post

ক্যারিয়ার ভাবনা ও আমাদের করণীয়

২৮ নভেম্বর ২০১৩

মো: জিল্লুর রহমান

Story(গত সংখ্যার পর)

যেকোনো কাজে সফলতার জন্য যোগ্যতা আর দক্ষতার বিকল্প নেই। আমরা প্রত্যেকেই আগামী দিনের একটি সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখি দক্ষতা, যোগ্যতা আর সততায় পরিপূর্ণ সুন্দর একটি সমাজ বিনির্মাণের। এ ক্ষেত্রে একটি সফল জীবন এবং সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য এর কারিগরদের প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে যোগ্যতা, দক্ষতা আর ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠনের অর্থাৎ একটি শাণিত ক্যারিয়ার গঠনের। মনে রাখতে হবে যোগ্যতার বিকল্প কেবলমাত্র যোগ্যতাই হতে পারে। কঠিন বাস্তবতা হলো যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি পরিবার, সমাজ ও দেশের সম্পদ আর অযোগ্য অদক্ষ জনশক্তি হলো দেশের বোঝা। আর এই তীব্র প্রতিযোগিতামুখর পৃথিবীতে নিজেদের সুদৃঢ় অবস্থান তৈরির জন্য প্রশাসনিক ও পেশাগত নেতৃত্ব করায়ত্ত করার জন্য দক্ষতা আর ঈর্ষনীয় ক্যারিয়ার গঠনে সকলের প্রত্যয়দীপ্ত হওয়া উচিত।

ক্যারিয়ার কী ক্যারিয়ার শব্দটি ইংরেজি যার অর্থ জীবনের পথে অগ্রগতি বা অগ্রসরণ। জীবনক্রম অথবা জীবনের বিকাশক্রম বা বিকাশ ধারা। এ ছাড়াও প্রচণ্ড বা ত্বরিত সম্মুখ গতি বা পূর্ণ বেগই হলো ক্যারিয়ার। ঙীভড়ৎফ ফরপঃরড়হধৎু অনুযায়ী “ঃযব ঃরসব ঃযধঃ ড়হব ংঢ়বহফং ধহফ ঃযব ঢ়ৎড়মৎবংং ড়হব সধশবং রহ ধ ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ ড়ৎ ঃধৎমবঃবফ লড়ন (ঙহব রিঃয ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃরবং ভড়ৎ ঢ়ৎড়মৎবংং ড়ৎ ঢ়ৎড়সড়ঃরড়হ ড়ভ ড়হব’ং ষরভব)”. মূলত জীবনের চূড়ান্ত বা ঈপ্সিত লক্ষ্যকে সামনে রেখে জীবনকে উন্নত ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, প্রকৃত পক্ষে পেশাগত জীবনে উন্নততর ও চিত্তাকর্ষক অবস্থান তৈরি করে মডেলে পরিণত হওয়াই ক্যারিয়ার। মোদ্দাকথা জীবনে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠন ও এর যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে জীবনের কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জন করাই হলো ক্যারিয়ার।

ক্যারিয়ার গঠন নিয়ে ভুল ধারণা ক্যারিয়ার বলতে আমরা অনেকেই মনে করি বড় কোনো অফিসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। কিন্তু ক্যারিয়ারের সংজ্ঞা থেকে আমরা বুঝি যেকোনো পেশায় তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে সফলভাবে পৌঁছানো। ধরুন আপনি শিক্ষাগত যোগ্যতায় অন্যের থেকে পিছিয়ে থেকেও সফল ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হয়ে সমাজের একজন মডেল হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এই সফলতাই হলো আপনার জীবনের ক্যারিয়ার। অর্থাৎ ব্যক্তির সাধ এবং সাধ্যের সমন্বয় করে ঝোঁক বা ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেকোনো পেশায় যোগ্যতা ও দক্ষতাসহকারে সফলতা অর্জনই হলো মূল কথা। কোনো ভুল ধারণাবশত একটা লক্ষ্য অর্জনের ব্যর্থতা নিয়ে অলস বসে থাকার বা নির্দিষ্ট কোনো বৃত্তে ক্যারিয়ারকে সংজ্ঞায়িত করে পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।

ক্যারিয়ার গঠনে আমাদের করণীয় সফল ক্যারিয়ার গঠন করতে চাইলে ব্যক্তির নিম্নোক্ত বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা দরকার : ক) জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ মাঝিবিহীন নৌকা যেমন লক্ষ্যহীন জীবন তেমন। লক্ষ্যহীন জীবনকে লাগামহীন ঘোড়ার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে মানুষের জীবনে যেকোনো কিছু ঘটুক আসলে আমি যা চাই তার আগে আমাকে তা কামনা করতে হবে এবং পূর্ণ নিশ্চিত থাকতে হবে যে তা ঘটবে। আমরা বহু মনীষীর জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সে লক্ষ্য পৌঁছার সফলতার ইতিহাস জানি। এ ক্ষেত্রে উপমহাদেশের একজন সফল ব্যক্তিত্ব ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি খ্যাতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের লেখা তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ উইংস অব ফায়ার বইয়ে তার নিজের একটি উক্তি আলোকপাত করতে পারি। সেখানে তিনি লিখেছেন, “একেবারে শৈশবকালে আমি মোহাবিষ্ট হতাম আকাশের রহস্যময়তা ও পাখিদের উড্ডয়নে। আমি সারস ও সিগালের উড্ডয়ন লক্ষ্য করতাম আর ওড়ার জন্য আকুল হতাম। যদিও আমি মফস্বলের বালক ছিলাম তবুও আমার বিশ্বাস জন্মেছিল যে একদিন আমিও আকাশে ভাসব। প্রকৃতপক্ষে আমি ছিলাম রামেশ্বরমের (তার নিজ গ্রাম) প্রথম শিশু যে আকাশে উড়েছিল।’ একজন সাধারণ গরিব পরিবারের অসহায় শিশু হয়েও শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ এবং লক্ষ্যপানে পৌঁছার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা আর প্রচণ্ড বিশ্বাস তাকে তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে। একজন মানুষের সর্বাগ্রে জীবনের লক্ষ্য বা টার্গেট নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখতে হবে জীবনে সফল হতে হলে এবং ফলাফল পেতে হলে অবশ্যই তিনটি প্রবল শক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে আর সেগুলোর ওপর কর্তৃত্ব করতে হবে আর তা হলোÑ আকাক্সক্ষা বা লক্ষ্য, বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা। এ ছাড়াও জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা জরুরি : ১. যোগ্যতা ও প্রতিভা জন্মগতভাবে মহান প্রভু প্রদত্ত সুপ্ত প্রতিভা ও যোগ্যতা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। যোগ্যতা বা প্রতিভা আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত বা সুযোগ। এর অপচয় অপব্যবহার অবশ্যই ব্যক্তিকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। এ ব্যাপারে আল কুরআনের ঘোষণাÑ “তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিটি নেয়ামত বা সুযোগ সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।” এ আয়াত থেকে বোঝা যায় আমাদের স্বাভাবিক বা স্বতঃস্ফূর্ত যোগ্যতা বা প্রতিভা শুধু জাগতিক উন্নয়নের মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করা নয়, পাশাপাশি সৃষ্টির দাবি পূরণ করার দায়িত্ব হিসেবেও গ্রহণ করতে হবে। ২. ঝোঁক-প্রবণতা মানুষের ঝোঁক-প্রবণতা তার যেকোনো লক্ষ্যে পৌঁছার অর্ধেক নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। কোন দিকে বা কোন পেশায় ব্যক্তির ঝোঁক বেশি সেই দিক সামনে রেখেই তার পেশাগত লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। কারো যদি খেলাধুলায় আবার কারো যদি চাকরি বা ব্যবসা বা রাজনীতিতে ঝোঁক বেশি থাকে তাহলে তাকে সেই দিকেই নিবিষ্টভাবে মনোনিবেশ করা উচিত এবং জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে ঐবহৎু উধারফ ঞযড়ৎবধঁ এর উক্তি মূল্যায়ন করা যেতে পারেÑ “ঝঁপপবংং ঁংঁধষষু পড়সবং ঃড় ঃযড়ংব যিড় ধৎব ঃড়ড় নঁংু ঃড় নব ষড়ড়শরহম ভড়ৎ রঃ.” ৩. সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় লক্ষ্য নির্ধারণের শুধু সাধ বা আকাক্সক্ষা থাকলেই হবে না সাধ্যের সীমা-পরিসীমার আলোকে তা নির্ধারণ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সাধ্যকে অবজ্ঞা করে সাধকে পূরণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করি এবং এই সমন্বয়হীন চেষ্টা আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করে। ৪. সুযোগ ও সম্ভাবনা লক্ষ্য নির্ধারণে এই বিষয়টি গভীরভাবে মূল্যায়ন করা দরকার যে, লক্ষ্যে পৌঁছতে কী কী সুযোগ ও সম্ভাবনা আসতে পারে এবং এর যথাযথ ব্যবহার করা যাবে কি না। মনে রাখতে হবে সুযোগ বারবার আসে না এবং যথাসময়ে প্রাপ্ত সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগানোর কোনোরূপ কার্পণ্য বা শৈথিল্য প্রদর্শন করা চরম বোকামি। ৫. পরিবেশ পরিস্থিতি কোনো জিনিসই জীবনে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয়া সম্ভব নয় যদি না তার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। অর্থাৎ লক্ষ্য নির্ধারণে উপযুক্ত পরিবেশের নিশ্চয়তা বা সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই তা স্থির করতে হবে। অর্থাৎ লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে যথাযথ ক্ষেত্র বা পরিবেশ ও এর উপযোগিতা বিবেচনায় রাখা একান্ত আবশ্যক। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনে নি¤œলিখিত বিষয়গলো গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করতে হবে। ক) পরিকল্পনা যেকোনো কাজের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার প্রাথমিক বা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো একটি সুন্দর ও সুসমন্বিত পরিকল্পনা। পরিকল্পনা ব্যতিরেকে কখনো কোনো ধারাবাহিক কাজের সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। ইংরেজিতে বলা হয়, ‘অ মড়ড়ফ ঢ়ষধহহরহম রং যধষভ ফড়হব.’ এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর বাণীকে প্রণিধানযোগ্য বলে ধরে নিতে পারি। বুখারি শরিফের প্রথম হাদিসে বলা হয়েছে, ‘সমস্ত কাজই নিয়তের (পরিকল্পনার) ওপর নির্ভরশীল’। নিয়তের শাব্দিক অর্থ সঙ্কল্প হলেও ব্যাপক অর্থে এটিকে পরিকল্পনাই বলা চলে। এই বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে যদি এর ইংরেজি সমার্থক শব্দ দেখি যেখানে চষধহহরহম এর সমার্থক হিসেবে নবরহম ধভঃবৎ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ অহ ধপঃ ড়ভ ভড়ৎসঁষধঃরহম ধ ঢ়ৎড়মৎধস ভড়ৎ ধ ফবভরহরঃব পড়ঁৎংব ড়ভ ধপঃরড়হ. একটি বিষয় সবসময় আমাদের মনে রাখতে হবে মহান রাব্বুল আ’লামিন সর্বদা যেকোনো ইতিবাচক অর্থাৎ ভালো কাজের পরিকল্পনার জন্য সওয়াব দিয়ে থাকেন এবং সাথে সাথে কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত রবের পক্ষ থেকে রহমত আসতে থাকে। সুতরাং আন্দোলনের কর্মী হিসেবে পার্থিব জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছার সকল ইতিবাচক পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ড আমাদের উভয় জগতের সাফল্যের পূর্বশর্ত এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ বা সংশয় থাকার অবকাশ নেই। এবারে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কিছু দিক সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। মূলত পরিকল্পনা প্রণয়ন হলো একটি পদ্ধতি। যদি এর আঁকাবাঁকা পথ বাধাপ্রাপ্ত হয়, এর লক্ষ্য উল্টে-পাল্টে দেয়া হয়, তাহলে পরিকল্পনার অর্থ নষ্ট হয়ে যাবে। নি¤েœ ত্রিভুজাকৃতির চিত্রে পরিকল্পনার অবস্থান ও বাস্তবায়নের কৌশল দেখানো হলো : পরিকল্পনা মূল্যায়ন বাস্তবায়ন উপরোক্ত ছক অনুসারে অগ্রসর হওয়ার জন্য দু’টি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। একটি হলো কৌশল এবং অন্যটি হলো সময়। পরিকল্পনা মূলত সময়ের সাথে জড়িত। ব্যক্তি বা সামষ্টিক জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যকে সফল বাস্তবায়নের জন্য সময়ানুযায়ী পরিকল্পনাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন- ক. স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা (যা এই মুহূর্তে করণীয়) খ. মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এ ক্ষেত্রে যে ধ্রুব সত্যটি সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে তা হলো, যদি আমরা পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ হই, তা হলে আমরা ব্যর্থ হওয়ার পরিকল্পনা প্রণয়ন করলাম। খ) রুটিন প্রণয়ন যেহেতু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রধান নিয়ামক হলো সময় সুতরাং সময় নামক এই কৌশলী বস্তুটাকে লাগাম পরাতে হলে রুটিন বা রুটিনমাফিক জীবনযাপনের বিকল্প নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিটি স্তরে সুন্দর একটি কর্মসূচি প্রণয়ন একান্ত আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে যেহেতু সময়ই প্রধান চালিকাশক্তি সেহেতু সময় বা সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল নিয়ে আলোচনা বড় বাস্তবতা। গ) সময় ব্যবস্থাপনা সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনার শুরুতে নি¤œবর্ণিত বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। ১. সময়ের প্রকৃতি : এ ক্ষেত্রে যে সত্যটি সবাই জানে তা হলো : কোনটি সেই জিনিস যা সবচেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী যদিও তা সব থেকে ক্ষণস্থায়ী, সবচেয়ে বেশি দ্রুতগামী যদিও তা সবচেয়ে বেশি শ্লথ; আমরা সকলেই তা অবজ্ঞা করি যদিও পরে সকলেই অনুশোচনা করি, একে ছাড়া কিছুই করা যায় না, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সবকিছুকে এটা গ্রাস করে অথচ যা কিছু বড় বা মহৎ তা সে তৈরি করে। এটি সর্বদীর্ঘ, কারণ এটা অনন্তকাল; এটা সর্ব ছোট কারণ আমরা কেহই জীবনের সব কাজ করে যাওয়ার সুযোগ পাই না; সুখীদের নিকট এটি সর্বদ্রুতগামী, দুঃখ ভারাক্রান্তদের জন্য সর্বশ্লথ। এই হচ্ছে সময় যা দিয়ে জীবন গঠিত। ২. সময়ের ব্যবহার : ব্যর্থ লোকেরা যা করতে চায় না, সফল লোকেরা তা করে তাদের সময়ের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে। এই দুই শ্রেণীকে দু’টি ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রথমত, ঐ সকল দুর্ভাগ্যবান, মোহাবিষ্ট শ্রেণী যারা সবসময়ই আগামীকাল কাজ শুরু করতে চায়। দ্বিতীয়ত, ঐ সকল বিস্ময়কর ব্যক্তি যারা এখনই কাজ শুরু করতে প্রস্তুত; যাদের জীবনে কোনো আগামীকাল নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় নবীর বাণী : “দু’জন ফেরেস্তার নি¤œরূপ আহবান ব্যতীত একটি সকালও আসে না : হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন এবং আমি তোমার কাজের সাক্ষী! সুতরাং আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর। শেষ বিচার দিনের আগে আমি আর কখনো ফিরে আসব না।” গর্ববোধক কিছু করে প্রতিদিন অতিবাহিত করা উচিত, আমাদের নেক নিয়ত যাই হোক না কেন, আজ নয় কাল, এ সপ্তাহে নয় আগামী সপ্তাহে, এভাবে আমরা কাদামাটিতে আটকে থাকবো যদি আমরা ঠিক এখনই কাজ শুরু করতে প্রস্তুত না হই।

৩. সময় অতিবাহিত করার পদ্ধতি : সুতরাং মূল কথা দাঁড়ালো যদি করণীয় কয়েকটি কাজের জন্য সময় বের করতে চান তাহলে আপনার ব্যস্ততার তালিকায় এদের জন্য অবশ্যই পরিকল্পনা করে প্রোগ্রাম বের করতে হবে। যদি আপনি সঠিক সময়টি আসার জন্য অপেক্ষা করতে চান তাহলে চিরদিনই সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ প্রতিটি কর্ম দিবস থেকে এক ঘণ্টা করে সময় বের করে নিলে বছরে আপনি ২৬০ ঘণ্টা বা ৩২টি পূর্ণ কর্মদিবস পাবেন। এরূপ সময়কালে আপনি বড় বড় কাজ সম্পাদন করে নিতে পারবেন। আপনি হ কুরআন থেকে বিশেষ অংশ মুখস্থ করতে পারবেন। হ কতকগুলো নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। হ বিদেশী ভাষা শিখতে পারবেন। হ একটি বিষয়ে ডিপ্লোমা নিতে পারবেন। হ নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে বিশেষ প্রস্তুতি নিতে পারবেন। ব্যক্তি হিসেবে আমাদের সাফল্যের সাথে সাহায্যকারী নয় এমন হাজারো ছোট্ট ছোট্ট ঘটনার বেড়াজালে সময় উড়ে যেতে থাকলেও আমাদেরকে কর্মসূচি তৈরি করতে হবে এবং তা আঁকড়ে ধরতে হবে। সময় ক্ষেপণের জন্য আফসোস বাকি সময়ের সদ্ব্যবহারের উৎসাহ যোগাবে এবং অবশিষ্ট সময়ই যথেষ্ট সময় যদি আমরা অর্থহীন আফসোস, অযথা সময় ক্ষেপণ এবং অলসতা পরিহার করি।

৪. সময় বাঁচানোর কৌশল মাত্র কয়েকদিন নি¤œলিখিত প্রস্তাবসমূহ অনুসরণ করলে ফলাফল দেখে আপনি নিজেই বিস্মিত ও উৎসাহিত হবেন : হ প্রত্যেক দিন সকালে লিখিতভাবে আপনার দিনের কাজগুলোর পরিকল্পনা করুন এবং কাজ হয়ে গেলে একটি একটি করে কেটে দিন। হ টেলিফোনে না জানিয়ে কোনো বন্ধু বা কারোর নিকট যাবেন না। হ কাগজ-কলম বা ছোট্ট নোট সবসময় পকেটে রাখুন যাতে অবসর সময়ে আপনার চিন্তাগুলো লিখে নিতে পারেন। হ লেখাপড়া করে, কোনো কিছু মুখস্থ করে বা গঠনমূলক কিছু করে অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার করুন। হ আপনার সময় ক্ষেপণ করতে পারে এমন চিন্তাশূন্য এবং আত্মকেন্দ্রিক লোক এড়িয়ে চলবেন। হ চিঠি বা টেলিফোনে সেরে নেয়া যায় এমন কোনো কাজের জন্য নিজে ব্যক্তিগতভাবে যাবেন না।

৫. সময় সম্পর্কে স্মরণীয় কিছু বিষয় ক. সময় নেবেন... ষ সময় নেবেন চিন্তা করতে, এটি ক্ষমতার উৎস; ষ সময় নেবেন ব্যায়াম করতে, এটি যৌবনের আধার; ষ সময় নেবেন পড়তে, এটি জ্ঞানের উৎস; ষ সময় নেবেন নামাজ আদায় করতে, এটি দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় শক্তি; ষ সময় নেবেন বন্ধু বনে যেতে, এটি সুখের সোপান; ষ সময় নেবেন হাসতে, এটি সর্বোত্তম লুব্রিক্যান্ট; ষ সময় নেবেন দান করতে, স্বার্থপরের জন্য দুনিয়াটা খুব ছোট; ষ সময় নেবেন কাজ করতে, এটি সফলতার মূল;

ষ কিন্তু সময় নেবেন না, সময় ক্ষেপণ করতে।

মনে রাখবেন রাসূল (সা) বলেছেন : যার দু’টি দিন একই রকম গেল নিঃসন্দেহে সে ক্ষতিগ্রস্ত! (সুনান আল দায়নামী)

খ. সুব্যবহৃত সময় ষ মহৎ মন ধারণা বা চিন্তামূলক আলোচনা করে ষ সাধারণ মন ঘটনাবলি আলোচনা করে ষ ছোট মন পরচর্চা করে ষ অতি ছোট মন নিজেদেরকে নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ মানুষের জীবনের যেকোনো সফলতার মূল চাবিকাঠিই হলো সময়। একটি শাণিত ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে সম্মুখপানে ধাবমান আগামীর সুন্দর, সুখী, শোষণমুক্ত ও আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের কারিগরদের এই বিষয়টি খুব শক্তভাবে মনে প্রাণে ধারণ করে সামনে এগোতে হবে। আর এই জন্য অতিরিক্ত যে বিষয়গুলো সম্পর্কে দৃঢ়চেতা হতে হবে তা নি¤œরূপ : ক. পরিশ্রমী মনোভাব থাকা এ ব্যাপারে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের সূরা আল বালাদের ৫ নং আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘আসলে আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।” সূরা আন নজমের ৩৯ নং আয়াতে ঘোষণা করেন, “এবং মানুষ তাই পায়, যা সে চেষ্টা করে।” খ. সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া গ. অধ্যয়নের তীব্র পিপাসা থাকা ঘ. মহামনীষীদের জীবনী অনুসরণ করা ঙ. সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা বা ভরসা রাখা একটি হিসাব সামনে রাখতে হবে আর তা হলো জীবনের সকল প্রস্তুতিকে ০ (শূন্য) ধরে আল্লাহর ওপর ভরসাকে ১ (এক) বিবেচনা করে চলতে হবে। অর্থাৎ এক এর পিঠে শূন্য যত বসানো যায় ততই মান বাড়ে, কিন্তু অনেক শূন্যের বাম থেকে শুধু এক সরিয়ে নিলে তার মান শূন্যে পরিণত হয়। সুতরাং আপনার সুন্দর ক্যারিয়ার গঠনের সকল প্রস্তুতির সাথে অবশ্যই মহান রবের সাহায্য সহযোগিতা কামনা করতে হবে এবং এর মাধ্যমেই আপনি পৌঁছে যেতে পারেন সাফল্যের উত্তুঙ্গ চূড়ায়।

লেখক : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির