কুরআনের মর্যাদা ও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠাই হোক মে দিবসের অঙ্গীকার
১১ এপ্রিল ২০১৫
মে দিবস। ইতিহাসের পাতায় মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। যুগে যুগে শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সভ্যতা গড়ার মহান কাজে যুক্ত আছেন। বড় বড় অট্টালিকা, স্থাপনা, রাস্তাঘাট নির্মাণে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আজও মানুষ স্মরণ করে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে মানুষ আজ সুখী ও সুন্দর জগতের সন্ধান পেয়েছে। অথচ সেসব শ্রমিক কী পেয়েছেন? তারা কি পেয়েছেন তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য? তারা কি পেয়েছেন জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা? তারা কি পেয়েছেন তাদের মৌলিক অধিকার? তারা কি পেয়েছেন তাদের যথাযথ সম্মান? না, এসব তারা কিছুই পাননি, বরং পেয়েছেন লাঞ্ছনা, বঞ্চনা আর নির্যাতন। ১৮৮৬ সালের ১ মে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ২২টি শ্রমিক সংগঠন শিকাগো শহরে সমবেত হয় এবং মিছিল বের করে। শ্রমিকদের এই ন্যায্য দাবির সাথে সরকার ও মালিকপক্ষ ঐকমত্য না হওয়ায় সমাবেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক নিহত হন। শ্রমিকদের এই আত্মত্যাগ আর সাহসী মনোভাবের কাছে পরাজিত হয় সরকার। পরবর্তীতে ১ মে ‘ল ডে’ হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে মে দিবস বিশ্বের সকল শ্রমিকের অধিকার ও আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু সে অধিকার কতটুকু পেয়েছেন বাংলাদেশের তাজরীন আর রানা প্লাজায় নিহত ও আহত শ্রমিকরা।
মে মাস আরো আলোচিত এ কারণে যে ১১ মে কুরআন দিবস হিসেবেও পালন করে বাংলাদেশের মানুষ। ১৯৮৫ সালে কুরআন বাজেয়াপ্ত করার দাবিতে দু’জন ভারতীয় নাগরিক কলকাতায় হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। বিচারপতি বিচার-বিশ্লেষণ না করেই রিট পিটিশন গ্রহণ করে। আর এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে শুধু ভারত নয়, সারা দুনিয়ার মুসলমানগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বাংলাদেশের মুসলমানগণও এর প্রতিবাদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনী মুসলমানদের এ সকল বিক্ষোভ মিছিলের ওপর নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঈদগাহ ময়দানে মুসল্লিদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গুলিতে আটজন শহীদ হন এবং অসংখ্য মুসল্লি আহত হন। এরপর থেকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মর্যাদা রক্ষার দাবি থেকেই ১১ মে-কে কুরআন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ইসলামপ্রিয় জনতার পক্ষ থেকে।
একদলীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন
গত ২৮ এপ্রিল হয়ে গেল তিন সিটি নির্বাচন। আওয়ামী সরকারের অতিমাত্রায় দাম্ভিকতা আর নিজেদের পক্ষে জোরপূর্বক ভোটগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ দলীয় জোট নির্বাচন বয়কট করে। সরকার ও তার গৃহপালিত অধিকাংশ দালাল মিডিয়া নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দাবি করলেও কার্যত তা হয়েছে একপেশে নির্বাচন। সরকারের এসব অনৈতিক ও অবৈধ কার্যকলাপের কারণে অনেক মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। ২০ দল সমর্থিতই শুধু নয়; সরকার সমর্থিত প্রার্থী ছাড়া কোনো প্রার্থীর এজেন্টকে ঢুকতে দেয়া হয়নি কোনো কেন্দ্রে। ভোটকেন্দ্রের কক্ষগুলোতে দায়িত্বরত প্রায় প্রত্যেকেই সরকার সমর্থিত। অনেকেই ভোটকেন্দ্রে এসে দেখেন তাদের ভোটটি আগেই কাস্ট হয়ে গেছে। ২৯ এপ্রিল কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের শিরোনামই প্রমাণ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচন কতটুকু নিরপেক্ষ হয়েছে। দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনামÑ‘জিতল আওয়ামী লীগ, হারল গণতন্ত্র’ দৈনিক নয়া দিগন্ত লিখেছে- ‘ভোট জালিয়াতির মহোৎসব : বিএনপির বর্জন’, দৈনিক যুগান্তর লিখেছে- ‘ভোট জালিয়াতির মহোৎসব’, ‘ঢাকায় নির্বাচন শুরু না হতেই শেষ’, চট্টগ্রামে ভোট সন্ত্রাস : কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল’, ডেইলি স্টার লিখেছে- ‘ÔPolls bubble bursts’, Voting not well at all’, ÔSTAY OUT, Media’, বিবিসি বাংলা লিখেছে- ‘বাংলাদেশকে কোন পথে নেবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন।’
মূলত এই নির্বাচনে আওয়ামী সরকার তার বাকশালীয় চেহারাটা নগ্নভাবে আরেকবার প্রদর্শন করলো।
আপনার মন্তব্য লিখুন