post

ঢালাও গ্রেফতার বাণিজ্য টার্গেট বিরোধী নেতাকর্মীরা

১০ জুন ২০১৬
সম্প্রতি বাংলাদেশে যেসব হত্যাকান্ড চলছে, তার কারণ অনুসন্ধান না করে, রাজনৈতিক উপায়ে সঙ্ঘাতের অবসানের চিন্তা না করে সরকার জঙ্গিদমনে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। আমরা যদি উৎসমূলের সন্ধান করি তাহলে দুটো ক্ষেত্রের সন্ধান পাবো। প্রথমত, স্থানীয় বা দেশজ কারণগুলো। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট। আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছি, সন্ত্রাস ও সহিংসতার সাথে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের মানুষ এবং এর রাজনৈতিক নেতৃত্ব সব সময় নিয়মতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করেছে। কিন্তু এখন কী এমন হলো যে, বাংলাদেশ নিত্যদিন মৃত্যুর জন্য সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে অসন্তোষ, ক্ষোভ এবং ক্রোধ নিরসনের মাধ্যম হচ্ছে গণতন্ত্র। সব ক’টা জানালা যদি খুলে দেয়া যায়, তাহলে আলো-হাওয়া হয় অবারিত। আর যদি দরজা-জানালা বন্ধ থাকে তাহলে ভাঙচুরের প্রবণতা প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশের জনগণ না খেতে পারলেও তাদের মনের কথাটি বলতে চায়। সুতরাং গণতন্ত্রের অনুশীলনের মাধ্যমে দুঃখ-বেদনা ও ক্ষোভ-ক্রোধের পরিসমাপ্তি হবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের দুর্ভাগ্য এই যে, গণতন্ত্রের অনুশীলন এখানে কখনোই নিরঙ্কুশ ছিল না। বাকশাল, সামরিক শাসন এবং গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারের কবলে নিষ্পিষ্ট হচ্ছে গোটা জাতি। বর্তমান সাঁড়াশি অভিযানের প্রেক্ষাপটটি সৃষ্টি হয়েছে, জনগণ তাদের কর্তৃত্ব বদলের প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সার্থকতা এখানে যে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের কর্তৃত্ব পরিবর্তন করতে পারে। এ দেশের সবাই জানে, একক কর্তৃত্বের সংস্কৃতি শাসক দলের রয়েছে। ১৯৭১-৭৫ সময়কালে তারা গণতন্ত্রের কবর দিয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। এবার বাকশাল প্রতিষ্ঠার সোজা পথে না গিয়ে তারা বাঁকা পথ অনুসরণ করছে। প্রকাশ্যে গণতন্ত্রকে নাকচ করার দুঃসাহস তাদের নেই। ইতোমধ্যে কিভাবে নির্বাচনব্যবস্থা তছনছ করে দেয়া হয়েছে এ দেশের মানুষ তার সাক্ষী। নিউটনের সূত্র মোতাবেক ‘ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া’ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। ব্যক্তি যখন তার স্বজনকে প্রাণ হারাতে দেখে, তখন তার মধ্যে প্রতিহিংসা জেগে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। ব্যক্তি যখন লুটেরাদের হাতে তার সম্পত্তি বিধ্বস্ত হতে দেখে এবং তার সম্মান-মর্যাদা ধুলোয় মিটিয়ে দেয়া হয়, তখন তার বিদ্রোহী হয়ে ওঠা কি অস্বাভাবিক? সরকারি দলই এসব হত্যা এবং নাশকতামূলক কাজ করছে- এ রকম অভিযোগ প্রধান বিরোধী দলের। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশ এক অসম্ভবের দেশ। যেখানে রাজনীতি মানেই হচ্ছে প্রতারণা, সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো মোটেই অসম্ভব নয়। নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করার অনেক উদাহরণ এ দেশে আছে। অপর দিকে সরকার সঙ্কটের উৎসমূলে না গিয়ে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার কাজে বিষয়টি ব্যবহার করছে। একেকটি ঘটনা ঘটার পরপরই দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতারা কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই সব দোষ নন্দ ঘোষ- বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে তুলে দিতে চাচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা হামলা-মামলার পর এই সাঁড়াশি অভিযান জনগণের জন্য সত্যিকারের নির্যাতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে জানা গেছে, এর মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের গ্রেফতারবাণিজ্যের মাধ্যমে আশু কোনো সমাধান হবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

কপিরাইট © বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির