(শেষ পর্ব)
জনশক্তিরদেরকে দ্বীনের পথে অগ্রগামী করার জন্য মানোন্নয়ন করা যেমন অপরিহার্য় ঠিক মানোন্নয়নের পর জনশক্তির মান সংরক্ষণ তেমনি অপরিহার্য়। দায়িত্বশীলকে তার জনশক্তির ব্যাপারে একজন কৃষকের ন্যায় ভূমিকা পালন করতে হবে। একজন কৃষক যেমন তার ক্ষেতের ফসল ফলাতে শ্রমের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে জমি প্রস্তুত করেন এবং ফসল ঘরে ওঠানোর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত ফসলের পরিচর্যা ও পর্য়বেক্ষণে ব্যস্ত থাকেন ঠিক তেমনিভাবেই দায়িত্বশীল তার জনশক্তিকে মানোন্নয়ন পর্যন্তই সীমাবদ্ব না থেকে মান সংরক্ষণে আরো বেশি মনোযোগী হবেন। রাসূল (সা) তাঁর সাহাবীদের মান সংরক্ষণের জন্য নিয়মিত মসজিদে নববীতে বসে তালিম করতেন। একজন দায়িত্বশীল জনশক্তির মান সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নিম্নাক্ত বিষয়সমূহ সামনে রাখতে পারেন-
১. নিয়মিত কুরআন হাদিস অধ্যয়ন
ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেক জনশক্তির প্রধান কাজ হলো তার নিজেকে দ্বীনের পথে টিকিয়ে রাখা বা ঈমানের মান ধরে রাখা। কিন্তু শয়তানের চ্যালেঞ্জ হলো দ্বীনের পথে মানোন্নয়ন করা জনশক্তিকে পদস্খলন ঘটিয়ে পথভ্রষ্ট করা। কেননা শয়তান আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলে এসেছে-
ثُمَّ لَاٰتِیَنَّهُمْ مِّنْۢ بَیْنِ اَیْدِیْهِمْ وَ مِنْ خَلْفِهِمْ وَ عَنْ اَیْمَانِهِمْ وَ عَنْ شَمَآئِلِهِمْ١ؕ وَ لَا تَجِدُ اَكْثَرَهُمْ شٰكِرِیْنَ
‘‘সামনে-পেছনে, ডানে-বায়ে, সবদিক থেকে এদেরকে ঘিরে ধরব এবং এদের অধিকাংশকে তুমি শোকরগুজার পাবে না।” (আল-আরাফ, আয়াত : ১৭)
ইসলামী আন্দোলনের পুরোধা, বিশিষ্ট লেখক নঈম সিদ্দিকী তার ‘‘চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান’’ বইয়ের ভূমিকাতেই উল্লেখ করেছেন-
‘‘মানুষের তৎপরতা যত বৃদ্ধি পায়, যত অধিক গুরুত্ব অর্জন করে, সেখানে শয়তানের হস্তক্ষেপও ততই ব্যাপকতর হতে থাকে। এদিক দিয়ে বর্তমান যুগ উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ যুগে একদিকে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ও স্বার্থপূজারী সভ্যতা আমাদের জাতির নৈতিক পতনকে চরম পর্যায়ে উপনীত করেছে, অন্যদিকে চলছে সমাজতন্ত্রের নাস্তিক্যবাদী চিন্তার হামলা। এ হামলা আমাদের জাতির মৌলিক ঈমান-আকিদার মধ্যে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ইসলামের সাথে জাতির গভীর প্রেম-প্রীতিময় সম্পর্কের ভিত্তি নড়ে উঠছে। বিপর্যয় ও অনিষ্টকারিতার ‘সিপাহসালার’ শয়তান যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল হুবহু তারই চিত্র যেন আজ ফুটে উঠছে।’’
পাশ্চাত্য সভ্যতার হামলা ও প্রতিমুহূর্তের দুনিয়ার মোহ আমাদের অন্তরকে কলুষিত করছে। প্রতিদিন কলবকে কলুষমুক্ত রাখা ও পরকালমুখী করতে নিয়মিত কুরআন অধ্যয়ন করা আবশ্যক। কুরআন অধ্যয়ন না করার ফলে কলব ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে এবং দুনিয়ামুখী হতে থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
اَلَمْ یَاْنِ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللّٰهِ وَ مَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ١ۙ وَ لَا یَكُوْنُوْا كَالَّذِیْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلُ فَطَالَ عَلَیْهِمُ الْاَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوْبُهُمْ١ؕ وَ كَثِیْرٌ مِّنْهُمْ فٰسِقُوْنَ
‘‘ঈমান গ্রহণকারীদের জন্য এখনো কি সে সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে তাদের মন বিগলিত হবে, তাঁর নাযিলকৃত মহা সত্যের সামনে অবনত হবে এবং তারা সেসব লোকদের মতো হবে না যাদেরকে ইতিপূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে তাদের মন কঠোর হয়ে গিয়েছে এবং আজ তাদের অধিকাংশই ফাসেক হয়ে গেছে।’’ (আল-হাদীদ, আয়াত : ১৬)
অতএব দ্বীনের পথে অগ্রসর হওয়ার পর নিজেকে দ্বীনের ওপর অবিচল রাখতে কুরআন ও হাদিস অধ্যয়নের কোনো বিকল্প নেই। দায়িত্বশীল তার জনশক্তিকে উপরোক্ত তৎপরতা উপলব্দি করিয়ে নিয়মিত কুরআন-হাদিস অধ্যয়নে অগ্রগামী করবে এবং প্রতিনিয়ত তার পরিচর্যা অব্যাহত রাখবে।
২. দাওয়াতি কাজে অংশগ্রহণ করা
দাওয়াতি কাজ ইসলামের অন্যান্য ফরজ ইবাদাতের মধ্যে অন্যতম ইবাদাত। দাওয়াত মুমিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মিশন। পৃথিবীতে যতজন নবী এবং রাসূল আগমন করেছেন তাঁদের সকলেরই মিশন ছিল দাওয়াত। দাওয়াত দানের মাধ্যমেই তাঁরা অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে আলোর ফলগুধারা প্রবাহিত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
كُنْتُمْ خَیْرَ اُمَّةٍ اُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ تَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ١ؕ وَ لَوْ اٰمَنَ اَهْلُ الْكِتٰبِ لَكَانَ خَیْرًا لَّهُمْ١ؕ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ اَكْثَرُهُمُ الْفٰسِقُوْنَ
‘‘এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল। তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য। তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো। এই আহলি কিতাবরা ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো। যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়; কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান।’’ (আলে-ইমরান, আয়াত : ১১০)
জনশক্তিকে মানোন্নয়ন করানোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকে সফলতার দিগন্তে পৌঁছে দেওয়া। দাওয়াতি কাজ হচ্ছে তার অন্যতম হাতিয়ার। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
ثُمَّ كَانَ مِنَ الَّذِيْنَ آمَنُوا وَتَوَاصَوا بَالصَّبْرِ وَتَوَاصَوا بِالْمَرْحَمَةِ- أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ.
‘‘অতঃপর (আল্লাহর নৈকট্য তারাও লাভ করতে পারে) যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরে ধৈর্যের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরে দয়া করার উপদেশ দেয়। তারাই হল ডানপন্থী, তারাই সফল।’’ (সূরা বালাদ-১৭)
অত্র আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মানুষ দাওয়াতের মাধ্যমে ঈমানদার হয়, ধৈর্যশীল হয় এবং পরস্পর দয়া ও করুণা করতে শেখে, যা মানব সমাজে নিতান্ত প্রয়োজন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَالْعَصْرِ، إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسرٍ، إِلاَّ الَّذِيْنَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَصَوْا بِالصَّبْرِ.
‘‘কালের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিপতিত। তবে তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, পরস্পরকে হকের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয়’’। (সূরা আছর)
এ সূরাটি মানব জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা এখানে হক-এর দাওয়াত দিতে বলেছেন। আর হক্ব এর দাওয়াত দিতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হলে ধৈর্যধারণ করতে বলেছেন এবং পরস্পরকে হকের উপদেশ দানকারী ক্ষতিগ্রস্ত নয় বলেছেন।
রাসূল (সা) বলেছেন,
عَنْ أبيْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ.
আবু মাসঊদ আনছারী (রা) বলেন- যে ব্যক্তি কল্যাণের পথ দেখাবে সে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ নেকী পাবে, যে ঐ পথে চলবে। (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৯; বাংলা মিশকাত ২য় খন্ড, হা/১৯৯ ‘ইলম অধ্যায়)
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সফলতার মাকসুদে মঞ্জিলে পৌঁছার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দাওয়াতি কাজ করা। দায়িত্বশীল যেহেতু তার জনশক্তিকে সফলতার মঞ্জিলে পৌঁছানোর জন্যই মানোন্নয়ন করিয়ে থাকেন সেহেতু দাওয়াতি কাজে নিয়মিত অংশগ্রহণ করানোর মাধ্যমে তাকে অগ্রসর করানোও দায়িত্বশীলের কাজ। জনশক্তি দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে যেমন নিজেকে একটি ফরজ ইবাদাতের মধ্যে শামিল করে একই সাথে তার কলবটাকেও সে পরিস্কার করে নেয় যারফলে তার ঈমানী চেতনা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৩. মৌলিক ইবাদাতসমূহ যথাযথ পালনে গুরুত্বারোপ করা
জনশক্তি মানোন্নয়ন করার পর তার নিজের প্রতি নিজের দায়িত্ব বেড়ে যায়। কেননা মানোন্নয়নের জন্য বাছাই স্বয়ং আল্লাহ নিজেই করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَ هُوَ الَّذِیْ جَعَلَكُمْ خَلٰٓئِفَ الْاَرْضِ وَ رَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجٰتٍ لِّیَبْلُوَكُمْ فِیْ مَاۤ اٰتٰىكُمْ١ؕ اِنَّ رَبَّكَ سَرِیْعُ الْعِقَابِ١ۖ٘ وَ اِنَّهٗ لَغَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ۠
‘‘তিনিই তোমাদের করেছেন দুনিয়ার প্রতিনিধি এবং যা কিছু তোমাদের দিয়েছেন তাতে তোমাদের পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কাউকে অন্যের ওপর অধিক মর্যাদা দান করেছেন। নিঃসন্দেহে তোমার রব শাস্তি দেবার ব্যাপারে অতি তৎপর এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’’ (আল-আনয়াম, আয়াত : ১৬৫)
উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি যে, আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের মধ্যে একটি শ্রেণিকে মানোন্নয়নের জন্য বাছাই করে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। জনশক্তি যেহেতু আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতেই তাঁর দ্বীনের পথে অগ্রগামী হয়েছে সেহেতু মহান রবের শুকরিয়া স্বরূপ মৌলিক ইবাদাতের প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হওয়া অবশ্য কর্তব্য ।
আল্লাহ তায়ালা নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত অনুষ্ঠানের জন্য যে সকল বিধি-বিধান দান করেছেন এবং এগুলোর মাধ্যমে যে সকল অবস্থা সৃষ্টির প্রত্যাশা করেন; কুরআন ও হাদীসের সাহায্যে আমাদের জনশক্তিদের সেগুলো অবগত করা, অতঃপর সে সব যথাযথভাবে সম্পাদনের ব্যবস্থা করা উচিত। বিশেষ করে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে সময়ের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়ের লোভ যদি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি না হয় তাহলে নামাজে আল্লাহভীতি, নতি ও বিনম্র ভাব সৃষ্টি হওয়া কঠিন। এ কথাও মনে রাখা দরকার যে, ইবাদাতের সাথে সাথে আত্মবিচারে অভ্যস্ত না হলে ইবাদাতের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার সম্ভব নয়। আত্মবিচারের অনুপস্থিতিতে ইবাদাতের বাইরের কাঠামো যতই পূর্ণাঙ্গ হোক না কেন তা অন্তঃসারশূন্যই থেকে যায়।
অতএব ফরজ ও ওয়াজিবের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও ইখলাস আনয়নে দায়িত্বশীলকে সর্বাগ্রে অভ্যস্ত হতে হবে এরপর জনশক্তিকে তার নসিহা ও বাস্তব সাক্ষ্যের মাধ্যমে তাকে অগ্রগামী করাতে হবে।
৪. জনশক্তিদের নিকট আস্থাভাজন হওয়া
জনশক্তির কাছে আস্থাভাজন হওয়া জনশক্তির মানসংরক্ষনের অন্যতম হাতিয়ার। আল্লাহর রাসূল (সা) তার সঙ্গী-সাথীদের নিকট পূর্ণাঙ্গ বা পরিপূর্ণভাবে একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রতিটি সঙ্গী-সাথীর প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নিতেন, তাঁর পরিবার-পরিজনের খোঁজ-খবর রাখতেন এবং সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হতেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি দায়িত্বশীলের কর্তব্য হচ্ছে তার প্রতিটি জনশক্তির নিয়মিত খোঁজ-খরব রাখা। তাদের সমস্যাগুলো জানার চেষ্টা করা এবং সমাধানে সচেষ্ট হওয়া। দায়িত্বশীল তার জনশক্তির সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে যখন পেরেশান থাকবেন তখন জনশক্তি তা দেখে তার দায়িত্বশীলের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। তার দায়িত্বশীলের জন্য সে দোয়া করতে থাকবে এবং দায়িত্বশীলও তার জনশক্তির জন্য দোয়া করতে থাকবে। যখন উভয় উভয়ের জন্য দোয়া করতে থাকবে তখন আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে পরস্পরের মধ্যে গভীর সম্পর্কের সৃষ্টি করে দেন যে সম্পর্ককে পবিত্র কুরআনে রেহেমের সম্পর্ক বলে অবহিত করা হয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন-
‘ঐ ব্যক্তিই ভালো দায়িত্বশীল, যার জন্য জনশক্তি তার অগোচরে দোয়া করে।’
দায়িত্বশীল কেমন হবেন সে বিয়ষেও আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করে বলেন-
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنْتَ لَهُمْ١ۚ وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ١۪ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَ شَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ١ۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّٰهِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِیْنَ
‘‘(হে নবী!) এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল। নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত হতে, তাহলে তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে যেতো। তাদের ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করো এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করো। তারপর যখন কোনো মতের ভিত্তিতে তোমার স্থির সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো। আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে।’’ (সুরা আল ইমরান-১৫৯)
কাজেই জনশক্তির কাছে আস্থাভাজন হিসেবে দায়িত্বশীল তার নিজেকে উপস্থাপন ও গুনাবলীর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে পারলে জনশক্তির মান সংরক্ষণে তা সহায়কী ভূমিকা পালন করবে।
৫. শাহাদাতের মর্তবার আলোচনা সর্বাবস্থায় জারি রাখা
শাহাদাত হচ্ছে এক অমীয় সুধা যা পান করার জন্য রাসূলসহ (সা) সকল সাহাবায়ে কেরাম উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। রাসূল (সা) সবসময় শাহাদাতের তামান্না মহান রবের নিকট পেশ করতেন। রাসূল (সা) প্রায় সকল সময় নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত লাভের তাওফিক দান করো।’ (বুখারী)
রাসূল (সা) শাাহাদাতের তামান্নার কেমন পেরেশান ছিলেন তা নিম্নোক্ত হাদিস থেকেই বুঝা যায়। রাসূল (সা) বলেন-
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْلَا أَنَّ رِجَالًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ لَا تَطِيبُ أَنْفُسُهُمْ أَنْ يَتَخَلَّفُوا عَنِّي وَلَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُهُمْ عَلَيْهِ مَا تَخَلَّفْتُ عَنْ سَرِيَّةٍ تَغْزُو فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أنْ أُقتَلَ فِي سَبِيل الله ثمَّ أُحْيى ثمَّ أُقتَلُ ثمَّ أُحْيى ثمَّ أُقتَلُ ثمَّ أُحْيى ثمَّ أقتلগ্ধ
আবূ হুরায়রাহ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন, যদি কিছু সংখ্যক মুমিন আমার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে না পারার ফলে তাদের মন দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং আমিও তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বাহন সরবরাহ করতে পারছি না। যদি এরূপ সংকটাপন্ন না দেখা দিত, তবে আমি আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে প্রেরিত প্রতিটি সেনাবাহিনীর সাথে অবশ্য গমন করতাম, কোনোটি হতে পিছনে থাকতাম না। যার হাতে আমার প্রাণ, সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় বস্তু হলো- আমি আল্লাহর পথে শহীদ হই, অতঃপর আমাকে পুনরায় জীবিত করা হলে আমি আবার যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে যাই এবং পুনরায় আমাকে জীবিত করা হোক এবং আবার যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হই, আবার জীবিত করা হোক, আবার শহীদ হই, পুনরায় জীবিত করা হোক, পুনরায় শহীদ হই। (সহিহ : সহিহুল বুখারী ২৭৯৭, সহিহ মুসলিম ১৮৮৬, নাসায়ী ৩০৯৮, সহিহ আল জামি‘ ৭০৭৫)
আল্লাহ তায়ালা শহীদদের ব্যাপারে এরশাদ করেন-
وَ لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِیْنَ قُتِلُوْا فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ اَمْوَاتًا١ؕ بَلْ اَحْیَآءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ یُرْزَقُوْنَۙ
‘‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না। তারা আসলে জীবিত। নিজেদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা লাভ করছে।’’ (আলে-ইমরান, আয়াত : ১৬৯)
শহীদদের মর্যাদার বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। জনশক্তিদের মাঝে শাহাদাতের মুর্তবার বাস্তব চিত্র উপস্থাপন করতে হবে। রাসূল (সা) যেভাবে নিজে শহীদি তামন্নায় উজ্জীবিত ছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও উজ্জীবিত রাখতেন ঠিক তেমনিভাবে দায়িত্বশীল নিজে যেমন শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত থাকবে তেমনি তার জনশক্তিদেরকে শাহাদাতের আলোচনার মাধ্যমে শাহাদাতের জযবা তৈরি করবে।
৬. ত্যাগ ও কুরবানীর নজরানা পেশ করা
রাসূলে করীম (সা) দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করতে গিয়ে সর্বপ্রথম তিনি নিজে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রাসূল (সা)-এর সাথে অসংখ্য সাহাবী প্রায় তিন বছর শিয়াবে আবি তালিবে সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করেছেন। অর্থাৎ দায়িত্বশীলদের দ্বীনের কাজ আঞ্জাম দিতে গিয়ে সর্বোচ্চ সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সামনে অগ্রসর হলে তার সাথে সাথে তার জনশক্তিরাও সাহস সঞ্চার করে সামনে অগ্রসর হবে এবং জুলুম নির্যাতন আসলে হাসিমুখে তারা বরণ করতে শিখে যাবে। যারা এই জুলুম নির্যাতনকে হাসিমুখে বরণ করতে শেখে তারা এই দ্বীনের পথে সর্বদা সক্রিয় থাকতে এবং অগ্রগামী হতে শিখে যায়। দায়িত্বশীল সকল ক্ষেত্রে ত্যাগ ও কুরবানির নজরানা উপস্থাপন করতে পারলে জনশক্তিরা তাদের নিজেদেরকেও যখন ত্যাগ কুরবানিতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে তখন তাদের নিজেদের মান নিজেরাই সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে।
৭. প্রত্যেক জনশক্তিকে দায়িত্বের আওতায় নিয়ে আসা
জনশক্তিদের মান সংরক্ষণের জন্য তাদেরকে আন্দোলনের কাজের আওতায় নিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ ছাত্র যখন সংগঠনের সমর্থক হয় তখন থেকেই তাকে সংগঠনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ্যভাবে সামিল করা এবং ছোট-খাটো কাজ দিয়ে অভ্যস্থ করা। সমর্থক যখন কাজে কিছুটা পারদর্শী হয়ে যাবে তখন তাকে কোন দায়িত্বের আওতায় নিয়ে আসা। এভাবে প্রত্যেক স্তরের জনশক্তিদেরকে দায়িত্বের আওতায় নিয়ে আসা এবং সর্বদা দ্বীনের কাজে ব্যাস্থ রাখার চেষ্ঠা করা । জনশক্তিরা যখন তার দায়িত্ব নিয়ে চিন্তা করতে শেখবে, জবাবদিহিতা করতে শেখবে তখন তার মানসংরক্ষণে স্বকীয় চেতনা জাগ্রত হবে। আর এই চেতনা বা অনুভূতি জাগ্রত করার কারিগর হচ্ছে তার দায়িত্বশীল ।
৮. বাস্তব সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপিত হওয়া
আরবিতে একটি প্রবাদ রয়েছে-
।الناس على دين ملوكهم
“জনগণ নেতৃবৃন্দেরই আদর্শানুসারী হয়ে থাকে”
দায়িত্বশীলের প্রতিটি দিক তার জনশক্তিরা অনুসরণ করার চেষ্টা করে। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বনবী রাসূলে করীমকে (সা) বিশ্ববাসীর মাঝে বাস্তব সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন যেন মানুষ দ্বীন ইসলামকে বাস্তবরুপে প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং তার অনুসরণ করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
وكذلك جعلناكم امة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدًا
“আমি তোমাদেরকে এক মধ্যমপন্থী জাতি বানিয়েছি যাতে করে তোমরা লোকদের জন্যে সাক্ষী হও আর রাসূলও যেন তোমাদের জন্যে সাক্ষী হন।” (সূরাআল বাকারাহ : ১৪৩)
অল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-
وَجَاہِدُوۡا فِی اللّٰہِ حَقَّ جِہَادِہٖ ہُوَ اجۡتَبٰىکُمۡ وَمَا جَعَلَ عَلَیۡکُمۡ فِی الدِّیۡنِ مِنۡ حَرَجٍ ؕ مِلَّۃَ اَبِیۡکُمۡ اِبۡرٰہِیۡمَ ؕ ہُوَ سَمّٰىکُمُআল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা) বা দায়িত্বশীলদেরকে সকলের সামনে বাস্তব সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপিত হতে বলেছেন কাজেই জনশক্তি যখন তার দায়িত্বশীলের মাঝে ইসলামের মূর্ত প্রতিক দেখতে পাবে তখন ঔ জনশক্তির দ্বীনের পথে অগ্রসর ও টিকে থাকা তার প্রেরণামূলক ও সহজ হবে।
৯. নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মৌলিক প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা
জনশক্তির মান অবনতির অন্যতম মূল কারণ হলো প্রশিক্ষণ ও মৌলিক প্রোগ্রামসমূহে যথাযথভাবে উপস্থিত না হওয়া। জনশক্তির মানোন্নয়নের পর মানসংরক্ষণের জন্য দায়িত্বশীল প্রতিটি প্রোগ্রামে তাকে উপস্থিত করাবেন। আল্লাহর রাসূল (সা) তার সাহাবীগণকে সর্বাবস্থায় সোহবতে রেখে প্রশিক্ষণ দিতেন।
عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، عَنْ حَنْظَلَةَ الأُسَيِّدِيِّ، قَالَ - وَكَانَ مِنْ كُتَّابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ - لَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ كَيْفَ أَنْتَ يَا حَنْظَلَةُ قَالَ قُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ قَالَ سُبْحَانَ اللَّهِ مَا تَقُولُ قَالَ قُلْتُ نَكُونُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ حَتَّى كَأَنَّا رَأْىَ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَافَسْنَا الأَزْوَاجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ فَنَسِينَا كَثِيرًا قَالَ أَبُو بَكْرٍ فَوَاللَّهِ إِنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا . فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " وَمَا ذَاكَ " . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ نَكُونُ عِنْدَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ حَتَّى كَأَنَّا رَأْىَ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسْنَا الأَزْوَاجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ نَسِينَا كَثِيرًا . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنْ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي وَفِي الذِّكْرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً " ثَلاَثَ مَرَّاتٍ .
‘‘আল উসাইয়িদি (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- একদা আবু বকর সিদ্দিক (রা) আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং আমাকে প্রশ্ন করলেন, হে হানযালাহ! তুমি কেমন আছ? তিনি বলেন- জবাবে আমি বললাম, হানযালাহ তো মুনাফিক হয়ে গেছে। সে সময় তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ তুমি কি বলছো? হানযালাহ (রা) বলেন- আমি বললাম, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে থাকি, তিনি আমাদের জান্নাত জাহান্নামের কথা শুনিয়ে দেন, যেন আমরা উভয়টি চাক্ষুষ দেখছি। সুতরাং আমরা যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্নিকট থেকে বের হয়ে আপনজন, স্ত্রী-সন্তান এবং ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে যাই তখন আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। আবু বকর (রা) বললেন, আল্লাহর কসম আমারও একই অবস্থা। নিশ্চয়ই আমরা এ বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎ করব।
তারপর আমি এবং আবু বকর (রা) রওনা করলাম এবং এমনকি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! হানযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা কী?
আমি বললাম, আমরা আপনার কাছে থাকি, আপনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দেন, যেন আমরা তা সরাসরি দেখতে পাই। তারপর আমরা যখন আপনার নিকট হতে বের হই এবং স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হই সেসময় আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সত্তার হাতে আমার জীবন আমি তাঁর কসম করে বলছি! আমার কাছে থাকাকালে তোমাদের যে অবস্থা হয়, যদি তোমরা সবসময় এ অবস্থায় অনড় থাকতে এবং সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিকিরে পড়ে থাকতে তাহলে অবশ্যই ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহ করত। কিন্তু হে হানযালাহ! এক ঘণ্টা (আল্লাহর যিকরে) আর এক ঘণ্টা (দুনিয়াবি কাজে ব্যয় করবে) অর্থাৎ আস্তে আস্তে (চেষ্টা করো)। এ কথাটি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিন বার বললেন।’’ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭১৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৬৯)
অতএব উপরোক্ত হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রশিক্ষণ থেকে দূরে থাকলে আমাদের অন্তরগুলো দুনিয়ার ভালোবাসায় আকৃষ্ট হয়ে দুনিয়ামুখী হয়ে যায়। কাজেই জনশক্তিদের মানসংরক্ষণে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।
প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ২টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-
- জনশক্তির নিকট প্রোগ্রামের দাওয়াত কমপক্ষে ৪/৫ দিন আগে পৌঁছানো।
- প্রোগ্রামকে ইফেকটিভ করার জন্য প্রশিক্ষককে ভালো প্রস্তুতি নেওয়ানো এবং রুহানিয়াত ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা ।
- জনশক্তিদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মৌলিক প্রোগ্রামসমূহের আওতায় নিয়ে আসা দায়িত্বশীলের মৌলিক কাজের অংশ।
১০. মহান রবের নিকট দোয়া করা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল (সা)-এর মাধ্যমে আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন জনশক্তিদেরকে দ্বীনের পথে অগ্রগামী করতে তাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে তাদের জন্য দোয়া করা। সূরা আল ইমরানের ১৫৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنْتَ لَهُمْ١ۚ وَ لَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیْظَ الْقَلْبِ لَا نْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ١۪ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَ اسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَ شَاوِرْهُمْ فِی الْاَمْرِ١ۚ فَاِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّٰهِ١ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِیْنَ
(হে নবী!) এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল। নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোরচিত্ত হতে, তাহলে তারা সবাই তোমার চারপাশ থেকে সরে যেত। তাদের ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করো এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করো। তারপর যখন কোনো মতের ভিত্তিতে তোমার স্থির সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো। আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে।
দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল (সা) হযরত ওমরকে পেয়েছেন। দায়িত্বশীলের দোয়ার বদৌলতে ওমরের মতো অসংখ্য মুজাহিদ আল্লাহ তায়ালা তৈরি করে দেবেন। অতএব প্রতিটি মূহুর্তে জনশক্তিদের জন্য দায়িত্বশীলের দোয়া করা রাসূলের সুন্নাহকে লালন করা।
দায়িত্বশীলদের মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেকটি জনশক্তি তার কাছে আমানত। দায়িত্বশীলের একটু পরিচর্যার অভাবে তার জনশক্তি দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতে পারে। বাগানের মালি যেমন তার মালিকের বাগান সর্বদা রক্ষণাবেক্ষণে ব্যস্ত থাকে ঠিক তেমনিভাবে দায়িত্বশীলকে তার জনশক্তির প্রতি সর্বদা তদারকিতে ব্যস্ত থাকতে হবে। জনশক্তিদের মানোন্নয়ন ও মানসংরক্ষণে দায়িত্বশীলের ভূমিকা অপরিসীম।
লেখক : কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক
আপনার মন্তব্য লিখুন