অভিনন্দন ছাত্রসমাজ! অভিনন্দন প্রিয় দেশবাসী! ছাত্র-জনতার সংহতির শক্তি যে কত বড় তা আবারো প্রমাণিত হলো আমাদের একটি কাঙ্খিত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে। এ এক ঐতিহাসিক বিজয়। এ বিজয় ছাত্র-জনতার। এ বিজয় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি এক মহান নেয়ামত। আলহামদুলিল্লাহ। যে-কোনো বিজয় উদযাপনে যেন সীমালঙ্ঘন না হয়ে যায় আমাদেরকে সেদিকে গভীর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে। বিজয় উদযাপনের পদ্ধতি আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শিখিয়েছেন। আমরা আল্লাহর দেওয়া নিয়মেই বিজয় উদযাপন করব। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় অর্জন হয়, আর হে নবী তুমি যদি দেখ যে লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করছে, তখন তুমি তোমার রবের হামদসহ তাঁর তাসবিহ পড়ো এবং তার কাছে ক্ষমা চাও। অবশ্যই তিনি বড়ই তাওবা কবুলকারী।’’ (সূরা নাসর)
সুতরাং আমাদেরকে বিজয়ের পর বেশি বেশি আল্লাহর গুণগান করতে হবে এবং আমাদের গোনাহের জন্য ইসতিগফার ও তাওবা করতে হবে। তাহলেই বিজয় স্বার্থক হবে। আর আমাদের প্রকৃত বিজয় ও সফলতা তো কেবল আখিরাতেই রয়েছে।
নির্লজ্জ স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সমস্ত অহমিকা এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাসহ দেশবাসী এটাকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে অবিহিত করেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর এখন আমাদের দায়িত্ব হলো স্বাধীনতা রক্ষা করা। আর এটাই কঠিন কাজ। এজন্য সমগ্র দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে এবং সকল প্রকার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে অতীতেও আমরা অনেক স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছি। কিন্তু বারবার আমাদের ওপর স্বৈরাচার চেপে বসেছে। ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান থাকবে, আসুন আমরা সবাই মিলে সৎ, দক্ষ ও দেশ্রপ্রেমিক নাগরিক তৈরির জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাই। একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার জন্য ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।
শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের রক্তের ঋণ
আগস্ট এলেই মনে পড়ে যায় শহীদ মালেকের স্মৃতিটা। শহীদ আব্দুল মালেক এ উপমহাদেশের ইতিহাসে ইসলাম তথা নৈতিকতার সমন্বয়ে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়নের দাবিতে প্রথম শাহাদাত বরণকারী এক প্রদীপ্ত শিখা। যার আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে লাখো তরুণের ঈমানি চেতনা। জাগরিত হচ্ছে হাজার হাজার নৈতিক চরিত্রসম্পন্ন মেধাবী ছাত্র। তার স্বপ্নকে লালন করে পথ চলেছেন এদেশের ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হাজারো তরুণ।
১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আব্দুল মালেক শিক্ষানীতির ওপর প্রদত্ত বক্তব্যে অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষানীতি কী হবে? মূলত শহীদ আব্দুল মালেক সেই ব্যক্তিত্ব, যিনি এ জাতির প্রাণের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন। তাদের পরম চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করতে গিয়ে বিরুদ্ধবাদীদের বিরাগভাজন হয়ে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে পাড়ি জমিয়েছেন; পান করেছেন শাহাদাতের অমৃত। কিন্তু আমরা আজও পারিনি তাঁর মহান আত্মত্যাগের মূল্য পরিশোধ করতে।
শহীদ আবদুল মালেক শুধু বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রনায়কই নন; তিনি বিশ^ ইসলামী আন্দোলনের অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবন ছিল বড়ই সংগ্রামের। তিনি নিজেই যেন একটি সংগঠন; ব্যবহারিক জীবনাচরণে খুব সহজেই পৌঁছে যেতেন মানুষের হৃদয়ে। সবসময় দাওয়াতি চরিত্র নিয়ে কাজ করতেন তিনি। তাঁর আমানতদারিতা এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রতি একাগ্রতা কখনো ভুলবার নয়। কথা ও কাজের অপূর্ব সমন্বয়ের এক আদর্শিক নেতা ছিলেন তিনি। আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে শহীদ আবদুল মালেককে পাঠ করা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আসুন এই দুর্যোগে-দুর্ভোগে আমরা প্রত্যেকেই হয়ে উঠি একেকজন মালেক। আমাদের বিশ্বাস, এ আকাশ আজীবন মেঘে ঢাকা রবে না। আর সেই নতুন আলোর দীপ্ত ভোর আনতেই আমাদেরকে ভাবতে হবে নতুন করে। জেগে উঠতে হবে আরেকবার। তবেই তো শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের রক্তের ঋণ কিছুটা হলেও পরিশোধ সম্ভব হবে।
আপনার মন্তব্য লিখুন