post

ঐক্য একমাত্র ইসলামের ভিত্তিতেই সম্ভব

৩০ মার্চ ২০১৫

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী#

Dhormo-chinta‘তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (আলে ইমরান-১০৩)। মহান রাব্বুল আলামিন পৃথিবীর ঈমানদারগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে বলেছেন। তা স্পষ্ট  বোঝা যায় যে উক্ত আয়াতটির পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঈমানদারগণকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্য বরণ করো না।’ বর্তমান সময়ে মুসলমান যতই চেষ্টা করুক, অনৈসলামিক ভিত্তিতে ঐক্য কিছুতেই সম্ভব নয়। ঐক্যের বিশেষ একটি কেন্দ্র বা ভিত্তি থাকা অত্যাবশ্যক। এ সম্পর্কে বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন মত ও পথ রয়েছে। কোথাও বংশগত সম্পর্ককে ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। মোটকথা ১০৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদিগকে দু’টি নির্দেশ দিয়েছেনÑ প্রথমত, আল্লাহ তাআলার প্রেরিত জীবনব্যবস্থার অনুসারী হয়ে যাও। দ্বিতীয়ত, একে সবাই মিলে শক্তভাবে ধারণ কর। যাতে মুসলিম সম্প্রদায়ের সুশৃঙ্খল ঐক্যবন্ধন স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে একবার তা প্রত্যক্ষ করা গেছে। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্যের দিক ফুটিয়ে তোলার পর বলেছেন, পরস্পর বিভেদ সৃষ্টি করো না। কুরআন পাকের বিজ্ঞজনোচিত বর্ণনাভঙ্গি এই যে, যেখানে ধনাত্মক দিক ফুটিয়ে তোলা হয়, সেখানেই ঋণাত্মক দিক উল্লেখ করে বিপরীত রাস্তায় অগ্রসর হওয়া থেকে বারণ করা হয়। আল্লাহ তাআলা পারস্পরিক ঐক্যের বিষয়টি অত্যন্ত সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ এতে সর্বপ্রথম মানুষকে পরস্পর ঐক্যবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করেছেন। তার সরল ব্যাখ্যা এই যে ঐক্য ও মৈত্রী যে প্রশংসনীয় ও কাম্য, তাতে জগতের জাতি, ধর্ম ও দেশ-কাল নির্বিশেষে সব মানুষই একমত। এতে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। সম্ভবত, জগতের কোথাও এমন কোন ব্যক্তি নেই যে, যুদ্ধবিগ্রহ ও বিবাদ-বিসংবাদকে উপকারী ও উত্তম মনে করে। এ কারণে বিশ্বের সব দল ও গোত্রই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানায়। কিন্তু অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, ঐক্য উপকারী ও অপরিহার্য হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত হওয়া সত্ত্বেও মানবজাতি বিভিন্ন দলে-উপদলে ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে রয়েছে। এরপর দলের ভেতরে উপদল এবং সংগঠনের ভেতরে উপসংগঠন সৃষ্টি করার এমন এক কার্যদ্বারা অব্যাহত রয়েছে, যার সঠিক অর্থ, দুই ব্যক্তির ঐক্য কল্প-কাহিনীতে পর্যবসিত হতে চলেছে। সাময়িক স্বার্থের অধীনে কয়েক ব্যক্তি কোন বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়। স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলে কিংবা স্বার্থোদ্ধারে অকৃতকার্য হলে শুধু তাদের ঐক্যই বিনষ্ট হয় না। বরং পরস্পর শত্র“তা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এ কারণে কুরআন পাক শুধু মৈত্রী, একতা, শৃঙ্খলা ও দলবদ্ধ হওয়ার উপদেশই দান করেনি; বরং তা অর্জন করা ও অটুট রাখার জন্য একটি ন্যায়ানুগ মূলনীতিও নির্দেশ করেছে, যা স্বীকার করে নিতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। বর্তমানে এ কুরআনি মূলনীতিকে পরিত্যাগ করার কারণেই সমগ্র মুসলিম সমাজ শতধাবিভক্ত হয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। এ বিভেদ মেটানোর অমোঘ ব্যবস্থাই- (আল্লাহর রজ্জুকে সবাই মিলে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর।) আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে। এখানে আল্লাহ্র ‘রজ্জু’ বলে কুরআনকে বোঝানো হয়েছে। আবদুল্লাহ্ ইবনে মসউদের রেওয়ায়েতে হুজুর (সা) বলেন, কুরআন হলো আল্লাহ্ তাআলার রজ্জু যা আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত প্রলম্বিত। (ইবনে কাসীর) যায়েদ ইবনে আরকামের রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, আল্লাহ্র রজ্জু হচ্ছে কুরআন। (ইবনে কাসীর) আরবি বাচন পদ্ধতিতে ‘হাবল’ এর অর্থ অঙ্গীকারও হয় এবং এমন যেকোনো বস্তুকেই বলা হয় যা উপায় বা মাধ্যম হতে পারে। কুরআন অথবা দ্বীনকে ‘রজ্জু’ বলার কারণ এই যে, এটা একদিকে আল্লাহ্ তাআলার সাথে বিশ্বাসী মানুষের সম্পর্ক কায়েম করে এবং অন্য দিকে বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে পরস্পর ঐক্যবদ্ধ করে একদলে পরিণত করে। তাই এ কথা অকপটে বলা যায় যে, যতদিন পর্যন্ত মুসলমান পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হবে না, ততদিন পর্যন্ত মুসলমানগণ জালিমদের জুলুম থেকে মুক্তি পাবে না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে একমাত্র ইসলামের ভিত্তিতেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন।  আমিন। লেখক : লেখক ও গবেষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির