post

এশিয়ার সমুদ্রসীমায় মার্কিন নৌ

শক্তি

০৭ আগস্ট ২০১২
আলফাজ আনাম [caption id="attachment_1046" align="alignleft" width="372"] আন্দামানে
মার্কিন রণতরী[/caption] অর্থনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় এশিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। আঞ্চলিক শক্তি থেকে পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। চীনের বিপরীতে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপকভিত্তিক সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠলেও এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বিশেষ করে নৌশক্তির উপস্থিতি ভারত তার কর্তৃত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। ইতোমধ্যেই জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে সামনে রেখে সম্প্রতি এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে যুত্তরাষ্ট্র। একই সাথে ছোট দেশগুলোর সাথে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়ানোর দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এশিয়ায় বাড়ছে রণতরী সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেটা ঘোষণা দেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র নৌশক্তি আরো জোরদার করবে। ২০২০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের মোট যুদ্ধজাহাজের ৬০ শতাংশই এ অঞ্চলে মোতায়েন করা হবে। সিঙ্গাপুরে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। সম্মেলনে ৩০ টি দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এশিয়া বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে উল্লেখ করে প্যানেটা বলেন, যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সামরিক অংশীদারির আওতা বাড়ানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভবিষ্যতের জন্য এলাকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেখানে জোরালো প্রভাব নিশ্চিত করতে ‘সুচিন্তিত ও সুদৃঢ়’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদিও তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলগত পরিবর্তনের উদ্দেশ্য চীনকে প্রতিহত করা নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় চীন ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের আশঙ্কা, দক্ষিণ চীন সাগরসহ এ অঞ্চলে চীনের নৌশক্তি বাড়ানোর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নৌশক্তি বাড়াচ্ছে। প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় সমানসংখ্যক মার্কিন নৌবহর মোতায়েন রয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে ওই দুই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ শতাংশ করা হবে। এ ছাড়া ডুবোজাহাজ ও নৌযুদ্ধের বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন করা হবে যুদ্ধবিমানবাহী ছয়টি রণতরি। মোট ১১টি জঙ্গিবিমানবাহী রণতরির ছয়টি এখন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। এর মধ্যে ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ চলতি বছর নৌবহর থেকে বাদ পড়লে সেই সংখ্যা পাঁচটিতে নেমে আসবে। তবে ২০১৫ সালে ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড নামে নতুন একটি রণতরী সেখানে পাঠানো হবে। পেন্টাগন বলছে, বাজেটে কাটছাঁটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরের আকার আগামী কয়েক বছরে ছোট করার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা যেকোনো মূল্যে বাড়ানো হবে। চীন-ভারতের অবস্থান এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর এ ঘোষণার মধ্যে এ মাসেই (জুনÑ২০১২) চীন ও ভারত প্রথমবারের মতো নৌকার্যক্রম বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এক দিকে মার্কিন রণতরী বাড়ানোর ঘোষণা, অপর দিকে ভারতকে ঘিরে রেখে চীনের নৌ-উপস্থিতি বাড়ানোয় উদ্বিগ্ন ভারত। মিয়ানমারের সিতওয়া ও কোকো দ্বীপ, শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা, পাকিস্তানের গোয়াদরে চীন বন্দর নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশেও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে চীনের আগ্রহ রয়েছে। একই সাথে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বাড়ানোকেও ভারত ভালোভাবে নিতে পারছে না। ভারত বিষয়টিকে দেখছে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন উপস্থিতির কৌশল হিসেবে। গত বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার ২৪টি দেশের সাথে ১৭২টি নৌমহড়ায় অংশ নিয়েছে। [caption id="attachment_1047" align="alignleft" width="280"] প্রশান্ত মহাসাগরীয়
নৌ বহরের মহড়া[/caption] ভারতের গণমাধ্যমের প্রচারনা সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত স্বার্থের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে তাদের সপ্তম নৌবহরের ঘাঁটি গাড়তে চায়। কেননা দক্ষিণ চীন সাগরের ঘাঁটিগুলোতে চীনের শক্তি দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। ভারত মহাসাগরের দিয়াগো গার্সিয়ায় মার্কিন ঘাঁটি থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তাদের সার্বিক উপস্থিতি বাড়াতে চায়। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে সপ্তম নৌবহর মোতায়েন করা গেলে সেখান থেকে এক দিকে যেমন চীনের ওপর নজরদারি করা যাবে, তেমনি আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সুবিধাজনক কৌশলগত অবস্থান হবে। ভারতীয় গণমাধ্যমের এ খবর নাকচ করে দিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কোনো ধরনের আলোচনাই হয়নি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও চট্টগ্রামে মার্কিন সপ্তম নৌবহর মোতায়েনের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সহযোগী টাইমস নাউ টেলিভিশনের প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহরের ঘাঁটি গাড়ার খবরটি ভিত্তিহীন হলেও ভারতীয় গণমাধ্যমে খবরটি পরিবেশনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে দুটি ফ্রিগেট কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। অপরদিকে বাংলাদেশের নৌবাহিনী আধুনিকায়ন ও শক্তিশালি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। এ মাসেই (জুনÑ২০১২) ওয়াশিংটনে বসছে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংলাপ। সেখানে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সপ্তম নৌ বহরের ঘাটি গড়ার খবর প্রকাশ করে মার্কিন বিরোধী জনমত তৈরির এক ধরনের প্রচেষ্টা রয়েছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সপ্তম নৌবহর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পক্ষে যোগ দেবে এমন প্রচারণা ছিলো। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন না দেয়ায় এ দেশের মানুষের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ ছিলো। সপ্তম নৌবহরকেও মানুষ ভীতির চোখে দেখে। সেই আবেগকে কাজে লাগাতে চেয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এখন সপ্তম নৌবহর আর নেই। এর নাম বদলে গেছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর। এশিয়ায় মার্কিন নৌশক্তি বাড়ানোর এ পরিকল্পনায় বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব যে অনেক বেড়ে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মার্কিন রণতরীর অবস্থান এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন নৌশক্তি বাড়ানোর ঘোষণার পর এগুলোর অবস্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এশিয়ায় মার্কিন রণতরী বা নৌঘাঁটিগুলোর উপস্থিতির চিত্র দেখলে আমরা বুঝতে পারব জালের মতো এশিয়াকে ঘিরে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি নৌবহর বিশ্বজুড়ে সমুদ্রসীমা নিয়ন্ত্রণ করছে : ১. পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য তৃতীয় নৌবহর। হেডকোয়ার্টার ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগো। ২. দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের জন্য চতুর্থ নৌবহর। হেড কোয়ার্টার ফ্লোরিডার মে পোর্ট। ৩. আরব সাগর ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য পঞ্চম নৌবহর। হেড কোয়ার্টার মানামা ও বাহরাইন। ৪. ভূমধ্যসাগর ও ইউরোপীয় অঞ্চলের জন্য ষষ্ঠ নৌবহর। হেড কোয়ার্টার গেতে, ইতালি। ৫. এশিয়া ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর যা সপ্তম নৌবহর নামে পরিচিত। হেড কোয়ার্টার ইয়োকোসুকা, জাপান। ৬. অ্যান্টি-সাবমেরিন যুদ্ধ বিষয়ে গঠন করা হয়েছে দশম নৌবহর। হেড কোয়ার্টার মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র। [caption id="attachment_1049" align="alignleft" width="456"] ইয়োকোসুকা নৌ ঘাঁটি[/caption] পঞ্চম নৌবহর পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন নজরদারি বাড়ানোর লক্ষ্যে বাহরাইনে অবস্থান করছে পঞ্চম নৌবহর। এর হেড কোয়ার্টার বাহরাইনের রাজধানী মানামায়। ১৯৭১ সালে দেশটিতে নৌঘাঁটি স্থাপন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ৫৮ কোটি ডলার ব্যয়ে এই নৌঘাঁটির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এই নৌবহর পারস্য উপসাগর, লোহিতসাগর, আরব সাগর এবং পূর্ব আফ্রিকা ও কেনিয়ায় মার্কিন সামরিক প্রভাব বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করে। আফ্রিকার জিবুতিতে যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে সেটিও এই নৌবহরের আওতাভুক্ত। ইরাক যুদ্ধে এই নৌবহর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম ও অপরাশেন নিউ ডন নামে ইরাক যুদ্ধে দু’টি সামরিক অভিযান চালানো হয় এই ঘাঁটি থেকে। বাহরাইন ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতে দু’টি নৌঘাঁটি রয়েছে। এর একটি ফুজাইরাহতে, অপরটি দুবাইয়ের পোর্ট জুবেল আলীতে। এ ছাড়া কাতারে রয়েছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। এই নৌবহর ও সামরিক ঘাঁটি থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক নজরদারি নিশ্চিত করা হয়। সপ্তম নৌবহর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মার্কিন নৌ-আধিপত্য বজায় রাখছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর বা সপ্তম নৌবহর। দক্ষিণ চীন সাগর, ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগরের ওপর নজর রাখে এই নৌবহর। জাপানের ইয়োকোসুকায় এই হেডকোয়ার্টার দক্ষিণ কোরিয়ারও কাছাকাছি। কোরিয়া যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও উপসাগরীয় যুদ্ধে এই নৌবহর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌবহর সপ্তম নৌবহর। ১০টি টাস্কফোর্সে ৫০ থেকে ৬০টি জাহাজ, ৩৫০টির মতো এয়ারক্রাফট, ৬০ হাজার নৌ ও মেরিন সৈন্য এই নৌবহরে দায়িত্ব পালন করে। এই নৌবহরের আওতায় এশিয়ার সমুদ্র অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ১৮টি জাহাজ স্থায়ীভাবে মোতায়েন রয়েছে। সপ্তম নৌবহরের আওতায় বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। গুয়াম পশ্চিম প্রশান্ত মহসাগরের দ্বীপ গুয়াম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোর একটি গুয়াম। ৫৪১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটির ৩৯ শতাংশ মার্কিন সামরিক স্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে মার্কিন নৌঘাঁটি ছাড়াও অ্যান্ডারসন বিমানঘাঁটি, অপরা পোতাশ্রয়, নেভাল কম্পিউটার ও টেলিকমিউনিকেশন স্টেশন এবং জয়েন্ট ফোর্সের হেড কোয়ার্টার রয়েছে। গুয়াম দ্বীপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্র ও আকাশ যুদ্ধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে। গুয়াম নৌঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ সাবমেরিন স্কোয়াড্রন-১৫ কমান্ডারের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়। মার্কিন সেনাবাহিনী প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর, সপ্তম নৌবহর ও পঞ্চম নৌবহরের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা ও যোগাযোগ রক্ষা করা হয় গুয়াম থেকে। গুয়ামের অ্যান্ডারসন বিমানঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমানগুলো বিমান হামলা করে থাকে। দিয়েগো গার্সিয়া ভারত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপ। সপ্তম নৌবহরের আওতায় এই দ্বীপটি ভারতের দক্ষিণ উপকূল থেকে ১২০০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে এবং আফ্রিকা উপকূল থেকে ১৮০০ নটিক্যাল পূর্বে। এ দ্বীপে নৌবহরের অনেক জাহাজ ও সাবমেরিন সহায়ক ঘাটি রয়েছে। এ ছাড়া সামরিক বিমানঘাঁটিও রয়েছে। একসময়ের ব্রিটিশশাসিত এই দ্বীপে ১৯৭১ সালে ঘাঁটি স্থাপনের কাজ শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ধাপে ধাপে বৃহৎ সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করা হয়। দ্বীপটিতে ১২ হাজার ফুট দীর্ঘ দু’টি রানওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে বোমারু বিমানগুলো নামতে পারে। এই বিমানঘাঁটি থেকে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধে বি-৫২ বোমারু বিমান ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে আবার এখানে ফিরে আসত। ২০০১ সালে আফগান ও ইরাক যুদ্ধেও মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো দিয়েগো গার্সিয়ার বিমানঘাঁটি ব্যবহার করেছে। গভীর সমুদ্রে মার্কিন ও ব্রিটিশ জাহাজগুলো ভেড়ার মতো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এয়ারক্রাফট হ্যাঙ্গার, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভবন এবং বিশাল এয়ার টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি মজুদের ব্যবস্থা রয়েছে এ দ্বীপে। একসময় ভারতের পক্ষ থেকে দ্বীপটিকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের সমালোচনা করা হলেও এখন আর ভারতের রাজনীতিবিদেরা এর সমালোচনা করেন না। ২০০১ সাল থেকে বিভিন্ন সময় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও সেনাবাহিনী দিয়েগো গার্সিয়ায় সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। গুয়ানতানামো বে’র মতো দিয়েগো গার্সিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে বন্দী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অল পার্টি ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি ঘোষণা করে, দিয়েগো গার্সিয়ায় বন্দী নির্যাতনের অভিযোগ তারা তদন্ত করবে। [caption id="attachment_1050" align="alignleft" width="355"] পঞ্চম নৌ বহরের মহড়া[/caption] ইয়োকোসুকা নৌঘাঁটি, জাপান জাপানে বিভিন্ন দ্বীপে মার্কিন বিমান ও নৌবাহিনীর অনেক ঘাঁটি রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় এসব ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ৩৫ হাজার ৬৮৮ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জাপানে কর্মরত রয়েছে। এর সাথে কর্মরত রয়েছে পাঁচ হাজার ৫০০ বেসামরিক নাগরিক। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের ঘাঁটি রয়েছে ইয়োকোসুকাতে, তৃতীয় মেরিন এক্সপিডিটেশনারি ফোর্সের ঘাঁটি রয়েছে ওকিনাওয়া দ্বীপে, মার্কিন বিমান বাহিনীর দু’টি ঘাঁটি রয়েছে মিসওয়া ও কাদিনা দ্বীপে। এ ছাড়া জাপানের বিভিন্ন দ্বীপে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। সপ্তম নৌবহরের কমান্ড শিপ ইউএসএস ব্লু রিজ-এর অবস্থান ইয়োকোসুকায়। এখানে রয়েছে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার জর্জ ওয়াশিংটন, ডেস্ট্রয়ার স্কোয়াড্রন-১৫-এর অবস্থানও এখানে। সপ্তম নৌবহর পরিচালিত হয় জাপান থেকে। জাপানের বিভিন্ন দ্বীপে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নিয়ে জাপানিদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ওকিনাওয়া দ্বীপের জাপানি নাগরিকদের আন্দোলন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময় আলোচিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ওকিনাওয়া দ্বীপ থেকে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইয়োকোসুকা দ্বীপেও একাধিক মার্কিন নাগরিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া জাপানের পর এশিয়ায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে সামরিক বাহিনীর ছোট-বড় মিলিয়ে ১১টি ঘাঁটি রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে রয়েছে নৌঘাঁটি। সপ্তম নৌবহরের আওতায় এই নৌঘাঁটি পরিচালিত হয়। ভারতের চাপ বাড়ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এশিয়ায় মার্কিন নৌশক্তি বাড়তে থাকে। জাপান হয়ে ওঠে এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক শক্তির মূল কেন্দ্রবিন্দু। ব্রিটিশদের কাছ থেকে দিয়েগো গার্সিয়ায় ঘাঁটি গাড়ার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আরো বাড়তে থাকে। বিশ্বরাজনীতিতে চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া নীতিতে যে পরিবর্তন আনে, মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সে গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো সমুদ্র উপকূলের ছোট দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক হয়ে ওঠে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। এসব দেশের নৌবাহিনীর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে বলে আভাস দিচ্ছে মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব। তারা ঢাকাকে যেমন দেখছেন না দিল্লির চোখে, তেমনি নাইপিডোকে দেখছে না বেইজিংয়ের চোখে। ফলে ছোট ছোট এসব দেশের গুরুত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনি ঝুঁকিও বাড়ছে। আঞ্চলিক শক্তি বিশেষ করে ভারত চায় না এ অঞ্চলের ছোট দেশগুলো সামরিক শক্তি বাড়–ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ট সর্ম্পককেও ভারত দেখছে সন্দেহের চোখে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ওয়াশিংটন চাইছে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সর্ম্পক ঘনিষ্ট হোক। এখানে রয়েছে দিল্লির আপত্তি, মিয়ানমার ও আসিয়ানের দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ট সর্ম্পকের ক্ষেত্রে ভারতের রয়েছে অনাগ্রহ। কারণ এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভারত নির্ভরতা আর থাকবে না। দক্ষিণ এশিয়ায় ইতোমধ্যে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও নেপালে দেশটির প্রভাব অনেকাংশে খর্ব হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মিয়ানমারের সাথে সর্ম্পক জোরদারের উদ্যেগ নিতে হবে। আর এখানেই বাংলাদেশের ওপর থাকবে ভারতের নানামুখী চাপ। আঞ্চলিক শক্তি ও পরাশক্তির মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। না হলে এসব দেশকে জ্বলতে হবে চুলা থেকে চুল্লির আগুনে। লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট  

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির