(গত সংখ্যার পর)
আজকের এই পরিস্থিতি কেন? বলা হয়েছে শেষ জমানায় ইসলামের মৌলিক সিঁড়িগুলো এক এক করে ভেঙে পড়বে। তন্মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে কুরআনের শাসন। আবু উমামা বাহেলি (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেন, “অবশ্যই ইসলামের স্তম্ভগুলো একে একে ভেঙে পড়বে। একটি ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষ অপর স্তম্ভকে ধরে ফেলবে। সর্বপ্রথম ভাঙবে- কুরআনের শাসন। সর্বশেষে-নামাজ।” (মুসনাদে আহমদ- ২২২১৪/তাবারানি-৭৪৮৬) নবী করীম (সা.) এরশাদ করেন, “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না অশ্লীলতা-বেহায়াপনা বৃদ্ধি পাবে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হবে এবং প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করা হবে।” (মুসনাদে আহমদ-৬৫১৪) নবী করীম (সা.) আরো বলেন, “সময় দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাবে, (আখেরাতের জন্য) মানুষের আমল কমে যাবে, অন্তরে কৃপণতা সৃষ্টি হবে এবং অধিক হারে সংঘাত (হত্যাযজ্ঞ) ঘটতে থাকবে।” (বুখারি-৫৬৯০/মুসলিম-৬৯৬৪) আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেন, “ঐ সত্তার শপথ- যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না অশ্লীলতা ও কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে, বিশ্বস্তকে ঘাতক এবং ঘাতককে বিশ্বস্ত মনে করা হবে, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বিলুপ্তি ঘটবে। মূর্খদের জনপ্রিয়তা ও মাতব্বরি বেড়ে যাবে।” (মুস্তাদরাকে হাকিম: ৮৬৪৪) বর্তমান মুসলিম সামাজিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে সেই দৃশ্যই আমাদের চোখে পড়ে। আত্মীয়দের খোঁজখবর নেয়ার সময় নেই। আছে না মরে গেছে, আল্লাহই ভালো জানেন। প্রতিবেশীর সাথে অবাধে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি ইহুদি-খ্রিষ্টান সমন্বিত ক্রুসেড-যুদ্ধে মুসলিম বিশ্ব আক্রান্ত। সঠিক পথে ফিরে এলে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “আল্লাহ্ নিশ্চয় তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহ্কে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।” (সূরা হজ : ৪০) অপর আয়াতে আল্লাহ্ লিখে দিয়েছেন, “আমি এবং আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হবো। নিশ্চয় আল্লাহ্ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।” (সূরা মুজাদালা : ২১) সাউবান (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেন, “প্লেট সামনে রেখে যেমন একে অপরকে খাদ্যের জন্য ডাকাডাকি করে, ঠিক তেমনি সকল বিধর্মী জাতি মুসলমানদের নিঃশেষ করতে একে অপরকে ডাকাডাকি করবে। ‘সেদিন কি আমরা সংখ্যায় কম থাকব হে আল্লাহ্র রাসুল?’ জিজ্ঞেস করা হলে নবীজী (সা.) বললেন, না! সংখ্যায় তোমরা অনেক থাকবে। তবে স্রােতের আবর্জনার মতো। শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের আতঙ্ক উঠিয়ে আল্লাহ্ তোমাদের অন্তরে এক প্রকার লাঞ্ছনা গেঁথে দেবেন। লাঞ্ছনা কী? জিজ্ঞেস করা হলে বললেন, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুর প্রতি বিতৃষ্ণা।” (আবু দাউদ-৪২৯৯/মুসনাদে আহমদ-২২৪৫০) মানুষ যখন বিপদে পড়ে, যখন সে নিজের বিপন্ন অসহায়ত্ব বুঝতে পারে। মানব মনের এই কথার বর্ণনা আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে করেছেন চমৎকারভাবে- “তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের জলে ও স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি যখন তোমরা নৌকায় আরোহণ করে অনুকূল হাওয়ার তালে আমোদ-আহ্লাদে ভ্রমণ করতে থাকো, তখন ঝড়ো হাওয়া আঘাত হানে আর চারদিক থেকে তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা মনে করে, তারা তরঙ্গমালায় পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছে। তখন তারা বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহকে ডেকে বলে, তুমি যদি এ থেকে আমাদের পরিত্রাণ দাও তাহলে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।” (সূরা ইউনুস : ২২)
আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে মুসলমানদের এ পরিস্থিতিতে দৃঢ় থাকতে হবে। তাহলে কেবলমাত্র অবিশ্বাসীরা মহান মাবুদের ওপর ঈমান আনবে। তখনই সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আমার বিশ্বাস এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পর গোটা পৃথিবীর মানুষ আবার ইসলামের দিকে ফিরে আসবে। নতুন এক জাগরণ সৃষ্টি হবে বিশ্বময়। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে, “তিনিই যথাযথভাবে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, হাশর হয়ে যাও, সেদিনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথা যথার্থ অকাট্য সত্য।” (সূরা আনয়াম : ৭০) “তিনি আসমান ও জমিনের মাঝখানের প্রতিটি জিনিসের রব, যদি তোমরা সত্যিই দৃঢ়বিশ্বাস পোষণকারী হও।” (সূরা দোখান : ৭) বর্তমান সঙ্কটাপন্ন এ অবস্থা যতই খারাপ হোক আমাদেরকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। আমাদেরকে এ অবস্থা সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এটাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন- “ভয় পেয়ো না দুঃখিত হয়ো না, তোমরাই জয়ী হবে, যদি তোমরা আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পারো।” (সূরা আলে-ইমরান : ১৩৯) মুমিনরা দুনিয়া ও আখেরাতে জয়ী হতে চাই ইনশাআল্লাহ। আমরা অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সম্ভবত এটা এ শতাব্দীর সবচেয়ে কঠিন সময়। আমাদেরকে বাস্তবতা উপলব্ধি করে প্রস্তুত হতে হবে। শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাতে হবে আল্লাহ যেন এ অবস্থার সমাধান করে দেন। কারণ এ পরিস্থিতি ভয়ানক খারাপ হতে পারে গোটা বিশ্বের জন্য।
ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করা রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার প্রত্যাশা করো না। আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। তবে যদি মুখোমুখি হয়ে যাও তবে তোমরা ধৈর্যধারণ করো (ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করো।” আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। তবে আল্লাহ যদি আমাদেরকে তার পরীক্ষার জন্য বেছে নিয়েই থাকেন তাহলে আমাদেরকে যেন ধৈর্যের সাথে পরীক্ষায় পাস করার তাওফিক দেন আমরা এই দোয়া করি। আমরা যেন জান্নাত অর্জনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারি। আমাদের মর্যাদা উন্নীত করার সুযোগ কাজে লাগাতে পারি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ কোনো বান্দার ওপর তার সাধ্যাতীত কিছু চাপিয়ে দেন না।” (সূরা বাকারা : ২৮৬) এটা আল্লাহর ওয়াদা যে তিনি মুমিনদেরকে অনেক কিছু দিয়ে পরীক্ষা করবেন। আল্লাহ বলেন, “অবশ্যই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের-জীবনের ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করব। আর আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।” (সূরা বাকারা : ১৫৫) অর্থাৎ এসব ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার পরও যারা ধৈর্য রাখতে পারবে তাদেরকে আল্লাহ সুসংবাদ দিবেন। যারা বিপদে বলবে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। কিন্তু আমরা আল্লাহর পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া থেকে পানাহ চাই। রাসূল (সা.)-এর চাচা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.)! আমাকে একটা উত্তম দোয়া শিখিয়ে দিন। তখন রাসূল (সা.) তাকে বললেন আল্লাহর কাছে পানাহ চান। তখন তার চাচা বললেন আমি আরো বেশি কিছু চাই। তখন রাসূল (সা.) বললেন এটাই উত্তম যে কাউকে আল্লাহ পরীক্ষা নিবেন না। এটাই তার জন্য উত্তম হবে। দোয়াটা হলো- “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াহ” অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে পানাহ চাই (পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া থেকে)।
আসুন আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করি আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “তোমরা আল্লাহর প্রতি শোকরগুজার থাকলে ও ঈমান আনলে তিনি তোমাদের শাস্তি দিয়ে লাভ কী?” (সূরা নিসা : ১৪৭) হে আমাদের মালিক! আমরা একজন আহবানকারীর আহ্বান শুনেছিলাম। তিনি ঈমানের দিকে আহবান করছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমরা নিজেদের রবকে মেনে নাও। আমরা তার আহবান গ্রহণ করেছি। কাজেই, হে আমাদের প্রভু! আমরা যেসব গোনাহ করছি তা মাফ করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব অসৎবৃত্তি আছে সেগুলো আমাদের থেকে দূর করে দাও এবং নেক লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করো। আমরা আমাদের ঈমানকে রিনিউ করে নিবো। রিনিউ করা বলতে ঈমান শক্তিশালী করা, বৃদ্ধি করা। হতে পারে সালাতের মাধ্যমে। জিকিরের মাধ্যমে। তেলাওয়াতের মাধ্যমেও হতে পারে। আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করা। এটাও ঈমান বৃদ্ধি করার উপায় হতে পারে। (সূরা আলে ইমরান : ১৯৩)
তাকওয়া আল্লাহর ভয় জাগ্রত করুন রমজানের অন্যতম লক্ষ্য মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি জাগ্রত করা। তাকওয়া গোটা জীবনজুড়ে ব্যাপৃত। তাকওয়া ইসলামী মূল্যবোধের একটি মূল ধারণা। এটি আল্লাহ্র গুণাবলি এবং সর্বদা তাঁর উপস্থিতির উপলব্ধি হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়। এই সচেতনতা একজন মানুষকে তার জীবনকে নিয়ে ভিন্নভাবে উপলব্ধির সুযোগ করে দেয় এবং পৃথিবীর কামনা-বাসনার দাসত্ব থেকে মুক্ত করে। ‘তাকওয়া’ লালন করা বারাকাহ এবং স্পিরিচুয়াল এনার্জির একটি প্রধান উৎস। কারণ এটা আপনার মূল্যবোধ ও নীতিগুলোর একটি মজবুত ভিত্তি দেবে, যা আপনাকে আল্লাহ কর্তৃক দেয়া হয়েছিল। তাকওয়া আপনাকে মূল্যবোধ ও নীতির জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে আসবে এবং সঠিক পথে অবস্থান করতে সাহায্য করবে। এটা এক ধরনের শৃঙ্খলা-বিধান। আপনি যত বেশি তাকওয়াবান, আপনার চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব তত বেশি শক্তিশালী। আপনারা যখন সফলতার দিকে হাঁটতে থাকেন, তখন তাকওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সচেতন ও সক্ষম করে তোলে। এটা ইউসুফ (আ)-এর কাহিনীতে সুস্পষ্ট। মালিকের স্ত্রী কর্তৃক প্রলুব্ধ হওয়ার পর প্রথম দিকে তাকওয়া তাকে কারাগারের পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত এই তাকওয়াই তাকে মিশরের কোষাধ্যক্ষ বানিয়েছিল। এটা ইসলামের আরেকটি ধারণা যে, তাকওয়া শেষ পর্যন্ত ইহকালে ও পরকালে কল্পনাতীত পুরস্কার ও কল্যাণ বয়ে আনে, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ কুরআনে বলেন, “অতঃপর আমি অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি। অবশেষে তারা প্রাচুর্যের অধিবাসী হয় এবং বলে- আমাদের পূর্বপুরুষগণও তো দুঃখ-সুখ ভোগ করেছে। অতঃপর আকস্মাৎ তাদের আমি পাকড়াও করি, কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারে না।” (সূরা আরাফ : ৯৫) আল্লাহ্ কুরআনে আরও বলেন- “যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ্ তার পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিজিক। যে ব্যক্তি আল্লাহ্র ওপর নির্ভর করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তার ইচ্ছা পূরণ করে দেবেন, আল্লাহ্ সব কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।” (সূরা তালাক : ২-৩) রাসূল (সা.) বলেছেন- “জ্ঞানের মাথা হলো আল্লাহকে ভয় করা।” (মিশকাত) অন্য হাদিসে বলা হয়েছে- “আল্লাহকে ভয় করো, তাতেই সবচেয়ে বড় ইবাদতকারী হতে পারবে।” (মিশকাত) একজনের ওপর আরেকজনের কোনো মর্যাদা নেই। তবে আছে আল্লাহভীতি ভিত্তির। (তিবরানি) হাদিসে বলা হয়েছে- “সে ব্যক্তি দোজখে প্রবেশ করবে না, যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে।” (তিরমিজি) ইবনে সিনা বলেছেন- “আল্লাহর ভয় মানুষকে সকল ভয় হতে মুক্তি দেয়।”
সর্বদা আল্লাহ্র প্রতি সচেতন থাকুন প্রতিটি সিদ্ধান্তে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন- আল্লাহ্ যদি আমাকে এই সিদ্ধান্তটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, আমি কী বলব? কিভাবে এটাকে আমি (আল্লাহ্র দৃষ্টিতে) ন্যায়সঙ্গত করতে পারি? সে জন্য আল্লাহ সম্পর্কে বেশি বেশি জানুন। তাঁর নাম ও গুণাবলি এবং সেগুলো কিভাবে আপনার জীবনে প্রভাব ফেলে তা জানুন। বলুন আল্লহই আমার জন্য যথেষ্ট। মানুষ বিপদে ভেঙে পড়বে না। যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (ইবনে মাজাহ) আল্লাহর অধিকার বান্দাহর ওপর আল্লাহর অধিকার হলো, তারা কেবল তাঁরই আনুগত্য ও দাসত্ব করবে এবং তাঁর সাথে কোনো অংশীদার বানাবে না। (সহীহ বুখারি) শ্রেষ্ঠ আমল রাসূল (সা.) বলেছেন- “শ্রেষ্ঠ আমল হলো, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা।” (আবু দাউদ)
আল্লাহর কাছে তওবা করার সুযোগ আমাদের চারপাশে যা খারাপ কিছু হচ্ছে তা আমাদের হাতের অর্জন। তওবা না করার কারণে আল্লাহর গজব এগুলো তা বলার অবকাশ রাখে না। আমাদেরকে মুসলিম হিসেবে চিন্তা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন “জমিনে ও সমুদ্রে যা কিছু ফাসাদ হচ্ছে তা মানুষের হাতের অর্জন।” (সূরা রুম : ৪১) ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এগুলো আমাদের হাতের কামাই। আমরা তওবা করার মাধ্যমে নিজেদেরকে শুদ্ধ করতে হবে। পরকালের আজাব হতে রক্ষা পেতে তাঁর করুণা চাইতে হবে। কারণ তওবা না করার ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন “যারা তওবা করবে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব।” (সূরা বুরুজ : ১০) সুতরাং সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করা উচিত এবং সবকিছু নতুনভাবে শুরু করা। সকলে অবিলম্বে তওবাহ করে নিন। চতুর শয়তানের এমন প্রতারণাপূর্ণ কথায় কান দেবেন না, তুমি এত খারাপ যে, আল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ আল কুরআনে বলেন- “বলো, হে আমার বান্দারা। তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহ্র রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা জুমার : ৫৩) রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ত্রুটিশীল ও অপরাধী, আর অপরাধীদের মধ্যে উত্তম তারা যারা তওবা করে।’ (তিরমিজি)। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা তওবার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আরও প্রিয় হতে পারেন। তা ছাড়া তওবা করা নবীর (সা.) দেখানো ও শেখানো সুন্নত। কেননা বিশ্বনবী (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও শুধু শোকরগুজারের জন্য দিনে শতবার পর্যন্ত তওবা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেন, “আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং দৈনিক সত্তরের অধিকবার আল্লাহর কাছে তওবা করি।” (বুখারি)। অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, “হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর দরবারে তওবা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর; আমিও প্রতিদিন একশবার তওবা করি।’ (বুখারি)। আল্লাহপাক বলেন, “হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ; তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা যুমার : ৫৩) আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে বনি আদম! তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকবে ও আমার আশা পোষণ করবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। তোমার থেকে যা কিছুই প্রকাশ পাক, এতে আমি কোনো পরোয়া করি না। হে বনি আদম! তোমার গুনাহ যদি ঊর্ধ্ব আকাশ পর্যন্ত পৌঁছায়, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো, এতে আমি সামান্য পরোয়া করি না। হে বনি আদম! তুমি যদি আমার কাছে দুনিয়া ভরা গুনাহ নিয়ে আস আর শিরকে লিপ্ত না হয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর, আমি তোমার জন্য জমিন ভরা ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব।” (তিরমিজি) তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর অত্যন্ত খুশি হন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তওবায় আল্লাহ তায়ালা এই পরিমাণ খুশি হন যে, যেমন ধর তোমাদের কেউ গরম মরুভূমিতে উট গাছের ডালে বেঁধে ঘুমিয়ে পড়ল। সে উটের সঙ্গে তার খাদ্য-পানীয়সহ সব আসবাব ছিল। ঘুম থেকে জেগে দেখল তার উটটি আগের স্থানে নেই। এদিক ওদিক খুঁজে কোথাও পাওয়া গেল না। যখন সে একেবারে নিরাশ হয়ে গেল, তখনই দেখল তার উটটি যথাস্থানে রয়েছে। এমন মুহূর্তে সে ব্যক্তি যতটুকু খুশি হবে, কোনো বান্দা তওবা করলে আল্লাহতায়ালা তারচেয়ে বেশি খুশি হন।’ (মুসলিম) আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ (তওবার বদৌলতে) মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।” (সূরা তাহরিম, আয়াত : ৮) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হলো, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তওবা (তওবাতুন নাসুহা) কর।” (সূরা তাহরিম : ৮) পাপের রাস্তা থেকে চিরদিনের জন্য মনে-প্রাণে ফিরে আসতে হবে। অনুতপ্ত হয়ে অন্যায়কে ঘৃণা করে ন্যায়ের ওপর থাকতে হবে। আজকের মহা এই দুর্যোগে নিজেদের সাজাতে হবে মাবুদের সন্তুষ্টির পথে। এ সময়ে আমাদের দিলকে কোমল করার সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, “ঈমানদারদের হৃদয় আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হওয়ার সময় কি আসেনি?” (সূরা হাদিদ : ১৬) আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে আজাব দেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অন্তর কঠিন হয়ে না যায়। অন্তর কঠিন হয়ে গেলে মানুষ আল্লাহর প্রতি উদাসীন হয়ে যায়। দায়িত্ব ভুলে যায়। পরকাল ভুলে যায়। পাপে জড়িয়ে পড়ে। ফলে আল্লাহর আজাব চলে আসে।
কোমল হোন মানবতার প্রতি আল্লাহর ভয়ে অন্তর কোমল করুন। পরকালের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কথা বেশি বেশি স্মরণ করুন। আল্লাহর দেয়া দায়িত্বে আপনার সচেতনতা আসবে। এর মাধ্যমে মানুষ মৃত্যু ও পরকাল সম্পর্কে সচেতন হয়। মানুষ তার উত্তম ব্যবহার ও চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজকে আলোকিত করে থাকে। যে সুন্দর চরিত্রের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় নবী জীবনে। কুরআন ইরশাদ হয়েছে, “হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি।’’ (সূরা আহজাব : ৪৫) এবং নিরক্ষরদের স্মরণস্থল, আপনি আমার বান্দা ও আমার পয়গামবাহী রাসূল, আমি আপনার নামকরণ করেছি মুতাওয়াক্কিল (আল্লাহতে নির্ভরশীল)। আপনি রুক্ষ মেজাজ ও হাটবাজারে শোরগোলকারী নন, দুর্ব্যবহারের দ্বারা দুর্ব্যবহারের জবাব দেন না, বরং মার্জনা ও ক্ষমা করে দেন।’ (আল আদাবুল মুফরাদ) রাসূল (সা.) ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যার কাছ থেকে সবাই কল্যাণ আশা করে, অনিষ্টের আশঙ্কা করে না।’ (তিরমিজি) নবী করীম (সা.) সবসময় হাসিমুখে থাকতেন। সঙ্গী-সাথীদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ামাত্র হাসিমুখে অভ্যর্থনা করতেন, কিন্তু জীবনে কেউ কোনো দিন তাঁকে অট্টহাসি হাসতে দেখেনি। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায় অনেক সৎ চরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে, মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ। মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কিয়ামতের দিন এমন লোককেও আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে- যার আমলনামার মধ্যে নামাজ, রোজা, জাকাত প্রভৃতি নেক আমল থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি তার মন্দ আচরণের জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করবে। তাই মিষ্টি হাসি, মধুর আচরণ ও কোমল চিত্তের অধিকারী হওয়া পরিবারপ্রধান ও সমাজ সংস্কারকদের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন এমন সব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যে ব্যক্তি বাক সংযম, মিষ্টভাষণ এবং সত্য কথা প্রভৃতি গুণ দ্বারা নিজের চরিত্র সৌন্দর্যমণ্ডিত করে, তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাসস্থান নির্মিত হয়।’ (মিশকাত) রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম আচরণের অধিকারী।’ (বুখারি-৬০৩৫) রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি সুন্দর।’ (বুখারি-৩৫৫৯) রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শ্রেষ্ঠ মানুষ হলো যার অন্তর পরিচ্ছন্ন ও মুখ সত্যবাদী।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সত্যবাদী মুখ বোঝা গেল, কিন্তু পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী কে? রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে অন্তর স্বচ্ছ ও নির্মল, মুত্তাকি, যাতে কোনো পাপ নেই, বাড়াবাড়ি বা জুলুম নেই, নেই খেয়ানত ও বিদ্বেষ।
পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করার সুযোগ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের কাছে ভালো।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান-৪১৭৭) সাধারণত আমরা অনেকেই দৈনন্দিন কাজের চাপে পরিবারকে সামান্যই সময় দিতে পারি। কেউ কেউ আবার সেটাও পারেন না। মাসের পর মাস দেশ-বিদেশে সময় কাটাই। পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় ব্যয় করার জন্য অনেক কষ্ট করে প্ল্যান করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু দুর্যোগের সময়ে যেহেতু আমাদেরকে বাধ্যতামূলক ঘরে অবস্থান করার প্রয়োজন হচ্ছে তাই আমরা এ সময়টাকে আল্লাহর দেয়া অপূর্ব নিয়ামত মনে করতে পারি। আমরা স্ত্রী-সন্তান এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে সময়গুলোকে গঠনমূলক কাজে ব্যয় করতে পারি। সবাইকে নিয়ে জামাতে নামাজ পড়া। একসাথে কুরআন তেলাওয়াত করা। হাদিস, সিরাত অধ্যয়ন করা। বাচ্চাদেরকে আদব-কায়দা শেখানো। পড়াশোনায় সহযোগিতা করা। স্ত্রীকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করা। এতে আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা হবে। রাগ দমন করার অনুশীলন হবে।
প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করা দুর্যোগ আসার মুহূর্তে যথাসম্ভব প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এটি তাকওয়া বা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। বরং সতর্কতা অবলম্বন করাই হলো তাকওয়া। এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো যে, আমি কি উট ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব নাকি উট বেঁধে তারপর তাওয়াক্কুল করব? তখন তিনি বললেন আগে উট বাঁধ তারপর তাওয়াক্কুল করো। এটাই তাকওয়া। রোগ হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই তাকওয়া। যে বিষয়ে যিনি এক্সপার্ট সে বিষয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করা। যেমন ধরুন করোনা সম্পর্কে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের স্বাস্থ্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা মেডিক্যাল সাইন্সের এক্সপার্টরা ভালো বলতে পারবেন। সে জন্য তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সবারই উচিত মেডিক্যাল ইস্যুতে সরাসরি বক্তব্য না দিয়ে মেডিক্যাল সাইন্সের এক্সপার্টদের সাথে আলোচনা করে শরিয়ার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে ফতোয়া দেয়া। জনগণকে নসিহত করা।
আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল আল্লাহ্র প্রতি আস্থা রাখার ধারণা নিয়ে আমাদের মাঝে বড় রকমের ভুল বোঝাবুঝি আছে। লোকেরা মনে করে, আল্লাহ্র প্রতি পরোক্ষভাবে আস্থা রাখাই যথেষ্ট। সবকিছু এমনিতেই ভালোতে রূপ নেবে, যেহেতু আল্লাহ সর্বদা সাথে আছেন। নবীজি (সা.) বলেন- “তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তায়ালার ওপর নির্ভরশীল হতে, তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেওয়া হয়, সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেওয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যাবেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।” (ইবনে মাজাহ : ৪১৬৪) লক্ষ করুন, পাখিরা কিন্তু খাবার পৌঁছানোর অপেক্ষায় তাদের বাসায় বসে থাকে না; বরং আল্লাহ্র প্রতি নির্ভর করার সাথে সাথে জীবিকার সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। একইভাবে জীবনে বারাকাহ এবং স্পিরিচুয়াল এনার্জি পেতে চাইলে অবশ্যই জীবিকার সন্ধানে বেরোতে হবে এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। আল্লাহ্ কুরআনে বলেন, “আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিজিক দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ্র ওপর নির্ভর করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তার ইচ্ছা পূরণ করে দেবেন, আল্লাহ্ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।” (সূরা তালাক : ৩) এই ধারণাটি মনে গেঁথে নিয়ে আপনার দিন শুরুর কথা কল্পনা করে বলুন- আল্লাহ্র ওপর ভরসা রেখে লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সবকিছু করবো। এতে আপনি অনুপ্রাণিত হবেন, আশাবাদী হবেন এবং সহজে ছিটকে পড়বেন না। বিশ্বাস রাখতে হবে আল্লাহ আপনাকে সেরাটাই দেবেন; যদিও দৃশ্যত মনে হয় আপনার পদক্ষেপগুলো কার্যকর হচ্ছে না। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়ুন: এটি আপনাকে তাওয়াক্কুলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আরবিতে দোয়াটি হচ্ছে-“বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ্র নামে, আমি আল্লাহ্র ওপর ভরসা করছি, আল্লাহ্ ছাড়া কোনো সামর্থ্য এবং শক্তি আমার নেই। (আবু দাউদ) নবীজি (সা.) বলেন- “যে ব্যক্তি তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় (ওপরের দোয়াটি) পড়ে নেয়, তাকে বলা হয়-“তোমাকে যথেষ্ট করা হয়েছে, সুরক্ষিত করা হয়েছে এবং দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।” আর শয়তান তার থেকে দূরে সরে যেতে যেতে অন্য শয়তানকে বলে- “এমন একজন ব্যক্তির কাছে যাওয়াতে কী ফায়দা, যাকে পথ দেখানো হয়েছে, যথেষ্ট করা হয়েছে এবং দেওয়া হয়েছে সুরক্ষা?” (আবু দাউদ, তিরমিজি)
মানবসেবা করুন সাধ্যমত যারা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে তারা কখনও অন্যের দুঃখ কষ্টকে উপলব্ধি করতে পারে না। রাসূল (সা.) বলেছেন- “রোগীর সেবা করো এবং ক্ষুধার্তকে খেতে দাও।” (সহিহ বুখারি) অন্য হাদিসে বলা হয়েছে- “আল্লাহ সকল কিছুর প্রতি দয়া ও সহানুভূতি দেখাবার নির্দেশ দিয়েছেন।”(সহিহ মুসলিম) যখন কোনো দুর্যোগ আসে তখন মানুষের প্রতি মানুষ কেমন আচরণ করে সেটা পরীক্ষার সময় আসে। অনেক বড় অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরী হবে। এ সময় একে অপরকে কতটুকু সহযোগিতা করে তা পরীক্ষার প্রকৃত সময়। যার অল্প আছে সে আল্লাহর কাছ থেকে দ্বিগুণ ফেরত পাওয়ার বিশ্বাসে সাদাকা করে কিনা সেটাও পরীক্ষার সময় এসব দুর্যোগে। সাদাকা যে শুধুমাত্র অর্থ বা উপকরণ দিয়ে করা যায় তা নয়। বরং ছোটখাটো কাজ করে দেয়া, সান্ত¡Íনা দেয়া, মানসিক সাপোর্ট দেয়াটাও সাদাকা। উদাহরণস্বরূপ- তুর্কিতে বিভিন্ন আবাসিক ভবনে ছেলেমেয়েরা বয়স্ক লোকদেরকে যাতে কোনো কাজে বাইরে বের হতে না হয় সে জন্য তারা ভলান্টিয়ার হয়ে তাদের কাজ করে দিচ্ছে। তারা ভবনগুলোর নিচতলায় নিজেদের মোবাইল নাম্বার লিখে পোস্টার লাগিয়ে দিয়ে আসছে। আমাদের দেশের অনেক সেবাকার্যক্রম চলছে, আলহামদুলিল্লাহ। রাসূল (সা.) বলেছেন- “আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাহকে সাহায্য করেন, যতক্ষণ সে তার ভাইকে সাহায্য করে।”(সহিহ মুসলিম) অন্যত্র বলা হয়েছে, “যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।” (সহিহ বুখারি) বলা হয়েছে. “তোমাদের কেউ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার ভাইয়ের জন্যও তাই পছন্দ না করবে।” (সহিহ বুখারি) আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ (বর্ণনাকারী বলেন) আমার ধারণা তিনি আরও ঐ সালাত আদায়কারীর ন্যায় যার ক্লান্তি নেই এবং ঐ সিয়াম পালনকারীর ন্যায় যার সিয়ামে বিরাম নেই।’ গোল্ড স্মিথ বলেছেন- “অসহায়কে অবজ্ঞা করা উচিত নয়, কারণ মানুষ মাত্রেই জীবনের কোন না কোন সময় অসহায়তার শিকার হবে।” কুরআনে বলা হয়েছে- “আল্লাহ ন্যায়-নীতি, পরোপকার ও আত্মীয়-স্বজনদের দান করার হুকুম দেন এবং অশ্লীল-নির্লজ্জতা ও দুষ্কৃতি এবং অত্যাচার-বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষালাভ করতে পারো। তাই মানবতার এ মহাসঙ্কটে অসহায় ও কর্মহীন মানুষদের কর্মসংস্থান; মাইয়্যেতের গোসল, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করা। ডাক্তার ও নার্সদের পাশে থাকা, করোনা সন্দেহজনক মানুষদের টেস্ট করানো, হাসপাতালে ভর্তি করানো এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা আমাদের সকলের ঈমানী দায়িত্ব।
জ্ঞান অর্জন ও ইবাদতে মগ্ন হোন করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষ নিজেকে বিপন্ন মনে করছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য এ মুসিবত এসে থাকতে পারে। আমরা এই সময়কে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও রোজা রেখে কাটিয়ে দিই। এতে বর্তমান চরম ভীতিকর অবস্থার মধ্যেও মনে এক প্রকার জান্নাতি প্রশান্তি পাওয়া যাবে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিকমত (বিশেষ জ্ঞান) দান করেন এবং যাকে (আল্লাহর পক্ষ হতে) হিকমত দান করা হয়েছে, নিঃসন্দেহে তাকে প্রভূত কল্যাণ দেওয়া হয়েছে। (সূরা বাকারা : ২৬৯) ‘রাতের কিছু অংশ জ্ঞান চর্চা করা, সারা রাত (ইবাদতে) জাগ্রত থাকার চাইতে উত্তম।’ (দারেমি) একবার রাসূল (সা.) মসজিদে নববীতে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন দু’দল লোক গোল হয়ে বসে কোনো কাজে ব্যস্ত আছে। একদল আল্লাহর যিকির-আযকার ও ইবাদত-বন্দেগি করছে আরেক দল জ্ঞানচর্চার কাজে মশগুল। রাসূলুল্লাহ (সা.) দু’দলকে দেখেই খুশি হলেন এবং তাঁর সাথের লোকদেরকে বললেন, “এ দু’দল লোকই ভালো কাজে ব্যস্ত আছে এবং এরা সবাই উত্তম ও পুণ্যবান। কিন্তু আমাকে পাঠানো হয়েছে লোকজনকে শিক্ষা দিয়ে জ্ঞানী করে গড়ে তোলার জন্য।” এ কথা বলেই তিনি সেই দলের দিকে এগিয়ে গেলেন যারা শিক্ষা দান ও গ্রহণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনিও তাদের সঙ্গে বসলেন এবং শিক্ষাদানের কাজে লেগে গেলেন।
ইয়াকিনের সাথে দোয়া করুন আল্লাহর নিকট এই বিশ্বাস নিয়ে ফরিয়াদ করতে হবে তিনি আমাদের দোয়া শুনেন এবং আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। (সূরা আনয়াম : ৪৩) কুরআনে বলা হয়েছে, তোমাদের রব বলেন: আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। যেসব মানুষ গর্বের কারণে আমার দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা অচিরেই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা আল-মুমিনুন : ৬০) হযরত নুমান ইবনে বাশিল (রা) বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা.) বলেছেন : দোয়াই ইবাদত। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন। (তোমরা আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেবো। (আহমাদ, তিরমিজি) হযরত আবু হুরাইরা (রা) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হন।” (তিরমিজি) হযরত সালমান ফারসি (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন: “দোয়া ছাড়া আর কোন কিছুই তাকদিরকে পরিবর্তন করতে পারে না।” অর্থাৎ কোন কিছুর মধ্যেই আল্লাহর ফয়সালা পরিবর্তনের ক্ষমতা নেই। কিন্তু আল্লাহ নিজে তাঁর ফয়সালা পরিবর্তন করতে পারেন আর এটা হয় কেবল তখনি যখন বান্দা তার কাছে দোয়া করে। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “বান্দা যখনই আল্লাহর কাছে দোয়া করে আল্লাহ তখন হয় তার প্রার্থিত জিনিস তাকে দান করেন কিংবা তার ওপরে সে পর্যায়ের বিপদ আসা বন্ধ করে দেন- যদি সে গোনাহর কাজে বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া না করে।” হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন “তোমাদের কোন ব্যক্তি দোয়া করলে সে যেন এভাবে না বলে, হে আল্লাহ ! তুমি চাইলে আমাকে মাফ করে দাও, তুমি চাইলে আমর প্রতি রহম করো এবং তুমি চাইলে আমাকে রিযিক দাও।” বরং তাকে নির্দিষ্ট করে দৃঢ়তার সাথে বলতে হবে; “হে আল্লাহ, আমার অমুক প্রয়োজন পূরণ করো।” হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন- “যে বিপদ আপতিত হয়েছে তার ব্যাপারেও দোয়া উপকারী এবং যে বিপদ এখনো আপতিত হয়নি তার ব্যাপারেও দোয়া উপকারী। অতএব হে আল্লাহর বান্দারা, তোমাদের দোয়া করা কর্তব্য।” (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ) “তোমাদের প্রত্যেকের উচিত তার রবের কাছে নিজের প্রয়োজনে প্রার্থনা করা। এমনকি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে তাও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে।” অর্থাৎ মানুষ যে ব্যাপারগুলো বাহ্যত নিজের ইখতিয়ারভুক্ত বলে মনে করে যেসব ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আগে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে। কারণ, কোন ব্যাপারে আমাদের কোন চেষ্টা তদবিরই আল্লাহর তাওফিক ও সাহায্য ছাড়া সাফল্য লাভ করতে পারে না। চেষ্টা তাদবির শুরু করার আগে দোয়া করার অর্থ হচ্ছে, বান্দা সর্বাবস্থায় তার নিজের অক্ষমতা ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করছে। মুসলমানদের ওপর আল্লাহ আজাব দেন পরীক্ষা হিসেবে। সে এ কথা ভেবে যেন লজ্জিত না হয় যে তাদের হাতের কামাই হিসেবে এ আজাব এসেছে। বরং যাতে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তওবা করতে পারে। আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে পারে। আল্লাহর তওবার দরজা সব সময় খোলা মুমিনদের জন্য। এবং বেশি বেশি দোয়া করা যাতে আল্লাহ আজাব তুলে নেন। সব ধরনের অনিষ্টতা থেকে হেফাজতের দোয়া করা। হজরত ওসমান (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেহ সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করলে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। যার অর্থ: আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (তিরমিজি ও আবু দাউদ) হজরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বিপদের সময় এই দোয়াটি পাঠ করতেন। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশমণ্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু। (সহিহ বোখারি ও মুসলিম)
ইসলামের রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ধরতে হবে মুসলমানদের এত উজ্জ্বল অতীত ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও আজ কেন এই দুর্বল অবস্থা? হ্যাঁ! নবীজি (সা.) সত্যই বলেছেন, “দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুর প্রতি বিতৃষ্ণা।” মুসলমানদের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কুরআনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ফরজ। আল্লাহ্পাক বলেন, “যেসব লোক আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই কাফের।” (সূরা মায়েদা : ৪৪) “আমরা তো মর্যাদাহীন লোক ছিলাম, আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন ইসলামের মাধ্যমে। সুতরাং আমরা যদি আল্লাহ আমাদেরকে যা দ্বারা সম্মানিত করেছেন তা থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্য কোথাও সম্মান খুঁজি তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় অপমানিত করবেন।” আল কুরআনে বলা হয়েছে-“তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো। তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানিতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো। তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে। আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন। হয়তো এই নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে।” (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)
মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য মুসলমানদেরকে এই পরিস্থিতিতে গোটা পৃথিবীতে বিরাট এক দায়িত্ব পালন করতে হবে। মুসলিম উম্মাহকে এগিয়ে আসতে হবে অসহায়, মজলুমদের পাশে দাঁড়াতে হবে। মহাকবি আল্লামা ইকবালের ভাষায়- “আরব হামারা চীন হামারা হিন্দুস্তান হামারা, মুসলিম হ্যায় হাম, ওতান হ্যায়, সারা জাঁহান হামারা।” আজ মুসলমানরা সারা বিশ্বে যে জুলুম-নির্যাতন নিষ্পেষণের শিকার হচ্ছে সে ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়াতে করোনা এই বিষন্নতার মাঝেও বিজয় আসতে পারে। ঞযবড়ফড়ৎব জড়ড়ংবাবষঃ বলেছেন- ঊধপয ঃরসব বি ভধপব ড়ঁৎ ভবধৎ, বি মধরহ ংঃৎবহমঃয, পড়ঁৎধমব ধহফ পড়হভরফবহপব রহ ঃযব ফড়রহম. আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি তাহলে পৃথিবীতে মানুষেরা আবার ইসলামের দিকে কুরআনের দিকে ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, “পাঁচটি অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার পূর্বেই তার যথার্থ মূল্যায়ন কর; তোমার বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনের, তোমার অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতার, তোমার অসচ্ছলতার পূর্বে তোমার সচ্ছলতার, তোমার ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবকাশের এবং তোমার মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনের।” এই হাদিসের আলোকে সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে নিজের জীবনে। তাই আসুন ধর্ম-বর্ণ, গোত্র, সাদা, কালো শত্রু-মিত্র, ধনী-গরিব, উঁচু-নীচুর ভেদাভেদ ভুলে মানবতাকে উদ্ধারে ভূমিকা রাখতে হবে সকলকে। কারণ আশরাফুল মাখলুকাত আল্লাহ মানুষকে বানিয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলাম এভাবে সাম্যের গান গেয়েছেন- “হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে, কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।” কিন্তু যারা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে তারা কখনও অন্যের দুঃখ কষ্টকে উপলব্ধি করতে পারে না। তাই কবির ভাষায়- “চির সুখীজন ভ্রমে কি কখন ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে। কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে। তাই হৃদয় দিয়ে অন্যের ব্যথা উপলব্ধির এই মন থাকা চাই সত্যপন্থীদের। এ জন্য মানুষের মধ্যে সেরা জাতি মুসলিম শ্রেষ্ঠ জীবনার্দশ আল ইসলাম। সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে অসহায় বিপন্ন মানবতার পাশে আমাদের সবাইকে পাশে দাঁড়াতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সেই শক্তি, সাহস হিম্মত দান করুন, আমিন। (সমাপ্ত)
লেখক : সহকারী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
আপনার মন্তব্য লিখুন