post

কেমন চাই আগামীর বাংলাদেশ

১১ নভেম্বর ২০১২

আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। গত সংখ্যার বিয়ষ ছিল ঈদুল আজহার শিক্ষা। আগামী সংখ্যার বিষয় “বিজয়ের ৪২ বছর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি”। লিখবেন ২৫০ থেকে ৩০০ শব্দের মধ্যে। A4 সাইজের ফুলস্কেপ সাদা কাগজের একপিঠে যথেষ্ট পরিমাণ ফাঁক রেখে লিখতে হবে। লেখার নিচে আপনার পূর্ণ নাম ও ঠিকানা থাকতে হবে। খামের উপরে অবশ্যই “পাঠক চিন্তা” কথাটি লিখে দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ফটোকপি বা নিউজপ্রিন্ট কাগজে লেখা গ্রহণযোগ্য হবে না। ই-মেইলেও লেখা পাঠানো যাবে : [email protected]। -বিভাগীয় সম্পাদক

সবুজ অভয়ারণ্য, সুজলা-সুফলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে বহু প্রাকৃতিক সম্পদ। সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মানবসম্পদ। বাংলাদেশে প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমান বসবাস করে, যাদের মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশের বাইরে ও ভেতরের শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে বহুবার এবং আজও বিভিন্নভাবে চলছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশের ছাত্র-জনতা মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার আদায় করেছে। পৃথিবীর কোথাও এমনভাবে ভাষার জন্য আন্দোলন করতে হয়নি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অর্জন করে স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হই আমরা। যাত্রা শুরু হয় সোনার বাংলার। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছর অতিক্রম করার পরও সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হয়নি। এখন চারদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের রাজত্ব, দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রে দলীয়করণ, সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির মহোৎসব, মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ, জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ, যুবসমাজ আজ নানামুখী ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এসব থেকে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি চায়। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে থাকবে না রাজনৈতিক কলহ-মারামারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হবে সোনার বাংলাদেশ গড়ার সোনার লোক তৈরির কারখানা, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস। দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন দলীয় নয়, যোগ্যতার মাপকাঠিতে মূল্যায়ন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা। দেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে হবে। আসুন আর নয় বিভক্তি, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী ও আদর্শিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হই। আব্দুল কাদের, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা, ভরা অপরূপ মায়াবী নজরকাড়া এ দেশ বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। হাজারো ত্যাগ-তিতিক্ষা আর সমস্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৪১তম বছরেও প্রকৃত স্বাধীনতাকে আমরা খুঁজে পাইনি। সে যেন হারিয়ে গেছে বহু দূরে। যেমন চেয়েছিলাম এই সবুজ ভূখণ্ডকে তেমনটি পাইনি। আমি চাই আগামীর বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলাদেশ, যেখানে রয়েছে অপার সম্ভাবনা লুক্কায়িত। এ দেশের প্রতিটি মানুষ হবে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক। প্রয়োজনে তারা মাতৃভূমি রক্ষার্থে জীবনকে বিলিয়ে দেবে, যেমনটি বিলিয়ে দিয়েছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে লওয়ার জন্য। আমি চাই, এ দেশে থাকবে না মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ, থাকবে না সামাজিক কোন্দল, গুম-হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি। অপর দিকে থাকবে ধর্মীয় অনুভূতি, শিক্ষাঙ্গনে থাকবে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, যেখানে থাকবে না অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্য, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রের ঝনঝনানি। আগামীর বাংলাদেশ চাই অর্থনৈতিকভাবে প্রবৃদ্ধি সাধন, যেখানে থাকবে না শেয়ারবাজার লুটতরাজ, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, সুদ-ঘুষ ও সীমাহীন দুর্নীতি। আগামীর বাংলাদেশে দেখতে চাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, যেখানে থাকবে না বিরোধীদলের প্রতি জুলুম-নিপীড়ন ও বাকশালী নীতি। সকলে একে অন্যের প্রতি আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল হবেÑ এটাই আমাদের কাম্য। আগামীর বাংলাদেশ দেখতে চাই, শিল্পবিপ্লবের স্বর্ণালি যুগ, রফতানিমুখর দেশীয় পণ্য, চোরাচালানহীন সীমান্তপথ। পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুক্ত, প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। যে দেশে শুধু অপার সম্ভাবনা আর সম্ভাবনা লক্ষ্য করা যায়। মনিরুল ইসলাম শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া একবিংশ শতাব্দীতে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের ভাঙা কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র সকল শ্রেণীর মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছিলো। জাতি হিসেবে আমাদের সৌভাগ্য এই যে, আমরা স্বাধীন হওয়ার পরপরই গণতন্ত্র পেয়েছি। কিন্তু অকার্যকর, নামসর্বস্ব গণতন্ত্র কখনও একটি দেশ বা জাতিকে মুক্তি দিতে পারে নাÑ যার বাস্তব উদাহরণ আমাদের বাংলাদেশ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যদিও আমাদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সফলতা অনেক তবুও অন্তহীন সমস্যার বোঝা সকল অর্জনকে ম্লান করে দেয়। এ কারণেই সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার পরও স্বাধীনতার চার দশকের প্রত্যাশা, বাস্তবতা আর সম্ভাবনার হিসাব মেলালে হতাশ হতে হয়। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের চিরন্তন বিধান অনুযায়ী আমাদের বারবার আশাহত হওয়ার পেছনে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। আর এ কারণস্বরূপ সমস্যাগুলোকে সমাধানের পথে গতিশীল করা ছাড়া আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের চিন্তাও করতে পারি না। প্রকৃতপক্ষে জাতি হিসেবে আমাদের সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য না থাকায় আমরা বারবার কুহেলিকার পেছনে ছুটেছি। আমাদের অস্থিতিশীল ও পদলেহী রাজনীতি সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে নীতিহীনতার বীজ বপন করে দিয়েছে। দরিদ্রতা আমাদেরকে অনৈতিক করে তুলেছে, সুশিক্ষার অভাব আমাদের মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিয়েছে। চূড়ান্তরূপে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যার দরুন গোটা বিশ্বে আমরা দুর্নীতিবাজ, তলাহীন ঝুড়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের সমাজের বুদ্ধিজীবী মহলের একটি অংশ এইসব সমস্যার কারণ হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদসহ এমন কিছু শব্দকে বেছে নেন যার সঙ্গে এ দেশের মানুষ পরিচিত নয়। তারা মনে করেন পশ্চিমা সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিকে এদেশে ব্যাপকভাবে আমদানি করলেই সকল সমস্যা দূর হয়ে দেশটা ডিজিটাল হয়ে যাবে। কিন্তু তাতে সমস্যা কাটেনি, বরং আরো প্রকট হয়েছে। আসলে ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ এ কথায় যদি আমরা আস্থা প্রকাশ করতে পারি তাহলে বলা যেতে পারে, নৈতিকতা ও আধুনিক শিক্ষার মেলবন্ধনের মাধ্যমে আমাদেরকে এমন একটি প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে যারা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারবে। আর এ কাজ শুরু করতে হবে এখনই। নইলে ‘বাংলাদেশীরা বাস্তববাদী নয়’ এমন দুর্নাম আমরা কখনও ঘুচাতে পারব না। এম কাওছার সানী শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কেমন চাই আগামীর বাংলাদেশ? মনুষ্যত্ববোধের সহায়তায় বিবেক উত্তর দেয়, সুন্দর একটি বাংলাদেশ চাই। কেননা আজ আমাদের দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে, তা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ করে রাখে। ক্ষমতাবান আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের প্রতি যে নির্যাতন চালাচ্ছে আমি সচেতন নাগরিক হিসেবে তা মোটেও সমর্থন করি না। ভবিষ্যতের দিনটি সুন্দরময় পেতে ইসলামের সুমহান আদর্শ বিশ্বের দিকে দিকে এবং বাংলাদেশের বুকে আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আমাদেরকে নিতে হবে। ইসলামী আদর্শবাদে যে সামাজিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো একদিন ভেঙে পড়েছিল, তা আবার জোড়া লাগলেও জনগণের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরই পরিবর্তন আসছে না, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা হিসেবে এবং সরকার পদ্ধতিতেও এর বিকাশ ঘটাতে হবে। আগামী দিনের জন্য বিশ্বের যুবসমাজকে জেগে উঠতে হবে। মুক্তির অম্বেষায় আজ থেকেই তাদের নিজেদের বুকের রক্ত ঢেলে দিতে শিখতে হবে। তাদের খুনরাঙা পথ বেয়ে একদিন মানবজাতি মুক্তি লাভ করবে। আধুনিক চাকচিক্যময়তা ও সংস্কৃতির নামে নগ্নতা ও অশ্লীলতার মাধ্যমে যুবসমাজকে তার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ইসলামী আদর্শের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চ্যালেঞ্জ করছে। বর্তমান সরকার ভারতের চক্রান্তে যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিবেকের কাছে তা কখনো বোধগম্য নয়। একবিংশ শতাব্দীর সূচনাতেই বিশ্বপরিস্থিতি ঠাণ্ডা লড়াই থেকে লড়াইয়ের দিকে মোড় নিয়েছে। এ মোড়ে সুন্দর দিনের ভবিষ্যৎ কল্পনাকারী নাগরিকদের কখনো থামানো চলবে না। স্বপ্নময় ভবিষ্যৎ বাস্তবায়িত করতে মানুষের কর্মনীতি হতে হবে মানুষ হালাল পথে যা কিছু উপার্জন করে তা বৈধ ও যুক্তিসঙ্গত প্রয়োজন পূরণার্থে ব্যয় করবে। এরপরও যা কিছু উদ্বৃত্ত থাকবে তা অভাবগ্রস্তদের দান করবে যাতে তারা তাদের অপরিহার্য প্রয়োজনে ব্যয় করে। গাজী মো: আসিফ এয়াকুবদণ্ডী হুলাইন পাইমুল উচ্চবিদ্যালয়

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির