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত যে সর্বাধিক পরহেজগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।” (সূরা হুজুরাত : ১৩)

অথচ আমরা মানুষেরা এগুলো নিয়েই ঝগড়া ফ্যাসাদ করে থাকি। নিজের দেশ বা নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবাসার মধ্যে কোনো দোষ নেই। কিন্তু দোষ হয় তখনই যখন আপনি নিজের সংস্কৃতি বা সত্তাকে ওপরে উঠানোর জন্য অন্য কারো সংস্কৃতিকে হেয় করার চেষ্টা করেন। আপনি নিজের দেশের ভাষা, খাবার, পোশাক নিয়ে স্বস্তিতে থাকতেই পারেন, তবে তা করতে গিয়ে অপরের নিজস্ব বিষয়াবলিকে অপমান করতে পারেন না। নিজেকে এবং নিজের অবস্থানকে শ্রেষ্ঠতর মনে করার মানসিকতা সঠিক নয়।

শয়তান আমাদেরকে দিয়ে আরেকটি খারাপ কাজ করায়। শয়তানের পাল্লায় পড়েই আমরা জেনারেলাইজ করি। ধরুন, বলে বসলাম- অমুক লাইনের সবাই খারাপ। অমুক দেশের বা অমুক অঞ্চলের মানুষ ভালো না। এ টাইপের জেনারেলাইজেশন করা সঠিক নয়। সব জায়গাতেই ভালো মন্দ আছে। কিন্তু ঢালাওভাবে কাউকে নেতিবাচকভাবে চিত্রায়ণ করা উচিত নয়। অথচ আমরা শয়তানের পাল্লায় পড়ে হরহামেশাই এমনটা করে থাকি। রাসূল সা. বিদায় হজের ভাষণে গোত্রপ্রথার অবসান ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আরবের ওপর অনারবের এবং অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্বকে খারিজ করে দিয়েছিলেন। আমরা যেন সে শিক্ষার কথা ভুলে না যাই।

শয়তান তার প্রথম কৌশলে সফল না হয় অর্থাৎ যদি গোত্রীয় বা সামষ্টিক স্তরে বিভক্তি সৃষ্টি করতে না পারে তাহলে সে ব্যক্তি পর্যায়ে তার অপচেষ্টা শুরু করে। একজন ভাই যেন তার ভাইয়ের সাথে কথা না বলে, আত্মীয়দের মাঝে যেন অসন্তোষ জমে থাকে, পরস্পরের মধ্যে যেন হিংসা লেগে থাকে, কেউ যেন কারো ভালো দেখতে না পারে- শয়তান এমন পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করে। আপনার সাথে যদি কারো আগে সম্পর্ক ভালো থেকে থাকে আর এখন যদি কোনো দূরত্ব অনুভব করেন- তাহলে বুঝবেন শয়তান আপনাদের মাঝে প্রবলভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

গিবত চর্চা করা, পরনিন্দা করা, গুজব ছড়ানো- এগুলো সব শয়তানি কৌশল। যখন দেখবেন, কেউ এসে আপনার কাছে অপরের নামে নিন্দা করছে, আপনার বিরুদ্ধে অপরকে কথা বলতে উসকানি দিচ্ছে- তখনই বুঝে যাবেন যে, সেখানে শয়তান সক্রিয় হয়ে পড়েছে। এ কারণে যিনি গিবত করেন আর যিনি তা ছড়িয়ে দেন, উভয়েই সমান অপরাধী। কারণ এসব কাজের ফলে সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যায়। হজরত ইউসুফ (আ)-এর কথা ভাবুন। তার ভাইয়েরাই তার বিরুদ্ধে যাবতীয় চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করলো। কিন্তু সব কিছুর শেষে অনেক বছর পর আল্লাহ যখন গোটা পরিবারকে একত্রিত করলেন, তখন কিন্তু হজরত ইউসুফ (আ) একটিবারের জন্য তার ভাইদেরকে দায়ী করেননি। বরং তিনি শয়তানকে দায়ী করে বলেছিলেন,

“শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি করে দেয়। আর পরিশেষে, আমার পালনকর্তা যা চান, কৌশলে সম্পন্ন করেন।” (সূরা ইউসুফ : ১০০)

শয়তান সবচেয়ে খারাপ যে বিভক্তিটি সৃষ্টি করে তা করে তাহলো স্বামী স্ত্রীর মধ্যে। সহিহ মুসলিমের ২৮১৩ নং হাদিস থেকে জানা যায়, শয়তান সম্রাট ইবলিস প্রতিদিন তার সেনাদেরকে নিয়ে সম্মেলন করে এবং সেদিন কে কী খারাপ কাজ করে জানতে চায়। যে কাজেরই প্রতিবেদন তার সামনে দেয়া হয় সে তাকেই তুচ্ছ জ্ঞান করে। অবশেষে যখন কোনো শয়তান সেনা তাকে জানায় যে, আজ আমি ততক্ষণ পর্যন্ত একটি দম্পতিকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে গিয়েছি যতক্ষণ না তাদের মধ্যে তালাক হয়ে যায়। এ কথা শুনে শয়তান হাসে আর সে সেনাকে জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি আজ কাজের কাজ করেছো।”

শয়তান যেভাবে সম্প্রদায় ও সামগ্রিক কাঠামোতে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরায়- আমাদেরকে সে বিষয়ে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সাহায্য করুন। আমিন।

শয়তানের এসব কৌশলকে প্রতিহত করার ৩টি উপায় আছে। প্রথমত আমরা যা বলি, তার বিষয়ে সংযত হতে হবে। আমাদের জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর একইসঙ্গে আমরা যা শুনি, তার বিষয়েও আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে। একটা কথা শুনলেই তাতে রিঅ্যাক্ট করা যাবে না। শুধুমাত্র কথা শুনেই, যাচাই বাছাই না করে কাউকে খারাপ বলা যাবে না। আল্লাহ বলেন,

“যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।” (সূরা যুমার : ১৮)

আল্লাহ আরো বলেন,

“আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন যা উত্তম এমন কথাই বলে। শয়তান তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধায়। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা বনী ইসরাইল : ৫৩)

শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে হলে তাই জিহবা ও কানের বিষয়ে সতর্ক না হওয়ার সুযোগ নেই।

দ্বিতীয়ত, আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে যাতে আমাদের অন্তর বিশুদ্ধ হয়। আমাদের অন্তর যেন গিবত, হিংসা ও পারস্পরিক ঘৃণা থেকে মুক্ত হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার পবিত্র মনের অধিকারী মানুষগুলোর প্রশংসা করেছেন।

আর তৃতীয়ত খারাপের উত্তর ভালো দিয়েই দিতে হবে। আপনি যদি দেখেন কোথাও খারাপ কোনো বিষয়ে চর্চা হচ্ছে, তাহলে সে স্থান ত্যাগ করুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন এমন কোনো বিষয় নিয়ে বাহাস দেখবেন যা ইসলাম অনুমোদন করে না, তখন নিজে তাতে যুক্ত হবেন না, বরং সেখান থেকে বেরিয়ে আসুন। অন্যদেরকে এ অভ্যাস ত্যাগ করতে উৎসাহিত করুন। যদি কেউ আপনার বিরুদ্ধে খারাপ কোনো প্রচারণা চালায় তাহলেও তার বিষয়ে উত্তম মন্তব্য করুন। আপনি আবার পাল্টা নেতিবাচক মন্তব্য করে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবেন না। এরকম করলে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি যেমন অর্জন করতে পারবেন ঠিক তেমনি আপনার ঘোর শত্রুর সাথেও আপনার মহব্বত সৃষ্টি হবে।

রাসূল সা.-এর একটি হাদিস আছে যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ্ সেই সব মানুষকে বেশি ভালোবাসেন যারা মানুষের কল্যাণে, মানুষের উপকারে নিয়োজিত থাকে। অপরদিকে, আল্লাহ্ যে কাজগুলোকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন তার মধ্যে অন্যতম কাজ এই যে, একজন বান্দা অপর ভাই বা বোনের অন্তরে আনন্দ ও স্বস্তির আবহ তৈরি করে দেবে।’ (তারিখ আল-ইয়াকুবি, ২য় খণ্ড, আল-মু’জাম আল-আওসাত, শায়খ আলবানী)

উপরোক্ত হাদিসের আলোকে বলা যায়, আল্লাহ্র প্রিয় বান্দা তিনি যিনি কল্যাণকর কাজে ব্যস্ত থাকেন। তিনি সবসময় মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, মানুষকে ইতিবাচকভাবে ধারণ করেন, কাউকে হেয় করেন না। আর সবচেয়ে হতভাগা ব্যক্তি তিনি যিনি তার সময়গুলো অপ্রয়োজনীয় ও অহেতুক কার্যকলাপে ব্যয় করেন। তিনি সবসময় মানুষের দুর্নাম, পরচর্চা ও পরনিন্দায় ব্যস্ত থাকেন। নানাভাবে মানুষকে হেয় করেন, মর্যাদার হানি করেন। সবসময় অন্যের নেতিবাচক ও রসালো কাহিনী জানার জন্য চেষ্টা করেন।


এক্ষেত্রে, নিজেদের হেফাজত করার জন্য আমরা আরো যে কৌশলগুলো অবলম্বন করতে পারি তাহলো-

১. জীবনকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা;

২. চিন্তায় গভীরতা আনার জন্য কুরআন, হাদিস, সিরাতগ্রন্থ এবং ইসলামিক সাহিত্য পাঠ;

৩. বেশি বেশি তাওবা ও জিকির করা;

৪. নিজেদের ভুলগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করা এবং সেই আলোকে উত্তম হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া;

৫. আশপাশের অসহায় মানুষগুলোর প্রতি দায়িত্বপালন করা;

৬. পেশাগত নৈতিকতা বৃদ্ধির চেষ্টা কর; সবাইকে সবার জায়গা থেকে সৎ হওয়ার জন্য মোটিভেশন চালানো।

আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরকে বিশুদ্ধ করেন, আমাদের জিহবাকে সংযত রাখেন, আমাদের কানকে নিয়ন্ত্রণ করার তাওফিক দিন। আমরা যেন ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব সর্বত্র প্রচার করতে পারি, আমরা যেন নিজেদের জীবনে ইসলামের শিক্ষাকে বাস্তবায়ন ও ধারণ করতে পারি। আমিন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অনুবাদক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির