post

ক্ষমতাধরদের রাজনীতি

গাজী নজরুল ইসলাম

৩০ জানুয়ারি ২০২৩

আমেরিকা বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র‍্যাবের কতিপয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আজ থেকে প্রায় এক বছর আগে। কারণ তারা মনে করে বাংলাদেশের র‌্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে সে দেশের জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করে চলেছে। বিচারবহির্ভূত তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে প্রতিপক্ষদের হত্যা করে, গুম করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে দমন নিপীড়ন করে প্রতিহত করার নির্মম কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো তারা যেন এমনতর প্রতিহিংসামূলক নিষ্ঠুর কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে। আমেরিকা আরো মনে করে বাংলাদেশে ন্যূনতম কোনো গণতন্ত্র নেই। যে কারণে বিশ্ব গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত না দিয়ে বাংলাদেশের উপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। তারা মনে করে গত ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অগণতান্ত্রিক পন্থায় বিনা ভোটে দেড়শতাধিক জাতীয় সংসদ সদস্য এবং পরবর্তীতে ২০১৮ সালে ভোটের আগের রাতে অর্থাৎ মধ্যরাতে ভোট কারচুপি করে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করে অবৈধভাবে পার্লামেন্ট পরিচালনা করছে। এতে করে জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার সাংঘাতিকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। একদিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অমানবিক গুম, নিখোঁজ এবং খুন বিরোধী রাজনীতিকদের উপর দমন নিপীড়ন অন্য দিকে মৌলিক সার্বজনীন ভোটাধিকার হরণ অবৈধ এবং অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জঘন্যতম কূটকৌশল আমেরিকার কাছে নিছক অপছন্দনীয় এবং নিন্দনীয় মনে হয়েছে। তাই গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত না দিয়ে দূরে রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানা যায়। ইদানীং বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগত। এ নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলগুলোর উপর বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মাসাধিকালব্যাপী বিভাগীয় পর্যায়ের সম্মেলনে সরকারি ইঙ্গিতে সকল পর্যায়ের পরিবহন ধর্মঘট ডেকে ভয়ঙ্কর পুলিশি নির্যাতনে ধরপাকড় এবং দলীয় ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচারে প্রায় ১৩ জন নেতা কর্মী খুন, শতাধিক মামলায় সহস্রাধিক আসামি করে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে দিনে প্রকাশ্যে এবং রাতের আঁধারে হানা দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের অযাচিত ধর-পাকড় করে কারাগারে আটক রেখে হুমকি-ধমকি ইত্যাদি অব্যাহত রেখেছে। এমনকি বিএনপি-জামায়াতের দলীয় প্রধানসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা এবং সাজানো মামলা দিয়ে জেলে আটক করেছে। আইনানুগ জামিন নিষিদ্ধ করে আটকাদেশ প্রলম্বিত করা হচ্ছে। সভা-সমাবেশে কথা বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ঘরোয়া বৈঠকগুলোকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে ধর্মীয় বই পুস্তক পেলে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে গোপনে অলক্ষ্যে বোমা-মর্টার আগেয়াস্ত্রের সরঞ্জাম ব্যাগে পুরে ধৃত নেতাকর্মীদের হাতে, জামার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে সন্ত্রাসী বানিয়ে নির্বিচারে আটক করে পেনাল কোডের কঠিনতম ধারা বসিয়ে মামলা দিয়ে আটকাদেশ দেয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ইং ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২২ বাংলাদেশস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক পিটার হ্যাসের উপর একটি বিশেষ মানবিক প্রোগ্রামের সময় তার উপর ‘মায়ের কান্না’ নামক একটি সংস্থার সদস্যদের আক্রমণ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে মুহুর্মুহু বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে যে, বাংলাদেশে তাদের দেশের বিরোধী দলের কিংবা ভিন্নমতের নাগরিকরা তো নিরাপদ নয়ই বরং বিদেশীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তার প্রমাণ হিসেবে পিটার হ্যাসের উপর আক্রমণকে দৃষ্টান্ত স্বরূপ পেশ করা হচ্ছে। ইদানীং ঢাকায় বিরোধী দলের ১০ ডিসেম্বরের সম্মেলনের পূর্বে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সর্বোচ্চ সতর্কতায় চলাফেরা করতে সে দেশের এম্বাসি থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইত্যাকার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র বারবার বাংলাদেশ সরকারকে দেশে আইনের শাসন কায়েম, মানবাধিকার সংরক্ষণ, জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করণ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছে। এমনকি আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ-সাবলীল, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক করতে হবে বলে বিবৃতি প্রদান করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূতও ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচন মধ্যরাতে কারচুপির মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে এবং ভোটের আগে মধ্যরাতে ব্যালট চুরির ভোট হয়েছে এমন নজির বিশ্বে কোথাও নেই বলে প্রকাশ্যে বিবৃতি প্রদান করেছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান প্রায় ১২টি দেশের রাজনৈতিক কূটনীতিকগণ ওই একই রকম বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন স্বচ্ছ-সুন্দর শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের এমনিতর এক ঘটনাবহুল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গত ২০শে ডিসেম্বর ২০২২ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জনাব মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতি প্রদান করে বাংলাদেশ এমনকি সমগ্র বিশে^ এক অবিমিশ্র বিস্ময়কর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন। জানামতে চাঞ্চল্যকর ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য যত না বিব্রতকর, বোধ করি তার চাইতে অধিকতর বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। বিষয়টি হলো- রাশিয়ার কূটনীতিক মারিয়া জাখারোভা বলে ফেলেছেন জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কোন দেশের অযাচিত হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। যেমন ইদানীং বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নসিহতপূর্ণ পরামর্শে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের আগত নির্বাচন, মানবাধিকার, আইনশৃঙ্খলা প্রভৃতি বিষয়ে আমেরিকার খবরদারি যুক্তিগ্রাহ্য নয় বলে রাশিয়ার কূটনীতিকের মন্তব্য। কেননা যুক্তরাষ্ট্র ইতঃপূর্বে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে এখানে সেখানে ঐ রূপ মানবাধিকার লংঘন করে পররাষ্ট্র দখল করে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে। সেই যুক্তরাষ্ট্রের মুখে বাংলাদেশের জন্য এমন নসিহত মানায় না। সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক তারস্বরে বলে বসলেন রাশিয়ার এ অযাচিত মন্তব্য কি ইউক্রেনের মতো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়! কেননা ক্ষমতাধর রাশিয়া ইতোমধ্যে ইউক্রেনের মতো একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে শুধু নসিহত করে ক্ষান্ত হয়নি বরং দেশটির বড় একটি অংশ বোমা মেরে-মানুষ হত্যা করে, সম্পদ ধ্বংস করে গায়ের জোরে শক্তির দাপটে যুদ্ধ করে পদানত করেছে এবং এখন পর্যন্ত যুদ্ধংদেহী শক্তি নিয়ে অভিযান চালানো অব্যাহত রেখেছে। অতএব রাশিয়ার মতো দেশের কূটনীতিকদের মুখে যুক্তরাষ্ট্রকে শিক্ষা দেয়ার জন্য উচ্চারিত এমনতর বচন কোনমতেই শোভা পায় না। মনে হচ্ছে খেলা বেশ জমে উঠেছে। সারা বিশ্ব খেলছে। আমেরিকা-রাশিয়া আবার ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশকে নিয়েও খেলা বেশ জমিয়ে ফেলেছে ঐ দুই পরাশক্তি। এখন দেখা যাক পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়। ইতোমধ্যে খেলা হবে- খেলা হবে বলে হুঙ্কার ছেড়েছেন বাংলাদেশের সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ, আর এ খেলা নাকি আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে। এরই মধ্যে সরকার ও বিরোধী দলসমূহ উভয়ের অনুষ্ঠিত সমাবেশ-মহাসমাবেশ, সম্মেলন-কনভেনশন নিয়ে হরেক রকমের ভণিতার খেল-তামাশা লক্ষ করছে। বাংলাদেশের কোটি কোটি অসহায় মজলুম শান্তিপ্রিয় গণতন্ত্রহারা ভোটাধিকার বঞ্চিত হতভাগ্য জনসাধারণ। বাংলাদেশের খেলা-খেলার নাটক এখন ছড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনের তিক্ত-মহাতিক্ত জমকালো নাট্যমঞ্চে। একদিকে দেশের ভিতরে রাজনীতিবিদদের “খেলা হবে- খেলা হবে” হুঙ্কার, অপর দিকে বিদেশি কূটনীতিবিদদের এক শক্তিধর রাষ্ট্রের আরেক শক্তিধর রাষ্ট্রের অতি বাচনিক প্রগলভতায় প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে একে অপরকে কূটনীতির মারপ্যাঁচে ঘায়েল করার কুটিল মানসিকতা এবং তা আবার বাংলাদেশকে নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের বচনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের প্রতি অযাচিত নসিহতে বিরোধীদলের আহামরি আবার আহামরি খুশি খুশি ভাব। আবার রাশিয়ার গায়ে পড়ে অতি বাচনিক কথনে অতি উচ্ছ্বসিত হয়ে সরকারি দলের খেলা-খেলা কৌতুককে আরো দানবীয় আক্রমণে অগ্রগামী করে বিরোধী শিবিরকে এক ছক্কায় সমগ্র উইকেট পতনের প্রচ্ছন্ন পূর্বাভাসের দুর্দান্ত ভবিষ্যদ্বাণী জারি করা যুক্তরাষ্ট্রের দূর নিকট অতীতের বিশ্বব্যাপী আগ্রাসনের ফিরিস্তির ইঙ্গিত তুলে ধরে কলুস কলঙ্ক মাখা অবয়ব নিয়ে বাংলাদেশকে অগণতান্ত্রিক আর মানবাধিকার লংঘনের দায় মুক্তির আর স্বচ্ছ প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের বাণী শোনানো যেমন ঠিক নয় বলে শক্তিধর রাশিয়ার যেমন বক্তব্য তেমনি বিশ্ব রাজনৈতিক ক্রীড়াঙ্গনে রাশিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তাৎক্ষণিক বক্তব্যে ইউক্রেনের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের সময় এরূপ বক্তব্য কোথায় ছিল বলে পাল্টা শট মেরে কূট রাজনীতির বলটি রাশিয়ার বেড়াজালে সরাসরি ঢুকিয়ে দেওয়ার কুটিল কসরত বজায় রাখা। বাংলাদেশকে নিয়ে বিশে^র দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের ঐরূপ ‘খেলা খেলা’ ভাব প্রক্রিয়ায় একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে জুড়ে আছে ইউরোপিয়ান জোটভুক্ত দেশসমূহের প্রকাশ্য সমর্থন আবার অপর দিকে রাশিয়ার পক্ষে প্রচ্ছন্নভাবে জুড়ে আছে আরেক শক্তিধর চীন এবং অপ্রচ্ছন্নভাবে অন্য শক্তিধর ভারত। এখানে আবার পলিটিক্যাল গেইমে পর্দার আড়ালেই কিছু অভাবনীয় দৃশ্যাবলির অস্ফুট ছায়াছবি দেখা যায়- আর তা হলো ইদানীং সৃষ্টি হওয়া নাটকীয় গেম ফিল্ড বাংলাদেশকে ভারতের চাই-ই চাই। তবে মহা শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের ডাইরেক্ট বিরোধিতা করে না আবার চির বৈরী চীনকে সমর্থন করেও না। কারণ চীন ভারতের প্রকাশ্য জাতশত্রু। অন্য দিকে রাশিয়া যে খেলা খেলতে চায় তা তো ভারতের জন্য মন্দের ভালো, কেননা ভারত বাংলাদেশের পক্ষে আমেরিকার কারণে যে প্রকাশ্য বচন বলতে পারছে না- তা যদি রাশিয়া বলেই দেয় সেটা ভারতের জন্য বাংলাদেশকে ক্ষমতায় আসীন রাখার একটি ঘুঁটির চাল তো চালাই হলো। এত করে বাংলাদেশের সরকার বিরোধীরা যেমন আতঙ্কে সংশয়ে থাকবে, তেমনি আমেরিকাও হিসাব কষে পদক্ষেপ নেবে। আর ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ সরকার যদি এই টানাপড়েনে বিরোধীদল দমনে নির্যাতনে শক্তিহীন করে কোন রকমে খেলা-খেলা জেতা-জেতা ছুট মেরে ক্ষমতার মসনদে এবারের মতো টিকে যেতে পারে তবে তো আর কথাই নেই। ভারত আজীবন আগামীর বাংলাদেশকে একেবারে নিজের মত করে ভোগ-ব্যবহার করতে পারবে যথেচ্ছভাবে।

এ তো গেল রাজনীতির রঙ্গমঞ্চের একটি ছোট পর্দার অন্তরাল। এর আর আরেকটি বড় পর্দার পরিস্ফুটন আছে বলে বিদগ্ধজনের সংশয় আছে- আর তা হলো বিশ্বের ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়েও বাংলাদেশের অবস্থান এমন এক বলয়ে অবস্থিত, যা নিয়ে বিশ্ব মোড়লেরা ইতোমধ্যে এদেশটির দিকে লোলুপ দৃষ্টি ফেলতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বলে দেয় বিশে^ কোন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে সে দেশের বসবাসরত জনগণের যদি ন্যূনতম দেশপ্রেমবোধ না থাকে সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশপ্রেমসহ জাতীয় স্বার্থে রাজনীতি করা না হয়, দেশে যদি দ্বন্দ্ব-সংঘাত স্বৈরাচার, একনায়কতন্ত্র, গুণ্ডামি-ভণ্ডামি চেপে বসে, সর্বোপরি ক্ষমতার মোহ যদি ইতিহাসের মীর জাফরের ভূমিকায় অভিনীত হয় তাহলে সে দেশের ভাগ্য সিরাজউদ্দৌলার বাংলা বিহার উড়িষ্যার পতনের গহিন পরাধীনতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। বাংলাদেশের বর্তমান যা অবস্থা ক্ষমতাসীনরা নিশ্চিত করেই চাচ্ছে তারা আবার ক্ষমতাসীন থাকবে। কেননা তাদের দর্শন হলো বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে স্বাধীনতা টিকবে না, স্বাধীনতার চেতনা ভূলুণ্ঠিত হবে, দেশে উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হবে, মানুষ না খেয়ে মরে যাবে এবং অতি নির্লজ্জভাবে তারা বলছে দেশ আবার পাকিস্তানে প্রত্যাগমন করবে- ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তাই যদি হয় তাহলে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ঐরূপ দার্শনিক চিন্তায় মসনদের মোহে আত্মার সাথে সম্পর্কিত আধিপত্যবাদী ভারতের প্রকাশ্য সহযোগিতা চাইবে। আর ব্যবসায়িক স্বার্থের ধুয়া তুলে চীনের সাথে অন্তরযোগ বজায় রাখতে চাইবে। রাশিয়ার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কূটনৈতিক মন্তব্যে আপ্লুত থাকবে, জার্মানিসহ অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের নৈশভোজে আপ্যায়িত করে সমর্থনের আশায় তৃপ্ত হবে, আর বিপরীতে আমেরিকাসহ ইউরোপিয়ানদের রাজনৈতিক কোপানলে পড়ে- খেলা-খেলা মন্তব্যে-খেলা বিবৃতি আর খেলা খেলার কূটতৎপরতার বেড়াজালে একদিন দক্ষিণ এশিয়ার এ সুজলা-সুফলা দেশটিতে আগুন জ্বলে যেতে পারে, ইরাকের ইন্ধন হতে পারে, সিরিয়ার শুষ্ক মরুভূমির মতো বারুদ উড়তে পারে, অতীতের ভিয়েতনামের মতো গা শিউরে ওঠা বিশ্ব ক্ষমতাধরদের শক্তি পরীক্ষার বোমা বোমা বারুদ জ্বালানোর খড়কুটার জ¦ালানির ক্ষেত্র হতে পারে। এ সংশয় রাজনৈতিক বিদগ্ধ ভুক্তভোগীরা করতেই পারেন। এখন দেখা যাক বাংলাদেশ কি ক্ষমতা-ক্ষমতা আর খেলা-খেলা রঙ-তামাশার আড়ালে দেশটিকে বিদেশি ক্ষমতাধরদের কূটরাজনীতির বেড়াজালে আটকে দেবে নাকি জনঐক্য সৃষ্টি করে দেশ মাতৃকার সঙ্কট দেশেই মিটাবার চেষ্টা করবে এটা এখন দেখার বিষয়।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদসদস্য

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির